'জুতো মেরে গরু দান' এ প্রাচীন প্রচলিত প্রবাদ এখন সংস্কারে পরিণত হয়েছে। যদি শিক্ষক অপরাধীই হ;য়ে থাকে তাকে পুনর্বহালই বা কেন আর কেনই বা তাকে অপমান লাঞ্ছনা ক'রে অপসারণ করা হয়েছিল? ছাত্রছাত্রীদের ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? জুতোর মালা পড়িয়ে যে শিক্ষককে অপসারণ করা হয়েছিল, ফুল দিয়ে তাকেই আবার গ্রহণ করা হ'লো? কেন? তাহ'লে ছাত্ররা কিছু ভুল করেছিল? তাহ'লে ছাত্ররা ভুল করে? এটা তাহ'লে সচেতন মানুষ মেনে নিয়েছেন? এটা কি ধরণের ভুল? এটা কি ধরণের ফুল দিয়ে ভুল ঢাকা? এই ফুল দিয়ে ক্ষমা চেয়ে বরণ ক'রে নেবার সময় ছাত্রছাত্রীদের কারও কারও চোখেমুখে অপরাধের চিহ্ন দেখা যায়নি, উল্টে মুখে হাসি দেখা গেছে। একটা মনে হ'লো যেন সাজানো নাটক। সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে পিতার সমান শিক্ষকদের জুতোও মারা হ'লো আবার নাম কা ওয়াস্তে ভুল স্বীকার ক'রে নিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ ফুল তুলে দেওয়ার নাটক রচনাও হ'লো অপমানিত অসম্মানিত শিক্ষকদের। দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক দেখালো বাংলাদেশ ও দেখলো গোটা বিশ্ব। এই জঘন্য ভুলের বীজ কে পুঁতে দিয়েছিল বাংলাদেশের সুকুমারমতি ছাত্রছাত্রীদের মাথায়? কাদের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিল অল্পবয়সী ছাত্রসমাজ। আজকের এই ছাত্রছাত্রীরা একদিন অভিভাবক হবে, হবে স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকা। তখন তারা কি স্মৃতি রোমন্থন ক'রে আজকের দিনের এই অপরাধকে আন্তরিকভাবে মেনে নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজেদের অপরাধী ব'লে কুশিক্ষার জনক ব'লে চিহ্নিত করবে নাকি আজকের এই অন্তসারহীন উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলনের মহিমা কীর্তন ক'রে নিজেদের কুকীর্তির বীর গাঁথা গাইবে? কথাটা বললাম কেন? খারাপ জিনিস ছোঁয়াচে রোগের মত। সংক্রামক ব্যাধি দ্রুত ছড়ায়। সংক্রামিত ব্যাধি যদি সংক্রামক রোগ মুক্ত না হয় তাহ'লে এর সংক্রামক জীবাণু ব'য়ে চলে বংশ পরম্পরায় জন্ম জন্মান্তর প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শরীরে-মনে ঘায়েল করতে করতে। আর, এ হ'লো বিষাক্ত সংক্রামক ব্যাধির মত বিষাক্ত সংক্রামক কৃষ্টি-সংস্কৃতি। যা কিনা বায়োলজিক্যালি এফেক্টেড হ'য়ে পড়ে।
অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে যে ধরণের উত্তেজনা, যে ধরণের শ্লোগান, যে ধরণের শরীরী ভাষা আমরা দেখেছি তা কি সচেতন শিক্ষিত সমাজ অনুমোদন করেন? বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত প্রাজ্ঞ পন্ডিত বিদগ্ধ প্রথিতযশা সভ্য শিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত সম্মানীয় ব্যক্তিদের শিক্ষার আলোর কোনও প্রভাব নেই? ছাত্রছাত্রী তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয় না? কেন? কেন হয় না? কেন তাঁদের কি সে চরিত্র নেই? নাকি তাঁদের হাতে সমাজের রাশ নেই? আগামী ভয়ংকর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে কি একবার পিছন ফিরে ক্ষতবিক্ষত পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে ভাবার সময় আসেনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য? কি পৃথিবী রেখে যাচ্ছি আমরা? এর জন্যে কে দায়ী? সব কিছুর শেষ কথা কি রাজনীতি? Pseudo politics, pseudo education, pseudo civilization, pseudo religion অর্থাৎ আপাত সত্য মনে হলেও মিথ্যা, ছদ্ম রাজনীতি, ছদ্ম শিক্ষা, ছদ্ম সভ্যতা, ছদ্ম ধর্মের শিকার ছাত্রছাত্রী সমাজ? বহুদিন বহুবছর ধ'রে চলে আসছে এই pseudo Cultivation of culture অর্থাৎ ছদ্ম কৃষ্টি সংস্কৃতির চাষ। এর পৃষ্টপোষক কারা? So called elite society তথাকথিত এলিট সমাজ? ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা? শিক্ষকেরা? এলিট সমাজ, শিক্ষক সমাজ জেনেশুনে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে জেনেশুনে 'মরো, মারো ও ধ্বংস করো'র বিষ পান করিয়েছে? নাকি নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছে? যা ইচ্ছা হ'ক। "আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।" এ মানসিকতা শিক্ষিতের মানসিকতা নয়, এ নিম্ন মানসিকতা লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষের।
এলিট সমাজ তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে শুধু কবিতায়, গানে, গল্পে, সাহিত্যে, চলচিত্রে, চিত্রশিল্পে ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে শুধু জীবনের জয়গানের নামে মরণের গান গেয়ে গেছে। তাঁরা কখনোই "ম'রো না, মেরো না, পারো তো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো" এই জীবনবাদের ওপরে কবিতা, গান, প্রবন্ধ, সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেনি, শিল্প সৃষ্টি করেনি। তথাকথিত রাজনীতি ও ধর্মজগতের লোকেরাও একই পথ অবলম্বন করেছে। সমস্ত রচানাতেই এক গভীর হতাশা অবসাদ থেকে উঠে আসা একটা জমাট রাগ, ক্রোধ, ঘৃণা, হিংসার বহির্প্রকাশ হয়েছে। আর, তা সঞ্চারিত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের প্রতিটি জীবনের মধ্যে শৈশব থেকেই এবং তা' ধীরে ধীরে জৈবী সংস্থিতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর, তার প্রকাশ আমরা দেখতে পায় সব দেশের সব আন্দোলনে, ছাত্র আন্দোলনে। প্রায় প্রতিটি আন্দোলনের পিছনে আছে অসফল হতাশাগ্রসস্ত, অবসাদগ্রস্ত অনিয়ন্ত্রিত জীবনের নিঃশ্বাস। ফলে প্রতিটি আন্দোলনই মাতালের টালমাটাল পায়ের মত ভারসাম্যহীন আন্দোলন। আর, তা একসময় ডিরেইল্ড হ'য়ে যায় এবং নিজে মরে ও অন্যকেও মারে।
এই যে বাংলাদেশের হঠাৎ দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলনের নামে যে Pseudo student movement অর্থাৎ ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন দেখলাম এবং তার জেরে পট পরিবর্তন পরবর্তী দেশজুড়ে যে উচ্ছৃঙ্খলতা ও বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখলাম এবং তারপর স্বাধীন দেশের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা শিক্ষকদের ওপর চরম অপমান, লাঞ্ছনা ও জোর ক'রে পদত্যাগ করাবার যে দৃশ্য দেখা গেল এবং পুনরায় সসম্মানে শিক্ষকদের বহাল করাবার যে খবর ও দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম এটাকে কি ছাত্রছাত্রীদের ভুল ব'লে অপরাধকে, অন্যায়কে হালকা ক'রে দেওয়ার সুচতুর শিক্ষা নয়? শিক্ষকদের ওপর যে অশোভন আচরণ করা হ'লো সংগঠিতভাবে তার জন্য ছাত্রছাত্রী সমাজ কি অনুতপ্ত? আর, যদি স্বৈরাচারী সরকার হ'য়ে থাকে সরাসরি সেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন চেয়ে ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্তে সরকারী চাকরীতে কোটা আন্দোলনের নামে দেশের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে যে Pseudo student movement অর্থাৎ ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন দেখা গেল এবং মিথ্যে কপট পথ অবলম্বনের জন্য আপাত দোষী তামাম ছাত্রসমাজ কি লজ্জিত, অনুতপ্ত হ'লো বা কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করলো? কিছু উপলব্ধি হ'লো? বর্তমান ও পরবর্তী ছাত্র প্রজন্ম কি শিখলো? তাহ'লে শিক্ষক যদি ভুল ক'রে থাকে তাকে কেন উত্তম মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হ'লো না? কে শেখাবে? দেশ কি অভিভাবকহীন?
