Powered By Blogger

Sunday, June 30, 2024

প্রবন্ধঃ আত্মদর্শন ও স্বগতোক্তি (১)

V. K. Foundation ( Vasudhaiv Kutumbakam Foundation) এর কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম। Little Buddha International Pre-School তার একটা ইউনিট। এছাড়া আছে একটা হেলথ ইউনিট, যার নাম A.S.S অর্থাৎ অনুত্তর-সম্যক-সম্বোধি । শ্রীশ্রীআচার্যদেবের আশীর্বাদে ও পরামর্শে এই ইউনিট গড়ে উঠেছে কলকাতার বেহালা অঞ্চলে। এই হেলথ ইউনিটের কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য কিছুদিন আপনাদের সামনে আসতে পারিনি। এই হেলথ ইউনিট 'A.S.S অর্থাৎ অনুত্তর-সম্যক-সম্বোধি' বিষয়ে একদিন আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরবো। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে এই কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি হয়েছে সেই বিষয়ে আজকের ভিডিওতে এ আমার নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলা।


মনুষ্য জাতি তার প্রকৃত হিরোকে খুঁজে পায়নি বলেই আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও সবাই সব ক্ষেত্রের পন্ডিত মহাপুরুষেরা মারণ যজ্ঞেরই পুরোহিত জান্তে-অজান্তে। হিরো দুরকমের। এক, Fullfiller the great (মহাপুরুষ), দুই, Fullfiller the best (পুরুষোত্তম)। যিনি Fullfiller the great তিনি জীবনের যে কোনও একটা বা একের অধিক দিককে বড় ক'রে তুলে ধরেন বা ধরার ক্ষমতা রাখেন কিন্তু সব দিক তুলে ধরতে পারেন না এবং জীবনের সমগ্রতায় তার সর্ব্বতোমুখী সমাধান পাওয়া যায় না, সমস্যার নিখুঁত সমাধান তাঁরা জানেন না। আর যিনি Fullfiller the best অর্থাৎ পুরুষোত্তম, তিনি সর্বজ্ঞ, তাঁর মধ্যে জগতের বা জীবনের সর্ব্বতোমুখী সমাধান দেখতে পাওয়া যায়। তিনি সর্ব সমস্যার সমাধানকারি।


একজনের একটা কমেন্ট পড়েছিলাম, " সক্রেটিস নাকি বলেছেন, যে জাতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য 'হিরো' লাগে, সেটাই সঙ্কটের।"


এখন ব্যাপারটা হচ্ছে,
সক্রেটিস হিরো বা সর্ব্বকালের হিরো হ'তে পারেন কিন্তু তিনি Fullfiller the best নন, তিনি Fullfiller the great; আর তাই তিনি বলেছেন "যে জাতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য 'হিরো' লাগে, সেটাই সঙ্কটের", যদি বলে থাকেন। সক্রেটিস যদি এই কথা ব'লে থাকেন তাহ'লে তার রেফারেন্স দিয়ে কথাগুলি বললে আমাদের মতন সাধারণ পাঠক বা অল্পজ্ঞানীদের একটু সুবিধা হয়, অযথা বিতর্ক হয় না, কথার সত্যতা বজায় থাকে আর বোঝার চেষ্টা করতাম এর আগে বা পিছনে কোনও কথা আছে কিনা। কিসের বা কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই কথা বলেছেন সেটা বোঝা যেত। কিন্তু যেহেতু কোনও রেফারেন্স নেই আর আমিও এই কথাটা সক্রেটিস বলেছেন কিনা জানি না তাই কিছু বলা সম্ভব নয়। রেফারেন্স না থাকলে অকারণ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আর, জীবনের নানা জটিলতার মাঝে ঘরে-বাইরে সবসময় চলতে ফিরতে বা অন্যকিছুতে ব্যস্ত থাকায় কিংবা অন্যমনস্কতার কারণে রেফারেন্স রাখা সম্ভবও হ'য়ে ওঠে না। তাই সক্রেটিস যদি বলেও থাকেন তাহ'লে হয়তো তিনি সাধারণ মানুষের সীমাহীন শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দুর্বলতার কথাকে মাথায় রেখেই হয়তো বা বলতে চেয়েছিলেন এই কথা। যে নিজেকে জাগাতে পারে না, যে জেগে ঘুমিয়ে থাকে, যে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে বুঁদ হ'য়ে থাকে, যে নিষ্ক্রিয় কল্পনাবিলাসী, যে বই পড়ে বই হ'য়ে গেছে, যে কর্ম করে না অথচ সৎ চিন্তা করে আর ডূডু তামাক খায় পারিষদ নিয়ে, যে পরনির্ভরশীল, যে সেজেগুজে সাজানো বাগানে ফুল তুলতে আসে, যে শুধু নিরাপদ আশ্রয়ে ঠান্ডা ঘরে বসে দু-এক পেগ সাথে জ্ঞানের বোমা ফাটায় অর্থাৎ ইত্যাদি ইত্যাদি এইসমস্ত অপকর্মের যারা ভাগীদার তাদের সম্পর্কে হয়তো সক্রেটিস বলতে চেয়েছেন "যে জাতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য 'হিরো' লাগে, সেটাই সঙ্কটের"।


আর, জাতির জীবনে অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে, ক্ষয়রোগকে রুখে দিতে হিরোর প্রয়োজন হয়ই হয়। যে জাতিই জীবনে বড় হয়েছে, এগিয়ে গেছে অসভ্যতা, কুসংস্কার, ভীরুতা, দুর্বলতা ইত্যাদির বর্ম ভেদ ক'রে তার সামনে একজন বা একাধিক হিরো বা পথ প্রদর্শক ছিল। একজন great বা best fulfiller ছিলেন। কয়েকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হবে।
যেমন,
১) মারাঠা জাতিকে এমন শক্তিশালী একগাট্টা করেছিলেন শিবাজী মহারাজ। নতুবা মারাঠা জাতী আজ ইতিহাসের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠা জাতি হিসেবে বিবেচিত হ;তো না। যার গ্রাফ আবার নাবতে শুরু করেছে হিরোকে অনুসরণ করার অভাবে বা বর্তমান হিরোর অভাবে। আবার শিবাজীর পিছনে ছিলেন রামদাস। গুরু বা হিরো বা পথপ্রদর্শক যাই বলা হ'ক না কেন রামদাস না থাকলে শিবাজী শিবাজী মহারাজ হ'তে পারতেন না।


২) স্বৈরাচারী, কামুক, মাতাল পাগল ধনানন্দের সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে বিশাল অভূতপূর্ব মৌর্য সাম্রাজ্য গঠন করেছিলেন যে হিরো তিনি ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত। আবার একজন সাধারণ অথচ প্রতিভাশালী বালক চন্দ্রগুপ্তের পিছনে ছিলেন যে হিরো, যিনি সামান্য, সাধারণ চন্দ্রগুপ্তকে পরম যত্নে অসামান্য, অসাধারণ বানিয়েছিলেন তাঁর নাম হচ্ছে চাণক্য।


৩) আবার মহাভারতের ১৮দিনের ভয়ংকর যুদ্ধে যিনি হিরো ছিলেন তিনি অর্জুন। আর মহাবীর অর্জুনের পিছনে যে হিরো ছিলেন তিনি হলেন fulfiller the best হিরো শ্রীকৃষ্ণ।


৪) আর, প্রবল প্রতাপান্বিত রাণা প্রতাপ নিজে জনগণের হিরো হলেও তাঁর পিছনে কোনও সত্যদ্রষ্টা হিরো বা সর্বজ্ঞ হিরো কেউ ছিলেন না বলে তিনি জীবনে সফল হ'তে পারেননি। তাই জনগণের সামনে একজন হিরো বা Great fulfiller চায় আর হিরোর পিছনে একজন Best fulfiller বা সর্বজ্ঞ হিরো চায়।


আবারো বলছি, মন, যাই করো আর না করো, মানো আর না মানো, গ্রহণ করো আর না করো, স্বীকৃতি দাও আর না দাও, প্রশংসা করো আর না করো বা নিন্দা করো, স্বীকার করো আর না করো সূর্য যেমন পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিম দিকে অস্ত যায়, এ যেমন চিরন্তন সত্য, ঠিক তেমনি চিরন্তন সত্য,
"জনগণের সামনে একজন হিরো বা Great fulfiller চায় আর হিরো বা Great Fulfiller-এর পিছনে একজন Best fulfiller বা সর্বজ্ঞ হিরো চায়।" তবেই রাম রাজ্য বলে যদি কিছু থাকে, স্বর্গ ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে, সত্য যুগ ব'লে যদি কিছু থাকে একদিন তা প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে, সত্য হবেই হবে, হবেই হবে। তবে তা' হবে একেবারে ধ্বংস হ'য়ে যাওয়ার পর।


তাই, যে জাতি তার প্রকৃত হিরোকে খুঁজে পায় না তার ক্ষয়রোগের উৎসকে কখনই চিহ্নিত করা যাবে না, নিরাময় তো দূর অস্ত। যা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি। যে ক্ষয়রোগ গোটা মানবজাতিকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে এসেছে। তাকে উদ্ধারের জন্য, রক্ষা করার জন্য হিরো একটা লাগেই লাগে। তা সে fulfiller the great বা Fulfiller the best সে যেই হ'ক না কেন। তবে fulfiller the best হলেন সর্বজ্ঞ। তিনি যদি মানবজাতির মাথার ওপর থাকেন আর তাঁকে যদি Fulfiller the great (মহাপুরুষ) সহ মানবজাতি নিখুঁত অনুসরণ করেন, করেন তাঁর চলনপূজা সমস্ত মানুষ তাহ'লে আর কোনও সঙ্কটের সৃষ্টি হয় না, ক্ষয়রোগের অস্তিত্বই থাকে না।


নতুবা বিশ্বের যে যতবড় পন্ডিত লেন্ডিত হ'ক না কেন, যতবড় Fulfiller the great হ'ক না কেন সবার সবকথা বকোয়াস, অর্থহীন ফলে মনুষ্যত্বের ভিত ধ্বংস হ'য়ে মানবজাতীর ক্ষয়রোগ বৃদ্ধি পেতে পেতে চরম অনিরাময় যোগ্য সংকটের ঘোর কালো অন্ধকার মাথার ওপর আকাশ ঢেকে ফেলে দেবে ও চিরকালের জন্য ধ্বংস অনিবার্য। কোনও Fulfiller the great অর্থাৎ মহাপুরুষ বা হিরো জাতি, সমাজ, সভ্যতা, দেশকে সংকট ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
মন সাবধান।

কবিতাঃ দঙ্গলে মঙ্গলে।

সৎ পথে, অস্তিত্ব রক্ষার পথে চললে
যদি মনে হয় তুমি একা হ'য়ে পড়বে
কেউ দেবে না তোমায় সাথ
গ্রহণযোগ্যতা পড়বে মুখ থুবড়ে
তাহ'লে মুখে কিছু ব'লো না, প্রতিবাদ ক'রো না
বরং একা থাকো, থাকো তুমি দূরে নীরবে নিভৃতে
ভয় পেয়ো না মাথায় আছে তোমার পরমপিতার হাত।
বাঁচা বাড়ার পথে চললে যদি মনে করো
তোমায় করবে সবাই ত্যাগ
তাহ'লে তা হাসি মুখে নাও মেনে
ব'লো না কিছু তারে বা তাদেরে
জানবে ঐ ত্যাগ তোমার কাছে হবে আশীর্বাদ
আর দিন শেষে অবশেষে জোট ভাঙ্গা ভয়ংকর
একলা পরিবেশে ক্ষতবিক্ষত শরীরে মনে
ঐ তারাই করবে তোমায় সোহাগ।
বন্ধু! তুমি থেকো না, থেকো না বন্ধু
ঐ বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে টইটম্বুর দঙ্গলে
যেখানে তোমার অস্তিত্ব হয় বিপন্ন!
সরে থাকো দূরে থাকো থাকো অন্তরে বাহিরে
তাদের প্রতি নিয়ে সমবেদনা আর ভালোবাসা
তোমার সাহচর্যে একদিন ফিরবে তারা মঙ্গলে।
তোমার জীবন দেখে তারা বলবে সেদিন
কোথায় গেলে পাবো এমন জীবন খুঁজে?
সেদিন তুমি নিয়ে যাবে তাদের সেই জীবনের পারে
যেখানে তোমার জীবন শঙ্কাহীন, ভয়হীন
নির্মল হাসি আনন্দে আলোময় রসময় মধুময়
পরিবেশে বাঁচে-বাড়ে।
বলবে সেদিন, বন্ধু! জীবন খুঁজে পাবে হেথায়
ভালোবাসাময় দয়াল প্রভুর ঘরে! (লেখা ৩০শে জুন, ২০২১)

Friday, June 28, 2024

কবিতাঃ বন্ধু! ফিরে এসো!

আবার এসো বন্ধু! ফিরে এসো। রাখো হাতে হাত ।
বৃত্তি-প্রবৃত্তির বৃত্তে পিষ্ট হয়েছে অমূল্য যত সময়
তা পিছনে থাক, থাক পড়ে থাক।
তমসার পার অচ্ছেদ্যবর্ণ মহান পুরুষ
ইষ্টপ্রতীকে হ'য়ে আবির্ভূত দিচ্ছে তোমায় ডাক।
এসো, রাখো হাতে হাত!


অকারণ দ্বন্দ্ব আর মিথ্যের কায়ার ছত্রছায়ায়
কাটিয়েছো কত হাওয়াহীন গুমোট সকাল
অলীক মায়াময় স্যাঁতস্যাঁতে রাত!
সময় ঘড়ি ক'রে টিক টিক বলছে, 'ঠিক, ঠিক!
জীবনের মূল্যবান সময় হয়েছে হচ্ছে বেহাত!


