Powered By Blogger

Thursday, May 30, 2024

প্রবন্ধঃ মানুষ, মানুষ, তুমি মানুষ। মানুষ মানুষের জন্য।

ফ্ল্যাটবাড়ির খোলা বারান্দায় ব'সে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে প্রকৃতির দিকে। আকাশে মেঘ। আলো আছে কিন্তু আকাশে সূর্য নেই। মিষ্টি আভা ছড়িয়ে সূর্য লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে। সকাল সকাল প্রখর সূর্যের তেজকে কে যেন হাল্কা মেঘের চাদর দিয়ে পুরোটা ঢেকে দিয়েছে। কাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে জোরে। তাই আজ বৃষ্টিস্নাত সকালে ঠান্ডা বাতাস বইছে বাইরে। মনেই হচ্ছে না গ্রীষ্মকাল। রাতে ঘুমের সময় শীত করছিল। এসি বন্ধ ক'রে, ফ্যানের স্পীড কমিয়ে শুয়েছিলাম শুধু। ঘুম আসছিল না। এখন জানালা দিয়ে সেই ঠান্ডা মিষ্টি বাতাস এসে চোখেমুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে গেল; যেন রাতে নিদ্রাহীনতার ফলে যে ক্লান্তি তা' মুছে দিচ্ছে। বড় ভালো লাগছে চারপাশের প্রকৃতি। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষের প্রাণ হাঁসফাঁস করছিল। আর, আজ ঠান্ডা আবহাওয়ায় নিজেকে চনমনে লাগছে, ফুর্তি জাগছে মনে। সামনে সারি সারি ফ্ল্যাট। ছুটির দিন, রবিবার। নীচে রাস্তায় নারীপুরুষ বেড়িয়েছে ছুটির দিনে দোকানে কেনাকাটা করতে। সামনেই মার্কেট, পাশে ফুড কোর্ট। নানারকম খাবার। সেখানে ক্রেতার ভিড়। সকালের জলখাবার কিনতে ভিড় জমিয়েছে মানুষ দোকানে। এই ঠান্ডা মৌসমে মাতাল করা হাওয়ায় গরম গরম কচুড়ি, সিঙ্গাড়া, নিমকি, লাচ্ছা পরোটা বিক্রি হচ্ছে দেদার দোকানে। লোকে হামলে পড়ে কিনে নিচ্ছে বাড়িতে নিয়ে যাবে ব'লে। জমে যাবে সকালের জলখাবার। কেউ কেউ সামনে চেয়ার টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট সেরে নিচ্ছে। নিমেষে শেষ হ'য়ে যাচ্ছে সব, আবার ভাজছে। ফুড কোর্টের মুখোমুখি রাস্তার এপাশের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে সব ছবির মত পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। কিছুটা দূরে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে নিষ্পলক চেইয়ে আছে একটি অল্প বয়সী মেয়ে। সম্ভবত মায়ের সঙ্গে এসেছে। গাছের তলায় নিরিবিলি জায়গায় বসিয়ে দিয়ে মা গেছে কারও বাড়িতে কাজ করতে। কাজ সেরে নিয়ে যাবে সঙ্গে ক'রে বাড়ি। সিঁড়ি দিয়ে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম তার কাছে। মেয়েটি বসে আছে চুপ ক'রে। পরণে নোংরা ছেঁড়া ফ্রক। চেয়ে আছে দোকানের কচুরি সিঙারার দিকে। দোকানদার গরম গরম কড়াই থেকে ভেজে ভেজে ঝুড়িতে রাখছে কচুড়ি, সিঙ্গারা, নিমকি। এগিয়ে গেলাম দোকানের দিকে। কচুড়ি, সিঙারার দু'টো প্যাকেট নিয়ে ফিরে এলাম মেয়েটির কাছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে একটা প্যাকেট তার হাতে দিয়ে বললাম, খাও। মেয়েটি অবাক চোখে মুখ তুলে তাকালো আমার দিকে। কি নিষ্পাপ উজ্জ্বল চোখ দুটি! মেয়েটি নিতে লজ্জা পাচ্ছিল। মুখে কিছু বললো না, কিন্তু বোঝা গেল আত্মসম্মানে লাগছে। যাই হ'ক, ওর হাতে দিয়ে বললাম, মা এলে খেও। তারপর ফিরে চললাম সেখান থেকে বাড়ির জন্য নেওয়া গরম গরম কচুড়ি, সিঙ্গারার অন্য প্যাকেটটি হাতে নিয়ে। আবার এসে বসলাম বারান্দায়। ছুটির দিনে সকালবেলা জমিয়ে খাওয়া যাবে চায়ের সঙ্গে গরম গরম জলখাবার।
সামনের ফ্ল্যাটের ব্যালকনির পাশে ফাঁকা শেড, সেখানে গোলা পায়রা, শালিক কি যেন খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। ওখানে ঐ ফাঁকা শুকনো জায়গায় কি খাবার আছে যে খাচ্ছে!? ভেবে অবাক হ'য়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে! ভাবলাম এখানে এই বিশাল ইটের জঙ্গলে এরা বেঁচে আছে কি ক'রে? এইভেবে প্রতিদিনের মত ঘর থেকে হাতের কাছে যা পেলাম, নিয়ে এলাম। হাতে বিস্কুটের প্যাকেট। কয়েকটা বিস্কুট নিয়ে নিখুঁত লক্ষ্যে ছুঁড়ে দিলাম সেই ফাঁকা শেডের ওপরে। লক্ষ্য পূরণে শিশুর মত নেচে উঠল মন প্রাণ, চেয়ার ছেড়ে আনন্দে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মনে হ'লো বিশ্বজয় ক'রে ফেলেছি। মনে পড়ে গেল যৌবনে ক্রিকেট মাঠে দৌড়ে বল ধ'রে দূর থেকে ছুঁড়ে উইকেট ভেঙ্গে দেওয়ার কথা।
প্রথমে পাখিরা উড়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর আবার উড়ে এসে বসলো সেখানে পায়রা, শালিক। তারপর ঠুকরে ঠুকরে খেতে লাগলো বিস্কুটগুলো। দেখে বেশ ভালো লাগলো, আনন্দ পেলাম মনে। কি আনন্দে খাচ্ছে সবাই মিলে। মাঝে মাঝেই আশেপাশে যেখানেই ওরা উড়ে এসে বসে সেখানে রেখে দিই কিছু না কিছু। পরে দেখি সেখানে কিছু নেই। রান্নাঘরের জানালার ওপাশে যে শেডটা আছে সেখানে এসে বসে মাঝে মাঝে পায়রা, শালিক। জানালা খুলে দু'একটা বিস্কুট রেখে দিই তাদের জন্যে। বেডরুমের জানালায় রেখে দিই মাটির ছোটো বাটিতে ক'রে জল আর মুড়ি, বিস্কুটের টুকরো ছোটো ছোটো ক'রে। কাঁচের জানালা বন্ধ ক'রে দেখতে থাকি। মনে মনে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, এই কাজ করার বিনিময়ে তুমি কি পাও? কিছুই পাই না। কিছুই পাও না? কে যেন আবার ব'লে ওঠে উদাস সুরে, কি জানি।
ঐ যে ছোট্ট শিশুটা টলোমলো পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে নীচে রাস্তা দিয়ে আরও কয়েকজন তার থেকে বড় ছেলেমেয়ের ভিড়ে, মুহুর্তে আমি চলে গেলাম সেখানে আর পকেট থেকে লজেন্স বের ক'রে গালে আদর ক'রে তুলে দিলাম তার ও সবার হাতে। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দয়ালকে স্মরণ ক'রে বললাম, দয়াল তুমি ওর প্রকৃত পিতামাতা, কিন্তু জানি না এদের পিতামাতা এদের খেয়াল রাখে কিনা, তুমি ওদের খেয়াল রেখো, তুমি ওদের রক্ষা ক'রো। মন এবার বলে, আরে পাগল, এই কাজের ফলে তুমি কি বড়লোক হবে? তোমাকে কি টিভিতে দেখা যাবে? তুমি কি বিখ্যাত হ'য়ে যাবে?
প্রাণহীন শরীরের মত নির্বাক নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকি আর চেয়ে চেয়ে দেখি হাঁটি হাঁটি পায়ে অস্ফুট মধুর শব্দ ক'রে হেঁটে চলে যাচ্ছে দূরে, ক্রমশঃ দূরে। মনে পড়ে যায় কবি সুকান্তের কান্না ভেজা গলায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাঃ
"চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।"

আমারও ভেতর থেকে কে যেন ব'লে উঠলো,আমিও ব'লে যাই,
যাবার সময় হয়েছে তাই;
চলে যাবো যে কোনও একদিন
আমার ফুলের মতো ছোট্ট ছোট্ট
দেবদূতদের ছেড়ে।
যাবো চলে অন্ধকার আগুন পৃথিবী আর
বিষাক্ত নিশ্বাসে ভরা আকাশের তলে
আমার ছোট্ট শিশুদের ফেলে।
তাই, যাবার আগে ব'লে যাই, বারবার ব'লে যাই
শিশুর ভবিষ্যৎ সুদিন রাখা আছে জেনো নিশ্চিত
শিশুদের মা-বাবাদের কোলে।

কিছুদূরে ওই যে গরীব বুড়িমা আগের দিনে জংগলে, পুকুরের ধারে ঘুরে কয়েক আঁটি থানকুনি পাতা, কচু পাতা, কলমি শাক, হেলেঞ্চা শাক ইত্যাদি নিয়ে বসে আছে বাজারে রাস্তার ধারে, ওর পাশ দিয়ে যাবার সময় ওই সব শাকগুলি বুড়িমা যা চাইলো তাই দিয়ে কিনে নিলাম দরদাম না করেই। অদ্ভুত এক মায়াময় হাসি ছড়িয়ে গেল বুড়িমার মুখে! ফোকলা দাঁতের হাসি ছড়িয়ে শিশুর মত হেসে উঠলো বুড়িমা! কি যেন বলতে চাইলো, কিন্তু বলতে পারলো না। কি এক নির্মল সরলতা চোখেমুখে ছড়িয়ে বুড়িমার, যা পৃথিবী ঘুরে কোথাও পাবো না! এইখানেতেই ঐ বুড়িমার ছলছল চোখের থোবড়ানো গালের ফোকলা দাঁতের হাসিতে, হ্যাঁ ঐ ছোট্ট শিশুর মত হাসিতেই আমি খুঁজে পাই আমার স্বর্গ, আমার প্রভুর রামরাজ্য! এই স্বর্গ, এই আমার প্রভুর রামরাজ্য পাবার জন্য আমি হাসিমুখে সব আফাল-তাফাল সহ্য করতে পারি আমৃত্যু।জানি বাড়িতে এই এত শাক পাতার জংগল নিয়ে দু'এক কথা হবে। তবুও ঐ স্বর্গ, ঐ রামরাজ্যের লোভ সামলাতে পারিনে; কিনে নিই বিস্ময়ে এই ভেবে, সারাদিনে এই বিক্রি ক'রে কিই বা রোজগার হবে, আর কিই বা সেই পয়সা দিয়ে কিনে খাবে বুড়িমা!? মনটা খারাপ হ'য়ে যায়, তবুও, সূর্যকে যেমন মেঘ তার কালো চাদর দিয়ে আড়াল ক'রে রাখে ঠিক তেমনি আমার অশান্ত মন-প্রাণ-হৃদয়কে একটা নির্মল আনন্দ ঢেকে রাখে, শান্ত ক'রে দেয়।

এই করার মধ্যে দিয়ে কি পাও তুমি? ব'লে ওঠে মন অবাধ্য ছেলের মত বারবার। কে যেন সাড়া দেয় ভিতর থেকে, ম্লান হেসে বলে, কিছুই না।
এই কিছু না পাওয়ার মধ্যে এ হ'লো আবেগ। এই আবেগ কোনও মূল্যেই আমি হারাতে চাই না, তা' সে যতই আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক না কেন রসাতলে। এই আবেগ আমাকে নিয়ে যায় অনুভবের জগতে, গভীর এক ভালোবাসা অনুভব করি। উপলব্ধি হয় আমি কেন জন্মেছি, ঈশ্বর কেন আমায় সৃষ্টি করেছেন, কেন সৃষ্টি করেছেন আমার চারপাশ, উপলব্ধি হয় আমি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ, আর তাই, মানুষ মানুষের জন্যে।
শুনতে পেলাম, তমসার ওপার থেকে অচ্ছেদ্য বর্ণ মহান পুরুষ ইষ্টপ্রতিকে আবির্ভূত হ'য়ে গভীর মমতায় শান্ত স্নিগ্ধ মধুর গম্ভীর স্বরে আমার দয়াল বলছে, 

" তুমি কেন জন্মেছ
মোটাভাবেও কি দেখেছ ?
থাকাটাকে কি উপভোগ ক'রতে নয় ----
চাহিদা ও কর্ম্মের ভিতর - দিয়ে
পারস্পরিক সহবাসে -----
প্রত্যেক রকমে ?
তেমনি বুঝছ না
ভগবান কেন সৃষ্টি ক'রেছেন ?
উত্তর কি এখন ?-----
নিজেকে অনুভব ক'রতে ,
উপভোগ ক'রতে ---- বিশ্বে ,
প্রত্যেক অনুপাতে --- দেওয়ায় , নেওয়ায় --
আলিঙ্গনে , গ্রহণে ,
কর্ম্মবৈচিত্রে , ----- নয় কি ? "



তারপর শুনলাম দয়াল বলছে,
তুমি আমার সুন্দর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সুন্দর সৃষ্টি মানুষ, মানুষ, মানুষ!
আর, তখন সুন্দর এক আলোময়, রুপময়, মধুময়, রসময় পৃথিবী আমার সামনে ভেসে ওঠে! আমি সেই পৃথিবীতে পাখির মত ভাসমান!



ফল্গুধারার মত সুন্দর আমার ভেতরে ব'য়ে চলা এই ভাবনাও বুঝে ফেলে মন। তখন মন বিস্ময়ে বলে, এইটাই কি সেই চাওয়া যা তুমি সবচেয়ে বেশী চাও ও যা তুমি খুঁজে চলেছো আমৃত্যু!? কোথায় গেলে পাবো এমন চাওয়া? কোনও উত্তর ভেসে এলো না। একটা গভীর নীরবতা গ্রাস ক'রে নিচ্ছে এই সকাল। আকাশে দ্রুতবেগে ভেসে যাচ্ছে কালো সাদা মেঘ। মিষ্টি ঠান্ডা বাতাসে অবশ হ'য়ে আসছে শরীর। ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠে বলতে লাগলো,
If there is righteousness in the heart,
there will be beauty in the character.
If there is beauty in the character,
there will be harmony in the home.
If there is harmony in the home,
there will be order in the nations.
When there is order in the nations,
there will be peace in the world.
হৃদয়ের পবিত্রতা আনে সুন্দর চরিত্র
সুন্দর চরিত্র আনে সংগতি গৃহে
এ জেনো বড় সত্য।
গৃহের সংগতি আনে জাতিতে শৃঙ্খলা
জাতির শৃঙ্খলা আনে পৃথিবীতে শান্তি
পূর্ণ হয় পনেরো কলা।
বিস্ময়ে আমি নিজেকে নিজেই ব'লে উঠলাম পনেরো কলা কেন? ষোলো কলা পূর্ণ হ'লো না কেন? কোথায় এই প্রবাদে (সম্ভবত এটা চাইনিজ প্রবাদ) কমতি আছে যার ফলে ষোলো কলা পূর্ণ হ'লো না? এক কলা অপূর্ণ থাকার জন্য পৃথিবীতে তো শান্তি পুরোপুরি আসতে পারবে না! অসম্পূর্ণতা কোথায়? আর তখনি, আরও আঁধার হ'য়ে এলো আকাশ। বুঝিবা বৃষ্টি নামবে। অথচ বৃষ্টি নামছে না। একটা স্বর্গীয় পরিবেশে আমি ডুবে যাচ্ছি। আর তখনি মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে এলো,
If there is living God in the life

There will be righteousness in the heart. I
f there is no living God in the life,
the heart is not pure.
জীবনে জীবন্ত ঈশ্বর যদি না থাকে
তাহ'লে হৃদয় পবিত্র হয় না।
তাই, If there is living God in the life

There will be righteousness in the heart.
If there is righteousness in the heart,
there will be beauty in the character.
If there is beauty in the character,
there will be harmony in the home.
If there is harmony in the home,
there will be order in the nations.
When there is order in the nations,
there will be peace in the world.

জীবনে থাকে যদি জীবন্ত ঈশ্বর

হৃদয় পবিত্র হয় জেনো অতি সত্বর।
জীবনে যদি না থাকে জীবন্ত ঈশ্বর
হৃদয় হয় না পবিত্র হয় না শুদ্ধ অন্তর।
পবিত্র হৃদয় বিনা হয় না সুন্দর চরিত্র
গৃহে আসে না সংগতি হয় সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ।
গৃহে গৃহে যদি না থাকে সংগতি
জাতি হয় না শৃঙ্খলিত দিনে দিনে হয় অবনতি।
জাতির বিশৃঙ্খলা আর অবনতি জেনো অশান্তির কারণ
বিশ্বের যত সমস্যা আর অশান্তির হবে না সমাধান কোনওদিন
গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়ার বুদ্ধির
যদি না হয় অপসারণ।


এর জন্যে চায় শুদ্ধ আত্মা। নতুবা জীবন্ত ঈশ্বর আমাদের জীবনে থাকতে পারে না। ফলে হৃদয় পবিত্র হয় না। আর, অপবিত্র হৃদয় তখন তার ঘোলাটে বিষাক্ত চোখ দিয়ে সব বিকৃত দেখে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,


"জগতের কল্যাণের জন্য আরও বহু শুদ্ধ আত্মার প্রয়োজন। আমার মনে হয়, তারা সব নিরালম্ব বায়ু ভূত নিরাশ্রয় হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জন্ম নেবার মত ঠাঁই পাচ্ছে না। দ্বারে দ্বারে করাঘাত করে বেড়াচ্ছে। যেখানে নিষ্ঠা নেই, সদাচার নেই, পবিত্রতা নেই, সংযম নেই, বিহিত সু সংস্কার নেই, সেখানে তো আর তারা আসতে পারে না। তাইতো আপনাদের কাছে অত করে কই দীক্ষার কথা। বিবাহ সংস্কারের কথা। সুশিক্ষার কথা। পরিবারগুলিকে ইষ্টাচারে অভ্যস্ত করে তোলার কথা। সাত্ত্বিক আচার, নিয়ম বিধি, বিধান গুলিকে যদি পুনরুজ্জীবিত না করেন , তাহলে কিন্তু শুধু দর্শনের বক্তৃতা ঝেড়ে কাজ হবে না।"

---------- শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র।।
যা আমরা কুৎসা, নিন্দা, গালাগালি, সমালোচনা, অশ্রদ্ধা, অপমান, অপবাদ সাথে দর্শনের বক্তৃতা দিয়ে চলেছি সৎসঙ্গে, উৎসব মঞ্চে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। জয়গুরু।

