দেশকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করতে স্বাধীনতা আন্দোলনে যােগ দিয়েছিলেন নেতাজী। অল্পদিনের মধ্যেই সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি দুবার কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হন। এরপর একবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখার সময় ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে যান তিনি। তখন ১৯৪১ সাল। প্রথমে জার্মানিতে সেখান থেকে পরে জাপান চলে যান। জাপানে রাসবিহারী বসুর সঙ্গে যােগ দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। সেই প্রথম সকলের কাছে নেতাজি হয়ে উঠলেন সুভাষ। এরপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বাহিনী নিয়ে উত্তর -পূর্বের মণিপুর দখল করে সেখানে ভারতের পতাকা উড়িয়ে দেন। নেতাজি গঠিত আজাদ হিন্দ সরকারের পতনের পর থেকে তাঁর আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আজও প্রমাণ হয়নি। তাঁর মৃত্যু নিয়ে আজও বিতর্ক হ'য়ে চলেছে। এক রহস্যের ঘোর আঁধার ঘিরে রেখেছে নেতাজির মৃত্যু কাহিনীকে।
আজকের ২৩জানুয়ারী ১২৮তম জন্দিনটিকে 'দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবেই পালন করেছে অনেকে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সুভাষ চন্দ্র বোসের সংগ্রামী, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে আরও বেশি করে স্মরণ করছে বাংলা তথা দেশের মানুষ। কিন্তু দুঃখের বিষয় সুভাষ চন্দ্র বোসের এই "ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' একটা ভুল ধারণাকে মাথায় নিয়ে আজ স্বাধীনতার পর ৭৮বছর ধ'রে দেশের সমস্ত সরকার ও রাজনৈতিক দল দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি ছিলেন অবিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। যদি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশে থাকতেন এবং দেশ পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকতেন তাহ'লে হয়তো বা আজ ৭৮ বছর ধ'রে এই ধর্ম নিরপেক্ষ ভুল শব্দ দেশের মাথার ওপর মুকুট হ'য়ে চেপে বসে অসহ্য এক দমবন্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করতো না। হয়তো তিনি এই ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদের অসারতা বুঝতে পারতেন। বুঝতে পারতেন যদি তিনি সেই সময় দেশবন্ধুর মত সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শ সত্যদ্রষ্টা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সংস্পর্শে থেকে রাজনীতির ময়দানে বিরাজ করতেন। বুঝতে পারতেন ধর্ম্ম নিরপেক্ষ শব্দটা কেন ভুল, মারাত্মক ভুল। বুঝতে পারতেন, ধর্ম্ম নিরপেক্ষ কথাটার মধ্যে যতটা অস্বচ্ছতা ও ভুলের বীজ লুকিয়ে আছে ততটাই শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা 'সম্প্রদায় নিরপেক্ষতা' কথার মধ্যে আছে স্বচ্ছতা ও নিখুঁতের উপস্থিতি। বলা হ'য়ে থাকে রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি থেকে ধর্ম বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখার কথা বলেছেন নেতাজি। আরও বলা হ'য়ে থাকে, ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসকে নেতাজি কোনও দিন ধর্মনিরপেক্ষ নীতির উপরে স্থান দেননি। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্কের মধ্যে কোনও ভুল দেখতে পাননি। বরং ধর্ম ও রাজনীতি একে অপরের পরিপূরক। শ্রীশ্রীঠাকুর ধর্ম ও পলিটিক্সের সম্পর্ক সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমি ধৰ্ম্ম ছাড়া politics (পূৰ্ত্তনীতি) বুঝি না। ধৰ্ম্ম মানে ধৃতি, বাঁচাবাড়ায় চলা। আর, পলিটিক্স মানে পূর্ত্তনীতি বা পূরণনীতি। ধর্ম্মকে অর্থাৎ বাঁচা-বাড়াকে পরিপূর্ণ করে যা তাই পলিটিক্স, রাজনীতি। ধর্মের মধ্যে পলিটিক্স থাকবে না কেন? বাঁচতে গেলে পরিবেশের দরকার। পরিবেশ বাঁচবে না, আমি বাঁচব, তা' হয় না। তথাকথিত রাজনীতিতে হবে না। প্রকৃত রাজনীতি চাই। প্রকৃত রাজনীতি বা পূর্ত্তনীতি সে-ই করতে পারে, যে খোদাকে ভালোবাসে, prophet (প্রেরিত)-কে ভালোবাসে, প্রেরিতদের মধ্যে ভেদ করে না।
