পোষ্টের বিষয় হ'লো "এড়িয়ে যাবেন না, এক মুহূর্তেই ভাগ্য পরিবর্তন"। একটা মৃতদেহের ছবি (সম্ভবত)। বুকের মাঝখানটা অদ্ভুত রকমের। এই ছবি দেখে এড়িয়ে গেলে ভালো হবে না। আর এড়িয়ে না গিয়ে লাইক সাইন বা শেয়ার করলে একমুহূর্তেই ভাগ্য পরিবর্তন হবে। এরকম নানা দেবদেবী নিয়ে পোষ্ট আছে। আছে নানা অলৌকিক কর্মকান্ডের ক্যাপশান। এইসব পোষ্টে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লাইক বা লাভ সাইন পড়ে আর কমেন্ট থাকে 'জয় মা, জয় বাবা' ইত্যাদি। আর একদিনে কয়েক ঘন্টায় বা কিছু সময় পড়ে সবাই লাখোপতি বা ক্রোড়পতি হ'য়ে যায়।
যাই হ'ক এসব নিয়ে আমি যদিও মাথা ঘামায় না; তথাপি আমাকে মাথা ঘামাতে হ'লো। আর মাথা ঘামাতে হ'লো নবমীতে। কারণ এসব পোষ্ট সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে তৈরী পেজে পোষ্ট করে ও পোষ্ট করতে অন্যকে এলাও করে। এডমিনরা পোষ্টদাতাদের কুসংস্কারাছন্ন ঠাকুর দর্শন পরিপন্থী বিষয়কে পোষ্ট করতে সানন্দে ছাড় দেয়।
নবমীর সকালে দেখা এই পোষ্ট 'এক মুহূর্তেই ভাগ্য পরিবর্তন' বিষয় সম্পর্কে গুরুভাইবোনেদের সচেতন ও সতর্ক করতে নবমীর নিবেদন হিসেবে ল্যাপটপে আঙ্গুল রাখলাম।
আমার প্রশ্ন সৎসঙ্গীদের কাছে ''এক মুহূর্তেই ভাগ্য পরিবর্তন' হয়ে গেলে তাহ'লে আর শ্রীশ্রীঠাকুরকে জীবনে কি দরকার? কি দরকার ছিল তাঁর দীক্ষা নেবার? কি দরকার তাঁর ইষ্টভৃতি করার? কি দরকার তাঁর 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' পাঠ করার? কি দরকার সকাল বিকাল প্রার্থনা করার? কি দরকার সৎসঙ্গে যাওয়ার আর বাড়িতেই বা কি দরকার সৎসঙ্গ দেওয়ার? সৎসঙ্গ তো শনি সত্যনারায়ণ পুজো বা কীর্তন পার্টি ডেকে হরি নাম সংকীর্তন করানো নয়; তাই না? অবশ্য যারা নাম কা ওয়াস্তে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ধরেছে তাদের কাছে শনি, সত্যনারায়ন পুজো কি অন্যান্য পুজো আর খোল করতাল নিয়ে হরি নাম সংকীর্তন করা ছাড়া 'সৎসঙ্গ' আলাদা কোনও মাহাত্ম্য রাখে না। আর কিই বা দরকার শ্রীশ্রীঠাকুরের নামে পেজ খুলে সংস্কার আর কুসংস্কারকে মিক্স ক'রে সৎসঙ্গীদের মাঝে পেশ করার আর তাদের দুর্বল, ভীরু, কুসংস্কারাছন্ন শরীর-মন-আত্মাকে আরও দূর্বল, আরও ভীরু ও কুসংস্কারাচন্ন ক'রে তোলার?? যদি এসব এক মুহূর্তেই ভাগ্য পরিবর্তন করার সহজ সস্তা তুক থেকে থাকে তাহ'লে কি দরকার এই পেজে এসব পোষ্ট করার? সরাসরি 'এক মুহূর্তেই ভাগ্য পরিবর্তন' এই নামে পেজ খুলে এসব অলৌকিক উপায়ে কার্যসিদ্ধির প্রচার করলেই তো হয়; তাই নাকি? শ্রীশ্রীঠাকুরের নামে পেজের