হে দয়াল, শুভ অষ্টমীর সকালে মহাঞ্জলির সময়ে তুমি তাদের মায়ের চরণে অঞ্জলিতে উৎসর্গিত প্রার্থনা পূরণ ক'রে দিও।
আজ মহা অষ্টমী। সকাল থেকে পাশের প্যান্ডেল থেকে মাইকে ভেসে আসছে মহা অষ্টমীর পুজোর মন্ত্র। ভেসে আসছে মাঝে মাঝে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য ঘোষণা। ভেসে আসছে অঞ্জলির পবিত্র মন্ত্র। সঙ্গে বহু মানুষের প্রতিধ্বনি। মাইকে যে মন্ত্র ভেসে আসছে সেই মন্ত্র মহা অষ্টমীর পুজোর মন্ত্র নাকি অঞ্জলির কোন তা মন্ত্র জানি না। সেই মন্ত্র পাঠের সময় মন্ত্রশেষে ভেসে আসছে "---------- তস্মৈ শ্রীগুরবৈ নমঃ।" পুজোর মন্ত্র বা অঞ্জলির মন্ত্র সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই। কেন মায়ের পুজোর মন্ত্রে বা অঞ্জলিতে বারবার গুরু বন্দনা ঠিক বুঝতে পারলাম না। এই গুরুটা কে যাকে প্রণাম জানাচ্ছে তা আমি জানি না। শাস্ত্রে পুজোর নানা মন্ত্রে যে গুরুবন্দনা আছে এবং প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে গুরুবন্দনায় কাকে কোন গুরুকে প্রণাম জানাচ্ছে, সেই গুরু কোথায় থাকেন, কোন রূপে থাকেন, মূর্ত না অমূর্ত রূপে সেটা জানার ইচ্ছে ছিল কিন্তু কা'কে জিজ্ঞেস করব" যাকে জিজ্ঞেস ক'রে প্রশ্নের উত্তর পাবো সেই মানুষ খুঁজে পেলাম না। অবশেষে কথায় কথায় আমার পরিচিত এক ব্রহ্মণ পূজারীকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি পুজোর ব্যস্ততায় পড়ে জানাবেন ব'লে দ্রুত চলে গেলেন।
আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। মাঝে মাঝে ভেসে আসছে, বলো দূর্গা মাঈ কি। প্রত্যুত্তরে ভেসে আসছে , জয়। মনে মনে ভাবলাম, দূর্গা মাঈ কি -র বদলে দূর্গা মা কি হয় কিনা। সবটাই কেমন যেন হিন্দিয়ানার ছাপ পড়ে গেছে মনে হ'লো। বাঙ্গালিয়ানা বোধ হয় লুপ্ত পেতে চলেছে বাংলায়। কি জানি বোধহয় ভুল ভাবছি।
যাই হ'ক এসব কুটকচালিতে গিয়ে কোনও লাভ নেই। যা হচ্ছে হ'য়ে যাক, যে যা চাইছে হ'ক। আজকের শুভ অষ্টমীতে মাইকে ভেসে আসছে অঞ্জলির আবেদন। যারা অঞ্জলি দিলেন বা দেবেন তাদের বলি, আপনারা মায়ের কাছে অঞ্জলির সময় দু'হাত জোর ক'রে দেবতার উদ্দেশ্যে যে ফুল, জল অর্পন করবেন সেই সময় অঞ্জলি বা পুজোর অর্থ বুঝুন না বুঝুন সেই সময় নিজের বা কারও জন্য কোনও প্রার্থনা করবেন না। অঞ্জলি শেষে প্রণাম করার সময়ে মাকে আপনার পবিত্র মনোবাসনা নিবেদন করুন মা নিশ্চয়ই সন্তানের সেই ইচ্ছা পূরণ করবেন। আসলে মায়ের কাছে বা যে দেব দেবীর কাছে ভক্ত পৃথিবীর যে প্রান্তে তার আকুল প্রার্থনা