আজও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল ও দেশের সব দলের নেতৃবৃন্দের মুখে শুনতে হচ্ছে ধর্ম্ম নিরপেক্ষ শব্দটা। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়েই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধরিয়ে দিয়েছিলেন দেশের সমস্ত বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের সামনে ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা যে ভুল কথা, ভুল ধারণা সে সম্পর্কে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, ধর্ম্মনিরপেক্ষা কথাটাই ভুল। ধর্ম্ম কখনও নিরপেক্ষ হ'তে পারে না, বরং কথাটা সম্প্রদায় নিরপেক্ষ হ'তে পারে। ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা পরিবর্তে সম্প্রদায় নিরপেক্ষ কথাটা সঠিক ও উপযুক্ত। কিন্তু কেউই শ্রীশ্রীঠাকুরের কথাকে সেদিন আমল দেননি। যদিও ঠাকুরের সঙ্গে দেশের প্রায় সমস্ত শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দেখা করেছিলেন, আলাপ করেছিলেন, শুনেছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত কিন্তু সবই ঐ শোনা পর্যন্ত কিন্তু কেউই আমল দেননি, প্রয়োজন মনে করেননি। শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা বাস্তবায়িত করার মত কারোরই ইচ্ছা, আগ্রহ বা যোগ্যতা ছিল না। একটা সূক্ষ্ম ব্যক্তিত্বের ইগো দেওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের সামনে। শুধু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন শ্রীশ্রীঠাকুরকে গুরুপদে বরণ করেছিলেন এবং তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হ'য়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছিলেন, কিন্তু শারীরিক ভাবে অক্ষম হ'য়ে পড়া ও মৃত্যুর কারণে মানুষের অভাবে শ্রীশীঠাকুরের দেশগঠনের সমস্ত পরিকল্পনা বাঞ্চাল হ'য়ে যায়।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তিনবার ঠাকুর দর্শনে আসেন। প্রথমবার আসেন I.C.Sপাশ করার পর। ঠাকুর তখন কলকাতাতেই, দ্বিতীয় ও তৃতীযবার আসেন পাবনা সংসঙ্গ আশ্রমে। সুভাষ বসু ঠাকুর দর্শনে পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে এলে ঠাকুরের অন্যতম ভক্তপার্ষদ পূজনীয় শ্রী সুশীল বসু তাঁকে আশ্রমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান। ঠাকুরের মতাদর্শ ও তাঁর পরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয় নেতাজীর কাছে তুলে ধরেন সুশীলদা। শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে কথা বলার সময় কোথা থেকে দেশের প্রকৃত সেবা করা শুরু করা যায় সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীশ্রীঠাকুর বিবাহ সংস্কার ও সুসন্তান লাভের জন্ম বিজ্ঞানের কথা তুলে ধরেন। তখন সুভাষ চন্দ্র বোস শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় সম্মত হ'লেও দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এ যে দীর্ঘসময় সাপেক্ষ ব্যাপার তা তুলে ধরেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর দৃপ্তকন্ঠে বলেছিলেন, - দীর্ঘ সময় তো নেবেই - আমরা তো এতদিন পর্যন্ত জাতির বা সমাজের জন্য কিছুই করিনি। বহু গলদ জমে গেছে। সাফ করতে সময় নেবে বৈকি ? কোন Shortcut Programme (সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী) এ জাতির সত্যিকার কল্যান হবে বলে আমার মনে হয় না।
শেষবার যখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস দেখা করতে এসেছিলেন তখন শ্রীশ্রীঠাকুর দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আর্ত, অর্থাথী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী ভক্ত মন্ডলী ও দর্শকবৃন্দ দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন ফলে শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে কোনও কথা হয়নি। নেতাজীকে সেদিন আশ্রমে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতার কারণে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ভয়ঙ্করভাবে জড়িয়ে যাওয়ায় ব্যস্ততার কারণে সেদিন তিনি থাকতে পারেননি। তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল। আর তারপর আর কোনোদিনই শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে নেতাজীর দেখা হওয়ার সুযোগ হয়নি। ১৯৪১ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে কলকাতায় তার এলগিন