একজন ভারতীয় ও সৎসঙ্গী হিসেবে বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করলাম ও নিজের ভাবনা তুলে ধরলাম।
বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় মুক্তিযুদ্ধের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন আজ ভারত বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিল অবশেষে প্রত্যাশা অনুযায়ী এবং সেই ভারত বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে। ভাবতে অবাক লাগে আমরা কতটা নপুংসক হ'লে আজ অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আন্দোলন ঘুরে যায় আমার দেশের বিরুদ্ধে এবং আমারই দেশের মাটিতে তা সমর্থন করে ফণা তুলে যারা তারা কি ভারতীয়? প্রশ্ন জাগে মনে?।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার, ছাত্রদের নিজস্ব দাবীদাওয়ার ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। আমার দেশের মাটিতে আমার দেশের বিরোধীতার সঙ্গে সেই আন্দোলনের সম্পর্ক কি? কেন আমরা তাদের ব্যাপারে নাক গলাবো? কেন আমাদের দেশে তার বীজ বপন হ'তে দেবো? যদি সেই আন্দোলন ও আন্দোলনের বিরোধীতা অমানবিক হয়, আমার দেশের পক্ষে ক্ষতিকর হ'য়ে ওঠে তখন ভারত মানবতা বা মানবিকতা রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, তার নিজের স্বার্থে, আত্ম্রক্ষার স্বার্থে হস্তক্ষেপ করতে পারে, কিন্তু তার আগে নয়।
অবাক লাগে আমার দেশের বিরুদ্ধে আমারই দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমার দেশকেই বলাৎকার করে কারা?! আজ আমরা কোথায় কোন সর্বনাশের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি তা সম্ভবত ভারতের মানুষ ও পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ জানে না। জানলে এমন হ'তো না। ভারতের বুকে দাঁড়িয়ে ভারত বিরোধীতার বিরুদ্ধে ভারতীয় নাগরিকদের অন্তত প্রতিবাদ হ'তো। অন্তত ফেসবুক জুড়ে নেটিজেনরা প্রতিবাদ করতো স্বাভাবিকভাবেই 'আমি ভারতীয়' এই বোধ থেকে। এর থেকে বোঝা যায় যখনি কোনও আন্দোলন সংঘটিত হয়, তা স্বতস্ফুর্ত পবিত্র আন্দোলন নয়, তা পরিকল্পিত আন্দোলন। তার রাশ ছাত্র যুবদের হাতে থাকে না। ১৮ বছর বয়সের ছাত্রছাত্রী, যুবকযুবতীরা অদৃশ্য হাতের খেলার পুতুল মাত্র।
তাই ভাবি,
আজ যখন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ ক'রে দরদে বুকের বরফ গলে ঝর্ণা হ'য়ে ঝ'রে পড়ছে আন্দোলন কারী ছাত্রদের মাথার ওপর আশীর্বাদ হিসেবে মানবতা রক্ষার প্রশ্নে শক্তিমান দেশ আমেরিকার, তখন প্রশ্ন জাগে মনে, সেইদিন ৭১ সালের বাংলাদেশের বুকে বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনার সময় কি ভূমিকা ছিল আমেরিকার? আমেরিকা ভুলে গেছে সেদিনের তার অমানবিক মুখ? আজ আবার মানবিক মুখ বেড়িয়ে এসেছে? যেদিন চীনের তিয়েনয়ানমেনের ছাত্র আন্দোলনের ওপর নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল সেদিন কারও মানবিক মুখ কেন দেখা যায়নি? সেদিন কি আন্দোলন সঠিক ছিল? আজকের বাংলাদেশের আন্দোলন কি সঠিক ছিল? এসব প্রশ্ন কি ছাত্রদের মনে আসবে না? মানবিক মুখ স্থান, কাল, সময়, ক্ষেত্র বিশেষে পাল্টে যায় নাকি?
এমন কেন হয়? সবসময় কেন মানবিক মুখ থাকে না রাষ্ট্র নায়কদের?
