ঈশ্বর দয়াল প্রভুর বাৎসল্যকে মানুষ টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নিয়েছে, বিশেষ ক'রে তাঁর তথাকথিত বিশেষ ভক্তরা। কেন জানি মনে হয় দয়ালের বাৎসল্য রসের আধিক্যে ভুল হ'য়ে চলেছে কোথাও। বাৎসল্য যে তাচ্ছিল্য সেটা তাঁরই কথা। তথাপি তিনি নিজেই ভুলে গেছেন বোধ হয় নিজের কথা। নিজেই তীব্র বাৎসল্য প্রেমের বেড়াজালে আবদ্ধ হ'য়ে তীব্র তাচ্ছিল্যের গহীন অন্ধকার গর্তে পড়ে গিয়ে অসহায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। আর, সেই অসহায় অবস্থার সুযোগে সবাই তাঁকে ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছে, যা ইচ্ছা হচ্ছে তাই করছে, যা ইচ্ছা হচ্ছে তাই বলছে। যেন গ্রহটার নাম 'যাচ্ছেতাই গ্রহ' এবং দেশটার নাম 'যা ইচ্ছা তাই' দেশ।
রাজনৈতিক নেতারা যা মুখে আসছে তাই ব'লে যাচ্ছে মাঠেঘাটে, নির্বাচনী জনসভায়, অনুষ্ঠান মঞ্চে, বিধানসভায়, লোকসভায়। মুখে কারও কুলুপ নেই। আর দলীয় প্রতিনিধি সদস্যরা বা সাপোর্টাররা টেবিল চাপড়ে বা মাঠ কাঁপিয়ে বাহবা, বাহবা ধ্বনি তুলে সাবাসী দিয়ে যাচ্ছে বুঝেই হ'ক আর না-বুঝেই হ'ক, দেওয়ার আছে দিয়ে যাচ্ছে কিংবা দিচ্ছে নিজ স্বার্থে বক্তাকে খুশী করতে। নেতারা, জনপ্রতিনিধিরা সর্ব্বজ্ঞের মত অশ্লীল ভাষায় অমৃত বাণী ছিটিয়ে যাচ্ছে, প্রকাশ্যে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে, দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক উসকানি। কারণ তাঁদের পিছনে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন আছে। আর, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক নেতারা ক্ষমতা দখলের জন্য নোতুন নোতুন রসালো চোখ ধাঁধানো মন অবশ করা কথার ফুলঝুড়িতে ভরা নানা টক ঝাল মিষ্টি মতবাদের চাটনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে জনগণকে বোকা বানিয়ে যাচ্ছে, আদর্শের আফিম খাইয়ে, পাইয়ের দেওয়ার তীব্র নেশায় ডুবিয়ে স্বপ্ন বিহ্বল ক'রে তুলে জীবন ক্ষয় ক'রে জনগণের পচা গলা মানসিক,আত্মিক মৃতদেহের লাশের ওপর প্রাসাদ রচনা ক'রে চলেছে। আর, তা ক'রে চলেছে প্রকাশ্যে ধর্মকে ও ঈশ্বরকে হাতিয়ার ক'রে ভাগ বাটোয়ারা ক'রে। ক'রে চলেছে ভগবান, ঈশ্বর, আল্লা, গড তাদের তাদের সর্বশক্তিমানের আশীর্বাদ ও ক্ষমতা মাথায় নিয়ে।
শিক্ষাক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে, কৃষিক্ষেত্রে, কোলে কারখানায় ব্যবসায়ীরা, শিল্পপতিরা পিঁপড়ের পোঁদের মধ্যে লেগে থাকা গুড় পর্যন্ত পোঁদ কেটে নিয়ে নিচ্ছে, ছাড় দিচ্ছে না, এতটাই অর্থের লালসা। লোভ নামক তৃতীয় রিপু মারাত্মক বিষাক্ত জোঁকের মত ভয়ঙ্করভাবে জাঁকিয়ে বসে আছে লোভী মানুষের মাথার মধ্যে আর মাথার ঘিলু থেকে রস খেয়ে