যুগ যুগ ধ'রে তো ধর্মের নামে দেশে দেশে সব ধর্মে অনেক অধর্ম হ'য়ে আসছে। সভ্যতার নামে অসভ্য আচরণ হ'য়ে আসছে। শিক্ষার নামে কুশিক্ষা হ'য়ে আসছে। খাদ্যের নামে অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে আসছে মানুষ। তাহ'লে সেগুলি কি ঠিক? সেগুলি কে করছে? সেগুলি কি ধর্ম? সেগুলি কি ঈশ্বরের বিধান? সেগুলি কি সমর্থন করি? উত্তর কি এখন? সোজা সরল স্পষ্ট ভাষায় বলতে পারি, করি না। তাহ'লে কি করি? সেই অসভ্য আচরণের, সেই অশিক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, সেই অখাদ্য, কুখাদ্য ত্যাগ করি। সভ্যতাকে, শিক্ষাকে, সুখাদ্যকে গ্রহণ করার জন্য লড়াই করি, অবশেষে গ্রহণ করি। ধর্মের নামে অধর্মীয় আচরণ ক'রে সমাজ সভ্যতাকে যারা বিষাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে, তাদের সেই অধর্মীয় আচরণের বিরুদ্ধে লড়াই করি। অসভ্যতাকে, অশিক্ষাকে, অখাদ্য ও কুখাদ্যকে, অধর্মীয় আচরণকে যদি সমর্থন না করি তাহ'লে হিন্দু ধর্মের মধ্যে যা কিছু খারাপ, যা কিছু মরণীয়, যারা এসবের পৃষ্ঠপোষক, যারা হিন্দুধর্মের নামে অধর্মীয় আচরণ চালিয়ে যাচ্ছে যুগ যুগ ধ'রে তার বিরুদ্ধে লড়াই ক'রে বাঁচাবাড়ার জন্য যা কিছু জীবনীয় তা কেন গ্রহণ করি না? কেন নিজধর্ম ছেড়ে পরধর্ম গ্রহণ করি? কেন নিজবাস ছেড়ে পরবাসে থাকার মত হীনমন্য মনোভাব পোষণ করি? আমার ধর্ম, আমার বাড়ি, আমার পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ত্যাগ ক'রে কেন আমি ভীরু কাপুরুষের মতো পালাবো? হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্ম কার পৈতৃক সম্পত্তি? এ ধর্ম আমার, এ ধর্ম তোমার, এ ধর্ম উচ্চবর্ণের, এ ধর্ম নিম্নবর্ণের, এ ধর্ম সবার। এ ধর্ম বাঁচা বাড়ার। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি সব ধর্মই (মত) বাঁচাবাড়ার ধর্ম। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র খুব সহজ ক'রে ধর্ম সম্বন্ধে বললেন, "বাচঁতে নরের যা যা লাগে, তাই নিয়ে ধর্ম জাগে।" তাহ'লে পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের বাঁচা বাড়ার জন্য (আমি প্রকৃত বাঁচা বাড়া অর্থে বলেছি) যা যা দরকার তাই-ই ধর্ম। আমার বাঁচাকে, আমার বেড়ে ওঠাকে যা যা অর্থাৎ যে খাদ্য, যে নিয়ম, যে অনুশাসন, যে বিধি ক্ষুন্ন করে তা যতই ধর্মের মোড়কে, বিশেষ জ্ঞানের আভিজাত্যে আমার সামনে হাজির হ'ক না কেন তা অধর্ম, অবিজ্ঞান। তাই বাঁচা বাড়ার জন্য যা যা দরকার, আমার বাঁচা বাড়াকে যা যা শক্ত পোক্ত ক'রে ধ'রে রাখে সেই বিধিগুলি পালনে বিভিন্ন মতের সৃষ্টি হয়েছে মাত্র, কিন্তু ধর্ম একই। যেমন জল তৃষ্ণা মেটায়, প্রাণ বাঁচায় তাহ'লে পানি কি ক'রে? ওয়াটার কি করে? ঈশ্বর সৃষ্ট তরল পদার্থের নাম ভৌগোলিক পরিবেশ অনুযায়ী আলাদা আলাদা কিন্তু কাজ একই। আমি আমার হিন্দুমতের মধ্যে বাঁচা বাড়ার জন্য যা যা আছে, আমার বাঁচা বাড়াকে (একটা কথা ব'লে রাখি