সেদিন ৭১ সালের পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনীর বাংলাদেশের নারীদের ওপর নৃশংস মর্মান্তিক নারকীয় অত্যাচার আর লক্ষ লক্ষ নির্বিচারে নারীপুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধবৃদ্ধা হত্যার বিরুদ্ধে ভারতের উদার সহযোগিতার আজ আর কোনও মূল্য নেই বাংলাদেশের জনগণের একাংশের কাছে। কেন? কেন তাদের মনে এমন ভাবের সৃষ্টি হ'লো? আজকের ইয়ং জেনারেশনের মনে ভারত বিদ্বেষের বিষ বপন করলো কে? কারা? দূরের তথাকথিত বন্ধুদের হাত ধ'রে পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতা ক'রে কি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়? দূরের বন্ধুরা তো নিরাপদ দূরত্বে বসে সহজ সরল ছাত্রদের আগুনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, দিচ্ছে ফেলে মৃত্যু মুখে ১৮-২০ বছর বয়স কি কোনওদিন তা বুঝতে চাইবে না? ১৮-২০ বছর বয়স ব'লে বুঝবে না? 'আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা'মানসিকতায় 'এ বয়সের ধর্ম' ব'লেএড়িয়ে যাবে, পাশ কাটিয়ে যাবে বীর, মহাবীর, শহীদ, শহীদের রক্ত, হবে না কোনোদিন ব্যর্থ, তোমায় ভুলছি না, ভুলবো না ইত্যাদি মিথ্যে বাহবা দিয়ে, স্তোকবাক্য শুনিয়ে আবু সাঈদের নামের আগে বিশেষণ যোগ ক'রে? আবু সাঈদ কি আর কোনওদিন ফিরে আসবে? আবু সাঈদের মৃত্যু কি কাম্য ছিল? আবু সাঈদের মৃত্যু কি কেউ মনে রাখবে? ৭১-এর লক্ষ লক্ষ ছাত্রীদের ওপর, মা-বোনেদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের নারকীয় যৌন অত্যাচার ও মানুষের ওপর নির্মম ভয়াবহ মৃত্যু যখন আজকের ছাত্রছাত্রী, যুবকযুবতী মনে রাখেনি তখন আবু সাঈদকে কে মনে রাখবে? ধীরে ধীরে সময় ব'য়ে যাবে বাংলাদেশের বুকে আর সবাই সব ভুলে যাবে, শুধু আবু সাঈদের ঘরে, আবু সাঈদের নির্জন ঘরে একাকী মায়ের ফাঁকা হাহাকার ভরা শূন্য বুকে করুণ আর্তনাদ শোনা যাবে, 'শূন্য এ বুকে মোর পাখি ফিরে আয়, ফিরে আয়' হৃদয়বিদারক কান্না। আর, সেই করুণ চাপা যন্ত্রণার কান্না বুক চিরে, ঘরের দেওয়াল ভেদ ক'রে গিয়ে কানে পৌঁছোবে না আন্দোলন শেষে আন্দোলনকারীদের কানে।
এটাও সত্য আন্দোলনকারীদের একাংশ আবু সাঈদকে মৃত্যুর আগে চিনতো কিনা এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
এই যে ৭১-এর পর থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে বিরোধীরা সোচ্চার যা আজ ৫৩ বছরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে্র বুকে এটাকেই বলে বেইমানী, নেমক হারামী, অকৃতজ্ঞতা। এই বেইমানী, নেমক হারামী, অকৃতজ্ঞ চরিত্র রক্তে থাকে। এ রক্তের দোষ। আর, এটাই রক্তের দোষের স্বাভাবিক পরিচয়। এর মধ্যে বহু ছাত্রছাত্রী আছে যারা বেইমানদের দ্বারা বিপথে চালিত, এদের কথায় বিভ্রান্ত, চিন্তাভাবনায় বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত। বিশ্বজুড়ে ছাত্র সমাজকে আজ নিজের স্বাধীন আইডেন্টিটি গড়ে তুলতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় যে ছাত্র আন্দোলন তা'তে নিজের আইডেন্টিটি থাকে না। ছাত্রদের আজ বুঝতে হবে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। জ্ঞান অর্জনের রাস্তা ছেড়ে উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বরযুক্ত কল্পনায় ভরা নানা অর্থহীন, ভিত্তিহীন, দিশাহীন, লক্ষ্যহীন আন্দোলনের নামে কলুর বলদের মত অজ্ঞানতার ঘানি টেনে যেতে হবে সারাজীবন, ঘানি টেনে যেতে হবে রাজনৈতিক দলের ও নেতাদের ছত্রছায়ায় তাদের উদ্দেশ্য পূরণের বোড়ে হ'য়ে।