ভুল করেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে একটাও দেখাতে পারবেন কেউ একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া? আর, কতটা ভুলের জন্য কতটা শাস্তি? আর, সেই শাস্তি নিজের সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের হাতে? শিক্ষক ভুল করেছে তার শাস্তি স্কুল কমিটি দেবে। দেশে সরকার আছে, শাসন ব্যবস্থা আছে, আইন আদালত, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে তারা শাস্তি দেবে। শিক্ষক যদি কোনও ঘৃণ্য অপরাধ ক'রে থাকে শিক্ষক সমাজ তাঁর অপরাধ অনুযায়ী কঠোর বিচার করবে। শিক্ষক নিজ কৃতকর্মে অনুতপ্ত হবে। নিজেকে নিজে শাস্তি দেবে। ছাত্র সমাজের কাছে নিজের ভয়ংকর ভুলের জন্য লজ্জিত হবে, ক্ষমাপ্রার্থী হবে। শিক্ষককে বুঝতে হবে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের প্রতি নিজের নৈতিক দায়িত্ব কি ছিল। ব্যবহারের কোন ভুলে, চরিত্রের কোন দোষে তাঁকে আজ ছাত্রছাত্রীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। শিক্ষক শিক্ষিকার অন্যায় ও নোংরা কাজে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ আইনত সিদ্ধ।
কিন্তু তাই ব'লে কোনও সভ্য দেশে সভ্য ছাত্রছাত্রী বিচারের ভার হাতে তুলে নেবে? প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় বিচার হাতে তুলে নেবে? বিচার করার অধিকার ছাত্রছাত্রীদের আছে? সেই অধিকার কোনও সভ্য দেশের সংবিধান, সভ্য দেশের মানবিক সরকার দেয়? যদি সরকার উদাসীন থাকে, প্রশ্রয় দেয় তার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ আন্দোলন হবে। সরকার পরিবর্তন হ'তে পারে। বিচার করার বোধশক্তি ছাত্রছাত্রীদের এই বয়সে আছে না হয়েছে? এক বিঘৎ দূরের জিনিস দেখবার ক্ষমতা যাদের নেই, যাদের নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই, যারা নিজেরাই নিজেদের উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপু দ্বারা পরিচালিত তারা করবে বিচার? শিক্ষকদের শাসন করবে ছাত্রছাত্রী? তারা কি নিজের নিজের ঘরের পিতামাতা, অভিভাবক, গুরুজনদের শাসন করে, বিচার করে?
পাহাড় প্রমাণ ভুলের উদাহরণ ছাত্র সমাজের সাম্প্রতিক আন্দোলন। উচ্ছৃঙ্খল জনতা আর ছাত্রছাত্রীদের আচরণে যে কোনও তফাৎ ছিল না তা' সমগ্র বিশ্ব দেখেছে। ভুলের সাজা হ'ক, নিশ্চয়ই হ'ক। অপরাধ অনুযায়ী কঠোর সাজা হ'ক। তা' শিক্ষক বা রাজনীতিকের ক্ষেত্রে শুধু নয় অপরাধী মাত্রেই সাজা হ'ক। কিন্তু তাই ব'লে কোনও সভ্য আধুনিক দেশে বিচারের ভার মবের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না, মব তুলে নিতে পারে না। এটা মধ্যযুগীয় সময়কাল বা অন্ধকারের যুগ নয়। তাই অপমানিত লাঞ্ছিত শিক্ষকদের যখন ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ফুলের মালা গলায় চড়িয়ে তখন এটা প্রমাণ ইনারা সম্মানীয়, সম্মানের যোগ্য ছিলেন ও আছেন। ইনারা বিশেষ ব্যক্তি আক্রোশের শিকার যা সমষ্টিতে চাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ভুল বুঝিয়ে। এর পিছনে কারা আছে তাঁদের খুঁজে বের করা হ'ক। ছাত্রছাত্রীরা চিনুক ও দেখুক তাদের আর জানুক, শিখুক, বুঝুক সত্যকে। আগামী ছাত্র সমাজের কাছে উদাহরণ হ'য়ে থাকুক এরা ও এই ঘটনা।
উত্তেজিত মস্তিষ্ক বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তা দিয়ে আর যা কিছুই হ'ক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির চাষ হয় না। ধ্বংসের চাষ হয়, সৃষ্টিমূলক কিছু চাষ হয় না, গড়া যায় না। The greatest phenomenon of the world, greatest wonder of the world, world teacher SriSriThakur AnukulChandra বললেন, "উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বরযুক্ত চিন্তা-----দুইটিই অসিদ্ধির লক্ষ্মণ।"
এই যে অসিদ্ধি বা অসফলতার কথা বলা হ'লো তার উৎস হচ্ছে উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তা। এই উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তার অধিকারী কখন মানুষ হয়? যখন মানুষের জীবনে কোনও জীবন্ত আদর্শ থাকে না। এ খানে শিক্ষক ও ছাত্র উ ভয়ের ক্ষেত্রেই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,
