Powered By Blogger

Monday, November 21, 2022

প্রবন্ধঃ ছাত্র আন্দোলন ( Degree is not the measurement---------)

 Degree is not the measurement of human being based on education.

রাজীব শীল কৌশিক এই বিষয় আমার কাছে তুলে ধ'রে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিতে জানতে চেয়েছিল আমার মতামত। ইতিমধ্যে জে. এন. ইউনিভার্সিটিতে শুরু হ'য়ে যায় ছাত্র আন্দোলন। কিছুদিন আগেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হ'য়েছিল। এই নিয়ে অনেক বাকবিতণ্ডা হয়। আমিও আমার বক্তব্য সেদিন রেখেছিলাম। রেখেছিলাম আমার যা মনে হয়েছিল তার উপর ভিত্তি ক'রে। এইবারও জে. এন. ইউ-তে ফিস কমানো ও নানা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। আন্দোলন বিতর্কের জন্ম দেয়। ছাত্র আন্দোলনকারীরা কি শৃঙ্খলিত ও যুক্তিসংগত আন্দোলন করেছিল? কেন এত বিতর্কের জন্ম হয়? কেন আন্দোলন কুৎসা ও অসভ্যতার শিকার হয়?
যাই হ'ক, জে. এন. ইউ নিয়ে আলোচনা শুরু করার আগে একটু পিছন ফিরে দেখা যাক বিগত দিনগুলোতে দেশ তথা রাজ্য জুড়ে ছাত্র আন্দোলনের ঝলক!
একটা সময় গ্যাছে যখন বাংলার বুকে বিপ্লবের উন্মাদনায় ভেসে গেছিল ছাত্র-যুব সমাজ। তাদের এই হঠকারী বিপ্লবের ভিত্তিভূমি ছিল "শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব আর বিপ্লব আনে মুক্তি।" পরবর্তী সময়ে পরিবর্তনের একটা বিরাট হাওয়া ব'য়ে যায় বাংলার বুকে। বালুর চড়ায় গড়ে ওঠা বালির প্রাসাদের মত কমিউনিষ্টদের মুক্তির প্রাসাদ বাংলার বুকে মুখ থুবড়ে পড়ে। শুধু যে বাংলার বুকে মুখ থুবড়ে পড়েছিল তা নয় গোটা পৃথিবীর বুকে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আর বাংলায় পরিবর্তনের পরে নতুন সরকারের নতুন দর্শনের উপরে ভিত্তি ক'রে স্লোগান উঠেছিল, "শিক্ষা আনে সভ্যতা, সভ্যতা আনে মানবিকতা।"
এই দুইয়ের নিট ফল কি? কমিউনিস্টদের যে দর্শন সেই দর্শন কি মানুষকে মুক্তি দিতে পেরেছিল? বিশ্বের কমিউনিষ্ট শাসনের ইতিহাস কি বলছে? কিসের থেকে মুক্তি? মুক্তির জন্য যে বিপ্লবের ডাক দেওয়া হয়েছিল সেই বিপ্লব কিসের বিপ্লব? কিসের উপর ভিত্তি ক'রে গড়ে উঠেছিল সেই বিপ্লব? দেশ-কাল ভেদে বিপ্লবের সংজ্ঞা কি একই থাকে নাকি পাল্টায়? চীন, রাশিয়ায় বিপ্লব হয়েছিল ব'লে কি আমার দেশেও বিপ্লবের প্রয়োজন ছিল? ছিল বিপ্লবের বাতাবরণ? বিপ্লবের জন্য যে চেতনার কথা বলা হয়েছিল সেই চেতনা কিসের চেতনা? কি চেতনার কথা বলা হয়েছিল? আর চেতনা আসবে যে শিক্ষার উপর দাঁড়িয়ে কি সেই শিক্ষা? কোন শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল?
এই সমস্ত প্রশ্নের উপর কি সেদিন তথাকথিত বিপ্লবীরা চর্চা করেছিলেন? সেদিনের তাত্ত্বিক নেতারা কোন তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন? বিপ্লবের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া ছাত্র-যুব সমাজকে কি সেদিন তারা এইসব প্রশ্নের ব্যাখ্যা করেছিলেন নাকি ব্যাখ্যা করার আদৌ প্রয়োজন মনে করেছিলেন? নাকি কালের ঝোড়ো হাওয়ায় ভেসে গেছিলেন ও ভাসিয়ে দিয়েছিলেন কচি কচি মাথাগুলিকে? সেদিন তাদের অতি উর্বর মস্তিষ্কে এইসব প্রশ্ন আসেইনি!? কেন আসেনি?