এখন মনে পড়ে সেই সত্তর দশকের কথা। সেদিন আমিও ছিলাম ১৬ বছরের ছাত্র। সব চোখের সামনে ভেসে ওঠে ছবির মত। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, কলেজ হোস্টেলে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তান মিলিটারির হাতে হাজার হাজার ছোটবড় ছাত্রী ও মাবোনেদের ওপর প্রতিদিনের নির্মম বলাৎকারের খবর, সেনা ক্যাম্পে হাজার হাজার নারীদের উলঙ্গ ক'রে রাখা আর নির্মম নিষ্ঠুর পশুর মত একে একে একের পর এক বলাৎকারের পর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার ছবি, হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক থেকে বুদ্ধিজীবী নির্বিশেষে নৃশংস হত্যা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আর ভেসে ওঠে সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে উত্তাল ভারত, উত্তাল ভারতের পার্লামেন্ট ও সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা, ভেসে ওঠে উত্তাল সমস্ত রাজনৈতিক দল, ভারতের জনগণের ছবি। সেদিন ভারতের প্রধান মনত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক ভয়ঙ্কর চাপ উপেক্ষা ক'রে, আমেরিকার চোখ রাঙানিকে পদদলিত ক'রে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের বর্বর জংলী দরিনদা সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হাত থেকে। সেদিন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করেছিল সেই বন্দী সেনাবাহিনীর ওপরও মানবতাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন প্রধানমনত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ।
এখন ভাবি, আজকের আধুনিক ছাত্রছাত্রীরা কি সেই দিনের ইতিহাস জানে না? সেই দিনগুলিতে পাকিস্তানি সেনা ক্যামপগুলিতে সেনারা আর রাজাকারেরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারী মাংস ভোগের সময় কি মুসলিম আর হিন্দু নারী ভেদ করেছিল? সেদিন ঐ পাকিস্তানি মুসলিম দরিনদা সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হাত থেকে কে রক্ষা করেছিল মুসলিম নারীদের? কে রক্ষা করেছিল বাংলাদেশের অসহায় জনগণকে? বিশ্বের কোন দেশ সেদিন পাশে দাঁড়িয়েছিল? কি বলবে আন্দোলনরত আজকের ছাত্রছাত্রীরা? ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গেছে সেই কলঙ্কিত ইতিহাস? এর পরেও বলবে ছাত্র আন্দোলন জিন্দাবাদ?
আজ আরও ভাবি যদি সেদিন,
১) ইন্ডিয়া 'অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় অতএব আমরা নাক গলাবো না ব'লে' মানবতার গলা টিপে ধ'রে চুপ ক'রে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের নৃশংস অত্যাচার দেখতো আর বাদাম ভাজা খেতো? তাহ'লে কি হ'তো? যদি সেদিন ইন্ডিয়া 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় অন্য বৃহৎ শক্তির মত মানবতাকে বলাৎকার ক'রে মুখ ঘুরিয়ে নিত আর নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোতো তাহ'লে কি হ'তো?
২) যদি সেদিন ভারত আমেরিকার বাংলাদেশকে সাহায্য না করার অর্ডার মেনে নিতো তাহ'লে আজ বাংলাদেশের ইতিহাস কি হ'তো?
৩) যদি সেদিন আমেরিকার অর্ডার না মানার অপরাধে ভারতের উদ্দেশ্যে পাঠানো ভয়ংকর যুদ্ধ জাহাজ সপ্তম নৌবহর ভারতের ওপর আঘাত করতো তখন কি হ'তো? তখন কি ভারত নিজেকে রক্ষা করা ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে সাহায্য করা নিয়ে মেতে থাকতো?
৪) নিজের বিপদ হবে জেনেও, ঘাড়ের ওপর ভয়ংকর শক্তিশালী বিষাক্ত সাপ (আমেরিকা) তার গরম বিষ নিশ্বাস ফেলছে ফলে নিজের অস্তিত্ব ধ্বংস হবে, বৃহৎ শক্তির শত্রু হ'য়ে যাবে, ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রাণ বিপন্ন হবে জেনেও ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল নিজের স্বার্থে?
৫) সেদিন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকার চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ ছিল?
৬) সেদিন আমেরিকার চিরশত্রু রাশিয়া এসেছিল ভারতকে সাহায্য করতে, সেদিন রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজও এসে ভিড়েছিল ভারত মহাসাগরে আমেরিকার মোকাবিলা করার জন্য ফলে বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়ার যে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেদিন যদি বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ লেগে যেত আর চারপাশে বড় বড় দেশ দিয়ে ঘেড়া বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি হ'তো? আর, আজ কোথায় থাকতো ভারত বিদ্বেষ?