জানায় সেই প্রার্থনা এসে পড়ে দয়ালের চরণে। তা সেই অজ্ঞানী, মূর্খ, অশ্রদ্ধা বা কুৎসাকারী, তর্কবাগীশ বা আর্ত, অর্থাথী, জিজ্ঞাসু, জ্ঞানী যে ভক্তই হ'ক সেই ভক্ত তাঁকে গ্রহণ করুক বা না করুক, মানুক বা না মানুক, শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধা, প্রেম বা ঘৃণা ইত্যাদি যাই করুক আর না করুক দয়ালের চরণেই তার সেই মায়ের চরণে অঞ্জলিতে নিবেদিত ফুল, জল ইত্যাদি এবং প্রার্থনা এসে পড়ে। সেই দয়াল হলেন সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ, পুরুষোত্তম পরমপিতা একমেবাদ্বিতীয়ম জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এ মানা আর না-মানা, গ্রহণ ও বর্জন ব্যক্তিগত। তবে শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা অনুযায়ী জানা আর মানা দুই ভাই। জানতে গেলে মানতে হবে আর মানতে গেলে জানতে হবে। জানার পথ ধ'রে গেলে অবশেষে মানা আসে। আর, মানার পথ দিয়ে গেলে জানা আসে। লক্ষ্যে পৌঁছোতে গেলে যে কোনও একটা পথ ধ'রে যেতে হবে। নতুবা সব বকোয়াস। তাই তর্ক নিষ্প্রয়োজন।
তবে যেটা বলবার জন্য এই লেখা তা হ'লো, আজকের মহা অষ্টমীর এই পূণ্য দিনে নবমী আসার আগে মায়ের কাছে যা চাইবেন অকপট হৃদয়ে চেয়ে নিন। মা আজ কল্পতরু। কাল বাদে পরশু পরমপিতা আসবেন মাকে নিয়ে যেতে। তাই মাকে নিয়ে যাবার আগে ভগ্ন হৃদয়ে মায়ের কাছে নিবেদিত সব প্রার্থনা পূরণ ক'রে দিয়ে যাবেন। আজ মায়ের কাছে যা চাইবেন তা পরমপিতা পূর্ণ করে দেবেন। মায়ের কাছ থেকে আজ কেউ খালি হাতে ফিরে যাবে না। আজ পরমপিতা অবশ, বিহ্বল। মা ছাড়া পরমপিতা অসম্পূর্ণ। মা রূপে পরমপিতা আসেন আমাদের মনোবাসনা পূরণ করার জন্য। পরমপিতাই পরমমাতা। পরমমাতাকে অঞ্জলি দেওয়া মানেই পরমপিতার চরণে অঞ্জলি। আর তখন যদি পরমপিতাকে ভুলে যায় গুরুভাইবোনেরা তখন প্রার্থনা পূরণ হয় না।
আর সবচেয়ে মূল কথা, আজ মনে কোনোরকম কারও প্রতি দ্রোহভাব রাখবেন না অর্থাৎ কারও অনিষ্টাচরণ, অপকার; শত্রুতা, কলহ, বিরুদ্ধতা; পরাভব, কারও সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসা ইত্যাদি পরমপিতার অপছন্দ কোনও কাজ করবেন না, মনে ঠাঁই দেবেন না। অকপট, পবিত্র হৃদয়ে, সরল নির্মল মনে মায়ের কাছে আজকের এই মহাষ্টমীর পূণ্য দিনে প্রার্থনা করুন। যা প্রার্থনা করবেন তাই পাবেন। তবে শর্ত একটাই, একদিনের জন্য হ'লেও হৃদয়ে মনে পবিত্র হ'ন, নির্মল হ'ন। অলমিতি বিস্তারেণ।
সবাই ভালো থাকুন, বিন্দাস থাকুন, আনন্দে থাকুন, পুজো এনজয় করুন।
No comments:
Post a Comment