Powered By Blogger

Friday, November 18, 2022

খোলা চিঠিঃ অর্ণব গোস্বামীকে।

জানি না এই চিঠি টিভি চ্যানেল রিপাবলিক ভারতের চিফ এডিটর অর্ণব গোস্বামী আপনার চোখে পড়বে কিনা তবুও মনে হ'লো লিখলাম। অর্ণব গোস্বামী আপনার চোখে পড়ুক আর নাই পড়ুক সাধারণ পাঠক তা আপনার প্রশংসক বা নিন্দুক হ'ক আর কোনোটাই নাই হ'ক এমন কারো না কারো চোখে পড়বে। আর আপনার মত চরিত্রের মানুষ যারা তাদের কাজে আসলে আসতেও পারে।
অর্ণব গোস্বামী বর্তমানে আপনি ভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত সংবাদিক। বিতর্ক আপনার জনপ্রিয়তা নিয়ে, বিতর্ক আপনার গলার উঁচা আওয়াজ নিয়ে, বিতর্ক আপনার সাংবাদিকতার স্টাইল নিয়ে, বিতর্ক আপনার সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতার অলিখিত শর্ত লঙ্ঘন করা নিয়ে, বিতর্ক আপনার ওঠা, বসা, বলা, চলা, চিন্তা, ভাবনা সব নিয়ে!
জনপ্রিয়তা বিতর্কের সৃষ্টি করে থাকে। আর এর ফলে জন্ম হয় হিংসার। আর হিংসা থেকেই অপছন্দের সূত্রপাত। হীনমন্যতার কারণে ক্রোধ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তখন কথাবার্তা, চালচলন, চিন্তাভাবনা, মতামত সবকিছুর মধ্যে দোষত্রুটির গন্ধ পায় নিন্দুকেরা। বিতর্ক চরম আকার ধারণ করে।
যেমন আপনার মধ্যে আপনার সংবাদ জগতের বিরোধীরা আপনার জনপ্রিয়তার কারণে আপনার মধ্যে অকারণ দোষত্রুটির গন্ধ পেয়েছে শিয়ালের আঙ্গুর ফল টকের মত!
যেমন,
১) উঁচু গলায় কথা বলা! এদের মতে আপনি চেঁচিয়ে কথা বলেন।
২) সাংবাদিকতার স্টাইল! এদের মতে আপনি আধুনিক মিডিয়া জগতের উপযুক্ত নন।
৩) সংবাদ জগতের অলিখিত এল ও সি লঙ্ঘন করা! এদের মতে ধরি মাছ না ছুঁই পানি তত্ত্ব পালনে আপনি অনুপযুক্ত ও অযোগ্য।
৪) কেঁচো খুঁড়তে খুঁড়তে সাপ বের ক'রে আনার মানসিকতা ইত্যাদি!
আমরা চিরকালীন টিভি চ্যানেলে যে ধরণের খবর পরিবেশনের সঙ্গে পরিচিত সেই পরিচিত জগতের বাইরে অন্য একটা জগতের মধ্যে আপনি আনতে চেয়েছেন দর্শক শ্রোতাদের আপনার নিজস্বতা ও স্বকীয়তা দিয়ে। সেই স্টাইল আমার পছন্দ হ'লে আমি আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আর পছন্দ না হ'লে আপনার নিন্দা, কুৎসায় জগৎ ভাসিয়ে দেবো। আর তাই-ই হয়েছে। আপনি অপছন্দের শিকার হয়েছেন। তাই সরকারী প্রশাসনের অন্যায় চাবুক যখন নেবে এসেছিল আপনার উপর, যখন দিনের পর দিন আপনাকে অপদস্ত ও হয়রানী করার প্রক্রিয়া চলছিল সেইসময় আপনার পেশার জগতের তাবড় তাবড় কোনও কেউ আপনার পাশে ছিল না এই স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতে (?)!
