Powered By Blogger

Sunday, December 31, 2023

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশে শ্রীশ্রীঠাকুরের ফেলে আসা সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা। (প্রথম পর্ব)

গত ১৮ই অক্টোবর'২৩ বুধবার বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদপত্র মুক্ত খবরে প্রকাশিত সাংবাদিক ও গবেষক মোহাম্মদ সেলিম রেজা লিখিত 'পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও অতীত ইতিবৃত্তে হিমায়েতপুর' নামে একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে চোখে পড়লো।

বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদপত্র 'মুক্ত খবরে সাংবাদিক ও গবেষক মোহাম্মদ সেলিম রেজা মানসিক হাসপাতালের জমির পরিমাপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, হাসপাতালের মোট জমি ১৩৩. ২৫ একরের মধ্যে সিংহভাগই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের। ৫০০ শয্যার এই মানসিক হাসপাতাল বাংলাদেশে প্রথম ও উপমহাদেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। তিনি আরও লিখেছেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের রোগীদের নিয়ে এই মানসিক হাসপাতালে ছুটে আসেন কারণ সুস্থতার নিরিখে বহুল প্রচারিত এই হাসপাতালের সুনাম রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে একমাত্র আশা ও ভরসার স্থল।

এই হাসপাতালটি ১৯৫৯ সাল থেকে হিমাইতপুরে শ্রীশ্রীঠাকুর স্থাপিত 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের জমিতে অবস্থিত বিশ্ব বিজ্ঞান কেন্দ্রের একাংশে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে মানসিক রোগের চিকিৎসা হ'য়ে আসছে। কথিত আছে, সেখানে নাকি প্রায় সব রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। এখানে ডাক্তার ও ওয়েলফেয়ার কর্মীদের সুনাম সুবিদিত। এখানকার পরিবেশের কারণে ও দক্ষ, সৎ ও শুভানুধ্যায়ী চিকিৎসকদের সুচিকিৎসায় ও মানবিক আচরণে রোগীরা সুস্থ হ'লেও এই হাসপাতালে এক অলৌকিকত্ব বাতাবরণ এই সুস্থতার প্রধান কারণ হিসেবে সেখানকার জনমানসে গেঁথে আছে। যে অলৌকিকত্ব অচ্ছিন্ন গভীর বিশ্বাসের রজ্জুতে বাঁধা। তারা বলেন, এখানে বিজ্ঞান ও অলৌকিকত্ব একাকার হ'য়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষদের ধারণা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতেই, তাঁর দয়া ও আশীর্বাদেই নাকি মানসিক রোগগ্রস্থ মানুষ সুস্থ হ'য়ে বাড়ি ফিরে যান। যার ফলে এই ছোট্ট দেশ বাংলাদেশের এই 'পাবনা মানসিক হাসপাতাল'-এর উপমহাদেশ জুড়ে এত সুনাম ও প্রচার। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এমনও শোনা গিয়েছে, অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতে মানসিক হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে রাতের বেলা সাদা কাপড় পরিহিত দীর্ঘ এক অবয়বকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস শ্রীশ্রীঠাকুর এখনও সেখানে অবস্থান করেন এবং তাঁর সূক্ষ্ম শরীরের উপস্থিতির কারণে ও তাঁর অজচ্ছল দয়ায় রোগীরা এখানে সুস্থ হ'য়ে ওঠে। তাই এই বাংলাদেশে অবস্থিত মানসিক হাসপাতালের সুনাম উপমহাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
