আচার্য ও অধ্যক্ষ!
প্রশ্নকর্তা তেড়েমেরে ঝাঁঝিয়ে উঠে আমাকে বললেন, "আপনাদের মত আমাদের কোনও আচার্য নেই, আছেন অধ্যক্ষ! শ্রদ্ধেয় কাজলদা ও শ্রদ্ধেয় বিদ্যুৎদা আমাদের অধ্যক্ষ! আচার্য একজনই! আমাদের আচার্য স্বয়ং ঠাকুর! আচার্য দু'জন হয় না। আপনারা ঠাকুর ছাড়া অন্যকেও আচার্য কেন মানেন, কেন ঠাকুর ছাড়া অন্যের নামের পূর্বে শ্রীশ্রী ব্যবহার করেন, সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা কেন, ইষ্টভৃতির মূল মন্ত্র পালন কেন করেন না, সপ্তার্চ্চি-পঞ্চবর্হি কেন মানেন না, স্বস্তয়নীর তিন টাকা বাদে বাকি টাকা কি করেন" ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কৌতূহলী প্রশ্নের অনধিকার চর্চার ঝড় বইয়ে দিয়ে মিথ্যে আনন্দের সুখ সাগরে ভাসতে থাকে! আর মনে মনে মনকলা খেতে খেতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভাবে: আহা! কি দিলাম! একেবারে ঠেসে দিয়েছি! গলা পর্যন্ত দিয়েছি! আর এই সমস্ত আবাল প্রশ্নের বান ছোঁড়ে মেঘনাদের মত প্রোফাইলে মুখ লুকিয়ে! আর উত্তর দিলেই হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া ক'রে তেড়ে আসে একসঙ্গে অনেকগুলি কলিযুগের মেঘনাদ! আর এসেই ঠাকুরবাড়ির বিরুদ্ধে এলোপাথাড়ি বহুদিনের পুরোনো দুর্গন্ধযুক্ত মলরুপী প্রশ্নের বাতকর্ম শুরু ক'রে দেয়! এত দুর্গন্ধ যে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসবে! আর প্রশ্নের উত্তরে উত্তর সহ পাল্টা প্রশ্ন যখন ধেয়ে যায় তখনই শুরু হ'য়ে যায় অশ্লীল ব্যক্তি আক্রমণ! এই-ই প্রশ্নকর্তাদের ঠাকুর প্রেমের, ভক্তির ও ভালবাসার জীবন্ত চরিত্র! এই-ই ঠাকুরকে আচার্য মানার এদের পরিচয়!! এই-ই এদের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থনা করার নমুনা!!! এই-ই এদের ইষ্টভৃতি, স্বস্তয়নী, সপ্তার্চি, পঞ্চবর্হি পালনের জীবন্ত জ্বলন্ত উদাহরণ!!!!
যাই হ'ক এদের বক্তব্যকে সামনে রেখে আমি বললাম,
কোন স্কুলে বা কলেজে পড়েন যে স্কুল বা কলেজের অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রী কাজলদা এবং শ্রদ্ধেয় শ্রী বিদ্যুৎ রঞ্জন চক্রবর্তীদাদা একসঙ্গে দু'জনই!? আপনার কথামত বর্তমানে অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় শ্রীবিদ্যুৎ রঞ্জন চক্রবর্তীদা তাহলে শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীকাজলদা কি পদে আছেন? আপনাদের সংগঠনে দুইজন অধ্যক্ষ!? আপনারা ঠাকুর পরিবারের বাইরে ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের চেয়েও অনেক উচ্চমার্গীয় দক্ষ, যোগ্য, জ্ঞানী ভক্তমণ্ডলী আছেন ব'লে নিজের ঢাক নিজে পেটাবার মত ঢাক পিটিয়ে শ্রীশ্রীবড়দাকে ছোট করবার, নিচা দেখাবার দুঃসাহস দেখিয়েছেন! তা' ঠাকুর পরিবারের বাইরে ঐরকম যোগ্য ও দক্ষ ভক্তপ্রাণ থাকা সত্ত্বেও ঠাকুর পরিবারের লোককে অধ্যক্ষ হিসাবে মনোনীত করেছেন কেন!? আপনারা যে না-মানা ও না-জানার গর্ভজাত তা আপনাদের আচরণই ফুটিয়ে তোলে! এই না-মানার সংস্কার আপনাদের কোথায় টেনে নাবিয়েছে তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই।