রোডের বাড়ি থেকে ব্রিটিশদের নজরদারি এড়িয়ে, তার ভাগ্নে শিশির কুমার বসুকে সঙ্গে নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু পালাতে সক্ষম হন। তারা পালিয়ে তৎকালীন বিহার রাজ্যের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) গোমোহ্ রেলওয়ে স্টেশনে (বর্তমানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গোমোহ্ স্টেশন) পৌছান। তারপরে সব ইতিহাস। ভারত থেকে আফগানিস্তান হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেখান থেকে জার্মানি, তারপরে জাপান সেখানে পুনরায় আজাদ হিন্দ ফৈজের পুনর্গঠন করেন। তারপর বহু জল গড়িয়ে যায়। জাপান আত্মসমর্পণ করে। এরপরের ইতিহাস জানা অজানা নানা ঘটনায় জড়িত ইতিহাস। মোট কথা এর পরে নেতাজীর আর ঘরে ফিরে আসা হয়নি।
যাই হ'ক, আজ নেতাজীর জন্মদিন স্মরণে মনে পড়ে নেতাজী ও শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। মনে পড়ে, দেশের প্রকৃত সেবা কোথা থেকে শুরু করা যায় এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীশ্রীঠাকুর দেশের ও দশের প্রকৃত মঙ্গল কোথায় আছে তার মোদ্দাকথা মানুষের মত মানুষের অভাবের কথা মনে করিয়ে 'বিবাহ সংস্কার ও সুসন্তান লাভের জন্ম বিজ্ঞানের কথা তুলে ধরেন। তখন সুভাষ চন্দ্র বোস শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় সম্মত হ'লেও দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এ যে দীর্ঘসময় সাপেক্ষ ব্যাপার তা তুলে ধরেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর দৃপ্তকন্ঠে বলেছিলেন, - দীর্ঘ সময় তো নেবেই - আমরা তো এতদিন পর্যন্ত জাতির বা সমাজের জন্য কিছুই করিনি। বহু গলদ জমে গেছে। সাফ করতে সময় নেবে বৈকি? কোন Shortcut Programme (সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী) এ জাতির সত্যিকার কল্যান হবে বলে আমার মনে হয় না।
আজকের ২৩জানুয়ারী ১২৮তম জন্দিনটিকে 'দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবেই পালন করেছে অনেকে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সুভাষ চন্দ্র বোসের সংগ্রামী, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে আরও বেশি করে স্মরণ করছে বাংলা তথা দেশের মানুষ। কিন্তু দুঃখের বিষয় সুভাষ চন্দ্র বোসের এই "ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' একটা ভুল ধারণাকে মাথায় নিয়ে আজ স্বাধীনতার পর ৭৮বছর ধ'রে দেশের সমস্ত সরকার ও রাজনৈতিক দল দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি ছিলেন অবিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। যদি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশে থাকতেন এবং দেশ পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকতেন তাহ'লে হয়তো বা আজ ৭৮ বছর ধ'রে এই ধর্ম নিরপেক্ষ ভুল শব্দ দেশের মাথার ওপর মুকুট হ'য়ে চেপে বসে অসহ্য এক দমবন্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করতো না। হয়তো তিনি এই ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদের অসারতা বুঝতে পারতেন। বুঝতে পারতেন যদি তিনি সেই সময় দেশবন্ধুর মত সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শ সত্যদ্রষ্টা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সংস্পর্শে থেকে রাজনীতির ময়দানে বিরাজ করতেন। বুঝতে পারতেন ধর্ম্ম নিরপেক্ষ শব্দটা কেন ভুল, মারাত্মক ভুল। বুঝতে পারতেন, ধর্ম্ম নিরপেক্ষ কথাটার মধ্যে যতটা অস্বচ্ছতা ও ভুলের বীজ লুকিয়ে আছে ততটাই শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা 'সম্প্রদায় নিরপেক্ষতা' কথার মধ্যে আছে স্বচ্ছতা ও নিখুঁতের উপস্থিতি। বলা হ'য়ে থাকে রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি থেকে ধর্ম বিশ্বাসকে সম্পূর্ণ পৃথক রাখার কথা বলেছেন নেতাজি। আরও বলা হ'য়ে থাকে, ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাসকে নেতাজি কোনও দিন ধর্মনিরপেক্ষ নীতির উপরে স্থান দেননি। কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্কের মধ্যে কোনও ভুল দেখতে পাননি। বরং ধর্ম ও রাজনীতি একে অপরের পরিপূরক। শ্রীশ্রীঠাকুর ধর্ম ও পলিটিক্সের সম্পর্ক সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমি ধৰ্ম্ম ছাড়া politics (পূৰ্ত্তনীতি) বুঝি না। ধৰ্ম্ম মানে ধৃতি, বাঁচাবাড়ায় চলা। আর, পলিটিক্স মানে পূর্ত্তনীতি বা পূরণনীতি। ধর্ম্মকে অর্থাৎ বাঁচা-বাড়াকে পরিপূর্ণ করে যা তাই পলিটিক্স, রাজনীতি। ধর্মের মধ্যে পলিটিক্স থাকবে না কেন? বাঁচতে গেলে পরিবেশের দরকার। পরিবেশ বাঁচবে না, আমি বাঁচব, তা' হয় না। তথাকথিত রাজনীতিতে হবে না। প্রকৃত রাজনীতি চাই। প্রকৃত রাজনীতি বা পূর্ত্তনীতি সে-ই করতে পারে, যে খোদাকে ভালোবাসে, prophet (প্রেরিত)-কে ভালোবাসে, প্রেরিতদের মধ্যে ভেদ করে না।