খেয়ে শুষে নিয়ে একেবারে ছিবড়ে ক'রে ফেলে দিচ্ছে মানুষকে। আর, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী মস্তিষ্কের সেই ছিবড়ে ঘিলু দিয়ে বেড়িয়ে আসা বিষাক্ত প্রোডাক্ট 'ওঁ গণেশায় নমঃ' ব'লে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে আম জনতার মধ্যে শান্তির জল ছেটানোর মত। আর আম আদমী বেঁচে থাকার জন্য সেই প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তুলসী তলায় হরির লুটের বাতাসা কুড়োনোর মত ঝাঁপিয়ে পড়ছে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য বালখিল্য ভক্তদের মত।
দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা জানে যা দেব জনগণকে চার অক্ষর জনগণ তাই লুটেপুটে নেবে আর চেটেপুটে খাবে। আর, তা নেবে ও খাবে নিজের রক্ত জল করা পয়সায়, গলায় রক্ত ওঠা রোজগারে। ব্যবসায়ীদের এই রমরমা সাফল্যের পিছনে মজবুত মেরুদন্ড স্বরূপ আছে প্রথম ও প্রধান পৃষ্টপোষক রাজনৈতিক দল ও নেতারা আর তাদের হাই ভোল্টেজ আশীর্বাদ, যে আশর্বাদ সৃষ্টিকর্তা দয়ালের আশীর্বাদের চেয়েও লক্ষ কোটি গুণ শক্তিশালী ও কার্যকর। এদের আশীর্বাদের জৌলুস ও তীব্রতার কাছে দয়ালের চুঁইয়ে চুঁইয়ে আসা ফ্যাকাশে আশীর্বাদ ফিকে পড়ে যায় এবং লো ভোল্টেজ পাওয়ার ব'লে কিংবা কার্যকারীতাহীন মৃত যন্ত্র স্বরূপ ব'লে প্রমাণিত হয়।
লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ডাক্তার, উকিল, জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, মহাত্মা, মহাপুরুষ সবাই, সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা সর্বজ্ঞ। তাঁরাই শেষ কথা। তারা সবজান্তা সর্বজ্ঞ। এই বিশাল সৃষ্টির পিছনে যদি বিজ্ঞানীদের কথা অনুযায়ী কোনও ঈশ্বর কণা থেকে থাকে, ধর্ম-ঈশ্বর-আধ্যাত্মিকতার জগতের কথায় যদি তমসার ওপারে, মহাসিন্ধুর ওপারে কোনও অচ্ছেদ্যবর্ণ মহান পুরুষ থেকে থাকে, কারণের কারণ পরমকারণিক কিছু থেকে থাকে তাহ'লে তা সর্ব্বৈব মিথ্যা, ইউটোপিয়া। মানুষের মধ্যে বুদ্ধিজীবীরা হলেন সত্য, এক ও একমাত্র সত্য। ঈশ্বর ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে তা' তাঁরাই। তাদের হাতেই আছে সাধারণ মানুষের বাঁচা-বাড়ার চাবিকাঠি। তারাই মানুষের মাইবাপ, তাঁরাই রক্ষাকর্তা। ধর্মজগত, ঈশ্বরজগত, আধ্যাত্মিক জগত ইল্যুশান, কল্পকাহিনী, মিথ্যা, মিথ্যা, মিথ্যা।
