V. K. Foundation ( Vasudhaiv Kutumbakam Foundation) এর কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম। Little Buddha International Pre-School তার একটা ইউনিট। এছাড়া আছে একটা হেলথ ইউনিট, যার নাম A.S.S অর্থাৎ অনুত্তর-সম্যক-সম্বোধি । শ্রীশ্রীআচার্যদেবের আশীর্বাদে ও পরামর্শে এই ইউনিট গড়ে উঠেছে কলকাতার বেহালা অঞ্চলে। এই হেলথ ইউনিটের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য কিছুদিন আপনাদের সামনে আসতে পারিনি। এই হেলথ ইউনিট 'A.S.S অর্থাৎ অনুত্তর-সম্যক-সম্বোধি' বিষয়ে একদিন আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরবো। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে এই কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি হয়েছে সেই বিষয়ে আজকের ভিডিওতে এ আমার নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলা।
মনুষ্য জাতি তার প্রকৃত হিরোকে খুঁজে পায়নি বলেই আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও সবাই সব ক্ষেত্রের পন্ডিত মহাপুরুষেরা মারণ যজ্ঞেরই পুরোহিত জান্তে-অজান্তে। হিরো দুরকমের। এক, Fullfiller the great (মহাপুরুষ), দুই, Fullfiller the best (পুরুষোত্তম)। যিনি Fullfiller the great তিনি জীবনের যে কোনও একটা বা একের অধিক দিককে বড় ক'রে তুলে ধরেন বা ধরার ক্ষমতা রাখেন কিন্তু সব দিক তুলে ধরতে পারেন না এবং জীবনের সমগ্রতায় তার সর্ব্বতোমুখী সমাধান পাওয়া যায় না, সমস্যার নিখুঁত সমাধান তাঁরা জানেন না। আর যিনি Fullfiller the best অর্থাৎ পুরুষোত্তম, তিনি সর্বজ্ঞ, তাঁর মধ্যে জগতের বা জীবনের সর্ব্বতোমুখী সমাধান দেখতে পাওয়া যায়। তিনি সর্ব সমস্যার সমাধানকারি।
একজনের একটা কমেন্ট পড়েছিলাম, " সক্রেটিস নাকি বলেছেন, যে জাতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য 'হিরো' লাগে, সেটাই সঙ্কটের।"
এখন ব্যাপারটা হচ্ছে,
সক্রেটিস হিরো বা সর্ব্বকালের হিরো হ'তে পারেন কিন্তু তিনি Fullfiller the best নন, তিনি Fullfiller the great; আর তাই তিনি বলেছেন "যে জাতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য 'হিরো' লাগে, সেটাই সঙ্কটের", যদি বলে থাকেন। সক্রেটিস যদি এই কথা ব'লে থাকেন তাহ'লে তার রেফারেন্স দিয়ে কথাগুলি বললে আমাদের মতন সাধারণ পাঠক বা অল্পজ্ঞানীদের একটু সুবিধা হয়, অযথা বিতর্ক হয় না, কথার সত্যতা বজায় থাকে আর বোঝার চেষ্টা করতাম এর আগে বা পিছনে কোনও কথা আছে কিনা। কিসের বা কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই কথা বলেছেন সেটা বোঝা যেত। কিন্তু যেহেতু কোনও রেফারেন্স নেই আর আমিও এই কথাটা সক্রেটিস বলেছেন কিনা জানি না তাই কিছু বলা সম্ভব নয়। রেফারেন্স না থাকলে অকারণ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আর, জীবনের নানা জটিলতার মাঝে ঘরে-বাইরে সবসময় চলতে ফিরতে বা অন্যকিছুতে ব্যস্ত থাকায় কিংবা অন্যমনস্কতার কারণে রেফারেন্স রাখা সম্ভবও হ'য়ে ওঠে না। তাই সক্রেটিস যদি বলেও থাকেন তাহ'লে হয়তো তিনি সাধারণ মানুষের সীমাহীন শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দুর্বলতার কথাকে মাথায় রেখেই হয়তো বা বলতে চেয়েছিলেন এই কথা। যে নিজেকে জাগাতে পারে না, যে জেগে ঘুমিয়ে থাকে, যে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে বুঁদ হ'য়ে থাকে, যে নিষ্ক্রিয় কল্পনাবিলাসী, যে বই পড়ে বই হ'য়ে গেছে, যে কর্ম করে না অথচ সৎ চিন্তা করে আর ডূডু তামাক খায় পারিষদ নিয়ে, যে পরনির্ভরশীল, যে সেজেগুজে সাজানো বাগানে ফুল তুলতে আসে, যে শুধু নিরাপদ আশ্রয়ে ঠান্ডা ঘরে বসে দু-এক পেগ সাথে জ্ঞানের বোমা ফাটায় অর্থাৎ ইত্যাদি ইত্যাদি এইসমস্ত অপকর্মের যারা ভাগীদার তাদের সম্পর্কে হয়তো সক্রেটিস বলতে চেয়েছেন "যে জাতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য 'হিরো' লাগে, সেটাই সঙ্কটের"।
