Powered By Blogger

Friday, January 3, 2025

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঠাকুরের ছবি আঁকা প্রসঙ্গে।

ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতিকৃতিকে বিষয় করা যায় কি?
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হ'লে এই প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা বললেন,
"কাঁচা হাতে ঠাকুরের ছবি আঁকবে? এটা কি কোনও সূর্য্য, চন্দ্র, গ্রহ, গাছপালা, পশু-পাখির ছবি, যে, আঁকলাম, ঠিক হ'লো না, ফেলে দিলাম? কাঁচা হাতে যে ছবি আঁকবে, ঠিক হবে না, কাটবে, তারপর সেই কাগজগুলো কি করবে? আর কোনও বিষয় পেল না? হিমালয়ের চূড়া থেকে অতলান্তিক সমুদ্রের গহ্বর পর্যন্ত এত বিস্তৃত পরিধিতে কত বিষয় তো আছে। ভগবানকে নিয়ে এভাবে হেলাফেলা কেন? এই বিষয়টাকে বাদ দিতে বলবেন।"
 
এই জন্যেই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "গুরুর তিরােধান যদি হয় তখন তিনি মূৰ্ত্তি গ্রহণ করেন আচার্য্যের ভিতর। আচাৰ্য্যদেবাে ভব’ না কী কয়! আচাৰ্য—যাঁর আচরণকে অনুসরণ করে আমরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠি। (দীপরক্ষী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২২)।

আচাৰ্য্যদেবাে ভব’ মানে হ'লো আচার্যদেবই সত্তা, স্থিতি; উৎপত্তি; জন্ম; ইহলোকম সংসার; ঈশ্বর; শিব; মঙ্গল।

ঠাকুরের ছবি আঁকার কি আছে? এতই যদি ঠাকুরের প্রতি প্রেম ভালোবাসা ভক্তি জেগে ওঠে তবে তা 'চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম হ'ক' না। অসুবিধা কোথায়? হাতে খড়িটা বাবা-মাকে দিয়েই প্রথম হ'ক না। এক লাফে পরমাত্মার ছবিতে হাত পাকাবার জন্য প্র্যাকটিস না ক'রে প্রথমে প্রাকৃতিক দৃশ্য ছেড়ে যদি মানুষের ছবির ওপর হাত পাকাতেই হয় তবে তা' প্রথমে নিজের বাবা-মার ওপরেই হ'ক না। তা'তে দেখা যাক বাবা-মায়েরা সন্তানের হাতে কতটা নিজের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা পেত্নি-শাকচুন্নি, ডাকিনি যোগীনি, নন্দীভৃঙ্গী ইত্যাদিদের রূপ দেখতে পারে। এটাও তো মহাভাগ্য নিজের সন্তানের হাতে নিজের আসল রূপ দেখতে পাওয়া। সন্তানেরাও দেখুক তাদের বাবা-মায়ের আসল রূপ। একটা আবিস্কারের মতন ব্যাপার। মহা ইটারেস্টিং ব্যাপার। আর এরে সঙ্গে 'চলো নিজেকে পাল্টাই'-এর অনুশীলনের সুযোগও থাকে তা'তে। তারপর হাত পাকা হ'লে নাহয় অন্য কিছু ভাবা যেতে পারে। তাই বাবা-মায়েদের উচিৎ সন্তানকে রাইট ডিরেকশানে ছবি আঁকার হাত পাকানো। আর তার থেকেও বড় কথা, প্রথম ও প্রধান বড় দায়িত্ব হওয়া উচিৎ সর্বপ্রথম সন্তানের মনকে তৈরী করার জন্য, পারফেক্ট করার জন্য অনুশীলনের শিক্ষা দেওয়া।