আর, ধর্ম জগতে, ঈশ্বর জগতে, আধ্যাত্মিক জগতে অবস্থানকারী মুনি, ঋষি, যোগী, ধ্যানী, গোঁসাই, গোবিন্দ, বাবাজী, মাতাজি ব্যক্তিরা সবাই অমূর্ত ভগবান নিয়ে মেতে আছে। যাঁর বা যাঁদের বাস্তবে কোনও রক্তমাংস রূপে অস্তিত্ব নেই তাঁদের মাঝে মাতিয়ে রেখেছে সাধারণ মানুষকে। মাতিয়ে রেখেছে চরণপুজায়, না ক'রে পাওয়ার নেশায়। কিম্ভূতকিমাকার রূপে ভগবানের মূর্তি গড়ে তেল, সিঁদুর, চন্দন দিয়ে সাজিয়ে রেখে ও নিজেদেরও সাজিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরী ক'রে ঈশ্বর আরাধনার মহল তৈরী করেছে। যেখানে চলনপুজার কোনও ব্যাপার নেই, নেই কোনও চরিত্র সংশোধনের কথা লেশমাত্র, নেই জীবন গঠনের রূপরেখা। শুধু রিপুগুলিকে সুড়সুড়ি দিয়ে আরও বাড়িয়ে তুলে বাস্তব জগত থেকে সরিয়ে নিয়ে অদ্ভুত, ভয়ার্ত, আজগুবি, অলৌকিক, অযৌক্তিক, মিথ্যে এক কান্ড কারখানার ওপর নির্ভরশীল ক'রে তুলে চরণপূজায় মগ্ন ক'রে তুলছে কুসংস্কারাছন্ন দুর্বল, ভীরু, কাপুরুষ, লোভী, রিপুতাড়িত মানুষকে, যেখানে আচরণ গৌণ। যেখানে যে পারছে ধর্মগুরু হ'য়ে বসেছে, বসছে এবং তা বসেছে ও বসছে স্বয়ং ঈশ্বরের সিংহাসনে। আর, ঈশ্বর যখন মানুষের রূপে আসছে তখন তাঁকে অস্বীকার করছে, কিংবা তাঁকে গ্রহণ ক'রে পরবর্তীতে নিজেরাই গুরু হ'য়ে বসছে তাঁকে সামনে রেখে। গুরু হ'য়ে বসছে সাধারণ মামুষ, বোকা, সরল, বেকুব মানুষ, দুর্বল, ভীরু, অলস মানুষ, কুসংস্কারাছন্ন মানুষ, কিছু না ক'রে অলৌকিক উপায়ে পাওয়ার মানসিকতায় আচ্ছন্ন মানুষের সাহায্যে। জীবন্ত ঈশ্বরের সঙ্গে করছে বেইমানী, নেমকহারামি।
এ সমস্ত কিছু দেখছে দয়াল পরমপিতা আমার বছরের পর বছর, হাজার বছর ধ'রে। কি অসীম আশ্চর্য ধৈর্য্য ও সহ্য শক্তি দয়ালের!
তাঁকে নাস্তিকেরা অর্থাৎ ঈশ্বর অবিশ্বাসীরা মানে না, আর, ঈশ্বরবিশ্বাসীরা, আস্তিকেরা তাঁকে মানে নানারকম ভাবে তার সঙ্গে বেইমানি, নেমকহারামি ক'রে।
ঈশ্বর বিশ্বাসীরা, ধর্ম জগতের লোকেরা, আস্তিকেরা ঈশ্বরের প্রধান শত্রু।
এদের একটা অংশ তাঁকে অমূর্ত ভগবান (Unseen God)-এর মধ্যে বেঁধে রেখেছে নানারকম ভয়ার্ত মূর্তি ও ভয়ের পরিবেশ তৈরী ক'রে, বেঁধে রেখেছে যাগ, যজ্ঞ, পুজো, মানত, বলি, চন্দন, সিন্দুর, তিলক, গেরুয়া বসন, তুলসী মালা, লাল হলুদ সুতো, আম্নগটি, তাবিজ ইত্যাদির মধ্যে, বেঁধে রেখেছে নিজেদের অদভুতভাবে কিম্ভূতকিমাকার ভাবে সাজিয়ে রেখে, যাতে দেখলেই ভয় লাগে, ভয়ে মাথা নত করে মানুষ অমূর্ত মূর্তির চরণে ও তাঁদের চরণে এবং অমূর্ত ভগবানদের আর তাঁদের চরণ পুজা করে।
আর, একদল আছে, যারা জীবন্ত ঈশ্বরের অনুগামী, শিষ্য। তারা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা ক'রতে করতে জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবন্ত ঈশ্বরের অবর্তমানে, দেহরূপ ছেড়ে চলে যাবার পর তাঁকে পিছনে ঠেলা দিয়ে নিজেরাই ভক্তদের কাছে এক একজন ভগবান সেজে বসে গেছে। জীবন্ত ঈশ্বর যা দেখে হতভম্ব।