আজও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল ও দেশের সব দলের নেতৃবৃন্দের মুখে শুনতে হচ্ছে ধর্ম্ম নিরপেক্ষ শব্দটা। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়েই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ধরিয়ে দিয়েছিলেন দেশের সমস্ত বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের সামনে ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা যে ভুল কথা, ভুল ধারণা সে সম্পর্কে। শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন, ধর্ম্মনিরপেক্ষা কথাটাই ভুল। ধর্ম্ম কখনও নিরপেক্ষ হ'তে পারে না, বরং কথাটা সম্প্রদায় নিরপেক্ষ হ'তে পারে। ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা পরিবর্তে সম্প্রদায় নিরপেক্ষ কথাটা সঠিক ও উপযুক্ত। কিন্তু কেউই শ্রীশ্রীঠাকুরের কথাকে সেদিন আমল দেননি। যদিও ঠাকুরের সঙ্গে দেশের প্রায় সমস্ত শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দেখা করেছিলেন, আলাপ করেছিলেন, শুনেছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত কিন্তু সবই ঐ শোনা পর্যন্ত কিন্তু কেউই আমল দেননি, প্রয়োজন মনে করেননি। শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা বাস্তবায়িত করার মত কারোরই ইচ্ছা, আগ্রহ বা যোগ্যতা ছিল না। একটা সূক্ষ্ম ব্যক্তিত্বের ইগো দেওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁদের সামনে। শুধু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন শ্রীশ্রীঠাকুরকে গুরুপদে বরণ করেছিলেন এবং তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হ'য়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছিলেন, কিন্তু শারীরিক ভাবে অক্ষম হ'য়ে পড়া ও মৃত্যুর কারণে মানুষের অভাবে শ্রীশীঠাকুরের দেশগঠনের সমস্ত পরিকল্পনা বাঞ্চাল হ'য়ে যায়।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তিনবার ঠাকুর দর্শনে আসেন। প্রথমবার আসেন I.C.Sপাশ করার পর। ঠাকুর তখন কলকাতাতেই, দ্বিতীয় ও তৃতীযবার আসেন পাবনা সংসঙ্গ আশ্রমে। সুভাষ বসু ঠাকুর দর্শনে পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে এলে ঠাকুরের অন্যতম ভক্তপার্ষদ পূজনীয় শ্রী সুশীল বসু তাঁকে আশ্রমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান। ঠাকুরের মতাদর্শ ও তাঁর পরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয় নেতাজীর কাছে তুলে ধরেন সুশীলদা। শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে কথা বলার সময় কোথা থেকে দেশের প্রকৃত সেবা করা শুরু করা যায় সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীশ্রীঠাকুর বিবাহ সংস্কার ও সুসন্তান লাভের জন্ম বিজ্ঞানের কথা তুলে ধরেন। তখন সুভাষ চন্দ্র বোস শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় সম্মত হ'লেও দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এ যে দীর্ঘসময় সাপেক্ষ ব্যাপার তা তুলে ধরেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর দৃপ্তকন্ঠে বলেছিলেন, - দীর্ঘ সময় তো নেবেই - আমরা তো এতদিন পর্যন্ত জাতির বা সমাজের জন্য কিছুই করিনি। বহু গলদ জমে গেছে। সাফ করতে সময় নেবে বৈকি ? কোন Shortcut Programme (সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী) এ জাতির সত্যিকার কল্যান হবে বলে আমার মনে হয় না।
