Powered By Blogger

Monday, June 3, 2024

প্রবন্ধঃ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর বাণী "যদা যদা হি ধর্মস্য---------"

আজকে আমি পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে আলোচনা করবো। শ্রীশ্রীকৃষ্ণ প্রেমীরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, সমালোচনা করে ফেসবুকে, ইউ টিউবে। আমার প্রতিটি ভিডিওতে দেখুন কৃষ্ণপ্রেমীরা পরপর কন্টিনিউ শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে কুৎসামন্ডিত কমেন্ট করে চলেছে। আমাকে আমার পরিচিত ঘনিষ্ট জনেরা, ফেসবুক বন্ধুরা ফোন ক'রে, মেসেঞ্জারে ও কমেন্ট বক্সে অনুরোধ করেছে এই সম্পর্কে কিছু বলার জন্য।

এছাড়া রেশমি শ্রীমানি আমাকে অনুরোধ করেছে
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত| অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজম্যহম্ ||পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম্ | ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ||
(গীতা-৪/৭-৮)।

এই বাণীটির উপর যদি একটা ভিডিও বানান খুব উপকৃত হবো। অনেককেই দেখি গীতার শ্লোক কে বিশ্লেষণ করতে কিন্তু এই শ্লোক কে সেরকম ভাবে বিশ্লেষণ করতে দেখিনা। যদি আপনি করেন ভালো হয়।
তাই, সকলের অনুরোধে আমি আজকের ভিডিওতে এসেছি।

