গত বিজয়া দশমীর দিন রাজধানী দিল্লীতে কেজরিওয়াল মন্ত্রীসভার এক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে হাজার হাজার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ (কোনও সংবাদ মাধ্যম বলছে ১০হাজার আবার কোনও কোনও সংবাদ মাধ্যম বলছে ৭হাজার) হিন্দু ধর্ম ত্যাগ ক'রে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছে হিন্দু দেবদেবীর বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে। শপথ বাক্য পাঠ করান মঞ্চে উপবিষ্ট আম আদমি পার্টির এক মন্ত্রী। তিনি নিজে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তিনি প্রকাশ্যে মঞ্চে হিন্দু দেবদেবী ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, গৌরী, গণেশ ইত্যাদিকে না মানার, পুজো না করার শপথ বাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করান। এমনকি তিনি রাম ও কৃষ্ণকে পর্যন্ত না মানার, পুজো না করারও শপথ বাক্য পাঠ করান। আর হাজার হাজার দলিত অধিবাসী সেই রাজনৈতিক নেতার হিংসা ও বিভাজনের বিষোদ্গারে ভরা শপথ বাক্যকে ভগবান বুদ্ধের বাক্য মনে ক'রে জীবনে গ্রহণ করেন ও বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
মনে প্রশ্ন জাগে, এইভাবেও প্রকাশ্যে একজন অন্য ধর্মের রাজনৈতিক নেতা কোনও ধর্মের অনুগামীদের তাদের সেই ধর্মের প্রতি ঘৃণা জন্মিয়ে, প্রকাশ্যে সেই ধর্মের দেবদেবী ও পুরুষোত্তমদের প্রতি অপমান, অশ্রদ্ধা জাগিয়ে ধর্মান্তরিত করতে পারে? করা যায়!? এক ধর্মের প্রতিনিধি অন্য ধর্ম্মের প্রতি, অন্য ধর্ম্মের ইষ্টদেবতার প্রতি প্রকাশ্যে বিকৃত বিবৃতি দিতে পারে? দেশের সংবিধান কি স্বীকৃতি দেয়? আইন কি স্বীকৃতি দেয়? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, পারস্পরিক বিচ্ছেদ আনে, দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এমন কাজকে আইন সমর্থন করে, সাজা দেয়? আর এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে প্রায়শই! ফলে মনে নানারকম প্রশ্ন জাগে।
প্রশ্ন জাগে, এ কোন ভারতবর্ষে বাস করছি আমরা? এ সেই ভারতবর্ষ যেখানে বহু মহাপুরুষ অন্মগ্রহণ করেছেন? আরও আশ্চর্য লাগে এই সেই ভারতবর্ষ যে মহান ভুমিতে স্বয়ং ঈশ্বর বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের মালিক সৃষ্টিকর্তা রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে ছয় ছয়বার জন্মগ্রহণ করেছেন? আর এই ভারতবর্ষেই এতো জ্ঞানের অন্ধকার? এতো কুসংস্কার? এতো অজ্ঞতা? এতো উচ্ছৃংখলতা?
প্রশ্ন জাগে মনেঃ যদি অন্য ধর্মমত গ্রহণ করবেই তো নিজ ধর্মকে গালি দিতে হবে কেন? বৌদ্ধধর্ম্মে দীক্ষা গ্রহণের মন্ত্র কি অন্য ধর্ম্মের দেবদেবী, অন্য ধর্মের আরাধ্য দেবতা, পুরুষোত্তমদের গালাগালি? আমি নিজ ধর্ম্ম ত্যাগ ক'রে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছি সেই ধর্ম্মের পুরোহিতের মাধ্যমে কিন্তু সেই ধর্ম্মের রাজনৈতিক নেতা পুরোহিত হ'য়ে যখন আমার ত্যাগ করা নিজ ধর্ম্মকে, আরাধ্য দেবতাদের কুৎসা করে, গালাগালি করে তখন কি আমার অন্তরাত্মা একবারও কেঁদে ওঠে না, কষ্ট পায় না, ঐ পুরোহিতের জালি ভক্তি পূর্ণ হলুদ চরিত্রের প্রতি বিতৃষ্ণা আসে না? ১০হাজার মানুষের কারও মনে প্রশ্ন জন্ম নেয় না যে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হ'তে গেলে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে, হিন্দু ধর্মের দেবদেবী, পুরুষোত্তমদের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে হবে কেন? কুৎসা, গালাগালি ছাড়া কি দীক্ষা নেওয়া যায় না? ভগবান বুদ্ধ কি ধর্ম ত্যাগ ও অন্য ধর্ম গ্রহণ সমর্থন করেন? সেই ধর্মের প্রতি, দেবদেবী ও পুরুষোত্তমদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন সমর্থন করেন?
যাই হ'ক, দিল্লী বিধানসভার নেতাদের সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী স্মরণীয়। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "ইষ্ট নাই নেতা যেই, যমের দালাল কিন্তু সেই।" আজ সেই বাণী কতটা জীবন্ত ও কতটা সত্য তা প্রমাণ হ'লো।---প্রবি।
ক্রমশঃ। পরবর্তী অংশ ধর্ম ও ধর্মান্তর ২
( লেখা ১৭ই অক্টোবর'২০২২)
No comments:
Post a Comment