এই প্রফেট যারা তাঁদের যাতে অমর্যাদা না হয়, তাঁদের প্রতি অমর্যাদায় দারিদ্যব্যাধিগ্রস্ত না হ'য়ে ওঠে তাই মহানবী হজরত মহম্মদ তথাগতদের ছবি বা ফটো রাখা বারণ করেছেন। কারণ ভাঙাচোরা মানুষ, রিপুতাড়িত মানুষ, বৃত্তিপ্রবৃত্তিতে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ, কুসংস্কারাছন্ন মানুষ যাতে তাঁদের অমর্যাদাকর ছবিগুলি দেখে দেখে আপাদমস্তক নিজের জীবনে চরিত্রে অমর্যাদার বিষে বিষাক্ত হ'তে হ'তে, বিষাক্ত বিষে নীল হ'য়ে রাঙিয়ে উঠে প্রফেটদের প্রতি তাচ্ছিল্য বুদ্ধিযুক্ত হ'য়ে প্রফেটদের বলাগুলিকে আর জীবনে মেনে চলবে না। তাই পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ কঠোরভাবে ছবি বা মূর্তির বিরুদ্ধে ব'লে গেছেন। তিনি প্রফেটদের ছবি বা মূর্তির বিরুদ্ধে ব'লে গেছেন তা' নয়। এটা ভুল প্রচার। বোঝার ভুল। প্রভু মহম্মদের ব'লে যাওয়া বাণীগুলিকে বোঝার ভুল ও ভুল interpretation বা ব্যাখ্যা। এ ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে কোনোদিন আমি ব্যাখ্যায় আসবো।

এ জন্যেই বলে জীবনে শ্রীশ্রীআচার্য্যের প্রয়োজন। আগে তো নিজেকে রাইট ডিরেকশানে পরিচালিত করি তারপর তো সন্তানকে তার জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে রাইট ডিরেকশান দিতে পারবো। নতুবা সব দীক্ষা শিক্ষা ইত্যাদি বকোয়াস। যে বকোয়াস শিক্ষা আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিতরা আমাদের শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন জীবনে গ্রহণ করে চলেছি এবং ঘরে বাইরে অন্যকেও ইঞ্জেক্ট ক'রে চলেছি।

আর, যারা আচার্য প্রথা ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে মানে না, প্রতিদিন বিরুদ্ধতার রোলার চালিয়ে পোঙ্গাপন্ডিত সেজে বালখিল্য বস্তাপচা দুর্গন্ধযুক্ত ইষ্টপ্রাণতা, ইষ্টস্বার্থ, ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার কথা ব'লে বিভ্রান্তির কূট বিষ ছড়িয়ে চলেছে সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের কথা আর কি বলবো, সেটা সৎসঙ্গীদের সচেতনতার অভাব। সৎসঙ্গীদের নিজেদের চিনে নিতে প্রকৃত ইষ্টপ্রাণ ভক্তপ্রাণকে। পরম দয়ালের দরবারে বেকুবির কোনও জায়গা নেই। তা সে যতই সরলতা কপচাও।
আর যারা না জেনে, না বুঝে, না প'ড়ে, ঠাকুরের বিধি কিছু মাত্র পালন না ক'রে, নিজ চরিত্রে ফুটিয়ে না তুলে কেবলমাত্র মুখে মারিতং জগত ভন্ডামির ওপর দাঁড়িয়ে কথার স্রোতে ভেসে হাতে কলমে বিন্দুমাত্র কিছু না ক'রে শুধুমাত্র প্রশ্ন করার সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হ'য়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রশ্ন থেকে প্রশ্নে দৌড়ে দৌড়ে বেড়ায় বকনা বাছুরের মত, কান নিয়ে গেছে শুনে কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে ছুটে যাওয়ার মত শুধু আচার্যপ্রথা ও আচার্যদেবের বিরুদ্ধে ব'লে চলেছেন তাদের শুধু বলবো যদি সত্যি সত্যিই আপনারা ঠাকুরকে ভালোবাসেন তাহ'লে আগে ঠাকুরের বলা মতো নিখুঁত চলায় চলার চেষ্টা করুন, তারপর শ্রদ্ধাকে জীবনের মূল কেন্দ্রে বসিয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে আসুন, তাঁর সঙ্গে খোলামেলা প্রেম-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান পূর্ণ অন্তরে কথা বলুন, আলোচনা করুন। তারপর আপনাদের যার যেটা ভালো লাগে করুন যে যেমন বুঝেছেন ঠাকুরকে সেই বোধ নিয়ে। কারণ কথায় আছে, শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্।
আর আমরা? আমরা নিজেরাই ঠিক না। আমরা নিজেরাই এক একজন পোঙ্গাপন্ডিত।

No comments:

Post a Comment