Tuesday, May 28, 2024

প্রবন্ধঃ প্রকৃতির রেমাল ঝড় ও মানব মনের প্রকৃতি।

রেমাল ঝড় ধেয়ে আসছে এ খবর আমাদের কাছে ছিল। রবিবার (২৬শে মে' ২০২৪) সন্ধ্যা থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ার কথা ছিল। রবিবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে ঝ'ড়ো বাতাস জোরে ব'য়ে আসছিল। সন্ধ্যে থেকে ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া ব'য়ে যাবার কথা ছিল। শনিবার থেকে কথা ছিল কিন্তু তেমন কিছু বোঝা যায়নি। তবে, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সারারাত বৃষ্টি সাথে হাওয়া ব'য়ে চলেছে। কাল সোমবার আছড়ে পড়বে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে। এখন যেখানে আছি বহুতল বাড়ির ১১তলা ফ্ল্যাটে। সন্ধ্যে থেকে ভেসে গেছে জলে ঘর। আধুনিক ব্যবস্থায় গড়ে ওঠা ফ্ল্যাট বাড়ির জানালার উপরে কোনও সান শেড নেই। ঠুনকো কাঁচের জানালা। খটাখট শব্দে ও ভেঙ্গে পড়ার ভয়ে কান ঝালাপালা ও প্রাণ ওষ্ঠাগত। নেই কোনও গ্রীল। যে কোনও দিন জানালা দিয়ে নীচে পড়ে গিয়ে ঘটে যেতে পারে ভয়ঙ্কর দূর্ঘটনা। সান শেড না থাকার কারণে জলে ভেসে যাচ্ছে ঘর। যারা বাড়িঘর তৈরীর সেই সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা যারা অতি প্রগতির হাওয়ায় ভেসে যাওয়া আধুনিকতার পথ প্রদর্শক তাঁদের প্রণাম। মিউনিসিপ্যাল বা কর্পোরেশনও এমন শেডহীন, গ্রীলহীন, ঠুনকো পাতলা কাঁচের জানালা ইত্যাদি বহুতল বাড়ি করা প্তৈরশ্রীনগুলির অনুমতি প্রদান করে। দুর্গতির মাঝে ব'সে ব'সে ভাবছিলাম অতি প্রগতি দুর্গতি। পড়েছো মোগলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে। আজ সকালে বিরাট বড় এক দূর্ঘটনা থেকে প্রভুর দয়ায় বেঁচে গেছি। বারান্দার দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়েছিলাম কি একটা কাজে, হঠাৎ প্রবল হাওয়ায় দরজাটা বিকট আওয়াজ দরাম ক'রে বন্ধ হ'য়ে গেল। সামান্য একটু সময়ের হেরফেরে বেঁচে গেল পায়ের আঙ্গুলগুলি থেঁথলে যাওয়ার হাত থেকে। উফ কি ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য! দয়ালের অপার দয়ায় এই ঝড় বাদলে ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে বেঁচে গেছি আজ সকালে। এখন এই অন্ধকারে মনে পড়াতে গা শিউড়ে উঠলো শরীরটা। চোখে ঘুম আসছিল না। অনেক কথা মনে আসছিল। মনে আসছিল ভিডিওতে বিভিন্ন জনের নানা প্রশ্নের কথা। তাই একমনে প্রভুর শরণ করছিলাম বাইরের মাতাল প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে কালকের প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রোষের কথা আর মানুষের ভাবতে ভাবতে। আর তখনি মনে হ'লো ভিডিওতে গুরুভাইবোনেদের সতর্ক ক'রে দিই ও শরণ ক'রে দিই কয়েকটা কথা।
যাই হ'ক ঝড়, তুফান, বৃষ্টি ইত্যাদি প্রকৃতির রোষ। প্রকৃতিও হয়তো তার ব্যালান্স হারিয়ে ফেলছে, তাই ঘন ঘন ঝড় আয়েলা, আমফান, ফণি, রেনাল ইত্যাদি ইত্যাদি নানা নাম নিয়ে আছড়ে পড়ছে ধরিত্রীর বুকে। আগেও ছোটোবেলায় কালবৈশাখী হ'তো, বর্ষার সময় প্রবল বর্ষা হ'তো কিন্তু এখন আর বর্ষাকাল ব'লে আলাদা কোনও কাল নেই। সারাবছরই সমুদ্রের বুকে ঝড় ওঠে, নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, আর আছড়ে পড়ে ঘনবসতি এলাকার ওপর। এর আগের ভয়ঙ্কর আয়েলা, আম্ফান ইত্যাদির ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আমাদের সবার রয়েছে। তবুও সব ভুলে যায় মানুষ। এই কিছুদিন আগেও আমরা করোনার ভয়াবহতা দেখেছি বিশ্বজুড়ে। ভুলে গেছে মানুষ প্রকৃতির সেই বিষাক্ত ছোবলের কথা। সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা। এই প্রকৃতির ভয়াল রোষের হাত থেকে বাঁচাতে পারে না অহঙ্কারী ক্ষমতাবান মানুষ মানুষকে। আর, উচশৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল মানুষ নিজেও নিজেকে বাঁচাতে পারে না নিজ কর্মদোষে। প্রকৃতির ওপর হ'য়ে চলেছে বিশ্বজুড়ে উন্নত আধুনিক সভ্যতার সভ্য মানুষের বিরামহীন বলাৎকার। তাই প্রকৃতিও তার সময়মতো প্রতিশোধ নিচ্ছে মানুষের ওপর তার ওপর অন্যায্য অপ্রয়োজনীয় খবরদারী করার কারণে। এই প্রতিশোধ তো শুধু নমুনা মাত্র, বীভৎস, নির্ম্মম, ভয়াল, ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ তো অপেক্ষা করছে আগামী দিনে, যেদিন মনুষ্বত্বের মূল বুনিয়াদই ধ্বংস হ'য়ে যাবে আর পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়বে গভীর ঘুমে ভয়াবহ এক অভূতপূর্ব শীতলতায়। সেইদিন কোনও বিজ্ঞান বাঁচাতে পারবে না মানুষকে। কর্মফল মানুষকে ভোগ করতেই হবে। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।
যাই হ'ক, আসুন আজ তো বাঁচি। সৎসঙ্গীরা নাম করুন। বিরামহীন নাম করুন। নামও শব্দ। নামের ভাইব্রেশনে রক্ষা করুন ঝড়ের ভয়াবহতাকে প্রতিহত ক'রে অন্তত নিজেকে ও নিজের পরিবারকে। নিশ্চিত গ্যারান্টি, অকপট হৃদয়ে যদি একমেবাদ্বিতীয়ম প্রভুর দেওয়া বীজ নাম জপ করেন অনবরত, প্রার্থনা করেন তার কাছে পবিত্র হৃদয়ে, নিশ্চিত ভয়াবহতার হাত থেকে ও কোনওরকম ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেনই পাবেন।তবে একটা শর্ত, তা হ'লো অকপট ও পবিত্র হৃদয়ে নাম করতে হবে, ক্রমাগত নাম করতে হবে। যে করবে সেই যে কোনও ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা পাবে, পাবে, পাবে।। এ নিশ্চিত গ্যারান্টি। আসুন সম্মিলিত নাম করি ও নিশ্চিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করি ও নিজে রক্ষা পাই। এই কথায় মনে পড়ে গেল, শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, "অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে ধর্ম ব'লে জানিস তাকে।"


যাই হ'ক, এতক্ষণ প্রকৃতির তান্ডব নিয়ে আলোচনা করলাম, এবার আসি মানসিক প্রকৃতির তান্ডব নিয়ে আলোচনায়। দেখে নিই বিভিন্ন জনের আমার ভিডিওতে করা প্রশ্নগুলি নিয়ে।


প্রশ্নঃ বড় দা, প্রফুল্ল দা উনারা উনাদের সম্মানের জায়গায় থাকুক। আমরা সাধারণ সৎসঙ্গি। আমাদের কাছে ঠাকুর ই এক মাত্র স্বার্থ। আপনারা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ নিয়ে তর্ক বির্তক ছড়িয়ে কি লাভ। আপনি এসব না বলে ঠাকুর পরিবারের লোকরাই বলুক। তাতে সমাধান ভাল হবে।



উত্তরঃ কেউ কারও সম্মান নষ্ট করতে পারে না। সম্মান নষ্ট হয় নিজের দোষেই। আপনি কাউকে অসম্মান করলে সেটা তার দোষ থাকুক আর না থাকুক সেটা আপনার চরিত্রের দোষ বা গুণের ব্যাপার। যার কোনও দোষ নেই সে সম্মান অসম্মানের কোনওটারই ধার ধারে না। আর যে অন্যায় দেখে, মিথ্যা দেখেও চুপ ক'রে থাকে, নিজেরা তো কিছু বলে না, করে না, উল্টে কেউ প্রশ্ন করলে তাকে চুপ করিয়ে দেয় ভুল নীতি কথা আউড়ে, তারা কিন্তু অন্যায়কারীর চেয়েও ভয়ংকর। ঠাকুর কিন্তু এরকম দূর্বল, ভীরু, কপট সৎসঙ্গী চাননি। ঠাকুর পরিবার কি আমার পরিবার নয়? ঠাকুরবাড়ি কি আমার বাড়ি নয়? ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা আমার কেউ হয় না? কেন ঠাকুরবাড়ির লোকেরা বলবে? কেন সৎসঙ্গীরা বলবে না, প্রতিবাদ করবে না? প্রতিবাদ মানে কি গালাগালি, মারামারি? মাথা উঁচু ক'রে বুক টানটান ক'রে অন্যায়কে অন্যায়, মিথ্যাকে মিথ্যা বলা যায় না? এমনই আমরা হিজড়ে সৎসঙ্গী যে বিরোধীরা ৫৫বছর ধ'রে অকথ্য কুকথ্য ভাষায় শ্রীশ্রীবড়দা ও তার পরিবারের ওপর গালাগালি, মিথ্যে অপবাদ সৎসঙ্গে, উৎসবে মঞ্চে, ভিডিওতে প্রকাশ্যে ক'রে চলেছে তখন তা আপনার গায়ে লাগে না? তখন 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' দার্শনিকতায় মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়া, চুপ ক''রে থাকা, দরদে বুকের প্রেম ভালোবাসার বরফ গলে একেবারে ঝরণার জল হ'য়ে অন্যায়কারীর ওপর ঝ'রে পড়া এরকম শ্রীশ্রীঠাকুরের সৎসঙ্গীর পরিচয়? আপনি এই কুৎসা, গালাগালি, অপমান, অশ্রদ্ধার ইতিহাস জানেন? শ্রীশ্রীবড়দার যদি সম্মান হানি হয়, শ্রীশ্রীঠাকুরকে যদি কলঙ্কিত করে তখন একটুও গায়ে লাগে না? আমার সম্মান হানি হয় না? যদি কেউ নিজের সম্মান ধ'রে রাখতে না পারে তা কি অন্যের দোষ? শ্রীশ্রীঠাকুর যদি আপনার একমাত্র স্বার্থ হ'য়ে থাকে সেই স্বার্থটা কি একটু বলবেন? তাঁর সন্তান, তাঁর পরিবার পরিজন আমার স্বার্থ নয়? এমনই আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের ভক্ত যে তাঁর স্বার্থ রক্ষা তো দূরের কথা, স্বার্থ প্রতিষ্ঠা তো দূর অস্ত তাঁর স্বার্থটা কি তাই-ই আমি জানি না! শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদার সম্মান রক্ষা করার দায় ঠাকুর পরিবারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে, ঠাকুরবাড়ির ওপর চাপিয়ে দিয়ে মজা দেখছেন? ঠাকুর পরিবারের লোকেদের ব্যাপার ব'লে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভালোবাসার লোকেরা, সৎসঙ্গীরা অজুহাত খাঁড়া ক'রে সরে দাঁড়াবে? সেটা অন্যায় ও অশোভনীয় নয়? আপনি সৎসঙ্গী ব'লে নিজেকে পরিচয় দেন? সাধারণ সৎসঙ্গী আর অসাধারণ সৎসঙ্গী ব'লে কোনও কথা হয় না। ঠাকুরবাড়ি কোনওদিন বলেনি আর বলবেও না। সেটা ঠাকুর পরিবারের লোকেদের চরিত্র নয়। নইলে যদি মনে করে বেশীদিন সময় লাগে না অবৈধ মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে, মানহানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে। আর ঠাকুর পরিবার কাউকে, কোনও সৎসঙ্গীকেই কিছু বলার সেই শিক্ষা দেয়নি। কারণ ঠাকুর তা চাইতেন না। এটা সৎসঙ্গীদের নিজস্ব ব্যাপার। শালীনতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, প্রেম ভালোবাসা বজায় রেখেও কঠোর হওয়া যায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায়। এটাকে বলে ব্যক্তিত্ব। যাই হ'ক, আপনি ঠাকুর সম্পর্কে, ঠাকুর পরিবার সম্পর্কে, ঠাকুর দর্শন, সাহিত্য ভান্ডার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না আপনার বক্তব্য তার প্রমাণ। আর সবচেয়ে বড় কথা আপনার বক্তব্য প্রমাণ করে আপনি অন্যায় ও অসত্যের পক্ষে।
প্রশ্নঃ তাহলে একই প্রশ্ন, নতুন মন্ত্র অনুসারে এত ঠাকুর কেন পুজা করেন? গোলমাল তো আপনার কথায়ও আছে। ইষ্টভৃতি শুধু একজনকে, পুজা করছেন বহুজনকে। সেটির উত্তর কি? ( এই প্রশ্নটা প্রশ্নকর্তা করেছেন "পুরোনো ইষ্টভৃতি মন্ত্র ও নোতুন ইষ্টভৃতি মন্ত্র" প্রসঙ্গে করা ভিডিওর ওপরে।


উত্তরঃ ইষ্টভৃতি আর পুজো কি একই জিনিস? একই অর্থ বহন করে? ইষ্টভৃতি কি তা'তো ব্যাখ্যা করেছি। আপনি তা ভালো ক'রে মন দিয়ে শোনেননি তাই এই সমস্যা। আসলে গোলমালটা আমার কথাতে নেই। গোলমালটা আছে আপনার পক্ষপাতিত্য মানসিকতার মধ্যে। পক্ষপাতিত্য থাকলে এরকমটা হয়, একটা অশ্রদ্ধা অন্তরে লুকিয়ে থাকে। বহুজনকে পুজো করার আপত্তির মধ্যে দিয়ে আপনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা পক্ষপাতিত্য ও অশ্রদ্ধার মনোভাব পরিষ্কার বোঝা যায়। এটা আপনার সংগ করার ফল। অজ্ঞতার ফল। কারণ আপনি ইষ্টভৃতি আর পুজোকে খিচুড়ি বানিয়ে একাকার ক'রে দিয়েছেন। যাই হ'ক আগে ইষ্টভৃতি ও পুজো এই দুই শব্দের মানে জেনে নিন তারপর না হয় উত্তর দেবো।


প্রশ্নঃ এসব না করে দাদা নাম ধ্যান করুন। আজ বাদে কাল মরে গেলে এসব যাবেনা সঙ্গে কিছুই। নাম করুন।
উত্তরঃ ভালো পরামর্শ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু, নামধ্যান যে করে তার কথা বা পরামর্শের মধ্যে অসঙ্গতি থাকে না। এটা inconsistency of character. মানুষের কথাবার্তা তার নামধ্যানের প্রকৃত পরিচয়। As is his power of observation, so is his power of judgement. Nam & dhyan emerges and is evidenced in his powers of observation and judgment. আপনি মরে যাবার পর কি নিয়ে যাবেন? আপনি যারা সমস্যা তৈরী করেছে, যারা ৫৫ বছর ধ'রে কুৎসা, সমালোচনা ক'রে চলেছে তাদের আপনি কি বলেছেন? বলেছেন কিছু? আপনি এতদিন ধ'রে তাহ'লে শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে, শ্রীশ্রীবড়দার পরিবারের বিরুদ্ধে মাঠে ঘাটে, উৎসব মঞ্চে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরোধীদের ক'রে চলা তীব্র কুৎসা সমালোচনা উপভোগ করছিলেন? এতদিনে টনক নড়লো? আমি তো কারও বিরুদ্ধে কোনও কুৎসা বা সমালোচনা করিনি, শুধু শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা মিথ্যে অভিযোগের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের কিছু প্রশ্ন করেছি, তারা শ্রীশ্রীঠাকুরকে অবিকৃত প্রচার করছে আর শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবার বিকৃত প্রচার করছে এই নিয়ে তাদেরই প্রচার 'আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা প্রথা' পূর্ণাংগ ও সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি পুরোনো ও নোতুন মন্ত্র, ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর নিয়ে প্রফুল্লদার যতিচিহ্ন সহযোগে বাণীর ব্যাখ্যা, "আচার্য পরম্পরা বিষয়ে বাগ্মীপ্রবর প্রলয় মজুমদার' ভিডিওর বিষয়, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে শুধু তাদের কাছে জানতে চেয়ে যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে কিছু প্রশ্ন করেছি মাত্র, তা'তেই আপনাদের গাত্রদাহ হ'য়ে গেল? মরার পর কি নিয়ে যাবো? আরে দাদা মরার পর ওপরে গেলে শ্রীশ্রীঠাকুর তো জিজ্ঞেস করবে, কি রে এত যে কোন্দল, তুই কি করলি? আমি তো বলবো, ঠাকুর শ্রীশ্রীবড়দা ও শ্রীশ্রীবড়দা বিরোধী কুৎসাকারীদের, অপবাদ দিয়েছে তাদের, যারা শ্রীশ্রীবড়দাকে স্বার্থরক্ষাকারী ও মির্জাফর বলেছে তাদের আমি প্রকাশ্যে কিছু প্রশ্ন করেছি, যেহেতু তারা ক্রমাগত ৫৫ বছর এই কুৎসা, সমালোচনা ও মিথ্যে অপবাদের ট্রাডিশান ব'ইয়ে চলেছে তাই তাদের কাছে প্রকাশ্যেই জানতে চেয়েছি যাতে তাদের ৫৫বছর ধ'রে তাদের অপপ্রচারের ফলে লক্ষ লক্ষ দীক্ষিত সৎসঙ্গী বিভ্রান্ত হয়ে, ঠিক ভুল বুঝতে না- পারার জন্য ডি-রেইল্ড হয়েছে, অদীক্ষিতদের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে ও আপনার পরিবারের বিরুদ্ধে ও আপনার সৃষ্ট সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বদনাম করার, কুৎসা-সমালোচনা করার সুযোগ ক'রে দিয়েছে তা' তাদের কাছে দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি হ'য়ে সমাধান হ'য়ে যায়; সেইজন্য আমি বিরোধীদের কাছে কিছু প্রশ্ন ক'রে জানতে চেয়েছি। কিন্তু আপনি কি বলবেন ঠাকুরকে? ঠাকুর জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দেবেন? এইটাই তো বলবেন, আপনি আমার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, এসব প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়ে নামধ্যান করার জ্ঞান দিয়েছিলেন, যাতে তারা যা করছে করুক, তাদের এই মিথ্যে অপবাদ কুৎসা নিন্দা অপমান বদনাম করার পথে যেন বাধা না পায়। যে যা করছে করুক, আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। তাই না?


প্রশ্নঃ Dada Karo Samalachana Bando Karun Apni Phone NO Niye Personal phone Kare Bapar Ta Mithe nin JAY GURU DADA


উত্তরঃ যিনি বা যারা ঘৃণ্য সমালোচনা ক'রে চলেছেন আজ ৫৫ বছর ধ'রে প্রকাশ্যে শ্রীশ্রীবড়দা আর তাঁর পরিবারের মধ্যে সেগুলি আপনার চোখে এত বছরেও পড়লো না? আমি শুধু তাঁকে তাঁর প্রকাশ্যে ভিডিও সম্পর্কে প্রশ্ন করায় আপনার চোখে পড়লো? বিরোধীরা প্রকাশ্যে মঞ্চে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওর মাধ্যমে শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কুৎসা সমালোচনা করবেন, অপবাদ দেবেন আর আমি সে সম্পর্কে তাদের যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেই, তাদের বক্তব্যকে যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করার মাধ্যমে খন্ডন করলেই সেটা আমার সমালোচনা হ'য়ে গেল? যারা শ্রীশ্রীবড়দার হাতে তৈরী হওয়া মানুষ হ'য়েও প্রকাশ্যে ৫৫ বছর ধ'রে তাদের উত্তরসূরীদের শ্রীশ্রীবড়দাকে ও তাঁর পরিবারকে দু'বার অপমান করতে ভাবেন না আর আমার তাকে ফোন ক'রে জিজ্ঞেস করতে হবে আপনি কেন অপমান করছেন? কার সঙ্গে কি মিটিয়ে নেবার কথা বলছেন? যিনি নিজে ঠাকুরবাড়ির আশ্রিত হ'য়ে ঠাকুরবাড়িতে থেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের সংস্পর্শে ব্রহ্মজ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন, শ্রীশ্রীবড়দার সাহচর্য্যে দিব্যজ্ঞান লাভ করেছেন আর তিনিই পরে শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীবড়দার অন্যতম ঘৃণ্য সমালোচক, অপবাদের প্রচারক তার সঙ্গে আমি সামান্য একজন মানুষ কি মিটিয়ে নেব? মিটিয়ে নেবার দায় তো তার যিনি সমস্যার জন্ম দিয়েছেন, শ্রীশ্রীঠাকুরকে কষ্ট যন্ত্রণা দিয়েছেন ৫৫ বছর ধ'রে ও দিয়ে চলেছেন। তাই নয় কি? যাই হ'ক আপনার পরামর্শ ভালো লাগলো। আমার পরামর্শ আপনাকে, আপনি উনাকে বলুন, উনি ও উনারা যারা ৫৫ বছর ধ'রে যা ক'রে চলেছেন তা পাপ না পুণ্য কাজ।? যদি মনে করেন ঠিক করছেন তাহ'লে ঠিক। আর যদি মনে করেন কাজটা বেঠিক ও পাপ তাহ'লে ঠাকুরবাড়িতে এসে মিটিয়ে নিতে ও প্রায়শ্চিত্ত করতে। আমি একজন সৎসঙ্গী হ'য়ে একজন সৎসঙ্গীকে এই পরামর্শ দিলাম মাত্র। আপনিও যদি সৎসঙ্গী হ'য়ে থাকেন তাহ'লে আপনারও দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে আমাকে না ব'লে কুৎসাকারীদের কিছু মিষ্টভাবে হ'লেও বলার। আর আমার কোনও অন্যায় থাকলে, ভুল থাকলে অবশ্যই বলবেন আমি ক্ষমা চেয়ে নেব বা ভুল স্বীকার ক'রে নেব। আমার অনেক ভালোবাসা নেবেন ও সুন্দর প্রস্তাব রাখায় অনেক ধন্যবাদ।


প্রশ্নঃ আপনি সমাধান চান না প্রবলেম? মানুষকে কনফিউস করবেন না প্লীজ। শ্রীশ্রীবড়দার পরিবার কোনও দিন কাওকে আপনার মতো নেগেটিভ কথা বলেন নি। এবং তাদের মাপবার ক্ষমতা আপনার নেই, ভালো ক'রে নাম ধ্যান করুন দয়াক'রে, আপনার মনের বিকৃতি দূর হ'ক। জয়গুরু।


(ভিডিও/ শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী বিকৃত কে করেছেন? পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা নাকি শ্রদ্ধেয় প্রফুল্লদা?).


উত্তরঃ আমি সমাধান চাইবার কে? সমাধান তো যে বা যারা সমস্যা তৈরী করেছে ৫৫ বছর ধ'রে ও ক'রে চলেছে সমাধান যদি চাই তবে তার সমাধান তাদের হাতে। আর চরম ও নিখুঁত সমাধান তো ঠাকুরের হাতে। ঠাকুরের কাছে সমস্যা তৈরীকারী বিরোধীদের সমাধানের নিখুঁত বিচার তোলা আছে, ঠিক তেমনি আমার এই ভিডিও করার জন্যও তোলা আছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে এই প্রশ্ন করার জন্য এবং এই প্রশ্নের আড়ালে আপনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি লুকিয়ে আছে তার জন্যও বিচার তোলা আছে এটা ভুলে যাবেন না। আর প্রবলেম? প্রবলেম তো যারা বিরোধীতা ক'রে চলেছে ৫৫ বছর ধ'রে তাদের ব্যাপার, আমার কিসের প্রবলেম? আরে একটু ভেবে শান্ত মাথায় প্রশ্ন করুন। প্রশ্নের যে কোনও ব্যালান্স নেই। আর আপনার কি দেখে মনে হ'লো আমি মানুষকে কনফিউস করছি? কোনটা কনফিউসের বিষয়? প্রফুল্লদার যতিচিহ্ন সহযোগে বাণী পরিবর্তন ও সেই পরিবর্তনের ওপর দাঁড়িয়ে দেবাশীষবাবু আর সৌভিকবাবুর শ্রীশ্রীবড়দার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার সেটা মানুষকে কনফিউস করার বিষয় নয়? আমি তথ্য সহযোগে ব্যাখ্যা ক'রে প্রশ্ন জানতে চাওয়াটা কনফিউস করা ব'লে মনে হ'লো আপনার? এতটাই পক্ষপাতিত্য? এটা নেগেটিভ মানসিকতা নয়? আপনি যদি বড়দা পরিবারের প্রতি এতটাই ডিভোটেড হন তাহ'লে আমাকে দেখিয়ে দিন আমার কোন কথাটা নেগেটিভ কথা সেটা তুলে ধরুন আমি উত্তর দেব। আর ঠাকুরবাড়ির বিরুদ্ধে বিরোধীদের কোনও কথা আপনার নেগেটিভ লাগেনি, লাগে না?? ৫৫ বছর ধ'রে শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে বেইমানী, শ্রীশ্রীবড়দা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অপবাদ ও অপপ্রচার সেগুলি নেগেটিভ মনে হয় নি? এগুলি সব পজিটিভ? কি দেখে আপনার মনে হ'লো আমি তাদের মেপেছি? ৫৫ বছর ধ'রে শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে "'আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা প্রথা' পূর্ণাংগ ও সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি পুরোনো ও নোতুন মন্ত্র, ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম প্রতীক গুরু বংশধর নিয়ে প্রফুল্লদার যতিচিহ্ন সহযোগে বাণীর ব্যাখ্যা, "আচার্য পরম্পরা বিষয়ে বাগ্মীপ্রবর প্রলয় মজুমদার' ইত্যাদি নানা প্রশ্নে যারা
মাপামাপিগুলি করলেন, শ্রীশ্রীবড়দাকে মির্জাফর বললেন প্রকাশ্যে ভিডিওতে, যা কিছু সব বিরোধীরা করলেন নানা অভিযোগকে সামনে রেখে প্রকাশ্যে কুৎসা নিন্দা সমালোচনা অপমান অশ্রদ্ধা করতে করতে সেই মাপামাপি গুলি আপনার চোখে-কানে ধরা পড়েনি? তখন কি চোখে-কানে অন্ধ ও কালা ছিলেন? এই ভিডিওর পর চোখ ও কানের বন্ধ তালা খুলে গেল? অদ্ভুত আপনার মানসিকতা! নামধ্যান আপনি করেন তো? যে বা যারা ৫৫ বছর ধ'রে অপরাধ ক'রে চলেছে তাদের পক্ষ নিয়ে ওকালতি করছেন তখন ন্যায়কে মাপার ক্ষমতা আপনার কতটা তা ভিডিও দর্শক ও শ্রোতা বন্ধুরা মেপে নেবেন। আর আমাকে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ও শ্রীশ্রীবড়দাকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মাপামাপি করার ক্ষমতা নিয়ে বলেছেন, খোঁচা মেরে বলেছেন নামধ্যন করতে ও মনের বিকৃতি দূর করতে। শ্রীশ্রীবড়দা ও তার পরিবারের প্রতি যখন এত ভক্তি, এত দরদ, এত ভালোবাসা হঠাৎ যদি জন্মই নিল তা' সেটা সদ্ বা বদ যে উদ্দেশ্যেই হ'ক, সেটা ঠাকুর বিচার করবে। তা একবার বিরোধীদের কর্মকান্ড নিয়ে কিছু বলবেন কি? আপনি কিছু বলুন তা শ্রীশ্রীঠাকুর শুনুক ও শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবার শুনুক আর আপনার মনের বিকৃতি দূর হ'ক।

প্রবন্ধঃ আসুন সত্যকে জানি, খুঁজি!

ফেসবুকে ও ইউটিউবে মাঝে মাঝে একটা দুটো লেখা ও ভিডিও চোখে পড়ে, পড়ি, শুনি, খুব ভালো লাগে! ফেসবুক ও ইউ টিউবের মত স্ট্রং মিডিয়া অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর ক'রে আলো জ্বালাবার কাজে লাগুক এই আহ্বান বহুদিন ধ'রে জানিয়ে আসছি আমার ফেসবুক বন্ধুদের কাছে। ফেসবুক ও ইউ টিউব যেন সস্তার প্ল্যাটফর্ম না হয়! সস্তার তিন অবস্থা এই কথা যেন ফেসবুক ও ইউ টিউবার ইউজার ও কর্তৃপক্ষ উভয়েই মাথায় রাখে।

সস্তার তিন অবস্থা আপনারা সবাই জানেন। আসুন একবার সহজ সরল ভাবে এই সস্তার তিন অবস্থাটা একবার ভেবে দেখি, আলোচনা করি ও নিজেদের সাবধান করি।
১. সস্তা ঠিক আছে, কিন্তু অর্থ তো খরচ হয়েছে নাকি? কিন্তু আল্টিমেট কোনও কাজে আসেনি।
২. বাজারে যাওয়া থেকে শুরু করে দোকানে ঘুরে ঘুরে কিনে নিয়ে বাসায় নিয়ে আসার জন্য সময় ও শ্রম দু'টোই নষ্ট হয়েছে।
৩. যেহেতু কোনও স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেন হয়নি সেই জন্য ব্যবহারের পক্ষে উপযুক্ত ছিল না।

১) যা চেয়েছি তা শেষ পর্যন্ত তা পাইনি।
২) আর যা পেয়েছি তা কোন কাজে না লাগেনি।
৩) আল্টিমেট শেষে মান সম্মান নষ্ট হয়েছে।


১) মানহীন ( Less Standard) জিনিস কিনে ঘরে আনা।
২) কিছু সময় বা কিছুদিন পরে তা থেকে সমাস্যা বের হতে থাকা।
৩) এবং ঠিক যখন দরকার সেই মুহুর্তে ব্যবহার করতে না পারা।


আশা করি আমার দর্শক ও শ্রোতা বন্ধুদের ব্যাপারটা বোঝাতে পারলাম। তাই ফেসবুককে ও ইউ টিউবকে অন্তত আমরা সৎসঙ্গীরা যেন সস্তা না ক'রে ফেলি অর্থহীন পোষ্ট ক'রে ও ভিডিও বানিয়ে। কারণ আমরা সৎসঙ্গী অর্থাৎ অস্তিত্বের সঙ্গী, প্রতিটি অস্তিত্বের সঙ্গী।
যাই হ'ক, এখনও ফেসবুক করি যদি মাঝে মাঝে কখনও বা রত্নর সন্ধান পাই ও যদি সত্যকে পরিবেশন করতে পারি এই আশা নিয়ে! তা না হ'লে ফেসবুক করা বন্ধ ক'রে দিতাম। ফেসবুকের মত স্ট্রং মিডিয়াকে নিয়ে ছেলেখেলা দেখে ভাবি পরশ পাথর হাতে পেয়েও যেমন মানুষ ফেলে দেয় অপ্রয়োজনীয় গুরুত্বহীন ছোট্ট পাথরের টুকরো ভেবে ঠিক তেমনি মানসিকতায় ফেসবুককেও ব্যবহার করি আমরা। আর ইউ টিউবেও আসি সেই একই আশা নিয়ে। কথায় আছে আশায় মরে চাষা! ভাবি রুখোশুকো জমিতে চাষ করতে করতে যদি কোনও একদিন সুগন্ধী ফুল ফুটে ওঠে, কোনও একদিন সুন্দর সকালের সন্ধান পাই, কোনও একদিন রাম রাজ্যের মত স্বর্গ রাজ্যের সন্ধানে রত সত্য সন্ধানীর সন্ধান মেলে, কোনও একদিন শ্রীশ্রীঠাকুরের চোখের জল মোছাতে পারে এমন এক পবিত্র হৃদয়ের সংস্পর্শে আসি! এই আশা নিয়েই ইউ টিউবে আসি। অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না, বলে লাভও নেই, অর্থহীন; যখন দেখি আমাদের সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা গানবাজনা করছে, ইষ্টপ্রসঙ্গ সে যেমনই ভালোমন্দ হ'ক না কেন তখন ভালোই লাগে কিন্তু যখন দেখি সৎসঙ্গীরা ঠাকুরবাড়ির কুৎসা করছে, নিন্দা করছে, শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য সমালোচনা করছে, মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে আবার অন্যদিকে সৎসঙ্গে, মঞ্চে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তৃতা দেবার সময় শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রেম ভালোবাসার কথার জমাট বরফ গলে একেবারে জল ক'রে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে চারপাশ, মহামিলনের কথা বলছে তখন অবাক হ'য়ে ভাবি এরা সৎসঙ্গী!? শ্রীশ্রীঠাকুরের দরবারে কি ভয়ঙ্কর কপটতা!!!! এখনই যদি এমন ভয়ঙ্কর কপটতার প্রকাশ হয়, তাহ'লে ভবিষ্যত আরও ভয়ঙ্কর অন্ধকার ঘোর কলি যুগে কি হবে!? আরও আশ্চর্য হ'য়ে যায়, যখন দেখি সৎসঙ্গী দাদারা মায়েরা এমনকি বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা ঠাকুরকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রী অশোকদাদা, বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা এমনকি শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে নিয়েও এবং তাঁদের ছবি দিয়ে যত্তসব অযৌক্তিক মিরাকেল, আজগুবি, কুসংস্কারের আশ্রয় নিয়ে তাঁদের নামে অদ্ভুত অদ্ভুত ক্যাপ্সহান লাগিয়ে ভিডিও বানিয়ে সস্তার সুড়সুড়ি দিয়ে দিয়ে সস্তার তিন অবস্থার মত অলৌকিকতার ওপর তামাম সৎসঙ্গীদের নির্ভরশীল ক'রে তুলছে।

একটা দু'টো উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হবে।
ভাদ্র মাসে এই কাজগুলি করবেন না। আচার্যদেবের নির্দেশ।", "চক্রফটো দেখার সময় ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন এই দু'টি কথা বলুন শুধু দেখুন কি হয়।" "ঠাকুরের কাছে কটা ধূপকাঠি একসঙ্গে জ্বালানো উচিত?" "বর্তমান আচার্যদেব কেন নীচে বসে কথা বলেন?" বর্তমান আচার্যদেব আজ থেকে তিনটি কাজ করতে বললেন।" শ্রীশ্রীবড়মার তিরোধান তিথিতে সকাল ১০টার আগে এই কাজ করুন, দেখুন কি হয়" ইত্যাদি নানা বহু সস্তার ভিডিও বানিয়ে সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা, দুর্বল, ভীরু, কুসংস্কারাছন্ন, অজ্ঞ সাধারণ অতি সাধারণ ভক্তদের কর্ম বিমুখ বানিয়ে অতি সহজেই সস্তায় না ক'রে পাওয়ার লোভ দেখিয়ে দিয়ে ভিডিওর মাধ্যমে টাকা রোজগারের মোক্ষম উপায় বানিয়ে ফেলেছে তথাকথিত সৎসঙ্গী এমন কি বাচ্চা অল্পবয়সী সৎসঙ্গী ছেলেমেয়েরা, সাথে মায়েরাও।

এই ভালোমন্দ মিশিয়ে, প্রশংসা নিন্দা নিয়ে আছি, ভালো আছি আর কি।

যাই হ'ক, ধর্ম, ঈশ্বর ও প্রেরিতদের নিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে হট কেকের মত আলোচনা ও ভিডিও হ'য়ে চলেছে। সনাতন ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, খ্রীষ্ট ধর্ম সব ধর্ম নিয়ে ও সব ধর্মের দেবদেবী ও প্রেরিত নিয়ে আলোচনা চলছে। ধর্ম জীবনের অঙ্গ হ'য়ে উঠেছে ও সেই ধর্ম নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা হ'য়ে চলেছে যুগ যুগ ধ'রে। ধর্ম, ঈশ্বর ও প্রেরিতরা আজ ভন্ড, কপট, ধান্দাবাজ ধার্মিকদের ব্যবসার উপকরণ, বৃত্তি-প্রবৃত্তি পোষণের মোক্ষম হাতিয়ার! অসত্য আজ সত্য হ'য়ে বিরাজ করছে মাথার ওপর, জ্বলজ্বল ক'রে জ্বলছে সূর্য্যের মত! অসত্যের ধ্বজাধারীরা ধর্ম ও ঈশ্বরকে নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা ক'রে যাচ্ছে আর এর জন্যে সব ধর্মের সব ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাসী দুর্বল, ভীরু, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষেরাই দায়ী।

"যখনই ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের উত্থান হয় তখনই সাধুদের পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতীদের বিনাশ করার জন্য আমি যুগে যুগে আবির্ভুত হ'ই"-----গীতার এই বাণীর রূপকার শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়ে তাঁর পরম ভক্ত অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে এই কথা বলেছিলেন। আর তাঁর কথামত বারবার তিনি এসেছেন কিন্তু তাঁর কথামত মানুষ তা বিশ্বাস করেনি। যাই হ'ক, সেই বিষয়ে পরে কোনও একদিন আলোচনা করবো।
যাই হ'ক, পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কথামত তাঁর কথাকে সত্যে পরিণত করার জন্য নবরূপে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে এসে এবার বললেন, "আগে সাহসী হও, অকপট হও, তবে জানা যাবে, তোমার ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।" আর, দুর্বল, ভীরু, কপট, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অজ্ঞ মানুষ আমরা তাঁর "সাহসী হও, অকপট হও" এই বাণীকে অস্বীকার ক'রে, পায়ে দ'লে এই ধর্ম জগতে ঢুকে পড়েছি, দাপাদাপি করছি। যদিও তিনি দয়া ক'রে সুযোগ ক'রে দিয়েছিলেন তাঁর সংস্পর্শে নিজেকে পরিবর্তন করার কিন্তু আমরা তাঁর কথাকে অবহেলায় অবলীলায় মাড়িয়ে চলেছি। তাই আমাদের মত এই ধরনের মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপস্থিতি ধান্দাবাজ ধর্ম ব্যবসায়ীদের মাথার ওপর নিশ্চিন্ত ছাতা হ'য়ে আছে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর ধ'রে; তা যতবারই ঈশ্বর স্বয়ং নিজেই মানুষের রূপ ধ'রে নেবে আসুক না কেন; কিছুই হবে না, এর শেষ পরিণতি ধ্বংস!
 