জীবন সূর্য পাটে যাবার সময় হয়েছে শুরু
বুক দুরুদুরু! কত যে গেছে চলে এ পারের
ঠিকানা ছেড়ে পরপারে বরাবরের তরে
এ পারের যাত্রা শেষ ক'রে।
তুমি কি আর পাবে তারে?
লাইনে তুমিও আছো, আমিও আছি কাছাকাছি
পাশাপাশি হাত ধরাধরি ক'রে মৃত্যুর পারে।


তবুও সে কথা ভুলে অলীক মায়ার মোহন বাঁশির সুরে
ছুটে চলেছো পথ ভুলে বন্ধু ক্লান্তিহীন শ্রান্তিহীন পথ
নকলেতে মজিয়ে মন ভুলকে সাথী ক'রে!?
এসো বন্ধু! ফিরে এসো! ঘুম ভাঙো!
ভাঙো ঘুম অলীক মায়ার!!
হাত ধরাধরি ক'রে চলো যাই চলে যাই দুই ভাই
মত আর মাথাতে হ'য়ে একাকার!
(লেখা ২৯শে জুন, ২০২১)

বিচিত্রা ৮

মাঝে মাঝে মন বলে,
বাঁচিতে চাহি না আমি আর এই কুৎসিত ভুবনে;
দানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে না চাই।
এত বন্ধু, এত প্রিয়জন,
তবুও কেন যেন লাগে বড় একা
আর চারপাশে গভীর শূন্যতা!
মন বলে,
বন্ধু বড় কষ্ট বেঁচে থাকা বুকে নিয়ে এই ব্যথা।
যার দ্বারা তোমার বাঁচা বাড়া থাকে অক্ষুন্ন,
চলে এগিয়ে জীবন তাকে তোমার ক্ষুদ্র স্বার্থবুদ্ধির তাগিদে
ত্যাগ ক'রো না, ক'রো না ক্ষুণ্ণ।
ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছো না; সাবধান হও!
বর্তমানের মধ্যে তোমার ভবিষ্যৎ রয়েছে লুকিয়ে,
তুমি সতর্ক নও, এখন যদি জানলে তবে সতর্ক হও।
কেউ কাউকে কোনওদিন রাখেনি মনে, রাখে না,
তোমাকেও রাখবে না! মনে রেখো একথা বন্ধু।
সময় কম!! তাই চলো হাতে হাত রেখে
পার হ'য়ে যায় মহাসিন্ধু!!!
প্রতিমুহূর্তে ভেবে দেখো যা করছো তা ঠিক না ভুল!
ঠিক হ'লে ঠিক, ভুল হ'লে নাও শুধরে;
সকল ভুলের মাঝে আছে নির্ভুল, প্রভু অনুকূল!
বাংলার মাটিতে সবচেয়ে ভালো চাষ কিসের হয়?
কাঁকড়ার চাষ!
কাঁকড়া চাষের সবচেয়ে ভালো বিশেষজ্ঞ চাষী কে?
স্বনামধন্য বিশ্ববরেণ্য বাঙালি!!
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে চলছে ক্ষমতা দখলের
এক ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য খেলা!
ঘোর কলি বলে,
এসো বন্ধু! করি গলাগলি, কোলাকুলি এই বেলা!!
তুমি যে আমার পরম বন্ধু!
এসো পরায় তব গলে বিজয়ীর মালা।
চোখ খুললেই সকাল, দিন শুরু, না খুললেই এই জীবন শেষ,
বলা হবে না তোমায় বন্ধু আর জয়গুরু!!
শয়তানরা বেশী প্রেমের কথা,
ভালোবাসার কথা বলে।
নীতিকথা শয়তানদের বেশী।
Action Zero. কিন্তু তারাই হিরো!
তাই বলি,
শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি।
সাবধান! তুমি ওদিক পানে দিও না বন্ধু দৃষ্টি।

Friday, June 14, 2024

প্রবন্ধঃ চাষা আর লুটেরা ও বেকুব আমি! (১)

চাষা চাষ ক'রে আনন্দে আর লুটেরা লুট করে পরমানন্দে! আর 'বেকুব আমি'!?
'বেকুব আমি' আঁটি হ'য়ে পড়ে থাকে তলানিতে!


কথাটা বললাম অনেক রাগ আর ক্রোধকে বুকের মধ্যে চেপে রেখে! ভাবছিলাম আর অবাক হ'য়ে যাচ্ছিলাম এই ভেবে যে আমি কি সহিষ্ণুতার অভ্যাস যোগ করছি! ঐ যোগাভ্যাস চলাকালীন মনে হচ্ছিল এটা কি ঐ প্রত্যুষে 'স্বতঃ অনুজ্ঞা' "আমি অক্রোধী, আমি অমানি, আমি নিরলস, কাম-লোভজিৎ বশী----" ইত্যাদি ইত্যাদি পাঠের ফল!? আবার এটাও মনে হচ্ছিল, কথায় কথায় এত রাগের-ই বা কি আছে? একটু সয়ে বয়ে চললেই তো হয়! আসলে মনে হয় জগত সংসারটাই এডজাস্টমেন্টের! তাই কে যেন ভিতর থেকে বলে উঠলো, কুল ডাউন বন্ধু! কুল ডাউন!


যাই হ'ক, এবার আর হেঁয়ালি না ক'রে বলেই ফেলি ঘটনাটা।


আমার ও আমার পরিবারের রেশন কার্ড না থাকার কারণে রেশন তোলার সুযোগ পাওয়ার জন্য উত্তরপাড়া কোতরং মিউনিসিপ্যাল অফিসে অফিসের নির্দেশানুসার ফর্ম ফিল আপ করেছিলাম। কিছুদিনপর কাল অফিস থেকে ফোন এসেছিল রেশন কুপন নেওয়ার জন্য আজ দুপুর ১২টার সময় অফিসে প্রমাণপত্র সহ যেতে হবে। ফোন কে করেছিলেন জানি না তবে যিনি করেছিলেন তার কথা বলার মধ্যে ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া! কথা ব'লে খুব ভালো লাগছিল! অবাক হ'য়ে গিয়েছিলাম কোনও অফিস থেকে কেউ এত ধৈর্য্য নিয়ে আন্তরিকভাবে কি করতে হবে বুঝিয়ে বলতে পারে! আসলে অভ্যস্ত ন'ই বলেই এই অবাক হওয়ার ব্যাপার!


যাই হ'ক সেই ফোনের নির্দেশমত গিয়েছিলাম মিউনিসিপ্যাল অফিসে। সেখানে পৌঁছে গেটের বাইরে দুই হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম আর নির্দিষ্ট ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম দরজার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। আমিও সেইমত গিয়ে দাঁড়ালাম। জিজ্ঞেস ক'রে জানলাম সবাই রেশন কুপন নিতে এসেছে। এক এক ক'রে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাবে। দাঁড়াবার বেশ কিছুক্ষণ পর একজন বেরিয়ে এসে জেনে নিলেন সবাই রেশন কুপন নিতে এসেছেন কিনা। লাইনে দাঁড়ানো সবাই প্রত্যুত্তরে হ্যাঁ বললাম। লাইনে দাঁড়িয়ে গরম লাগছিল। ছেলেকে বললাম একটু লাইনে দাঁড়াতে। ছেলে লাইনে দাঁড়ালে আমি গিয়ে সিঁড়ির সামনে রোড মিনিস্টারের ঘরের সামনে ফ্যানের নিচে জিতে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম চারপাশ। চারপাশের অফিস কর্মচারী ও অফিসে বিভিন্ন কাজে আসা সব মানুষের মুখে মাস্ক! এর




আগে যখন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম তখন পাশ দিয়ে 'সরুন' ব'লে যাওয়ার সময় মুখে মাস্ক লাগানো একজনের শরীরী ভাষা এমন ছিল যেন মনে হচ্ছিল, 'আমি অছ্যুৎ'!!!!!!! মনে মনে ভাবলাম, সত্যি করোনা! কি মহান তোমার শক্তি! রাতারাতি সবাই সবাইয়ের কাছে আজ অছ্যুৎ! সবাই সবাইকে চলছে এড়িয়ে, দূরত্ব বজায় রেখে চলছে আদানপ্রদান!!!!! ভালোই হয়েছে, নিরাপত্তা হয়েছে সুনিশ্চিত! বিশেষ ক'রে নারীদের! আর সবচেয়ে যেটা বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আজ পৃথিবীর সব মানুষকে করোনা তুমি পেরেছো করতে রামভক্ত হনুমান! যারা হয়নি হনুমান অফিসে, পথেঘাটে, হাটেবাজারে তারা নিশ্চিত শয়তান কিলবিসের অনুচর!!!!!!!!!!


এরকম নানা উল্টোপাল্টা উদ্ভট ভাবনা ভাবছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর দেখছিলাম এস্ট্যাবলিশমেন্ট সেকশনের দরজার বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম লোকটা ঢুকছে কিনা। কারণ আমার লাইনের নম্বর ছিল ৬ । মনে মনে ভাবলাম হয়তো এখনও শুরু হয়নি কাজ। যাই হ'ক এর মধ্যে অনেকেই ভিতরে ঢুকছে ও বেরুচ্ছে। কে কি জন্য ঢুকছে তা অবশ্য জানার উপায় নেই, জানারও ইচ্ছা নেই। এরকম একজনকে দেখলাম সঙ্গে একজনকে নিয়ে গটমট করতে করতে ঢুকে পড়লো ভিতরে। তারপর কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এলো হাতে কাগজ নিয়ে। পাশ দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেবে যাওয়ার সময় হাতে ধরা খোলা কাগজটা ভালো ক'রে লক্ষ্য করলাম কিন্তু কাগজটা কিসের তা বুঝতে পারলাম না। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলাম কাগজটা কি! ইতিমধ্যে দরজা খুলে একজন বেড়িয়ে এসে লাইনের সামনে দাঁড়ানো লোকটিকে ভিতরে যেতে বললো এবং তারপর কিছুক্ষণ পরপর এক একজন লোক ভিতরে গিয়ে কিছু সময় পরে হাতে রেশন কুপন নিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। লাইনের প্রথম লোকটি যখন বেরিয়ে এলো তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার হাতের কাগজ আর ঐ লাইনে না দাঁড়িয়ে পরে এসে ভিতরে ঢুকে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে যাওয়া লোকটার হাতের কাগজ একইরকম দেখতে। লোকটিকে জিজ্ঞেস করাতে আমাকে কাগজ অর্থাৎ কুপন দেখিয়ে বললো যে সে কুপন পেয়েছে। কুপনটা দেখে চিনতে পারলাম আগের লোকটার হাতের কাগজটাকে। যা বোঝার বুঝে গেলাম। তারপরে আমার সময় যখন এলো তখন ভিতরে গিয়ে যখন নিজের ও পরিবারের কুপন হাতে পেলাম তখন হাতের কুপন আর ঐ এসেই লাইনে না দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢুকে কাগজ হাতে বেরিয়ে যাওয়া লোকটার হাতের কাগজটা যে একই অর্থাৎ ঐ লোকটা লাইনে না দাঁড়িয়েই যে প্রভাব খাটিয়ে কুপন নিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে গেল সেই বিষয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত হ'য়ে গেলাম আর তখন নিজেকে নিজের আরও একবার মনে হ'লো শালা! 'বেকুব'! নইলে শাসকগোষ্ঠীর হ'য়ে জীবন নিংড়ানো 'বেকুব তুমি' লাইনে দাঁড়িয়ে থাকো আর নেপোয় পিছন থেকে এসে দই মেরে দিয়ে চলে গেল! তারপরে নিজেকে নিজেই বললাম, এটা কি কোনও অস্বাভাবিক আশ্চর্যের ঘটনা নাকি স্বাভাবিক সাধারণ ঘটনা! কে ঠিক আর কে ভুল? 'বেকুব আমি' নাকি ঐ চালাক চতুর নেপোয় মারে দই গাই!?


চারপাশে তাকাতে তাকাতে মুখের মুখোশটা খুলে প্রশ্ন শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে একবুক নিঃশ্বাস নিলাম। জানি না কি নিঃশ্বাস নিলাম! করোনা জীবাণু মিশ্রিত অক্সিজেন নাকি নেপোদের ছেড়ে যাওয়া কৃষ্টি মিশ্রিত অক্সিজেন নাকি ফ্রেশ-------; জানি না।


যাই হ'ক আমি যখন ছেলেকে সরিয়ে নিজে এসে লাইনে দাঁড়ালাম তখন দেখলাম লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেকের মুখে মাস্ক। চেয়ারম্যানের ঘরের পাশ দিয়ে একজন মহিলাকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখলাম, দেখলাম মুখে মাস্ক নেই, হাতে কাগজের বান্ডিল নিয়ে আমার পাশ দিয়ে পাশের একটা অফিস ঘরে ঢুকে পড়লো। দেখে চিনতে পারলাম। আমারই এলাকায় থাকে, বছর কয়েক হয়েছে বাইরে থেকে এসে এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে রয়েছে। আমার পাশ দিয়ে চলে গেল কিন্তু আমায় চিনতে পারলো না।চিনতে না পারার কারণ হ'তে পারে মাস্ক। কিন্তু এত সামনাসামনি আমাকে চিনতে না পারার মত কোনও কারণ ছিল না। আমাকে শুধু যে চেনে তাই নয়, প্রথম যখন এখানে বাইরে থেকে এসেছিল তখন আমিই ছিলাম এলাকায় রাজনীতিতে যুক্ত ও রাজনৈতিক লোকেদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। তারপর ধীরে ধীরে একে একে পরিচিত হ'তে হ'তে আজকের এই অবস্থান। পার্টির কারও কারও মুখে শুনেছিলাম, "এসেই ছক্কা মেরে দিয়েছে! এলাম দেখলাম আর জয় করলাম-এর মত তলে তলে কাজ যা হাসিল করার ক'রে নিয়েছে, নেপোয় মারে দই-এর মত!" যা শুনেছিলাম তা আজ প্রমাণ হ'লো! চক্ষু কর্ণের বিবাদ দূর হ'লো। মহিলা এসেই নেতাদের সঙ্গে মেলামেশার মধ্যে দিয়ে মহিলা কর্মী থেকে নেত্রী হ'য়ে মিউনিসিপ্যালিটি অফিসে একটা চাকরি বাগিয়ে নিয়েছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দেখলাম অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে আবার চলে গেল পাশ দিয়ে পরিচিত মহিলাটি! মনে মনে ভাবলাম, এটা সম্পূর্ণ মেয়েটির ক্রেডিট! যেভাবেই হ'ক নতুন এসেই দলের পুরনোদের টপকে আজকের দিনে চাকরি হাসিল করা যোগ্যতা না থাকলে সম্ভব নয়। যোগ্যতা অবশ্য অবশ্যই আছে। সেই যোগ্যতাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছে! এ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলে সিনিয়র বা পুরনোদের কিংবা ভালো পরিশ্রমী যোগ্য ও দক্ষ সৎ কর্মীদের কোনও গুরুত্ব নেই! সস্তা চাটুকারীতে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মত ব্যাপারস্যাপার খুবই সহজলভ্য এখানে!!


পাশ দিয়ে চলে যাবার সময় মেয়েটার গন্তব্যপথের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পুরোনোদিনের ছবিগুলো মনের মধ্যে ছবির মত একের পর এক ভেসে উঠতে লাগলো!!!!!
ক্রমশঃ
( লেখা ১৪ই জুন, ২০২০)

Wednesday, June 12, 2024

গানঃ নাম করো



নাম করো, নাম করো, নাম করো রে
করলে নাম জীবনে মুক্তি পাবি রে।
তোরা এমন মধুর নাম আর পাবিনে
এমন সুরত-সাকি আর পাবিনে।

নাম করো, নাম করো, নাম করো রে
করলে নাম জীবনে মুক্তি পাবি রে।
তোরা এমন প্রেমের নাম আর পাবিনে
এমন প্রেমের নেশা আর পাবিনে।

জীবন আমার ধন্য হ'লো নামের প্লাবনে
ধন্য হ'লো ইহকাল পরকাল নামের সাধনে।
নাম করো নাম করো নাম করো রে
করলে নাম জীবনে মুক্তি পাবি রে।

তোরা এমন নামীর নাম আর পাবিনে
বৃত্তি ফাঁস কেটে নামে ধন্য হবিরে।
নাম করো নাম করো নাম করো রে
করলে নাম জীবনে মুক্তি পাবি রে।

রোগ শোক দুঃখ জ্বালা (সব) দূর হবে রে
রিপুর বাঁধন ছিঁড়ে নামের বাদাম তুলে দে।
নাম করো, নাম করো, নাম করো রে
করলে নাম এ জীবনে মুক্তি পাবি রে।
তোরা এমন প্রেমের নাম আর পাবিনে
এমন প্রেমের নেশা আর পাবিনে।।

হরি বোল, হরি বোল, হরি বোল হরি বোল,
বোল হরি, বোল হরি, বোল হরি বোল,
হরি বোল, হরি বোল, হরি বোল হরি বোল।
রাধা বোল, রাধা বোল, রাধা বোল, রাধা বোল,
রাধা, বোল রাধা, বোল রাধা, বোল রাধ্‌ বোল
রাধা বোল, রাধা বোল, রাধা বোল, রাধা বোল,
হরি বোল, হরি বোল, হরি বোল হরি বোল।

Tuesday, June 11, 2024

প্রবন্ধঃ আশ্চর্য বিবাহ অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞান!