ফেসবুকে গীতা নিয়ে, গীতার বাণী নিয়ে অনেকেই চর্চা ও পোষ্ট করেন। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের হাতে নাড়ু বা লাড্ডু ও পরবর্তী সময়ে বাঁশী আর গাই সাথে বহু ছবিও পোষ্ট হয়। কখনোই মনে হয় না পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ বাস্তবের কোনও চরিত্র ছিলেন। নানারকম জমকালো জবড়জং পোশাকে অমূর্ত ভগবানের মত তাঁকে হাজির করা হয় মানুষের কাছে। মনে হয় অনেক দূরের কল্পনার জগতের কেউ একজন। নিজের ঘরের আপনজন ব'লে মনে হয় না। তাই সেই নাড়ু আর লাড্ডু হাত এবং গোমাতা সাথে বাঁশী হাত যে ফিল্ড মার্শালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হ'য়ে ভয়ঙ্কর মহাভারতের যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, ভারতের তাবড় তাবড় ভয়ঙ্কর পরাক্রান্ত যোদ্ধারা তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কাছে, অসীম অনন্ত জ্ঞান, যুদ্ধ বিদ্যার অভূতপূর্ব কূট কৌশলের কাছে পরাস্ত হয়েছে, তাঁর পরাক্রমের কাছে, তাঁর প্রচন্ড বাহুবলের কাছে হয়েছে ধ্বস্ত বিধ্বস্ত, খড়কুটোর মত খসে পড়ে গেছে, তাঁর সেই সমস্ত ভয়ঙ্কর পরাক্রমের কথা তুলে ধরা হয় না। প্রচার হয় না। জায়গায় জায়গায় ন্যাকা ন্যাকা গলায় বুড়োবুড়িদের সামনে গীতা পাঠ হলেও গীতার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ শ্লোকটা কখনই পড়া হয় না, ব্যাখা করা হয় না। হয় জানে না নতুবা সযত্নে এড়িয়ে যায়। ইয়ং জেনারেশনের কাছে কখনই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে তাঁর ভয়ঙ্কর ক্ষমাহীন কাঠিন্যে ভরা পৌরুষকে তুলে ধরা হয়নি, কখনও হয়না। আর তা কখনও মেয়েলী ন্যাকা ন্যাকা গলায় সখীভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। রক্তমাংসের জীবন্ত ঈশ্বরের ভয়ঙ্কর ভয়াল রূপ আমরা তিন তিনবার দেখেছি, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরাম, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীহজরৎ মহম্মদ, কিন্তু কোনওবারই তাঁদের ঐ ভয়াল ভয়নক্ রূপকে তাঁর সৃষ্টি মানুষের বাঁচা-বাড়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়নি। তুলে ধরা হয়নি প্রজাবৎসল পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের নিখুঁত রাজ্য শাসনের ছবি। শুধু ১৪ বছর বনবাস আর রাবনের সাথে যুদ্ধ হালকা ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বালগোপালের ছবি, সখিদের সঙ্গে লীলাখেলা, বাঁশী হাতে রাখাল বালক আর অর্জুনকে গীতার উপদেশ ছাড়া তাঁর পরাক্রমের বহু বহু কাহিনী চাপা পড়ে গেছে, যেমন চাপা পড়ে গেছে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদের অন্তহীন মহা সমুদ্রের প্রেম ভালোবাসার দিকটা। প্রেমিক পুরুষ প্রভু মহম্মদকে তুলে ধরা হয়নি। প্রভু মহম্মদের অন্যায়কারী ও অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তাঁর ভয়াল রূপের পাশাপাশি তাঁর দয়াল রূপকে কখনই তুলে ধরা হয়নি। ইতিহাসের বুকে এঁদের একটা দিক উন্মোচিত হয়েছে তো আর একটা দিক উপেক্ষিত থেকে গেছে। আর, তিনি যতবারই এসেছেন ততবারই তাঁকে সমাজের মূল স্রোত থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সরিয়ে রাখা হয়েছে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ক'রে।
আর, যদি পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের '"যদি যদা যদা হি---" শ্লোক না জেনে থাকে তবে বালখিল্য জ্ঞান নিয়ে গীতা পাঠের আসরে বসে কেন গীতা পাঠ করতে? আর যদি জেনে থাকে তাহ'লে এড়িয়ে যায় কেন? খোঁজে না কেন? শ্রীকৃষ্ণের কথা বিশ্বাস করে না, নাকি তাঁর নোতুন রূপের কাছে সারেন্ডার করতে ইগোতে বাধে, নাকি মৌরসী পাট্টার অবসান হ'য়ে যাবে তাই? নোতুন রূপকে যদি চিনতেই না পেরে থাকে তাহ'লে তাদের সাধনা কি বৃথা বা ব্যর্থ নয়? পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের অনেক পরম ভক্ত আছেন যারা শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত হ'য়েও তাঁর নোতুন রূপকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন প্রশ্ন ব্যর্থ হয়েছেন নাকি নোতুন রূপকে গ্রহণ করতে তাদের ইগোতে বা স্বাধীন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি হয়েছিল?
উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে, সীমাহীন চরম যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দের জেলে বসেই আধ্যাত্মিক জীবনের বিকাশ ঘটেছিল। জেলের ছোট্ট একই ঘরে থাকা, খাওয়া ও মলমূত্র ত্যাগ এই চরম অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে মৃত্যুই ছিল একমাত্র কাম্য। কিন্তু সেই অবর্ণনীয় অতি জঘন্য, পৈশাচিক, নারকীয় পরিবেশে তিনি জেলে বসেই পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ৩৬ বছর। অথচ ঠিক সেই সময় পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ তাঁর ষষ্ট রূপ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে লীলা করছেন এই ভারতের পূণ্যভূমি বাংলার বুকে বাঙ্গালী হ'য়ে। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বয়স ছিল ২০ বছর। তাহ'লে আধ্যাত্মিক পুরুষ শ্রীশ্রীঅরবিন্দ কেন তাঁর আরাধ্য দেবতা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দর্শন পেলেন না? সহজভাবে ভাবলে দেখা যেতে পারে যে যে রূপের কাছে নামময় হ'য়ে ডুবে থাকে, লীন হ'য়ে যায় সেই রূপে ঈশ্বর তাঁকে সেই সেই রূপে দেখা দেন। ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ কৃষ্ণ রূপে ও নামে মগ্ন হ'য়েছিলেন জেলে বন্দী থাকা অবস্থায়। কিন্তু কেন তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপের কাছে আসতে পারলেন না? কেন তিনি শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নবরূপে আসা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে চিনতে পারলেন না? তিনি কি তাঁর কোনও খবরই পাননি? ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ ১৯৫০ সালে ৭৮ বছর বয়সে দেহ ত্যাগ করেন যখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বয়স ছিল ৬২ বছর। ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ শ্রীশ্রীঠাকুরের চেয়ে ১৬বছরের বড়। ৭৮ বছর বয়সে শ্রীশ্রীঅরবিন্দ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপ ৬২ বছর বয়সের শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের খবর পাননি? তিনিও তো গীতা পাঠ করেছিলেন। সেখানে ৪র্থ অধ্যায়ে ৭-৮ নম্বর শ্লোকে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ "যদা যদা হি ধর্ম্মস্য------" বাণীর মধ্যে দিয়ে পুনরায় আসার কথা ব'লে গেলেন গীতার সেই শ্লোক কি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ পড়েননি? নাকি বোঝেননি? নাকি খোঁজেননি? কোনটা জানি না। যদিও বলা হ'য়ে থাকে তিনি নাকি বলেছিলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুসরণ করবে।
অথচ তাঁরই ছোটো ভাই শ্রীবারীন ঘোষ শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপের সন্ধান পেলেন, সঙ্গ করলেন ও তাঁর দীক্ষা গ্রহণ ক'রে তাঁকে জীবনে গ্রহণ করলেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রচারে তিনি ব্রতী হলেন। কেন?। তাহ'লে কে ভাগ্যবান বেশী? একজন ৫০০০হাজার বছর আগে আসা ঈশ্বরের রূপের দেখা পেলেন স্বপ্নে, আর, একজন তাঁরই ভাই ঈশ্বরের জীবন্ত রক্তমাংসের নবরূপের বাস্তবে দেখা পেলেন। কেন?
মনে প্রশ্ন ওঠা কি অন্যায়, অনুচিত? এরকম উদাহরণ আরও দেওয়া যেতে পারে।
যাই হ'ক,
আসলে আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য হ'লো, কেন শ্রীশ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্তেরা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের গীতা অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করা সত্ত্বেও গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ৭-৮ নম্বর শ্লোক সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যা করেন না? নাকি সেই ৪র্থ অধ্যায়টাই পড়েননি বা পড়ান না? বা এড়িয়ে যান? কোনটা?
আর, আমার প্রায় প্রতিটি ভিডিওর কমেন্ট বক্সে দেখবেন শ্রীকৃষ্ণ প্রেমীরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে তুলোধোনা ক'রে ছাড়ছে কুৎসা আর গালাগালিতে ভরা মন্তব্যে। তারা কৃষ্ণ প্রেমে এমনই মাতাল যে শুধু তাঁর জন্মের সময়ের ও বাল্যকালের গল্পকথা, সখীদের সাথে প্রেম-ভালোবাসার রসের গল্পগাথা, কৌতুক কাহিনী ইত্যাদি প্রচার ক'রে চলে। তিনি প্রেমিক পুরুষ, বংশীবাদক, সমস্ত বিষয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পুরুষ ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে যে তিনি মহাবলী, মহাপরাক্রমী শক্তিমান কূট কৌশলী সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা,, যুদ্ধবিশারদ ও ফিল্ড মার্শাল ছিলেন সেই কথা আর আলোচনা হয় না। তাই পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ বুড়োবুড়িদের আর নারীপুরুষ ভক্তদের কাছে এখনও বালগোপাল হ'য়েই র'য়ে গেলেন।