এই সমস্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মভীরু, লোভী, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ আমরা ঝোলের লাউ আর অম্বলের কদু! আমরা আবার ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি প্রবাদের মত। আর এর সঙ্গে ধর্ম ব্যবসায়ীদের অক্সিজেন যোগানোর জন্য সবসময় প্রস্তুত ও তৎপর একশ্রেণীর সমাজ কো বদল ডালোর স্বপ্ন বিক্রির ফেরিওয়ালা ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়!

তবে, কম হ'লেও সিরিয়াস ফেসবুক ইউজার ও ইউ টিউবার আছে! শুধু খুঁজে নাও তাকে! আসুন সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন সত্যকে জানি, খুঁজি! সূর্য পূর্ব দিকে হেলে পড়ছে ও পড়েছে। সময় চলে যাচ্ছে। সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না এটা সকলেরই জানা। সময় চলে গেলে, জীবন চলে গেলে আর সুযোগ পাবো না ঠাকুরকে জানার, নিজেকে জানার ও কিছু করার।

জীবন খুব অল্প কয়েকদিনের জন্য! যত দাপাদাপি কৈশোর পার হ'য়ে যৌবনে পা দেওয়া থেকে শুরু ক'রে প্রৌঢ়ত্বের দ্বোরগোড়ায় যাওয়া পর্যন্ত। তারপর সব শান্ত, স্তিমিত। তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। প্রৌঢ়ত্বে ও বার্ধ্যকেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এমন জনেদেরও সত্যকে জানার ইচ্ছা নেই; কেন? কেন নেই? কেন আমরা এত উদাসীন!? কিসের অহংকার? কিসের অহংকারে রাজনীতি ও ধর্মের ময়দানে অসত্য ও মিথ্যাকে আঁকড়ে ধ'রে ছুটে বেড়াচ্ছি আমরা!? এত জোরে ছুটছি যে একবারও ভাবছি না যে বয়স হয়েছে, সূর্য পাটে যেতে বসেছে, কাল সকালে চোখ খুললে ইহকাল আর না খুললে পরকাল। এখনও রিপুরা গলায় বকলেশ পড়িয়ে কুত্তার মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলেছে গন্তব্যহীন পথে। কিসের এত ইগো আমাদের!? কেন আমাদের সত্যকে জানার ইচ্ছা নেই!? আমি যদি ভুল জানি, অসত্য পথে চলি তাহ'লে আমার ছেলে, আমার মেয়ে, আমার পরবর্তী প্রজন্ম, ভবিষ্যত প্রজন্ম আরও বেশি আগামী দিনে ভুল জানবে, ভুল করবে, অসত্য পথে চলবে! এ কথা অসত্য, মিথ্যা? আমি অন্যকে না জানি ঠিক আছে আমি নিজেকে কি জানি না? আমার নিজের জীবনের অতীত দিনগুলোর কথা, আমার যৌবনের উচশৃঙ্খল বিশৃঙ্খল ভাবে চলা, ভুল পথে চলাগুলি কি ভুলে গেছি? মনে পড়ে না একবারও? নিজের জীবনের ওপর দিয়ে যা কিছু ভুল, যা কিছু উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল দিনগুলি চলে গেছে সেটা মনে থাকা সত্ত্বেও পরোক্ষভাবে আমি কেন আমার সন্তানের জীবনের ক্ষেত্রে শয়তানের এজেন্ট হবো!? কেন আমি আমার জীবনের ভুলগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবো? কেন আমি সেখান থেকে শিক্ষা নেবো না? এত তাড়াতাড়ি আমি ভুলে যাই কি ক'রে নিজের ভুলে আমার যৌবনের, আমার আদর্শহীন জীবনের কষ্টকর বিগত দিনগুলির কথা? সেদিন আমার ধ্বংসের, আমার অধঃপতনের সাথী ছিল সবাই কিন্তু চরম কষ্টের দিনগুলিতে কেউ দাঁড়ায়নি পাশে, বাড়িয়ে দেয়নি কেউ হাত, আর কেউ হাত বাড়িয়ে দিলেও অকৃতজ্ঞের মত ভুলে গেছি তাঁদের দয়ার, সাহায্যের সে কথা, ফলে দুর্ভোগ আর দুর্দিন হয়েছিল চিরসাথী।
তাই, আমাদের মনে রাখতে হবে নিজের দোষে নিজের সন্তানের মধ্যে ভবিষ্যতে নিজের ছায়া দেখে যেন চমকে উঠতে না হয়, আফশোস করতে না হয় সন্তানের ভবিষ্যত আদর্শহীন জীবনের দুর্দশা দেখে। আসুন, আলোর দিকে ঘুরে দাঁড়ান! আলোর দিকে মুখ তুলে তাকান। আলোকে পিছনে রেখে অহেতুক অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে অন্ধকার অন্ধকার ব'লে চীৎকার করবেন না, হতাশা, অবসাদের ঢাক পেটাবেন না। অন্ধকার আপনার অন্তরে, বুকের গভীরে, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে বসে আছে ধান্দাবাজিদের দিয়ে, শয়তানকে দিয়ে আপনাকে পিছন থেকে ছুরি মারার কাজে সহায়তা করার জন্য। The Greatest phenomenon of the world, বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় SriSriThakur Anukulchandra তাঁর সত্যানুসরণ গ্রন্থে ২০বছর বয়সেই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বললেন, "তোমাকে ভুলে আর তোমার জ্যোতির দিকে পিছন ফিরে 'অন্ধকার' 'অন্ধকার' ব'লে চিৎকার করবো না।" আসুন সৎসঙ্গী ভাইবোন, সত্য সন্ধানী ও অনুসন্ধিৎসু উদার সিরিয়াস মনোভাবাপন্ন ইগোমুক্ত সহজ সরল মানুষ হ'য়ে নিজের জীবনকে উদাহরণ ক'রে তুলি এবং ফেসবুক ও ইউ টিউব প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগাই। আমরা সৎসঙ্গীরা কেন ভেবে দেখবো না? কেন সৎসঙ্গীরা ফেসবুক ও ইউ টিউবকে হাতিয়ার ক'রে সিরিয়াস মনোভাব নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের দেখানো পথে মানুষকে বাঁচা ও বাড়ার পথ দেখাবো না? কেন মানুষকে কুসংস্কার মুক্ত ক'রে তুলবো না? কেন মানুষকে কর্ম মুখর ধর্মের কথা বলবো না? কেন মানুষকে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ক'রে তুলবো না? কেন মানুষকে ধর্মের প্রকৃত অর্থ বোঝাবো না? কেন মানুষকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কোথায় তা তুলে ধরবো না? কেন আমি জন্মেছি, কেন তুমি জন্মেছো, কেন ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন মোটাভাবেও কি নিজে ভেবে দেখবো না ও অন্যকে ভেবে দেখতে বলবো না? আমরা কি নিজেরা ভেবে দেখেছি বা ভেবে দেখতে বলেছি সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন একে অপরকে? আমরা নিজেরা মানসিকভাবে সবল? আমরা কি কুসংস্কার মুক্ত? আমরা কি সৎসঙ্গীরা ধর্ম্মের নামে, ঈশ্বরের নামে হাতে তাবিজ, গলায় মাদুলি, আঙ্গুলে আংটি, পাথর, কব্জিতে লাল সুতো, ললাটে সিঁদুর, চন্দন, ছাই লেপন, কোমরে কালো সুতো ও লোহা বাঁধা, বাবাজী, মাতাজী, জ্যোতিষী, শনি, রাহু, কেতু, তুকতাক, আগুন, ধূপধুনো, ঝাড়ফুঁক, ফুসমন্তর, জলপড়া, তেলপড়া, ভড় হওয়া, ম্যাজিক, ভোজবাজী, বোবা ভগবান, আকাশের ভগবান, মাটির ভগবান, অমূর্ত ভগবান আরাধনা ও ধর্মের নামে, ঈশ্বরের নামে প্রকাশ্যে নিষ্ঠুর নির্ম্মম অমানবিক ও পাশবিক জীব বলি ইত্যাদি ইত্যাদি নানারকম যুক্তিবিহীন, বিজ্ঞান হীন অযৌক্তিক ধর্ম্ম পালন ও ঈশ্বর আরাধনা থেকে কি সৎসঙ্গীরা মুক্ত? বিশ্বের সমস্ত বিস্মের বিস্ময় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় ও বিস্ময়কর পুরুষ, অভূতপূর্ব সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও বিজ্ঞানী শ্রীশ্রীঠাকুর কি দূর্বল, ভীরু, কুসঙ্কারাছন্ন, আত্মবিশ্বাসহীন, অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা, চালচলন, আচার আচরণ, চিন্তাভাবনা, কাজেকর্মে বিশ্বাসী সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা এমন সৎসঙ্গী চেয়েছিলেন? আমরা কোনওদিনই ভেবে দেখবো না? আমরা কোনওদিনই কি কুসংস্কারমুক্ত, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, আত্মনির্ভর, কর্মমুখর, প্রাণচঞ্চল, দৃঢ়, মজবুত, ঈশ্বরবিশ্বাসী বিজ্ঞানমনস্ক সৎসঙ্গী হ'তে পারবো না? মানবজাতীর অবনতি কোথা থেকে শুরু হয়েছে তা'তো শ্রীশ্রীঠাকুর ব'লে দিয়ে গেছেন তাহ'লে আমাদের অসুবিধা কোথায় এই সর্ব্বনাশা অবনতিকে ঠেকিয়ে আরও সর্ব্বনাশ হওয়ার হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে? আসুন ভেবে দেখি একবার আর নিজের বিবেকের আয়নায় নিজেদের একবার দেখি।
 

Sunday, May 26, 2024

কবিতাঃ কেটে যাবে ঘোর আঁধার।

স্থির হও! 
ছটফট করছো কেন ডানাকাটা পাখির মত?
দয়ালের মুখের দিকে তাকাও দেখো সব ঠিক আছে।
কোথাও কিছু নেই হিসেবের গরমিল।
নেই কোনও আঁধার আর সেট আপ ভাঙার ছবি।
যা আছে তোমার বিশ্বাসে।
এখানে রোগ নেই, শোক নেই, নেই গ্রহদোষ;
নেই বুদ্ধি বিপর্যয় আর দারিদ্রতা
যদি চলনে না থাকে কোনও দোষ।
এখানে যেমন জরা নেই, ব্যধি নেই, নেই অকাল মরণ
ঠিক তেমনি জেনো বন্ধু
এখানে আছে দীর্ঘায়ু চির যৌবন আমরণ।
এখানে ফুর্তি, আনন্দ আর আছে সফলতা;
দয়ালের মুখপানে দেখো চেয়ে দেখবে
মুহূর্তে ভ্যানিস তোমার সব ব্যর্থতা।
যদি দয়ালের মুখে দেখো কোনও বিমর্ষতার আঁধার
জেনো তোমার চরণপূজার তরে রচিত হয়েছে
সেই বিরাট বাধার পাহাড়।
এখনো সময় আছে সুদিন সামনে তোমার
ভাঙ্গো মিথ্যে কাল্পনিক আর অবিশ্বাসের আধার।
যে যেমন তাই নিয়ে থাকুক সে
যেও না দেখতে তা
শুধু নাও কাছে টেনে
দিয়ে প্রেম ভালোবাসা আর নম্রতা।
মনে রেখো তুমি ঠাকুরের,
এক ও একমাত্র ঠাকুরের।
পিছনের হাজারো পদধ্বনি
তোমার জন্যে নয়, সব ঠাকুরের উদ্দেশ্যে
ধাবমান জনতার পদধ্বনি।
স্থির হও, ধীর হও, হও শান্ত স্থিতধী।
রাখো বিশ্বাস বুকে টেনে নিয়ে একবুক দয়ালের নিঃশ্বাস
হনুমানের মতো বুকে রাখো দয়ালের ছবি।
ছুটে চলো, চলো ভীমবেগে দয়ালের মুখপানে চেয়ে
দিন শেষে ক'রো না জীবন শেষ মানুষ দেখতে যেয়ে।
ওঠো! জাগো! বলো, দয়াল আছে আর আমি আছি
ভাবনা কি আছে আমার?
ছুটে চলো দলে দলে বাধার পাহাড় 
স্থলে জলে পায়ে দলে
আমি নিশ্চয়ই ক'রে বলছি,
সুখ শান্তিতে যাবে ভরে ঘর
কেটে যাবে যত মিথ্যে অভিশাপের আঁধার।

Saturday, May 25, 2024

বিচিত্রা ৬

চোর কোতোয়াল কো ডাঁটে আর
দু'কান কাটা গ্রামের মাঝখান দিয়ে হাঁটে।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কেটেছে বহু দিনএবার পুষিয়ে দে তোর ঋণ।
অন্যায় আর মিথ্যাকে সাথী ক'রে
ভবসাগর পার হবি বুঝি তুই ওরে!?
এক কান কাটা যায় মাঠের ধার দিয়ে আর
দু' কান কাটা যায় মাঠের মাঝখান দিয়ে
অন্যকে কিছু বলার আগে
নিজের চরিত্র নিজের আয়নায় দেখা লাগে।
ইষ্টপ্রাণতার ধ্বজা তুলে ইষ্টপ্রতিষ্ঠায় করবি রে তুই কামাল? 
"ঠাকুর তোর এতই বেকুব ফাঁকি দেখে নয় সামাল"!!
ফাঁকির ফাঁকে পড়বি যখন বুঝবি তখন ঠ্যালা; 
শুধরাতে যদি চাস, তবে তুই শুধরে নে এই বেলা।।
বৃত্তি টান প্রবল হ'লে ব্যবসা বুদ্ধি খোলে;
ইষ্ট প্রেমে মাতাল হ'লে ভাসে নয়ন জলে।
ইষ্টপ্রেমের মুখোশ প'ড়ে হলি ইষ্টনিষ্ঠ!
পাপাচারে ডুবে রে তুই করলি নিজের অনিষ্ট!!
ইষ্ট কথার ফোয়ারা ছুটিয়ে ভাবছো হয়েছো ইষ্টপ্রেমে ধন্য? 
ব্যবহারে নাই, কালকা যোগী ভাতেরে কও অন্ন!!
ইষ্ট সেবার আড়ালে করো নিজের ব্যবসা বুদ্ধির সেবা!
বৃত্তি স্বার্থের ধান্দা নিয়ে ছুটছো তুমি দেবা!!
এসো মন্দিরমুখী করি সবারে কামাতে ধন, মান! 
ইষ্টমুখীর ধার ধারী না, যায় যদি যায় যাক প্রাণ!!
ঠান্ডা হাওয়া খাইয়ে তোমায় অবশ ক'রে দিলাম! 
দু'হাত ভ'রে টাকা কামিয়ে পকেট ভ'রে নিলাম!!!! 
আমি ইষ্টপ্রাণ!
মন্দিরমুখী হও সবাই' জিগির তুলে হ'লাম ইষ্টপ্রেমী; 
ইষ্টমুখীর ধার ধারী না; বন্ধু! আমি মন্দিরপ্রেমী!!
লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে এলাকা করি দখল!
টাকার নেশায় মত্ত মোরা ইষ্টনেশা নকল!!
আফজল খাঁয়ের প্রেম আর মেঘনাদের চাতুরী!
ইষ্টপ্রাণতার নামে এই অস্ত্রে চালাও ভক্তের বুকে হাতুড়ি!!
তোমার সাথে বন্ধুত্ব হইলো কিন্ত বন্ধু হইলা না! 
বন্ধুর চাইতে ছিল ধান্দা বড় আগে কইলা না!!
বুকের মাঝে নিলাম টেনে বন্ধু ভেবে যারে
আস্তিনে লুকানো খঞ্জরে ভাই বুকটা দিলে ফেড়ে!?

(২৫শে মে,২০১৭)




























প্রবন্ধঃ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি ও দেশনেতৃত্বের প্রতি আহবান,

দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাদের জনসংখ্যা রোধ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু বক্তব্য অতি বিনয়ের সঙ্গে আপনাদের কাছে রাখলাম।
সব কিছুরই ভারসাম্য বজায় থাকা ও রাখা উচিত। ভারসাম্য নষ্ট হ'লেই প্রকৃতি তার কাজ নিজেই ক'রে নেয়। আর যেখানে বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ব'লে কিছুই নেই, নেই কোনও শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির সরকারি পরিকাঠামো সেখানে কঠোর ও নির্ম্মম আইন প্রয়োজন ও জরুরী, জরুরী সৃষ্টি রক্ষার স্বার্থেই। কারণ কায়েমীস্বার্থ রক্ষাকারী শক্তি নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য ও মৌরসি পাট্টা কায়েম রাখার জন্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম ব্যবস্থাকে জিইয়ে রাখে অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্মবৃদ্ধির সুড়সুড়িকে হাতিয়ার ক'রে। আর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষা ও সচেতন বৃদ্ধির সরকারি পরিকাঠামো গঠনের। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি আর তা জরুরি শিক্ষা ও চেতনাকে ভিত্তি ক'রে। আর প্রয়োজন নিখুঁত প্রস্তুতির! এতটুকু ফাঁকও ব্যর্থতা ডেকে আনতে যথেষ্ট। শ্রীশ্রীবড়দার সাবধান বাণী, "একটা ফুটোও ফুটো দশটা ফুটোও ফুটো। জল বেরিয়ে যাবে। দশটা ফুটো দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরোবে আর একটা ফুটো দিয়ে ধীরে ধীরে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বেরোবে কিন্তু বেরিয়ে যাবে, শেষ হ'য়ে যাবে আজ না হয় কাল!" প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ লক ডাউন ঘোষণার সময় সৎসঙ্গের জীবন দর্শন শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী "BEING & BECOMING, LIVE & GROW WITH ENVIRONMENT, পারিপার্শ্বিকসহ বাঁচা-বাড়া"র আহ্বান জানিয়েছিলেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে। তাই এখানে ইগোর কোনও প্রশ্ন নেই। দেশকে বাঁচাতে হ'লে, দেশের জনগণের সুখ সমৃদ্ধি যদি সত্যি সত্যিই চাই তাহলে সবার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দেওঘর 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। দেশের স্বাধীনতার সময় ও দেশভাগের সময়ের প্রথম সারির নেতাদের মত আজকের দেশ নেতৃত্বও যেন ইগোকে ভিত্তি ক'রে সেই একই ভুল না করে। যে ভুল করেছিল তৎকালীন নেতৃত্ব শ্রীশ্রীঠাকুরের দেশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে কোথায় ভুল, কোথায় সংশোধন প্রয়োজন সে সম্পর্কিত সমস্ত পরামর্শকে ও দেশভাগ রোধের সমস্ত সম্ভাবনাকে পরাস্ত ক'রে যুক্তিযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবকে অস্বীকার ক'রে! ফলতঃ দেশ হয়েছিল ও হ'য়ে আছে আজও লুলা ল্যাংড়া! দেশ নেতৃত্বের সেই ভুল স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও একচুল সভ্যতার ও উন্নয়নের অগ্রগতির বদলে হাজার বছরের ব্যর্থতাকে অক্টোপাশের মত জড়িয়ে নিয়েছে সর্বাঙ্গে! বর্তমান দেশের কর্ণধারগণ ইগো থেকে সরে এসে সেই ভয়ঙ্কর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দশের, দেশের ও বিশ্বের সার্বিক স্বার্থে, দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য যেন সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শনকে হাতিয়ার করে আর এই হাতিয়ার করার জন্য প্রয়োজন দেশের নেতৃবৃন্দের ঠাকুরের জীবন দর্শন গভীরভাবে অধ্যয়ন ও আচার্য্য সন্নিধানে আলোচনা। নইলে এই প্রচেষ্টারও সলিল সমাধি ঘটবে শয়তানী শক্তির কাছে। বেশ কয়েক বছর আগে স্বর্গীয় সঞ্জয় গান্ধীর প্রচেষ্টাকে এই একই কৌশলে কবরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ও তাঁর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে কলঙ্কিত ক'রে; এটা যেন আমরা ভুলে না যায়। যদিও সঞ্জয় গান্ধীর জন্ম নিয়ন্ত্রণ রোধ পদ্ধতিতে সীমাহীন প্রস্তুতির অভাব ছিল, ছিল আঁটঘাঁট বেঁধে পথে নাবার জ্ঞান ও পরিকল্পনার চূড়ান্ত অভাব!!!!! তাই শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন দর্শনকে সামনে রেখে তাঁর সুরে সুরে মিলিয়ে তাঁর মত এককথায় বলতে পারি, হে দেশনেতৃত্ব! BE CONCENTRIC.
( ২৫শে মে'২০২০)

