Powered By Blogger

Friday, June 14, 2024

প্রবন্ধঃ চাষা আর লুটেরা ও বেকুব আমি! (১)

চাষা চাষ ক'রে আনন্দে আর লুটেরা লুট করে পরমানন্দে! আর 'বেকুব আমি'!?
'বেকুব আমি' আঁটি হ'য়ে পড়ে থাকে তলানিতে!


কথাটা বললাম অনেক রাগ আর ক্রোধকে বুকের মধ্যে চেপে রেখে! ভাবছিলাম আর অবাক হ'য়ে যাচ্ছিলাম এই ভেবে যে আমি কি সহিষ্ণুতার অভ্যাস যোগ করছি! ঐ যোগাভ্যাস চলাকালীন মনে হচ্ছিল এটা কি ঐ প্রত্যুষে 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' "আমি অক্রোধী, আমি অমানি, আমি নিরলস, কাম-লোভজিৎ বশী----" ইত্যাদি ইত্যাদি পাঠের ফল!? আবার এটাও মনে হচ্ছিল, কথায় কথায় এত রাগের-ই বা কি আছে? একটু সয়ে বয়ে চললেই তো হয়! আসলে মনে হয় জগত সংসারটাই এডজাস্টমেন্টের! তাই কে যেন ভিতর থেকে বলে উঠলো, কুল ডাউন বন্ধু! কুল ডাউন!


যাই হ'ক, এবার আর হেঁয়ালি না ক'রে বলেই ফেলি ঘটনাটা।


আমার ও আমার পরিবারের রেশন কার্ড না থাকার কারণে রেশন তোলার সুযোগ পাওয়ার জন্য উত্তরপাড়া কোতরং মিউনিসিপ্যাল অফিসে অফিসের নির্দেশানুসার ফর্ম ফিল আপ করেছিলাম। কিছুদিনপর কাল অফিস থেকে ফোন এসেছিল রেশন কুপন নেওয়ার জন্য আজ দুপুর ১২টার সময় অফিসে প্রমাণপত্র সহ যেতে হবে। ফোন কে করেছিলেন জানি না তবে যিনি করেছিলেন তার কথা বলার মধ্যে ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া! কথা ব'লে খুব ভালো লাগছিল! অবাক হ'য়ে গিয়েছিলাম কোনও অফিস থেকে কেউ এত ধৈর্য্য নিয়ে আন্তরিকভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে বলতে পারে! আসলে অভ্যস্ত ন'ই বলেই এই অবাক হওয়ার ব্যাপার!


যাই হ'ক সেই ফোনের নির্দেশমত গিয়েছিলাম মিউনিসিপ্যাল অফিসে। সেখানে পৌঁছে গেটের বাইরে দুই হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম আর নির্দিষ্ট ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম দরজার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। আমিও সেইমত গিয়ে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস ক'রে জানলাম সবাই রেশন কুপন নিতে এসেছে। এক এক ক'রে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাবে। দাঁড়াবার বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বেরিয়ে এসে জেনে নিলেন সবাই রেশন কুপন নিতে এসেছেন কিনা। লাইনে দাঁড়ানো সবাই প্রত্যুত্তরে হ্যাঁ বললাম। লাইনে দাঁড়িয়ে গরম লাগছিল। ছেলেকে বললাম একটু লাইনে দাঁড়াতে। ছেলে লাইনে দাঁড়ালে আমি গিয়ে সিঁড়ির সামনে রোড মিনিস্টারের ঘরের সামনে ফ্যানের নিচে জিতে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম চারপাশ। চারপাশের অফিস কর্মচারী ও অফিসে বিভিন্ন কাজে আসা সব মানুষের মুখে মাস্ক! এর




আগে যখন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম তখন পাশ দিয়ে 'সরুন' ব'লে যাওয়ার সময় মুখে মাস্ক লাগানো একজনের শরীরী ভাষা এমন ছিল যেন মনে হচ্ছিল, 'আমি অছ্যুৎ'!!!!!!! মনে মনে ভাবলাম, সত্যি করোনা! কি মহান তোমার শক্তি! রাতারাতি সবাই সবাইয়ের কাছে আজ অছ্যুৎ! সবাই সবাইকে চলছে এড়িয়ে, দূরত্ব বজায় রেখে চলছে আদানপ্রদান!!!!! ভালোই হয়েছে, নিরাপত্তা হয়েছে সুনিশ্চিত! বিশেষ ক'রে নারীদের! আর সবচেয়ে যেটা বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আজ পৃথিবীর সব মানুষকে করোনা তুমি পেরেছো করতে রামভক্ত হনুমান! যারা হয়নি হনুমান অফিসে, পথেঘাটে, হাটেবাজারে তারা নিশ্চিত শয়তান কিলবিসের অনুচর!!!!!!!!!!


এরকম নানা উল্টোপাল্টা উদ্ভট ভাবনা ভাবছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর দেখছিলাম এস্ট্যাবলিশমেন্ট সেকশনের দরজার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম লোকটা ঢুকছে কিনা। কারণ আমার লাইনের নম্বর ছিল ৬ । মনে মনে ভাবলাম হয়তো এখনও শুরু হয়নি কাজ। যাই হ'ক এর মধ্যে অনেকেই ভিতরে ঢুকছে ও বেরুচ্ছে। কে কি জন্য ঢুকছে তা অবশ্য জানার উপায় নেই, জানারও ইচ্ছা নেই। এরকম একজনকে দেখলাম সঙ্গে একজনকে নিয়ে গটমট করতে করতে ঢুকে পড়লো ভিতরে। তারপর কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো হাতে কাগজ নিয়ে। পাশ দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেবে যাওয়ার সময় হাতে ধরা খোলা কাগজটা ভালো ক'রে লক্ষ্য করলাম কিন্তু কাগজটা কিসের তা বুঝতে পারলাম না। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলাম কাগজটা কি! ইতিমধ্যে দরজা খুলে একজন বেড়িয়ে এসে লাইনের সামনে দাঁড়ানো লোকটিকে ভিতরে যেতে বললো এবং তারপর কিছুক্ষণ পরপর এক একজন লোক ভিতরে গিয়ে কিছু সময় পরে হাতে রেশন কুপন নিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। লাইনের প্রথম লোকটি যখন বেরিয়ে এলো তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার হাতের কাগজ আর ঐ লাইনে না দাঁড়িয়ে পরে এসে ভিতরে ঢুকে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়া লোকটার হাতের কাগজ একইরকম দেখতে। লোকটিকে জিজ্ঞেস করাতে আমাকে কাগজ অর্থাৎ কুপন দেখিয়ে বললো যে সে কুপন পেয়েছে। কুপনটা দেখে চিনতে পারলাম আগের লোকটার হাতের কাগজটাকে। যা বোঝার বুঝে গেলাম। তারপরে আমার সময় যখন এলো তখন ভিতরে গিয়ে যখন নিজের ও পরিবারের কুপন হাতে পেলাম তখন হাতের কুপন আর ঐ এসেই লাইনে না দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢুকে কাগজ হাতে বেরিয়ে যাওয়া লোকটার হাতের কাগজটা যে একই অর্থাৎ ঐ লোকটা লাইনে না দাঁড়িয়েই যে প্রভাব খাটিয়ে কুপন নিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে গেল সেই বিষয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত হ'য়ে গেলাম আর তখন নিজেকে নিজের আরও একবার মনে হ'লো শালা! 'বেকুব'! নইলে শাসকগোষ্ঠীর হ'য়ে জীবন নিংড়ানো 'বেকুব তুমি' লাইনে দাঁড়িয়ে থাকো আর নেপোয় পিছন থেকে এসে দই মেরে দিয়ে চলে গেল! তারপরে নিজেকে নিজেই বললাম, এটা কি কোনও অস্বাভাবিক আশ্চর্যের ঘটনা নাকি স্বাভাবিক সাধারণ ঘটনা! কে ঠিক আর কে ভুল? 'বেকুব আমি' নাকি ঐ চালাক চতুর নেপোয় মারে দই গাই!?