ঠিক তেমনি সেদিনের ছাত্র-যুব সমাজ কি তাদের বিপ্লবী নেতা বা শিক্ষকদের কাছে এই প্রশ্নগুলি উত্থাপন করেছিল নাকি যৌবনের উন্মাদনায় ব'য়ে যাওয়া হঠকারী সমাজ কো বদল ডালোর স্রোতে ভেসে গিয়েছিল জীবন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে? আর যার ফলে মাথাতেই আসেনি যে এইসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তথাকথিত নেতা বা শিক্ষকদের কাছে উত্থাপন করার দরকার। কেন মাথায় আসেনি?
সেদিনের তাত্ত্বিক নেতা বা শিক্ষকরা কি নিজেরাই অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ ছিল নাকি ইচ্ছে করেই যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করেছিল? কোনটা? যদি অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ ছিলেন তবে কেন ছিলেন? আর যদি বিপথে চালিত ক'রে থাকেন তো কেন করেছিলন? কিসের স্বার্থে? এতগুলি ব্রেন হত্যা, দেশের সম্পদ নষ্ট করার দায় কি তারা নেবেন?
আর, নিজের জীবন-যৌবন নষ্ট করার জন্য যুব সমাজ কাকে দায়ী করবে? নিজেদের কি কোন নিজের জীবন-যৌবন সম্পর্কে দায়-দায়িত্ব ছিল না? অন্যের কথায় আমাকে বোধবুদ্ধি হারিয়ে দৌঁড়তে হবে অন্ধের মতন? এগুলি কেন হয়? কেন আমাদের যে যা শোনায়, বোঝায় আমরা তাই শুনি, তাই বুঝি? কেন বুঝে দেখি না বা বোঝার চেষ্টা করি না যা আমাদের বোঝানো হচ্ছে বা শেখানো হচ্ছে তা ঠিক না বেঠিক, যৌক্তিক না অযৌক্তিক? এই অজ্ঞতার কারণ কি? কেন যৌবন বারবার বিগত যৌবনের অধিকারীর শিকার হয়?
আর দীর্ঘ কমিউনিস্ট শাসনের পর বাংলার বুকে যে দর্শন নতুন সূর্যের মত উদিত হয়েছিল সেই দর্শন "শিক্ষা আনে সভ্যতা, সভ্যতা আনে মানবিকতা" কি বাংলার শিক্ষিত মানুষকে দর্শনের অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝাতে পেরেছে? এখানে কোন শিক্ষার কথা বলা হয়েছে? বলা হয়েছে কোন সভ্যতার কথা যে সভ্যতা মানবিকতার জন্ম দেবে?
আমরা যদি বিগত দিনগুলির কথা আলোচনা করি, করি বিচার-বিশ্লেষণ তাহ'লে কি দেখতে পাবো? কমিউনিস্ট দেশগুলোতে কি শিক্ষা মানুষের মধ্যে চেতনা আনতে পেরেছে? পেরেছে সেইসব দেশের মানুষদের মধ্যে চেতনা জাগ্রত ক'রে প্রকৃত বিপ্লব ঘটাতে? মানুষের কি মুক্তি ঘটেছে? কিসের থেকে মুক্তি? অত্যাচারিত শাসকের শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তি? শাসক পাল্টেছে, পাল্টেছে শাসন-শোষণের রূপ কিন্তু শাসন-শোষণ কি পাল্টেছে? ঘটেছে কি মুক্তি?
ঠিক তেমনি, আমার বাংলার বুকে কি ৩৪ বছর শাসনে মানুষের মনে, চরিত্রে, জীবন যাপনে কোনও শিক্ষা, চেতনা, বিপ্লব ও মুক্তির ছবি ফুটে উঠেছিল বা উঠেছে? কিংবা বাম শাসনের পরবর্তী ডান শাসিত রাজ্যে ফুটে উঠেছে কি পরবর্তী দর্শন 'শিক্ষা, সভ্যতা ও মানবিকতা'র রূপ বাংলার ১০ কোটি মানুষের মধ্যে?