এই পছন্দ অপছন্দ যতটা না সত্যের উপর দাঁড়ায়, ব্যক্তির নিজস্ব মতামতের উপর দাঁড়ায় তার থেকে বেশি, বেশি নির্ভর করে প্রভাব প্রতিপত্তির উপর। রাজনৈতিক দলের প্রভাব, ব্যক্তি বিশেষের প্রভাব, আর্থিক ক্ষমতার প্রভাব ইত্যাদি নানা ধরণের প্রভাব মানুষকে চালিত করে। এই অন্ধ প্রভাব মানুষকে ঠিক বেঠিক চিন্তা থেকে বঞ্চিত করে, বোধশক্তি নষ্ট ক'রে দেয়। কোমর সোজা ক'রে দাঁড়াতে দেয় না। যেমন আপনি সুশান্ত হত্যা, হাতরস কাণ্ড, পালঘর সাধু হত্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে মহারাষ্ট্রে সরকারে আসীন দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অনুগামীদের বিরাগভাজন হয়েছেন আর তা ক্রমেক্রমে ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে নানাদিকে নানাস্তরে। এর ফলে আম জনতার মধ্যে বপন হয়েছে বিভেদের বীজ। আর আপনার বিরোধী মিডিয়াকুল এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভেদের বীজকে মহীরুহে পরিণত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল নানা কথার ভাঁজে। আর এখান থেকেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল আপনার বিরুদ্ধে আপনার জনপ্রিয়তাকে, আপনার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে। প্রশ্ন তুলেছিল আপনার চিৎকার ক'রে কথা বলার ধরণ নিয়ে, প্রশ্ন তুলেছিল সংবাদ পরিবেশনের অলিখিত সীমাবদ্ধতাকে ভাঙ্গা নিয়ে; প্রশ্ন তুলেছিল আপনার সততা নিয়ে; বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে; প্রশ্ন তুলেছিল আপনার চরিত্র নিয়ে! সব প্রশ্নগুলিই ছিল অবৈধ। আপনি সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে আপনার কর্মের উপর দাঁড়িয়ে। আর আম জনতা আম খেতেই ব্যস্ত; গাছ রইলো কি না রইলো সেদিকে দেখার বা ভাবার সময় আমজনতার নেই। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা এমন মানসিকতা তার। তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে আর সেই ব্যতিক্রমরাই আপনার শক্তি। সেই ব্যতিক্রম শক্তিই আপনাকে শক্ত হ'য়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
যাই হ'ক, আপনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল প্রার্থনা করি। শুধু এটুকু আপনাকে জানিয়ে রাখার জন্যে পরমপ্রেমময় শ্রী"শ্রীঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের কথায় বলি,
১) "তেজ মানে ক্রোধ নয়কো বরং বিনয় সমন্বিত দৃঢ়তা।"
মানুষ আপনার তেজকে ক্রোধ ব'লে ভুল করছে।
২) "স্থিরপ্রতিজ্ঞ হও, গোঁয়ার হ'য়ো না।"
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী আপনার স্থিরপ্রতিজ্ঞ মনোভাবকে অর্থাৎ দৃঢ়ভাবে সুনিশ্চিত মনোভাবকে গোঁয়ার্তুমি ব'লে ভুল করে।
৩) "স্পষ্টবাদী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও।"
আপনার স্পষ্টকথাকে আপনার বিরুদ্ধবাদীরা মনে করে মিষ্টতাহীন তেতো কথা।
৪) "সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না।"
আপনার শত্রুপক্ষ আপনার সত্যের পক্ষে জবরদস্ত সওয়াল তোলাকে সংহার আনা ব'লে মনে করে ও প্রচার করে।