আজ একটা ভিডিও দেখলাম। ভিডিওটা পাঠিয়েছিল এক গুরুভাই। অনুরোধ করেছিল এই প্রসঙ্গে কিছু বলার জন্যে। হিন্দু বিবাহ নীতির ওপর এই ধরণের অনুষ্ঠান দেখে কটাক্ষ করে হিন্দুরাই। যারা ধর্ম মানে না, ঈশ্বর মানে না, এই ধরণের বিতর্কিত অনুষ্ঠান ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুষ্ঠানের প্রচার বিতর্ককে, অবিশ্বাসীদের অবিশ্বাসকে আরও উসকে দেয়, অক্সিজেন যোগায়। ভিডিওটা একটা বিয়ের পরবর্তী একটা অনুষ্ঠানের। সেখানে দেখা যাচ্ছে বর বসে আছে জমিদারী মেজাজে একটা কাঠের সিংহাসনে। আর মাটিতে বসে আছে নববধু চিরাচরিত সলজ্জ ভঙ্গিতে। তারপর নববধু হাতে তেল নিয়ে সেই তেল মাখিয়ে দিচ্ছে বরের পূজনীয় পায়ের পাতায় ঘসে ঘসে। তারপর একজন নারী একটা জলভর্তি পাত্র নিয়ে এলো। বর পায়ের পাতা দু'টো সেই জল ভর্তি পাত্রে রাখলো। নববধু পাত্রের সেই জল দিয়ে বরের পা ভালো ক'রে ধুয়ে দিল। তারপরে মাথার লম্বা চুল খুলে সেই চুল দিয়ে ভালো ক'রে ঘসে ঘসে পায়ের জল মুছে দিল। তারপরে দু'হাত জোড়া ক'রে অপরূপ ভঙ্গিতে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বাতাস করতে লাগলো সেই পায়ের ওপর, পা শুকিয়ে যাবার জন্য। এইসময় দেখলাম বেশ হেসে হেসে কি যেন নির্দেশ দিচ্ছে নববধুকে বর আর বেশ মজা নিচ্ছে, উপভোগ করছে অনুষ্ঠান। পা শুকিয়ে গেলে সেই দুই পায়ের পাতার ওপর ফুল সাজিয়ে দিল ও মাথা নীচু ক'রে প্রণাম করলো। তারপরে বরকে চন্দন দিয়ে সাজিয়ে দিল। এই পর্যন্তই ভিডিওটা। এই নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হ'লো, শুনতে হ'লো এর বিরুদ্ধে অবস্থানকারী নারীপুরুষ উভয়ের প্রাচীন ব্যবস্থা, রীতিনীতি নিয়ে কটু কথা। নারীবাদীরা ক্ষুব্ধ, বিরক্ত এই ভিডিওর মেরিটস-ডিমেরিটস, অ্যাডভান্টেজ-ডিসঅ্যাডভান্টেজ নিয়ে এবং পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনার উপর যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করার অনুরোধ এসেছিল যাতে সকলেরই জ্ঞানের অন্ধকার, মনের কুসংস্কার দূর হ'য়ে মানসিকভাবে সমৃদ্ধ হ'য়ে ওঠে। 

তাই আজ এই বিষয়ে কিছু বলতে আসা। আমি আজ গুরুভাইয়ের অনুরোধ, জানার ইচ্ছা, আগ্রহকে সম্মান দিয়ে আমি আমার বোধবুদ্ধির ওপর দাঁড়িয়ে যে উপলব্ধি হয়েছে তা' তুলে ধরবো আপনাদের সামনে। গ্রহণ ও বর্জন আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনারা আপনাদের সুচিন্তিত গঠনমূলক মতামত দিয়ে আমাকে সাহায্য করবেন। আগামী বিবাহিত পুরুষদের জন্য সতর্কবার্তাও বলতে পারেন। এছাড়া শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মায়ের বলা যা শ্রীশ্রীঠাকুর বিতর্কিত কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় বিপক্ষের প্রশ্নের উত্তরে বারবার বলতেন, "যেখানেই দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।" আসুন দেখা যাক এখানে আলোচনার মধ্যে দিয়ে কোনও অমূল্য রত্ন পাওয়া যায় কিনা।

প্রথম কথা হচ্ছে, এই ভিডিওর ছবি সত্যি বিয়ের অনুষ্ঠানের নাকি সিনেমা বা সিরিয়ালে অভিনয়ের জন্য ফটো শুট? জানি না। তবে দেখা যাচ্ছে, ঘর ভর্তি ছোটোবড় বাচ্চা ছেলেমেয়ে সাথে বড়দের ভিড়ে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে আর সবাই মোবাইলে অনুষ্ঠানের মুহুর্ত ধ'রে রাখছে। আর তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিশ্চয়ই অনেকের চোখে পড়েছে সেই ভিডিও। ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও।
এই বিয়ের অনুষ্ঠান যদি সত্যি হ'য়ে থাকে তাহ'লে স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্ন উঠে আসছে তাহ'লো এই মেয়েটির সম্মতি নেওয়া হয়েছিল কি এই ফটো শুট করতে কিংবা ফটো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করতে? যদিও বিবাহ অনুষ্ঠানের কোনও ছবি তোলার ক্ষেত্রে সচরাচর কারও কোনও আপত্তি বা নিষেধাজ্ঞা থাকে না।

যাই হ'ক, অভিনয় হ'ক কিংবা সত্যি সত্যিই বিবাহের ছবি হ'ক এর থেকে শিক্ষণীয় ব্যাপার আছে। তা হ'লো, ছবি দেখে মনে হচ্ছে বেশ জমিদারী চালে উপভোগ করছে ব্যাপারটা পুরুষটি। কিন্তু প্রশ্নঃ বিয়ের এই পূর্বনির্দিষ্ট স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর পা ধুয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানে পদসেবা নেওয়ার আগে পুরুষটি কি তার ঐ পরম পূজ্য পা'টি ভালো ক'রে ঘষে ঘষে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়েছিল? ঐ পরম পূজনীয় পদযুগলে কোনও নোংরা জীবাণু ছিল না তো? কারণ আমরা পা দিয়ে হাঁটি আর হাত দিয়ে কাজ করি। তাই হাতের ও পায়ের দু'জায়গায় সবচেয়ে বেশী নোংরা লাগে। অথচ স্নানের সময় দেখা যায় যদিও বা আমরা মুখ সাবান দিয়ে ধুতে বেশী সময় ও সাবান ব্যয় করি, পায়ের জন্যে সেই অর্থে সময় ও সাবান খরচ করি না। ফলত যা হবার তা' হয়। যদি ভালো ক'রে হাত ও পা সাবান দিয়ে ঘষে পরিস্কার না করি তাহ'লে হাতে ও পায়ে এবং হাতের ও পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ও নখে সেই নোংরা থেকে যায় ও ধীরে ধীরে সেই নোংরা ভয়ঙ্কর এমনকি মারণ রোগের বিষাক্ত জীবাণুতে পরিণত হয়। ফলে তা একসময় জীবনঘাতী হ'য়ে ওঠে। এক্ষেত্রে স্বামী নামক পুরুষটির পায়ে যদি নোংরা থেকে থাকে বা কোনও চর্ম রোগ থেকে থাকে তবে এই প্রথার মধ্যে দিয়ে পায়ের সেই সমস্ত নোংরা ও চর্ম রোগের জীবাণু নারী তার নিজের শরীরে অর্থাৎ হাতে ও চুলে নিল। আর, এই জীবাণু নিল প্রথাকে মান্যতা দেওয়ার কারণে। যা পরবর্তী সময়ে নারীর শরীরে সংক্রামিত হ'য়ে বৃদ্ধি পেতে পেতে নারীর জীবন বিষময় হ'য়ে উঠবে। হয়তো একদিন সব চুল উঠে গিয়ে বা চর্মরোগের অধিকারী হয়ে আজকের সুন্দর শরীর বীভৎস কদাকার হ'য়ে উঠবে। ফলে দাম্পত্য জীবনে ও সংসার জীবনে তার প্রভাব পড়বে এবং এই প্রভাব পুরুষটিকেও রেহাই দেবে না। সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক সত্য এই যে, নারীটি তার জীবনে সুখ শান্তি হারিয়ে ধীরে ধীরে এক বিষময় দুরারোগ্য শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির এবং নারকীয় জীবনের অধিকারী হ'য়ে উঠলো। হ'য়ে উঠলো বিজ্ঞানকে অস্বীকার ক'রে ও হাইজিনিক গ্রাউন্ডকে অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য উভয়কেই অগ্রাহ্য ক'রে প্রথা বা রীতিনীতি যা সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসছে অর্থাৎ যে কোনও ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, বিশ্বাস অথবা কর্মকাণ্ড যা অধিকাংশ সাধারণ জনগণ বা সমাজ কর্তৃক উৎপত্তিকাল থেকে যুগ যুগ ধ'রে বিনাদ্বিধায় পালন করা সহ মেনে চলে আসছে, সেইসমস্ত প্রথাকে বা রীতিনীতিকে পালন করার খেসারত দিতে হ'লো প্রথমত সবার সামনে নারীকে, দ্বিতীয়ত পরবর্তী সময়ে নারীপুরুষ উভয়কেই, সংসার বা পরিবারকে, সর্ব্বোপরি সমাজকে। এর ফলে যা হবার তাই হ'লো। কলঙ্কিত, নিন্দিত, সমালোচিত, উপেক্ষিত হ'তে হলো বিবাহ প্রথা বা রীতিনীতিকে এবং ব্যষ্টি জীবন, সমষ্টি জীবন ও সমাজ জীবন থেকে বিবাহ বিধান, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে বিচার বিশ্লেষণ না ক'রেই জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাচীন বিজ্ঞানভিত্তিক ধর্মানুষ্টান, ধর্মাচারকে বকোয়াস ব'লে সমাজকো বদল ডালো আওয়াজ তুলে উপড়ে ফেলে দিতে সচেষ্ট হ'লো একশ্রেণীর মত ও পথের পথিক।

এর জন্য কে দায়ী? পুরুষটি? নারীটি? পরিবারের সদস্য ও সদস্যারা? পারিবারিক ও সামাজিক সংস্কার? প্রাচীন বিবাহ নীতি? সমাজ সংস্কারক? কে দায়ী বা কোনটা দায়ী? নাকি দূরদৃষ্টির অভাব?

আর, সেইসব বিবাহের নামে বা অন্যান্য যে কোনও ধর্মানুষ্ঠান দৃশ্য পুরুষের তুলনায় নারীরাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে বেশী। এই ভিডিওতেও তাই দেখা গেছে। প্রায় সবক্ষেত্রেই যে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজনে থাকে কিন্তু পুরুষ। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা বিশেষ ক'রে মেয়েরা সেইসব দৃশ্য দেখছে এবং মায়ের সংস্পর্শে সেইসব সংস্কার বা কুসংস্কার যাই-ই হ'ক না কেন ভালোমন্দ না বুঝেই শিখছে আর দুর্বল বা তথাকথিত সবল মনের অধিকারী হ'য়ে উঠছে এবং শরীরে ও মনে কিম্ভুতকিমাকার চরিত্রের এক আজব জীবে পরিণত হচ্ছে। কেননা পরিবারের বা সংসারের পুরোটাই নারীদের কর্তৃত্বে থাকে। আর নারীআচার সবটাই অদ্ভুত অদ্ভুত! যদিও এইসমস্ত আচার-অনুষ্ঠানের ভিতরে অনেক ক্ষেত্রেই হয়তোবা অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে, থাকে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা। আর, বাকিটাই থাকে নিছক মজার আদলে আদিম মানসিকতা। যে মজা বা আরাম একসময় সবার অগোচরে ব্যক্তিজীবনে হারাম হ'য়ে ওঠে।

আসলে এই ধরণের সব অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেই নারীপুরুষ উভয়ের দিক দিয়েই বিজ্ঞানগত ভাবেই হাইজিনিক গ্রাউন্ডেই কথাগুলি ভেবে দেখা উচিত, প্রাচীন সভ্যযুগে বা আর্য্য সমাজ ব্যবস্থায় যা কঠোর ভাবে মানা হ'তো। যা এখন বর্তমানের উপরি ঝাঁ চকচকে ঘোর নোংরা যুগে পালন করা আর দুরারোগ্য ব্যাধি বা মৃত্যুকে অজ্ঞানতার মোড়কে আমন্ত্রণ করা একই ব্যাপার, জেগে ঘুমোনোর মতন।

