আজও দেওঘরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে।
কেন? কিসের জন্য? কার জন্য? কার টানে?
'দেওঘরে দোল উৎসবে অগণিত মানুষের ঢল। কেন?' (১ম পর্ব) এই টাইটেলে একটা লেখা আমি এর আগে প্রকাশ করেছিলাম। সেই লেখাতে আমি বলেছিলাম, দেওঘর 'সৎসঙ্গ' ঠাকুরবাড়িতে বিভিন্ন বড় বড় উৎসবের দিনগুলি ছাড়াও সারা বছর প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কেন আসে? কি জন্যে আসে? কার কাছে বা কার টানে আসে? আমি বলেছিলাম এই নিয়ে পরবর্তী লেখাতে আলোচনা করবো। আসুন আলোচনা করি। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায় আমি থাকবো। দর্শক, শ্রোতা ও সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা আপনারা আমার এই বিশ্লেষণমূলক আলোচনার প্রেরণা।
যাই হ'ক, দেওঘরের বড় বড় উৎসব ছাড়াও এই যে বছরের প্রতিটি দিন ঠাকুরবাড়িতে মানুষের ঢল নামে এর একটাই কারণ তা হ'লো,
চৈতন্য ভাগবতে বলা আছে,
“অদ্যাপিহ সেই লীলা করে গোরা রায়, কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।”
বর্তমানে সেই গোরা রায় লীলা করেন দেওঘরের মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' ও বিশ্বের ১০কোটি সৎসঙ্গীর প্রাণের আরাম, নয়নের বিরাম, হৃদয়ে অবিরাম ব'য়ে চলা আনন্দ ধারার উৎস, মনের প্রশান্তি, বাঁচার অক্সিজেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে।
অবতারী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হলেন সেই গোরা রায়। যিনি যুগে যুগে লীলা করেছেন প্রভু রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু ও ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে এবং অবশেষে আবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে আবির্ভূত হ'য়ে লীলা ক'রেছিলেন। এই লীলার কথা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথাপ্রসঙ্গে প্রায় সময়ই তুলে ধরতেন, ইঙ্গিত দিতেন ভক্তমন্ডলীদের মাঝে চৈতন্য ভাগবতে বলা “অদ্যাপিহ সেই লীলা করে গোরা রায়, কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়" আবৃত্তি ক'রে।
প্রতিদিন দেশ বিদেশের আর্ত মানুষেরা অর্থাৎ পীড়িত, দুঃখিত, কাতর, বা বিপন্ন মানুষেরা ছুটে আসেন দেওঘর সৎসঙ্গে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে। তারা ছুটে আসে অসুস্থতা থেকে, কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, ছুটে আসে মন খারাপ থেকে, ব্যথা বেদনা থেকে রেহাই পেতে, ছুটে আসে দূর্বল ও অসহায় অবস্থা থেকে ত্রান পেতে, ছুটে আসে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে। ছুটে আসে সমস্যা জর্জরিত ব্যক্তি জীবন ও সংসার জীবন থেকে মুক্তির সমাধান পেতে।
এই ছুটে আসার ঘটনা অবিরাম ঘটেছিল শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন সময়ে এবং ১৯৬৯ সালে দেহ রাখার পর থেকে আজ ২০২৫সালে ৫৫বছর ধ'রে ঘটে চলেছে বিরামহীনভাবে। আর এই আসা ক্রমবর্দ্ধমান। যা' কিনা গত ১৪ই মার্চ' বৃহস্পতিবার দোল উৎসবে প্রমাণিত।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-এর বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রকট! শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর খুব স্পষ্টভাবে বা বিশেষভাবে প্রকাশিত। তিনি বাকসিদ্ধ পুরুষ। তিনি যা বলেন, যাকে যা বলেছেন, তা' নিখুঁত, অভ্রান্ত। যারা তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথা, প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ ভালো ক'রে মন দিয়ে শুনেছেন, মনে রেখেছেন এবং অর্থ বুঝে হুবহু পালন করেছেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মত তা' ফলেছে!
