Powered By Blogger

Friday, January 17, 2025

চিঠিঃ শ্রীকান্ত মল্লিকদাকে খোলা চিঠি।

সৎসঙ্গী সাবধান।

" শরৎদা ছিলেন জ্যোতি ঋত্বিক।" জ্যোতি ঋত্বিক নয়, জ্যোতি ঋত্বিকের পরিবর্তে হবে যতি ঋত্বিক।

১৯৪৮ সালে ১২ই অক্টোবর, মঙ্গলবার, বিজয়া দশমীর দিন শ্রীশ্রীঠাকুর প্রণামের পর ৬ জন ভক্ত প্রাণ কর্মীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল যতি আশ্রম। ননী গোপাল চক্রবর্তী, শরৎ চন্দ্র হালদার, যতীন্দ্রনাথ দাস, কালিদাস মজুমদার, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সুরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এরা ছিলেন যতি ঋত্বিক অর্থাৎ সন্ন্যাসী ঋত্বিক। শ্রীশ্রীঠাকুর যতি ঋত্ত্বিকদের বলতেন সক্রিয় ভক্ত ও জ্ঞানী ঋত্বিক।

যাই হ'ক, আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। এরকম লেখা আরও লিখুন। মন আনন্দে ভরে থাকবে। পারস্পরিক আলোচনায় সৎসঙ্গীদের চোখ খুলবে। সৎসঙ্গীরা সত্য জানতে পারবে। পাঠক সৎসঙ্গী যদি অবশ্য পড়ে। আপনাকে অনেক ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই এইরকম লেখা লেখার জন্য।

আপনার মনের বেদনা বুঝতে পারছি। আর, পারছি বলেই আপনার ভালো সুন্দর লেখাটা শেয়ার করলাম দু'টো অপ্রিয় সত্য কথা সৎসঙ্গীদের কাছে তুলে ধরবো ব'লে।

আপনি অনেক মহান ভক্তদের নাম তুলে ধরেছেন। সত্যি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি তাঁদের নিবেদিত প্রাণ, তাঁদের নিঃস্বার্থ অবদানের ফল আজকের এই সৎসঙ্গ। তাঁদের শ্রীচরণে ভক্তিপূর্ণ প্রণাম জানাই। এঁদের ছাড়াও আরও অনেক ভক্তপ্রাণ আছেন যাদের নাম আপনি উল্লেখ করেননি, তাঁদেরও শ্রীচরণে জানাই ভক্তিপূর্ণ প্রণাম। এঁদের অনেকের সঙ্গেই অল্পবিস্তর মেলামেশা করেছি ছোটোবেলায় স্কুল জীবনে, সঙ্গসুখ হয়েছে পরবর্তী সময়েও। যতি ঋত্বিক শ্রদ্ধেয় পূজ্যপাদ শ্রীনরেন্দ্রনাথ মিত্রদা ছিলেন আমার পিতামাতা ও পরিবারের গুরুজনদের ঋত্বিক। বহুবার তিনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনিও পরবর্তী সময়ে মূল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হ'য়ে যান শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পরে। তাই স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো এঁদের ছবি আপনার লেখা পড়ে। মনটা আনন্দে ও বেদনায় ভরে গেল।

এবার আসি অপ্রিয় সত্য কথনে।
শ্রদ্ধেয় পূজ্যপাদ শ্রীপ্রফুল্লদার মত মানুষ শ্রীশ্রীবড়দা থাকতে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী সংশোধন করেছেন আচার্য প্রথাকে খন্ডন করতে অথচ শ্রীশ্রীবড়দাকে বাণী সংশোধনের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবার, দেখাবার প্রয়োজন বোধ করেননি। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, প্রফুল্লদা নিজে শ্রীশ্রীঠাকুর থাকতে শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখ নিঃসৃত যে বাণী লিপিবদ্ধ করেছেন সে বাণী কেন তিনি শেষ বয়সে এসে শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে শ্রীশ্রীঠাকুরের দিয়ে যাওয়া বাণী সংশোধন করার মত পদক্ষেপ নিলেন? যদিও বা নিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর থাকতে কেন নিলেন না? যদি নিলেন কেন তিনি শ্রীশ্রীবড়দাকে না দেখিয়ে, শ্রীশ্রীবড়দার সঙ্গে আলোচনা না ক'রে একক সিদ্ধান্তে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিলেল? কেন? কি কারণ? কি উদ্দেশ্যে? এরকম ত্রুটি বিচ্যুতি (?) সৎসঙ্গের দিকপালরা করেছেন। সেই ধারা শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদার সময়েও দেখা গেছে এবং বর্তমানেও আছে।

বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সময়েও একজন গুণী ইয়ং ভক্ত প্রফুল্লদার সেই সংশোধিত বাণীর সমর্থনে ভিডিও বানিয়েছিলেন এবং আবার পরবর্তী সময়ে তা' এডিটও করেছেন। কেন? কেন তিনি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সংস্পর্শে থেকেও ঐ সংশোধিত বাণীর সমর্থনে ভিডিও বানালেন এবং আবার পরে এডিট করলেন? এরকম বহু গুণী ও উচ্চ লেখাপড়াজানাওয়ালা ভক্তদের বিচিত্র ওঠাপড়া দেখা যায়।

এবার বলি, আপনি লিখেছেন "আমরা সবাই আপন প্রতিষ্ঠাপন্থী, ঠাকুর পন্থী কেউ হলাম না------সুতরাং আবার আমরা এক হই "।
খুব ভালো লাগলো আপনার এই কথাটা। কিন্তু প্রশ্ন জাগে মনে, এখনও কি আমরা সবাই ঠাকুরপন্থী হ'তে পেরেছি? আমরা কি শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে নিয়ে, শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে নিয়ে অতি ভক্তির ফোয়ারায় সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে অজ্ঞতাবশত ফেসবুকে ও ভিডিওর মাধ্যমে নানা বিতর্কিত পোষ্ট ক'রে, লেখা লিখে, মন্তব্য ক'রে তামাম সৎসঙ্গীদের মনে, অদীক্ষিতদের মনে বিরক্তির জন্ম দিয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে বিড়ম্বিত করছি না কি? অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে ফেলছি না কি? 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের বিরোধীদের শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে সমালোচনা করা, কটুক্তি করার সুযোগ ক'রে দিচ্ছি না কি? শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করছি না কি?

আবার দেখুন, আমাদের ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে কেউ কেউ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার প্রতি ভক্তির আতিশয্যে শ্রীশ্রীবিবেকদাদা ও শ্রীশ্রীকাজলদাদাকেও অশ্লীল যৌন গালাগালিও করছি প্রকাশ্যে ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একবার দু'বার নয় বারবার করছি, আবার সেই অশ্লীল যৌন গালাগালির সমর্থনে শ্রীশ্রীঅবিবদাদা প্রেমী কেউ কেউ ইয়ং তাকে বাহবা দিচ্ছি, উৎসাহ দিচ্ছি এবং যদি কেউ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তার বিরোধিতা করছি। একদিকে শ্রীশ্রীঠাকুর আত্মজদের প্রকাশ্যে অশ্লীল গালিগালাজ করছি আবার বুক বাজিয়ে নিজেদের শ্রীশ্রীঅবিনদাদার D. P. Works-এর সৈনিক বলছি। এইভাবে নাকি তারা নাকি শ্রীশ্রীঅবিনদাদার D. P. Works-এর মহাযজ্ঞের সৈনিক হ'য়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের হারিয়ে যাওয়া, শ্রীশ্রীঠাকুরকে ছেড়ে চলে যাওয়া মেষ শাবকদের ফিরিয়ে আনবে।

সত্য সৎসঙ্গী! কি বিচিত্র এই সৎসঙ্গীরা!!

আর, এসব দেখে শুনেও আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীরা চুপ ক'রে থাকছি, প্রতিবাদ করছি না, যে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তাকে সমর্থন করছি না, উল্টে তাকে মহান ভক্তের মতো শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী তুলে ধ'রে বিচারের ভার আপন হাতে তুলে না নেবার জ্ঞান দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে নিজেকে রেখে বিচারের ভার ঠাকুরের মাথায় চাপিয়ে দিচ্ছি সুকৌশলে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায়।

এবার বলুন তো, আপনি যে লিখেছেন "সুতরাং আবার আমরা এক হই। আমার অন্তর দেবতা, প্রিয় পরম যেন খুশী হন, আশীর্বাদ বর্ষন করেন" এর পরেও কি আপনার মনে হয় আপনার অন্তরের ইচ্ছা পূর্ণ হবে? শ্রীশ্রীঠাকুর কি এরকম পরস্পরের প্রতি বিদ্ধেষভাবাপন্ন, আত্মপ্রতিষ্ঠামূখর, শ্রীশ্রীঠাকুর আত্মজদের না-মানা, তাঁদের গালাগালি করা, তাঁদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কটুক্তি করা, ধান্দাবাজ, কপট, কুৎসিত, চৌর্য মনোবৃত্তি সম্পন্ন, ভীরু, দূর্বল, মূর্খ, অজ্ঞ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, কৌশলী অতি ভক্তি পরায়ণ নোংরা মনের সাজা সৎসঙ্গী চেয়েছিলেন?
তাই বলি, সৎসঙ্গী সাবধান।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস।

No comments:

Post a Comment