এখন এর উত্তর কি? উত্তর কমবেশী সবারই জানা। রাজ্য তথা দেশ তথা বিশ্বের বর্তমান সমগ্র পরিস্থিতি ও পরিবেশ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এর স্পষ্ট উত্তর।
যারাই শিক্ষা, চেতনা, বিপ্লব, মুক্তি, সভ্যতা ও মানবিকতা নিয়ে কথা বলে বা প্রশ্ন তোলে তারা ভালোমতোই জানে এর গলদ কোথায় আর কোথায় বা এর অসম্পূর্ণতা। আর না জানলে তাদের জানাতে গেলে তারা নিজেরাই যে না মানার শিক্ষায় শিক্ষিত সেটা পরিষ্কার হ'য়ে যায়। জানতে নাই পারে কিন্তু জানার ইচ্ছা বা চেষ্টা যাদের নেই তাদের কাছে 'না-মানা'-র শিক্ষাটাই স্বাভাবিক এবং তা জন্মগত।
আমি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিতে এর ব্যাখ্যায় বলতে পারি, এই যে গলদ বা অসম্পূর্ণতা সে সম্পর্কে বলতে পারি, ঠাকুর বললেন,
"দীক্ষা নিয়ে শিক্ষা ধরিস আচার্যকে ক'রে সার
আচরণই বোধ চয়নে জ্ঞানের সাগর হও না পার"।
যেখানে রাষ্ট্রনেতাদের জীবন দর্শন শুরু হচ্ছে শিক্ষা দিয়ে, আর শিক্ষা দিয়েই শুরু হচ্ছে চেতনা, বিপ্লব, মুক্তি, সভ্যতা ও মানবিকতার পথে জীবনের উত্তরণ সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর স্পষ্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন দীক্ষার প্রয়োজনীয়তা। দীক্ষা শব্দ যেহেতু ধর্ম আঙিনার পেটেন্ট শব্দ সেইহেতু রাষ্ট্রনেতাদের কাছে দেশ গঠন ও জীবন গঠনের জন্য দীক্ষা শব্দের কোন মূল্য নেই, নেই কোনও গ্রহণযোগ্যতা। যেমন নেই তাদের মতে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক।
এখন দ্রষ্টাপুরুষ যা দেখেন তাই-ই বলেন। তিনি স্বয়ং স্রষ্টা। তাঁর সৃষ্টির মধ্যে স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচা-বাড়ার জন্য তিনি যে পথের উপর দিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে আসা জীবনকে হাঁটতে বলেন, করণীয় কাজ শেষ করতে বলেন সেই আদেশ বা নির্দেশ প্রতিটি জীবন মেনে নিতেও পারে আবার নাও পারে। গ্রহণ-বর্জন ব্যক্তিগত। কিন্তু সত্য চিরকালই সত্য আর সত্যকে স্বীকার না করা ও না মানার অর্থ মিথ্যেকে আমন্ত্রণ ও আলিঙ্গন আর তার ফল স্বরূপ ধ্বংস অনিবার্য। এর দায় সম্পূর্ণ শিক্ষা-ধর্ম-রাজনীতির মাথায় যারা বসে আছেন, রাজত্ব করছেন, ছড়ি ঘোরাচ্ছেন সমাজ, দেশ শাসনের নামে, পরিচালনার নামে, তাদের।
কিন্তু দীক্ষা শব্দের অর্থ দক্ষতা অর্জন ও দক্ষতা অর্জনের তুক লাভ। একজন দ্রষ্টা পুরুষের নিখুঁত আচরণ আমাদের ক'রে-করিয়ে আচরণ সিদ্ধ করে তোলে, চরিত্রে গেঁথে দেয়। পৃথিবীতে কেউ নিখুঁত নয় একমাত্র দ্রষ্টাপুরুষ পুরুষোত্তম ছাড়া। তাঁর কাছ থেকে জীবনে দক্ষতা লাভের তুক জেনে নিতে হয়। একমাত্র তাঁর কাছেই থাকে সমস্ত সমস্যা সমাধানের ক্লু! আর এই সত্য অহংকারী জ্ঞানী পন্ডিত মেনে নিতে পারে না। মদগর্বে গর্বিত লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষ সেই দ্রষ্টাপুরুষ, সমস্ত সমস্যার সমাধানকারী পুরুষ সেই পুরুষোত্তমকে জীবনের কেন্দ্রে বসাতে পারে না। পুরুষোত্তমের কাছে দক্ষতা লাভের তুক জেনে নেবার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হ'তে, তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করতে তাদের ইগোতে বাধে; তারা দীক্ষা নিতে পারে না। দীক্ষা শব্দটাই লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষের কাছে এলার্জি।
কিন্তু সত্যকে মানুষ মানুক আর নাই মানুক সত্য চিরদিনই সত্য আর দীক্ষা ছাড়া কোনোদিনই কোনোকালে শিক্ষা লাভ সম্ভব হয়নি, হয় না, আর সম্ভব নয় আর দীক্ষা হীন যে শিক্ষা লাভ সেই শিক্ষার মধ্যে দিয়ে চেতনা কোনোদিনই জাগ্রত হবে না। আর চেতনাহীন জীবন মৃত্যুর সমতুল্য।
যাই হ'ক দীক্ষা লাভের পর শিক্ষার আঙিনায় সেই আচার্যের আচরণ সিদ্ধ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের বোধকে জাগ্রত করে, বুদ্ধির দরজা খুলে দেয়, জ্ঞান লাভ হ'তে থাকে। আচার্যের সংস্পর্শে ধীরে ধীরে জ্ঞান লাভের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় চেতনা লাভের অনুশীলন! চেতনা অর্থাৎ হুঁশ, অনুভূতি, জেগে ওঠে ধীরে ধীরে আর শুরু হয় বিপ্লবের মন্থন। তারপর আসে মুক্তি। কিসের মুক্তি? কোথা থেকে মুক্তি? প্রশ্ন হচ্ছে বিপ্লবটাই বা কিসের?