Thursday, May 23, 2024

বিচিত্রা ৫

যতই আসুক ঝড় তুফান,
ব'য়ে যাক পাগলা বাতাস!
বুকের গভীরে আছে দয়াল আমার,
ভয় কি? করি না হা হুতাশ।
মানুষ কো বদল ডালো 
নাকি সমাজ কো বদল ডালো? 
কোনটা? কোনওটাই নয়।
শুধু মুখে দয়াল ব'লো আউর
আপনে আপকো বদল ডালো।
যেমন আশ্রয় দেওয়া মানেই
প্রশ্রয় দেওয়া নয়,
ঠিক তেমনি ব্যাঘাত ঘটালেই উত্তরে
আঘাত দেওয়াও ঠিক নয়।
আঘাত ক'রেই প্রতিবাদ করতে হয়
এ কথা শেখালো কে তোমায়!? 
ভুল সংস্কৃতির বাহক হ'য়ে 
মানুষকে শোধারানো যায় 
নাকি সমাজ গড়া যায়?
প্রতিবাদ আর আঘাত
কিন্তু এক জিনিস নয়
এটা মাথায় রেখো
আর না বুঝে কথা বলা বাহাদুরি নয়কো 
তা কিন্তু আহাম্মকি, বুঝে দেখো।
যদি কাউকে পছন্দ না হয়,
ভালো না লাগে তার কথা
তবে তার থেকে দূরে সরে যাও 
তবুও তাকে আঘাত ক'রে 
ঠাকুরকে দিও না ব্যথা
মিথ্যে দিয়ে কি সত্যকে চাপা দেওয়া যায় 
নাকি শুধু বগবগানিতে 
বাস্তবকে অস্বীকার করা যায়!? 
সত্য বা বাস্তব এতই ঠুনকো!?
তুমি নিজে কিছু করোনি এতদিন 
শুধু ক্ষমতার চূড়ায় বসে বাজিয়েছো ভায়োলিন;
এখন অন্যের কাজে করছো হিংসা, 
হচ্ছে ভাবমূর্তি তোমার মলিন।
ইষ্টনিষ্ঠার বাদাম তুলে হ'লাম গোষ্টীদ্বন্ধের পথিকৃৎ।
দ্বন্দের জন্মে হ'লাম বড়ই প্রীত।
আমরা ওরা'-র পাঁচিলে ইষ্টকে করি খানখান!
গোষ্টী দ্বন্দের জিগির তুলে হ'লাম ইষ্টপ্রাণ!
নিন্দা মন্দের ঝড় তুলে করবো ইষ্টের চাষ!
অন্তর ভরা বিষ মাঝারে নিয়ে কূট শ্বাস!!

All reactions:




Wednesday, May 22, 2024

বিচিত্রা ৪

বন্ধু!
যারা ছেড়ে চলে গেলে অকারণ, 
ছেড়ে চলে গেলে বৃত্তি প্রবৃত্তির অমোঘ টানে 
এসো ফিরে আবার সেদিন 
যেদিন সাজাবো আমি যতনে
'দয়াল ঘর।'
সেদিনের দয়াল ঘরে সবাইকে জানাই 
অগ্রিম 'স্বাগতম' বন্ধু। প্রবি।
হে দয়াল!
অপেক্ষায় আছি বসে কবে আসে 
সেইদিন ও ফিরে আসে সেইদিনগুলো। 
ঘরে বাইরে উলুবনে কি মুক্তো ছড়াই 
আর রাতভোর দাঁড় টেনেটেনে 
রয়ে গেছি একই জায়গায়
আর করছি বড়াই !?
টাকা আপন মানুষ পর
যত পারিস টাকা ধর।
সব ছেড়ে আমি ধরলাম 
নতোমার রাঙা চরণখানি।
সেই চরণতলে সোনার ঘরে দেখি
কেন এত হানাহানি!?
একাকি আমি দেখি সেথা নিজেরে, 
চরণতলে দেখি নিজ মুখখানি! 
ভাবি দয়াল আছে আর আমি আছি 
ভয় কি আর আছে বন্ধু এখন।
বন্ধু! তুমি তো বলো, তুমি ঈশ্বর বিশ্বাসী 
আর তুমি ঈশ্বরকে ভালোবাসো
তাহ'লে অন্যের কষ্টে কি ক'রে থাকো ভালো, 
কি ক'রে তুমি হাসো!? 
রক্তাক্ত চারপাশ দেখে বন্ধু 
কাঁদে তোমার প্রাণ, কাঁদে তোমার মন
এ তো নতুন কিছু নয়! 
আদর্শ বিহীন জীবন, 
তাই তাত্ত্বিক আমেজ এমন ভাব হয়। 
নিজেকে প্রশ্ন করি না কেন,
যা করেছি আর যা করছি
এই জীবনে
ঈশ্বর খুশী তো আমার কাজে এ হেন!? 
নিজেকে প্রশ্ন করি না কেন,
যা করেছি আর যা করছি এই জীবনে
ঈশ্বর খুশী তো আমার কাজে এ হেন!? 
কপট ভালোবাসা কি?
ভালবাসতে চাই; কিন্তু নিজের স্বার্থে লাগলে ঘা
অমনি খেপে যাই। এই কি?
প্রায়ই শুনি,আসুন সবাই মিলে ভালো থাকি।
বিড়াল বলে মুচকি হাসি,
মাছ খাবো না তা' হয় নাকি! 
গরীবের ভাগে ভাগ বসায়
আর ইষ্টপ্রাণতার ধ্বজা ওড়ায়!!
ঠাকুর! তোমায় ঠান্ডা হাওয়া খাইয়ে
টাকা নেবো কামিয়ে;
তুমি যে আমার আয়ের উপকরণ!!
আমি গুরুভাই??
সব ভুলে গেলে পুরানো দিনের কথা!? 
হাত ধ'রে যে নিয়ে এলো একে একে সবারে 
যারা ছিল আঁধারে তারা সবে মিলে 
ব্যথা দিলে দয়ালেরে!? 
হে গুরুভাই আমার
তুমি কি জানো কেন তুমি দীক্ষা নিয়েছো? 
আর ঠাকুর কি চান তোমার কাছে? 
আর কেমনই বা দেখতে চান তোমায়?
বন্ধু! তোমার অতীত কুকর্ম
মনে পড়ে?
যদি পড়ে মনে তাদের জন্য 
দু'ফোঁটা চোখের জল ফেলো ইশ্বরের চরণে,
যাদের তুমি ক্ষতি করেছো।
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থরক্ষা করবা?
বাবু, ঘোড়ায় হাসবো আর কইবো, ঘাস খাবা?

 


































উপলব্ধিঃ সমঝদার কে লিয়ে --------- নেহী তো ......... মে যাও।

আমরা সৎসঙ্গীরা একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করছি ইদানিং আমাদের সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের কিয়দংশ ধর্ম ও সম্প্রদায় সম্পর্কিত দেশের বিতর্কিত কিছু কিছু ইস্যু নিয়ে ভীষণ অন্তরাসী এবং ভীষণভাবে প্রভাবিত। আর ফলস্বরুপ কমেন্ট আর শেয়ারের মাধ্যমে তাতে প্রতিক্রিয়াও দিয়ে চলেছে অনুরূপ!

অথচ যদি তাদের জিজ্ঞেস করা হয় আমাদের ঠাকুর কেন ও কিজন্য এই পৃথীবিতে নেবে এসেছিলেন? কেনই বা তিনি তাঁর আগের রূপের দেহ ত্যাগ করতে না করতেই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন? তাঁর আসার উদ্দেশ্য বা কারণ কি? আর এসেই বা তিনি তাঁর জীবন দর্শনের মূল কথা কি বলেছিলেন? আমরা যারা আমার এই লেখার প্রথমে কথিত কথার কট্টর অনুগামী তারা উত্তর দিতে পারবে না একজনও। ঠাকুর তাদের কাছে গৌণ! দেশ বা জনগণ আগে।
তাই আমার প্রিয় সৎসঙ্গী সাবধান। আমরা যেন ডিরেইল্ড না হই। ঠাকুরের আগমণ একটা বিশাল যুগের পরিবর্তনের কারণে। তাই সমঝদারকে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যায়। তো সমঝা তো ঠিক হ্যায় নেহী তো ----- যাও। --প্রবি।

Sunday, May 19, 2024

বিচিত্রা ৩

আফজল খাঁ প্রেম,মেঘনাদ চাতুরী,
ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা ও ইষ্টস্বার্থরক্ষার বুকে হাতুড়ি।
ইষ্টের সাথে কেরামতি?
আফজল খাঁ আর মেঘনাদ পরিণতি।
মনে রেখো গুরুভাই, কেষ্ট দাসের বংশধর;
মরে সবে লজ্জায়, কাঁপে থরথর!
মীরজাফর, জুডাস আর কেষ্ট দাস
আস্তিনে লুকায় খঞ্জর, মুখে প্রেমের ভাষ!!
বিবেকের বুকে মারছো লাথি, ধরছো টিপে গলা! "
শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর" বন্ধু আছে কিন্তু বলা।
সত্যের মুখে দিয়ে ছাই, আগুন কি নেভানো যায়?
সময় সবসে বড়া বলবান, মনে রেখো গুরুভাই।
দু'হাত মাথায় তুলে দিচ্ছো লম্বা দৌড়!
জিতে গেছো ভাবছো মনে? আসছে সময়,
হবে রাত কেটে ভোর।
সত্যের মুখোমুখি হ'তে ভয় পাও?
অথচ ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠা-ইষ্টস্বার্থরক্ষার ধ্বজা ওড়াও।
অন্যের মুখে খেয়ে ঝাল করছো গালাগাল?

আসছে সময় যখন ডুববে তরী
তখন ধরবে না কেউ হাল!!
( লেখা ১৭ই মে'২০১৭)



All re



All re

Saturday, May 18, 2024

প্রবন্ধঃ স্বপ্ন ও বাস্তব। পিতাপুত্রের লীলা।

সেই যে ২০১৪ সালে প্রথম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল সেই সময় থেকে আজ ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর কতবার যে তাঁর কাছে গিয়েছি নিজের ও ছেলেমেয়ের পড়াশুনা, চাকরী, ব্যবসা ইত্যাদি নানা সমস্যায় পড়ে তার হিসাব নেই। আর প্রতিবার তাঁর কাছে সমস্যা নিবেদনের পর, বিপদের মধ্যে প'ড়ে আমরা যখন বিশ্বাস, শক্তি হারিয়ে ফেলেছি সেই হারিয়ে যাওয়া অবস্থার মধ্যেও উঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করার শক্তি পাওয়ার জন্য তিনি আমাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসকে খুঁজে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর কত বিপদের সঙ্গে লড়াই করার, বিপদকে অতিক্রম করার শক্তি যে ফিরে পেয়েছি আমি ও আমার ছেলেমেয়ে এই দশ দশটা বছর তা' যদি আজ স্বীকার না করি তাহ'লে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীটা আমার ও আমার ছেলেমেয়ের জন্য প্রযোজ্য। শ্রীশ্রীঠাকুরর বলেছেন,"অকৃতজ্ঞ বেইমানকে ঝেটিয়ে তাড়াও এক ধমকে।" আর, বেইমানি, অকৃতজ্ঞতা রক্তে থাকে। আগামী দিনগুলিতে এই দশবছরে কি কি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের দয়া পেয়েছি, শ্রীশ্রীঠাকুরকে আচার্যদেবের মধ্যে উপলব্ধি করেছি তা পরবর্তী ভিডিওতে তুলে ধরবো।


আজ, ২০১৬ সালের একটা ঘটনার কথা বলি, সেবারও গিয়েছিলাম প্রতিবারের মতো ঠাকুরবাড়ি। প্রতিবারের মতো সেবার গিয়েছিলাম ছেলেমেয়ের দু'জনের নোতুন আর এক জায়গায় চাকরীতে জয়েন করার কথা শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাছে নিবেদনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সন্ধ্যেবেলায় গিয়ে যখন পৌঁছলাম তখন শ্রদ্ধেয় শান্তিদার কাছে খবর নিয়ে জানলাম শ্রীশ্রীবাবাইদাদা সেদিনই বেরিয়ে গেছেন বাইরে। এক ঝটকায় মনটা ভেঙে চুরমার হ'য়ে গেল। হতাশা আর অবসাদে ঢেকে গেল শরীর-মন। ছেলেমেয়ে অস্থির হ'য়ে পড়লো। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কান্না ভেজা গলায় মেয়ে বললো, বাবা কি হবে? আমি কোনও উত্তর দিতে পারলাম না। ছেলে চুপ ক'রে আছে কোনও কথা বলছে না। কারণ এখান থেকে ফিরে গিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ছেলেমেয়ে দু'জনকেই নোতুন জায়গায় জয়ন করবে কি করবে না। স্ত্রী ছেলেমেয়েদের আশ্বাস দিয়ে বললো, চিন্তা করিস না। কোনওবারই খালি হাতে ফিরে যাইনি। এবারও ঠাকুর একটা কিছু নিশ্চয়ই ব্যবস্থা ক'রে রাখবে। বরাবরই স্ত্রীর বিশ্বাস একটু গভীর। সেসময় আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার কাছে নিবেদনের পরিবর্তে শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাছে সমস্ত কিছু নিবেদন করতে হ'তো। তাই স্ত্রীর কথা শুনে মনে মনে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম, যে মানুষটার কাছে নিবেদন করবো সেই মানুষটাই যখন নেই তখন কা'কে আর নিবেদন করবো?
যাই হ'ক, ঠাকুর, বড়মা ও বড়দা প্রণাম ক'রে এসে উঠলাম সেন্টিনারিতে। সেখানে এসে নাম অ্যাড্রেস এন্ট্রি ক'রে নির্দিষ্ট ঘরে এসে বসলাম। শ্রীশ্রীবাবাইদাদা নেই শুনে আর কারও কিছু খেতে ইচ্ছে করলো না। সঙ্গে যা ছিল তাই-ই সামান্য খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম এলো না। এমনভাবে রাত কেটে গেল।


ঘড়িতে তখন ভোর সাড়ে চারটে। কিন্তু তখনও অন্ধকার। মেঘলা আকাশ। ঝিরঝির ক'রে বৃষ্টি পড়েই চলেছে। সেন্টিনারির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চেয়ে আছি বাইরের রাস্তার দিকে। প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ছুটে চলে যাচ্ছে ট্রাক। ট্রাকের আলোয় বৃষ্টির ধরণটা চোখে ধরা পড়ছে। বাইরে ফাঁকা। কেউ কোথাও নেই। একটানা শুধু বৃষ্টির শব্দ। মনের ভিতরটা বড় অস্থির হ'য়ে রয়েছে। হালকা বাতাস বইছে। চোখে মুখে এসে বাতাস তার ঠান্ডা হাত বুলিয়ে যেন শুষে নিচ্ছে দুশ্চিন্তাযুক্ত ক্লান্তির মেঘ! মনে হ'ল যেন আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম ঐ বৃষ্টিঝরা আলোআঁধারি ভোরের আকাশে প্রভু যেন বাতাস হ'য়ে এসে কানে কানে ব'লে গেলো, 'চিন্তা কিস বাত কি? হাম হ্যাঁয় না!' আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়েছিলাম রাস্তা ও আশপাশের গাছগাছালি, বাড়িঘর ও আকাশের দিকে। কখন যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ছেলেমেয়ে বুঝতে পারিনি। ওদের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। 'বাবা! কি হবে!? বৃষ্টি যে প'ড়েই চলেছে।' উৎকণ্ঠা গলায় কথা বললো মেয়ে। আমি চেয়ে দেখলাম মেয়ে আমার খুবই চিন্তিত। কারণ আজ যদি সকালে বেরোতে না পারি তাহ'লে কাল বাড়ি ফিরে যাবার দিন। খালি হাতে ফিরে যেতে হবে এবার ঠাকুরবাড়ি থেকে! ছেলে বললো, 'বাবা প্রার্থনার সময় হ'য়ে গেছে আর বাইরেও বৃষ্টি পড়ছে জোরে, আজকে আর যাওয়া যাবে না। ঘরে চলো।' আমি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সম্মতি জানিয়ে ঘরে প্রবেশ ক'রে বিছানার উপর বসে পড়লাম। আর তার কিছুক্ষণ পরেই ভেসে এলো ঠাকুরবাড়ির সমবেত প্রার্থনা। সত্যি বলতে কোনও লজ্জা নেই, প্রার্থনায় মন বসছিল না; শুধু মনে মনে বলছিলাম, 'ঠাকুর! বৃষ্টি থামিয়ে দাও। প্রার্থনার শেষে যেন মন্দিরে যেতে পারি।' একসময় প্রার্থনা শেষ হ'লে আমরা বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু আকাশ বাদল মেঘে ঢেকে আছে। আমরা সবাই ঘরে তালা দিয়ে মন্দিরে যাবার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম এই ভোরের বৃষ্টিভেজা রাস্তায় লোক সমাগম কম। আমরা আশ্রমের গেট পেরিয়ে সোজা হেঁটে চললাম। কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কার কাছে যাচ্ছি কিছুই জানা নেই কারণ বাবাইদাদা তো আজ দর্শন দেবে না। মন্ত্রমুগ্ধের মত এক অমোঘ টানে আমরা তিনজনে এগিয়ে চলেছি। স্ত্রী সঙ্গে নেই। সে অনেক আগেই প্রার্থনা শেষ হতেই বেরিয়ে পড়েছে বাবাইদাদা বসবেন কিনা তা জানবার জন্যে। আশা, যদি বসেন। মেমোরিয়ার পাশ দিয়ে যাবার সময় ছেলে বললো, 'বাবা কাল একটা স্বপ্ন দেখলাম।' সঙ্গে সঙ্গে মেয়েও বিস্ময়ে ব'লে উঠলো, 'তুই দেখেছিস! আমিও স্বপ্ন দেখেছি! তুই আগে বল, তারপরে আমি বলবো।' ছেলে ব'লে চললো তার স্বপ্নের কাহিনী। আমি বললাম, চল আগে ঠাকুর প্রণাম করে আসি। ঠাকুর, বড়মা, বড়দা প্রণাম সেরে এগিয়ে চললাম উদ্দেশ্যহীনভাবে। ছেলে শুরু করলো তার স্বপ্নের কথা। প্রথমে আমি স্বপ্নে দেখা গল্পে মন দিতে পারছিলাম না। মন পড়ে রয়েছিল অন্য এক জায়গায়; শুধু মন বলছিল, 'ঠাকুর! কি হবে! কি করবো ঠাকুর!' হঠাৎ মনটা আটকে গেল এক জায়গায়। ছেলে আমার সঙ্গে পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলছে, 'বাবা! ঐ জায়গায়! ঐ জায়গায়!' মুখ ঘুরিয়ে বললাম, 'কি ঐ জায়গায়? ছেলে বললো, 'এই যে এতক্ষণ বললাম, তুমি শোনোনি?' আমি একটু লজ্জিত হ'য়ে বললাম, 'না, মানে ইয়ে.........।' ছেলে বললো, 'ও বুঝেছি।' আমি বললাম, 'বল না কি বলছিলি। আমি একটু অন্যমনস্ক হ'য়ে গেছিলাম। তাই......, এই জায়গায় কি হয়েছে? ছেলে বললো, কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম, ঠিক এই মেমোরিয়ার পাশ দিয়ে আমি বাবাইদাদার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছি। বাবাইদাদা আমাকে খুব বকছে। জোরে ধমক দিয়ে বলছে, 'কোথাও যেতে হবে না। এখন যেখানে আছো সেখানেই থাকো। চুপ ক'রে মুখ বুঝে সেখানেই কাজ করো মন দিয়ে। কেন এখানে কি ভালো লাগছে না? এখানে কি হয়েছে? এখন কোথাও চেঞ্জ করার দরকার নেই।'