যাই হ'ক আর নাই হ'ক আম জনতা আম খেতেই ব্যস্ত তাতে গাছ বাঁচলো কি না বাঁচলো তার ধার ধারে না। আপনি এইকথা নিশ্চয়ই জানেন যে, কুৎসা নিন্দা করা সাধারন ও তথাকথিত অসাধারন মানুষের সহজাত ব্যাপার আর তা শত্রুপক্ষের হাত শক্ত করে। আর সঙ্গে যদি যুক্ত থাকে প্রচার মাধ্যম তাহ'লে সোনায় সোহাগা। তবে আবার বলি ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে আর এই ব্যতিক্রমরাই সত্যের পূজারীর শক্তি, মহাশক্তি, প্রাণভোমরা; যেমন আপনার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে।
শুধু শেষে আপনাকে আপনার চলার পথে চলার সুবিধার জন্য বলি, একথা নিশ্চয়ই জানবেন ঈশ্বর ছাড়া আপনার আপন ব'লে কেউ নেই এই মতলবি দুনিয়ায়। সব মিথ্যে! সব সময় কাটাবার বন্ধু (Just to kill the time!) আর সুখের দিনের পায়রা! এ প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। এখানে উল্লেখ করলে বেমানান হবে না।
আমার তখন বয়স তিরিশের কাছাকাছি। আমার এলাকার যিনি গড ফাদার ছিলেন (এখন অবশ্য আর নেই, রাজনৈতিক টানাপোড়েনে মার্ডার হ'য়ে যান) তিনি একদিন ছুটির দিনের সকালবেলায় তার সব চ্যালাচামুণ্ডা নিয়ে আড্ডায় মগ্ন। সেইসময় আমি বিশেষ কাজে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হ'ই। আমাকে দেখে তিনি ব'লে উঠলেন, ঐ যে বাপী এসেছে (আমার ডাক নাম বাপী) ঐ বলতে পারবে এর উত্তর। আমি প্রথম থেকে না থাকার জন্য ঠিক কি বলতে চাইছে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। পরে বুঝতে পারলাম যখন আমাকে বললো, আচ্ছা বলতো, ভাত ছেটালে কাকের অভাব হয়? আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেন। তবুও আমি চুপ ক'রে আছি দেখে বললো, চুপ ক'রে আছিস কেন? আমি তোর কাছে সঠিক উত্তরটা আশা করি। আমি কি করবো, কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আমি এই তির্যক কথার ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম তিনি কাদের উদ্দেশ্যে আর কেনই বা এই কথা বলেছিলেন। ঐ ঘরে তখন সবাই চুপ, মুখে কুলুপ এঁটে চুপ ক'রে ব'সে আছে। 'আরে বল না, চুপ ক'রে আছিস কেন!?" ঝাঁঝালো জোরে কথায় সম্বিৎ ফিরে পেলাম। বুঝতে পারছিলাম একটা চাপা রাগ যেন ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। দেখলাম সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। সবার রহস্যময় চাউনিগুলি যেন আমাকে কি বলতে চাইছে! আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা ক'রে ব'লে ফেললাম সেই কথাটা যেটা আমার বিবেক বলতে চাইছিল। আমি বললাম, "হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, ভাত ছেটালে কাকের অভাব হয় না, কোনও না কোনও কাক জুটে যাবে এটা ঠিক কিন্তু আসল রহস্যটা অন্য জায়গায়।" একথা শুনে তিনি উৎসুক হ'য়ে উঠে বললেন, এর মধ্যে আবার রহস্যটা কোথা থেকে এলো!? দেখলাম, সবাই বেশ কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি কি বলি তা শুনবে ব'লে। আমি বললাম, "ভাত ছেটাবার পর যখন ছেটানো ভাত খাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে কাকেরা তখন দেখতে ভালোই লাগে, একটা মজা হয়, আত্মতৃপ্তি হয়। কিন্তু তারপরে যেটা হয় সেটা মর্মান্তিক!" খুব আগ্রহ নিয়ে এলাকার সেই দাদা অবাক স্বরে ব'লে উঠলো, "মর্মান্তিক! সেটা কি রকম!? আমি বললাম, " ছেটানো ভাত খাওয়া হ'য়ে গেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তারা সবাই উড়ে চলে যায়। আর উড়ে যাবার সময় যেটা করে তা হ'লো কর্কশ স্বরে কা কা ক'রে উড়ে যায়!" কথাটা বলতে বলতেই যেটা হ'লো সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। কথাটা শুনেই দাদা দড়াম ক'রে উঠে দাঁড়িয়ে এক লাথি মেরে পিছনে চেয়ারটা ঠেলে দিয়ে সামনে টেবিলটাকে সরিয়ে দিল তারপরে রাগে গটমট ক'রে বেরিয়ে গেল। ঘরে যারা ছিল তারা সবাই হতভম্ব হ'য়ে তাকিয়ে রইলো তার যাবার পথের দিকে তাকিয়ে। তারপরে সবাই সবার মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। আর ফিসফিস করতে লাগলো আমাকে টার্গেট ক'রে। আমি বুঝতে পারলাম আমার কথা তাদের ল্যাজে পা পড়ার মত অবস্থা হয়েছে।
যাই হ'ক ঘটনাটা তুলে ধরলাম যা আপনার জন্য ইঙ্গিতবহ!
তাই বলি, ঈশ্বর আপনার জীবনে আছেন তো আপনি আছেন আর ঈশ্বর নেই তো আপনার জীবনে কেউ নেই। আপনি একা! ভীষণভাবে একা! জন কোলাহলের মাঝে শুধু হলাহল, জনভূমি মাঝে ধূধূ মরুভুমি আর সব মরীচিকা! তাই সাধু সাবধান! সাবধান সাধু!!
আবার বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কথায় বলি,
"You are for the Lord not for others,
You are for the lord and so for others."
( তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য অন্য কারও জন্য নও'
তুমি একমাত্র প্রভুর জন্য বলেই তুমি সকলের জন্য।)
আপনি ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ তাই আপনাকে এই কথা বললাম বা লিখলাম। এছাড়া শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর সত্যানুসরণ গ্রন্থে আমার জন্য বলা কিছু কথা তুলে ধরলাম যদি আপনার কোনও কাজে আসে।
১) "হৃদয় দাও, কখনও হ'টে যেতে হবে না।"
২) "নির্ভর কর, কখনও ভয় পাবে না।"
৩) "বিশ্বাস কর, অন্তরের অধিকারী হবে।"
৪) "ধৈর্য ধর, বিপদ কেটে যাবে।"
৫) "সংযত হও, কিন্তু নির্ভীক হও।"
৬) "সরল হও, কিন্তু বেকুব হ'য়ো না।"
৭) "বিনীত হও, তাই ব'লে দুর্বল-হৃদয় হ'য়ো না।"
এখন প্রশ্নঃ
প্রঃ হৃদয় কাকে দেবেন?
উত্তরঃ ইশ্বরকে।
প্রঃ নির্ভর কার উপর করবেন?
উত্তরঃ ঈশ্বরের উপর।
প্রঃ বিশ্বাস কাকে করবেন?
উত্তরঃ ঈশ্বরকে।
প্রঃ কোন ঈশ্বর?
উত্তরঃ এক এবং অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর! রক্তমাংসের ঈশ্বর! মানুষের পৃথিবীতে মানুষ মায়ের গর্ভে নেবে আসা মানুষ ঈশ্বর!!!
ঈশ্বর রাম, ঈশ্বর কৃষ্ণ, ঈশ্বর বুদ্ধ, ঈশ্বর যীশু, ঈশ্বর মোহাম্মদ, ঈশ্বর মহাপ্রভু, ঈশ্বর রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
পরমপিতার কাছে আপনার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল প্রার্থনা ক'রে চিঠি শেষ করলাম।
ইতি, প্রবি।
( রচনা ১৮ই নভেম্বর'২০২০)

No comments:

Post a Comment