বাঁচাবাড়া মানে কিন্তু পারিপার্শ্বিক সহ বাঁচা ও বাড়া) যা যা ধ'রে রাখে তা পরিপালন ক'রেও অন্য মতের বাঁচাবাড়ার বিধানকেও আমি জীবনে গ্রহণ করতে পারি। গ্রহণ করতে পারি সেই বিধানের প্রাণপুরুষকে। যে প্রাণপুরুষ হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সব ধর্মের (মতের) একই প্রাণপুরুষ, এক ও অদ্বিতীয় প্রাণপুরুষ। তাই ধর্ম ছাড়া বা ত্যাগ করা এবং অন্য ধর্ম গ্রহণ করা বালখিল্য মনোভাব ও ব্যভিচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর, ধর্মের নামে অত্যাচার? এ সব ধর্মেই (মত) আছে। আর্থিক অবস্থানের উপর এসব নির্ভর ক'রে। হিন্দুধর্মে (মতে) বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সব ক্ষেত্রেই শিক্ষা ও আর্থিক অবস্থা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তথাকথিত ধনী ব্রাহ্মণকে দেখেছি লেখাপড়া না জানাওয়ালা গরীব ব্রাহ্মণকে অপমান করতে, অপদস্ত করতে, এমনকি মারতে! উচ্চবর্ণের ব'লে, ব্রাহ্মণ ব'লে তাঁকে ছেড়ে দেয়নি। আবার ধনী বৈশ্যকে দেখেছি গরীব ব্রাহ্মণকে অপমান করতে। উচ্চবর্ণের গরীব মানুষকে দেখেছি নিম্নবর্ণের ধনী ব্যক্তির কাছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অপমান সহ্য ক'রে মাথা নীচু ক'রে সাহায্য ভিক্ষা করতে। এরকম প্রতিটি বর্ণের মধ্যে টাকার জোরে সমাজে তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত মানুষকে (?) দেখেছি সে যে বর্ণেরই হ'ক না কেন গরীব মানুষের ওপর টাকার দেমাক দেখাতে, অত্যাচার করতে। এমনকি রাতারাতি বড়লোক হওয়া দিন আনি দিন খাওয়া শূদ্রকেও দেখেছি পাশের গরীব প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় প্রতিবেশীর বলা 'দু'টো পয়সার মুখ দেখে দেমাক হ'য়ে গেছে, না?' এই কথার উত্তরে ভুমিতে পদাঘাত ক'রে গগন কাঁপিয়ে বলতে,'হ, হ, দেমাক হয়েছে বটে! পয়সা হয়েছে তো! প্রয়োজন হ'ইলে বুকের ওপর দিয়া হাইট্টা যামু!'
এগুলো সব নিজ চোখে দেখা, নিজ কানে শোনা। এই-ই হ'লো প্রকৃত সমাজের চিত্র।
এ তো গেল টাকার জোরের বিচারে উঁচুনিচু ভেদাভেদ। শিক্ষার অহঙ্কারের কারণেও আছে ভেদাভেদ। যদিও শিক্ষার অহংকার না ব'লে বলা ভালো লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষের অহংকার। শিক্ষার বা শিক্ষিত লোকের কোনও অহংকার থাকে না, অহংকার থাকে উচ্চডিগ্রির বা উচ্চডিগ্রিধারী লোকের। অহংকার থাকে অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীর। আবার টাকা, শিক্ষা থাকুক না থাকুক আমি বিপ্র, আমি ক্ষত্রিয়, আমি বৈশ্য এই অহংকারে ভরা মিথ্যে আভিজাত্য বোধ প্রতিবেশীদের মধ্যে অন্যকে নীচা দেখাবার ভয়ংকর প্রবণতা ভেদাভেদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ক্ষমতা দখল ও প্রদর্শন ভেদাভেদের চিরাচরিত অন্যতম কারণ।