আমি এই কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হ'য়ে গেলাম। ছেলে কি বলছে! উৎসাহে, আনন্দে, বিস্ময়ে আমি আবার শুনতে চাইলাম স্বপ্নের বিষয়। ছেলে আবার বললো স্বপ্নে দেখা ঘটনা। বললো, আমি বারবার নানাভাবে কোম্পানি চেঞ্জ করার মনোভাব প্রকাশ করায় বাবাইদাদা রেগে গেলেন। আমি চুপ ক'রে গেলাম। তারপর পিঠে তাঁর হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে খুব নিচুস্বরে মিষ্টি ক'রে বললেন, 'এখানেই থাক, কোথাও এখন যাবার দরকার নেই; যা হবার এখানেই হবে, ভালো হবে।' বাবাইদাদার কোমল হাতের স্পর্শে শরীরে শিহরণ খেলে গেল। মনে হ'ল হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ যেন বইয়ে গেল শরীরের শিরায় শিরায় এক লহমায়। চমকে মুখ তুলে তাকালাম বাবাইদাদার মুখের দিকে। দেখলাম স্মিথহাস্যে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর হাসিতে ঝরে পড়ছে হাজার চাঁদের আলোর ঝর্ণা! আর তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল। এক নিশ্বাসে কথাগুলি ব'লে থামলো ছেলে আমার। আমি অবাক হ'য়ে শুনছিলাম কথাগুলি। মনে মনে ভাবলাম একেই কি বলে, Divine dictation!? তারপর আর কিছু ভাবতে পারলাম না। মনে মনে খুব খুশী হ'লাম। যাক ঠাকুর মুখ তুলে অন্তত চেয়েছে। ঠাকুর শুনেছে আমার প্রার্থনা। আজ আর কিছু হ'ক আর না হ'ক, বাবাইদাদার দর্শন.............. পাই আর নাই পাই, চাকরীর ব্যাপারে ছেলে আমার সিদ্ধান্ত পেয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত হীনতায় আর আমার ছেলেকে ভুগতে হবে না বা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার হাত থেকে ছেলে আমার বেঁচে গেল। ঠাকুর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। চলতে চলতে দু'হাত জোর ক'রে তাঁর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালাম। আর তখনই কানের পাশ দিয়ে বইয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাসে ভর ক'রে কে যেন ব'লে গেলো, 'যার জীবনে যত ভুল কম, তার জীবনে তত সুখ বেশী।'

আমরা তখন চিড়িয়াখানার পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছি বাবাইদাদা যেখানে দর্শন দেন সেখানের উদ্দেশ্যে যদি হঠাৎ দর্শন দেন এই আশায়। তখন যেতে যেতে মেয়েকে বললাম, 'তুই কি স্বপ্ন দেখেছিস?' মনের মধ্যে লাড্ডূ ফুটে চলেছে অনবরত যদি এমন কিছু মেয়ের বেলায় হয় এই লোভে। মেয়ে তার ভাইয়ের মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। মুখে কোন কথা নেই। মনে হচ্ছে যেন, ভাইয়ের কথা বিশ্বাসই করতে পাচ্ছে না। বিস্ময়ে জোরে চেঁচিয়ে ছেলেকে ব'লে উঠলো, তুই সত্যি বলছিস? ছেলে বললো, হ্যাঁ। মিথ্যা বলবো কেন? ভাইয়ের কথা শুনে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠে মেয়ে বললো,'বাবা! আমাকেও বাবাইদাদা বলেছে, কিন্তু আমাকে বকেনি।' আমি বিস্ময়ে বলে উঠলাম, তাই নাকি!? 'কি বলেছে বল, বল!' আমার আর ধৈর্য ধরলো না। আমি মেয়েকে ব'লে উঠলাম। মেয়ে আনন্দে যা বললো তা'তে মাথা ঘুরে গেল। বাবাইদাদা দুজনকেই তাদের সমস্যার সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। যদি বিশ্বাস করি তাহ'লে যে সমাধান তিনি সামনে উপস্থিত থেকে দিতেন সেই সমাধান তিনি দিয়েছেন স্বপ্নে! এর থেকে আর কি বড় আশীর্বাদ হ'তে পারে আমাদের জীবনে বাস্তবে! মেয়ে বলতে লাগলো, 'আমি বাবাইদাদাকে নতুন কাজের জায়গায় জয়েন করার অফার গ্রহণ করবো কিনা জিজ্ঞেস করলাম। বাবাইদাদা ঐ নতুন কোম্পানী সম্পর্কে জানতে চাইলেন বিস্তারিত। আমি 'ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড' সম্পর্কে, কাজের সম্পর্কে, স্যালারী সম্পর্কে সব বললাম। সব শুনে তিনি হাসি মুখে সম্মতি দিলেন ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড'-এ জয়েন করতে।'

আমি চুপ ক'রে শুনছিলাম কথাগুলি। আমরা কথা বলতে বলতে চিড়িয়াখানার পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছি। একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যেন চলেছি আমি। এও কি সম্ভব! এইভাবেও কি সমাধান পাওয়া যায়! চারপাশে ঠান্ডা একটা বাতাস ব'য়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস মন প্রাণ দেহ সব জুড়িয়ে দিচ্ছে। ভোরের আলো তখনও মেঘলা আকাশের জন্য ফুটে উঠতে পারছে না। মুখের ওপর হালকা হাওয়া হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে পুষ্পবৃষ্টির মত ঝিরঝিরে বৃষ্টি ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে মিশে এসে চোখে মুখে পড়ছে। একটা হালকা আলো অন্ধকারের চাদর যেন গোটা আশ্রমটাকে ঘিরে রেখেছে। চারপাশের গাছগাছালির ঘিরে আলোআঁধারি ঠান্ডা নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন রুপকথার রাজ্যে নিয়ে এসেছে আমাদের। মনে হচ্ছে আমি যেন স্বর্গের বুকে হেঁটে বেড়াচ্ছি। আমি হাঁটছি না, আমায় যেন কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই ঘোর লাগা অবস্থাটা যেন চেপে বসছে ক্রমশঃ। আমার এইরকম চলা দেখে ছেলে বললো, 'বাবা, তোমার শরীর খারাপ লাগছে?' আমি থতমত খেয়ে ব'লে উঠলাম, 'না, না।' ঠিক সেই সময় হঠাৎ পাশ দিয়ে একটা এনফিল্ড বাইক হুশ ক'রে বেরিয়ে গেল। মেয়ে সেদিকে তাকিয়ে উত্তেজনায় বলে উঠলো, 'বাবা! বাবা! অবিনদাদা গেল, অবিনদাদা গেল।' আমি কথাটা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম। চমকে বলে উঠলাম, 'কোথায়!? কোথায়!? দেখলাম, বাইকটা আমাদের যাওয়ার পথের উল্টো দিকের সামনের গোশালার পাশ দিয়ে এসে ফোয়ারার দিক দিয়ে গিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। তারপর রাস্তার বাঁ পাশের শ্রীশ্রীঠাকুরের সুইমিং পুলের পাশ দিয়ে পিছনে ভিতরের ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। আমি বললাম, 'ঠিক দেখেছিস তো?' ছেলে তার উত্তরে সম্মতি জানিয়ে বললো, 'হ্যাঁ বাবা, অবিনদাদাই গেলো।' মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম রাস্তার ভিতরের ঐ ফাঁকা জায়গায় গাছের নীচে বাইকটা দাঁড় করিয়ে বাইকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অবিনদাদা; মনে হ'লো কারও জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তখন দ্বিধাগ্রস্থ। অবিনদাদার কাছে যাবো কি যাবো না, কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মনে মনে ভাবলাম, ঠাকুর তুমি এত দয়াময়! তুমি কি আমার প্রার্থনা শুনেছো! বাড়ি থেকে আসার সময় এবং এখানে এসে গতকাল বাবাইদাদার শরীরের কারণে দর্শন না দেওয়ার কথা জানতে পেরে যা ভেবেছিলাম, ঠাকুরের কাছে যা প্রার্থনা করেছিলাম এইটা কি তারই ইঙ্গিত!!!!! মনে মনে ভাবছি, যাবো, কাছে যাবো? এই ভোরের আলোআঁধারির চাদরে ঢেকে থাকা মেঘলা আকাশের নির্জন ফাঁকা জায়গায় অবিনদাদা দাঁড়িয়ে আছেন একেলা, কাছে পিঠে কেউ নেই, রাস্তা দিয়েও কেউ যাচ্ছে না। আমি অবাক হ'য়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম অবিনদাদার দিকে চেয়ে। মনে মনে একটা লজ্জাও লাগছিল; কি জানি তিনি কি মনে করছেন। আমাদের দিকে চেয়ে আছেন তিনি। একটা রহস্যময় পরিবেশ যেন মুহূর্তে তৈরী হ'য়ে গেলো। মনের মধ্যে তোলপাড় হ'তে লাগলো, এত ভোরে কেন তিনি এখানে, কেন তিনি!? 'এখন কি করবো' এইকথা ছেলেমেয়েদের বলাতে তারাও বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে, কি বলবে। দেখলাম, অবিনদাদা স্থির দাঁড়িয়ে আছে ঐ গাছের আলোআঁধারি ছায়ায়। একবার দেখলাম, মুখ ঘুরিয়ে যেন আমাদের দিকে তাকালো। আমি আর কোনওকিছু না ভেবেই অনেকটা নেশাগ্রস্থের মত ছেলেমেয়েদের নিয়ে হেঁটে চললাম অবিনদাদার দিকে। যা হবে হ'ক। ঠাকুরের এইটাই ইচ্ছা। নইলে এইসময় এই প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি এখানে এলেন কেন!? তবে কি আমার প্রার্থনা পূরণ ক'রে দিলেন দয়াল ঠাকুর!?


'তাঁর ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা' এইভেবে এগিয়ে গেলাম ছেলেমেয়েদের নিয়ে; কাছে গিয়ে প্রণাম করলাম। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ' এরা আমার ছেলেমেয়ে। বাবাইদাদার কাছে এসেছিলাম ছেলেমেয়ের চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে কি করবে সেই সম্পর্কে আশীর্বাদ নিতে। কিন্তু এসে শুনলাম বাবাইদাদা শরীরের কারণে দর্শন দেবেন না। তিনি নেই। তাই কি করবো বুঝতে পারছি না। প্রতিবার তাঁর কাছে ওরা নিবেদন করে। আজ ছেলেমেয়ে খুব হতাশ হ'য়ে পড়েছে, খুব চিন্তাগ্রস্থ, তাই আপনার কাছে এলাম।' অবিনদাদা বললেন, 'হ্যাঁ, বাবার শরীরটা একটু খারাপ, তাই ক' দিন দর্শন দেবেন না। কলকাতায় গেছেন'। তারপর খুব মিষ্টি ক'রে ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন, 'কি হয়েছে?'
অবিনদাদার মুখের হাসির দিকে চেয়ে মনে হ'ল, এই আলোআঁধারি মাঝে হাজার সুর্যের জ্যোতিঃ যেন ঝরে পড়ছে। মুহূর্তে যেন অন্ধকার কেটে আলোয় ঝলমল ক'রে উঠলো চারপাশ!!!!!!


অবিনদাদার প্রশ্নের উত্তরে আমি মেয়েকে দেখিয়ে বললাম, 'ও বাবাইদাদাকে ওর চাকরীর সমস্যার কথা বিস্তারিতভাবে আগে জানিয়েছিল। ও যেখানে বর্তমানে কাজ ক'রে সেখানে যেতে আসতে ছ’ঘন্টা সময় লাগে। ক্লান্ত হ'য়ে পরে। বাবাইদাদা সব শুনে মেয়েকে আশীর্বাদ ক'রেছিলেন। বলেছিলেন, সব ঠিক হ'য়ে যাবে। ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে, নির্ভর করতে। বাবাইদাদার আশীর্বাদের পরেই 'ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড' থেকে সেখানে জয়েন করার জন্য অফার এসেছে। পয়লা আগস্ট থেকে জয়েন করতে বলেছে। তাই এসেছিল বাবাইদাদাকে জানাতে সেখানে জয়েন করবে কিনা। কিন্তু এসে জানতে পারলো বাবাইদাদা দর্শন দেবেন না। তাই আপনি যদি............... বলেই চুপ করে গেলাম। শুধু মেয়েকে বললাম, 'তুই বল।‘
মেয়ে চোখের জল মুছে বললো, 'আমি এখন যেখানে কাজ করি সেখানে যেতে আসতে ছ’ঘন্টা লাগে। খুব কষ্ট হয়। বাবাইদাদাকে কষ্টের কথা সব জানিয়েছিলাম। আমি আর পারছি না। যেতে ৩ঘন্টা, আসতে ৩ঘন্টা, ৬ঘন্টা লেগে যায়। বাবাইদাদা সব শুনে বলেছিলেন, ‘এইভাবে কন্টিনিউ করলে জীবনীশক্তি ক’মে যাবে।‘ তখন আমি বলেছিলাম, আপনি আশীর্বাদ করুন যেন আমি কাছাকাছি পেয়ে যায়।‘ বাবাইদাদা বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, চেষ্টা কর। ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস রাখ।‘ বাবাইদাদা আশীর্বাদ করেছিলেন গত মাসে আর তারপরেই আমি কোনও যোগাযোগ না করা সত্ত্বেও ‘ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড’ থেকে অফার এসেছে সেখানে জয়েন করবার জন্য। তাই আমি জয়েন করবো কিনা বাবাইদাদাকে জানাতে এসেছিলাম; কিন্তু বাবাইদাদার.........‘ এই পর্যন্ত ব’লে মেয়ে আমার চুপ ক’রে গেল। তারপর বললো, ‘আমি জয়েন করবো?’ তখন অবিনদাদা মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন চাকরী সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। মেয়ে ‘ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড’ সম্পর্কিত বিষয় ও কাজের বিবরণ, ডিপার্টমেন্ট, পজিশান, মাহিনা, বাড়ি থেকে দূরত্ব, যেতে আসতে সময় ইত্যাদি সব একে একে যেমন যেমন অবিনদাদা জানতে চাইলেন ঠিক তেমনি তেমনি মেয়ে তাঁর কাছে তুলে ধরলো। আমি আর আমার ছেলে ওদের কথার মাঝে পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনলাম। আমি অবাক হ’য়ে মনে মনে ভাবছিলাম এই অল্প বয়সে (১৬ বছর) একজন কত পরিণত হ’লে, কত মেধার অধিকারী হ’লে চাকুরী সংক্রান্ত এত নিখুঁত আলোচনা করতে পারে! কত আত্মমগ্ন ধীরস্থির হ’লে, কত শারীরমানস ও আত্মিকতায় মিশে জমাট ক্ষীর হ’লে তাঁর চেয়ে বয়সে বড় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা দিশেহারা একজন চাকুরিরতা মেয়েকে সহজ নিখুঁত সমাধান দিতে পারে তা’ নিজের চোখে, নিজের কানে না দেখলে, না শুনলে বিশ্বাস হ’ত না! মেয়ের মুখে পরপর সব শুনে অবিনদাদা মেয়েকে হেসে বললেন, ‘আপনি ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ডে জয়েন করুন। পরে সময়মত একবার এসে বাবাকে জানিয়ে আশির্বাদ নিয়ে যাবেন।‘ মেয়ের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অনেকদিন পর মেয়েকে এমন নির্মল হাসি হাসতে দেখে আমার মন আনন্দে ভরে উঠলো। তারপর হাসতে হাসতে ছেলের দিকে তাকিয়ে অবিনদা বললেন, ‘তোর কি হয়েছে?’ ছেলে একবার আমার দিকে আর একবার অবিনদার দিকে তাকালো, কি করবে বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছিলো। আমি ছেলেকে হাত ধ’রে কাছে টেনে নিলাম। বললাম, অবিনদাদাকে বল তোর কথা। ছেলে সাহস ক’রে তার বর্তমানে যেখানে চাকরী করে সেই ফ্রেঞ্চ মাল্টিন্যাশানাল সারভিসেস অ্যান্ড বিজনেস কন্সাল্টিং করপোরেশানের ক্যাপজেমিনির কথা জানিয়ে অন্য আর এক আমেরিকান মাল্টিন্যাশানাল করপোরেশান আই টি সেক্টরে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করায় অবিনদা মুহূর্ত মাত্র চিন্তা না করেই সরাসরি বললেন, ‘কেন এখন যেখানে আছিস সেখানে কি খারাপ আছিস? কোনও অসুবিধা হচ্ছে? উত্তরে ছেলে যা বললো তা হ’লো,
এখন যেখানে চাকরী করছে সেই চাকরিটা বাবাইদাদার আশীর্বাদে পেয়েছিল। চাকরিটা পাবার পর কিছুদিন খুব অসুবিধা হয়েছিল, চাকরিতে টিকে থাকাটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কেউ কো-অপারেট করতো না। একা একা বসে থাকতো। কাজ না বুঝতে পারলে কেউ এগিয়ে এসে কাজ বুঝতে সাহায্য করতো না। ভুল না হ’লেও বলতো ভুল হয়েছে আর সামান্য ভুল হ’লে বড় ক’রে দেখাতো। কাজ যাতে না বুঝতে পারে, না করতে পারে তার জন্য পুরোনো কর্মীরা সবসময় সচেষ্ট থাকতো। সারাদিন কাজ ক’রেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণিত হ’তো না, আর যারা কিছু করতো না, শুধু ম্যানেজারের ঘরে বসে থাকতো, ফাইফরমাশ খাটতো তারা হাইলাইট হ’তো। এমন অবস্থায় মানসিক বিপর্যস্ত হ’য়ে ঠাকুরবাড়ি ছুটে এসেছিল বাবাইদাদার কাছে। বাবাইদাদার কাছে নিবেদন করেছিল সমস্যার কথা। বাবাইদাদা তখন ছেলেকে বলেছিলেন, ‘যারা কাজ করে, যারা কাজে যোগ্য তাদের ম্যানেজারের দয়ার দরকার হয় না; ফেবার তাদের দরকার হয় যারা অযোগ্য ও অদক্ষ, যারা কাজে ফাঁকি দেয়। তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সেই কাজ তুমি মন দিয়ে ক’রে যাও। অন্য কোনও দিকে মন দিতে যেও না। তোমার কাজ শুধু তোমার কাজ মন দিয়ে করা আর সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।‘ তারপর থেকে বাবাইদাদার নির্দেশ মতো শুধু কাজের দিকেই মন দিয়েছে ছেলে; আর, তার পুরস্কার স্বরূপ বাবাইদাদার আশীর্বাদে পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে ‘Employee of the year’ নির্বাচিত হয় এবং পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কৃত হয়। পরে কাজের ফলস্বরুপ উন্নতিও হয়। পরবর্তী সময়ে সেই কথা বাবাইদাদাকে নিবেদন করে এবং পুরস্কৃত অর্থ ঠাকুর প্রণামী হিসাবে ফিলান্থ্রপি অফিসে জমা দেয়। বাবাইদাদা খুব খুশী হন।

ছেলের সমস্ত কথা মন দিয়ে শোনার পর অবিনদা ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহ’লে কর্মস্থল পরিবর্তন করার দরকার কি? শোন, এখন পকেটে যা ঢুকছে তা’তে কি ভালো লাগছে না? ওখানে জয়েন করার কিছুদিন পরে লাথি মেরে বের ক’রে দিলে ভালো হবে? একূল, ওকূল দুকূল যাবে নাকি?