"শিক্ষকের নাই ইষ্টে টান
কে জাগাবে ছাত্র প্রাণ।"
"থাকলে ছাত্রের ইষ্টে টান
তবেই জাগে করার প্রাণ।"
তাই, শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রী উভয়ের জীবনে জীবন্ত ইষ্টের প্রয়োজন, প্রয়োজন তাঁর চলনপূজার।
যাই হ'ক, যেখানে সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের হাতে একবার সম্মান ভুলুন্ঠিত হয়েছে সেখানে আর এই পেশায় ফিরে না যাওয়ায় ভালো। ইনাদের জন্য সম্মানজনক আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হ'ক। বাকী জীবন দৃষ্টান্ত হ'য়ে থাকুক আগামীদিনের ছাত্রছাত্রী শিক্ষকশিক্ষিকাদের জন্য। ( লেখা ৬ই সেওপ্টেম্বর'২৪)
অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে যে ধরণের উত্তেজনা, যে ধরণের শ্লোগান, যে ধরণের শরীরী ভাষা আমরা দেখেছি তা কি সচেতন শিক্ষিত সমাজ অনুমোদন করেন? বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত প্রাজ্ঞ পন্ডিত বিদগ্ধ প্রথিতযশা সভ্য শিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত সম্মানীয় ব্যক্তিদের শিক্ষার আলোর কোনও প্রভাব নেই? ছাত্রছাত্রী তাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয় না? কেন? কেন হয় না? কেন তাঁদের কি সে চরিত্র নেই? নাকি তাঁদের হাতে সমাজের রাশ নেই? আগামী ভয়ংকর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে কি একবার পিছন ফিরে ক্ষতবিক্ষত পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে ভাবার সময় আসেনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য? কি পৃথিবী রেখে যাচ্ছি আমরা? এর জন্যে কে দায়ী? সব কিছুর শেষ কথা কি রাজনীতি? Pseudo politics, pseudo education, pseudo civilization, pseudo religion অর্থাৎ আপাত সত্য মনে হলেও মিথ্যা, ছদ্ম রাজনীতি, ছদ্ম শিক্ষা, ছদ্ম সভ্যতা, ছদ্ম ধর্মের শিকার ছাত্রছাত্রী সমাজ? বহুদিন বহুবছর ধ'রে চলে আসছে এই pseudo Cultivation of culture অর্থাৎ ছদ্ম কৃষ্টি সংস্কৃতির চাষ। এর পৃষ্টপোষক কারা? So called elite society তথাকথিত এলিট সমাজ? ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা? শিক্ষকেরা? এলিট সমাজ, শিক্ষক সমাজ জেনেশুনে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে জেনেশুনে 'মরো, মারো ও ধ্বংস করো'র বিষ পান করিয়েছে? নাকি নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছে? যা ইচ্ছা হ'ক। "আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।" এ মানসিকতা শিক্ষিতের মানসিকতা নয়, এ নিম্ন মানসিকতা লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষের।
এলিট সমাজ তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে শুধু কবিতায়, গানে, গল্পে, সাহিত্যে, চলচিত্রে, চিত্রশিল্পে ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে শুধু জীবনের জয়গানের নামে মরণের গান গেয়ে গেছে। তাঁরা কখনোই "ম'রো না, মেরো না, পারো তো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো" এই জীবনবাদের ওপরে কবিতা, গান, প্রবন্ধ, সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেনি, শিল্প সৃষ্টি করেনি। তথাকথিত রাজনীতি ও ধর্মজগতের লোকেরাও একই পথ অবলম্বন করেছে। সমস্ত রচানাতেই এক গভীর হতাশা অবসাদ থেকে উঠে আসা একটা জমাট রাগ, ক্রোধ, ঘৃণা, হিংসার বহির্প্রকাশ হয়েছে। আর, তা সঞ্চারিত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের প্রতিটি জীবনের মধ্যে শৈশব থেকেই এবং তা' ধীরে ধীরে জৈবী সংস্থিতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আর, তার প্রকাশ আমরা দেখতে পায় সব দেশের সব আন্দোলনে, ছাত্র আন্দোলনে। প্রায় প্রতিটি আন্দোলনের পিছনে আছে অসফল হতাশাগ্রসস্ত, অবসাদগ্রস্ত অনিয়ন্ত্রিত জীবনের নিঃশ্বাস। ফলে প্রতিটি আন্দোলনই মাতালের টালমাটাল পায়ের মত ভারসাম্যহীন আন্দোলন। আর, তা একসময় ডিরেইল্ড হ'য়ে যায় এবং নিজে মরে ও অন্যকেও মারে।
