পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যখন ইহলোকে শরীরী লীলা করেছিলেন সেইসময় বাংলাদেশে এবং পরবর্তী সময়ে দেশভাগের কারণে দেওঘরে অবস্থান কালে দেশবিদেশের বিভিন্নক্ষেত্রের বহু বিখ্যাত মানুষ ঠাকুরবাড়ি এসেছিলেন ঠাকুর দর্শনে, ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলতে। জীবনের এমন কোনও দিক বা বিষয় ছিল না যা নিয়ে ঠাকুরের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়নি। যা লিপিবদ্ধ আছে গ্রন্থের প্রতি ছত্রে ছত্রে। ঠাকুরের দেহ রাখার পর থেকে অদ্যাবধি সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে!
এর থেকে কি মনে হয়? এইসব নামীদামী বিখ্যাত, গুণী মানুষেরা ঠাকুরের কাছে এসে ঠাকুরকে বা ঠাকুর মন্দিরে গিয়ে ঠাকুরকে ধন্য করেছেন? নাকি নিজেরা ধন্য হয়েছেন? আমি, আপনি কি জানি ঠাকুর দেহ রূপে থাকাকালীন ভারত তথা সারা বিশ্বের কারা কারা তাঁর দর্শনে এসেছিলেন? আপনি, আমি কি জানি কে সেই ব্যক্তি যিনি ঠাকুরকে বলেছিলেন, "আমার দেশে সব আছে শুধু আপনাকে আমার দেশের দরকার। আপনি চলুন আমাদের দেশে। ডঃ রাধাকৃষ্ণন আমার বন্ধু আমি তাঁর সঙ্গে কথা ব'লে আপনাকে আমার দেশে নিয়ে যাবার সব ব্যবস্থা করবো। আপনি চলুন ঠাকুর আপনি না করবেন না। আপনার সব পরিকল্পনা আমার দেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলে পূরণ করবো।"
কিন্তু ঠাকুর তার উত্তরে বলেছিলেন, "আপনি আমাকে মাথায় ক'রে যেখানে নিয়ে যাবেন আমি আপনার সঙ্গে সেখানে সেখানে যাবো।" ঠাকুরের এই "আমাকে মাথায় ক'রে............" কথার অন্তর্নিহিত অর্থ কি তা আমরা জানি? ঠাকুর যদি একবার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন তাহ'লে আজ কি হ'তো ভাবলেই মাথা ঘুরে যায়। তাঁর সমস্ত স্বপ্ন তো বাস্তবায়িত হ'তোই সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভারতবাসী হারাতাম আমাদের দেশের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ গৌরব। আর আমেরিকা হ'য়ে যেত চিরকালীন বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ধনী ও শক্তিশালী দেশ। যদিও নিঃসন্দেহে গোটা বিশ্ব উপকৃত হ'তো এতে!
আজ যখন একান্তে ভাবি সেইসব কথা তখন অশান্ত মন ব'লে ওঠে, কেন ঠাকুর তুমি চলে গেলে না!? তখন বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে একাকার হ'য়ে যায়। ইস! দয়াল! কেন তুমি গেলে না!? কেন তুমি গেলে না!? একবার তুমি দেশ ছাড়া হয়েছো, তোমার ঘর বাড়ি, জমি জায়গা, তোমার আশ্রমে তৈরী স্বয়ং সম্পূর্ণ ছোট্ট ভারত যা দেখে গান্ধীজী বলেছিলেন, এ যে আমার স্বপ্নে দেখা ভারত যা এখানে গড়ে উঠেছে, সেই ছোট্ট ভারত দখল ক'রে নিয়েছিল দেশভাগের পর একটা দেশের সরকার! সেই দেশের নাম পাকিস্থান! একটা দেশের সরকার যদি লুঠেরা হয় তাহ'লে সেই দেশের সাধারণ মানুষের চরিত্র কি হ'তে পারে তা সহজেই অনুমেয়! দেশের একজন বললো না যে, না, The greatest phenomenon of the world SriSri Thakur Anukulchandra-এর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হ'ক; এটা আমাদের দেশের পক্ষে কলঙ্ক, অপরাধ। সেদিন ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারকে বলতে পারতো, অনুরোধ করতে পারতো যে, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া হ'ক। না, তা ভারত সরকার করেনি। এমনকি আজ ৫০ বছর স্বাধীন হ'য়ে গেছে যে দেশ বাংলাদেশ সেই দেশের সরকার পর্যন্ত গড়িমসি ক'রে কাটিয়ে দিল ৫০ বছর। দ্রুততার সঙ্গে হস্তক্ষেপ ক'রে সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টা সমাধান করার যে দরকার ছিল বা আছে তা নিয়ে মাথা ঘামাবার প্রয়োজন মনে করে না কোনও সরকার বা সেই দেশের সুধী সমাজ এইটা আজ প্রমানিত। কারণ দয়াল তুমি ঈশ্বর নও; তুমি তো শুধু হিন্দুদের ধর্মগুরু! যেমন মহম্মদ ঈশ্বর নন, শুধু মুসলমানদের ধর্মগুরু! পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশ তো মুসলমানদের দেশ! মানবজাতীর দেশ নাকি! কোনও দেশ ও দেশের সরকার মানে না তুমি কোনও সম্প্রদায়ের নও, তুমি মানবজাতির জন্য যুগে যুগে বারবার ধরাধামে আবির্ভুত হও!