এই যে সর্ব্বসমক্ষে পা ধুয়ে দেওয়ার ও আরো নানাবিধ বিধান পালনের মধ্যে দিয়ে পুরুষটিকে যে উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া হ'লো এই বিধানের প্রতিদান স্বরূপ পরবর্তী সংসার জীবনে পুরুষটি সুদসমেত প্রাপ্য যোগ্য সম্মান নারীকে ফিরিয়ে দেবে তো? সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে নারীকে সংসারে সেই দেবীর উচ্চতায় স্থান দেবে তো? ভোগ্যপণ্য হিসেবেই দেখবে নাতো? পদসেবা নেওয়ার সময় এই পুরুষালি মেজাজটা ধ'রে রাখতে পারবে তো পরবর্তী দাম্পত্য জীবনে, সংসার জীবনে? স্ত্রৈণ হ'য়ে কাটাতে হবে নাতো সারাজীবন একদিনকা রাজার? স্বামী নামক পুরুষটিকে গোপনে শেষ পর্যন্ত অপ্রিয় হ'লেও এই পদসেবাটিই ক'রে যেতে হবে নাতো সারাজীবন আমৃত্যু তার সহধর্মিণীর? অপ্রিয় হ'লেও এটাই সত্য যে, বিবাহ বিধানের অন্তর্নিহিত অর্থ ও গুরুত্ব না জেনে পরিবারের দ্বারা স্বামী নামক পুরুষটির ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই বিধান বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। কিছুদিন পরেই ফিকে হ'য়ে যাবে ঐ জমিদারী চালে আনন্দঘন দৃশ্য যে কোনও ছোটোখাটো কারণেই। দাম্পত্য ও সাংসারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর অ্যাডজাস্টমেন্ট বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর অভাবের কারণে চুঁইয়ে চুঁইয়ে হ'তে থাকবে রক্তক্ষরণ। আর, এই অদৃশ্য রক্তক্ষরণ হ'তে থাকবে ভেতরে ভেতরে আমৃত্যু স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের মধ্যে, হ'তে থাকবে উভয়ের জীবনের মধ্যে জীবন্ত আদর্শ স্বরূপ সিমেন্টিং ফ্যাক্টর না থাকার কারণে। পুরুষ মানুষদের এটা মাথায় রাখতে হবে সংসারের চাবিকাঠি থাকে নারীদের হাতেই। সংসার জীবনে তখন এই বিবাহ নীতি পালনের সময় ভিড় করা একজন মানুষও তখন থাকবে না পাশে। এ কথা মাথায় রাখতে হবে অনুষ্ঠান পালনের সময় পারিবারিক ভিড়ে এই প্রথা মুখ বুজে মেনে নেওয়ার কারণে স্বাভিমানী নারীর, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নারীর নিজের মূল্য বা যোগ্যতার প্রতি আঘাত লাগার কারণে সারাজীবন নারীর দিক থেকে আমৃত্যু কারণে-অকারণে, তুচ্ছ ঘটনার সময়েও সুযোগের সদব্যবহার স্বরূপ প্রতিদানে খোঁটা হ"য়ে ফিরে আসবে নাতো পুরুষটির জীবনে? নারীমহলের আভ্যন্তরীণ কূটনীতির সংস্কৃতি সব যুগেই সমান; হয়তো বা কম বা বেশী। এই কথাটি পরিবারের বাবা-মা বা আর কেউ মনে রাখুক আর না-রাখুক গ্রাম্য বা শহুরে, শিক্ষিত-বা অশিক্ষিত, লেখাপড়াজানা বা না-জানা, গরীব-বড়লোক স্বামী নামক পদার্থ বা অপদার্থ পুরুষটি যেন মনে রাখে আজকের ঘোর কলি যুগের আদর্শ বিহীন জীবনে তার নিজের ভবিষ্যত মান-সম্মান রক্ষার কারণেই। স্বামী-স্ত্রী ছাড়া পারিবারিক প্রতিদিনের জীবনে সেদিন কিন্তু বিবাহের সময়ে নানারকম নিয়ম পালনের আপাত বা সত্যি সত্যিই উদ্ভট আনন্দের মুহুর্তগুলি ও মুহুর্তগুলির সময়ে ভিড় করা মানুষগুলি কোনওটাই বা কেউই থাকবে না। আর, স্বাভিমানী নারী বা শিক্ষিতা নারী কিংবা অহঙ্কারী নারীর মানসিকতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ধীরে ধীরে সমাজ জীবনে, সাংসারিক জীবনে, সহজ সরল সাদাসিধে নারীর জীবনেও ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। ফলে সেই সহজ সরল নারীর জীবনে তা আরও ভয়ঙ্কর হ'য়ে ওঠে। কাকের পিছনে ময়ুর পুচ্ছের মত হ'য়ে ওঠে। কখনই বা কোনওদিনই মূল জায়গায় হাত পড়েনি বা পড়েনা।

তাই এই ধরণের অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে পালন করা উচিত, নতুবা নয়। যেমন, এই সব যে সাংসারিক বিধান তা সত্যযুগে পালনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলেও বর্তমানে হয় নারীপুরুষ উভয়েই ঐসব রীতিনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হ'ক, উপযুক্ত হ'য়ে উঠুক নিজ নিজ জীবনে, Compatible marriage অর্থাৎ সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবাহ হ'ক নতুবা তথাকথিত নিয়মনীতি, সংস্কার পালন বন্ধ হ'ক উভয়ের ভবিষ্যত মঙ্গলের কারণে। কারণ কুত্তার পেটে ঘি সহ্য হয় না। পালন না করার ফলে যে ক্ষতি তার চেয়ে লক্ষ, কোটিগুন ক্ষয়ক্ষতি অনুপযুক্ত ক্ষেত্রে পালন করার ফলে হ'য়ে থাকে।

এছাড়া এই যে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে স্ত্রী স্বামীকে বা নারীপুরুষ গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তা যে বিজ্ঞানগত ভাবেই ভুল ও নিষিদ্ধ, তা কে মানছে বা জানে? যে প্রণাম করছে তার ভালো হ'লেও যাকে প্রণাম করা হচ্ছে তার যে জীবনী শক্তি কমে যাচ্ছে, আয়ু ক্ষয় হচ্ছে তা কি যুগ যুগ ধ'রে কেউ বলেছে নাকি মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে? এই যে স্ত্রী স্বামীকে বিয়ের দিনই পায়ে হাত দিয়ে বা মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করছে স্বামীর মঙ্গল কামনায় তা কি স্বামীর মঙ্গল হচ্ছে নাকি অমঙ্গল হচ্ছে তা' কি জানে স্বামীস্ত্রী উভয়েই? বিজ্ঞান কি এই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সমর্থন করে? বিজ্ঞানীরাই বলুক। অথচ তা চলে আসছে যুগ যুগ ধ'রে। এক্ষেত্রে এ কথা আজকের দিনে বলতে গেলে সবাই এর বিরুদ্ধে যাবে। যাবে, তার কারণ পায়ে হাত দিয়ে বা পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করলে কি ক্ষতি হ'তে পারে তা না জানার কারণে। এসব জানে একমাত্র সর্ব্বজ্ঞ, সর্ব্বদর্শী, সর্ব্বশক্তিমান পরমপুরুষ, পুরুষোত্তম, সদগুরু জীবন্ত ঈশ্বর। এই ঘোর কলি যুগে তিনি এসে এসে বললেন,

"শ্রেষ্ঠজনে ক'রলে প্রণাম নিয়ত মাথা ঠেকিয়ে পায়,
নিজের ভালো হ'লেও কিন্তু তাঁর আয়ুটি ক্ষয়েই যায়।"

পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা যে পাপ, আয়ু ক্ষয় হয় এ কথা আর কে জানে? যিনি এ কথা বলেছেন তাঁর অনুগামী দীক্ষিতরাই এ কথা জানে না, জানলেও মানে না। প্রশ্ন জাগে মনে, কে বলেছেন এ কথা? কারা জানে না ও জানলেও মানে না?

এ কথা জানে সৎসঙ্গীরা। এ কথা বলেছেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক, সৃষ্টিকর্তা, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, সদগুরু, বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এ কথা অনেক সৎসঙ্গী জানে না, আর অনেক সৎসঙ্গী আছে জানলেও মানে না।

বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীরা সবাই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম যে পাপ, যাকে প্রণাম করা হয় তাঁর যে আয়ু ক্ষয় তা' জানে এটা হয়তো ঠিক কথা নয়, বহু সৎসঙ্গী জানে না, কিন্তু জানা উচিত। কারণ, শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষা নেওয়ার সময় দীক্ষার নিয়মকানুনের সঙ্গে সঙ্গে ঋত্বিক পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম না করার কথাও জানিয়ে দেন, কেমন ক'রে প্রণাম করতে হবে সে কথা জানিয়ে দেন, জানিয়ে দেন প্রণাম করার নিয়ম। কিন্তু, তা সত্ত্বেও কোটি কোটি দীক্ষিতরা তা জানে না বা জানলেও মানে না। কেন জানে না? ঋত্ত্বিকরা কি জানিয়ে দেননি? নাকি নাম কা ওয়াস্তে ঋত্ত্বিকরা যজমানদের তা বলতে হয়, বলেছেন? ঠাকুরের বলা আছে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা নিষেধ সৎসঙ্গীদের এবং অশুভ। এই নিষেধ, অশুভ ও ক্ষয়ক্ষতির দিকটা সিরিয়াসলি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন ঋত্ত্বিকরা দীক্ষা গ্রহণকারীদের? আর সৎসঙ্গীরা জেনেও কেন মানে না? কারণ, তারা দীক্ষা নিয়েছিল তার কারণ একটা গুরু ধরতে হয় জীবনে তাই দীক্ষা নিয়েছিল। আর গুরু ধরতে হয় তিন কাল গিয়ে চারকালে গিয়ে যখন বয়স ঠেকে তখন। ছোটোবেলা থেকে ওসব ধর্ম পালন টালনের ও গুরু গ্রহণ ট্রহণের সময় বা বয়স নয়। বুড়ো বয়সে গিয়ে যখন মরার সময়, যখন সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার আর বয়স বা শক্তি থাকে না, তখন নিশ্চিন্তে বৈতরণী পার হবার জন্য, স্বর্গে যাবার জন্য, যৌবনের কৃত পাপকর্মের স্খলন করার জন্য, পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তখন গুরু ধরার, ধর্ম করার ও ঈশ্বর আরাধনার দরকার।

তাই নিয়ম কানুন অতটা মানার বা পালন করার দরকার বোধ করে না, দরকার বোধ করলেও অভ্যাসের অভাবে তা করা হ'য়ে ওঠে না।

আর, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করাটা যুগ যুগ ধরে বিনাদ্বিধায় পালন করে এসেছে। ছোটোবেলা থেকে শিখে এসেছে বোদ্ধা মা-বাবা- দাদা-দিদা গুরুজনদের কাছ থেকে। তাই সেটাকেই মঙ্গলযোগ্য ব'লে জেনে এসেছে। আর, দীক্ষার সময় যা জেনেছে তা পালন করা হ'য়ে ওঠেনি কারণ ঠাকুরের দীক্ষা নিলেও ঠাকুরের নিয়ম নীতি পালন করাকে গুরুত্বপূর্ণ ব'লে মনে করেনি, ভালো ক'রে উল্টেপাল্টে দেখেইনি নিয়ম। ফুল, চন্দন, ধূপকাঠি দিয়ে ঠাকুরের চরণ পূজো করলেও তাঁর চলনপূজাকে গ্রাহ্য করেনি, তাঁর চলনকে নিজের চলন ক'রে নেয়নি তাই ঠাকুরকে প্রকৃতই জীবনে ধরা হয়নি সৎসঙ্গীদের। এর জন্যে কম বেশী সব সৎসঙ্গী দায়ী। কারণ বহু সৎসঙ্গী পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করাকে সমর্থন করেন। মূলত দায়ী ঋত্ত্বিকেরা; কারণ ঋত্ত্বিকেরা স্বয়ং সৎসঙ্গে সৎসঙ্গী দাদাদের ও মায়েদের, ছোটোছোটো ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে প্রণাম গ্রহণ করেন। সবার সামনেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করাকে প্রশ্রয় দেয়। এমনকি ঠাকুরের সামনেও বহু ঋত্ত্বিককে দেখেছি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম নিতে। তাই, সাধারণ মানুষের কাছে পায়ে ঠাকুরের বলা, হাত দিয়ে প্রণাম যে পাপ তা' গ্রহণযোগ্য হ'য়ে ওঠেনি। এর জন্যে দায়ী ঋত্ত্বিক ও সাধারণ-অসাধারণ সৎসঙ্গীরা। সাধারণ দীক্ষিতরা দায়ী অজ্ঞতার কারণে ও জানার ইচ্ছার অভাবে। আর, অসাধারণ দীক্ষিতরা দায়ী বিজ্ঞতার অহঙ্কারের কারণে। আর, ব্যতিক্রম অবশ্যই অবশ্যই আছে, তবে তাঁরা ফিকে পড়ে গেছে প্রচারের আলোয় থাকা এইসমস্ত বিশিষ্ট ও নাম-কা-ওয়াস্তে সৎসঙ্গীদের কাছে।

যাই হ'ক, এসব যা কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক রীতিনীতি সেগুলিকে উড়িয়ে না দিয়ে মানুষের মঙ্গলের জন্য, মানুষের বাঁচা-বাড়ার জন্য খুঁজে দেখে বের করা দরকার এর মধ্যে জীবনীয় কি আছে আর না-আছে, শ্রীশ্রীঠাকুরের ঐ কথার মত, "যেখানেই দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারও অমূল্য রতন।"।

আর যদি জীবনীয় কিছু না-থাকে বা যা কিছু পরগাছার মতো রস শুষে খেয়ে বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের মূল বুনিয়াদকেই ধ্বংস করে সেইসব রীতিনীতি সমাজজীবন থেকে উপড়ে ফেলার প্রয়োজন। নতুবা হাতে ক'রে অমঙ্গল বা ধ্বংসকে ডেকে আনা যেতে পারে, ওয়েলকাম জানানো যেতে পারে।

এককথায় বলা যেতে পারে নিকৃষ্ট মানুষের জন্য উৎকৃষ্ট কিছুই নয়। অমৃত, নারীপুরুষ দেবদেবীদের জন্যেই। নিকৃষ্ট বা অসুরদের জন্যে নয়। প্রবাদ আছে, কুত্তার পেটে ঘি সহ্য হয় না। এখন পেট পচা কেউ যদি ঘি খেয়ে থাকে তাহ'লে তাকে তার খেসারত দিতে হবে, কিছুই করার থাকবে না, ক্রনিক গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিসে ভোগা রুগী যদি আবার দূষিত খাবার খায়, দূষিত জল পান করে, দূষিত পাত্র ব্যবহার করে, দূষিত লোকের সঙ্গ ক'রে তাহ'লে তাকে মরতে হবে ভুগে ভুগে। আর, যদি রবীন্দ্রনাথের শিষ্য হ'য়ে পরম ভক্ত সেজে জেনে শুনে বিষ পান করতে থাকে তাহ'লে আর কি করা যেতে পারে? একমাত্র বলা যেতে পারে, দু'হাত প্রসারিত ক'রে মাথা উচু ক'রে, 
আ বয়েল মুঝে মার।

Monday, June 10, 2024

গানঃ আসন সাজাও, রাধাস্বামী গাও।

আসন সাজাও, রাধাস্বামী গা্‌ও
নামের বাদাম তুলে সবাই দয়াল ধামে যাও,
নাম ধ্যান করলে পরে জাগে চেতন স্মৃতি
নামাবলী জড়িয়ে প্রাণে আনন্দে মাতি।

দয়াল্প্রভু মাথার পরে, দয়াল প্রভু মাথার পরে
আর নামের নিশান মাথায় নাও।
নামের বাদাম তুলে সবাই দয়াল ধামে যাও,
আসন সাজাও, রাধাস্বামী গা্‌ও
নামের বাদাম তুলে সবাই দয়াল ধামে যাও,

রাধাস্বামী নামটি তুমি জপ দিনে রাতে
রোগ শোক দুঃখ জ্বালা যাবে মিটে তা'তে
নামধ্যান করলে পরে, নামধ্যান করলে পরে
বৃত্তি ভয় হবে উধাও।
নামের বাদাম তুলে সবাই দয়াল ধামে যাও,
আসন সাজাও, রাধাস্বামী গা্‌ও,
নামের বাদাম তুলে সবাই দয়াল ধামে যাও.
( 'শঙ্খ বাজাও, উলুধ্বনি দাও' সুরে )



হিন্দমোটরের মৃত্যুর কারণ ও কার দোষ!!!!!!!!!!!!!!!!!!