আপনি ও আপনারা এমনই ঠাকুরকে মানেন যে না-মানার সাধনা করতে করতে আপনাদের ঠাকুর যে ব্যবহার, যে চরিত্র, যে আচরণ, যে কথা, যে ভাষা অপছন্দ করতেন সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনারা ভুলে গেছেন কাকে কি সম্বোধন করতে হয়! দেখুন, আপনি/আপনারা শ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রীকাজলদাকে ও শ্রীবিদ্যুৎ রঞ্জন দাদাকে একবার শ্রদ্ধেয় কাজলদা ও বিদ্যুৎদা বলেছেন আর একবার বিদ্যুৎ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন!!!!! শ্রদ্ধেয় কেষ্টদাকে শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেছেন, লিখেছেন! নামের আগে যে 'শ্রী' ও নামের শেষে যে দাদা সম্বোধন করতে হয় সেই বোধটুকু পর্যন্ত লুপ্ত হ'য়ে গেছে!!!!!! শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নামের আগে একটা 'শ্রী' যারা ব্যবহার করার শিক্ষা পায়নি, যারা সৎসঙ্গ সমাজের যে রীতি দাদা ও মা সম্বোধন সেই রীতি অনুযায়ী দাদা সম্বোধন করার ঐতিহ্য বহন ক'রে চলে না তারা দুটো 'শ্রীশ্রী' ব্যবহার নিয়ে কূটকচালির তুলকালাম করবে এতে আর আশ্চর্যের কি আছে! এটাই তো স্বাভাবিক! এটাই তো সত্য! এটা আর কিছু নয় ফাঁকিবাজি ও কপটতা-র চরম নিদর্শন! কর্মহীন অতি ঠাকুর প্রেমের পরিণাম! ছেঁদো স্বভাব নিয়ে শুধু ৫০ বছর ধ'রে কথার কূটকচালিতে থেকে গেলেন আর ছেঁদা খুঁজে গেলেন মানুষের আর দিনের শেষে হ'য়ে গেলেন মস্তবড় আপনারা এক একজন ছেঁদা বিজ্ঞানী!!!!
যাই হ'ক আলোচ্য বিষয়ে আসি।
আপনি/আপনারা ঠাকুরের সোনার সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করবার জন্য, বিভ্রান্ত ক'রে ক'রে বইয়ে যাওয়া পবিত্র গঙ্গার জলের মত ঠাকুরের 'বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠা'-র সৎসঙ্গ আন্দোলনের বইয়ে যাওয়া মূল স্রোত থেকে সরিয়ে এনে গঙ্গার মূল ধারা থেকে বেরিয়ে আসা বদ্ধ খালের স্রোত হীন পচা গঙ্গার জলের মত স্রোত হীন, আন্দোলনহীন, বদ্ধ পচা প্রাণহীন আন্দোলনের গন্ডির মধ্যে ফেলতে চাইছেন আর কলুর বলদের মত ৫০বছর ধ'রে ঐ এক বস্তাপচা গ্রহণযোগ্যতাহীন বুলি "আচার্য, শ্রীশ্রী, সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা" ইত্যাদির ভিত্তিহীন অস্তিত্বহীন লেজ ধ'রে ঘুরে ঘুরে মরছেন চাক্কি পিসিং এন্ড পুশিং ক'রে ক'রে!