এখানে কোনও পক্ষপাতিত্ব বা দালালি, চামচাগিরির কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত অতি শৈশবে এ কথা ঠিক। শ্রীশ্রীঠাকুরের নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর বয়সে নাম পেয়েছি, ১২ বছর বয়সে দীক্ষা হয়েছে, স্বস্ত্যয়নী হয়েছে ভরা যৌবনে, এ কথাও ঠিক। ১২ বছর বয়সে দীক্ষা দিয়েছেন আমার মা-বাবা। কিন্তু স্বস্ত্যয়নী নিয়েছি আমি নিজে আমার ইচ্ছাতেই আমার ভরা যৌবনে। ব্যস এই পর্যন্ত। আমি কোনও ঋত্বিক, যাজক বা কোন অধ্বর্য্যুও নই। হওয়ার ইচ্ছেও কোনোদিন ছিল না, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। আমি সৎসঙ্গ জগতের কোনও পরিচিত বিশিষ্ট ভক্ত বা বিশিষ্ট বক্তাও নই। আমি সাধারণ একজন সৎসঙ্গী। ঠাকুরকে ভালোবাসি, আরও গভীর ভালোবাসতে চেষ্টা করি। কারণ তিনি বিশ্বের সমস্ত বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, তিনি জাগতিক ও মহাজাগতিক সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত, সর্বজ্ঞ। ShreeShree Thakur Anukulchandra is the greatest wonder of all the wonders of the world. He is omniscient, aware of all things, both mundane and cosmic. তাই তাঁকে ভালোবাসি।
বিশ্বজুড়ে ১০কোটি সৎসঙ্গীদের আদরের বড় ভাই, নয়নের মণি পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদাকে। ঠাকুর পরিবারের সবাইকে ভালোবাসি। শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে খাঁটি রক্ত ব'য়ে যাচ্ছে রক্ত তাই সেই রক্ত ব'য়ে যাচ্ছে যাদের যাদের শরীরে, রেত ধারার মধ্যে সুপ্ত হ'য়ে আছে শ্রীশ্রীঠাকুর যার যার মধ্যে তাঁদের প্রত্যেককেই ভালোবাসি, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার পূজনীয়। প্রত্যেকের মধ্যেই শ্রীশ্রীঠাকুর কম বেশী প্রকট। তাই তাঁরা আমার পূজার যোগ্য, আরাধ্য, শ্রদ্ধেয়, গুরুস্থানীয় বা সম্মানিত।
আর, শ্রীশ্রীঠাকুর নিজের হাতে এক ও একমাত্র যে সংগঠন তৈরী ক'রে গেছেন তা' হ'ল 'সৎসঙ্গ'। এই 'সৎসঙ্গ' সংগঠনের মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি এই 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠা ক'রেছিলেন।
কলিযুগে ভয়ংকর পাপ থেকে, অভিশপ্ত জীবন থেকে, মহাপ্রলয় থেকে, ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানুষকে বাঁচাবার জন্য, কলিযুগ থেকে সত্যযুগে মানবজাতিকে নিয়ে যাবার জন্য তার যে মিশন, তিনি যে Blue print রচনা করেছিলেন সেগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছিলেন। আর, সেই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর পরম ভরসার, পরম নির্ভরতার কেন্দ্র তাঁর আত্মজ, প্রথম সন্তান পরম আদরের বড়খোকার ওপর। যিনি বিশ্বজুড়ে ১০কোটি সৎসঙ্গীদের বড়ভাই ও শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ভক্ত এ যুগের হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা।
শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন নিখুঁত, অভ্রান্ত, সত্যদ্রষ্টা, সর্ব্বদর্শী, সর্ব্বজ্ঞ, সর্ব্বশক্তিমান; তার প্রমাণ তিনি তাঁর সৃষ্ট সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে তুলে দিয়ে যেতে হবে এই ভয়ংকর ধান্দাবাজ ভন্ড ভক্তদের যুগে, ঘোর অন্ধকারের যুগে, সীমাহীন অপকর্ম ও দুঃখের যুগে এবং কলহ ও কপটতার যুগে তা' তিনি জানতেন। তিনি জানতেন তাঁর চলে যাবার পর তাঁর সৃষ্ট সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-এর দখলদারী নিয়ে চলবে তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত ভক্তমন্ডলীদের মধ্যে হিংস্র কামড়াকামড়ি। তিনি জানতেন, তাঁর ভক্তমন্ডলীরা তাঁকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নেবে। তিনি এও জানতেন সংখ্যাগরিষ্ঠ তথাকথিত কথার স্রোতে ভাসা, বক্তৃতায় যাত্রার ঢঙে ঝড় তোলা বক্তা ও বহুনৈষ্ঠিক ভক্তমন্ডলী আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে, ক্ষমতা দখল ও অর্থের লোভে ভুলে যাবে শ্রীশ্রীঠাকুর যে সৃষ্টিকর্তা। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে সর্ব্বদর্শী, তিনি যে সর্ব্বজ্ঞ, তিনি যে সর্ব্বশক্তিমান তা' ভুলে যাবে সেইসমস্ত সাজা সৎসঙ্গীর দল, কপট ভক্তমন্ডলী। তিনি জানতেন তাঁকে আয়ের উপকরণ ক'রে নেওয়া এই সমস্ত ছোটো বড়, অখ্যাত ও বিখ্যাত ভক্তমন্ডলী ঘরে-বাইরে উভয়দিক থেকেই পিছন থেকে ছুরি চালাবে। তিনি জানতেন তাঁর সুযোগসন্ধানী ধান্দাবাজ, কপট, ভন্ড, ক্ষমতালোভী, আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী, ছোটো-বড়, প্রতিষ্ঠিত ও অপ্রতিষ্ঠিত, অখ্যাত-বিখ্যাত দীক্ষিত সৎসঙ্গীরা তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ'-এর পতাকার তলায় এক হ'য়ে থাকবে না, ভেঙে দেবে তাঁর সৃষ্ট এক ও একমাত্র সংগঠন 'সৎসঙ্গ'। তাঁর ভক্তমন্ডলী তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে, ভিতর থেকে প্রতিনিয়ত চক্রান্ত চালিয়ে যাবে এবং কেউ কেউ সৎসঙ্গের বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে যার যার ইচ্ছামত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নাম দিয়ে সংগঠন তৈরী ক'রে বাইরে থেকে তাঁর স্বপ্ন, তাঁর মিশন, তাঁর রচিত যে Blue print তা' সমস্ত ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হবে তাঁকে, তাঁর বলাগুলিকে, তাঁর উপস্থিতিকে অস্বীকার ক'রে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার বাহানায়। তিনি যে তাঁর ভালোবাসার, তাঁর প্রাণের যে সংগঠন 'সৎসঙ্গ' তৈরী ক'রে গেলেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানকে তাঁর অবর্তমানে রক্ষা করা ও সেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাঁর মিশনকে একে একে ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত ক'রে তোলার জন্য তিনি যে তাঁর চোখের মণি, তাঁর প্রাণ, তাঁর পরম আদরের, পরম ভালোবাসার আধার বড় খোকাকে দিয়ে গেলেন তাঁকে মানতে পারবে না, অস্বীকার করবে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথমসারীর পরম ভক্তমন্ডলীরা এবং তা' সংক্রামক ব্যাধির মত যে ছড়িয়ে পড়বে সাধারণ আপামর সীমাহীন ভাঙাচোরা সৎসঙ্গীদের মধ্যে এবং সেই সুযোগে যে যার মত গড়ে তুলতে লাগবে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও অর্থের লোভে শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে নানা প্রতিষ্ঠান সাধারণ সহজ, সরল, বোকা, মূর্খ, বেকুব, অজ্ঞ, ভীরু, দূর্বল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সীমাহীন ভাঙাচোরা মানুষকে বিভ্রান্ত ক'রে মূল কেন্দ্র থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে রাখার জন্য, এ-সবই তিনি আগাম জানতেন।
