একটা ভিডিও দেখলাম। সেখানে একজন গুরুভাই (কাজু দা) বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলছেন, উনাকে শ্রীশ্রীদাদা কাছে ডেকে বললেন,
"ঠাকুরের থেকে আমার বাবার (শ্রীশ্রীবড়দা) বেশি ক্ষমতা ছিল, আমার বাবার থেকেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি একটু বেশি ক্ষমতা রাখি, আর বাবাই আমার থেকেও বেশি ক্ষমতা রাখে, আর আমাদের সবার সম্মিলিত যত ক্ষমতা তার থেকেও কিছু বেশি ক্ষমতা অবিন রাখে। ---আর, অবিনকে যদি প্রতিষ্ঠা করতে চাস সারা বিশ্বে তবে অবিনের কাছেই তোকে প্রার্থনা করতে হবে। আর কোথাও প্রার্থনা করলে হবে না।"
এছাড়া আরও কিছু আছে পরবর্তী সময়ে তা আলোচনা করবো।
শ্রীশ্রীদাদা যা বলেছেন ব'লে উনি দাবী করেছেন তার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায়? এই দাবীর স্বপক্ষে উনি রেফারেন্স দেননি কেন? আর, শ্রীশ্রীদাদা শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করতে ব'লেও গেছেন? শ্রীশ্রীঠাকুরকে নয়? এই প্রশ্নের উত্তর একটু দেবেন কাজুদা?
উনি বক্তব্য রাখার মাঝে বলছেন, আমার কথা বিশ্বাস করুন তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে যায় The greatest phenomenon of the world SriSriTHakur Anukulchandra-এর কথা যেখানে কেউ বিশ্বাস করছে না--------দীক্ষিতদের মনেও অনেক প্রশ্ন আছে। কারণ তারা ঠাকুরকে ও ঠাকুরের জীবন দর্শন স্টাডি করেনি ও করে না।----------সেখানে উনি কে যে উনার কথা মানুষ বিশ্বাস করবে? এই প্রশ্নটা ওঠা কি সৎসঙ্গীদের অপরাধ হবে? নাকি ঠাকুরবাড়ির বিরোধীতা হবে? এই নিয়ে চাপান উতোর ইতিমধ্যেই শুরু হ'য়ে গেছে। এই ভিডিও ভাইরাল হ'য়ে গেছে।
এছাড়া উনার কথা অনুযায়ী শ্রীশ্রীদাদা নাকি বলেছেন, "সারা বিশ্বে অবিনদাদাকে প্রতিষ্ঠা করতে হ'লে অবিনদাদার কাছে প্রার্থনা করতে হবে, অন্য কোথাও প্রার্থনা করলে হবে না।" এই কথা তিনি সগর্বে বললেন। উনাকে আমার বিনীত প্রশ্ন, আপনি এই প্রচার করার জন্য অবিনদাদার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন? এরকম প্রচার করার জন্য অবিনদাদার অনুমতি নিয়েছিলেন বা তাঁকে জানিয়েছিলেন?
আর, কেউ কেউ উনার (কাজুদা) ব্যক্তিগত সাধন পদ্ধতির মাধ্যমে অবিনদাদা সম্পর্কে লব্ধ উপলব্ধির কথা বলছেন। শ্রীশ্রীঅবিনদাদা সম্পর্কে উনি উনার সাধন পদ্ধতির মাধ্যমে লব্ধ উপলব্ধির কথা বলতেই পারেন, সেই স্বাধীনতা তার আছে। তবে সেই বাক স্বাধীনতা শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন প্রতিষ্ঠায় কতটা সাহায্য করছে বা কতটা বাধা সৃষ্টি করছে সে সম্পর্কে সাধারণ দীক্ষিতদের কিংবা সাধন ভজন করেন এমন সৎসঙ্গীদের মনেও প্রশ্ন আসতেই পারে। প্রশ্ন আসতে পারে, আবেগ ভালো কিন্তু বেসামাল ভিত্তিহীন আবেগে ভেসে যাওয়া ও ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া কি ভালো? ভালো নয়, তাই না?। আবেগকে কন্ট্রোলে রাখতে হয়, রাখতে জানতে হয় নাকি লাগামছাড়া ক'রে দিতে হয়?। আবেগকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বোধে চালনা করতে হয়। এই সব প্রশ্ন আসাটা তাদেরও স্বাধীনতার পর্যায়ে পড়ে। তাদেরও সাধন ভজন দ্বারা লব্ধ উপলব্ধি হ'তে পারে এইসব প্রশ্ন।
আর, ব্যক্তিগত সাধন পদ্ধতিটা কি রকম পদ্ধতি? আমরা যখন ঠাকুরের দীক্ষা নিয়েছিলাম তখন কি আমাদের বলা হয়েছিল যার যার নিজের মতো ক'রে সাধন পদ্ধতি ঠিক ক'রে নিও? নাকি আমাদের একটা সাধন পদ্ধতি ব'লে দেওয়া হয়েছিল? এবার সেই ব'লে দেওয়া সাধন পদ্ধতি কে কতটা মেনে চলেছে, ও মেনে চলছে নিখুঁতভাবে সেটা আলোচ্য বিষয় হ'তে পারে। কিন্তু যার যার নিজের নিজের মত সাধন পদ্ধতি হ'লে তাহ'লে ঠাকুরের কথায় বলতে হয় "খেয়াল মাফিক ভজলি গুরু হ'তে মানুষ হ'লি গরু।" তা আমরা মানুষ হ'তে গিয়ে গরু হচ্ছি নাতো? যাজন করার আগে, মন্তব্য করা বা ভাষণ দেওয়ার আগে ভেবে দেখার কি এখনো সময় আসেনি?
