প্রায় সময়ই দেখি স্ত্রীর স্বামীর প্রতি মনোভাব কেমন হবে তা' নিয়ে নানারকম লেখা প্রকাশ হ'তে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে লেখাগুলি প্রকাশ হয়। লেখাগুলি অনেক সময় একতরফা হওয়ার কারণে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে অদীক্ষিত ও দীক্ষিতদেরও মাঝখানে ভুল বা অসম্পূর্ণ ধারণার সৃষ্টি হয়।
আর তাছাড়া নারী ও পুরুষের জীবন সম্পর্কে, তাদের উভয়ের প্রতি উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে, সম্পর্ক বা আচরণ কেমন হবে ইত্যাদি সমস্ত বিষয়েই উভয়ের সম্পর্কেই ঠাকুর তাঁর হাজার হাজার বাণী, কথোপকথনের মধ্যে ব'লে গেছেন। আমাদের নারী-পুরুষ উভয়ের উচিত আমি যদি পুরুষ হ'ই কিম্বা নারী হ'ই তাহ'লে আমার সম্পর্কে ঠাকুর কি বলেছেন সেটা আগে জানা ও সেইভাবেই আগে হাতে কলমে ক'রে সেইরকম হ'য়ে ওঠা। নারীর সম্পর্কে কি ব'লে গেছেন ঠাকুর সেটা আমাদের দেখার বা বলার আগে আমি পুরুষ আমার সম্পর্কে তিনি কি বলেছেন সেটা আগে জানা, বোঝা ও করা; তারপর আমি সেইরকম হ'য়ে ওঠার পরে যদি সময় থাকে তারপরে নাহয় নারীর কেমন হ'য়ে ওঠা উচিত সে সম্পর্কে বলা যেতে পারে। আর এটা নারীর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। কিন্তু দেখা যায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই তা লেখার ক্ষেত্রেই হ'ক আর যাজনের জন্য বলার ক্ষেত্রেই হ'ক নারীর হ'য়ে ওঠা, পুরুষের প্রতি নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পুরুষ বক্তব্য রাখে কিম্বা ঠাকুর পুরুষের প্রতি নারীর আচরণ, ব্যবহার, সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদির ক্ষেত্রে কি বলেছেন সে সম্পর্কে বাণী তুলে ধরার প্রবণতা পুরুষের প্রায়শঃই লক্ষ্য করা যায়। তাই কথায় আছে, 'আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়'। আলোচনা যেন এমন জায়গায় না যায়, এমন একতরফা না হয় যাতে মানুষ ঠাকুর সম্পর্কে অহেতুক ভুল ধারণার বশবর্তী হয়। তাই আগে পুরুষের উচিত পুরুষের ধর্ম কি, পুরুষের সম্পর্কে ঠাকুর কি বলেছেন তাই জানা আর নারীর উচিত নারীর ধর্ম কি, নারীর সম্পর্কে ঠাকুর কি বলেছেন তা' জানা আর জানার পরেই উভয়ের তা' আচরণ সিদ্ধ হ'য়ে ওঠার প্রয়োজন, নচেৎ সেগুড়ে বালি।
এটা যেন আমরা ভুলে না যায় ঠাকুরের যত সব বাণী সব আমার জন্য। একবার ঠাকুর তৎকালীন সমস্ত প্রধান প্রধান ভক্ত মন্ডলীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁর এই হাজার হাজার বাণী কার জন্য? তখন সবাই বলেছিলেন এইসব হাজার হাজার বাণী, ছড়া, কথোপকথন সব দেশবাসীর জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য, মানবজাতির জন্য। ঠাকুর এই কথায় খুশী হননি। তখন তিনি তাঁর আদরের বড় খোকা আমাদের সকলের প্রাণাধিক প্রিয় শ্রীশ্রীবড়দাকে ডেকে বলেছিলেন, বড় খোকা এরা কি কয়? তখন শ্রীশ্রীবড়দা বলেছিলেন, কি বাবা? ঠাকুর বলেছিলেন, আমি নাকি হাজার হাজার বাণী দিয়েছি এই সব বাণী কার জন্য? তখন এ যুগের হনূমান পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দা হাঁটু গেড়ে হাতজোড় ক'রে বলেছিলেন, এই সব বাণী আমার জন্য। এই কথা শুনে ঠাকুর উল্লাসে আনন্দের আতিশয্যে উল্লসিত হ'য়ে উঠে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ঐ দ্যাখেন! দ্যাখেন! শোনেন! বড়খোকা কি কয়? বড়খোকা কি কয়?
