Powered By Blogger

Wednesday, November 23, 2022

অভিজ্ঞতাঃ কৃষ্ণপূজা ও অনুকূলপূজা।

গতকাল ছিল রাস পূর্ণিমা বা রাস যাত্রা উৎসব। এই উৎসব হ'লো পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীকৃষ্ণের স্মরণে হিন্দুদের বিশেষ করে বৈষ্ণব হিন্দুদের একটি বিশেষ আনন্দের উৎসব। রাস পূর্নিমার উৎসবটি দেশ জুড়ে বিশেষ ক'রে মথুরা, বৃন্দাবন, নদীয়া ও নবদ্বীপে বিশেষ আনন্দের সাথে পালন করা হয়।

বর্তমানে এই উৎসব তথা পুজো তথাকথিত মূর্তি পুজা বা পুতুল পুজাতে পরিণত হয়েছে। সারাদিন ধ'রে লোকদেখানো শ্রীকৃষ্ণের চরণপুজায় মগ্ন থাকে তাঁর ভক্তরা। তাঁর গ্রন্থ গীতা পাঠ তো দূরের কথা গীতা গ্রন্থ দর্শন করায় হয়নি আজ পর্যন্ত। গীতা গ্রন্থ আজ শুধু হিন্দুদের মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধের সময় পাঁচটি টাইটেলধারী ব্রাহ্মণকে দান করা প্রথায় এসে দাঁড়িয়েছে। আজ জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম পরমপিতা মূর্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অমূর্ত ভগবান তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর মূর্তি পূজার মতো পূজিত হয় কৃষ্ণমন্তরীদের দ্বারা! আজ থেকে পাঁচ হাজার কি ততোধিক বছর আগে তিনি এসেছিলেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, সংগ্রাম, লড়াই, যুদ্ধ, অপমান, লাঞ্ছনা, জীবনে গৌরবময় উত্থান ও অমানুষিক পরিশ্রম ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ বৈচিত্রময় জীবন। সেইসমস্ত বিশাল দুঃখময় যন্ত্রণাময় সংগ্রামে পরিপূর্ণ জীবনের কথা কৃষ্ণমন্তরী বা কৃষ্ণানুগামীরা খোঁজখবর ও খেয়াল রাখে না এবং রাখার প্রয়োজনও মনে করে না। শুধু তাঁর জন্মকে বা রাসপূর্ণিমাকে কেন্দ্র ক'রে বাড়ীতে বা মাঠেঘাটে পুজোর নামে তিলক সর্ব্বস্ব ফুর্তি, ফুর্তি আর ফুর্তি! ব্যাস! রঙ্গিন ঝলমলে কাপড় দিয়ে জড়ানো নাড়ু হাতে বাল গোপালকে কিম্বা বাঁশি হাতে কৃষ্ণকে ঘরে ঘরে স্থাপনা ক'রে পুজো করার মাধ্যমে তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য শেষ। এতেই কৃষ্ণ আরাধনা শেষ! এর বেশী আর কিছু না।

ঠিক তেমনি ইদানীং একই জিনিস পরিলক্ষিত হয় শ্রীকৃষ্ণের বর্তমান শেষ নবরূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কিছ দীক্ষিতদের মধ্যে। রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের অধিবাস ও পূজার আয়োজন হ'য়ে থাকে অনেক গৃহে। নানারকমের ফল সাজিয়ে, ফুল, তুলসী, বেলপাতা ইত্যাদি দিয়ে, আমপল্লব, সিন্দুর দিয়ে ঘট সাজিয়ে, আলপনা দিয়ে, ধূপ ধুনো ও প্রদীপ জ্বালিয়ে পুরোহিতের মাধ্যমে খুব ধুমধাম ক'রে মন্ত্রোচারণের মধ্যে দিয়ে সারাদিনব্যাপী ভোগ আরতি সহ দূর্গা, কালী, শিব ইত্যাদি মূর্তি পূজার মতো শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পূজা হয়। এই পুজো কেন করা হয়? এই পুজোর কথা কি ঠাকুর ব'লে গেছেন? ঠাকুর কি কোথাও বলেছেন আমার মূর্তি বানিয়ে পূজার সামগ্রী সাজিয়ে ঠাকুরমশাই দিয়ে ধূপধুনো উড়িয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুকূলপূজার মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে তথাকথিত নিষ্ঠাভরে আমার পুজা করবি তোরা? তিনি কি অনুকুলপূজার নিয়ম ও মন্ত্রো তৈরী ক'রে দিয়ে গেছেন? প্রতিবছর নিয়ম ক'রে এই অনুকূলপুজো অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যতদিন কোমরে জোর থাকে ততদিন ধূমধাম ক'রে মূর্তিপুজার মত অনুকূলের মূর্তি পূজা করা হয়। তারপর একদিন প্রথায় পরিণত হ'য়ে দাঁড়াবে এই পূজো। এখন যেমন প্রতিবছর বিশেষ দিনে বারোয়ারী পুজোর মতো ছোটবড় নানা দেবদেবীর পুজা করা হয় সারাবছর ঠিক তেমনি বর্তমানে জন্মাষ্টমীতে, রাসপূর্ণিমাতে বারোয়ারী পুজা হয় শ্রীকৃষ্ণের, তেমনি আগামীতে সৎসঙ্গের পরিবর্তে, তাঁর চলনপূজার মাধ্যমে চরিত্র গঠনের পূজার পরিবর্তে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বারোয়ারী চরণপূজার অনুষ্ঠান দেখতে পাবো আমরা। যার শুরুয়াত আমরা এখনই দেখতে পাই বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ সৎসঙ্গী দ্বারা মদতপুষ্ট গোষ্টিদ্বন্ধে আক্রান্ত যজন, যাজন, ইষ্টভৃতি না করা, স্বস্ত্যুয়নী, সদাচার পালন না করা, প্রার্থনা, নামধ্যানের ধার না ধারা কিছু ব্যক্তি ও চরণপূজায় বিশ্বাসী কিছু সৎসঙ্গী দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠানের মহরাতে।
তাই বুঝি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এবারে ব'লে গেছিলেন, "পথ খুঁজে তুই পথ হারালি অনুষ্ঠানের মহরায়, অনুষ্ঠানই বসলো পেয়ে পাওয়া যে গেল গোল্লায়।"

কথায় আছে, পঞ্চভূতের ফাঁদে ব্রহ্মা পড়ে কাঁদে।"
ঠিক তেমনি, ভক্তকূল মাঝে পরমপিতা কাঁদে।------প্রবি।
( রচনা ৯ই নভেম্বর)

1


 

No comments:

Post a Comment