ভোগ বা প্রসাদ অর্থাৎ বাতাসা, মিষ্টি ইত্যাদি ঠাকুরকে যা নিবেদন করা হয় তাই আর মহাভোগ বা মহাপ্রসাদ ঠাকুরের কথা! ভোগ বা প্রসাদের লোভে যেন আমরা সৎসঙ্গীরা সৎসঙ্গে না আসি বা যাই। মহাভোগ বা মহাপ্রসাদের জন্য বা লোভে যেন আমরা সৎসঙ্গে যাই বা আসি। ভোগ বা প্রসাদ রসনা তৃপ্ত করে আর মহাভোগ বা মহাপ্রসাদ অপূর্ণ জীবন পূর্ণ করে, জীবনের তৃষ্ণা মেটায়, জীবনকে পথ দেখায়, জীবনের ভুল দেয় শুধরে, জীবনের অন্ধকার দূর ক'রে জীবনকে ঝলমলে ক'রে তোলে। সৎসঙ্গ একটা সান্ধ্য স্কুল, আর সেই স্কুলে ক্লাস হয় দু'ঘন্টার। সেখানে গান বাজনার সাথে সাথে জীবন নিয়ে ঠাকুরের দর্শন নিয়ে আলোচনা হয়। গানে, কীর্তনে বাজনায় মানুষের অন্তর নেচে ওঠে, উল্লসিত হয়, সমস্ত শিরা উপশিরা তেতে ওঠে, স্নায়ু টানটান হয় আর ঠাকুরের কথায় মানুষের মনপ্রাণ পুলকিত হ'য়ে ওঠে, হতাশা ভরা জীবনে আশার আলো দেখতে পায়, শারীরিক-মানসিক যাতনার অবসান হয়, পথ খুঁজে পায়, ঘোর অন্ধকার মাঝে আলোর সন্ধান পায়, অবসাদ দূর হয়, আশা জাগে, বিশ্বাস জন্মায়, নির্ভরতা আসে, নতুন ক'রে বাঁচার ইচ্ছা হয়, নতুন উদ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি পায়, বুকের মাঝে যে মহাশক্তি ঘুমিয়ে আছে সৎসঙ্গে আসার ফলে ঠাকুরের মহাপ্রসাদ লাভের মধ্যে দিয়ে সেই শক্তির কথা জানতে পারে, সন্ধান পায়! তাই সৎসঙ্গে এলে মানুষের মঙ্গল হয়, সৎসঙ্গীদের সংস্পর্শে নতুন দিগন্ত খুলে যায়।
সৎসঙ্গ ও তাঁর মহাভোগ বা মহাপ্রসাদ জীবনের অন্ধকারের বুক ভেদ ক'রে আলোর জগতে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দিশারী। তাই সৎসঙ্গ যেন প্রাণবন্ত হ'য়ে ওঠে, প্রতিটি সৎসঙ্গ-ই যেন বিশেষ সৎসঙ্গ হ'য়ে ওঠে।
সৎসঙ্গে আমরা যারা গান বাজনা ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করি তাদের খেয়াল রাখতে হবে গান বাজনা ও আলোচনা যেন প্রাণবন্ত হয়। একঘেঁয়ে ও বিরক্তিকর যেন না হয়। গান আমরা ঠাকুরকে শোনায়। জীবন নিয়ে বলে যাওয়া ঠাকুরের কথা আমরা আলোচনা করি। জীবন কেমন করে সুন্দর হবে, পরিপূর্ণতা লাভ করবে সেই সম্পর্কে তাঁর বলে যাওয়া পথ নির্দেশ আমরা সৎসঙ্গে যারা আলোচনা করি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যেন বলবার সময় বক্তা না হ'ই, ভক্ত হ'ই। গানে, কীর্ত্তনে, আলোচনায় মানুষের অন্তর স্পর্শ করে তখনই আমরা যারা গান, কীর্ত্তন, আলোচনা করি আমাদের অন্তরে যখন তিনি বিরাজ করেন। এটা যেন আমরা মনে রাখি ঠাকুর স্বয়ং উপস্থিত থাকেন সৎসঙ্গে। উপস্থিত থাকেন শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দা, আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা এবং শ্রীশ্রীঅবিনদাদা স্বয়ং আর তাই সৎসঙ্গ হ'য়ে ওঠে প্রাণবন্ত! যখনই দেখবেন গানে, কীর্ত্তনে, আলোচনায় সৎসঙ্গ প্রাণবন্ত হ'য়ে উঠেছে নিশ্চিত জানবেন সেখানে ঠাকুর স্বয়ং তাঁর পরিবার নিয়ে উপস্থিত আছেন! তিনি স্বয়ং লীলা করছেন সেখানে, লীলা করছেন রেত: শরীরে সুপ্ত থেকে! তাঁরা সৎসঙ্গ আলো ক'রে বসে আছেন আর শুনছেন আপনার গান, কীর্ত্তন আর আলোচনা! এ আমার গভীর বিশ্বাস আর উপলব্ধির কথা! মানতেও পারেন, নাও মানতে পারেন। শ্রীশ্রীবাবাইদাদা প্রায় সময় বলেন, "গ্রহণ ও বর্জন আপনার ব্যক্তিগত"! আমিও তাঁর শ্রীমুখের অমৃত কথা মানি ও মেনে চলি। তাই তাঁর সুরে সুরে মিলিয়ে আমিও বলি, গ্রহণ ও বর্জন আপনার, আপনাদের ব্যক্তিগত। কথায় আছে, "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর" আর বোঝে সে প্রাণ বোঝে যার!
তাই পিছনের সমস্ত টান ছিন্ন ক'রে, অজুহাতের হাত দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিয়ে সৎসঙ্গে আসুন, নিজের অনিয়ন্ত্রিত, নীচ বৃত্তি-প্রবৃত্তির ছটফটানিকে কঠোর ভাবে শাসন ক'রে ধৈর্য ধ'রে বসুন, মন দিয়ে শুনুন, অন্তরের অন্তরস্থল থেকে উপভোগ করুন ঘন্টা দুয়েকের সৎসঙ্গ তথা বাঁচা বাড়ার অনুষ্ঠান তারপর উপলব্ধিতে ভরপুর হ'য়ে শ্রদ্ধায় অবনত হ'য়ে ঠাকুরের ভোগ আর মহাভোগ বা প্রসাদ আর মহাপ্রসাদ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান নতুন দিনের স্বপ্ন মাথায় নিয়ে!!!
( লেখা ৫ই জুলাই' ২০১৯)
No comments:
Post a Comment