মূর্ত-অমূর্ত ঈশ্বরকে সবাই বলাৎকার করছে। রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে মূর্ত ও অমূর্ত ঈশ্বর হচ্ছে লাঞ্ছিত, অপমানিত ও ধর্ষিত। সবাই সমস্ত ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মকথকেরা, অনুগামীরা আজ নিজ নিজ সম্প্রদায় ও নিজের নিজের স্বার্থে, নিজের নিজের প্রয়োজনে ঈশ্বরকে নিয়ে ব্যবসা করছে, এক সম্প্রদায় আর এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে, জেহাদ করছে। ব'য়ে চলেছে রক্তের নদী। আর, ক'রে নিয়েছে তাদের আয়ের মোক্ষম বলিষ্ঠ উপকরণ।
পঞ্চভুতের ফাঁদে যেমন ব্রহ্মা পড়ে কাঁদে ঠিক তেমনি আস্তিক, ভক্ত ও শিষ্যকুল মাঝে জীবন্ত ঈশ্বর পড়ে কাঁদে আর শয়তান হাসে আর ভগবানকে, ঈশ্বরকে বলে, দ্যাখ শালা, কেমন লাগে। -
তাই ভাবি, শয়নে, স্বপনে, জাগরণে, ভোজনে, স্নানে, পায়খানায়, উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে সবসময় দয়ালের কষে একটা ক'রে বিরাশি সিক্কার অদৃশ্য ভয়ংকর থাপ্পড় মারার দরকার ছিল ব'লে মনে হয় আমাদের সমস্ত ক্ষেত্রের সমস্ত মানুষকে অন্ততপক্ষে বিশেষ ক'রে ধর্মক্ষেত্রের ভন্ড ধার্মিকদের, কপট ঈশ্বর পূজারীদের। শীর্ষেন্দুবাবুর আজব গাঁয়ের গজব কথার দুখুরামকে যে ভুত কষে থাপ্পড় মেরে মেরে ক্রমাগত দৌড় করিয়ে করিয়ে তার দুঃখ রোগ সারিয়ে দিয়ে শরীরে মনে অবসাদ হতাশাকে খতম ক'রে তাকে দেশের সেরা দৌড়বিদে পরিণত করেছিল, ঠিক তেমনি ঈশ্বরের সময় এসেছে ঘোর এই কলিযুগের রাবণ, কংস, দুর্যোধন, দুঃশাসনদের দু'গালে বিরাশী সিক্কার এক একটা কষে ভয়ংকর থাপ্পড় মারার সকাল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল নিরবচ্ছিন্নভাবে।
কিন্তু দয়ালের সংবিধান অন্য ধাতুতে গড়া। দেশের সংবিধান সংশোধনের মত দয়ালের দরবারের সংবিধানের ধারা সংশোধনের প্রয়োজন; পরিবর্তন ও পরিবর্ধন বোধহয় জরুরী। কারণ এটা ঘোর কলিযুগ। তিনি যেমন যুগে যুগে আসেন এক একটা মানুষের রূপে। যেমন, শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রী মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও বর্তমানে সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে। তিনি যেমন যুগে যুগে রূপ পালটান ঠিক তেমনি তাঁর শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থায়, তাঁর বিধানেও কিছু কিছু যুগানুযায়ী পরিবর্তন ও পরিবর্ধন প্রয়োজন, প্রয়োজন সংশোধনের।
আমি যখন দয়াল ধামে যাবো তখন দয়ালের দরবারে দয়ালের শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থায় সংবিধান সংশোধনের আর্জি জানাবো। সংবিধান পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার প্রস্তাব দয়ালকে দেবো। এটা আমার একান্তই নিজের ব্যক্তিগত আর্জি। দয়ালের আদালতে আর্জি গ্রহণ বর্জন দয়ালের মর্জি।
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী। ( লেখা ৬ই জুলাই' ২০২৪)।
No comments:
Post a Comment