তাই যারা গীতার শ্লোক পোষ্ট করেন ফেসবুকে, ব্যাখ্যা করেন, শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য প্রচার করেন, শ্রীশ্রীকৃষ্ণের প্রেমে মাতোয়ালা হ'য়ে বুকের মধ্যে থাকা প্রেমের বরফ গলে ঝর্ণা ক'রে ভাসিয়ে দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন কেন তাঁকে শ্রীকৃষ্ণের নবরূপ বলা হয় এই ক্ষোভে, সৎসঙ্গে ও মন্দিরে কেন শ্রীকৃষ্ণের ছবি রাখা হয় না ইত্যাদি নানা অভিযোগে ঘৃণ্য সমালোচনা, নিন্দা, গালাগালি করেন ফেসবুকে, ইউটিউবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সনাতন ধর্মের প্রচারে, তাদের জিজ্ঞেস করি, গীতা আপনি বা আপনারা পড়েছেন? শ্রীকৃষ্ণকে আপনি বা আপনারা মানেন? যদি মানেন কেন মানেন, আর, যদি না মানেন কেন মানেন না, বলবেন? যুক্তিই তো একমাত্র সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার অস্ত্র আর সেই মোক্ষম অস্ত্র যুক্তিকেই উড়িয়ে দেন কেন? যদি আপনার/আপনাদের অগাধ জ্ঞান ভান্ডার থাকে তাহ'লে আপনারা যুক্তির পিছনে যুক্তি দাঁড় করিয়ে প্রমাণ ক'রে দিন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ভুল, মিথ্যা, ফ্রড। এখন হঠাৎ ক'রে ফেসবুকে ও ইউ টিউবে আপনাদের গীতার প্রচার করবার কথা মনে পড়েছে? এত হাজার হাজার বছর গীতা পাঠ প্রচার হয়নি? হাজার হাজার বছর ধ'রে কোটি কোটি মানুষ মারা গেল আর শ্রাদ্ধের সময় হাতে গীতা তুলে দেওয়া হ'লো ব্রাহ্মণ ও নিমন্ত্রিতদের হাতে, লক্ষ লক্ষ গীতা বিক্রি হ'লো, তখন প্রচার হয়নি? সবার ঠাকুর ঘরের কুলুঙ্গিতে গীতা লাল শালু আর সিঁদুর মাখিয়ে তুলে রাখা হ'লো তখন প্রচার হয়নি, তখন আপনাদের টনক নড়েনি?। বিশ্বজুড়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের কথা বিদ্যুৎ গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, নানাদেশ, নানাভাষা, নানামতের কোটি কোটি মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে 'সৎসঙ্গ'-এর' পতাকার তলে, শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষায় দীক্ষিত হচ্ছেন হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মমতের মানুষ তখন আপনাদের গীতা প্রচারের কথা মনে পড়েছে? শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বালখিল্য ভালোবাসা জেগে উঠেছে? শ্রীশ্রীকৃষ্ণ ছাড়া তাঁর পূর্ব রূপ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র এবং তাঁর পরবর্তী রূপ বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের কথা মনে পড়ে না/ তাঁরা সনাতন ধর্মের প্রতিনিধি বা সৃষ্টিকর্তার জীবন্ত রূপ নন? হজরত মহম্মদ আর প্রভু যীশুর কথা ছেড়ে দিলাম, বুদ্ধদেব, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণকে নিয়ে আপনাদের কিছু বলার আছে কি?
আচ্ছা, গীতায় কটা অধ্যায় আর কটা শ্লোক আছে বলবেন? আর, গীতার মধ্যে কোন শ্লোকটা সর্বশ্রেষ্ঠ সেটা জানেন? একথা মানেন? জানলে বলবেন? আর, বুকে হাত দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নাম স্মরণ ক'রে বিবেককে সাক্ষী রেখে বলবেন, আপনি, আপনারা গীতার ১৮টি অধ্যায়ে ৭০০টি শ্লোক পাঠ করেছেন? সত্য বলবেন। সেখানে ৪র্থ অধ্যায়ের ৭-৮ নম্বর শ্লোকটি কি জানেন? পড়েছেন শ্লোকটি? পড়েন শ্লোকটি? মনে প্রশ্ন জেগেছে কোনওদিন শ্লোকটির অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে?