৭) এক তো পাকিস্তানের নৃশংসতায় প্রায় শেষ হ'য়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ তার ওপর বাংলাদেশকে ঘিরে যদি বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেত কিংবা ভারত একেবারে চোখ উল্টে দেওয়ার কৌশল নিত আর পাকিস্তানের আগ্রাসনের সাথে সাথে যদি চীনও হাত মেলাতো বাংলাদেশের জমিতে ঢুকে পড়ার (যা চীন হাসিনা সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি ক'রে চলেছে নানা বিষয়ে), যদি রাশিয়া ঘাঁটি গেড়ে বসতো, ভারত সরে যেত ও নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত থাকতো তাহ'লে ৭১ সালের সেদিনের ঘরে-বাইরে বিপর্যস্ত বিধস্ত বাংলাদেশের আজকের মত ভারত বিদ্বেষ তো দূরের কথা বাংলাদেশের মত ছোট্ট দেশের কি স্বাধীন অস্তিত্ব থাকতো?
৮) সেদিন ভারতের সাহায্য ছাড়া পাকিস্তানের ছোট্ট দুর্বল একটা অংশ পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে লড়াইয়ে পেরে উঠতো?
৯) আর যদি ভারতের কোনও সাহায্য ছাড়াই লড়াই চালাতো একা সেই সময়ের পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানের বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাহলে এত তাড়াতাড়ি স্বাধীন হ'তে পারতো? আদৌ পারতো? ভারতকে বাদ দিলে কার সাহায্য নিত? চীনের? রাশিয়ার? নাকি দূর 'দ্বীপবাসীনি তোমাকে চিনি গো চিনি' আমেরিকার? কার? নাকি পাকিস্তানের কাছে শেষমেশ আত্মসমপর্ণ? কোনটা?
১০) ভারত সরাসরি লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই যদি না করতো তাহ'লে বাংলাদেশ কতদিন যুদ্ধ চালাতো? কোনও রকম সাহায্য ছাড়াই সেনা আর রাজাকারদের দ্বারা তৈরী নরকে পরিণত হওয়া পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ কি উঠে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতো আর কোনোদিন? নাকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাহায্য ছাড়াই এত দ্রত উন্নতি করতে পারতো?
যাই হ'ক, সম্ভাবনার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে কিন্তু বাড়ালাম না। বাড়িয়ে লাভ নেই। প্রতিবেশীর সঙ্গে লড়াই করে মুর্খরা। আখেরে লাভ হয় সুযোগ সন্ধানী শত্রুদের। ধ্বংস হয় নিজেরাই। যেমন পাকিস্তান ক'রে চলেছে অন্যের উস্কানিতে আজ ৭৮ বছর ধ'রে। আর, সেই স্রোতে গা মেশাতে চাইছে বাংলাদেশের নাগরিকদের এক বৃহৎ অংশ। আজ ভারতকে শত্রু হিসেবে দেখছে তারা।
এই সমস্ত কিছু ভেবে দেখতে হবে আজ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সমস্ত ছাত্রছাত্রী সমাজকে। ছাত্র সমাজকে সংঘবদ্ধ ভাবে চোখ কান খোলা রেখে সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে প্রকৃত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে দেশেরই বৃহত্তর স্বার্থে। মনে রাখতে হবে ছাত্র আন্দোলন যদি করতেই হয় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য, দেশের শান্তি, শৃঙখলা, সহিতাবসতা বজায় রাখার জন্য, আভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, দেশের শ্রীবৃদ্ধির জন্য, অর্থনৈতিক শক্তিতে শক্তিশালী হওয়ার জন্য, ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা, বিজ্ঞান সবদিকেই উন্নতির জন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে, সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নত দেশ গুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি ইত্যাদি বিযয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, দূরদৃষ্টি দিয়ে বিচার করতে হবে। নতুবা হঠকারী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রদের সুইসাইড আন্দোলন করা ছাড়া আর কিছুই বাকী থাকবে না। ব্যাপারটা যেন "জেনেশুনে বিষ করেছি পান' না হ'য়ে যায় শেষে।
( লেখা ২৫শে জুলাই'২০২৫)
No comments:
Post a Comment