যদিও 'কোনদিন না হওয়ার চেয়ে দেরীতে হওয়াও ভালো'-প্রবাদের বাস্তব প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বর্তমান ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের গ্রহণ করা পদক্ষেপ ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে। দেখা যাক দীর্ঘ ৭৪ বছর ও ৫০ বছর পথ পরিক্রমার মন্থন শেষে কি অমৃত আর কি-ই বা বিষ উঠে আসে!
তাই মন বলে, চীৎকার ক'রে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে মন বলতে চায়, দয়াল! তুমি কি আর একবার দেশছাড়া হ'তে পারতে না!? কি ক্ষতি হ'তো তুমি যদি সেদিন চলে যেতে আমেরিকা!? সেদিন তো তোমাকে এই বাংলাও (পশ্চিমবঙ্গ) ঠাঁই দেয়নি! কুৎসা, নিন্দা, অপমান, বদনাম, গালাগালি, কলঙ্ক, অশ্রদ্ধা, অপমান ইত্যাদি ছাড়া------- যা এখনও পেয়ে চলেছো ------আর কি পেয়েছো এই বাংলায় বাঙ্গালীর কাছে!? কত ঠগ জোচ্চর ধর্ম্মের আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে আধ্যাত্মিক গুরু সেজে আমেরিকা গিয়ে আমেরিকানদের বোকা বানিয়ে মৌরসি পাট্টা জমিয়ে বসেছিল তাহ'লে তুমি কেন গেলে না দয়াল! তুমি কেন গেলে না!? আজ এই প্রশ্ন কাকে করবো? তুমি তো নেই সশরীরে তাই তোমার অশরীরী সুক্ষ্ম দেহের উদ্দেশ্যে এই লেখার মধ্যে দিয়ে আমার এই প্রশ্ন রাখলাম। যদিও সেইসব ঠগ জোচ্চরদের পরিণতি হয়েছিল ভয়ংকর! আমেরিকা থেকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিল সেই সমস্ত ভন্ড ঠগ জোচ্চর ধর্ম্মগুরুদের প্রায় ল্যাংটা ক'রে এক কাপড়ে ভারতে! এতে কি ভারতের মান বেড়েছিল? প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে দেশ নেতাদের কাছে। ভারতের অসম্মান কি দেশের জনগণের, দেশ নেতাদের নয়? দেশ কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিল বা নেয় এসব ক্ষেত্রে?
কিন্তু ঠাকুর তুমি যদি যেতে সেদিন সেই ভক্তের আকুল আহ্বানে আমেরিকা তাহ'লে কি হ'তো সেখানে? ঠাকুর তুমি যদি যেতে তাহ'লে আজ তোমার স্বপ্ন মৃত মানুষের দেহে প্রাণ সঞ্চার যার বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম দিয়েছিলে স্বয়ং তুমি 'ভাইব্রোমিটার' সেই যন্ত্র তুমি থাকতে থাকতেই আবিস্কার হ'য়ে যেত! আজ কত মানুষ না মরেও মরে গেছে ব'লে দেহ সৎকার হ'য়ে যাচ্ছে! আর তোমার স্বপ্ন 'ভাইব্রোমিটার' যন্ত্র আবিস্কার হ'য়ে গেলে সেই যন্ত্রের সাহায্যে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাদের মরে যাওয়া স্বামী, স্ত্রী, বাবা, মা, পুত্র, কন্যা, ভাই বোন, বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী সবাই তার প্রিয়জনদের আবার ফিরে পেত! যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটে যেত মানব সমাজে!!!!!!! কিন্তু তুমি গেলে না দয়াল!