তাই আবার বলি, (কারো কারো মতে) স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কে যদি স্বামী গুরুর আসনই নিয়ে থাকে আর স্ত্রী যদি শিষ্যার আসনের অধিকারী হয় তাহ'লে আগে গুরুকে প্রমাণ করতে হবে সে গুরু হবার উপযুক্ত কিনা; তবেই শিষ্যার কাছে তার গুরুগিরির গুরুত্ব পায় নতুবা তার গুরুগিরির অধিকারই নেই আর কাউকে শিষ্যা করা তো দূরের কথা তার কোনও অধিকারই নেই কাউকে শিষ্যা হিসাবে ভাবার। স্বামী বা গুরুকে এটা মাথায় রাখতে হবে, স্ত্রী যদি তার শিষ্যা হয় তাহ'লে সেই শিষ্যাই একাধারে আবার তার গুরু বা মাতা। নতুবা এসব কথার কোনও মূল্য নেই। এখানে একতরফা বা পক্ষপাতিত্বের কোনও প্রশ্ন নেই। এই জ্ঞান বা বোধ যার নেই সেই স্বামী যেন গুরুগিরি করার কথা স্বপ্নেও না ভাবে। স্বামীস্ত্রী উভয়কেই মনে রাখতে হবে কেউ কারও থেকে ছোটও নয়, বড়ও নয়। উভয়েই নিজের নিজের ক্ষেত্রে মহান। উভয়েই পরমপিতার সন্তান। উভয়েই ঈশ্বরের রূপ। ঈশ্বরের অর্ধনারীশ্বর রুপের কথা যেন আমরা অন্তত ধার্মিকরা (?) ভুলে না যায়। উভয়েই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার ক'রে রয়েছে। নারী যদি তার মাতৃত্বকে সার্থক করতে চায় তাহ'লে যেমন তাকে স্বামীতে গুরুত্ব আরোপ করতেই হবে ঠিক তেমনি একইরকমভাবে স্বামী যদি তার পিতৃত্বকে সার্থক করতে চায় তাহ'লে তাকেও তার স্ত্রীতে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সৃষ্টির বুকে একতরফা একার জ্বলজ্বল ক'রে জ্বলার কোনও জায়গায় নেই। মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব লাভের ক্ষেত্রে কখনোই স্বামী যেন না ভাবে আমার গুরুত্ব স্ত্রীর চেয়ে বেশী বা কখনোই কোনও স্ত্রী যেন না ভাবে আমার গুরুত্ব স্বামীর চেয়ে বেশী। সুসন্তান লাভের জন্য, বায়োলজিক্যালি নিখুঁত সন্তান জন্ম লাভের জন্য নারীপুরুষ দুজনেরই ভুমিকা অসীম ও সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্ত্রী যেমন পোষণ দেবে স্বামীকে, ঠিক তেমনি স্বামীর ক্ষেত্রেও একইরকম ফর্মুলা। স্বামী ঠিক তেমনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে স্ত্রীর প্রতি সাড়া দেবে, স্ত্রীকে পোষণ দেবে। ঠাকুরের একটা বাণী আছে যার অর্থ, সীতা বা সতীর মত যদি বউ পেতে চাও, তাহ'লে রাম বা শিবের মত হও। জয়গুরু।
( লেখা ২রা ডিসেম্বর'২০১৭_
No comments:
Post a Comment