Powered By Blogger

Friday, January 3, 2025

প্রবন্ধঃ বাবা মায়েদের উদ্দেশ্যে। (১)

যে মায়েরা ছেলেমেয়েদের দীক্ষার কথা শুনে আঁতকে উঠে অবাক হ'য়ে বলেন, ছোটো বয়সে কিসের দীক্ষা!? যেন কথাটা শুনে মায়েরা আকাশ থেকে পড়লেন! একটা ভয়ের কথা, আশংকার কথা, চিন্তার কথা এই বুঝি সন্তান আমার কীর্তন পার্টির সদস্য হ'য়ে গেল। এখন মনের আনন্দে পড়াশুনা, খেলাধুলা, ঘোরাফেরা করার সময়, এখন ওসব ভগবান টগবান, দীক্ষা টিক্ষার সময় নয়। এখন ধর্ম স্থান গয়া ছেড়ে গোয়ায় ফুর্তি করতে যাওয়ার সময়। ওসব বুড়ো বয়সের ব্যাপার। বৃত্তি প্রবৃত্তি যখন ঠান্ডা হ'য়ে যাবে, রিপুগুলি ব্যষ্টি জীবন, সমষ্টি জীবন ধ্বংস ক'রে উচশৃংখল অনিয়ন্ত্রিত চলন ছেড়ে শান্ত হ'য়ে যাবে তখন ভগবান টগবান, ঈশ্বর টিশ্বর নিয়ে সাধন ভজন করার সময়। আর মেয়েদের বিয়ের পরে যেখানে যাবে তাদের ব্যাপার। তারা ল্যাজে কাটবে কি মাথায় কাটবে সেটা মেয়েদের শ্বশুরবাড়ির বোদ্ধা শ্বশুরশাশুড়ির ব্যাপার। যেন মেয়ে একটা বোঝা, বিয়ে হ'য়ে গেলেই ল্যাটা চুকে গেল। এই হ'লো বাবামায়েদের শিক্ষা সচেতনতা। তাদের ধারণা এই শৈশবে, কৈশোরে এবং যৌবনে তো হৈচৈ করার সময়, বৃত্তি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠার সময়। বাচ্চাদের সৎসঙ্গে নিয়ে যেতে চায় না অনেক মায়েরা। তাদের ধারণা ওসব কীর্তন টির্তন, খোল করতাল, খঞ্জনী ইত্যাদি বাচ্চাদের সেকেলে বুড়োটে স্বভাবের ক'রে তোলে। পড়াশুনা থেকে মন সরে যায়। তারা সংসারী হয় না। সংসার থেকে দূরে থাকে তাদের মন। আবার আর একদল আছে তারা তাদের সন্তান সম্পর্কে ওভার কনসাস। তাদের সন্তান ঠিকমতো পড়াশুনা করছে কিনা, তাদের দেখভাল, পালন পোষণ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তারা জীবনে বড় হ'য়ে ওঠার ঠিকমতো রসদ পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।
কিন্তু এই উভয় ধরণের মাবাবারা একবারও ভাবে না তাদের সন্তান ঠিকমতো মানুষ হচ্ছে কিনা। তাদের প্রত্যেকের কথা শুনে মনে হয় তারা প্রত্যেকেই এক একজন দারুণ সুশিক্ষায় শিক্ষিত রত্নগর্ভা আদর্শ মাবাবা, আদর্শ দম্পতি, সুন্দর মনের মানুষ আর তাদের ঘরে্র প্রতিটি ছেলেমেয়েই এক একজন রত্ন, আদর্শবান ছেলেমেয়ে, সমাজ তথা দেশের রত্ন! তাদের জন্য কোনও জীবন্ত ঈশ্বর টিশ্বর, আদর্শ টাদর্শ, ধর্ম টম্মের দরকার নেই। চারিদিকে অনেক মূর্তি টুর্তি, আংটি, তাবিজ, মাদুলি টাদুলি আছে দরকার হ'লে তাদের শরণ নেওয়া যেতে পারে আর নেইও। তাদের ছেলেমেয়েরা মোবাইল ল্যাপটপ হাতে বাংলা ভুলে ইংরেজি বলা আধুনিক বেশভূষায় আবৃত এক একজন আধুনিক আধুনিকা। মাবাবারা চান তাদের ছেলেমেয়ে মধু আহরণ ক'রে মৌ মানুষ হ'য়ে ফিরবে ঘরে। কিন্তু দিনের শেষে দেখা যায় তাদের ভালোবাসার সন্তান গু'য়ে মানুষ হ'য়ে ঘরে ফিরেছে মুখে গু নিয়ে। দুনিয়ার যত নোংরা দুর্গন্ধ যুক্ত আচার আচরণ, অভ্যাস ব্যবহার, শিক্ষা রপ্ত ক'রে ঘরে নিয়ে এসেছে।