তুমি যদি যেতে আমেরিকা তাহ'লে তোমার আরও একটা সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অত্যাশ্চর্য স্বপ্ন 'শান্ডিল্য বিশ্ববিদ্যালয়' আজ আমেরিকার বুকে মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়াত! সারা বিশ্বের মানুষ সেই অত্যাশ্চর্য বিস্ময় স্বর্গীয় পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঈশ্বরের বাসস্থান দেখবার জন্য ছুটে ছুটে আসতো জ্ঞান বুভুক্ষু মানুষ!!!! কারণ জ্ঞানী মাত্রই জানে, Knowledge rules the world! বিশ্বের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'শান্ডিল্য বিশ্ববিদ্যালয় আজ আমেরিকার আকাশে মাথা তুলে যদি দাঁড়াত তাহ'লে সত্যি সত্যিই আমেরিকা জ্ঞান বলে বলি হ'য়ে গোটা বিশ্বকে রুল করতো। শান্ডিল্য বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুর সহজ সরলভাবে এককথায় বলেছিলেন, একজন মানুষ যখন শান্ডিল্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যাবার সময় দুপাশ দেখতে দেখতে যেতে যেতে যখন অপজিট গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে তখন আপনা আপনিই সে একজন শিক্ষিত, মস্ত বড় জ্ঞানী মানুষ হ'য়ে বেরিয়ে যাবে। কি অপূর্ব! শুধু ঘুরতে এসেই এমন শিক্ষায় শিক্ষিত হ'য়ে যাবে কোথায় আছে তার নিদর্শন সারা বিশ্বে!? হে দয়াল! তুমি যদি যেতে আমেরিকা তাহ'লে আজ অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতার কারণে যে দেশ, যে মানুষ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে তাহ'লে সেই দেশ, দেশের মানুষ এবং সারা বিশ্বের মানুষ চোখ খুলে দেখবার জন্য, অজানাকে অচেনাকে জানার জন্য, চেনার জন্য সব কিছু ফেলে ছুটে ছুটে আসতো আমেরিকা!!!!!! কিন্তু তা আজ হ'লো না। আজ আফসোস রয়ে গেল! তুমি কিন্তু গেলে না দয়াল!!!!!
সেদিন যদি তুমি আমেরিকা যেতে তাহ'লে আমেরিকার বিজ্ঞানিদের সাহায্যে আবিস্কার হ;য়ে যেত পৃথিবীর সেই সেন্ট্রাল পয়েন্ট যেখান থেকে নির্গত হচ্ছে অন্তহীন বিদ্যুৎ যার দৌলতে সারা বিশ্ব আলোয় আলোকিত হ'য়ে যেত চিরকালের জন্য; মিটে যেত বিদ্যুৎ সমস্যা। হে দয়াল! তুমি গেলে না তাই তোমার ব'লে যাওয়া বিজ্ঞানের এই সূত্র বাস্তবায়িত হ'লো না! দয়াল! তুমি গেলে না কেন? না যাওয়ার পিছনে হয়তো কোনও গূঢ় কারণ আছে যা আমার মত মূর্খ মানুষ ধরতে পারে না।
এমনিভাবেই আরও আরও আরও বিজ্ঞানের উপর কত অকল্পনীয় সূত্র ( Clue) যে তুমি দিয়ে গেছ দয়াল তার ইয়ত্তা নেই। সেইগুলি নিয়ে যদি গবেষণা হ'তো তাহ'লে এতদিনে ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ ক'রে নিত। কিন্তু দেশের শাসক তোমাকে সাধারণ একজন ধর্মগুরু মনে ক'রে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে। আর তুমি যদি দয়াল আমেরিকা যেতে তাহ'লে দেখতে তোমায় মাথায় ক'রে নিয়ে সার্বিক উন্নতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রকৃত সেরা দেশ (এমনিতেই সেরা) হ'য়ে যেত আমেরিকা!