চারপাশে তাকাতে তাকাতে মুখের মুখোশটা খুলে প্রশ্ন শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে একবুক নিঃশ্বাস নিলাম। জানি না কি নিঃশ্বাস নিলাম! করোনা জীবাণু মিশ্রিত অক্সিজেন নাকি নেপোদের ছেড়ে যাওয়া কৃষ্টি মিশ্রিত অক্সিজেন নাকি ফ্রেশ-------; জানি না।


যাই হ'ক আমি যখন ছেলেকে সরিয়ে নিজে এসে লাইনে দাঁড়ালাম তখন দেখলাম লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেকের মুখে মাস্ক। চেয়ারম্যানের ঘরের পাশ দিয়ে একজন মহিলাকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখলাম, দেখলাম মুখে মাস্ক নেই, হাতে কাগজের বান্ডিল নিয়ে আমার পাশ দিয়ে পাশের একটা অফিস ঘরে ঢুকে পড়লো। দেখে চিনতে পারলাম। আমারই এলাকায় থাকে, বছর কয়েক হয়েছে বাইরে থেকে এসে এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে রয়েছে। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল কিন্তু আমায় চিনতে পারলো না।চিনতে না পারার কারণ হ'তে পারে মাস্ক। কিন্তু এত সামনাসামনি আমাকে চিনতে না পারার মত কোনও কারণ ছিল না। আমাকে শুধু যে চেনে তাই নয়, প্রথম যখন এখানে বাইরে থেকে এসেছিল তখন আমিই ছিলাম এলাকায় রাজনীতিতে যুক্ত ও রাজনৈতিক লোকেদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। তারপর ধীরে ধীরে একে একে পরিচিত হ'তে হ'তে আজকের এই অবস্থান। পার্টির কারও কারও মুখে শুনেছিলাম, "এসেই ছক্কা মেরে দিয়েছে! এলাম দেখলাম আর জয় করলাম-এর মত তলে তলে কাজ যা হাসিল করার ক'রে নিয়েছে, নেপোয় মারে দই-এর মত!" যা শুনেছিলাম তা আজ প্রমাণ হ'লো! চক্ষু কর্ণের বিবাদ দূর হ'লো। মহিলা এসেই নেতাদের সঙ্গে মেলামেশার মধ্যে দিয়ে মহিলা কর্মী থেকে নেত্রী হ'য়ে মিউনিসিপ্যালিটি অফিসে একটা চাকরি বাগিয়ে নিয়েছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দেখলাম অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে আবার চলে গেল পাশ দিয়ে পরিচিত মহিলাটি! মনে মনে ভাবলাম, এটা সম্পূর্ণ মেয়েটির ক্রেডিট! যেভাবেই হ'ক নতুন এসেই দলের পুরনোদের টপকে আজকের দিনে চাকরি হাসিল করা যোগ্যতা না থাকলে সম্ভব নয়। যোগ্যতা অবশ্য অবশ্যই আছে। সেই যোগ্যতাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছে! এ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলে সিনিয়র বা পুরনোদের কিংবা ভালো পরিশ্রমী যোগ্য ও দক্ষ সৎ কর্মীদের কোনও গুরুত্ব নেই! সস্তা চাটুকারীতে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত ব্যাপারস্যাপার খুবই সহজলভ্য এখানে!!


পাশ দিয়ে চলে যাবার সময় মেয়েটার গন্তব্যপথের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পুরোনোদিনের ছবিগুলো মনের মধ্যে ছবির মত একের পর এক ভেসে উঠতে লাগলো!!!!!
ক্রমশঃ
( লেখা ১৪ই জুন, ২০২০)

No comments:

Post a Comment