সাহারা নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের বদনাম করার কি আছে? শ্রীশ্রীঠাকুর কি এসব সমর্থন করতেন? কেন সৎসঙ্গী হ'য়ে ঠাকুর বিরোধী কার্যকলাপ? কেন সৎসঙ্গীদের শ্রীশ্রীঠাকুরের আদর্শ, দর্শন থেকে সরিয়ে কুসংস্কারের দিকে আরও ঠেলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন? কে দিয়েছে এই দায়িত্ব? কে দিয়েছে এই অধিকার? কে দিয়েছে এই সমস্ত বালখিল্য আজব গাঁজাখুরি বটতলার পর্ণগ্রাফির মতো নীচ ধারণা সৎসঙ্গীদের ইঞ্জেক্ট করার লাইসেন্স? নবমীর পূণ্য সকালেই সৎসঙ্গীদের সাবধান ক'রে দিয়ে বলছি পরমপিতার ধৈর্য ও সহ্য শক্তির পরীক্ষা নেবেন না। দয়ালের ভয়াল রূপ কি ভয়ংকর মর্মান্তিক তা জানা নেই তাই; আর জানা নেই ব'লে দয়ালের ভয়াল রূপের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে তাও নয়। বিচার নিশ্চিত। সাধু সাবধান! সাজা সৎসঙ্গী সাবধান।
যাই হ'ক, আমার গুরুভাইবোনেরা আজ মায়ের শেষ দিন। পরমপিতা দয়াল আমার রওনা দিয়েছেন মাকে নিয়ে যেতে। আসুন একবার দয়ালের প্রতি তিল মাত্র বিশ্বাসও যদি থাকে সেই তিলমাত্র বিশ্বাসে গভীর বিশ্বাস, ভরসা রেখে যেন সেই তিল পরিমাণ বিশ্বাসে একটুও আঁশের মতো কোনও সন্দেহ না থাকে, না থাকে সেই বিশ্বাসের প্রতি অহংকার, অধৈর্য্য, অবহেলা, অনাগ্রহ, অলসতা, অক্রিয়তা ও বিরক্তি বরং আপ্রাণতার সঙ্গে নির্মল ভালোবাসায় সরলতাপূর্ণ হৃদয়ে আজ নবমীর সারাদিনে একবার যে কোনও সময়ে নিরালায় নিভৃতে দয়ালের সামনে বসুন আর বলুন, হে দয়াল তুমি যেও না চলে, তুমি আমার ঘরে থাকো, বিশেষভাবে আমার ঘর তোমার উপস্থিতিতে আলোময়, রূপময়, মধুময়, রসময় হ'য়ে উঠুক, বিশেষভাবে সৃজন হ'ক অর্থাৎ রচনা হ'ক, সৃষ্টি হ'ক, নির্মাণ হ'ক আমার ঘর, পরিবার ও পরিবারের সবার জীবন। কারণ বিসর্জন মানে পরিত্যাগ নয়, নয় নিক্ষেপ, নয় নিরঞ্জন। বিসর্জন মানে মাকে দয়ালকে বিশেষভাবে সৃজন। আর সেই সৃজন নিজের ও নিজের পরিবারের জীবনে, নিজের ঘরে, নিজের পারিপার্শ্বিকে।
পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে যা শিখেছি, যা জেনেছি, যা বুঝেছি, যা উপলব্ধি করেছি, যে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছি তাই-ই তুলে ধরলাম আপনাদের কাছে যদি আপনাদের একটুও কাজে লাগে, তাঁর দয়ায় ভরে যায় জীবন ও সংসার।
তাই দয়ালের কথা দিয়েই শেষে বলি, "গভীর বিশ্বাসে সবই হ'তে পারে। বিশ্বাস কর, _______সাবধান! অহংকার, অধৈর্য্য ও বিরক্তি না আসে______যা' চাও তাই হবে।" জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment