পারসোনাল ডিপার্ট্মেন্টে আমার এক আত্মীয় ছিল গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে। সম্পর্কে মামা। তাঁকেও জানালাম ব্যাপারটা। তিনি খুব গম্ভীরভাবে আমার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করলেন। আমি ইউনিয়ন করি, দাদাগিরি করি, কোম্পানির ভেতরে মারামারি করেছি ইত্যাদি নানা অপ্রিয় কথা শুনিয়ে আমাকে কোনও সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানালেন। সত্যি ঘটনা জানিয়ে তাঁকে আমি যে প্রকৃতপক্ষে নির্দোষ সেটা বোঝাবার চেষ্টা করলাম। আমি তাঁর কাছে সাহায্য চাইলাম। বললাম, এটা আমাকে ফাঁসাবার চক্রান্ত। দেখা করতে চাইলাম কোম্পানির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। কারণ চাকরীটা আমি পেয়েছি সরাসরি প্রেসিডেন্টের আনুকূল্যে; কারও মাধ্যমে নয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার কথায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হ'য়ে গেলেন। কেন রেগে গেলেন হঠাৎ বুঝলাম না। তখন অত বয়স ছিল না বোঝার মতো। বয়স ২৫বছর। তিনি রেগে প্রেসিডেন্ট কি তোর--------ব'লে গজগজ ক'রে নিজের অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে গেলেন। আমি আরও অসহায় হ'য়ে পড়লাম। কি করবো, কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভেঙে পড়তে চাইছিলো শরীর-মন। মনকে শক্ত ক'রে নিয়ে ফিরে এলাম বাড়িতে।
পরের দিন সকালে ফাস্ট আউয়ারে সোজা ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের কাছে গেলাম। সেখানে তাঁকে সব বললাম। আমি নিরপরাধ জানিয়ে তাঁর সাহায্য চাইলাম। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। তিনি বললেন, আগে আপনি শো কজের উত্তর দিন। তারপরে আপনার সব কথা শুনবো। আর কোনও কথা শুনতে চাইলেন না। বললেন, আপনি এখন আসুন। আমি বললাম, একবার আমাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ক'রে দিন। আমি তাঁকে সত্যটা জানাতে চাই। আমার এই সহজ সরল কথাটাকে ঔদ্ধত্ব মনে ক'রে বিরক্ত হ'য়ে বললেন, এটা আপনার বাড়ি না অফিস? প্রেসিডেন্ট আপনার সঙ্গে দেখা করবে? আমি বললাম, দেখা না করুক, অন্তত তিনি জানুন আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই। ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আমার দিকে চেয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলেন। তারপর ধীর গম্ভীর স্বরে বললেন, আপনি এখন আসুন। আপনাকে সময় মতো ডেকে নেওয়া হবে। বুঝলাম সব কেমন যেন আমার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। আমি নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। চেম্বারে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম অফিসের সমস্ত স্টাফ আমার দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মাথা উঁচু ক'রেই বেরিয়ে এলাম কিন্তু লজ্জা ও অস্বস্তি নিয়ে।
প্রবি( লেখা ১০ই জুন, ২০২৩)
No comments:
Post a Comment