বাংলাদেশে ঢাকার রমনা কালি মন্দিরে পুজোর সময় মাইকে ইসলামীয় ধর্মগ্রন্থ পাঠ।
বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার রমনা কালী মন্দিরে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সামনে মাইকে ইসলামীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গান ভেসে আসছে বা ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনের সুরাসমূহের পঙ্ক্তি বা বাক্য পাঠ বা আবৃত্তি শোনা যাচ্ছে ব'লে এক প্রতিবেদনে জানা গেল। খবরে জানা গেল ০৯/০১/২৫ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার রমনা কালী মন্দিরে বিশেষ পূজানুষ্ঠান ছিল। গোটা মন্দির আলোকশয্যায় সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। প্রচুর ভক্তের আগমন হয় মন্দিরে। সেই সময় মন্দিরের বিপরীতে রাস্তার পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে জোড়া মাইক লাগিয়ে জোরে জোরে ইসলামিক সংগীত বাজানো হচ্ছিল।
এই ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভে এসে বর্ণনা করেছেন আকাশ চক্রবর্তী নির্ঝর নামে একজন ভক্ত। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে, এই মাইক থেকে আসলে কি বাজছে সে সম্পর্কে সে নিজেও একটু কনফিউজড ছিল৷ কারন তিনি এসেছিলেন রমনা কালী মন্দিরে। সেখানে বড়সড়ো অনুষ্ঠান হচ্ছিল এবং চারিদিক আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছিল রমনা কালি মন্দির। আকাশ চক্রবর্তী নির্ঝর নামে ভক্তের কথা অনুযায়ী মাইকে ভেসে আসা ভাষা তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করেছিলেন তিনি যে মাইকে সনাতন ধর্মীয় কিছু বাজছে কিনা। পরে দেখলেন যে, মাইকে ইসলাম ধর্মীয় কিছু বাজছে ।’তিনি বলেন, আমার সরল মনে একটা প্রশ্ন হল এই মাইকগুলো মন্দিরের পাশে কেন? এইখানে কেন এই মাইকটা লাগাতে হলো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না । কারণ এটা তো মন্দির এরিয়া, আমি আশেপাশে তো কোন মসজিদ দেখতে পাচ্ছি না। আমি কোন মাহফিলও দেখতে পাচ্ছি না । তাহলে এই মাইক কোথা থেকে এল? মন্দিরের পুজো অনুষ্ঠানের ভেতর কোনও ইসলাম ধর্মীয় শব্দ মাইকে কেন শোনা যাচ্ছে, মাইক কারা লাগালো, কেন লাগালো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না৷ আমি লাইভে এসেছি কারণ পরে হয়তো বলতে পারে এটা এডিট করা ভিডিও।
এইটা হ'লো গত ৯ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ঢাকার রমনা কালী মন্দিরের পুজোমন্ডপে উপস্থিত এক ভক্তের বয়ান। এর প্রতি উত্তরে একজন মুসলমান যুবক তার মতামত ব্যক্ত করেছে ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে।
সেই মুসলমান ভক্তের মতামত অনুযায়ী আমরা যা জানতে পারি তা' হ'লো তিনি বললেন,
"রমনা কালী মন্দির থেকে দূরে রাস্তার পাশে লাগানো মাইকে কোরআন পাঠের বিরোধীতা করছে এক হিন্দু যুবক!! এটি নাকি হিন্দু যুবকের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করছে!!