এই যে শিক্ষা গ্রহণ দিয়ে শুরু হচ্ছে জীবন যুদ্ধ, এগিয়ে চলেছে জীবন চেতনা লাভের পথে, এই শিক্ষা কি? স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী লাভের শিক্ষা?
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সমাজ, দেশকে কি দিচ্ছে আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি। সাধারণ ছাত্রদের কথা ছেড়ে দিলাম, লাস্ট বেঞ্চের ছাত্রদের কথা ছেড়ে দিলাম, ফেল করা, ফাঁকি দিয়ে জীবন কাটানো ছাত্রদের কথা বাদ দিলাম, টুকলি ক'রে পাশ করা ছাত্রদের কথা ছেড়ে দিলাম কিন্তু যারা দেশের সেরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ করা স্কলার ছাত্র সমাজ তাদের কাছ থেকে কি পাচ্ছে সমাজ, দেশ? সম্প্রতি আন্দোলনের নামে দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জে. এন. ইউনিভার্সিটিতে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? আর তাদের সমর্থনে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠিত মানুষ গলা ফাটাচ্ছেন তাঁরা শিক্ষিত মানুষ নাকি লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষ? এই প্রশ্নের উত্তর কি?
সাধারণ মানুষ, ভাঙাচোরা মানুষ খুব বেশি তত্ত্ব কথার কচকচি বোঝে না। তারা তাৎক্ষণিক শিক্ষা-ধর্ম-রাজনীতি জগতের নেতারা যা বোঝায় তা বোঝে পরমুহূর্তে আবার বোঝা ঘুরে যায়। এই সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষের মধ্যে ছাত্র সমাজও আছে। কিন্তু যারা লেখাপড়া জানাওয়ালা মানুষ তারা যে সব বোঝে তা নয় তবে ইচ্ছে করলে তারা বুঝতে পারে কিন্তু অহংকার তাদের নত হ'তে দেয় না। কিন্তু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে আর তা কম।
এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন,
শিক্ষার মূল কথা:
"With every emphasis (সমস্ত জোর দিয়ে), With every urge (সমস্ত আকুতি দিয়ে), With every attitude ( সমস্ত ভাব নিয়ে), With every expression ( সমস্ত অভিব্যক্তি দিয়ে) বাঞ্ছিতপ্রাণতা effulge (প্রোজ্জ্বল) ক'রে দেওয়াই education-এর মূল।"
"ফলকথা, লেখাপড়াটা শিক্ষার একটা গৌণ জিনিস। মুখ্য জিনিস হ'লো অভ্যাস, ব্যবহার, ঝোঁক, নিষ্ঠা, নেশা, প্রত্যয়, চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যানুপাতিক কর্ম্মদক্ষতার স্ফুরণ ও সুনিয়ন্ত্রণ।"
"বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ যা'তে উন্নত-ঝোঁকে পরিপুষ্ট,
তা'কেই বলে আদত শিক্ষা তা' বিনে ও হবেই দুষ্ট।"
"লেখাপড়ায় দড় হ'লেই শিক্ষা তারে কয় না,
অভ্যাস, ব্যাভার সহজ জ্ঞান না হ'লে শিক্ষা হয় না।"
শিক্ষিত লোক: "শিক্ষিত লোক বলতে আমি বুঝি করিৎকর্ম্মা লোক। তাকে যেখানে ছেড়ে দেন, সেখানেই সে অজেয়। সর্বকর্ম্মে সিদ্ধি তার করতলগত। তার জন্য চাই বুদ্ধিমত্তা, অনুসন্ধিৎসা ও ইচ্ছাশক্তির অনুশীলন। প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য-অনুযায়ী প্রত্যেককে নূতন-নূতন পরিস্থিতির মধ্যে নূতন-নূতন দায়িত্বের মধ্যে ফেলে কাজ হাসিল ক'রে আসবার জন্য ক্ষেপিয়ে দিতে হয়। প্রত্যেক ছাত্রের জানা ও অভিজ্ঞতার জগৎ শিক্ষকের নখদর্পনে থাকা চাই।"
