Powered By Blogger

Saturday, July 5, 2025

উপলব্ধিঃ বুদ্ধিমানের কাজ।

এই থাপ্পড়টা খাওয়ার ভয়ে আমি রথের দড়ি টানা তো দূরের কথা রথের আশেপাশেই যাই না, যাইওনি কোনওদিন। হাজার হাত দূরে থাকি। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। কে বলতে পারে কখন রথ থেকে জগন্নাথ নেবে আসবে? হঠাৎ যদি খাড়েমারে ঐ গোল গোল ভয়ংকর চখা আঁখি নিয়ে রথ থেকে নেবে এসে কষে একটা থাপ্পড় মারে গালে সবার সামনে, তখন? লজ্জায় অপমানে "দাদা কলসি দড়ি দে, ডুবে মরি রে" ব'লেও কোনও লাভ হবে না; এ লজ্জা, এ জ্বালা তাড়া ক'রে বেড়াবে মৃত্যুর পড়েও জনম জনম তা যতবড়ই আমি দাদা হ'ই না কেন, তাঁর সঙ্গে তো দাদাগিরি চলবে না, থাপ্পড় খেয়ে মুখ নীচু ক'রে লজ্জায় চ'লে আসতে হবে মানে মানে আরও অসম্মান হওয়ার থেকে বাঁচতে। ঐ বিরাশী সিক্কার থাপ্পড়ের জ্বালা আর দাগ মুছতে লেগে যাবে বাকী জীবনটা ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ব'সে থেকে, যদি কেউ গালের দাগটা, থ্যাবড়ানো গালটা কেউ দেখে ফেলে এই লজ্জায়, এই ভয়ে। আর ঐ ভয়ংকর চখা আঁখি আর তাঁর বিরাশী সিক্কার থাপ্পড় ঐ ডাবল অ্যাকশান টুথ ব্রাশ দিয়ে ঘষা খাওয়ার পর শালা ছাল চামড়া আর কিছু থাকবে না শুধু কঙ্কালটা ছাড়া। আর কঙ্কালটায় গালের অংশটা দুমড়ে মুচড়ে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। এখন পাঠক বলতেই পারে, আরে বাবা, আপনাকে মারতে যাবে কেন? আপনি কি করেছেন? কথাটার উত্তরে বলতে পারি, অতশত জানি না বাবা, দিনকাল খারাপ, কখন শালা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চেপে যাবে তার ঠিক কি? আর যদি চেপে যায় নাও শালা এবার ঠালা সামলাও। তখন তো পাঠক আপনি দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাদাম ভাজা খাবেন যেন কিছুই দেখতে পাননি এমন ভাব নিয়ে আর হুলো বিড়ালের মতন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেন না হাবভাব নিয়ে। আর বাদাম ভাজা খেতে খেতে মুচকি মুচকি শয়তানী হাসি হাসবেন। তার থেকে দূরে থাকায় ভালো।

তাই, রথের মেলার পোড়া তেলের পাপড় ভাজা আর রসহীন শুকনো জিলিপি খাওয়ার ইচ্ছা ও লোভ থাকলেও মুখ গুঁজে পড়ে থাকি ঘরের কোণে; বের হ'ই না। ঐ চখা আঁখিকে আমার বড় ভয়। ভাগ্যিস শালা নিম কাঠে আবদ্ধ হ'য়ে রইলো ঐ হাত কাটা জগন্নাথ তাঁর চখা আঁখি নিয়ে। নইলে ঐ একনম্বরী চখা আঁখি দাদার সামনে দেশজুড়ে দু'নম্বরী থেকে দশনম্বরী দাদাদের দাদাগিরি ছুটিয়ে দিত ---- লাথি মেরে ফাটিয়ে দিয়ে। ভালোই হয়েছে জগন্নাথদা নেবে আসে না রথ থেকে নীচে। ঐ রথের ওপর থেকে চোখ ফাঁড় ফাঁড় ক'রে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে থাকে নীচে রাস্তার দিকে লোকেদের বালখিল্য ভক্তির ধ্যাস্টামো। আর, চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চায় চোখের মণি। ঐ চোখ দেখলেই বোঝা যায়, এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। এটা অনুভবের ব্যাপার। আমি জানি, হাত নেই পা নেই জগন্নাথ না পারবে হাত দিয়ে রথকে থামাতে, না পারবে পা দিয়ে লাথি মেরে রথের ওপর থেকে তাঁর রথে চড়ে বসা অনাহূতদের ফেলে দিয়ে নেবে আসতে। তবুও আমি রিস্ক নিতে পারবো না। মাথায় থাক আমার জগন্নাথ দর্শন, মাথায় থাক আমার রথযাত্রা, মাথায় থাক আমার রথের দড়ি ধরা। শালা কখন ঐ মোটা দড়ি সাপের মত গলায় পেঁচিয়ে যাবে তার ঠিক কি? মাথায় থাক আমার পাপড় ভাজা আর জিলিপি খাওয়ার লোভ। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। সাবধানের মার নেই। সাধু সাবধান!
( লেখা ৫ই জুলাই'২০২৪)


 


No comments:

Post a Comment