যখন বেলা শেষে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে তখন ছলছল চোখে দেখে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের নিজেদের অহংকারী শিক্ষার সবজান্তা মনোভাবের উপর দাঁড়িয়ে যে শিক্ষায় শিক্ষিত ক'রে তুলতে চেয়েছিল তা আজ মিথ্যে হ'য়ে গেছে, ব্যর্থ হ'য়ে গেছে, হাহাকারের ঘোর অন্ধকারে ঢেকে গেছে সংসার ও ছেলেমেয়েদের জীবন। রাতের পর রাত এক যন্ত্রণাময় নিদ্রাহীন হাতপা কাঁপা হতাশাগ্রস্থ জীবনের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে কাটিয়ে চলেছে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন। গরীব বড়লোক, শিক্ষিত অশিক্ষিত, মূর্খ পন্ডিত সবাইকে জিজ্ঞেস করলে সবারই দুঃখ ভারাক্রান্ত ম্লান মুখে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে হতাশাগ্রস্থ হাসিতে এক কথা, 'দিনগত পাপক্ষয়'!

আর এখানে দেখা যাচ্ছে এক তেইশ বছরের যুবকের ছবি। যার এক্কেবারে ছোটোবেলা কেটেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের সামনে বসে থেকে ঠাকুরের প্রার্থনা, কীর্তন, গান, খোল করতাল ইত্যাদির সমাবেশে। যার ছোটোবেলা কেটেছে দাদুর হাত ধ'রে হাঁটি হাঁটি পায়ে ঠাকুরের সামনে নেচে নেচে। যার ছোটোবেলা কেটেছে কখনো বাবার ধুতি, কখনো মায়ের আঁচল ধ'রে শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীবড়মা, শ্রীশ্রীবড়দাকে ঘুরে ঘুরে প্রণাম ক'রে ক'রে। যার ছোটোবেলা কেটেছে ঠাকুর পরিবারের দাদু, দিদা, কাকু, কাকি ইত্যাদি বিশাল সদস্যদের সকলের মাঝে কোলে ক'রে, পিছন ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে, হাসতে হাসতে।

এইখানে সেই ধর্মের আঙ্গিনায় ঈশ্বরের কোলে বসে থেকে বড় হওয়া সুদর্শন লক্ষ কোটি ইয়ং জেনারেশনের আইকং শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ছবি দেখা যাচ্ছে মানুষের মাঝে মানুষের ভিড়ে!

আধুনিক মায়েরা বাবারা আচ্ছা বলুন তো। এইখানে যার ছবি দেখা যাচ্ছে, সেই সুদর্শন সদাহাস্যময় লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণ মিষ্টি মানুষটি কি সেকেলে গেঁয়ো স্বভাবের, বুড়োটে দেখতে? সংসার ত্যাগী গেরুয়া বসন ধারী সাজা সাধু? ধর্ম ও ঈশ্বর সাধনা কি এই ছেলেটির জীবন নষ্ট করেছে? আপনারা বাবা মায়েরা কি চান না এই ছেলেটির মতো সমস্ত দিকে চালচলন, কথাবার্তা, পড়াশুনা, আচারব্যবহার, চিন্তাভাবনা, দীক্ষাশিক্ষা, বোধবুদ্ধি, সহ্যধৈর্য, চলনচাউনি, ইত্যাদি সব বিষয়ে পরিপূর্ণ হ'য়ে আধুনিক ও আধুনিকা হ'য়ে উঠুক আপনাদের ছেলেমেয়ে? প্রকৃত মানুষ হ'য়ে প্রতিষ্ঠিত হ'ক সমাজের বুকে। পাড়াপ্রতিবেশী সবাই ভালোবাসুক আপনার ছেলেকে। আপনি চান না এরকম একটা সুন্দর মিষ্টি ছেলে??
( লেখা ৩রা জানুয়ারী'২৩)

No comments:

Post a Comment