শিক্ষার মূলসূত্র: "এমন কাজ দিতে হবে যা'তে সে common sense (সহজ জ্ঞান) -এর সাহায্যে তার জানাগুলি প্রয়োগ ক'রে সেই কাজ করতে পারে। এটা শিক্ষার একটা মূলসূত্র।"
শিক্ষা ও শিক্ষিত লোক সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা বহু বাণী ও কথা তুলে ধরা যেতে পারে। শিক্ষা ও শিক্ষিত লোকের ছবি বা রূপ ফুটে ওঠে তার চিন্তা-ভাবনা, কথাবার্তা, চালচলন, মানসিকতা, আচারব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, রুচি, শরীরী ভাষা, মুখের ভাষা, অঙ্গভঙ্গি, চাউনি, খাওয়া-দাওয়া, কর্মকৌশল ইত্যাদি ইত্যাদি!!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া প্রতিটি বাণী ও কথার মধ্যে তা ফুটে উঠেছে।
এইরকম শিক্ষা যেখানে সেখানে চেতনা অর্থাৎ অনুভূতি, হুঁশ জাগ্রত হয়। আর এইভাবে যখন প্রতিটি মানুষ অনুভূতির শিখরে পৌঁছে যায়, হুঁশ জাগ্রত হয় তখন মানুষের মধ্যে বিবেক জাগ্রত হ'য়ে ওঠে আর যা কিছু মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য মঙ্গলজনক তা বিশ্ব জুড়ে বিশেষভাবে প্লাবনের জন্য শপথ গ্রহণ করে। তখন তাকে বিপ্লব বলি।
এই যে দেশজুড়ে কমিউনিস্টরা বিপ্লবের ডাক দিয়েছিল, কথায় কথায় স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র আন্দোলনের নামে যে বিশৃঙ্খল আচরণ দেখতে পাই তা আমাদের জন্য, সমাজের জন্য অমৃত বর্ষণ করে নাকি বিষ বর্ষণ করে? কি শিখেছে, শিখছে বা শিখবে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ছাত্র-যুব সমাজ সেইসব আন্দোলন বা বিপ্লবের জোয়ার থেকে? সেই আন্দোলন থেকে নির্গত কথাবার্তা, ভাষা, চালচলন, অঙ্গভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ কি বার্তা ব'য়ে নিয়ে আসে? নাকি এইসব উচ্শৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল, অসভ্য, অভদ্র ও অশ্রদ্ধা পূর্ণ দিশাহীন আচরণ, কথাবার্তায় আন্দোলনের ভিত্তিভূমি? কোন শিক্ষা লাভের মধ্যে দিয়ে কোন বিশেষ প্লাবনের পটভূমি রচিত হচ্ছে!? এই বিপ্লবের কথায় কি বলা হয়েছিল বাম-ডান শাসনব্যবস্থার দর্শনে!?
দেশের সব দলের সব ছাত্র সমাজ কি এই ব্যবস্থায় বিশ্বাসী!? জানি না। জানার মত কোনও সম্ভাবনা বা উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ব'লে জানি না।
বিপ্লব সম্পর্কিত প্রশ্নে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন,
"বিপ্লব ভাল, কিন্তু বিপ্লবটা হওয়া চাই অমৃতবর্ষী। বিষ-বিপ্লব ভালো না। অবশ্য for becoming (বৃদ্ধির জন্য) যা', তাকে আমরা বিদ্রোহ বলি না। বিপ্লব মানে, ভাসিয়ে দেওয়া। বাঁচা-বাড়ার অনুকূল ভাবধারায় সারা দেশকে ভাসিয়ে দিতে হবে। তাই বলি অমৃত-বিপ্লবের প্রয়োজন আছে। বিপ্লব চাই, দানা বাঁধানোর কারিগর চাই।"
আমরা দেশজুড়ে যখনই যেখানে কোনও প্রতিবাদ-আন্দোলন সংগঠিত হ'তে দেখি সেখানে দিনের শেষে কি দেখতে পাই? অমৃত না বিষ! কিসের উদ্গীরণ হয়েছে?
ক্রমশ:
( ২২শে নভেম্বর' ২০১৯)

No comments:

Post a Comment