Powered By Blogger

Wednesday, November 23, 2022

হে আমার প্রিয়,



সৎসঙ্গীর সংজ্ঞা ঠাকুর কি দিয়েছেন তা তুমি জানো তো? ঠাকুরের দীক্ষা নিলেই কি সৎসঙ্গী হ'য়ে যায়? তুমি কি নিজেকে সৎসঙ্গী ব'লে মনে করো? রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের অনুগামীরা কি সৎসঙ্গী নয়? জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া নিরাকার ঈশ্বর বা মূর্তির একনিষ্ঠ পূজারী যারা তাঁরা কি সৎসঙ্গী নয়? সৎসঙ্গ বা সৎসঙ্গীর ব্যাপক অন্তর্নিহিত অর্থ কি? যদি মনে করো তুমি ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষা নিয়েছো আর সৎসঙ্গী হ'য়ে গেছো তাহ'লে মূর্খের স্বর্গে বাস করছো।
আর, দায়সারা গোছের তাঁর দীক্ষা নিলেই যে তাঁর দয়ার অধিকারী হওয়া যায় তা কিন্তু নয়। বিধি থেকে বিধাতা। তিনি বিধির বাইরে যান না। যদি তাই হ'তো তাহ'লে সৎসঙ্গীদের জীবনে, সৎসঙ্গীদের সংসারে এত দুঃখ, কষ্ট, বিপদ আপদ থাকতো না। তাঁর দয়ার বাতাস সবার জন্য বইছে। যে তার শরীরের, মনের, আত্মার দরজা, জানালা খুলে রাখবে তার জীবনেই তাঁর দয়ার বাতাস ঢুকবে, ব'য়ে যাবে; নতুবা নয়। যে আলোর দিক থেকে অর্থাৎ তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে আর অন্ধকার অন্ধকার অর্থাৎ দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা ব'লে চীৎকার করবে সেক্ষেত্রে দয়ালের চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। ছেলে যদি বাপকে না মানে, বাপের অনুশাসন না মানে তাহ'লে বাপের যেমন কিছু করার থাকে না ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও তাই। বাস্তবে আমার তোমার ঘরের পিতামাতার মতো। সেক্ষেত্রে তোমার না বুঝে বলা ঈশ্বর 'স্বার্থপর" কথাই ঠিক। হ্যাঁ! তোমার বোধ অনুযায়ী ক্ষুদ্রতর অর্থে তিনি স্বার্থপর! তিনি বিশেষ কাউকে দয়া করেন আর কাউকে করেন না তা নয়। তিনি দয়ার সাগর! যে ডুব দিয়েছে সেই সাগরে সেই তাঁর দয়ায় স্নান করেছে। তাঁর দয়ার সাগরে অর্থাৎ বিস্তারে তোমার অস্তিত্ব হারাও। সৎ-এর সঙ্গী হও। অর্থাৎ সত্ত্বার সত্ত্বা পরমসত্ত্বায়, অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্ব, আত্মার আত্মা পরমাত্মায় মিলিত হও, লীন হও তখন আর তোমার আলাদা অস্তিত্ব ব'লে কিছু থাকবে না। নুনের পুতুলের মতো নোনা জলে গলে যাবে। বগবগানি আর থাকবে না। ঈশ্বর আমার বাপের চাকর না। ঈশ্বর আমার জমিদারী নয় যে আমি যা ইচ্ছা তাই তাঁকে ব্যবহার করবো, তাঁকে দিয়ে করাবো। তাই জেনেবুঝেই আমার আগের লেখায় সৎসঙ্গীর আগে 'প্রকৃত' শব্দ ব্যবহার করেছি। বাঁচতে যদি চাও, অস্তিত্বের বিনাশ যদি না চাও, বাড়তে যদি চাও, তাঁর দয়া যদি পেতে চাও, অকাল মৃত্যু যদি না চাও, দীর্ঘায়ু যদি চাও, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতার হাত থেকে যদি নিস্তার পেতে চাও তাহ'লে এই 'প্রকৃত সৎসঙ্গী' হ'য়ে ওঠা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায় নেই, পন্থা আমার জানা নেই।
বুক ভরা হিংসা, মানুষকে অপমান, অশ্রদ্ধা করা, কটু কথার আঘাত করা, সহ্য না করা, অন্যের দোষত্রুটি ধরা, নিন্দা, কুৎসা করা, গুরুজনকে, শ্রেষ্ঠকে, বড়কে না মানা, সম্মান, সমীহ না করা, পদে পদে অপদস্ত করা, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা করা, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির, শ্রেষ্ঠজনের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার করা, গালাগালি করা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো, ষড় রিপুকে লাগামছাড়া ব্যবহার করা, বৃত্তি-প্রবৃত্তির দাসত্ব করা ইত্যাদি নারকীয় গুণের অধিকারী কি সৎসঙ্গী হ'তে পারে?
তুমি কি এগুলির একটারও অধিকারী?
----প্রবি। 

( রচনা ২০শে নভেম্বর'২০২২)

No comments:

Post a Comment