এর মধ্যে এমনও লোকজন ও সংগঠন আছে ও আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে যারা বাইরের আর্থিক সহযোগীতায় মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে তুলবে শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে নানা নামে এ কথাও তিনি জানতেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি সর্ব্বজ্ঞ, তিনি সর্ব্বদর্শী, তিনি সর্ব্বব্যাপী, তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি সত্যদ্রষ্টা, তিনি পরম পুরুষ, তিনি পরম কারণ, তিনি পরম অস্তিত্ব, তিনি পরম উৎস, তিনি পুরুষোত্তম, তিনি পরমপিতা। তাই তিনি এই সমস্ত কিছু জানতেন।
আর, জানতেন বলেই তিনি এবারে একেবারে একইসঙ্গে তাঁর ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক'রে নামিয়ে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর পরম ভক্ত হনুমানকে তাঁর বড়খোকা রূপে। যা' এর আগে তিনি যতবার এসেছেন, কখনও হয়নি।
এই কথা ধর্ম ও ঈশ্বরবিশ্বাসী বালখিল্য মানুষদের মধ্যে, তাঁর ১০কোটি দীক্ষিত সৎসঙ্গীদের মধ্যে কে মানলো, আর না-মানলো, কে বিশ্বাস করলো আর অবিশ্বাস করলো, কে পালন করলো আর না-করলো তা'তে তাঁর কিচ্ছু আসে যায় না। মহাপ্রলয়ের আগে ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ পেয়ে নোয়া যেমন নৌকা তৈরী ক'রে মহাপ্লাবণ থেকে বাঁচিয়েছিলো বিশ্বাসীদেরকে তেমনি কলিযুগের শেষে মহাপ্রলয়ের হাত থেকে বাঁচবে বিশ্বাসী সৎসঙ্গীরা। তাই পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদা বলেছিলেন, তাঁর রথ চলে যাচ্ছে যেমন ক'রে পারো টেনে হেঁচড়ে রথে উঠে পড়ো, তারপর নিশ্চিন্ত হ'য়ে যাও।
আর, ভয়ংকর কঠোর, কঠিন, দৃঢ়, শক্ত, অনমনীয়, এবং নিয়ম বা কাজের ক্ষেত্রে খুবই কড়া ও নির্ভুল অথচ কোমল, নরম, মৃদু, ললিত, মধুর, সুকুমার, স্নিগ্ধ ও সুন্দর অন্তর, মন, প্রাণের অধিকারী বিশ্বজুড়ে ১০কোটি সৎসঙ্গীদের নয়নের মণি শ্রীশ্রীবড়দার হাতে শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ ত্যাগ করার আগে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন 'সৎসঙ্গ'-এর দায়িত্বভার নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায়।
শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পরে পরেই সত্য হয়েছিল ও প্রকট হ'য়ে উঠেছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের আগাম জানাগুলি। ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক প্রতিকূল পরিবেশের চড়াই উৎরাই সমস্যা জর্জরিত কণ্টকিত পথ পেরিয়ে, সীমাহীন বাধা, অপমান, কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনার ঝড় জলকে উপেক্ষা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের নিজের হাতে গড়া 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে কড়া হাতে, কঠোর, কঠিন, অনমনীয় ও কোমল মনে বুক দিয়ে আগলে রেখে রক্ষা করেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। প্রকৃতির বুকে তাঁর চরিত্রের মোক্ষম নিখুঁত উদাহরণ যেমন নারকেল। উপরে শক্ত, কঠিন, রুক্ষ ভিতরে নরম, কোমল, রসময়!