তাহলে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাটহাজারী মাদ্রাসার পাশে কিভাবে একটা মন্দির টিকে থাকে?? কিভাবে পূজার সময় দিনের পর দিন ২৪ ঘন্টা মাইকে উচ্চস্বরে কীর্তন/গান বাজিয়ে পুরো শহরকে দূষিত করা হয়?? যখন এইসব কীর্তনের আওয়াজ মসজিদে প্রবেশ করে তখন আমাদের অনুভূতিও কাজ করে। আমরা কি তোমাদের মন্দিরের সামনে নাচানাচি করি,যেটা তোমরা ভারতে মসজিদের সামনে করো??। সুখে থাকলে আসলে ভুতে কিলায়....।"
অভিযোগ করেছিল বাংলাদেশের এক হিন্দু যুবক বাংলাদেশের ঢাকা শহরের রমনা কালী মন্দিরে পুজোমন্ডপের সামনে মাইকে কোরআন পাঠ নিয়ে। আর, তার উত্তরে মুসলিম যুবক মাইকে কোরাণ পাঠের সমর্থনে যুক্তি খাড়া করতে গিয়ে প্রমাণ স্বরূপ বাংলাদেশের হাটহাজারী মাদ্রাসার পাশে একটা মন্দির টিকে থাকার যুক্তির পাশাপাশি ভারতে মসজিদের সামনে নাচানাচির অভিযোগ তুলে আনলো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কার কথা ঠিক, কার কথা বেঠিক? হিন্দু ভাই যা বলেছে এবং তার উত্তরে মুসলমান ভাই যা বলেছে সেই সব কথার যুক্তি আদৌ আছে কি?
হিন্দু যুবকের কথা অনুযায়ী, হিন্দুদের দ্বারা আয়োজিত কোনও হিন্দুর ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠানের আশেপাশে যদি অন্য সম্প্রদায়ের ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় আর তা'তে যদি মাইকের ব্যবস্থা থাকে তাহ'লে সেই মাইকের আওয়াজে হিন্দুদের ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন ঈশ্বর আরাধনায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যঘাত ঘটে। আর, এই ঘটনা যদি মুসলমানদের ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন হিন্দুদের তরফ থেকে ঘটে তাহ'লে মুসলমানদের ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠান বা ঈশ্বর আরাধনায়ও স্বাভাবিকভাবেই ব্যঘাত ঘটে। এতে হিন্দু-মুসলমান-খ্রীষ্টান ইত্যাদি সকল সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেই ঈশ্বর/আল্লা/গড খুশী হন না, বরং তিনি নারাজ হন
এরকম ঘটনা যদি অনিচ্ছাকৃত ঘটনা হ'য়ে থাকে তাহ'লে বলতে হবে অনুষ্ঠান আয়োজকদের দূরদৃষ্টির অভাবে এই ঘটনা সংগঠিত হওয়ার ফলে এর ফল ভোগ করতে হবে দুই সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকে, যা অতীতে হ'য়ে এসেছে বহুবার।
যাই হ'ক, এইরকম হিন্দু-মুসলমানের পারস্পরিক ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উদ্দেশ্যহীন, ধর্মীয় অজ্ঞানতা ও স্পর্শকাতরতার লড়াই, রাজনৈতিক লড়াই, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। মানবতা ও মনুষ্যত্বের ভিত আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। হিন্দু মুসলমানের দীর্ঘ বহু বছরের পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ, প্রীতি, সুন্দর, মার্জিত ও সহানুভূতিশীল সম্পর্ক নষ্ট হ'য়ে গেছে।
মনে পড়ে যায় এই প্রসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার গানের স্রষ্টা আবদুল করিম রচিত একটা গানের কথা।
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান,
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
হিন্দুগো বাড়িতে যাত্রা গান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম,
বাউলা গান, ঘাটু গান আনন্দের তুফান
গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম,
হায়রে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
বর্ষা যখন আইত, গাজির গান গাইত