শোন, এখন যেখানে কাজ করছিস বা যেখানে যেতে মন চাইছে তা' যেখানেই থাক বা যা না কেন কোম্পানির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়, যাতে পরে কোনও অসুবিধা না হয়। যদি যেতে হয় তাহ’লে কোম্পানিকে ব’লে যাওয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে ঐ কোম্পানিকে যে কোম্পানি তোকে অফার দিয়েছে তাঁকে বলা উচিত এখন আমি যেতে না পারলেও ভবিষ্যতে আমি যোগাযোগ করবো। শোন, এখন এখানেই মন দিয়ে কাজ কর।‘ ঠিক আছে?
তারপরে প্রায় একই রকম এক ঘটনার কথা তুলে ধ’রে বললেন,
‘আমার এক পরিচিত মাইক্রো সফটে কাজ করে। গুগুল আরও বেশী টাকার অফার দিয়ে তাকে তাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে বলে। তখন ও মাইক্রো সফট কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে সে কথা জানায়। মাইক্রো সফট তাকে আরও বেশী টাকা দেবে ব’লে জানায়। তখন সেই কথা সে গুগুলকে বলে এবং স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে যা পাচ্ছে তার বেশী দাবী করে। গুগুল তখন তাকে পরবর্তী সময়ের জন্য ভেবে দেখবে ব’লে জানায়। এক্ষেত্রে সে উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে। তুই এখন যা পাচ্ছিস তাই নিয়ে আনন্দের সঙ্গে এখানেই কাজ কর। সময়মত সব হবে। ঠিক আছে?‘

এইকথা শুনে ছেলে আমার খুশী হ’য়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। আমি বিস্ময়ে হতবাক হ’য়ে শুধু চেয়েছিলাম অবিনদার মুখের দিকে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁকে প্রণাম জানিয়ে ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হ'লাম। আমাদের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবিনদাদার বয়সী একজনকে আসতে দেখলাম। তারপরে অবিনদা তাকে বাইকে বসিয়ে আমাদের সামনে দিয়ে 'আসি' ব'লে কৃত্রিম পাহাড়ি ঝর্ণার পাশ দিয়ে দ্রুতবেগে চলে গেল। আমরা তিনজনে হাঁটতে লাগলাম বাবাইদাদা যেখানে বসেন, দর্শন দেন সেদিকের উদ্দেশ্যে কারণ ঐখানে আমার স্ত্রী গেছে খোঁজ নিতে। একটু এগোতেই সামনে দিয়ে আমার স্ত্রীকে আসতে দেখলাম। সামনে আসতেই সে বললো, ‘না, বাবাইদাদা আজ বসেননি, আগামী কয়েকদিন বসবেন না।‘ আবার একটা জোর চমকের ধাক্কা খেলাম! মনে মনে ভাবলাম, ‘ঠাকুর তুমি এত, এত দয়াময়!!!!!!” ছেলেমেয়ে তাদের মাকে অবিনদাদার সঙ্গে দেখা ও কথা হওয়ার ঘটনাটা বলবার জন্য হামলে পড়লো। আর আমার মনের মধ্যে পথ চলতে চলতে জেগে উঠলো অনেক প্রশ্ন! ‘এমনও হয়? কে তুমি!? কে তুমি!?


ছেলেমেয়ের সে কি আনন্দ! যাক আসা বৃথা হয়নি। দয়াল ঠাকুর প্রার্থনা শুনেছেন। একটা দুশ্চিন্তা ও অস্বস্তির চাপ মাথা থেকে নেবে গেল দু'জনের। মনে পড়ে গেল, দয়াল ঠাকুর প্রায়ই বলতেন, "আজও লীলা ক'রে গৌর চাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।" আজ আরো একবার প্রমাণ হ'লো এই বাণীর সত্যতা! প্রমাণ হ'লো সৎসঙ্গে আচার্যদেবের লীলা! ভেসে উঠলো আচার্য পরম্পরার প্রথার মধ্যে দিয়ে পিতাপুত্রের লীলার জ্বলন্ত ইতিহাস ও ভবিষ্যতের সংকেত!

ছেলেমেয়ের আনন্দে আমারও আনন্দ হ'তে লাগলো। সারাক্ষণ কে যেন মনের মধ্যে এসে ব'লে যেতে লাগলো, আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা আছেন দেওঘরে কিন্তু বর্তমানে যাকে নিবেদন করা হয় সেই শ্রীশ্রীবাবাইদাদা তিনি নেই এখন দেওঘরে, তিনি কলকাতায় অথচ সমাধান দিলেন ১৬বছরের একটি অত্যাশ্চর্য ছেলে, যাকে সৎসঙ্গীরা অবিনদাদা ব'লে ডাকেন। কেন এমন হয়!? শ্রীশ্রীদাদা তখন তিনি আজকের মত দর্শন দিতেন না। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেউ হামলে পড়তো না। কেন তিনি কুয়াশা ঢাকা অত ভোরে বাইক চালিয়ে ঠিক আমাদের সামনে এলেন!? আর আশেপাশে কেন কেউ ছিল না সেখানে অত ভোরে!? আর কেনই বা কথা শেষ ক'রেই একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেলেন আবার যে পথ দিয়ে এসেছিলেন সেই পথ ধ'রে!? কে উত্তর দেবে এর? আর কেই-ই বা উত্তর দেবে যে স্বপ্ন ভাইবোন আগের দিন একইসঙ্গে দেখেছেন সেই স্বপ্নে দেখা শ্রীশ্রীবাবাইদাদার সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি যা যা বলেছিলেন ঠিক একই কথা কি ক'রে সকাল হ'তে না হ'তেই মিলে গেল শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কথার সঙ্গে!? অবাক লাগে। কথা হারিয়ে যায়। বোবায় ধরার মত অবস্থা হয়।

যাই হ'ক পরবর্তীতে যা হয়েছিল সেটা ব'লে এই ভিডিও শেষ করবো। মেয়ের নোতুন কাজের জায়গায় সবকিছু মেয়ের ফেভারে ছিল। ছেলেও তার পুরোনো জায়গায় র'য়ে গেল এবং সেখানেই ধীরে ধীরে নিজের জমি শক্ত হতে লাগলো। আজও ২০২৪ সালে এই ভিডিও করা পর্যন্ত সে ঐ কোম্পানিতে আছে অবিনদাদার কথামতো 'এইখানেই তোর সব হবে' বাস্তবায়িত হওয়ার মধ্যে দিয়ে। এই কোম্পানিতেই ছেলে আমার আজ প্রতিষ্ঠিত, সুপ্রতিষ্ঠিত!!!!!!!

কিন্তু সবচেয়ে যেটা আশ্চর্যের, যে কোম্পানিতে যাওয়ার ব্যাপারে অবিনদাদা নিষেধ করেছিলেন ছেলেকে সেই কোম্পানিতে যে প্রোজেক্টের জন্য ছেলেকে চাকরী অফার করেছিল সেই প্রোজেক্ট ঠিক ছয় মাস পর কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে চ'লে যায়। ফলে যারা ব্যাঙ্গালোরে যাবার জন্য রাজী তারা যেতে পারে আর যারা যাবে না বা যেতে পারবে না তাদের জন্য কলকাতায় কোনও জায়গা নেই। অতএব পশ্চাদদেশে পদাঘাত। ছেলের ক্ষেত্রে যা হ'য়ে দাঁড়াত সাপের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা। মনে পড়ে গেল সেদিনের ভোরবেলার কথা। যেটা অবিনদাদা আগেই জানতো। ভাগ্যিস সেদিন ছেলেমেয়ে দৌড়ে চলে গিয়েছিল ঠাকুরবাড়ি নোতুন চাকরীতে জয়েন করবে কিনা তার অনুমতি ও আশীর্বাদ নিতে! ভাগ্যিস সেদিন ঐ প্রচন্ড কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোরে বর্তমান আচার্যদেব আশ্রমে নেই জেনেও অজানা এক টানে আমরা স্বামীস্ত্রী, পুত্রকন্যা সহ চারজনে হেঁটে চলেছিলাম নাম করতে করতে আর মনে মনে বলছিলাম, হে দয়াল! তুমি দয়া করো! বাবাইদাদা নেই, দয়া ক'রে তুমি অবিনদাদার সঙ্গে দেখা করিয়ে দাও।

কোথায় জানি ঠাকুরের কোন গ্রন্থে পড়েছিলাম, বিশ্বাস আর আকুল প্রার্থনা সব অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। সেদিন দয়াল দয়া ক'রে অবিনদাদার মধ্যে দিয়ে ঐ অতি প্রত্যুষে এসে দেখা দিয়ে সমস্যা সমাধান ক'রে দিয়ে গেলেন। ভাগ্যিস অবিনদাদার আদেশ মতো ছেলে পুরোনো কোম্পানীর চাকরী ছেড়ে নোতুন কোম্পানীর লোভনীয় অফার গ্রহণ করেনি। অবিনদাদার নির্দেশ আদেশ উপেক্ষা ক'রে যদি সেদিন ঐ অফার গ্রহণ করতো তাহ'লে হয় ছেলেকে চাকরী বাঁচাতে বাংলা ছেড়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হ'তো অন্য রাজ্যে; নতুবা, চাকরী ছেড়ে বসে থাকতে হ'তো ঘরে। দয়াল সেদিন পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার আচরণের মধ্যে দিয়ে দয়া ক'রে বাঁচিয়ে দিলেন, রক্ষা করলেন পুত্রের বর্তমান চাকরী ও পিতামাতার সঙ্গে পুত্রের বিচ্ছেদ।

কে এই শ্রীশ্রীঅবিনদাদা? শ্রীশ্রীঅবিনদাদা কি অন্তর্যামী!?

জানি না আমি। তবে একটা কথা বলে যাই, যদিও অলৌকিকতা ব'লে কিছু নেই। যতদিন না তুমি ঘটনার কার্যকারণ জানতে পারছো ততদিন তোমার কাছে অলৌকিক। আর যে মুহূর্তে তুমি ঘটনার কার্যকারণ জানতে পারছো তখনি তা হ'য়ে যাচ্ছে লৌকিক। যখনই জানাটা হাতের মুঠোয় এসে যাচ্ছে তখনি সেটা হ'য়ে যাচ্ছে বাস্তব। আর যতক্ষণ জানতে পারছো না ততক্ষণ তা অলৌকিক, অবাস্তব বা কাকতালীয়।
কিন্তু এ ছাড়া এমন এমন ঘটনা আজও ঘটে যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। আমার দয়াল ঠাকুরের কয়েকটা পছন্দের কোটেশান আছে যা তিনি প্রায়ই বলতেন। তার মধ্যে একটা শেক্সপিয়ারের 'হ্যামলেট' নাটকের অংশ। ঠাকুর প্রায়ই রহস্য ক'রে বলতেন, " There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosopy." যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"

আজও আমার ভোরের কথাটা মনে পড়লে (আর মনেও পড়ে সবসময়) কেমন জানি রহস্যময় এক জগতে চলে যায় শরীর মন। এ জোর ক'রে কাউকে বিশ্বাস করানো যায় না। কুয়াশা ঢাকা সেই শীতের ভোর! চারিদিক আবছা আলো আঁধারে ঢাকা প্রকৃতি! মাথার ওপরে বেশ ঝ'রে পড়ছে ঝিরঝিরিয়ে কুয়াশা! চোখেমুখে এসে লাগছে কুয়াশার সেই হালকা জলের ছিটা। এক হাত দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না! চারপাশটা ফাঁকা! নিস্তব্ধ! আর কেনই বা কেউই নেই তাও জানি না। আমরা পরিবারের চারজন ফাঁকা রাস্তা দিয়ে উদভ্রান্তের মতো হেঁটে চলেছি। কেন চলেছি, কি জন্য চলেছি, কার জন্যে চলেছি এই অতি প্রত্যুষে শ্রোতা বিশ্বাস করুন আমরা কেউ জানি না। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি! মনে হচ্ছিল কে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐ ঠাকুরের সুইমিং পুলের দিকে। আর তারপরেই ঐ অতি প্রত্যুষে আলোআঁধার পরিবেশে ঘটেছিল ঘটনাটা! হঠাৎ কুয়াশার ঘন আচ্ছরণ ভেদ ক'রে সামনে এসে হাজির হয়েছিল সেই বিশাল এনফিল্ড বাইক আর বাইকের ওপর সওয়ারি। একে কি বলবো শ্রোতা বন্ধুরা জানি না। বিশ্বাস করা আর না করা আপনাদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমরা সেদিন দয়াল ঠাকুরের দয়ায় সাক্ষাৎ প্রমাণ পেয়েছিলাম ঠাকুরের প্রায় সময় রহস্য ক'রে বলা শেক্সপিয়ারের সেই 'হ্যামলেট' নাটকের অংশ বিশেষ, " There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।" যা আজও আমাদের রোমাঞ্চিত করে! যখনই মনে সন্দেহ, অবিশ্বাস মুহূর্তের জন্য বিন্দুমাত্র হানা দেয় তখনি যেন মনে হয় দয়াল মিষ্টি হেসে রহস্য ক'রে বলছেন তাঁর প্রিয় কোটেশানটা।

আজ এই পর্যন্ত। আবার দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওতে। জয়গুরু।

Friday, May 17, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুর ও ডঃ বিধান চন্দ্র রায়।

এর আগে একটা প্রবন্ধে ডঃ বিধান চন্দ্র রায়কে নিয়ে একটা বক্তব্য ছিল সেই বক্তব্যকে কেন্দ্র ক'রে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করেছিল এবং তাদের মতামত দিয়েছিল পক্ষে-বিপক্ষে। অনেকেই চেয়েছিল এই বিষয়ে বিশদে যন আমার বক্তব্য তুলে ধরি। সেইজন্য যারা ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের সমর্থনে বক্তব্য রেখেছিল তাদের বক্তব্যের মূল বিষয়কে প্রশ্ন ক'রে আমার আজকের এই লেখা তুলে ধরলাম। 

প্রশ্নঃ Dr bidhan chandra roy যা করেছেন ঠিক করেছেন এই ভণ্ড কে জমি দেননি, জমি দিলে দেশের আরো ক্ষতি হত।  

উত্তরঃ Dr Bidhan chandra roy যা করেছেন ঠিক করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জমি দিলে দেশের ক্ষতি নয় বাংলার ক্ষতি হ'তো। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, বাংলা আরো বড় ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে। ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের উপলব্ধি সঠিক। বাংলার এই ক্ষতির জন্য বাংলার শুভচিন্তক ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে ধন্যবাদ এবং আপনাদের মত বাংলার সচেতন যুবকদের স্যালুট জানাই। বাংলা থেকে লাথ খেয়ে ঝাড়খন্ডে গেছে, বেঁচে গেছে বাংলা, বেঁচে গেছে ঝাড়খন্ডও, লাভ হয়েছে ঝাড়খন্ডের। ঝাড়খন্ডের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। মজবুত হয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ইত্যাদি। এসবের হাত থেকে বেঁচে গেছে বাংলা। এই ভয়ানক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবার জন্য ঝাড়খন্ডের কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী বাংলা এবং বাংলার কাছে ঝাড়খন্ড কৃতজ্ঞ ও ঋণী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জায়গা না দেবার জন্য। বাংলায় জায়গা না দেওয়ার ফলে ঝাড়খন্ডের লাভ হওয়ার জন্য ও বেঁচে যাওয়ার জন্য ঝাড়খন্ডের জনগণ আজ কৃতজ্ঞ ও ঋণী বাংলার কাছে।

বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম বিহার রাজ্যের অন্তর্গত পাটনার বাঁকিপুরে। তাঁর পিতার আদিনিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায় বাঙ্গাল পিতার আদি নিবাস সূত্রে ।
আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মস্থান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে।শ্রীশ্রীঠাকুর জন্মসূত্রে বাঙ্গাল ও বাঙালী।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও ডঃ বিধানচন্দ্র রায় উভয়েই ছিলেন বাঙ্গাল বাঙালী। উভয়েই ছিলেন ডাক্তার।
দু'জনেই ছিলেন রূপকার। একজন পশ্চিমবাংলার রূপকার আর ঠাকুরের ক্ষেত্রে কম ক'রে বললে বলা হয় তিনি পাবনা জেলার অখ্যাত অন্ধকারাচ্ছন্ন নরক সমান গ্রাম হিমাইয়েতপুরকে এবং জনশূন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শান্ত নিরিবিলি দেওঘরকে প্রাণচঞ্চল স্বর্গপুর বানাবার রূপকার। আর সত্য বললে হয় তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের রূপকার।

দু'জনেই জনপ্রিয় প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় সসীম জ্ঞানের আধার আর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অসীম অনন্ত জ্ঞানের আধার, এককথায় তিনি সর্বজ্ঞ।

ডঃ বিধান চন্দ্র রায় যন্ত্রণাদায়ক অভিশপ্ত দেশভাগের ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রাণরক্ষা করার জন্য আগত শিশু বৃদ্ধ বৃদ্ধাসহ লক্ষ লক্ষ নরানারীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন মাথাগোঁজার ঠাঁই ও একমুঠো খাবারের ব্যবস্থা ক'রে দিয়েছিলেন।

আর, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যাতে দেশভাগের মত অভিশপ্ত ঘটনার হাত থেকে দেশবাসীকে বাঁচানো যায়, হিন্দু মুসলমানের দাঙ্গা আটকানো যায় এবং সারাজীবন বিশ্বের সমস্ত আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী মানুষকে প্রকৃত বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার পথ দেখানো যায়।

কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র দুই বাংলার কোথাও ঠাঁই পেলেন না।