সেই শ্রীশ্রীবড়দার কঠোর ও কোমল হাত ধ'রে ছুটে চলা 'সৎসঙ্গ' -এর ব্যাটন শ্রীশ্রীবড়দার উপযুক্ত, যোগ্য, দক্ষ ইষ্টপ্রাণ উত্তরসূরী শ্রীশ্রীদাদার হাত ধ'রে আজ শ্রীশ্রীঠাকুরের ৪র্থ পুরুষ বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার হাতে।
শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রকট। শ্রীশ্রীবাবাইদাদার জীবনে শ্রীশ্রীঠাকুর সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান, বিশেষভাবে ব্যক্ত। বৃষ্টি শেষে আকাশের কালো মেঘ সরে গিয়ে মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়া সূর্য যেমন চতুর্দিকে আলো ছড়িয়ে প্রকাশিত হয় ও তার আলোয় ঝিকমিক ক'রে ওঠে বৃষ্টির পরে বৃষ্টির জলে স্নাত সমস্ত গাছপালা এবং গাছের পাতায় জমে থাকা ছোট্ট জলকণার মধ্যে, জমে থাকা স্ফটিকের মত স্বচ্ছ জলকণার মধ্যে যেমন ঐ বিশাল সূর্য তার সমস্ত রূপ নিয়ে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয় আর সেখান থেকে ছিটকে পরে আলো আর সেই আলোতে ধাঁদিয়ে যায় চোখ ঠিক সেইরকম পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র জলকণার মধ্যে প্রস্ফুটিত সূর্যের মত, অন্ধকার আকাশের বুকে পূর্ণিমার চাঁদের মত সম্পূর্ণ রূপে শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে প্রস্ফুটিত। এ বোঝে সে, প্রাণ বোঝেও যার।
তাই, এক্ষেত্রেও বলা যায়, “অদ্যাপিহ সেই লীলা করে গোরা রায়, কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।”
এ কথার অর্থ সেই গোরা রায় অর্থাৎ সেই শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, সেই শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, সেই শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ সেই একজনই ত্রেতা যুগ থেকে, দ্বাপর যুগ পার হ'য়ে কলি যুগে লীলা ক'রেছেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে এসে লীলা ক'রে গেলেন আর ব'লে গেলেন, "ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম, প্রতীক গুরু বংশধর, রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।" ব'লে গেলেন এবার এলাম সব ডিসক্লোজ ক'রে দিয়ে গেলাম, এবার হাঠে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে গেলাম। আর, যা দিয়ে গেলাম আগামী দশ হাজার বছর কিছু লাগবে না।"
এই কথার অর্থ এবার শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে সুপ্ত থেকে প্রকট হ'য়ে উঠবেন তার বংশধরদের কারও মধ্যে আর তাঁর মাধ্যমেই তাঁর ব'লে যাওয়া কথাগুলি ধীরে ধীরে ইমপ্লিমেন্ট ক'রে তুলবেন বংশপরম্পরায় দশ হাজার বছর। আর যদি এর মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্মেল উবে যাওয়ার মত হয়, ম্লান হ'য়ে যায় তখন তিনি আবার আসবেন ঈশী স্পর্শে মানুষকে সঞ্জীবিত ক'রে তুলতে।
আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরকে শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে লীলা করতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। শ্রীশ্রীঠাকুর ভয়ঙ্করভাবে মধ্যগগণের সূর্যের মত সূর্যের দীপ্তি নিয়ে, রাতের আকাশে্র পূর্ণিমার চাঁদের মত প্রকট হ'য়ে উঠেছেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে! শ্রীশ্রীবাবাইদাদার দীর্ঘ দেহ, আজানুলম্বিত বাহু, ঋজু শরীর ও মন, তাঁর হাঁটাচলা, বসা, কথা বলা, আচার, আচরণ, কথাবার্তা, শরীরী ভাষা, তাঁর চোখ, চোখের চাউনি, হাবভাব, তাঁর মুখমণ্ডল, মুখের হাসি, অঙ্গুলি হেলন, তাঁর অসীম ভালোবাসা, অগাধ জ্ঞান, নিখুঁত নির্ভূল মুখনিঃসৃত কথা, গভীর ও কঠিন কঠিন বিষয়ের সহজ সরল বিশ্লেষণ, সমস্ত হালকা ও গূঢ় কঠিন প্রশ্নের ও সমস্যার তৎক্ষণাৎ উত্তর ও সমাধান প্রতিমুহুর্তে বিস্ময়ের চরমে নিয়ে যায়, ভাবতে বাধ্য করে কে ইনি? ইনি কে? কে তুমি?