কেউ কেউ বলছেন ঋত্বিক সম্মেলনে উনি এই বক্তব্য তুলে ধরলে সারা বিশ্ব জানতে পারতো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ঋত্বিক সম্মেলনে তিনি এই বক্তব্য রাখার অধিকার পেলে তো বক্তব্য রাখবেন। তাই নয় কি? উনার বক্তব্যের ভিডিও তো ঠাকুরবাড়ি দেখছে! নিশ্চয়ই পরবর্তী সময়ে উনি সুযোগ পাবেন এই উপলব্ধি তুলে ধরার শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কিংবা শ্রীশ্রীঅবিনদাদার উপস্থিতিতে। নিদেনপক্ষে ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য দাদাদের উপস্থিতিতে তিনি এই বক্তব্য তুলে ধরার নিশ্চিত সুযোগ পাবেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আর যারা এই ভিডিও শেয়ার কেন করেছে, শেয়ার ক'রে একটা ব্যাপার কেন ছড়াচ্ছে ব'লে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন তাদেরকে বলি, কেন? কেউ একজন (কাজু দা) শ্রীশ্রীঅবিনদাদা সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি ব্যক্ত করেছেন আর শ্রীশ্রীদাদা কি কি বলেছেন তা প্রকাশ্যে বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ভিডিও-র মাধ্যমে রেফারেন্স ছাড়া ছড়িয়ে দিতে পারেন বিশ্বব্যাপী সেটাতে দোষ বা গুণ নেই অথচ সেই ভিডিও এবং কাজুদার বলা শ্রীশ্রীদাদার কথাগুলি (?) ক্যাপশান ক'রে পোষ্ট করেছে তা'তে অসুবিধা কোথায়? যদি কথাগুলি সত্য হয় তাহ'লে প্রচার করতে অসুবিধা কোথায়? কথাগুলি কাজুদা আবেগসর্বস্ব হ'য়ে চড়া গলায় অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলতে পারবেন আর কেউ ভিডিও ক'রে পোষ্ট করলেই দোষ? তাহ'লে কি এই বক্তব্য সম্পর্কে সৎসঙ্গীদের কোনও সন্দেহ আছে? কাজুদার বক্তব্যকে সমর্থন ক'রে মন্তব্যের বন্যা বইছে আবার ভিডিও শেয়ার ক'রে ছড়াচ্ছে কেন তা'তে ক্ষিপ্ত হচ্ছে, বিরক্ত বোধ করছে এরকম দু'মুখি সাপের অবস্থান কেন? কেন এমন পরস্পর বিরোধী বক্তব্য? আমাদের এত লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারার কি আছে? দেখা যাক এই ভিডিও কতদিন থাকে? দোষ থাকলে অটোমেটিক ডিলিট হবে নতুবা বহাল তবিয়তে রমরম ক'রে চলবে। আর তাছাড়া এই ভিডিও তো ঠাকুরবাড়ি দেখছে। তাই নয় কি?
আর, অনেকে এই বক্তব্যে হতাশ হ'য়ে পড়েছেন, ভেঙে পড়েছেন, বিশ্বাস হারাচ্ছেন ঠাকুরের প্রতি, আচার্যদেবের প্রতি, অবিনদাদার প্রতি, আর যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো সব দোষ আর উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ের মতো সব দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন বুঝে, না-বুঝে, রেগে ও বিরক্তিতে শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদার উপর। কেন?
কারও বক্তব্যে হতাশ হবো বা হবেন কেন? ভেঙে পড়বো বা পড়বেন কেন? বিশ্বাস হারাবো বা হারাবেন কেন? এই ধরণের আবেগসর্বস্ব রাজনৈতিক ময়দানের হাততালিতে ও হৈচৈ-এ ভরপুর জনসভার বক্তৃতার মতো বক্তৃতা ও হৈ হৈ আর হাততালি শুনে অবিশ্বাসী হ'য়ে উঠবো বা উঠবেন কেন? রেগে গিয়ে কন্ট্রোল হারাবো বা হারাবেন কেন?
এরকম শ্রীশ্রীবড়দাকেও ঠাকুর বানাবার চেষ্টা হয়েছিল এবং সেই চেষ্টার পরিণতি স্বরূপ সেই ভক্তর কি হয়েছিল সেটাও মোটামুটি যারা খবর রাখে তারা জানে। আর সেই চেষ্টাও ভক্তির নামে আবেগসর্বস্ব ভক্তি ছিল নাকি ভক্তির নামে চক্রান্ত ছিল কিনা এবং কাজুদার এই ভক্তিও আবেগসর্বস্ব বেসামাল ভক্তি নাকি ভক্তির আড়ালে কোনও চক্রান্ত কিনা সেটাও সময় বুঝিয়ে দিয়েছিল ও বর্তমানেও তাই দেবে। কোনও দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
আপনি, আমি বা আপনারা, আমরা শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও শ্রীশ্রীবাবাইদাদার সঙ্গ করা লোক তাহ'লে আপনি, আমি বা আপনারা, আমরা বিশ্বাস হারাবো বা হারাবেন কেন? কেন সন্দেহ করবো বা করবেন?
আমরা যেন ভুলে না যাই আমাদের মাঝে শ্রীশ্রীআচার্যদেব আছেন, আছে আচার্য পরম্পরা। স্বয়ং আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা আছেন আমাদের সামনে পথপ্রদর্শক রূপে। ভয় কি? আচার্যদেবের প্রতি আছে আমাদের গভীর বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও নির্ভরতা।
তাই সবাই একটু ধৈর্য ধ'রে অপেক্ষা করি ও করুন এই ভিডিওর কি প্রতিক্রিয়া হয় তা ধৈর্য সহকারে দেখবার জন্য।
( লেখা ২৮শে জুলাই'২০২৩)
No comments:
Post a Comment