রঙে চঙ্গে গাইতে আনন্দ পাইতাম,
কেহ বা মেম্বার, কেহ বা মিনিস্টার,
আমরা কি এসবের নাম জানিতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
করি এ ভাবনা, সেই দিন আর পাব না
ছিল বাসনা সুখি হইতাম,
দিন হইতে দিন আসে রে কঠিন,
করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম,
হায়রে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম,
সত্যি আজ যখন হিন্দু মুসলমানের কারণ-অকারণ, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, অজ্ঞতা-অতি বিজ্ঞতা, উদ্দেশ্যপূর্ণ বা উদ্দেশ্যহীনতা ইত্যাদি ভুলের কারণে ধর্মীয় সংঘাত দেখি তখন ভাবি সত্যিই কি আর সেই সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যপূর্ণ, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ, প্রীতি, সুন্দর, মার্জিত ও সহানুভূতিশীল সম্পর্কের দিন ফিরে আসবে কোনোদিন? কারণ কেউ জানতেই চায় না, বুঝতে চায় না, শিখতে চায় না যেটা বলছি, যেটা করছি, যেটা শুনছি সেটা কতটা ঠিক বলছি, কতটা ঠিক করছি বা ঠিক শুনছি সেটা বিচার করার। বাস্তব জ্ঞান বর্জিত লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষেরা যে যা পারছে তাই বোঝাচ্ছে, তাই করছে, তাই বলছে আর সাধারণ মানুষ, আর্ত মানুষ, অর্থার্থী মানুষ, অজ্ঞানী, মূর্খ মানুষ, কুসংস্কারাছন্ন মানুষ, ভীরু, ধর্ম ভীরু, ঈশ্বর ভীরু ও দুর্বল মানুষ তাই শুনছে, তাই করছে অন্ধের মত। তথাকথিত লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষদের অসম্পূর্ণ জানা, দেখার ওপর দাঁড়িয়ে বলা বা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে বলা ও করাকেই নিজেদের অজান্তে ফলো করছে সাধারণ মানুষ। এর ফলে সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে মিথ্যার পায়ের নীচে।
ঠিক যেমনিভাবে ঢাকার রমণা কালী মন্দিরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হিন্দু ও মুসলমান যুবকের বলা পরস্পর বিরোধী মন্তব্যের নীচে চাপা পড়ে গেল ঢাকার রমনা কালী মন্দিরের মূল ঘটনার যৌক্তিকথা বরাবরের মত। ভাবি, হিন্দু মন্দিরে যে পূজানুষ্ঠান চলছিল তাও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত অনুষ্ঠান ছিল আবার মাইকে ইসলামীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের যে গান ভেসে আসছিল বা ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনের সুরাসমূহের পঙ্ক্তি বা বাক্য পাঠ বা আবৃত্তি ভেসে আসছিল তাও ঈশ্বর/আল্লার উদ্দেশ্যে নিবেদিত পাঠ বা আবৃত্তি ছিল। তাহ'লে এখানে বিরোধ কোথায় বা কেনই বা এই ধরণের অকারণ বিরোধ সৃষ্টি?
তাই আসুন দেখা যাক এর সমাধান কোথায়। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত পরম ভক্ত মোহাম্মদ খলিলুর রহমানদা একবার শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রশ্ন করেছিলেন,
প্রশ্নঃ হিন্দু-মুসলমানে সারা ভারতময় গোলমাল চলছে, এর মিমাংসাই বা কোথায় আর তার সমাধানই বা কি? এ দুয়ের ভিতর তো কোন সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কাফেরদের বাঁচতে আর বাড়তে দেওয়াও তো অধর্ম্মই----এই ভেদের সামঞ্জস্য কোনখানে?
এর উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন,
ভেদ কিরে পাগল? যারা বাঁচতে চায়, বৃদ্ধি পেতে চায়, তা'দের ভিতর কি-ক'রে ভেদ থাকতে পারে? ভেদ ত' কেবল হামবড়াইয়ের ভিতর। ভেদই যদি আমাদের বৈশিষ্ট্য হ'ত, তবে খৃষ্টানদেরই বা মানতে যাই কেন----আর শাস্ত্রেরই বা এমনতর ইঙ্গিত কেন?