আর্তরা ছুটে আসছেন তাঁর কাছে প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে দুঃখ থেকে,
কষ্ট থেকে, মন খারাপ হওয়া থেকে, অসুস্থতা থেকে, ব্যথা বেদনা থেকে, বিপদ থেকে, দূর্বল ও অসহায় অবস্থা থেকে, হতাশা, অবসাদগ্রস্থতা থেকে মুক্তি পেতে।
অর্থার্থীরা ছুটে আসে অর্থ বা সম্পদের প্রতি আগ্রহী বা প্রত্যাশী হয়ে, বিষয় সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্যের জট খুলতে।
জ্ঞানীরা ছুটে আসছেন জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য। নিখুঁত জ্ঞান লাভের জন্য আগ্রহী হয়ে।
জিজ্ঞাসুরা ছুটে আসছেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে কৌতূহলী হ'য়ে একটি অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে জাগতিক ও মহাজাগতিক নানা বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য, গবেষণা করার জন্য অথবা নানাবিধ জটিল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ক'রে উত্তর জেনে নেবার জন্য।
তাই বছরের প্রতিদিন ভিড় লেগে রয়েছে নাটমন্ডপে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সামনে। হাজার হাজার নারীপুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে নিবেদন ক'রে চলেছে সকাল ও সন্ধ্যে। দেশ বিদেশের ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, চিকিৎসা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ের বিশিষ্টরা ছুটে আসছেন তাঁর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে।
আর, ক্লান্তিহীন ভাবে প্রতিদিন শ্রীশ্রীআচার্যদেব সবার মুখোমুখী হচ্ছেন যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে অপেক্ষারত আর্ত, অর্থার্থী মানুষের লাইন। জ্ঞানী, জিজ্ঞাসু বিশিষ্টদের আলাপ আলোচনা। হাসিমুখে স্পষ্টভাবে মিষ্টিভাষায় আর্ত, অর্থার্থী, জ্ঞানী ও জিজ্ঞাসু সবার সব সমস্যার ও সব প্রশ্নের সহজ সরল নিখুঁত নির্ভূল সমাধান ও উত্তর দিয়ে চলেছেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব! একদৃষ্টে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ও তাঁর কথা, তাঁর সমাধানবাণী, তাঁর উত্তর শুনতে শুনতে মনে হয় যেন শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং তাঁর সমস্ত জ্যোতি চারপাশে ছড়িয়ে বসে আছেন সামনে!! শ্রীশ্রীআচার্যদেব যখন সমস্ত হাজারো নানারকম বিভিন্ন বিষয়ের উপর কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেন, বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান দেন তখন সেই উত্তর ও সমাধানবাণী শুনে মনে হয় তিনি যে একনাগাড়ে বলে যাচ্ছেন, সেই মুখনিঃসৃত কথা অদ্ভুত অভাবনীয় নিখুঁত নির্ভূল এক উচ্চমার্গের অমৃতময় সাহিত্য! সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক যখন কোনও কিছু রচনা করেন তখন তার ওপর তারা বারবার কলম চালান, কাঁটা ছেঁড়া করেন। কিন্তু শ্রীশ্রীআচার্যদেব যেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের হুবহু প্রতিমূর্তি! একইরকমভাবে সারাটা বছর মানুষের আগমন ও প্রশ্নোত্তরের, কথোপকথনের ট্রাডিশান ব'য়ে চলেছে প্রকাশ্যে হাজারো লোকের সামনে! কোনও কথার কাঁটাছেঁড়া নেই, নেই কথার পরিবর্তন! শ্রীশ্রীআচার্যদেবের শ্রীমুখ দিয়ে যা বেড়িয়ে যাচ্ছে তাই-ই বেদবাক্য! শ্রীশ্রীঠাকুর একবার বলেছিলেন, "When you speak i stand in front of your tongue." যার অর্থ যখন তুমি কথা বলো তখন আমি তোমার জিভের অগ্রে দাঁড়িয়ে কথা বলি। যা' সূর্যের মত সত্য হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন সকাল বিকাল দেওঘর ঠাকুরবাড়ির নাটমন্ডপে। সেই সূর্যকে, সেই গোরা রায়ের লীলাকে, সেই রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভাগ্যবানেরা দেখতে পাচ্ছে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে বছরের প্রতিটি দিন! এই অদ্ভুত লীলা চাক্ষুস করছে প্রতিদিন হাজার হাজার আর্ত, অর্থার্থী, জ্ঞানী ও জিজ্ঞাসু মানুষ। তাই দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিন মানুষ ছুটে ছুটে আসছে দেওঘরে ঠাকুরবাড়িতে আজও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুভব করার জন্য, উপভোগ করার জন্য। গমগম করছে বছরের ৩৬৫ দিন দেওঘর ঠাকুরবাড়ি।
আসুন এই রস আস্বাদন করি, চক্ষু কর্ণের বিবাদ দূর করি, শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সান্নিধ্যে এসে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতা মুক্ত হ'ই। আমরা ভাগ্যবান হ'ই।
( লেখা ২১শে মার্চ'২০২৫)