তাঁদের পৃথিবীর বুকে নিরাপদে সুস্থভাবে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের চরণে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।
সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে মহাকাশে ৮ দিনের জন্য গিয়ে ৯ মাস বন্দী অবস্থায় কাটানোর অতিমানবীয় শারীরিকি-মানসিক কৃতিত্বের জন্য স্যালুট, ধন্যবাদ, গভীর ভালোবাসা ও নমস্কার জানাই।
আমেরিকার অন্যতম শিল্পপতি ইলন মাস্কের স্পেস এক্স নাসার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দীর্ঘ ৯ মাসের পর গত বুধবার সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্য ইলন মাস্ককে ও নাসার বিজ্ঞানীদের জানাই ধন্যবাদ, গভীর ভালোবাসা ও নমস্কার।
ধন্যবাদ, ভালোবাসা ও নমস্কার জানাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কারণ তিনি তার রাষ্ট্রপতিত্বের সময় এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবং তাদের ফিরে আসার সুবিধার্থে কাজ করেছিলেন ও স্পেস এক্সের সিইও এলন মাস্ককে অনুরোধ করেছিলেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।
এদের সকলের জন্য ঈশ্বরের চরণে মঙ্গল প্রার্থনা করি।
আটলান্টিক মহাসাগরে সফল অবতরণ করলেন চারজন মহাকাশ্চারী। গত ২০২৪ সালের জুন মাসে মহাকাশ যাত্রা করেন এই দুই মহাকাশ্চারী। কথা ছিল থাকবেন শুধু ৮ দিন। সেই ৮ দিন দীর্ঘ হ'তে হ'তে হ'য়ে গেল ৯ মাস। অবশেষে দীর্ঘ উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, ব্যাকুলতা, ভয় কাটিয়ে তাঁদের সকলের সফল অবতরণের জন্য আমরা আনন্দিত ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশ্চারিনী সুনিতা উইলিয়ামসের জন্য আমরা ভারতীয়রা আরও আনন্দিত। দীর্ঘ ৯ মাস মহাকাশে কাটিয়ে ১৯শে মার্চ'২৫ বুধবার ভারতীয় সময় ৩টে ২৪মিঃ এলন মাস্কের Space X Capsule এ ক'রে মহাকাশ্চারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তাঁদের হাসি মুখ ও হাত নাড়া দেখে কিছুক্ষণের জন্য অভিভূত হ'য়ে গিয়েছিলাম! ৮ দিনের জায়গায় ২৮৬ দিন মহাকাশে যান্ত্রিক গোলোযোগের কারণে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আটকে থাকার জন্য মহাকাশচারীদের নিজের সঙ্গে নিজের কি ভয়ংকর মানসিক লড়াই করতে হয়েছে প্রতিটি দিন ভাবলেই হতভম্ব হ'য়ে যাই। মহাকাশ্চারীদের ফিরে আসার খবরে গোটা বিশ্ববাসী আজ খুশী। সুনীতা উইলিয়ামস সহ অন্য মহাকাশ্চারীদের সেফ ল্যান্ডিং দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল গোটা বিশ্ব, অপেক্ষা করছিল তাঁরাও। ভারতবাসী আজ গর্বিত ভারতীয় বংশোদ্ভুত সুনিতা উইলিয়ামসের জন্য। ভারতের গুজরাতের কা ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসার জন্য বরণ অনুষ্ঠান পালন করে মায়েরা। গুজরাটের মেহসানা জেলার ঝুলাসন গ্রামে নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামসের বাবা দীপক পান্ড্যের পৈতৃক বাড়ি। গ্রামের স্থানীয় মন্দিরে উইলিয়ামসের মহাকাশে যাওয়ার পর থেকে একটি 'অখণ্ড জ্যোতি' (চিরন্তন শিখা) জ্বলছিল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল গুজরাত রাজ্য তথা দেশবাসী এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসায় আনন্দে ফেটে পড়ে।