যারা বাঁচতে চায়, বৃদ্ধি পেতে চায়, যেমন করেই হ'ক না কেন, তা'রা ধর্ম্মকে মানেই। কারণ ধর্মের আদি উপাদানই হ'চ্ছে----ঐ বাঁচা আর বৃদ্ধি পাওয়া। আর বাঁচতে হ'লে, বৃদ্ধি পেতে হ'লেই চাই-----যাঁকে ধ'রে এই দুনিয়ায় পাঁচ ভূতের পঞ্চাশ রকমের কামড়ানি, পাঁচশ' রকমের বেঠক্কর ঠোকরানিকে এড়িয়ে, তা'দের কাবেজে এনে---বা ক্ষতি না করতে পারে এমনতরভাবে জব্দে রেখে চলা যায়, তাঁ'কে ধরা। তাহ'লেই এই চলাটা আমার তেমনতর হওয়া চাই তাঁর-মাফিক----যাঁকে ধরায় আমার এই বাঁচা ও বৃদ্ধি পাওয়াটা মাথাতোলা দিয়ে, পরম পরিপোষণে, মোটাসোটা হ'য়ে বেশ কায়দা মাফিক চলতে পারে। তাহ'লেই এলো-----যাঁকে ধ'রে আছি, তাঁরই প্রতিপাদ্য পথে ব্যোম বাজিয়ে, বেঢং ঢঙে গাল বাজিয়ে, যাজন-ফোয়ারায় মশগুল হ'য়ে এন্তার হওয়া।"
তাঁর মানে কি দাঁড়ালো?
"তার মানে----যাঁকে ধ'রে আমার এরকম জীবন শুরু হ'ল তাঁর প্রতিপাদ্যের ভিতর মহান একমাত্র খুঁটিই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে খোদা। তবেই চাই---এই ধর্ম্মের ভিতর, বাঁচা ও বৃদ্ধি পাওয়ার উপকরণের ভিতর----ঐ খোদা, ঐ রসুল, ঐ কোরাণ---তাঁ'র মহান, উদ্দীপ্ত, অমৃত ছিটান, জীবন-পথে চলার বিবেকময়ী চেরাগ। ঐ খোদাকে যে না মানে, পয়গম্বর রসুলকে যে না মানে, তাঁর বা তাঁদের নির্দেশকে যে না মানে, সেই মরণ- পথের যাত্রী----কাফের।
এই কাফেরদের সাথে আর্য্যদ্বিজ, মুসলমান, খৃষ্টান বা বৌদ্ধের-----যা'রাই হোক না কেন, ঢের ফারাক থাকতে পারে; কিন্তু এই যে ফারাক, তা' শরীর ও জীবনে নয়কো----চলার কায়দায়। তাই ভগবান যীশু বলেছেন, "পাপীকে ঘৃণা ক'রো না, পাপকে ঘৃণা করো।" আবার কোরাণেও হজরত সজোরেই ঘোষণা ক'রেছেন-----"নিশ্চয় যাহারা পরমেশ্বর ও তাঁহার প্রেরিতগণের সঙ্গে বিদ্রোহিতাচরণ করে এবং ইচ্ছা করে যে ঈশ্বর ও তাঁহার প্রেরিতগণের মধ্যে বিচ্ছেদ স্থাপন করে এবং বলে যে আমরা কাহাকে বিশ্বাস করিতেছি এবং কাহারও প্রতি বিদ্রোহী হইতেছি এবং ইচ্ছা করে যে ইহার মধ্যে কোন পথ অবলম্বন করে----এই তাহারা, তাহারাই প্রকৃত কাফের।"
তাহ'লেই দেখা যায়----ধর্ম্মের দিক দিয়ে, আচরণে ধর্ম্মকে যা'রা অনুভব ক'রেছে তা'দের দিক দিয়ে, বাঁচা ও বৃদ্ধি পাওয়ার দিক দিয়ে, তার লওয়াজিমা যা'র যেমন দরকার তার দিক দিয়ে কোথাও কোন ফারাক দেখতে পাওয়া যায় না-----আর নাই-ও। হিন্দু, মুসলমান তো দূরের কথা, মানুষে-মানুষে যে ফারাক, এই ফারাকের একমাত্র সমাধানই হ'চ্ছে ধর্ম্ম। ধর্ম্মে কোথাও দলাদলি, ভেদ, বিসম্বাদ থাকতে পারে না। হিন্দুরা বলে, পূর্বগুরু বা ধর্ম্ম প্রবর্ত্তককে অবলম্বন ক'রেই পরবর্তীর আবির্ভাব হয়; আর এই যে পরবর্তী-----পূর্ব্ববর্তীরই পরিণতিমাত্র। ভগবান হজরত রসুলও তাঁর মুখনিঃসৃত কোরাণে এমনতরই ব'লে গেছেন।