আচ্ছা আপনার/আপনাদের কথামত আচার্য সম্পর্কিত প্রশ্নে জিজ্ঞেস করি, ঠাকুর শ্রদ্ধেয় শ্রী কেষ্টদাকে কেন ঋত্বিকাচার্য করলেন? ঠাকুর একমাত্র যদি ইষ্ট হন, ঠাকুর যদি আচার্য হন, গুরু হন তাহ'লে তিনিই যে ঋত্বিক সেটা জানেন কি!? দীক্ষা যে তিনিই দেন সেটা জানা আছে কি? ঋত্বিক নামধারীরা যে শুধুমাত্র তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধি তা জানা আছে কি? তাঁর অনুমোদিত পাঞ্জাধারী ও পাঞ্জাদানকারীরাই একমাত্র দীক্ষা দেওয়া ও দীক্ষা দেওয়ার অধিকার দেওয়ার অধিকারী তা জানেন তো!? তাহ'লে ঠাকুরই ইষ্ট, আচার্য, গুরু যদি হন সেইমত ঠাকুরই হ'লেন আমার ঋত্বিক! তাহ'লে ঠাকুরই যদি আমার ঋত্বিক হন আর যদি তাঁর সাহায্যকারীরা পি. আর ও এস. পি. আর হন তাহ'লে কেন শ্রদ্ধেয় কেষ্টদা ঋত্বিকাচার্য অর্থাৎ ঋত্বিকদের আচার্য হবেন!? তাহলে ঠাকুর ভুল করেছিলেন!? ঠাকুর ভুল!? ঠাকুর পাগল!? ঠাকুর নেশাগ্রস্ত ছিলেন!? অবশ্য আপনারা, আপনাদের পূর্বসূরীরা ঠাকুরের শেষের দিনগুলি নিয়ে এইরকম প্রচারও করেছিলেন যে ঠাকুরের নাকি মাথা কাজ করছে না!!!!!!! এতটাই অস্পর্ধা, ঔদ্ধত্ব ছিল আপনাদের পূর্বসূরীদের!!!! আর যে অস্পর্ধা ও ঔদ্ধত্বের পরিচয় দিয়ে চলেছেন আজও! এসব করেছিলেন আপনাদের পূর্বসূরীরা পরম পূজ্যপাদ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেদের কায়েমী স্বার্থকে বজায় রাখতে, ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-এর দখল নিতে, ক্ষমতার দখল নিতে! ৫০ বছর ধ'রে কলুর বলদের মত এই ক্ষমতা দখল লাভের ঘানি টেনে যাবার ফল কি ফললো আপনার/আপনাদের স্টাডি কি বলে!?
শ্রদ্ধেয় শ্রী কৃষ্ণ প্রসন্ন ভট্টাচার্যদা যদি ঋত্বিকদের আচার্য হন তাহ'লে শ্রীশ্রীবড়দার সৎসঙ্গীদের আচার্য হ'তে দোষ কোথায়!? শ্রদ্ধেয় কেষ্টদাকে ঋত্বিকাচার্য কেন করেছিলেন তা' ঠাকুর জানেন। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে আমি যতটুকু বুঝি, ঋত্বিকদের কেমন হওয়া উচিত, ঋত্বিকদের আচার-আচরণ-ব্যবহার কেমন হবে, ঋত্বিকদের জ্ঞান-গরিমা, যজমান দের সঙ্গে সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত এককথায় ঠাকুর ঋত্বিক সম্প্রদায়কে যেমন দেখতে চেয়েছিলেন তেমন হ'য়ে ওঠার জন্য যা যা দরকার তেমন তেমন ঠাকুর নিজে ক'রে দেখিয়ে ও করিয়ে কেষ্টদাকে তৈরি করেছিলেন আর তাই কেষ্টদা ক'রে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা ক'রে গেছেন, হ'য়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন নিরন্তর, জীবনভর! পরিণতিতে ঠাকুর সমস্ত ঋত্বিকদের পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন ঋত্বিকদের আচার্য ক'রে। তাই তিনি ছিলেন ঋত্বিকাচার্য!