"হিন্দমোটর একটি স্বপ্নের মৃত্যু ১,২,৩......" সীরিয়্যাল post-এর জন্য FB ও FB-এর বাইরে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমাজ সচেতন বহু মানুষের এবং কারখানার সঙ্গে যুক্ত অতীত ও বর্তমান বহু শ্রমিক-কর্মচারীর সাক্ষাতে ও টেলিফোনে ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এই বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষনের জন্য। নিঃসন্দেহে এক নিদারুণ কঠিন কাজ। কিন্তু প্রকৃত সমাজ সচেতন মানুষ ও অতীত ও বর্তমান ভুক্তভোগী কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীর একান্ত অনুরোধ এতবড় স্বয়ং সম্পুর্ণ 'টাইটানিক' 'অটোমোবাইল কারখানার মৃত্যুর কারণ কি এবং কার দোষ' এ সম্পর্কে আলোকপাত করার জন্য। প্রথমেই বলে রাখি আমি, এতবড় জটিল ও রহস্যপুর্ণ আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোকপাত করা আমার পক্ষে ভীষণ কষ্টের। তবুও আমার একান্ত নিজের তাগিদেই এবং বন্ধু, ভুক্তভোগী শ্রমিক-কর্মচারী ও শুভানুধ্যায়ী সমাজ সচেতন মানুষের অনুরোধে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে আমার জ্ঞান, উপলব্ধি, অনুভুতি, অভিজ্ঞতা আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র। ( লেখা ১০ই জুন। ২০১৪)

কবিতাঃ দয়াল! আর একবার হও তুমি ভয়াল!

দয়াল! আর একবার হও তুমি  ভয়াল!
শুধু আর একবার!!
তান্ডব নৃত্যে লন্ডভন্ড হ'ক স্বর্গ-মর্ত-পাতাল!
হ'ক আরও একবার দক্ষযজ্ঞ!
নেবে আসুক ঘোর অন্ধকার,
বিষাক্ত বিষে হ'ক চারপাশ ছারখার!
দেখি শা.. কোন দেবতা বাঁচায়! প্রবি।
( লেখা ১০ই জুন, ২০১৯) 

আত্মকথন ৩

হঠাৎ করেই দুঃসময়ের মাঝে দুঃসংবাদটা এসেছিলো। সালটা ১৯৭৯। তারিখটা মনে নেই। শুধু মনে আছে সেদিন আমার পিতৃদেবের শ্রাদ্ধের দিন। শ্রাদ্ধবাসরে বড়দা বসে পিতৃশ্রাদ্ধের কাজ করছেন। ঘরে লোকজনে ভর্তি। আমরা পাঁচ ভাই ও একবোন। সবাই নানা কাজে ব্যস্ত। আমি সবার ছোটো। আমার তেমন কোনও কাজ নেই। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন যারা আসছে তাদের সাথে বসে কথা বলছি। এমন সময় পোষ্টম্যান এলো। আমার নাম ধ'রে ডাকলো। বললো, রেজিস্ট্রি চিঠি এসেছে। উঠে গেলাম। সই ক'রে খামটা নিলাম। খামের ওপরে দেখলাম কোম্পানীর নাম লেখা। খামটা নিয়ে এসে ঘরে বসলাম। কয়েকদিন আগে কর্মস্থলে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা মনে ভেসে উঠলো। খাম খুলে চিঠি হাতে নিয়ে হঠাৎ একটা ধাক্কা খেলাম। চোখের কোণটা খচখচ ক'রে উঠলো। ওদিকে পুরোহিতের উচ্চারিত মন্ত্র আর চিঠির কথাগুলি সব মিশে গিয়ে একাকার হ'য়ে গেল।
কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে উঠে চলে গেলাম পাশের ঘরে। চোখটা জলে ভরে উঠলো। একফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে নিজেকে স্বাভাবিক ক'রে নেবার চেষ্টা করলাম যাতে কেউ কিছু বুঝতে না পারে। তারপর চিঠিটা খামে ঢুকিয়ে খামটা রেখে দিলাম বইয়ের ভাঁজে। বাড়িতে এটাকে স্বাভাবিক চিঠি আসার ব্যাপার মনে করে সবাই শ্রাদ্ধের কাজে ব্যস্ত হ'য়ে পড়লো। একদিকে শ্রাদ্ধের কাজ অন্যদিকে দুপুরের রান্না হ'য়ে চলেছে সঙ্গে চলছে অতিথি আপ্যায়ন। এসবের ভিড়ে আমিও সব ভুলে যাবার চেষ্টা করলাম। আস্তে আস্তে শ্রাদ্ধকাজ সম্পন্ন হ'লো, সম্পন্ন হ'লো দুপুরের খাওয়া দাওয়া। ধীরে ধীরে সবাই চলে গেলেও বাড়ির লোকেদের ভিড়ে আর ফিরে দেখা হয়নি চিঠিটা। রাত্রিবেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন আঁধার রাতে উঠে বইয়ের ভাঁজ থেকে চিঠিটা বের ক'রে ভালো ক'রে পড়লাম। তা'তে দেখলাম কর্মস্থলের ঘটনার কারণে আমাকে চাকরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং শো কজ করা হয়েছে কেন আমাকে সাসস্পেন্ড করা হবে না তার উত্তর দিতে হবে পনেরো দিনের মধ্যে।


সারা রাত ঘুম হ'লো না। এই প্রথম বাবার অভাব অনুভব করলাম। ভালো ক'রে বাবার ফটোর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম মুখটা। মনে হ'লো কতদিন যেন বাবাকে দেখিনি। বাবার ছবির দিকে চেয়ে অনুশোচনায় চোখের জলে ঝাপসা হ'য়ে গেল দৃষ্টিটা। আর, সেখানে ভেসে উঠতে লাগলো ছোটোবেলার বাবার সঙ্গে সময় কাটানোর কত ছবি। আমার মাথার ওপর থেকে কে যেন ছাদটা কেড়ে নিল। আমি একা আর মাথার ওপর বিশাল এক শূন্যতা যেন আমাকে গ্রাস করতে আসছে। বাবার ছবিটা বুকে নিয়ে পড়ে রইলাম বিছানায়। নিজেকে নিসঙ্গ মনে হ'লো। বুঝতে পারলাম বাবা কেন বটগাছ।
প্রবি।
(লেখা ১০ই জুন, ২০২৩)

আত্মকথন ৪

পরদিন সকালে উঠে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেলাম কর্মস্থলে। গিয়ে দেখা করলাম পারসোনাল ডিপার্ট্মেন্টে। অফিসারদের সঙ্গে কথা বললাম। জানালাম ঘটনা; সত্য যা ঘটেছিল। আমাকে বলা হ'লো বক্তব্য বিষয় লিখে জানাতে। মুখে বলে কিছু হবে না। আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগের ধারা আনা হয়েছে সেই ধারা যাতে কার্যকরী না হয় তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে আপনার বক্তব্য লিখে জানান।
পারসোনাল ডিপার্ট্মেন্টে আমার এক আত্মীয় ছিল গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে। সম্পর্কে মামা। তাঁকেও জানালাম ব্যাপারটা। তিনি খুব গম্ভীরভাবে আমার সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করলেন। আমি ইউনিয়ন করি, দাদাগিরি করি, কোম্পানির ভেতরে মারামারি করেছি ইত্যাদি নানা অপ্রিয় কথা শুনিয়ে আমাকে কোনও সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানালেন। সত্যি ঘটনা জানিয়ে তাঁকে আমি যে প্রকৃতপক্ষে নির্দোষ সেটা বোঝাবার চেষ্টা করলাম। আমি তাঁর কাছে সাহায্য চাইলাম। বললাম, এটা আমাকে ফাঁসাবার চক্রান্ত। দেখা করতে চাইলাম কোম্পানির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। কারণ চাকরীটা আমি পেয়েছি সরাসরি প্রেসিডেন্টের আনুকূল্যে; কারও মাধ্যমে নয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চাওয়ার কথায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হ'য়ে গেলেন। কেন রেগে গেলেন হঠাৎ বুঝলাম না। তখন অত বয়স ছিল না বোঝার মতো। বয়স ২৫বছর। তিনি রেগে প্রেসিডেন্ট কি তোর--------ব'লে গজগজ ক'রে নিজের অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে গেলেন। আমি আরও অসহায় হ'য়ে পড়লাম। কি করবো, কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ভেঙে পড়তে চাইছিলো শরীর-মন। মনকে শক্ত ক'রে নিয়ে ফিরে এলাম বাড়িতে।

পরের দিন সকালে ফাস্ট আউয়ারে সোজা ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের কাছে গেলাম। সেখানে তাঁকে সব বললাম। আমি নিরপরাধ জানিয়ে তাঁর সাহায্য চাইলাম। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। তিনি বললেন, আগে আপনি শো কজের উত্তর দিন। তারপরে আপনার সব কথা শুনবো। আর কোনও কথা শুনতে চাইলেন না। বললেন, আপনি এখন আসুন। আমি বললাম, একবার আমাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ক'রে দিন। আমি তাঁকে সত্যটা জানাতে চাই। আমার এই সহজ সরল কথাটাকে ঔদ্ধত্ব মনে ক'রে বিরক্ত হ'য়ে বললেন, এটা আপনার বাড়ি না অফিস? প্রেসিডেন্ট আপনার সঙ্গে দেখা করবে? আমি বললাম, দেখা না করুক, অন্তত তিনি জানুন আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাই। ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আমার দিকে চেয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলেন। তারপর ধীর গম্ভীর স্বরে বললেন, আপনি এখন আসুন। আপনাকে সময় মতো ডেকে নেওয়া হবে। বুঝলাম সব কেমন যেন আমার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। আমি নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। চেম্বারে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম অফিসের সমস্ত স্টাফ আমার দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মাথা উঁচু ক'রেই বেরিয়ে এলাম কিন্তু লজ্জা ও অস্বস্তি নিয়ে।
প্রবি( লেখা ১০ই জুন, ২০২৩)

Sunday, June 9, 2024

প্রবন্ধঃ নূপুর শর্মা ও ধর্মীয় কেচ্ছা!

ভারতে নবী হযরত মুহাম্মদকে নিয়ে নূপুর শর্মার আপত্তিকর বক্তব্যকে সামনে রেখে সারা ভারত ও মুসলিম বিশ্ব নাকি তোলপাড়। এই নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সৌদি আরব, কুয়েত এবং বাহরাইন ইত্যাদি কয়েকটি মুস্লিম দেশ। ডাক দেওয়া হয়েছে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক। ভারতেও দেশের ভিতরে প্রতিবাদের ঝড় যেমন উঠেছে তেমনি নূপুর শর্মার পক্ষেও ঝড় উঠেছে!

আর এই বিষয়ে দেশের ভিতরে ও বাইরে সঙ্কট মোকাবিলায় ভারত সরকার যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করার করেছে ও করছে।

এখন প্রশ্ন জাগে মনে নূপুর শর্মার বক্তব্যে সারা ভারত ও মুস্লিম বিশ্বে নাকি বাওয়াল লেগে গেছে। তা বাওয়ালটা কি উদ্দেশ্য প্রণোদিত? কারণ নূপুর শর্মার বক্তব্যে যা যা একশান নেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকার নিয়েছে। কিন্তু নূপুর শর্মার সমর্থন যারা করছে বা করেছে তারা কি উদ্দেশ্যে তাকে সমর্থন করছে? একটা কিছু তো উদ্দেশ্য আছে। তা বদ হ'ক বা সৎ যে উদ্দেশ্যই হ'ক। কারণ নূপুর শর্মা বিজেপির সাংসদ ও নানা দলীয় ও সরকারি বেসরকারি নানা দায়িত্বে আছেন আর সেই সমস্ত দায়িত্ব থেকে বিজেপি দল তাকে সরিয়ে দিয়েছে এমনকি ৬ বছরের জন্য দল তাকে সাস্পেন্ড করেছে। এটা দলের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বিজেপি দল তাদের সংগঠন, সরকার এবং দেশের স্বার্থে যা কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার নিয়েছে। অথচ প্রেম পিরিতি বা স্বার্থ দলের বা সরকারের না হ'য়ে কাদের হ'লো যে তাদের বুকের বরফ গলে ঝর্ণা হ'য়ে ঝ'রে পড়ছে নূপুর শর্মার দুঃখে!? আজ কারা তারা যারা নূপুর শর্মার পাশে দাঁড়াচ্ছে!? কোথায় থাকে তখন তারা যখন মুসলমানদের উগ্রতার বলী হয় দেশের হিন্দু সম্প্রদায়!? কোথায় থাকে তখন তারা যখন হিন্দু ধর্মের আস্থা শ্রীরাম ও হিন্দু দেবদেবীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায়, ভাংচুর করে প্রকাশ্যে মুসলমানদের উগ্র একাংশ তখন কেন তারা প্রতিবাদে মুখর হয় না আজ যেমন নূপুর শর্মার বক্তব্যে খুশীতে দরদ উথলে উঠছে, বুকের বরফ গলে ঝর্ণা হ'য়ে যাচ্ছে যাদের, তাদের!? কি উদ্দেশ্য আছে এর পিছনে? তারা কি মনে করছে ভারতের সমগ্র হিন্দু সমাজ নূপুর শর্মার বক্তব্য সমর্থন করে? মুষ্ঠিমেয় কয়েকটি মানুষ দলবদ্ধ বা বিচ্ছিন্নভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হ'য়ে নূপুর শর্মাকে সমর্থন করলেই সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধ উসকে দেওয়া যাবে নাকি সমগ্র হিন্দু সমাজের মুখপাত্র হ'য়ে যাবে? হিন্দু বা মুসলিম সমাজ বা অন্যান্য সম্প্রদায় বা সমাজ কি কারও পৈতৃক সম্পত্তি!? এতটাই নপুংসক ভাবে কেন্দ্রিয় সরকার বা বিজেপি দলকে!? আর জনগণকে কি ভাবে এরা? চার অক্ষর? আর নূপুর শর্মার কথা যদি ধরি তাহ'লে বলতে হয় এতটাই কাচা মাথার অপরিপক্ক তিনি!? এটা বিশ্বাস যোগ্য? তিনি দায়িত্ববান একজন সাংসদ ও দলীয় কর্মী। তিনি জানেন না কোন কথাটা দেশের পক্ষে, সম্প্রদায়ের পক্ষে এবং দল ও সরকারের পক্ষে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক এবং নিজের ভাবমূর্তির পক্ষে কলঙ্কজনক !? যদি এর জন্যে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশ, জনগণ, সরকার ও দলের তাহ'লে কি করা উচিৎ!? কড়া থেকে কড়া ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ কি উচিৎ না? নাকি ধ'রে নেবো এর পিছনে অনেক বড় রাজনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক সাজিস আছে, আছে কোনও শক্তিধর রাষ্ট্রের উস্কানি বর্তমান সারা বিশ্বে রাশিয়া আর ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের বর্তমান জবরদস্ত অবস্থানের ভিত্তিতে আর তার মদদদাতা আছে দেশের ভিতরে দেশ শত্রু রাবণ ও দুর্যোধনেরা?

এছাড়া যখন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এবং বহির্ভারতে হিন্দুদের ওপর প্রকাশ্যে আক্রমণ হয় এবং হিন্দু দেবদেবীদের ভাংচুরসহ হিন্দুদের ওপর প্রকাশ্যে আক্রমণ হয় তখন তো সারা ভারত নূপুর শর্মার জন্য যেমন পক্ষ অবলম্বন ক'রে গর্জে ওঠে তেমন তো গর্জে উঠতে তখন দেখি না!? কেন? আর কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের ভূমিকা কি থাকে তখন!? এর আগে বহু বহু ঘটেছে ও ঘটে চলেছে, প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছে সম্প্রতি বাংলাদেশেও আমরা কোরাণ আর হনুমান সংক্রান্ত নোংরামোও দেখেছি কিন্তু এ সম্পর্কে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সদর্থক বলিষ্ঠ কড়া দৃষ্টিভঙ্গি বা ভূমিকা দেখিনি। দেখেছি কি!?
পক্ষপাতিত্ব দিয়ে কি আর দেশ চালানো যায় নাকি সমাজ সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা যায়!?!?!?।
(লেখা ৮ই জুন, ২০২২)

উপলব্ধিঃ ইষ্ট নাই নেতা যেই যমের দালাল কিন্তু সেই" শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

আসুন দেখা যাক কথাটা কতটা সত্য।

দেশের দায়িত্বপূর্ণ পদে বসে কোন কথা বলতে হয় আর কোন কথা বলতে নেই সেই বোধ, সেই জ্ঞান যাদের নেই তারা জনপ্রতিনিধি!? কোন কথা বললে একটা সমুদায় সম্প্রদায়ের আবেগকে আঘাত করে, আহত করে সে সম্পর্কে জ্ঞান যাদের নেই তারা দেশের সাংসদ!? এদের ;টাট্টি কা মাফিক বাত'-এর জন্য দাঙ্গা ফাসাদ লাগে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে। হাজার হাজার লোকের প্রাণ যায়, লক্ষ লক্ষ লোক গৃহহীন, আশ্রয়হীন হ'য়ে পড়ে। অতীতে এর বহু উদাহরণ আছে। এদের মতো লোক দলের ও দেশের নেতা!? 'একে নষ্ট করে সবে দুঃখ পায়'--এর জ্বলন্ত উদাহরণ নূপুর শর্মার মত মানুষেরা; যারা জীবন্ত ঈশ্বর হজরত মহম্মদকে নিয়ে কটু মন্তব্য করতে দ্বিধা করে না।
এদের মত মানুষের হাতে দেশের মানুষের জীবন ও ভবিষ্যত নিরাপত্তা!?
এরা যে দলের আর যে ধর্মের বা সম্প্রদায়ের হ'ক না কেন এরা নিঃসন্দেহে যমের দালাল। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণীর এরা জ্বলন্ত উদাহরণ। "ইষ্ট নাই নেতা যেই যমের দালাল কিন্তু সেই।"
এরা আবার জনপ্রতিনিধি!? এদের মতো লোক দলের ও দেশের সাংসদ!? এরা দলের ও দেশের নেতা ও সম্পদ!? এরা দেশের জঞ্জাল ও বোঝা।
আর, আমরা জনগণ আমাদের সাক্ষাৎ মৃত্যুকে নির্বাচিত করি।
হা ঈশ্বর! জনগণের বাণী নাকি ঈশ্বরের বাণী!!!!!!!
(লেখা ৯ই জুন, ২০২২)

আত্মকথন ১

যত অপমান আমার সোনার সৎসঙ্গীদের কাছে পেয়েছি তার সামান্যটুকুও সাহস পায়নি আমার যৌবন থেকে আজ এইবয়স পর্যন্ত অন্য কোনও ক্ষেত্রে কেউ। কর্মক্ষেত্রে ব্যাক স্ট্যাব হয়েছি জয়েনিং ডেট থেকে চাকরী অবসরের ৫ বছর আগে পর্যন্ত। শেষে চাকরী থেকে রিজাইন দিয়ে চলে এসেছি। রাজনীতিতে লেগ পুলিং হয়েছি আর যাদের উত্থানের মই হয়েছি তারাই উপরে উঠে যাবার পরই লেগ পুশ করেছে ভয়ঙ্করভাবে। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নির্দেশে রাজনীতি থেকে ২০১৭ থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি পুরোপুরিভাবে আজ। উদ্দাম যৌবনের সময় থেকে শিক্ষা, ক্রীড়া, অভিনয়, রাজনীতি ইত্যাদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিশেষ ক'রে সৎসঙ্গের দরবারে সেই ১৯৭৯ থেকে আজ পর্যন্ত শ্রীশ্রীঠাকুরের "ছোটোকে বড় করো আর বড়োকে করো আরও বড়" তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে চলেছি অথচ সেখানেই ছোটো বড় হ'য়ে আর বড় আরো বড় হ'য়ে আফজল খাঁয়ের মতো আস্তিনের তলায় লুকোনো খঞ্জর দিয়ে করেছে সবেগে আঘাত কিছু বুঝে ওঠার আগেই। শিবাজীর মতো পারিনি সামান্য নিজের নখ দিয়েও আঁচড়াতে; বাঘনখ তো দূরের কথা। এই সময়ের অচল আমি আজও সচল আছি দয়ালের দয়ায়। ( লেখা ৯ই জুন, ২০২৩)

আত্মকথন ২

কর্মস্থলে বহু মানুষ আছেন যারা অসহায় অবস্থায় বসের উপর নিজের জীবন ছেড়ে দিয়েছেন। তারা সেই কষ্ট চেপে রাখে সযত্নে বুকের মাঝে। পরিবারের কাউকে জানতে দেয় না। আমার কর্মজীবনে এরকম বহু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে যা কাউকে কোনওদিন মুখ ফুটে বলিনি। কাজের জায়গায় মাথা উঁচু ক'রে কাজ করেছি। আমার আন্ডারে যারা কাজ করতো তাদের কি কাজে এসেছি জানি না শুধু এটুকু বলতে পারি আমাকে শিফটিং ডিউটি করতে হ'তো আর শিফটিং ডিউটি ছিল ১৫দিন অন্তর অন্তর। ১৫দিন শেষ হ'লেই শিফটিং চেঞ্জের সময় কর্মচারীরা শিফট চেঞ্জ রিপোর্ট কার্ডের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তো আমি কোন শিফটে আছি জানার জন্য। ম্যানেজমেন্ট ও টাইম অফিস থেকে যখন হঠাৎ হঠাৎ অ্যাটেন্ডেন্স ভিজিটে আসতো তখন আমাকে তাদের ঢাল হ'য়ে দাঁড়াতে হ'তো। তার জন্যে মুখ বুজে অনেক মানসিক চাপ সহ্য করতে হ'তো। ডিউটি শেষে আউটপুট পারফরমেন্স আর ঝামেলাহীন ডিপার্ট্মেন্টের পরিবেশ বজায় রাখা ছিল আমার ফার্স্ট এন্ড ফরমোস্ট ক্রাইটেরিয়া। তাই কর্তৃপক্ষ আর কিছু দেখতো না তবে কেউ কেউ অকারণ বসিং করতে ছাড়ত না। অমুক কোথায়? তমুককে ডাকুন ব'লে আমাকে বিব্রত করতে চেষ্টা করতো। জেনেবুঝেই মজা করতো বা অন্যের রাগ আমার ওপর মিটিয়ে নিত। তবে এর জন্য আমাকে কর্মচারীদের মাঝে তাদের প্রোডাকশান ও শৃংখলা বজায় রাখার দায়িত্ব সম্পর্কে যাজন করতে হ'তো শাসন ও তোষণ এবং পালন ও পোষণ নীতির ওপর দাঁড়িয়ে কঠোর-কোমল হাতে। তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী প্রোডাকশান দিত। কিন্তু আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কারও কারও কাছ থেকে যেমন সীমাহীন সম্মান ভালোবাসা পেয়েছি ঠিক তেমনি অকারণ এক একজনের কাছ থেকে রূঢ় ও চূড়ান্ত অসম্মানজনক ব্যবহার পেয়েছি। পেয়েছি তার কারণ মাথা উঁচু ক'রে স্বাধীনভাবে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছি আর তাই ছিল অপরাধ। কোনও কোনও কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিগত কাজও করতে হয়েছে তাদের অনুরোধে। যেহেতু আমি বরাবরই ছিলাম স্পষ্টভাষী আর সেই স্পষ্টভাষীর জন্যে হয়েছি তাদের বিরাগভাজন। কিন্তু ঠাকুরকে ছোটোবেলা থেকে ধরার জন্য ছিলাম স্পষ্টভাষীর সঙ্গে মিষ্টভাষী ও ভদ্রভাষী।
( লেখা ৯ই জুন,২০২৩)

Friday, June 7, 2024

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীআচার্যদেবের শুভ ৫৭তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আজ ৭ই জুন শুক্রবার আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ৫৭তম জন্মদিন। আজকের এই শুভ ও পবিত্র দিনে দয়ালের শ্রীচরণে আচার্যদেবের সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনের জন্য আন্তরিক প্রার্থনা করি। প্রার্থনা করি শ্রীশ্রীআচার্যদেব যেন খুব খুব ভালো থাকেন, আনন্দে থাকেন। প্রার্থনা করি শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণে, আমরা আজ বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি সৎসঙ্গী যে তাঁর জন্মদিন পালন করছি, আমরা যারা আজ এই শুভদিনে দেওঘরে উপস্থিত হ'তে পেরেছিদ তাঁরা যেন শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে খুব আনন্দে রাখতে পারি। আসুন আমরা বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীরা আজকের দিনে 'তাঁকে আমরা আনন্দে রাখবো' এই শপথ গ্রহণ ক'রে তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রেষ্ঠ উপহার দিই।    


শ্রীশ্রীঠাকুর বলে গেছিলেন “যা দিয়ে গেলাম আগামী দশ হাজার বছরের মধ্যে আর কিছু লাগবে না“ অর্থাৎ তিনি আর আগামী দশ হাজার বছর আসবেন না কারণ যা বলার তিনি সব ব’লে দিয়ে গেছেন; শুধু এবার সেই বলাগুলি ইমপ্লিমেন্ট করার কাজ আর সেই কাজে তিনি নিজেই গোটা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবেন আর তা দেবেন রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে তাঁর বংশধরের মধ্যে দিয়ে বংশ পরম্পরায়। আর তাঁর সেই কাজ তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর পরমপ্রিয় আদরের ধন প্রথম সন্তান, তাঁর পরম ও প্রধান ভক্ত, কলিযুগের হনুমান, বিশ্বজুড়ে সৎসঙ্গীদের চোখের মণি সবার বড়ভাই শ্রীশ্রীবড়দার মধ্যে দিয়ে। সেই নেতৃত্বের কাজ চলেছে তাঁর তৃতীয় পুরুষ আদরের দাদুভাই শ্রীশ্রীঅশোকদাদা সম্পর্কে বলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। কি বলেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীশ্রীদাদা সম্পর্কে? ঋত্ত্বিক আচার্য শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যদাকে (কেষ্টদাকে) শ্রীশ্রীঠাকুর ছোট্ট অশোকদাদাকে দেখিয়ে বলেছিলেন, "আমার সৎসঙ্গের প্রকৃত আন্দোলন শুরু হবে আমার 3rd Generation অর্থাৎ ৩য় পুরুষ থেকে।" আমরা সবাই দেখেছি ও জানি শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ রাখার পর শ্রীশ্রীবড়দার নেতৃত্বে কিভাবে ভয়ঙ্কর বিরোধীতা ও প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা ক'রে 'সৎসঙ্গ" প্রতিষ্ঠানকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা ক'রে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবধারা ও শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের নাম। আর, তারপর শ্রীশ্রীঠাকুরের 'জীবনবাদ, অস্তিত্ববাদ' প্রচারের যে প্রকৃত আন্দোলন, শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' আন্দোলনের যে কঠিন মহান গুরু দায়িত্ব সেই কঠিন ও মহান গুরু দায়িত্বকে, শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশনকে শক্ত, মজবুত, বলিষ্ঠ কাঁধে ক'রে  নিপুণ দক্ষতায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের নিজের মুখে ব'লে যাওয়া 3rd Generation অর্থাৎ ৩য় পুরুষ শ্রীশ্রীঅশোকদাদা।  বর্তমানে সৎসঙ্গের সেই Being & Becoming অর্থাৎ বাঁচা-বাড়ার আন্দোলন, বিশ্বজুড়ে ৮০০কোটি মানুষের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জীবনবাদ, অস্তিত্ববাদের আন্দোলন, সেই আন্দোলন এগিয়ে চলেছে দিব্যদৃষ্টির অধিকারী পরম শ্রদ্ধেয় এ যুগের ঠাকুরভক্ত হনূমান শ্রীশ্রীঠাকুরের কুকুর সত্যদ্রষ্টা ঋষি শ্রীশ্রীবড়দার ব’লে যাওয়া, “বাবা আই” অর্থাৎ বাবাই অর্থাৎ বর্তমান আচার্যদেব  
শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে দিয়ে। বহু বিশিষ্ট জনেদের মুখে অনেকবার শুনেছি, এবং ২০১৪ সালে শীতকালের এক বিকেলে মাণিকপুরে ঘুরতে গিয়ে মাণিকপুরের দায়িত্বে থাকা এক বয়স্ক গুরুভাইয়ের মুখে শুনেছিলাম ছোট্ট শিশু বাবাইদাদাকে কোলে ক’রে যেদিন বড়বৌদি অর্থাৎ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মা ঘরে পা রেখেছিলেন, তারপরে শ্রীশ্রীবড়দার কোলে তুলে দিয়েছিলেন সৎসঙ্গ জগতের আগামী কান্ডারী ছোট্ট শিশুকে তখন সেই ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়েই শ্রীশ্রীবড়দা আনন্দে তাঁর চকা আঁখি বিস্ফারিত ক’রে চকিতে বলে উঠেছিলেন, “বাবা আই”!!!!! অর্থাৎ বাবা এসেছে!!! সেই থেকেই সৎসঙ্গ জগতের বর্তমান কান্ডারী আচার্যদেব পরমপুজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার নাম হ’য়ে গেল ‘বাবাই’!