মহাকাশ্চারীদের চোখমুখের খুশী, উজ্জ্বল হাসি মুখ প্রমাণ ক'রে দিয়েছে এই মিশন সফল ক'রে পৃথিবীতে ফিরে আটলান্টিক মহাসাগরে সফল অবতরণের জন্য তাঁরা কতটা খুশী।
আর একদল খুশী হয়ে নেমে পড়েছিল এটা প্রচার করতে যে সুনিতা উইলিয়ামসদের ৯ মাস পর পৃথিবীতে ফিরে আসার সঙ্গে ঈশ্বরের দয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
সুনীতা উইলিয়ামসের দীর্ঘ ৯মাস মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীর বুকে সফল অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই ঈশ্বর, আল্লা, ভগবানের কোনও অস্তিত্ব নেই তা' প্রমাণের জন্য ঈশ্বর অবিশ্বাসীর দল তৎক্ষণাৎ কোমর বেঁধে ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবতরণ করেছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের অসীম ক্ষমতা প্রমাণে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা ও মন্তব্যের ঝড় তুলে দিয়েছিল তৃপ্তির অম্ল ঢেঁকুর তুলে তুলে।
ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনীতার সফল অবতরণের সঙ্গে ঈশ্বরের কোনও সম্পর্ক নেই এই বিতর্ক টেনে আনা কেন? কেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার? যত দোষ নন্দ ঘোষের মত সব কিছুতেই ঈশ্বরকে টেনে আনতে হবে? কাটগড়ায় দাঁড় করাতে হবে তাঁকে?
নিজেকে সব কিছুর উর্ধ্বে ভাবা স্বঘোষিত সবজান্তা অহংকারী ও হতাশা অবসাদগ্রস্থ মানুষের এইটা একটা গুরুতর মানসিক ব্যাধি ।
কেন এই কথা বললাম? বললাম, তার কারণ, সুনিতা উইলিয়ামসের দীর্ঘ ৯ মাস পর পৃথিবীর বুকে সফল অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের বকনা বাছুরের মত লম্ফঝম্প দেখে। তারা সুনিতা উইলিয়ামস থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন ঈশ্বরবিশ্বাসীদের। বলেছেন জ্ঞানের সঠিক শিক্ষা নিতে। বলেছেন স্বর্গ নরক ব'লে যে কিছুই নেই, নেই কোনও ঐশ্বরিক শক্তি নেই, এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে। ঈশ্বর অবিশ্বাসীরা বলেছেন, সুনিতা উইলিয়ামস ও বুশ উইলমোর মহাকাশে ৮ দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ ৯ মাস কাটিয়ে আসার মধ্যে দিয়ে বিশেষ দৃষ্টিভংগী লাভ করেছেন। মহাকাশে যে সমস্যার মুখোমুখী হয়েছিলেন তাঁরা সেই সমস্ত সমস্যা, সমস্ত যান্ত্রিক গোলযোগের মোকাবিলা করেছেন মানুষেরই উদ্ভাবন শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই, মানুষের তৈরী খাবার, মানুষের তৈরী পোশাক পরিচ্ছদ ও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার ক'রেই।
তারা বলছেন, মহাশূন্যে কোনও ঈশ্বর, কোনও আল্লা বা কোনও ভগবান কেউ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি সেইসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। যা করতে হয়েছে মানুষকেই করতে হয়েছে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি ও মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে। অতিমানবের মত ধৈর্য ও সহ্য শক্তি, অসীম মনোবল, আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা, আত্মশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা বিপদকে অতিক্রম ক'রে সফল হয়েছে। এখানে কোনও ঐশ্বরিক শক্তি ব'লে কিছু নেই, সবই কাল্পনিক, কুসংস্কার। সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে কিছুই নাই।
ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের এরকম নানা মন্তব্যের পর মন্তব্য সুনিতা উইলিয়ামসের পক্ষে ও ঈশ্বরের বিপক্ষে আছ্ড়ে পড়েছে ও পড়ছে অকারণে ফেসবুকে। একজনের যোগ্যতা, দক্ষতা, কর্মকুশলতা, জ্ঞান, বুদ্ধি, শারীরিক ও মানসিক মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, ঋজু, কঠিন, অনমনীয় ও দৃঢ় মনোভাব ইত্যাদি মানবীয় গুণকে তুলে ধরতে গিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করতে, তুলোধনা করতে ঈশ্বর অবিশ্বাসীরা মাঠে নেবে পড়েছেন 'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে' গান গাইতে গাইতে।
বিজ্ঞানের কোনও সাফল্য হলেই জীবনে ব্যর্থ, অসফল একশ্রেণীর মানুষ মানুষকে মাথায় তুলে নাচতে নাচতে ঈশ্বরের বাপ বাপান্ত করা শুরু ক'রে দেবে।
এরকমটা কাদের হয়? ঈশ্বর আছে কি নেই, সত্যি কি মিথ্যে তা' নিয়ে বালখিল্য জ্ঞানের অধিকারী মানুষেরাই মনের অপূর্ণ ইচ্ছের অবদমিত রাগ মেটায় কথায় কথায় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাবার মত ঈশ্বরের উপস্থিতিকে টেনে এনে অকারণ তর্ক ক'রে।
এই সমস্ত নেগেটিভ চিন্তার মানুষ পজিটিভ কোনও কাজে অংশীদার হ'তে পারেনি ও পারে না কোনওদিনও কোনও জন্মেই।
যারা জীবনে ব্যর্থ, অসফল এবং একসময় ঈশ্বরের কাছে কিছু না ক'রে ফোকটে আয়েশি ক'রে যাদু টোনার মত সফলতা পাওয়ার আশা করেছিল, আলাদিনের প্রদীপের মত কিছু অলৌকিক কর্মকান্ডের মত বাপের চাকর ঈশ্বরকে হুকুম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল বাপ-দাদাদের দেখাদেখি এবং সেই ফাঁকিবাজি আশা, সেই ঠুনকো স্বপ্ন পূরণ হয়নি বিন্দুমাত্র যাদের, তারাই কথায় কথায় অকারণে জান্তে অজান্তে, চেতন ও অবচেতন মনে ঈশ্বরের কাছে কিছু না পাওয়ার জ্বালা স্বরূপ ঈশ্বরের উপস্থিতির বাপ বাপান্ত করে। এগুলি অন্যের সফলতায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অবচেতন মনে নিজের ব্যর্থতার রাগের বহির্প্রকাশ। কিছু না করা অভিজ্ঞতাহীন, অনুভূতিহীন, উপলব্ধিহীন শুধু কথার স্রোতে ভাসা কিছু মানুষ ঈশ্বরের কাছে কিছু না পেয়ে জীবনে ব্যর্থ হ'য়ে ঈশ্বরকেই গালাগালি ও বিরোধীতা করে।
এই ধরণের সমস্ত গিরিগিটি মানুষের পাল্লায় পড়ে সাধারণ সহজ সরল বোকা, মূর্খ, বেকুব, অসহায় ভীরু, দুর্বল, অজ্ঞ, অজ্ঞানী, আর্ত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আজ বিভ্রান্ত ও দিশাহীন।
কিন্তু আমরা ঈশ্বরবিশ্বাসীরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামসের ক্ষেত্রে কি দেখলাম? কি জানতে পারলাম? তিনি ঈশ্বর বিরোধী? তিনি কি ঈশ্বর অবিশ্বাসী? তিনি কি ঈশ্বর বিদ্বেষী? তিনি কি ঘোরতর নাস্তিক? সোশ্যাল মিডিয়ার মারফত আমরা কি দেখলাম ও কি জানতে পারলাম তা' পরবর্তী ভিডিওতে আলোচনা করবো। ( লেখা ২২শে মার্চ'২০২৫)
No comments:
Post a Comment