এই যে বাংলাদেশের হঠাৎ দেশজুড়ে ছাত্র আন্দোলনের নামে যে Pseudo student movement অর্থাৎ ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন দেখলাম এবং তার জেরে পট পরিবর্তন পরবর্তী দেশজুড়ে যে উচ্ছৃঙ্খলতা ও বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখলাম এবং তারপর স্বাধীন দেশের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা শিক্ষকদের ওপর চরম অপমান, লাঞ্ছনা ও জোর ক'রে পদত্যাগ করাবার যে দৃশ্য দেখা গেল এবং পুনরায় সসম্মানে শিক্ষকদের বহাল করাবার যে খবর ও দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম এটাকে কি ছাত্রছাত্রীদের ভুল ব'লে অপরাধকে, অন্যায়কে হালকা ক'রে দেওয়ার সুচতুর শিক্ষা নয়? শিক্ষকদের ওপর যে অশোভন আচরণ করা হ'লো সংগঠিতভাবে তার জন্য ছাত্রছাত্রী সমাজ কি অনুতপ্ত? আর, যদি স্বৈরাচারী সরকার হ'য়ে থাকে সরাসরি সেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন চেয়ে ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্তে সরকারী চাকরীতে কোটা আন্দোলনের নামে দেশের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে যে Pseudo student movement অর্থাৎ ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন দেখা গেল এবং মিথ্যে কপট পথ অবলম্বনের জন্য আপাত দোষী তামাম ছাত্রসমাজ কি লজ্জিত, অনুতপ্ত হ'লো বা কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করলো? কিছু উপলব্ধি হ'লো? বর্তমান ও পরবর্তী ছাত্র প্রজন্ম কি শিখলো? তাহ'লে শিক্ষক যদি ভুল ক'রে থাকে তাকে কেন উত্তম মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হ'লো না? কে শেখাবে? দেশ কি অভিভাবকহীন?
ভুল করেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে একটাও দেখাতে পারবেন কেউ একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া? আর, কতটা ভুলের জন্য কতটা শাস্তি? আর, সেই শাস্তি নিজের সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের হাতে? শিক্ষক ভুল করেছে তার শাস্তি স্কুল কমিটি দেবে। দেশে সরকার আছে, শাসন ব্যবস্থা আছে, আইন আদালত, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে তারা শাস্তি দেবে। শিক্ষক যদি কোনও ঘৃণ্য অপরাধ ক'রে থাকে শিক্ষক সমাজ তাঁর অপরাধ অনুযায়ী কঠোর বিচার করবে। শিক্ষক নিজ কৃতকর্মে অনুতপ্ত হবে। নিজেকে নিজে শাস্তি দেবে। ছাত্র সমাজের কাছে নিজের ভয়ংকর ভুলের জন্য লজ্জিত হবে, ক্ষমাপ্রার্থী হবে। শিক্ষককে বুঝতে হবে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের প্রতি নিজের নৈতিক দায়িত্ব কি ছিল। ব্যবহারের কোন ভুলে, চরিত্রের কোন দোষে তাঁকে আজ ছাত্রছাত্রীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। শিক্ষক শিক্ষিকার অন্যায় ও নোংরা কাজে ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ আইনত সিদ্ধ।
কিন্তু তাই ব'লে কোনও সভ্য দেশে সভ্য ছাত্রছাত্রী বিচারের ভার হাতে তুলে নেবে? প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় বিচার হাতে তুলে নেবে? বিচার করার অধিকার ছাত্রছাত্রীদের আছে? সেই অধিকার কোনও সভ্য দেশের সংবিধান, সভ্য দেশের মানবিক সরকার দেয়? যদি সরকার উদাসীন থাকে, প্রশ্রয় দেয় তার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ আন্দোলন হবে। সরকার পরিবর্তন হ'তে পারে। বিচার করার বোধশক্তি ছাত্রছাত্রীদের এই বয়সে আছে না হয়েছে? এক বিঘৎ দূরের জিনিস দেখবার ক্ষমতা যাদের নেই, যাদের নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই, যারা নিজেরাই নিজেদের উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল রিপু দ্বারা পরিচালিত তারা করবে বিচার? শিক্ষকদের শাসন করবে ছাত্রছাত্রী? তারা কি নিজের নিজের ঘরের পিতামাতা, অভিভাবক, গুরুজনদের শাসন করে, বিচার করে?
পাহাড় প্রমাণ ভুলের উদাহরণ ছাত্র সমাজের সাম্প্রতিক আন্দোলন। উচ্ছৃঙ্খল জনতা আর ছাত্রছাত্রীদের আচরণে যে কোনও তফাৎ ছিল না তা' সমগ্র বিশ্ব দেখেছে। ভুলের সাজা হ'ক, নিশ্চয়ই হ'ক। অপরাধ অনুযায়ী কঠোর সাজা হ'ক। তা' শিক্ষক বা রাজনীতিকের ক্ষেত্রে শুধু নয় অপরাধী মাত্রেই সাজা হ'ক। কিন্তু তাই ব'লে কোনও সভ্য আধুনিক দেশে বিচারের ভার মবের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না, মব তুলে নিতে পারে না। এটা মধ্যযুগীয় সময়কাল বা অন্ধকারের যুগ নয়। তাই অপমানিত লাঞ্ছিত শিক্ষকদের যখন ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ফুলের মালা গলায় চড়িয়ে তখন এটা প্রমাণ ইনারা সম্মানীয়, সম্মানের যোগ্য ছিলেন ও আছেন। ইনারা বিশেষ ব্যক্তি আক্রোশের শিকার যা সমষ্টিতে চাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ভুল বুঝিয়ে। এর পিছনে কারা আছে তাঁদের খুঁজে বের করা হ'ক। ছাত্রছাত্রীরা চিনুক ও দেখুক তাদের আর জানুক, শিখুক, বুঝুক সত্যকে। আগামী ছাত্র সমাজের কাছে উদাহরণ হ'য়ে থাকুক এরা ও এই ঘটনা।
উত্তেজিত মস্তিষ্ক বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তা দিয়ে আর যা কিছুই হ'ক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির চাষ হয় না। ধ্বংসের চাষ হয়, সৃষ্টিমূলক কিছু চাষ হয় না, গড়া যায় না। The greatest phenomenon of the world, greatest wonder of the world, world teacher SriSriThakur AnukulChandra বললেন, "উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বরযুক্ত চিন্তা-----দুইটিই অসিদ্ধির লক্ষ্মণ।"
এই যে অসিদ্ধি বা অসফলতার কথা বলা হ'লো তার উৎস হচ্ছে উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তা। এই উত্তেজিত মস্তিষ্ক ও বৃথা আড়ম্বর যুক্ত চিন্তার অধিকারী কখন মানুষ হয়? যখন মানুষের জীবনে কোনও জীবন্ত আদর্শ থাকে না। এ খানে শিক্ষক ও ছাত্র উ ভয়ের ক্ষেত্রেই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,
"শিক্ষকের নাই ইষ্টে টান
কে জাগাবে ছাত্র প্রাণ।"
"থাকলে ছাত্রের ইষ্টে টান
তবেই জাগে করার প্রাণ।"
তাই, শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রী উভয়ের জীবনে জীবন্ত ইষ্টের প্রয়োজন, প্রয়োজন তাঁর চলনপূজার।
যাই হ'ক, যেখানে সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের হাতে একবার সম্মান ভুলুন্ঠিত হয়েছে সেখানে আর এই পেশায় ফিরে না যাওয়ায় ভালো। ইনাদের জন্য সম্মানজনক আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হ'ক। বাকী জীবন দৃষ্টান্ত হ'য়ে থাকুক আগামীদিনের ছাত্রছাত্রী শিক্ষকশিক্ষিকাদের জন্য। ( লেখা ৬ই সেওপ্টেম্বর'২৪)
No comments:
Post a Comment