Powered By Blogger

Saturday, July 26, 2025

প্রবন্ধঃ ধার্মিক ও মানুষ।

ধার্মিক ধার্মিকই হয় আর মানুষ মানুষই হয়। আমরা সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ধার্মিক ও মানুষ শব্দের আগে প্রকৃত ও তথাকথিত শব্দ যোগ করিয়া থাকি। এই যোগ করিবার কারণ তার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ আচরণের আকাশ পাতাল তফাৎ। তাই আমরা যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত ধার্মিক, তথাকথিত ধার্মিক এবং প্রকৃত মানুষ, তথাকথিত মানুষ বলিয়া থাকি। যেমন ঘিয়ের শিশির গায়ে লেখা থাকে খাঁটি ঘি। ঘিয়ের আগে খাঁটি শব্দ লিখে ঘিয়ের জাত চেনাইতে হয়। কিন্তু ঘি ঘি-ই হয়। ঘি তার আভিজাত্য, মর্যাদা, কৌলীন্য হারাইয়া এই দু'নম্বরী চোরুয়া দেশে আজ 'খাঁটি' শব্দের দ্বারস্থ হইয়া তার ইজ্জত রক্ষার্থে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু শত চেষ্টাতেও ঘি তার আভিজাত্য, বংশ মর্যাদা, বংশ কৌলীন্য, তার মহামূল্যবান কুমারিত্ব রক্ষা করিতে পারে নাই। আর এই সমস্ত কিছু হারাইয়াছে সে মানুষের দ্বারা ধর্ষিত হ'ইয়া। এবার প্রশ্ন উঠিবে কোন মানুষ? যখন মানুষের হাতে কেউ লাঞ্ছিত, অপমানিত ও ধর্ষিত হয় তখন সে কি আর মানুষ নামে অভিহিত হয়? তখন সেই মানুষের আগে অমানুষ, নীচ মানুষ ইত্যাদি নানা বিশেষণ যোগ হয়। তথাকথিত মানুষ নামে তখন সে খ্যাত হয়। ঠিক তেমনি ধার্মিক যখন তার আচার আচরণে, কথাবার্তায়, তার চরিত্রে অধর্মীয় কার্যকলাপ ফুটাইয়া তোলে তখন তাকে অধার্মিক, ভন্ড ইত্যাদি নানা সম্বোধনে আমরা সম্বোধিত করি।
তাই আমরা ধার্মিকের আগে ও মানুষের আগে প্রকৃত শব্দ যোগ করিয়া আলাদা পরিচিতি তৈরী করিয়াছি। মানুষের সঙ্গে ধার্মিক শব্দ যোগ করিয়া ধার্মিক মানুষ নামে একশ্রেণীর নোতুন জাতের মানুষ তৈরী করিয়াছি। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখিতে হইবে প্রকৃত ধার্মিক মাত্রই প্রকৃত মানুষ আর যে প্রকৃত মানুষ অর্থাৎ মানুষ অর্থে মানুষ সে প্রকৃত ধার্মিক অর্থাৎ ধার্মিক অর্থে ধার্মিক। প্রকৃত ধার্মিক আর প্রকৃত মানুষের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনও বিরোধ নাই। অহেতুক আমরা প্রকৃত বা তথাকথিত শব্দ যোগ করিয়াছি ধার্মিক বা মানুষের পিছনে ঐ ঘিয়ের পিছনে খাঁটি শব্দের তকমার মতো।

মানুষ মানে মান আর হুঁশ নিয়ে মানুষ। সৎসঙ্গের বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা আমাদের শ্রীশ্রীঠাকুরের দৃষ্টিতে আমাদের সামনে নোতুন অর্থ শেখাইলেন মানুষ অর্থের। মান মানে তিনি বলিলেন, অস্তিত্ব আর হুঁশ মানে হুঁশ অর্থাৎ চৈতন্য, চেতনা, জ্ঞান, সতর্কতা।

তাহ'লে মানুষ মানে হ'লো অস্তিত্ব সম্পর্কে, অস্তিত্বের রক্ষা ও শ্রীবৃদ্ধি সম্পর্কে জ্ঞান ও সতর্ক থাকা। ঠিক তেমনি ধর্ম মানে ধ'রে রাখা। এই জগতের যা কিছুর অস্তিত্ব আছে সেই সমস্ত অস্তিত্বকে যা যা ধরিয়া রাখে ও শ্রীবৃদ্ধির দিকে লইয়া যায় তাই-ই ধর্ম। আর এই অস্তিত্বকে রক্ষা করা ও শ্রীবৃদ্ধির দিকে লইয়া যাওয়ার জ্ঞান বা ক্ষমতা যাহার মধ্যে আছে সেই ধার্মিক বা মানুষ।

তাই ধার্মিক ও প্রকৃত ধার্মিক এবং মানুষ ও প্রকৃত মানুষের মধ্যে কোনও বিরোধ নাই। ঠিক তেমনি প্রকৃত ধার্মিক ও প্রকৃত মানুষের মধ্যেও কোনও বিরোধ বা ফারাক নাই। সবটাই আচার আচরণ, কথাবার্তা, চিন্তাভাবনার উপর নির্ভরশীল।

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বারবার কাতর কন্ঠে বলিতেন, "আমায় তোমরা কেউ মানুষ ভিক্ষা দিতে পার?"
( লেখা ২৬শে জুলাই'২০২৩)

No comments:

Post a Comment