আজ আমরা সবাই শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে ছুটে যাই যখনই সমস্যার ঘোর আঁধারে ডুবে যাই, হতাশা অবসাদে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, ভয়, মহাভয় যখন অক্টোপাশের মত ঘিরে ফেলে, দুশ্চিন্তার নাগপাশে যখন শ্বাস বন্ধ হ'য়ে যায়, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যর, দারিদ্রতা যখন চোখের দৃষ্টিশক্তি, বোধবুদ্ধি কেড়ে নেয়, মন যখন তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, নার্ভ অচল হ'য়ে পড়ে তখন আমরা ছুটে যাই শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে সমস্যা থেকে মুক্ত হবার আশায়। তিনি আমাদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেন। আচার্যদেবের সান্নিধ্যে গিয়ে, তাঁর দর্শন লাভ করা ও তার সঙ্গে কথা বলা ও তার পরামর্শ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়ে আবার লড়াই করার শক্তি ফিরে পাই আমরা এবং একটার পর একটা বিপদের সঙ্গে লড়াই ক'রে বিপদকে অতিক্রম ক'রে সারা জীবনের জন্য সমর্থ হ'য়ে ওঠার শিক্ষা পাই। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে গিয়ে মানুষ বিজ্ঞান মুখী হ'য়ে ওঠে, অলৌকিক জগৎ ছেড়ে লৌকিক জগতে, বাস্তব জগতে ফিরে আসে মানুষ, বাস্তবতার সন্ধান পায়, মানুষ যুক্তির ওপর দাঁড়াতে শেখে। আংটি, তাবিজ, পাথর, মাদুলি, ম্যাগ্নেটিক ব্রেসলেট, লালসুতো, কালোসুতো, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, জলপড়া, তেলপড়া, ভড়, বিপদতারিণী, মাতাজী, বাবাজী, রাহু, কেতু, শনি, ভূত, প্রেত, অশুভ হাওয়া ইত্যাদি কুসংস্কারমুক্ত জীবনের অধিকারী হ'য়ে ওঠে এবং অন্তরে ও বাহিরে এক শক্তিমান মানুষে পরিণত হ'য়ে ওঠে। শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সান্নিধ্যে মানুষ আশীর্বাদ, দয়া, হাতে খড়ি ইত্যাদির প্রকৃত বিজ্ঞান ভিত্তিক অর্থের সন্ধান পায়। 
শ্রীশ্রীঠাকুর যে ধর্মের কথা ব'লে গেছেন সেই ধর্ম যে ফলিত বিজ্ঞান অর্থাৎ applied science তা' আচার্যদেবের সম্মুখে প্রতিনিয়তই ব্যষ্টি জীবন, সমষ্টি জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন সম্পর্কীয় আলোচনায় ফুটে ওঠে। শ্রীশ্রীঠাকুরের সমস্ত কথার মধ্যে ফিলসপি, আর্ট, রিলিজিয়ন যা কিছু আছে সবকিছুই সায়েন্সে মার্জ ক'রে গেছে অর্থাৎ দর্শন, কলা, ধর্ম সবকিছু বিজ্ঞানের সাথে মিলে গেছে তা' আমরা জীবন্ত হ'য়ে উঠতে দেখেছি আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে। ধর্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, কলা সবকিছু মার্জ ক'রে যাওয়ার মূর্ত রূপ শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা। এখানে তথাকথিত ধর্মের, অলৌকিকতার ভড়ং নেই।
 
অথচ, শ্রীশ্রীঠাকুর যে মাঝে মাঝেই শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের সেই বিখ্যাত উক্তি " " There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।" এই বাণীর প্রত্যক্ষ রূপ আমরা লক্ষ্য করতে পারি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের 
মধ্যে। এ এক রহস্য! যার কারণ ভেদ করতে পারেনি কেউ বা কোনও বিজ্ঞান। এই রহস্যের বিচ্ছুরণ দেখা গেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে আর তার ট্র্যাডিশন ব'য়ে নিয়ে গেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ও প্রধান ভক্ত কুকুর কলি যুগের হনুমান, সৎসঙ্গীদের বড় ভাই শ্রীশ্রীবড়দা, যা দেখতে পেয়েছি ঈশ্বরকোটি পুরুষ শ্রীশ্রীদাদার মধ্যে আর যা আমরা অনুভব করেছি, অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, উপলব্ধি হয়েছে বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে। এই নিয়ে অনেকেই তর্ক করতে পারে। কিন্তু তর্ক করবার জন্য আমার ভিডিওতে আসা উদ্দেশ্য নয়। এই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি যার যার জীবনে হয়েছে সেই বুঝতে পারবে। বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার। আমার জীবনের ওপর দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা যার সাক্ষী হ'য়ে আছে। যা আমি আগে ব্যক্ত করেছি ও আগামী দিনে ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরবো। যা আজও আমাকে, আমার পরিবারকে
রোমাঞ্চিত করে! যখনই মনে সন্দেহ, অবিশ্বাস মুহূর্তের জন্য বিন্দুমাত্র হানা দেয় তখনি যেন মনে হয় দয়াল মিষ্টি হেসে রহস্য ক'রে আচার্যদেবের মধ্যে দিয়ে বলছেন তাঁর প্রিয় শেক্সপিয়ারের কোটেশানটা "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"

আজ আমি আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার ৫৭তম জন্মদিনে তাঁর শ্রীচরণে জানাই শতকোটি প্রণাম। জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরচিত কবিতার মধ্যে দিয়ে।   

কবিতাঃ হে আমার আচার্য।

হে আচার্যদেব লহ মোর প্রণাম!
দেখি তোমার মাঝে দয়ালের বিচ্ছুরণ অবিরাম!
দয়ালের চলা, দয়ালের বলা, চোখ, নাক, মুখের
যত ষোলকলা আনে ঝলক পলকে পলকে
তব মুখপানে, আচারে আচরণে যেন সীতারাম!

আমার বুকের মাঝে ওঠে দয়ালের ঝড়,
প্রশস্থ বুক আমার দয়ালের বাড়ি, দয়ালের ঘর!
দয়াল আমার মাথার 'পরে, দয়াল আমার দাঁড়ি
তাঁর নামের তরী চেপে দেব দয়াল দেশে পাড়ি।

কে দিল মোরে এই ইশারা? কি ক'রে পেলাম এই সাড়া?
তুমি যদি না থাকতে মোর আচার্যদেব
আমিও হ'তাম দিশাহারা, হতাম দয়ালের ঘরছাড়া।
হে আচার্যদেব! তুমি লহ মোর প্রণাম!

হে আচার্যদেব! পরাণে পরাণে তব গুণগানে
জেগে ওঠে ভালবাসার হিল্লোল!
দিক হ'তে দিকে আসে ছুটে ছুটে, ওঠে কলরব
ভারত ও বহির্বিশ্বের যত ভাষাভাষি আসে কাছাকাছি
শুনি ঐ পদধ্বনি, শুনি ভেসে আসে দেওঘরের কল্লোল!

কেমনে বাসিব ভালো তাঁরে,
হৃদয়ে কেমনে জ্বালিবো তাঁর আলো
দয়াল প্রভুর তরে আচারে আচরণে ক'রে করিয়ে
হে আচার্যদেব! শেখাও মোদের,
শেখাও তাঁর মতো হ'তে ভালো।

দয়াল প্রভু শেখালো মোদের 
আচারে আচরণে সযতনে
শয়নে স্বপনে, জাগরণে, স্মরণে মননে
ইষ্ট মোদের জীবন দাঁড়া, তিনিই জীবন মেরু,
আঁধার কেটে যখন উঠবে সূর্য ফুটবে আলো
আসবে নোতুন ভোর তাঁকে স্মরণ ক'রে তুমি
ইষ্টার্ঘে জীবন করো শুরু, সিক্ত হবে তোমার
শুষ্ক জীবন নিশ্চিত, হবে শীতল শুষ্ক ভুমি মরু!
এক ও অদ্বিতীয় ইষ্টকে কেমনে বাসিবো ভালো?
আচারে আচরণে ক'রে করিয়ে দয়াল মোদের শেখালো!

হে দয়াল! হে আমার জীবনস্বামী!
রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু আর রামকৃষ্ণ
এক ও অদ্বিতীয় ইষ্ট তাঁরাই, একথা শেখালে তুমি;
শেখালে তুমি কেমনে বাসিবো ভালো জীবন্ত ইষ্টেরে,
কেমনে পুজিব তাঁর চরণ, 
তুমি প্রভু শেখালে মোদের
চলনহারা চরণ পুজা মরণ!
হে দয়াল! তাই তোমার রাতুল চরণ চুমি।
তাই তুমি আচার্য! তুমিই পুজ্য, তুমিই ধ্রুবতারা!
মোদের আর নেই কেউ আরাধ্য, নেই কেউ তোমা ছাড়া।

হে দয়াল! তুমি তো শেখালে মোদের
বাসিতে ভালো জীবন্ত এক ও অদ্বিতীয় ইষ্টেরে
তোমারে কেমনে বাসিবো ভালো তা শেখাবে কে?
কে শেখাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় তোমারে ভালোবাসিতে?
তুমিই ধ্যান, তুমিই জ্ঞান, তুমিই জীবন সর্বস্ব!
কে শেখাবে মোদের সে কথা, তুমিই একমাত্র আদর্শ?
কেমনে করিবো তোমার যত স্বপ্ন পূরণ?
কেমনে পুরিব তোমা আশ?
কেমনে করিব তোমার স্বর্গ রচনা?
কেমনে করিবো অশুভ নাশ!?
কেমনে সব কিছু পিছনে ফেলে
পিছু টান মুহুর্তে ভুলে, বৃত্তি ভেদী টানে
কেমনে ছুটিবো তোমার পানে?

এ কথা শেখালো মোদের আচারে আচরণে
ক'রে করিয়ে শয়নে, স্বপনে, জাগরণে সযতনে
মোদের শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা আর শ্রীশ্রীবাবাইদাদা
তাই তো তিনারা 'সৎসঙ্গ'-এর আচার্যদেবতা!!

হে আচার্যদেবতা !
তুমি শেখালে মোদের আচারে আচরণে
কেমন ক'রে থাকবে দয়াল সবার পরাণে পরাণে।
শেখালে তুমি, কেমন ক'রে তাঁরে রাখবো বুকে,
বুকে কেমনে জ্বালবো তাঁর আলো,
তাঁরে ভালোবাসার বর্ণ পরিচয় শেখালে মোদের
হে আচার্য! শিশুর মতন জড়িয়ে বুকে,
নিজের বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে
ঘোর আঁধারে তুমি পথ দেখিয়ে চলো।

অন্যের অন্যায্য আচার আচরণ যখন তুফান তোলে
আমার মনের মাঝে, অন্তরে বাহিরে হৃদমাঝারে,
বরাভয় হাতে হে আচার্যদেব! তুমি এসে তখন বলোঃ
হও সাবধান! করো পূরণ যতটুকু ফাঁক
আছে তোমার জীবনে তোমা আর তাঁর মাঝে।
সেই ফাঁকে বাসা বাঁধে যত বিষাক্ত পোকামাকড়
আর ময়লা জমে মনে; ছোবলে আর দুর্গন্ধে
ক্ষতবিক্ষত আর ওষ্ঠাগত প্রাণ, দয়াল
পারে না থাকিতে সেই অসুস্থ প্রাণে।

তুমি না থাকিলে হে আচার্যদেব! 
কে শেখাতো মোদের এমনক'রে দয়ালকে ভালোবাসার কথা!?
আচারে আচরণে সেই ভালোবাসা ফুটিয়ে তোল
নিজ জীবনে আর ক'রে করিয়ে শেখাও প্রাণে প্রাণে
তাই তো তুমি সবার আচার্যদেব! তুমি মোদের দেবতা!!

হে আচার্যদেব! দয়াল যে স্বয়ং অবতারি,
তিনিই ব্রহ্মা, তিনিই বিষ্ণু, তিনিই ভোলা মহেশ্বর,
তিনিই মোদের এক ও অদ্বিতীয় জীবন কান্ডারি!
দয়াল আর আমার মাঝে নেই কেউ কোথাও,
নেই আর কোনও কিছু, দয়াল আছে আর আমি আছি
নেই কোথাও কেউ মাঝখানে আর আগুপিছু।
এ সব কথা শেখালো কে? কে শোনালো এই বেদবাণী?
আচরণে সিদ্ধ আচার্যপুরুষ তুমি শেখালে মোদেরে
শেখালো তোমার মধুর চলনখানি!
মিষ্টি ক'রে বললে তুমি, শেখালে সযতনে
জীবন মাঝে আছে শুধু দয়াল-দয়াল আর দয়াল
শয়নে-স্বপনে আর জাগরণে! এর মাঝে আর কিছু নাই
নাই আর কেউ; যদি থাকে জেনো যেনতেন প্রকারেণ
জীবন হবে ভয়াল আর ডাকবে পিছে ফেউ!!!
তুমি শিখিয়েছো মোদের যে যা করে করুক,
প্রাণ যার যা চায় বলুক তুমি চেও না ওদিক পানে,
শুনো না ওসব কথা কানে, দিলে ওদিকে মন
প্রিয়পরম দয়াল তখন যাবে ফিরে, 
রইবে একলা পড়ে।

তবুও ওরা কোলাহলে ভরা আত্মপ্রতিষ্ঠার তরে
করে ঘেউ ঘেউ, বাচালের মতো বকে যে কেউ
অনিষ্ট চিন্তায় নিজেরা নিজেদের মারে আর মরে।
তোমার বিরুদ্ধে অস্ত্র শানায় সকাল থেকে সন্ধ্যে
ভুল কথার বাজায় সানাই, বিষ ঢালে তারা প্রাণে প্রাণে।
আচার্য কথার মিথ্যে ভুল বিকৃত ব্যাখ্যা করে
সকাল সন্ধ্যে তোমাকে মুখ্য ক'রে।

হে আচার্যদেব! তুমি বলেছিলে মোদের
যদি বন্ধুকে বিপদের দিনে দাও পাঁচ টাকা
তবে বিপদের দিনে দিও দশ টাকা তোমার শত্রুদের!
তার প্রয়োজনে ছুটে যেও পাশে, যে করেছে তোমার ক্ষতি
দিও না প্রাণে 
তার দেওয়া ব্যথা ফিরায়ে তারে সযতনে।
রেখো না স্মরণে মনের কোনে গোপনে সেই কথা
শয়নে স্বপনে জাগরণে, শান্ত, হ'ক পবিত্র তব মতিগতি।
হে আচার্যদেব! রাখবো আমি তোমার কথা
নিলাম শপথ জানিয়ে তোমার চরণে আমার প্রণতি।

জয়গুরু।



 