ফলে ধর্মান্তরের মতো ঘৃণ্য ব্যভিচারী প্রথা দলিত সম্প্রদায়ের কাছে, অত্যাচারিত মানুষের কাছে তা সে যে বর্ণেরই হ'ক না কেন মুক্তির পথ হিসেবে উঠে আসে আর সেই সুযোগকে ছোঁ মেরে তুলে নেবার অপেক্ষায় বসে থাকে সমাজের মগডালে ধর্ম ও ঈশ্বর ব্যবসায়ী নরাধমেরা।-----প্রবি।
ক্রমশঃ পরবর্তী অংশ: ধর্ম ও ধর্মান্তর ৩
( লেখা অক্টোবর ১৯'২০২২)
আর, ধর্মের নামে অত্যাচার? এ সব ধর্মেই (মত) আছে। আর্থিক অবস্থানের উপর এসব নির্ভর ক'রে। হিন্দুধর্মে (মতে) বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সব ক্ষেত্রেই শিক্ষা ও আর্থিক অবস্থা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তথাকথিত ধনী ব্রাহ্মণকে দেখেছি লেখাপড়া না জানাওয়ালা গরীব ব্রাহ্মণকে অপমান করতে, অপদস্ত করতে, এমনকি মারতে! উচ্চবর্ণের ব'লে, ব্রাহ্মণ ব'লে তাঁকে ছেড়ে দেয়নি। আবার ধনী বৈশ্যকে দেখেছি গরীব ব্রাহ্মণকে অপমান করতে। উচ্চবর্ণের গরীব মানুষকে দেখেছি নিম্নবর্ণের ধনী ব্যক্তির কাছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অপমান সহ্য ক'রে মাথা নীচু ক'রে সাহায্য ভিক্ষা করতে। এরকম প্রতিটি বর্ণের মধ্যে টাকার জোরে সমাজে তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত মানুষকে (?) দেখেছি সে যে বর্ণেরই হ'ক না কেন গরীব মানুষের ওপর টাকার দেমাক দেখাতে, অত্যাচার করতে। এমনকি রাতারাতি বড়লোক হওয়া দিন আনি দিন খাওয়া শূদ্রকেও দেখেছি পাশের গরীব প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়ার সময় প্রতিবেশীর বলা 'দু'টো পয়সার মুখ দেখে দেমাক হ'য়ে গেছে, না?' এই কথার উত্তরে ভুমিতে পদাঘাত ক'রে গগন কাঁপিয়ে বলতে,'হ, হ, দেমাক হয়েছে বটে! পয়সা হয়েছে তো! প্রয়োজন হ'ইলে বুকের ওপর দিয়া হাইট্টা যামু!'
এগুলো সব নিজ চোখে দেখা, নিজ কানে শোনা। এই-ই হ'লো প্রকৃত সমাজের চিত্র।
এ তো গেল টাকার জোরের বিচারে উঁচুনিচু ভেদাভেদ। শিক্ষার অহঙ্কারের কারণেও আছে ভেদাভেদ। যদিও শিক্ষার অহংকার না ব'লে বলা ভালো লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষের অহংকার। শিক্ষার বা শিক্ষিত লোকের কোনও অহংকার থাকে না, অহংকার থাকে উচ্চডিগ্রির বা উচ্চডিগ্রিধারী লোকের। অহংকার থাকে অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীর। আবার টাকা, শিক্ষা থাকুক না থাকুক আমি বিপ্র, আমি ক্ষত্রিয়, আমি বৈশ্য এই অহংকারে ভরা মিথ্যে আভিজাত্য বোধ প্রতিবেশীদের মধ্যে অন্যকে নীচা দেখাবার ভয়ংকর প্রবণতা ভেদাভেদ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ক্ষমতা দখল ও প্রদর্শন ভেদাভেদের চিরাচরিত অন্যতম কারণ।
ফলে ধর্মান্তরের মতো ঘৃণ্য ব্যভিচারী প্রথা দলিত সম্প্রদায়ের কাছে, অত্যাচারিত মানুষের কাছে তা সে যে বর্ণেরই হ'ক না কেন মুক্তির পথ হিসেবে উঠে আসে আর সেই সুযোগকে ছোঁ মেরে তুলে নেবার অপেক্ষায় বসে থাকে সমাজের মগডালে ধর্ম ও ঈশ্বর ব্যবসায়ী নরাধমেরা।-----প্রবি।
ক্রমশঃ পরবর্তী অংশ: ধর্ম ও ধর্মান্তর ৩
( লেখা অক্টোবর ১৯'২০২২)
No comments:
Post a Comment