যাই হক, সময়টা সাল ১৯৪৭- ৪৮, দেশভাগের ফলে বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলা (ভারতভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান) থেকে লক্ষ লক্ষ নারীপুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ বৃদ্ধা হিঁদু বাঙালি পশ্চিম বাংলায় অসহায় অবস্থায় শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচাবার জন্য বহুবছরের বাস্তুভূমি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ভয়াবহ অবস্থায় খাদ্য ও মাথাগোঁজার ঠাই দিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন দু'মুঠো খাবারের প্রতিশ্রুতি। ঠিক ভারত ভাগের একবছর আগে ১৯৪৬ সালে ২রা সেপ্টেম্বর হাওয়া পরিবর্তনের কারণে শ্রীশ্রীঠাকুর ভারতের তৎকালীন বিহার বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরের গাছগাছালিতে ভরা শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশভাগের ভয়াবহ পরিণতির কারণে তাঁর জন্মভূমি ওপার বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হ'য়ে যাওয়ায় নিজ জন্মভূমিতে আর ফিরে যাবার সুযোগ হয়নি। যখন তাঁর জন্মভুমি ওপার বাংলা ১৯৭১সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হ'য়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয় তাঁর ঠিক ২বছর আগে ১৯৬৯ সালে শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ ত্যাগ ক'রে অমরধামে চলে যান। তাঁর জন্ম সাল ১৮৮৮ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৮ বছর শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের দিনগুলি কাটিয়ে একেবারে খালি হাতে তাঁকে চলে আসতে হয় ভারতের বিহার রাজ্যে দেওঘর জেলায়। তারপর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বাকী ২৩ বছর দেওঘরে কাটিয়ে ভগ্নহৃদয়ে নিজের বাপদাদার ভিটেমাটি, নিজের জন্মভূমি, শৈশব থেকে প্রৌঢ়ত্বের রঙ্গীন দিনগুলি, পদ্মার বুকে, পদ্মার পাড়ে ছোটোবেলা থেকে বড়বেলা পর্যন্ত কত সুখ দুঃখের স্মৃতি, বিশাল আশ্রম জুড়ে ঝমঝম ভরা সৎসঙ্গ সংসার, দেশ বিদেশের কত হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা ইত্যাদি অজস্র স্মৃতি বেদনাভরা হৃদয়ে অশ্রসজল চোখে হাতড়ে হাতড়ে চলে যান ইহলোকের লীলা শেষ ক'রে। অন্তত একবারের জন্য নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাবার ইচ্ছা তাঁর পূরণ হয়নি। পূরণ হয়নি কারণ দেশনেতৃত্ব ও দেশের প্রথিতযশা প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব তাঁকে চিনতেই পারেনি, অন্তত একবারের জন্য তাঁর পিতৃভূমি-মাতৃভূমিকে, তাঁর জন্মভুমিকে চোখে দেখার ইচ্ছাকে, তাঁর কান্নাকে কেউই বোধ করেনি। তারপর তাঁর ইচ্ছা ছিল বিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অর্থাৎ এ বাংলায় জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাবার। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছাও পূরণ হয়নি। পূরণ হ'তে দেয়নি বাঙালি। নিরুপায়বশতঃ তাঁকে চলে যেতে হয় তৎকালীন বিহার বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগণা বিভাগের দেওঘর জেলায়। আজকের মত জমজমাট ছিল না তখন দেওঘর ঠাকুরবাড়ি অঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পরিবেশ। একদিকে দূরে ডিগড়িয়া পাহাড়, আর একদিকে দারোয়া নদী, গ্রীষ্ণকালে নদীর জল অপ্রতুল হ'লেও বর্ষাকালে ভরা নদীর কল্লোল ধ্বনিতে মন কেমন জানি ক'রে ওঠে। জন কোলাহল থেকে দূরে, বহুদূরে রাস্তার লাল মাটি, মহুয়া সারি, শুধুই আম আর ক্যালিপ্টাস গাছের সারি আর ধু ধু ফাঁকা জমিতে গা ছমছম করা শান্ত নিস্তব্ধ পরিবেশে ঠাকুর বসে থাকতেন পথের দিকে চেয়ে, কখন আসবে তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেষ শাবকেরা। ঘোড়ার গাড়ির ঘোড়ার খুড়ের শব্দে সচকিত হ'য়ে উঠতো মনপ্রাণ! এই বুঝি এলো ফিরে তাঁর আপনজন মানুষেরা! এমনই ছিল তাঁর মানুষের জন্য ক্ষিধে, ছিল্ল কান্না। মহুয়ার ফুলের গন্ধে ভোরের হিমেল হাওয়ায় স্বপনপুরীর মত মনে হ'তো রহস্যময়তায় ঘেরা চারপাশ। মনে হ'তো কে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, বলছে, আয়, আয়, আমার কাছে আয়, এখানে এলে জীবন খুঁজে পাবি। আনন্দে থাকার রসদ পাবি। ঠাকুর তাঁর মায়াময়, আলোময়, রূপময় চোখে মিষ্টি মধুর হাসি মুখে মেখে চেয়ে থাকতো ফাঁকা রাস্তার দিকে, কখন কে আসবে। বড় বেদনাময় ছিল সেই সদ্য ছিন্ন হওয়া নাড়ীর টানের মত নিজ বাসভূমি ত্যাগ ক'রে আসা দিনগুলি। বড় ফাঁকা লাগে চারপাশ! বড় একা লাগে! মানুষ পিয়াসী তিনি! মানুষ ছাড়া তিনি বাঁচতে পারেন না। মানুষই তাঁর বাঁচার রসদ, অক্সিজেন। মানুষ এলে শিশুর সারল্য নিয়ে আনন্দে ডগমগ ক'রে উঠতেন। মানুষের জন্য তিনি পাগল ছিলেন। নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতেন প্রায়ই। প্রচুর মানুষের মাঝে যখন আসর জমে উঠতো তখন সব নিয়ম ভেঙে যেত। তখন তাঁকে নাওয়া খাওয়ার সময় স্মরণ করিয়ে দিলে বা আগত মানুষজনকে চলে যেতে বললে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন। রসিক প্রভুর রসের মাঝে বেরসিকের মত কাজ করলে তিনি বিরক্ত হতেন। বলতেন, নিয়ম মেনে কি আর আড্ডা মারা যায়। যতক্ষণ মানুষ থাকতেন ততক্ষণ তিনি ঠাঁই বসে থাকতেন। মানুষের এক তীব্র নেশা সব নেশাকে হারিয়ে দেয়! এখনও সেই একই দৃশ্য আমরা দেখি শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা ক্লান্তিহীন শ্রান্তিহীন ঠাঁই বসে থাকেন যতক্ষণ মানুষ থাকে।

যাই হ'ক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ওপার বাংলা থেকে চলে আসার পর এ বাংলায় ঠাকুরের থাকার ও তাঁর ওপারের স্বাধীনতার সময়ের দেড় কোটি টাকা মূল্যের বিশাল আশ্রমকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এ বাংলায় বর্ধমান জেলার পানাগড়ে ৬০০০ হাজার বিঘা জমি দিতে রাজী হয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শ্রীবিধান চন্দ্র রায়ের মানসিকতা ছিল তা কেটে ৮০০ বিঘে প্রদান করার। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর সেই প্রস্তাব বাতিল ক'রে দেন, কারণ তাঁর যে স্বপ্ন ছিল তা রুপায়িত করতে ৮০০বিঘা যথেষ্ট বিবেচিত ছিল না তাঁর কাছে। ১৯৪৬ সালে যখন তিনি ওপার বাংলায় তাঁর বিশাল আশ্রম যার তৎকালীন আজ থেকে ৭৮বছর আগে মূল্য ছিল দেড় কোটি টাকা সেই বিশাল সম্পত্তি ছেড়ে খালি হাতে চলে এসেছিলেন তখন এ বাংলায় ৮০০ বিঘা জমি তাঁর কাছে কোনও মূল্য ছিল না? কেন? ১ বা ২ বিঘা জমি নয় ৮০০ বিঘা জমি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন!? কেন?

মাত্র ৫৮ বছর তিনি কাটিয়েছিলেন বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে। আর এই অল্প সময়ের ব্যবধানে অক্লান্ত অপরিসীম পরিশ্রমে "মানুষ আপন টাকা পর যত পারিস মানুষ ধর" এই নীতির ওপর দাঁড়িয়ে শুধু মানুষকে ভালোবেসে মানুষের কাঙ্গাল হ'য়ে মানুষকে বাঁচাবার জন্য ও বেড়ে ওঠার পথ দেখাবার জন্য ধীরে ধীরে শূন্য থেকে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল এক সৎসঙ্গ সাম্রাজ্য, যা ছিল মানুষ তৈরীর কারখানা। আর অপমান, অপবাদ, কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, মারদাঙ্গা, আগুন, কোর্ট কাছারি, হত্যার ষড়যন্ত্র ইত্যাদির হিমালয় সমান বাধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে এতদিনের ঘাম রক্ত দিয়ে গড়ে তোলা ছবির মত সুন্দর স্বপ্ননগরী সৎসঙ্গ আশ্রম ১৯৪৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এক সকালে তিনি বর্তমান মূল্য কোটি কোটি টাকার বিশাল সম্পত্তি পিছনে ফেলে রেখে এসে দাঁড়ালেন শূন্য হাতে একেবারে পথে, ফিরে গেলেন আবার সেই শূন্যতে।

কিন্তু সেদিন দেশ নেতারা কেউ ফিরেও তাকায়নি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বেদনাক্লিষ্ট মুখের দিকে। দেশনেতারা সবাই ব্যস্ত দেশ পুনর্গঠনে, ভাঙ্গা ঘর ঠিক করতে। কারও সময় নেই তাঁকে নিয়ে ভাবার। কে তিনি? সবার মত তিনিও একজন সাধারণ মানুষ। ব্যস এই তাঁর পরিচিতি। এতবড় সাজানো স্বপ্নপুরীর মত সংসার ছেড়ে চলে গেলেন তিনি কিন্তু কেউ তাকে তাঁর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবার জন্য প্রয়োজনই মনে করলো না। সব ধীরে ধীরে গ্রাস হ'তে লাগলো তাঁর মর্তে গড়ে তোলা স্বর্গপুরী সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে। আজও ১৩৬ বছরে নানা আইনী জটিলতায় আটকে আছে তাঁর বিশাল সম্পত্তি বাংলাদেশে।

কিন্তু এ বাংলায় যদি তিনি আশ্রয় পেতেন, আশ্রয় পেতেন পানাগড়ে পুনরায় তাঁর স্বপ্নের সাম্রাজ্য মানুষ তৈরীর কারখানা' গরে তোলার জন্য তাহ'লে আজ বাংলা সারা বিশ্বে মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়াত। ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম বিহারে হ'লেও তিনি জন্মসূত্রে এ দেশী কিন্তু পূর্ব্ব পুরুষ সূত্রে বাঙ্গাল ছিলেন। তাই একজন হিন্দু বাঙ্গাল বাঙালী হ'য়েও, একজন প্রাজ্ঞ উচ্ছশিক্ষিত সমঝদার মানুষ হ'য়েও, এতবড় একজন বাংলার রূপকার হ'য়েও তিনি মানব শরীরে নেমে আসা বিশ্বব্রহ্মান্ডের রূপকার, নিদেনপক্ষে ওপার বাংলার নরক তুল্য হিমাইয়েপুর ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জন কোলাহল থেকে দূরে অনেকদূরে মহুয়ার গন্ধে ভরপুর, শাল নির্জন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে চিনতে পারেননি। দেশ ভেঙে দু'টূকরো হয়ে গেল, বর্তমানে তিন টুকরো, এতবড় ঘটনা ঘটে গেল ভারতের বুকে অথচ শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেশের উচ্চ নেতৃবৃন্দ কোনও আলোচনা পর্যন্ত করেননি। কি করলে স্বাধীনতা আন্দোলনকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া যায়, কি করলে দেশভাগ রোধ করা যেতে পারে, কি করলে হিন্দু মুসলিম ঐক্য অটুট থাকে, কিভাবে ব্রিটিশের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি কোনও আলোচনা করার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুরকে যোগ্য, দক্ষ মনে করেননি, প্রয়োজন মনে করেননি তৎকালীন দেশের নেতৃত্ব ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা। কিন্তু ততদিনে তিনি তিল তিল ক'রে বিশাল সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন দেশ স্বাধীন বা দেশ ভাগ হওয়ার আগেই। দেশস্বাধীন বা ভাগ হওয়ার অনেক অনেক আগেই দেশের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ ও দেশ বিদেশের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা তাঁর আশ্রম পরিদর্শন করেছেন, তাঁর সঙ্গে দেখে করেছেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছেন সার্বিক পরস্থিতি নিয়ে, রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য, আইন, বিজ্ঞান, বিবাহ, স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশভাগ, দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর, ব্রিটিশদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন কিন্তু সমস্যা সমাধানে তাঁর পরামর্শকে কোনও গুরুত্বই দেননি তাঁরা দেশের মহাবীর মহাপন্ডিত ভীষ্ম পিতামহরা।

ঠিক তেমনি, ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় আসার ও থাকার এবং তাঁর মানুষ তৈরীর কারখানা বিশাল 'সৎসঙ্গ' পুনরায় বাংলার বুকে গড়ে তোলার একান্ত আন্তরিক ইচ্ছেকে গুরুত্ব ও পাত্তায় দেয়নি এ বাংলার রূপকার ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ও বাংলার তামাম প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবিরা। অথচ কে না তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন দীর্ঘ সময়, তাঁর আশ্রম পরিদর্শন করেছেন, তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর মিশন, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কত্থা বলেছেন? বাংলা তথা দেশের প্রায় সমস্ত দিকপালেরা। কিন্তু বাংলায় তাঁর স্থান হ'লো না। তাঁকে এ বাংলায় রাখার জন্য কেউ সচেষ্ট হ'লো না। নেতাজী তাঁর কাছে এসেছেন, এসেছেন তিন তিনবার, কথা বলেছেন কিন্তু তাঁর পথ ও মোট গ্রহণ করেননি। মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন, দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, 'সৎসঙ্গ আশ্রম ' ঘুরে অপার বিস্ময়ে বলেছিলেন আমার স্বপ্নের ভারত ইতিমধ্যে এখানে গড়ে উঠেছে, শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাঁকে জীবনে গ্রহণ তো দূরের কথা দেশের উন্নতি বিধানে তিনি তাঁকে দেশের স্বাধীনতা, দেশভাগ ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর মতামতের প্রয়োজন মনে করেননি, ধর্ম জগতের লোক আখ্যা দিয়ে তাঁকে উপেক্ষা করেছেন, দেশের কঠিন জটিল বিতর্কিত সমস্যাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেনি। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে সর্ব সমস্যার সমাধানী পুরুষ সেই ধারণাই দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ছিল না। প্রথমত তাঁর কথা তাঁরা শোনার প্রয়োজন মনে করেননি, দ্বিতীয়ত, শুনলেও, বুঝলেও ঠাকুরের কথা শর্ট কার্টে যে হবার নয়, দীর্ঘ সুচিন্তিত নিখুঁত পরিকল্পিত ব্যাপার, তা তাঁরা বুঝেছিলেন তাই রাজনৈতিক ডামাডোল ও হৈ হট্টগোলের বাজারে তাঁর কথা তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। দেশ স্বাধীনতার পরে যদি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বোস, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি এদের মত বিদগ্ধ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা বেঁচে থাকতেন তাহ'লে ভারতের পরবর্তী অবস্থা, পরিস্থিতি কি হ'তে পারতো তা আজ কল্পনার ব্যাপার। আর সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হ'য়ে উঠতো তা কল্পনার চোখে যদি দেখা যায় তাহ'লে ভাবলে বিস্ময়ে শিউড়ে উঠতে হয়। কারণ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বোস, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এদের চারজনের সঙ্গে এবং আরো অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের পূর্ব পরিচয়, দেখা, কথাবার্তা হয়েছিল, সম্পর্ক ছিল মিষ্টি মধুর। কিন্তু বিধাতা বোধহয় অন্যরকম কিছু চেয়েছিলেন।

আর, ডঃ বিধানচন্দ্র রায় যদি শ্রীশ্রীঠাকুরের চাহিদা অনুযায়ী ৬০০০ হাজার বিঘা সৎসঙ্গের জন্য অনুমোদন ক'রে দিতেন তাহ'লে আজ বর্ধমানের পানাগড়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশাল 'সৎসঙ্গ আশ্রম' গড়ে উঠতো আর বাংলা বিশ্বের মানচিত্রে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার ক'রে থাকতো। বাংলার অর্থনীতি এক শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হ'তো ভারতের অর্থনীতিতে। দেশবিদেশের নানা ভাষাভাষীর আগমনে এক মহামিলন ক্ষেত্র হ'য়ে উঠতো বাংলার পান্ডুয়া। যা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি দেওঘরের বুকে। আজ যখন গাড়ীতে ক'রে বাই রোডে পানাগড়ের ওপর দিয়ে যাই তখন প্রতিবার রাস্তার দু'পাশের ধু ধু ফাঁকা জমিতে কল্পনার চোখে দেখি 'সৎসঙ্গ' আশ্রম ঠাকুর বাড়ির ছবি তখন বুকের ভেতরটা কেমন জানি ক'রে ওঠে, খামচে ধ'রে বসে থাকি চুপ ক'রে জানালা দিয়ে বাইরের দ্রুত বেগে চলে দৃষ্যের দিকে তাকিয়ে, চোখের সামনে জানালাটা ঝাপসা হ'য়ে ওঠে নিজের অজান্তে।
আগামী দিন দেওঘর সারা বিশ্বের আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু, জ্ঞানী মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র হ'য়ে উঠবে। যার ইঙ্গিত স্বয়ং ঠাকুর নিজেই দিয়ে গেছেন। তাঁর জবানীতে "এমন একদিন আসবে মানুষ জসিডি স্টেশনে নেমে ওখান থেকেই প্রণাম ক'রে ফিরে যাবে বাঁচা-বাড়ার রসদ সাথে নিয়ে আবার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে। জসিডি স্টেশন থেকে ভিতরে অতদূর ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার সুযোগ হবে না আর বাঁধ ভাঙ্গা মানুষের ভিড়ের কারণে। কি সাঙ্ঘাতিক ডেভ্লপমেন্টের ব্যাপার হ'য়ে দাঁড়াবে সেক্ষেত্রে সরকার ও আশ্রম কর্তৃপক্ষের। হয়তো জসিডির আশেপাশেই গড়ে উঠবে মূল আশ্রমের রেপ্লিকা অর্থাৎ হুবহু মূল আশ্রম। আজ থেকে বহু বছর পরে লাল-সাদা-কালো মানুষে ভরে যাবে মূল আশ্রম আর মূল আশ্রমের রেপ্লিকা। সেদিন ভারতীয় বিশেষ ক'রে হয়তো বাঙালীদের সুযোগই ঘটবে না। ১৯৪৬ সালে ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ও বাংলার প্রাজ্ঞদের দ্বারা উপেক্ষিত ও স্বঘোষিত সনাতনীদের দ্বারা অপমানিত এবং আম বাঙ্গালীর একাংশের দ্বারা অশ্লীল গালাগালিতে জর্জরিত বাঙালী ঠাকুর, বাঙালী হ'য়ে জন্ম নেওয়া ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত স্থান 'সৎসঙ্গ আশ্রম, ঠাকুরবাড়ি' দর্শন লাভের সুযোগই ঘটবে না বাংলার বাঙালীদের। ঘোর কলি যুগের অবসান আর সত্য যুগে প্রবেশের ট্রাঞ্জিশানাল মুহূর্তে আগামী সৎসঙ্গের যে আন্দোলন তা' যে বাংলার বুক থেকে উঠবে না তারও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন বিশ্বের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় The greatest wonder. the greatest phenomenon of the world, The incarnation of the formless Supreme power শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এটা কি তাঁর অভিমান!? ঈশ্বরেরও অভিমান, দুঃখ হয়!? কি জানি। ঈশ্বরের কি হয় আর কি না হয় তা মানুষের জ্ঞানের বা দর্শনের বাইরে ও অতীত। জয়গুরু।