যখন বন্যায় সারা দেশ জলে ডুবে যায়, ঘর বাড়িতে থাকা অসম্ভব হয়, জঙ্গলে জীব, জানোয়ার তো দূরের কথা-----শুনেছি বাঘ, ভালুক, বাঁদর, সাপ, মানুষ হয়তো এক গাছে উঠে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার আগ্রহে হিংসা ভুলে যায়-----কেউ কা'কেও কামড়ায় না। অস্তিত্ব বা জীবন, আর তা'র রাখবার টান জীবের এমনতরই ভীষণ।
জীবন বাঁচাবার টানে যখন জীব, জানোয়ারের এমন হ'তে পারে, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এ আর কি। তবে চাই, অমনতর ধর্ম্মের প্রতি হাড়ভাঙ্গা টান -----তাহ'লে সব চুকে যায়। ঐরকম টানের মানুষের ভিতর কি দেখা গেছে ----হিন্দু ব'লে কোনও গন্ডী, হিন্দু ব'লে কোনও ভেদ, মুসলমান ব'লে কোনও গন্ডী, মুসলমান ব'লে কোনও ভেদ, কি বৌদ্ধ, খৃষ্টান ব'লে কোনও গন্ডী, কোনও ভেদ? জীবন-জড়িত প্রাণময় প্রেমের প্লাবনে তা'দের কি ঐ সব হামবড়াইয়ের আইনগুলি ভেঙে চুরমার হ'য়ে যায়নি? ঐ সব গন্ডী-ফন্ডি---তা'দের নামের দোহাই দিয়ে আত্মম্ভরিতায় সেবাহারা ফাঁকিবাজির বদমাইসি ছাড়া কি আর কিছু বোঝা যায়?
এই যে গত ৯ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার রমনা মন্দিরে যে ঘটনাকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলমানে বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে যে বিতর্ক তৈরী হ'লো, এ নোতুন কোনও ঘটনা নয়। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে এই ধরণের ঘটনা বৃটিশ শাসিত ভারতে, ভারত ভাগের পরে ও বর্তমানেও ঘটে চলেছে, সেই ট্রাডিশান সমানে চলেছে। এর সমাধানে বা মিমাংসার জন্য কোনও পথ কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতার কাছে নেই।
এর মিমাংসাই বা কোথায় আর তার সমাধানই বা কি তা' দিয়ে গেছেন ঈশ্বর স্বয়ং। সেই মানুষ রূপী স্বয়ং ঈশ্বর, আল্লা বা গড যে নামেই ডাকি না কেন তাঁকে সেই তিনি পরমপিতা, সদগুরু, পরম কারণ, পরম উৎস, পরম অস্তিত্ব ত্রেতা যুগের শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, দ্বাপর যুগের শ্রীশ্রীকৃষ্ণ ও দ্বাপর যুগের শেষে কলি যুগের প্রথমে আসা শ্রীশ্রীবুদ্ধ, প্রভু যীশু, হজরত মহম্মদ, চৈতন্য মহাপ্রভু, ঠাকুর রামকৃষ্ণ সেই একজনই এক ও অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তার নোতুন রূপ বর্তমান যুগপুরুষোত্তম, পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র? যা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আজকের মত এই পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে আবারও আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা হিন্দু-মুসলমানের এই দ্বন্ধের মিমাংসা ও সমাধানের নানা দিক।
নমস্কার, জয়গুরু।