ঠিক তেমনি ঠাকুর পরবর্তী ঠাকুর সৃষ্ট এই বিশাল সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-কে, ঠাকুরের মিশনকে, ঠাকুর দর্শন, ঠাকুরের 'সৎসঙ্গ' আন্দোলনকে সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষভাবে রক্ষা করা, বৃদ্ধি করা, বিশ্বব্যাপী সমস্ত জনগোষ্ঠীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, কোটি কোটি সৎসঙ্গীদের ঠাকুরের ভাবে ভাবিত ক'রে তোলার জন্য, প্রয়োজনানুপাতিক কঠোর-কোমল হাতে হাল ধ'রে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ঠাকুরের আচরণে আচরণসিদ্ধ, জ্ঞানে সমৃদ্ধ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ দরকার বা নেতা দরকার অর্থাৎ একজন ঠাকুরের জীবন্ত চলমান 'সত্যানুসরণ' দরকার যাকে আমরা আচার্য বলি সেই তিনি হলেন ঠাকুরের পরমপ্রিয় আদরের প্রথম সন্তান প্রাণের বড়খোকা, সৎসঙ্গ জগতের কোটি কোটি সৎসঙ্গীর চোখের মণি, ভালবাসার মানুষ, সবার বড়ভাই সৎসঙ্গ জগতে স্বীকৃত 'শ্রীশ্রীবড়দা'!!!!! সেই শ্রীশ্রীবড়দা-ই আমাদের আচরণ ক'রে ক'রে প্রতিমুহূর্তে নিজে ঠাকুরের কুকুর হ'য়ে শিখিয়েছেন কেমন ক'রে ঠাকুরকে ভালোবাসতে হয়, আমাদের শিখিয়েছেন কেমন ক'রে ইষ্টের মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়, কেমন ক'রে ঠাকুরের কুকুর হ'য়ে উঠে প্রকৃত মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়, কেমন ক'রে ঠাকুরের ইচ্ছা, স্বপ্নকে বাস্তবায়িত ক'রে তুলতে হয়, কেমন ক'রে তীব্র অনুভূতিসম্পন মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়, কেমন ক'রে তীব্র ভয়ঙ্কর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধীর স্থির হ'য়ে নেতৃত্ব দিতে হয়, কেমন ক'রে ধৈর্য ধ'রে সহ্য করতে হয় নিন্দা, ঘৃণা, কুৎসা, গালাগালি, সমালোচনা, কেমন ক'রে মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিপক্ষের কাছে ঢাল হ'য়ে উঠে নিজেকে ও সবাইকে রক্ষা করতে হয়, কেমন ক'রে ভালোবাসাময় মানুষ হ'য়ে উঠতে হয়!!!!!!! ঠাকুরের বাণী " ঈশ্বরেরই কুকুর তুমি নিষ্ঠা শেকল গলায় বাঁধা, ডাকলে তুমি কাছে আসো নইলে থাকো দূরেই খাড়া"---র মূর্ত রূপ শ্রীশ্রীবড়দা! তিনি শিখিয়েছেন কি ক'রে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, শক্তিশালী ক'রে তুলতে হয়! তিনি শিখিয়েছেন কেমন করে ইষ্টস্বার্থ রক্ষার্থে ও ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় আপ্রাণ হ'য়ে উঠতে হয়, কৌশলী হ'য়ে উঠতে হয়, হ'য়ে উঠতে হয় নিরাশী-নির্মম! আরো আরো অনেক কিছু শিখিয়েছেন! ইষ্টস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় কেমন ক'রে আপোষহীন লড়াইয়ের উদাহরণ হ'য়ে উঠতে হয় হাতে কলমে করে করিয়ে সমগ্র সৎসঙ্গ সমাজকে শিখিয়েছেন এ যুগের হনুমান, অর্জুন, নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দরূপী শ্রীশ্রীবড়দা!!!!! তাই তিনি আমাদের আচার্যদেব! আর তিনি তাঁর জ্বলন্ত জীবন্ত উদাহরণ রেখে গেছেন আমাদের কাছে আচার্যদেব শ্রীশ্রীঅশোকদাদাকে আমাদের সামনে! আচার্য পরম্পরার মধ্যে দিয়ে এবার ঠাকুর লীলা করছেন, করবেন ঘোর কলিযুগের শেষ দিন পর্যন্ত, যতদিন পর্যন্ত না কলিযুগ শেষে সত্যযুগে প্রবেশ করছে তাঁর সৃষ্ট সৃষ্টি!!!!!
এরপর পরবর্তী প্রশ্ন।
(লেখা ৮ই অক্টোবর'২০১৯)
No comments:
Post a Comment