শেষবার যখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস দেখা করতে এসেছিলেন তখন শ্রীশ্রীঠাকুর দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আর্ত, অর্থাথী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী ভক্ত মন্ডলী ও দর্শকবৃন্দ দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন ফলে শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে কোনও কথা হয়নি। নেতাজীকে সেদিন আশ্রমে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতার কারণে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ভয়ঙ্করভাবে জড়িয়ে যাওয়ায় ব্যস্ততার কারণে সেদিন তিনি থাকতে পারেননি। তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল। আর তারপর আর কোনোদিনই শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে নেতাজীর দেখা হওয়ার সুযোগ হয়নি। ১৯৪১ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে কলকাতায় তার এলগিন রোডের বাড়ি থেকে ব্রিটিশদের নজরদারি এড়িয়ে, তার ভাগ্নে শিশির কুমার বসুকে সঙ্গে নিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু পালাতে সক্ষম হন। তারা পালিয়ে তৎকালীন বিহার রাজ্যের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) গোমোহ্ রেলওয়ে স্টেশনে (বর্তমানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গোমোহ্ স্টেশন) পৌছান। তারপরে সব ইতিহাস। ভারত থেকে আফগানিস্তান হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, সেখান থেকে জার্মানি, তারপরে জাপান সেখানে পুনরায় আজাদ হিন্দ ফৈজের পুনর্গঠন করেন। তারপর বহু জল গড়িয়ে যায়। জাপান আত্মসমর্পণ করে। এরপরের ইতিহাস জানা অজানা নানা ঘটনায় জড়িত ইতিহাস। মোট কথা এর পরে নেতাজীর আর ঘরে ফিরে আসা হয়নি।
যাই হ'ক, আজ নেতাজীর জন্মদিন স্মরণে মনে পড়ে নেতাজী ও শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। মনে পড়ে, দেশের প্রকৃত সেবা কোথা থেকে শুরু করা যায় এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীশ্রীঠাকুর দেশের ও দশের প্রকৃত মঙ্গল কোথায় আছে তার মোদ্দাকথা মানুষের মত মানুষের অভাবের কথা মনে করিয়ে 'বিবাহ সংস্কার ও সুসন্তান লাভের জন্ম বিজ্ঞানের কথা তুলে ধরেন। তখন সুভাষ চন্দ্র বোস শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় সম্মত হ'লেও দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে এ যে দীর্ঘসময় সাপেক্ষ ব্যাপার তা তুলে ধরেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর দৃপ্তকন্ঠে বলেছিলেন, - দীর্ঘ সময় তো নেবেই - আমরা তো এতদিন পর্যন্ত জাতির বা সমাজের জন্য কিছুই করিনি। বহু গলদ জমে গেছে। সাফ করতে সময় নেবে বৈকি? কোন Shortcut Programme (সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী) এ জাতির সত্যিকার কল্যান হবে বলে আমার মনে হয় না।
আজ স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া Shortcut Programme (সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী)-তে অভ্যস্ত ভারত ও ভারতের নেতৃবৃন্দ, জনগণ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এইসব কথা শুনতে, বুঝতে ও মানতে চায় না। কেউ চাইলেও বা কোনও রাজ্য চাইলেও বাংলা ও বাঙালী দেশভাগের আগে ও দেশভাগের পরে কোনোদিনই চায়নি। শুনতে, বুঝতে, মানতে চাওয়া তো দূর থাক্তেই দেয়নি কোনও বাংলায়। দুই বাংলার বাঙালী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সম্মান, মর্যাদা, গুরুত্ব কোনওদিনও দেয়নি, আজও দেয় না। তাঁর নিজের হাতে তিল তিল ক'রে গড়ে তোলা বাংলাদেশের পাবনা হিমায়েতপুরের বিশাল আশ্রম আজও ফিরিয়ে দেয়নি বাংলাদেশের সরকার তাঁর সৃষ্ট সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে। আর, এ বাংলায় বর্দ্ধমান জেলার পানাগড়েও থাকতে দেওয়া দেয়নি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে।
তাই বোধহয় শ্রীশ্রীঠাকুর চটজলদি Shortcut Programme (সংক্ষিপ্ত কর্মসূচী)-তে অভ্যস্ত বাংলা ও বাঙালী সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার বুক থেকে উঠবে না, বাংলার বাইরে থেকে উঠবে।" আমাদের মাথায় রাখতে হবে বাংলা বলতে তিনি বাংলার আগে কোনও পূর্ব-পশ্চিম শব্দ ব্যবহার করেননি। বলেছিলেন বাংলার বুক থেকে উঠবে না। আজ ভারতের চারপাশে চোখ মেলে চাইলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
নমস্কার, জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment