আজ জাতীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলছে এই 'আমার সোনার বাংলা' সঙ্গীত হিন্দুর দ্বারা লিখিত সঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশী নয়, ভারতীয় কবি, গানের মধ্যে 'বাংলাদেশ' শব্দটাই নেই, এই গান অখন্ড বাংলার জন্য রচনা হয়েছিল, এই গান পূর্ব বাংলার স্বার্থের বিপরীতে রচনা হয়েছিল, এই গানে বাংলাদেশের বাংলার কথা লেখা নেই, লেখা আছে ভারতের বাংলা অঞ্চলের কথা, এই গানে মানুষের ঘুম আসে, রক্ত গরম হয় না, কাউকে জাগানো যায় না, এই গান স্বৈরতন্ত্রকে রক্ষা করে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুই বাংলা ভাগ হ'ক চাননি। তিনি বাংলাভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন, তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন না, এই গানে পশ্চিমবাংলার কথা আছে ইত্যাদি নানারকম ভিত্তিহীন মূর্খের স্বর্গে বাস করা উত্তেজিত মস্তিষ্কের বৃথা আড়ম্বর যুক্ত বালখিল্য চিন্তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আজ বাংলাদেশের নোতুন স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর স্বাধীন জনগণের মধ্যে। ভাঙনের কী তীব্র নেশা বর্তমান প্রজন্মের যে, রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাগ চাননি, তিনি বাংলাদেশের শ্ত্রু অতএব তাঁর গান বয়কট করো, করো নিষিদ্ধ। আর ফেসবুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তা' বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, দেশে দেশে।
একেই বলে ভয়ংকর জন্ডিস আক্রান্ত অসুখী মানুষের কলমের হলুদ মূত্রপাত। এতদিন নীল মূত্র হ'তো এখন হলুদ মূত্রপাত হচ্ছে কলম থেকে। আর, এই জন্ডিস আক্রান্ত কলমের দুর্গন্ধযুক্ত গাঢ় হলুদ মূত্র গোয়েবলসীয় কায়দায় ছড়িয়ে দিতে চাইছে বাংলার সবুজ মনের সবুজ প্রাণেদের মধ্যে। ব্রিটিশের বহু গুণের কারণে একদিন তারা উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এশিয়া এবং আফ্রিকার পাশাপাশি মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ছোট অংশগুলির ওপর সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল। এইজন্য বলা হ'তো ব্রিটিশের সূর্য কখনো অস্ত যায় না। কিন্তু ইতিহাস কি বলে? সারা বিশ্বে ভাঙ্গার খেলায় ওস্তাদ ছিল একদিন ব্রিটিশ। তাদের শাসন ব্যবস্থায় ভয়ংকর খেলাগুলির মধ্যে ভয়ংকর বিষাক্ত খেলা ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ধর্মের বিষাক্ত বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে দুই সম্প্রদায়ের ঐক্যের, মিলনের যে শরীর সেই সমস্ত শরীরে ঘৃণার বিষ প্রবেশ করিয়ে কেটে ফালা ফালা ক'রে দেওয়া। এই ভয়ংকর খেলার বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে ভারতকে ভাগ ক'রে দিয়ে চলে গেছিল পিছনে একটা সুতো লাগিয়ে পিছন থেকে নাচাবে বলে। কিন্তু আজ তাদের পরিণতি দেখুন। আজ তাদের আমেরিকার দাসত্ব করতে হচ্ছে, যে আমেরিকাকে একদিন শাসন করেছিল। আজ ধনগর্বে মত্ত আমেরিকাও ব্রিটিশদের সেই একই পথের পথিক। কিন্তু গানে আছে, "চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।"
আর, এই ভাঙ্গার 'খেলা হবে, খেলা হবে' আজ বাংলাদেশের পরিবর্তনকারীদের জাতীয় শ্লোগানে পরিণত হয়েছে।
তাই আজ পরিবর্তনকারীরা সব কিছুর মধ্যে ভাঙনের গন্ধ পান, ভাঙ্গনের বীজ বপন করেন। যে গান রচনা হয়েছিল সমগ্র বাংলাকে নিয়ে সেই গান খণ্ডিত বাংলার জাতীয় সঙ্গীত হওয়া সত্ত্বেও পরিবর্তনকারীরা আজ ভাঙনের বিষে আক্রান্ত হ'য়ে বিষ ছড়াচ্ছেন, হলুদ মূত্রপাত করছেন এই গান পশ্চিমবাংলার গান, এই গান হিন্দু কবির গান ব'লে। অথচ এই গান নিয়ে পশ্চিমবাংলার হিন্দুরা নীচ সংকীর্ণ মনে কখনও দাবী করেনি, ভাঙনের গন্ধ পায়নি যে, এই গান হিন্দুর রচনা, এই গান পশ্চিমবাংলার গান, এই গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হ'তে পারবে না। আবার বাংলাদেশীরা স্বপ্ন দেখে অখন্ড বাংলা গঠনের। এর পরেও সুখী মানুষ ব'লে অসুখের বিষ ছড়ানো হয় হিন্দু মুসলমানের মধ্যে। তার থেকে বরং এই শ্ত্রুতার বিষ যে শ্ত্রুতার বিষ ছড়িয়ে গেছিল বৃটিশ আর তার দোসর দেশভাগের সময়ে দুই দেশের নেতৃবৃন্দ সেই ভাঙনের বিষাক্ত বিষ আর না ছড়িয়ে একেবারে পার্মানেন্টলি হিন্দু-মুসলমানের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হ'ক, সময়ের দাবী তোলা হ'ক, ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কারের মুখোশের আড়ালে সরকার উৎখাতের মত গোপন খেলা না খেলে বর্তমান ১০টি শান্তির পুরস্কার প্রাপ্ত শান্তির প্রতীক বর্তমান কেয়ার টেকার সরকারের উপদেষ্টা প্রধান ডাঃ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ও উপদেষ্টা মন্ডলীদের আনুগত্যে চিরকালীন শান্তির দাবীতে খোলাখুলি আন্দোলন করা হ'ক, একতরফা না ক'রে যাতে সবাই স্বল্প জীবনে আধপেটা খেয়েও মিলেমিশে আনন্দে একটু মানসিক শান্তিতে থাকতে পারে। কেন অকারণ ভিত্তিহীন বিশ্বকবিকে নিয়ে নোংরা খেলা? কেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঙ্গালীর মনে প্রকৃত শান্তির প্রতীক বাঙালী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হিন্দু বাঙ্গালীর তকমা দিয়ে ব্রিটিশদের বপন ক'রে যাওয়া হিন্দু মুসলমানের নোংরা ঘৃণ্য বিষাক্ত বীজ পুনরায় চাষ ক'রে বোধের ঘরকে ধ্বংস ক'রে বাঙালী জাতটাকে টুকরো টুকরো ক'রে কিমা ক'রে দেওয়া হচ্ছে? এই খেলা কাদের খেলা?
তাই অকারণ ঘৃণা, হিংসা, কুসংস্কার, অজ্ঞানতা ইত্যাদি অন্ধকারের চাষ ক'রে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের খেলায় না মেতে নীরবে বাংলাদেশীদের মনের মত জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন ক'রে সবাই অল্প ক'দিনের জন্য আসা পৃথিবীতে শান্তিতে মিলেমিশে শেষ দিন পর্যন্ত বিদেশীদের ডিভাইড এন্ড রুল-এর সংক্রামক ব্যাধির প্রভাব মুক্ত হ'য়ে বাঁচুক, এই-ই একমাত্র আন্তরিক প্রার্থনা। নমস্কার।
ক্রমশঃ পরবর্তী ৪র্থ পর্বে।
No comments:
Post a Comment