আর, জাতির জীবনে অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে, ক্ষয়রোগকে রুখে দিতে হিরোর প্রয়োজন হয়ই হয়। যে জাতিই জীবনে বড় হয়েছে, এগিয়ে গেছে অসভ্যতা, কুসংস্কার, ভীরুতা, দুর্বলতা ইত্যাদির বর্ম ভেদ ক'রে তার সামনে একজন বা একাধিক হিরো বা পথ প্রদর্শক ছিল। একজন great বা best fulfiller ছিলেন। কয়েকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হবে।
যেমন,
১) মারাঠা জাতিকে এমন শক্তিশালী একগাট্টা করেছিলেন শিবাজী মহারাজ। নতুবা মারাঠা জাতী আজ ইতিহাসের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠা জাতি হিসেবে বিবেচিত হ;তো না। যার গ্রাফ আবার নাবতে শুরু করেছে হিরোকে অনুসরণ করার অভাবে বা বর্তমান হিরোর অভাবে। আবার শিবাজীর পিছনে ছিলেন রামদাস। গুরু বা হিরো বা পথপ্রদর্শক যাই বলা হ'ক না কেন রামদাস না থাকলে শিবাজী শিবাজী মহারাজ হ'তে পারতেন না।
২) স্বৈরাচারী, কামুক, মাতাল পাগল ধনানন্দের সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে বিশাল অভূতপূর্ব মৌর্য সাম্রাজ্য গঠন করেছিলেন যে হিরো তিনি ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। আবার একজন সাধারণ অথচ প্রতিভাশালী বালক চন্দ্রগুপ্তের পিছনে ছিলেন যে হিরো, যিনি সামান্য, সাধারণ চন্দ্রগুপ্তকে পরম যত্নে অসামান্য, অসাধারণ বানিয়েছিলেন তাঁর নাম হচ্ছে চাণক্য।
৩) আবার মহাভারতের ১৮দিনের ভয়ংকর যুদ্ধে যিনি হিরো ছিলেন তিনি অর্জুন। আর মহাবীর অর্জুনের পিছনে যে হিরো ছিলেন তিনি হলেন fulfiller the best হিরো শ্রীকৃষ্ণ।
৪) আর, প্রবল প্রতাপান্বিত রাণা প্রতাপ নিজে জনগণের হিরো হলেও তাঁর পিছনে কোনও সত্যদ্রষ্টা হিরো বা সর্বজ্ঞ হিরো কেউ ছিলেন না বলে তিনি জীবনে সফল হ'তে পারেননি। তাই জনগণের সামনে একজন হিরো বা Great fulfiller চায় আর হিরোর পিছনে একজন Best fulfiller বা সর্বজ্ঞ হিরো চায়।
আবারো বলছি, মন, যাই করো আর না করো, মানো আর না মানো, গ্রহণ করো আর না করো, স্বীকৃতি দাও আর না দাও, প্রশংসা করো আর না করো বা নিন্দা করো, স্বীকার করো আর না করো সূর্য যেমন পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়, এ যেমন চিরন্তন সত্য, ঠিক তেমনি চিরন্তন সত্য,
"জনগণের সামনে একজন হিরো বা Great fulfiller চায় আর হিরো বা Great Fulfiller-এর পিছনে একজন Best fulfiller বা সর্বজ্ঞ হিরো চায়।" তবেই রাম রাজ্য বলে যদি কিছু থাকে, স্বর্গ ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে, সত্য যুগ ব'লে যদি কিছু থাকে একদিন তা প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে, সত্য হবেই হবে, হবেই হবে। তবে তা' হবে একেবারে ধ্বংস হ'য়ে যাওয়ার পর।
তাই, যে জাতি তার প্রকৃত হিরোকে খুঁজে পায় না তার ক্ষয়রোগের উৎসকে কখনই চিহ্নিত করা যাবে না, নিরাময় তো দূর অস্ত। যা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি। যে ক্ষয়রোগ গোটা মানবজাতিকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে এসেছে। তাকে উদ্ধারের জন্য, রক্ষা করার জন্য হিরো একটা লাগেই লাগে। তা সে fulfiller the great বা Fulfiller the best সে যেই হ'ক না কেন। তবে fulfiller the best হলেন সর্বজ্ঞ। তিনি যদি মানবজাতির মাথার ওপর থাকেন আর তাঁকে যদি Fulfiller the great (মহাপুরুষ) সহ মানবজাতি নিখুঁত অনুসরণ করেন, করেন তাঁর চলনপূজা সমস্ত মানুষ তাহ'লে আর কোনও সঙ্কটের সৃষ্টি হয় না, ক্ষয়রোগের অস্তিত্বই থাকে না।
নতুবা বিশ্বের যে যতবড় পন্ডিত লেন্ডিত হ'ক না কেন, যতবড় Fulfiller the great হ'ক না কেন সবার সবকথা বকোয়াস, অর্থহীন ফলে মনুষ্যত্বের ভিত ধ্বংস হ'য়ে মানবজাতীর ক্ষয়রোগ বৃদ্ধি পেতে পেতে চরম অনিরাময় যোগ্য সংকটের ঘোর কালো অন্ধকার মাথার ওপর আকাশ ঢেকে ফেলে দেবে ও চিরকালের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। কোনও Fulfiller the great অর্থাৎ মহাপুরুষ বা হিরো জাতি, সমাজ, সভ্যতা, দেশকে সংকট ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
মন সাবধান।
No comments:
Post a Comment