তাই শ্রীকৃষ্ণপ্রেমীদের আরও জিজ্ঞেস করি, দাদা, কে শ্রীশ্রীকৃষ্ণের প্রচার করলো আর না করলো সেটা তো আপনার বা আপনাদের দেখার নয়, যদি আপনি বা আপনারা মনে করেন গীতার প্রচার দরকার তা' আপনি বা আপনারা করুন না, আপনাকে বা আপনাদের কেউ বাধা দিয়েছে? কথায় আছে, "আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়। কাউকে কিছু বলার আগে নিজেরা গীতা পড়ুন, জানুন, বুঝুন, তারপর প্রচার করুন। এটা মাথায় রাখবেন আজ ৫০০০ হাজার পর শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বালখিল্য লাফালাফি করছেন আপনারা সবাই, তাও, তাঁকে ও তাঁর কথা না বুঝে। ৫০০০ হাজার বছর আগে আপনার মত লোকেরা শ্রীকৃষ্ণকেও সেদিন গালাগালি, কুৎসা ও চরম বিরোধীতা করেছিল। আর, তারাই আবার জন্ম নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নবরূপকে গালাগালি ক'রে সেই ট্রাডিশান বজায় রেখে চলেছে। হঠাৎ ক'রে যেমন কেউ রাতারাতি জীবাত্মা থেকে মহাত্মা হ'তে পারে না, পরম ভক্ত হ'তে পারে না ঠিক তেমনি রাতারাতি কেউ নোংরা গালাগালি করতে পারে না। এটা জন্মগত সংস্কারের ব্যাপার।
যাই হ'ক কথাটা ভেবে দেখবেন। আজ আপনার, আমার, আমাদের সবার জন্য গীতা পাঠ, গীতার প্রচার, গীতার শ্লোক "যদা যদা হি ধর্ম্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত, অভ্যুতানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম, পরিত্রানায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম ধর্ম্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে" বাণীর সত্যতা উন্মুক্ত হ'ক, সত্য উন্মুক্ত হওয়ার দরকার আছে।
তাই বলি, যারা গীতা পাঠ করেন, যারা গীতার প্রচার করেন তারা আগে বুঝুন তাদের এই মানসিকতা কিসের লক্ষণ। তারা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ৭-৮ নম্বর "যদা যদা হি---" শ্লোক বিশ্বাস করেন কিনা আর বিশ্বাস করলে তাঁর আবার আসার কথা তারা খোঁজ করেছেন কিনা। যেখানে সেখানে, যার তাঁর পিছনে, যে কোনও মহাত্মার পিছনে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের ব্যভার করা হয়, প্রয়োগ করা হয় নির্বোধের মত। ধর্ম্ম জগত থেকে কোনও প্রতিবাদ হয় না। তিনি যতবার এসেছেন ততবারই পুনরায় তাঁর আসার ইংগিত দিয়ে গেছেন। এই শ্লোক সত্যের মুখোমুখি আজ দাঁড়াবার সময় এসে গেছে। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হ'য়ে যাবার মোক্ষম সময় উপস্থিত। শ্রীশ্রীকৃষ্ণ তাঁর ব'লে যাওয়া অনুযায়ী পুনরায় এসেছেন কিনা, এলো কোথায় কোথায় এসেছেন, কি কি রূপে এসেছেন?
আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পার্ট ২ ভিডিওতে শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হাতে, গোপীনি সাথে, বালগোপাল রূপে নাড়ু খেতে দেখা ও অসীম মানবতার কোমল রূপের পরিচিত দিক ছেড়ে প্রকৃত তাঁর ভয়ঙ্কর কঠিন-কঠোর আর দুর্ধর্ষ অপ্রতিরোধ্য প্রকৃতি তুলে ধরবো। জয়গুরু।

No comments:

Post a Comment