এইসব কথা সত্যি মিথ্যা নিয়ে বিতর্ক হ'তে পারে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন উঠতে পারে। কুসংস্কারের প্রচার আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের হিমাইতপুর ও বর্তমান ভারতের ঝাড়খন্ডের দেওঘরে অবস্থানকালে অবিভক্ত ভারত ও বহির্বিশ্বের প্রথিতযশা, প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিবান, বিচক্ষণ যত মানুষ তাঁর কাছে ছুটে ছুটে গেছেন, তাঁর সঙ্গ করেছেন, যারা তাঁর লীলাসঙ্গী, তাঁর দীর্ঘ ৮১বছর জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁর বহু অনালোকিত অনালোচিত অলৌকিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, সাক্ষী ছিলেন তাঁর অতিমানবিক ও অতিমানুষিক সত্তার তাঁরা জানেন তাঁর অলৌকিক সত্তার অস্তিত্বের সত্যতা ও রহস্য। আর সবার কাছে যা অলৌকিক শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে তা লৌকিক। শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন, অলৌকিক ব'লে কিছু নেই। যতক্ষণ তুমি কার্যকারণ জানতে পারছো না ততক্ষণ তা অলৌকিক। আর যখন কারণ হাতের মুঠোয় এসে যায় তখন তা হ'য়ে যায় লৌকিক। তাই পাবনা মানসিক হাসপাতালে শ্রীশ্রীঠাকুরের উপস্থিতি ও মানসিক রোগীর দ্রুত সুস্থ হ'য়ে ওঠাকে কেন্দ্র ক'রে যে অলৌকিক কাহিনী মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর পিছনে যে সত্য বা বিজ্ঞান রয়েছে সেই বিজ্ঞান যখন মানুষের করায়ত্ত হ'য়ে যায় তখন তা অলৌকিক থেকে লৌকিক হ'য়ে যায়। এই পাবনা মানসিক হাসপাতালে শ্রীশ্রীঠাকুরের উপস্থিতির যে বিজ্ঞান সেই বিজ্ঞান সংক্ষেপে বলতে পারি তিনি সর্বব্যাপী অর্থাৎ Omnipresent (present everywhere at the same time), একই সঙ্গে সব জায়গায় তিনি অবস্থান করেন যে রূপে তাকে কারণ দেহ বলে যা শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাষায় Ecto-plasmic body. যা একজন দু'জন না সবাই মিলে বোধ করার জন্য তিনি Instrument আবিস্কারের কথা বলেছিলেন সবাইকে বারেবারে।
এছাড়া শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মভুমি, তাঁর মাতৃভুমি, পিতৃভুমি এবং তাঁর শৈশব, যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের দিনগুলি যেখানে কাটিয়েছেন সেই স্থানের সঙ্গে বিচ্ছেদ আমৃত্যু তাঁকে যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত করেছিল। তিনি বারবার তাঁর পুরোনো জায়গায় ফিরে যেতে চাইতেন। মাঝে মাঝে তিনি গভীর মৌনতায় ডুবে যেতেন, হারিয়ে যেতেন কোন অজানায়। তখন তাঁকে দেখে মনে হ'তো তাঁর শরীর এখানে থাকলেও তিনি অন্য কোনওখানে। তিনি যে মাঝে মাঝে শরীর থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও বিচরণ করতেন আবার ফিরে আসতেন নিজের শরীরে সে কথা তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আগত মানুষের কাছে বলেছেন। এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় তিনি যে বারবার তাঁর পুরোনো জায়গায় যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, যেখানে তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব কেটেছে সেই স্মৃতি বিজড়িত স্থানে তিনি ফিরে যেতে চাইতেন সেই স্থানে সেই পাবনা মানসিক হাসপাতলে তাঁর সূক্ষ্ম শরীরের বা ভাব দেহের উপস্থিতির কেন এমন রহস্যময় কথা প্রচলিত আছে বা হয়েছে তা বোঝা যায়। অবশ্য বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার।

যাই হ'ক এইসমস্ত থ্রেকে বোঝা যায় পাবনা মানসিক হাসপাতালে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে, তাঁর সূক্ষ্ম শরীরের উপস্থিতি সম্পর্কে যে রূপকথার জগত গড়ে উঠেছে তা সর্ব্বৈব সত্য। এ ব্যাপার সম্পূর্ণই উপলব্ধির ব্যাপার। এ সব আমাদের মতো সাধারণ ভাঙ্গাচোরা লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষের কাছে গা ছমছম করা ভুতের উপস্থিতি আর সমস্ত কারণের কারণ পরম কারুণিকের কাছে তা বিজ্ঞানের বিজ্ঞান পরমবিজ্ঞান।
ক্রমশ। ( এর পরে দ্বিতীয় পর্ব)
( লেখা ২৭শে অক্টোবর'২০২৩)

No comments:

Post a Comment