ঘরে বসে অনাহত নাদের সাহায্যে শত্রু দেশের গোপন অস্ত্র ভান্ডার ধ্বংসের যে নীল নকশা ( অ্যান্টি অ্যাটম বোম্ব ) তুমি বর্ণনা করেছিলে, যে অনু পরমাণুর বর্ণনা তুমি দিয়েছিলে খালি চোখে আর তা দেখতে পাওয়ার জন্য যে বৈজ্ঞানিক সুত্র দিয়েছিলে, যে পারমাণবিক বন্দুকের কথা ( Atomic gun) বলেছিলে মানুষকে এই পোড়া দেশে তা যদি তুমি আজ আমেরিকা যেতে তা বহু আগেই আবিস্কার হ'য়ে যেত। আবিস্কার হ'য়ে যেত বিজ্ঞানের নানা অজানা দিক।
আজও ক্যান্সার রোগের ওষূধ আবিস্কার হ'লো না। যদি তুমি যেতে আমেরিকা তাহ'লে তোমার দেওয়া ফর্মুলা যে ফর্মূলায় তুমি শ্রদ্ধেয় প্যারীদাকে দিয়ে ওষূধ বানিয়ে ক্যান্সার রোগীকে সুস্থ ক'রে তুলেছিলে, যে ওষুধ বের করার জন্য শ্রদ্ধেয় হাউজারম্যানদা তাঁর দেশ আমেরিকায় চেষ্টা চালিয়েছিলেন সেই চেষ্টার ফলস্বরুপ ব্যবসায়ীমহল সেই ওষুধের পেটেণ্ট নিজেদের কাছে রাখার দাবীতে রাজী হয়েছিল কিন্তু হাউজারম্যানদা তাতে রাজী হননি কিন্তু দয়াল তুমি যদি আমেরিকা চলে যেতে সেদিন হয়তো সেই দেশের সরকার তোমার কথায় রাজী হ'য়ে সেই ওষুধ বের ক'রে ফেলতো। আজ তৈরী হ;য়ে যেত ক্যান্সারের ওষুধ! দেশে দেশে ঘরে ঘরে কত লক্ষ কোটি মানুষ আজ বেঁচে যেত ভয়ংকর ক্যান্সার রোগের হাত থেকে। মানুষ আজ কত অসহায় মৃত্যুর কাছে দয়াল! মানুষ আজ কত অসহায়!!
তাই কোনও নেতানেত্রী বা প্রশাসনিক প্রধান যদি ঠাকুর মন্দিরে বা কেন্দ্রে আসে তাতে তাঁর এবং তাঁর ও তাঁদের আসার কারণে তাঁদের ও দেশবাসীর মঙ্গল হয়। তাঁরা ও দেশবাসী ধন্য হন। কারণ এই আসাযাওয়ার ফলে ঠাকুর সম্পর্কে, ঠাকুরের দর্শন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁদের একটা ধারণা জন্মালেও জন্মাতে পারে আর তাতে তাঁদের মানসিক বিপ্লব ঘটে যেতে পারে কোন এক সুন্দর সকালের শুভ মুহূর্তে আর তার শুভ ফল সামগ্রিকভাবে সুদূরপ্রসারী হয়।
আজ যখন দেখি আমেরিকায় ভার্চুয়াল উৎসব উপলক্ষে (USA national satsang congregation 2021(virtual) আচার্যদেব শ্রীশ্রীদাদার আশীর্বাদে পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার ব্যবস্থাপনায় ঠাকুরের ইংরেজী বাণী 'PEACE PEACE PEACE BE YE PEACEFUL' নিয়ে গান তৈরি করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই আগামী ঠাকুরবাড়ির ছবিটা ভেসে ওঠে যেদিন বিদেশী ভক্তদের আগমনে সারা দেওঘর ভেসে যাবে, তিল ধারণের জায়গা থাকবে না। এমনিভাবে তৈরী হবে আরও আরও ঠাকুরের ইংরেজী বাণী দিয়ে গান আর ইংরেজী গানে মাতিয়ে তুলবে দেওঘর সৎসঙ্গ তথা পৃথিবীর আকাশ বাতাস বিদেশী ভক্তের দল। এমনিতেই এখন উৎসবগুলিতে লক্ষ লক্ষ অগুন্তি মানুষের মাথায় গিজগিজ করে ঠাকুরবাড়ি আর তখন মনে পড়ে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে ঠাকুর সৎসঙ্গ-এর সেইসময়ের ভ্যালুয়েশন অনুযায়ী পাবনায় দেড় কোটি টাকার সম্পত্তি ফেলে দিয়ে এক কাপড়ে চলে এসেছিলেন বর্তমান ভারতের দেওঘরে। ঠাকুর স্বাধীনোত্তর দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর কাছে ৬০০০ হাজার বিঘা জমি চেয়েছিলেন পুনরায় তাঁর স্বপ্নের সৎসঙ্গ প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য। কিন্তু সেই সময় জহরলাল নেহরু ঠাকুরের ইচ্ছা পুরণের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার পানাগড়ে ৬০০০ হাজার বিঘা জমি প্রদানের জন্য সম্মতি জানালেও দুর্ভাগ্যবশত পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় শ্রী বিধান চন্দ্র রায় রাজী হননি ঠাকুরকে ৬০০০ হাজার বিঘা জমি প্রদান করতে। বিধানচন্দ্র রায় চেয়েছিলেন ঠাকুরকে ৮০০ বিঘা জমি দিতে কিন্তু ঠাকুর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। শ্রীশ্রীঠাকুর চলে যান তৎকালীন বিহার বর্তমান ঝাড়খন্ডের দেওঘরে। আবারও বাংলা বঞ্চিত হয় জীবন্ত ঈশ্বরের নবরুপকে তার বুকে ঠাঁই দিতে।এক বাংলা ছেড়ে আর এক বাংলায়ও আশ্রয় পেল না দয়াল! একবুক যন্ত্রণা, দুঃখ ও অপরাধবোধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে দুই বাংলার বাঙ্গালিকে যতদিন সৃষ্টি থাকবে! যে বাংলা স্বয়ং ঈশ্বরের জীবন্ত রুপকে আশ্রয় দিতে পারে না তার বুকে সে দেবে মানুষকে আশ্রয়!? অতি মূর্খও বিশ্বাস করে না একথা। শ্রদ্ধেয় বিধানচন্দ্র রায়ের মতন অতি গুণী মানুষও সেদিন বুঝতে পারেননি ঠাকুরের স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ঠাকুর কেন চেয়েছিলেন ৬০০০ হাজার বিঘা জমি; সেখানে সাধারণ বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকা আম বাঙ্গালী বুঝবে কেমন করে!?
যাই হ'ক, সেদিন আমি থাকবো না হয়তো আবার আমি আসিব ফিরে দয়ালের নীড়ে মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে দেখবো সেদিন যেদিন গোটা বিশ্ব ভেঙ্গে পড়বে দেওঘরের বুকে আর মানুষ বুঝতে পারবে সেদিন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কারণে কেন ঠাকুর ৬০০০ হাজার বিঘা জমি চেয়েছিলেন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে!!! সেদিন আগামী বাংলা ও বাঙ্গালী লজ্জায় মুখ ঢাকতে এক টুকরো কাপড়ও পাবে না। সেদিন লজ্জায় রক্তিম বাংলার উত্তরসূরীদের মুখ দেখবে বাকী ভারত তথা বিশ্ববাসী!!!! কারণ ঠাকুর নিজেই বলে গেছেন, "আমার সৎসঙ্গ-এর আন্দোলন বাংলা থেকে উঠবে না, বাংলার বাইরে থেকে উঠবে।"
তাই বলি, আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন পাহাড় যদি অহঙ্কার বশতঃ মহম্মদের কাছে না আসে মহম্মদ নিজে যান সেই পাহাড়ের কাছে যেমন গিয়েছিলেন মূর্খ ঠাকুর রামকৃষ্ণ বিদ্যার সাগরের কাছে। যতবার তিনি এসেছিলেন-------আটবার এসেছিলেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রুপে -------- ততবারই অর্থাৎ আটবারই এমন উদাহরণ তিনি রেখে গেছেন!
তাতে কে ধন্য হন বা হয়েছিলেন?
( লেখা ৩০শে সেপ্টেম্বর'২০২১)
No comments:
Post a Comment