Thursday, June 6, 2024

কবিতাঃ এবার ঘুরে দাঁড়া।

সূর্য যেমন আকাশ মাঝে বিরাজ করে
আর কিরণ আসে নেবে
তেমনি ইষ্ট ঘিরে দেবদেবী সব
থাকে কিরণ সাজে সেজে!
জীবন্ত ইষ্ট তোমার সূর্য
আর দেবদেবীরা তাঁর কিরণ,
কিরণ রূপে দেবদেবীরা
ইষ্টের নানা গুণের স্ফুরণ!
সূর্য পূজা বা প্রণাম করো তুমি
কিরণ পূজা করো?
আঁধার যখন আসে নেবে
সূর্যের স্তব করো! কেন?
কিরণ গেল কোথায়!?
সূর্য থেকে কিন্তু কিরণ প্রকাশ
কিরণ থেকে নয়
কিরণ মাঝে সূর্য খোঁজো
খড়ের গাদায় যেমন সুঁই হয়!
সূর্য পূজা করলে তোমায়
তাঁর কিরণ ঘিরে রাখে
সূর্য প্রণাম করলে কিরণ
তোমায় আলিঙ্গন করে।
তেমনি জেনো---
ইষ্ট পূজায় তোমার মাঝে
তাঁর গুণের প্রকাশ হয়
ইষ্টপ্রতিষ্ঠায় দেবদেবীরা
তোমায় ঘিরে রয়।
ইষ্ট তোমার রাম, কৃষ্ণ,
ইষ্ট তোমার বুদ্ধ;
যীশু আর মহম্মদ রূপে
এসেছিলেন করতে ধরা শুদ্ধ!
মহাপ্রভু আর রামকৃষ্ণ
হ'য়ে এসেছিলেন ধরায়
বারেবারে আসেন তিনি
আর ইষ্টের কিরণ ছড়ায়!
ইষ্ট মানে মঙ্গল
আর মঙ্গলের মূর্ত রূপ তিনি
অনুকূল রূপে কলির শেষে
এলেন আবার যিনি।
জীবাত্মার মহাত্মায় উত্তরণ কিন্তু হয়
মহাত্মা কিন্তু স্মরণ রেখো পরমাত্মা নয়।
জীবাত্মা আর মহাত্মা উভয়েরই ঠাই
পরমাত্মার চরণতলে এটা জানা চাই।
জীবাত্মা আর মহাত্মা
তোমাদের উভয়েরই লক্ষ্যঃ
মনে রেখো এই সত্য
পরমপিতার আসন যেন হয় তোমার বক্ষ!
জীবাত্মা হ’য়ে তুমি পরমাত্মা সাজো!
পরমাত্মা ঐ একজন তাঁরে তুমি খোঁজো।
খুঁজতে খুঁজতে একদিন
মহাত্মায় হবে উত্তরণ
পরমাত্মার কিরণ সেথা
হবে বিচ্ছুরণ!
কিরণ ছটায় সেদিন তুমি
দেবতা হ’য়ে উঠবে!
সংসার মাঝে সেদিন জেনো
মানুষ তোমায় পুজবে!
পরমাত্মা ভেবে যদি সেদিন
জীবাত্মা তোমায় পুজে
মরণ পথের পথিক হ’য়ে
ত্রিশংখুকে নেবে খুঁজে।
আর জীবাত্মা হ’য়ে যদি
নিজে পরমাত্মা সাজো
যাও জন্মজন্মান্তর তুমি
নরকপানে ছোটো।
মহাত্মা হ’য়ে লাভটা কি হ’লো
যদি পরমাত্মাকেই না চেনো আর না জানো?
আর জেনেও যদি তাঁরে না মানো
অহং বোধের প্রাবল্যে জেনো
নিজের বুকে নিজেই আঘাত তুমি হানো।
পরমাত্মা যখন আসেন নেবে
পুরুষোত্তম রূপে পঞ্চভুতের মাঝে
কুলের মালিক পুরুষোত্তমকে দেখে
বংশগুরু মুখ লুকায় লাজে।
শিষ্যগণে ডেকে বলেন তিনি
এসো ঐ যে দেখো তিনিই আসল কুলগুরু
সবাই মিলে চলো মোরা জীবন করি শুরু।
তাঁর চলন পূজায় চলে মোরা
জীবাত্মা থেকে মহাত্মা হ’য়ে
হবো ঐ পরমাত্মায় বিলীন
তাঁর চলন সাজে সেজে মোরা
হবো ছোটো বড় সবাই জাতে কুলীন।
জীবন খুঁজে যদি চাও পেতে ভাই
তোমার জীবন মাঝে
বরন ক’রে নাও তাঁরে আজ
ইষ্ট রুপে দেখো যেথায় সুর্য বিরাজে!
কিরণ তাঁর পড়বে ছড়িয়ে তোমার জীবন জুড়ে
কোটি দেবতার রঙে রাঙাবে জীবন
জীবন দাঁড়াবে ঘুরে।
আর্য্য কৃষ্টি তাঁর কৃষ্টি, তাঁর জীবন ধারা
সেই ধারাতে স্নান ক’রে তুই
এবার ঘুরে দাঁড়া!
(লেখা ৭ই জুন, ২০১৮)

Wednesday, June 5, 2024

উপলব্ধিঃ অব্যক্ত যন্ত্রণা।

স্বপ্ন মধুর! স্বপ্ন আলোময়! মায়াময়!! রূপময়!!! রসময়!!!! মধুময়!!!!!কিন্তু বাস্তব বড় রুক্ষ্ম, বড় কঠিন, বড় কঠোর, বড় হিংস্র, বড় নিষ্ঠুর, বড় রূঢ়, বড় নির্ম্মম, বড় সাংঘাতিক, বড় তিতো, বড় অন্ধকার, বড় কুরূপ, বড় নীরস, বড় মায়াহীন খড়খড়ে এবড়ো খেবড়ো থ্যাতলা। বাস্তব রেয়াৎ করে না কখনও কোনও অবস্থায়ই স্বপ্নের সঙ্গে। দয়ালের স্বপ্ন দেখা ছাড়া সব স্বপ্নই মিথ্যে। দয়ালকে ছাড়া সব স্বপ্নই ভেঙ্গে চুরমার হ'য়ে যায়। যে জীবনে দয়াল নেই সেই জীবনে স্বপ্ন পূরণ হ'লেও পূর্ণতা নেই, রূপ, রস গন্ধ নেই, নেই আলো, নেই মধুরতা। দিনের শেষে সব পেয়েও কি জানি না পাওয়ার এক অব্যক্ত যন্ত্রণা।  
(লেখা ৫ই জুন, ২০২৩_২৪)

উপলব্ধিঃ দয়ালকে রাখো ধ'রে।

দয়ালকে যে ধ'রে রাখে সে সবসময়ের জন্যে চনমনে থাকে, ফ্রেশ থাকে। না খেয়েও তাজা থাকে, সবুজ থাকে। মুহূর্তের জন্য দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেবে না। ভালো-মন্দ, বর্তমান-ভবিষ্যত, ঠিক-বেঠিক ইত্যাদি সব ছেড়ে দাও। কিচ্ছু ধ'রে রেখো না। মনকে শক্ত ক'রে ক'ষে ধ'রে রাখো, উর্ধগামী ক'রে রাখো। পড়তে দেবে না কিছুতেই। দয়ালের ওপর গভীর বিশ্বাস রাখো, নির্ভর করো আর নাম করো! নাম-নাম-নাম!!!!!!!!! ভালো না লাগলেও করো। মেকানিক্যালি করো। সব আপসে আপ হ'য়ে যাবে। যাবেই যাবে। হবেই হবে। শুধুই চনমনে আর চনমনে!!!!! ঝলমলে আর ঝলমলে!!!!!!! তাই রাখো দয়ালকে রাখো ধ'রে, বাচ্চা হনুমান যেমন রাখে মা হনুমানকে দু'হাতে ঝাপ্টে ধ'রে।
( লেখা ৫ই জুন ২০২৩)

বিচিত্রা ৭

জীবন প্রদীপ তোমার নিভবে ব'লে
করছে নিভু নিভু
ইষ্ট তেলে আত্মা নাও ভিজিয়ে
জীবন হবে বিভু!!
পরমাত্মায় আত্মা দাও ডুবিয়ে 
মহান পথে হও আগুয়ান
জীবাত্মা তোমার মহাত্মা হ'য়ে 
পরমাত্মায় হবে শয়ান।
সূর্য যেমন আকাশ মাঝে বিরাজ করে 
আর কিরণ আসে নেবে 
তেমনি ইষ্ট ঘিরে দেবদেবী সব 
থাকে কিরণ সাজে সেজে!
জীবন্ত ইষ্ট তোমার সূর্য
আর দেবদেবীরা তাঁর কিরণ,
কিরণ রূপে দেবদেবীরা
ইষ্টের নানা গুণের স্ফুরণ !
সূর্য পূজা বা প্রণাম করো তুমি,
কিরণ পূজা বা প্রণাম করো? করো না। 
আঁধার যখন আসে নেবে সূর্যের স্তব করো!
কেন? কিরণ তখন গেল কোথায়!?
সূর্য থেকে কিন্তু কিরণ প্রকাশ 
কিরণ থেকে নয়,
কিরণ মাঝে সূর্য খোঁজো
খড়ের গাদায় যেমন সুঁই হয়!
সূর্য পূজা করলে তুমি, 
তোমায় তাঁর কিরণ ঘিরে রাখে;
সূর্য প্রণাম করলে তুমি 
তোমায় কিরণ আলিঙ্গন করে।
তেমনি জেনো---
ইষ্ট পূজায় তোমার মাঝে 
তাঁর গুণের প্রকাশ হয়,
ইষ্টপ্রতিষ্ঠায় দেবদেবীরা 
তোমায় ঘিরে রয়।
ইষ্ট তোমার রাম কৃষ্ণ, ইষ্ট তোমার বুদ্ধ,
যীশু আর মহম্মদ রূপে এসেছিলেন তাঁরা
করতে ধরা শুদ্ধ।
মহাপ্রভু আর রামকৃষ্ণ হ'য়ে তাঁরা
এসেছিলেন ধরায়,
বারেবারে আসেন তিনি 
আর ইষ্টের কিরণ ছড়ায়।
ইষ্ট মানে মঙ্গল আর 
মঙ্গলের রূপ তিনি,
অনুকূল রূপে কলির শেষে
এলেন আবার যিনি।
তাই, জীবাত্মার মহাত্মায় উত্তরণ কিন্তু হয়
মহাত্মা কিন্তু স্মরণ রেখো পরমাত্মা নয়।
জীবাত্মা আর মহাত্মা উভয়েরই ঠাঁই
পরমাত্মার চরণতলে এটা কিন্তু জানা চাই।
জীবাত্মা আর মহাত্মা তোমাদের উভয়েরই লক্ষ্য
পরমপিতার আসন যেন হয় তোমার বক্ষ!
মনে রেখো এই সত্য।
জীবাত্মা হ'য়ে তুমি পরমাত্মা সাজো?
পরমাত্মা ওই একজন তুমি তাঁরে খোঁজো।
খুঁজতে খুঁজতে একদিন হবে মহাত্মায় উত্তরণ
পরমাত্মার কিরণ সেথা হবে বিচ্ছুরণ।
কিরণ ছটায় যেদিন তুমি দেবতা হ’য়ে উঠবে!
সংসার মাঝে সেদিন জেনো মানুষ তোমায় পুজবে!
পরমাত্মা ভেবে সেদিন যদি 
জীবাত্মা তোমায় পুজে
মরণ পথের হ'য়ে পথিক সেদিন
তুমি ত্রিশঙ্খুকে নেবে খুঁজে।
আর জীবাত্মা হ'য়ে যদি
নিজে পরমাত্মা সাজো
যাও জন্মজন্মান্তর তুমি
নরক পানে ছোটো।
পরমাত্মা যখন আসেন নেবে 
পুরুষোত্তম রূপে পঞ্চভুতের মাঝে
কুলের মালিক জেনো তিনিই, 
তাঁকে দেখে বংশগুরু যাকে বলো কুলগুরু
তিনি মুখ লুকান লাজে। ----(  ৫ই জুন ২০১৮)

শিষ্যগণে ডেকে বলেন তিনি
এসো ঐ যে দেখো তিনিই আসল কুলগুরু;
সবাই মিলে চলো মোরা জীবন করি শুরু।
তাঁর চলন পূজায় চলে মোরা
জীবাত্মা থেকে মহাত্মা হ'য়ে
হবো ওই পরমাত্মায় বিলীন।
তাঁর চলন সাজে সেজে মোরা
হবো ছোটো বড় সবাই জাতে কুলীন। ----(  ৬ই জুন ২০১৮)

যদি এসব না মানো তুমি বন্ধু
করো উপেক্ষা, 
ধীরে ধীরে আসছে ধেয়ে মরণ
করো অপেক্ষা।
তাই বলি, শেষের সেদিন যদি 
হয়ই ভয়ঙ্কর, তবে বলি,
হে মহাদেব, হে শঙ্কর,
যদি নেমেই আসে তোম্রার কোপ (৫ই জুন, ২০২৪)

জীবন চায় না আড়াই পোঁচ,
চায় এক কোপ!! 
তিলে তিলে চাই না
দাবানল, শস্যহানি, ঝড়, মহামারী
হ'লে এক কোপে ধ্বংস হ'ক!!
(লেখা ৫ই জুন' ২০২০)

উপলব্ধিঃ মজনু ও আমি!

হে দয়াল! চারিদিকে দুধ খাওয়ার মজনু!?!!?!? নকল মজনু!? আসল মজনু নেই!? এও কি হয়!? লায়লার প্রেমে পাগল মজনু বনে-বাদারে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ছুটে বেড়ায়, খুঁজে বেড়ায়; কেঁদে কেঁদে নিথর ক'রে দেয় প্রকৃতি 'কোথায় আমার লাইলী, কোথায় আমার লাইলী' ব'লে! লায়লা মজনুর জন্যে গোপনে দুধ পাঠায়; সেই দুধ এসে অন্য একজন মজনু সেজে খেয়ে চলে যায়! আর লায়লা প্রেমে মাতাল মজনু কায়েস অনাহারে স্বর্গ-মর্ত-পাতাল একাকার ক'রে ফেলে!
বন্ধু! সত্যিই কি চারিদিকে দুধ খাওয়ার মজনু!? আসল মজনু নেই!? লায়লারা কি চিরদিন নকল মজনুদের-ই দুধ খাইয়ে গেছে!? আসল মজনুরা সেই নীরবে, নিভৃতেই রয়ে যাবে!?

হয়তো হবেও বা! আর হয়তো বা বলি কেন সত্যিই তাই! নকল মজনুরা নেপোয় মারে দইয়ের মতো শেষে এসে দইয়ের উপরিভাগ, দুধের মাঠা খেয়ে চলে যায়! আর চিরদিন খেয়ে চলেও যাবে!? আর আসল মজনুরা ঘুরতে ঘুরতে শেষে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করবে!? হে ঈশ্বর! হে দয়াল! এর উত্তর আমার জানা নেই! তোমার আসল মজনুরা চিরকালই তোমার থেকে দূরে!!!!!!! তুমি দেখেও দেখো না!? তাই-ই কি সত্যি হয়!?!?
তবে ওই যে কথায় আছে 'আশায় মরে চাষা'! ওই চাষা হ'য়েই বেঁচে আছি, বেঁচে আছি 'যেদিকে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন' মানসিকতায়!!!! বেঁচে আছি 'এখনও লীলা ক'রে গৌরচাঁদ রায়, কোনও কোনও ভাগ্যবান-এ দেখিবারে পায়' দর্শনকে সাথী ক'রে!!!!!

বন্ধু! তবুও এ হতাশার মাঝে বলি, আশায় মরে চাষা আর কোনও ভাগ্যবান-এর মত পথ চেয়ে বসে থাকি আর খুঁজে মরি খ্যাপা খুঁজে মরে পরশ পাথরের মত সেই অনন্ত স্বর্গীয় প্রেম সন্ধানে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, পেলেও পেতে পারি অমূল্য সেই পরশ পাথর, প্রেম রতন!!!!!! তবে এর জন্য একটা শর্ত: স্থির থাকো তুমি, থাকো তুমি প্রদীপের মত আলস ত্যাগী, তুমি ঘুমাইলে ফিরিয়া যাইবে তারা!!!!!!!!
বন্ধু! আমার কাছে এ ছাড়া আর কিছুই নেই দেবার।

বিঃদ্রঃ ( লায়লা-মজনু ৭ম শতাব্দীর নজদি বেদুইন কবি কায়েস ইবনে মুলাওয়া এবং তার প্রেমিকা লায়লী বা লায়লা বিনতে মাহদী (পরবর্তীতে "লায়লা আল-আমিরিয়া" হিসাবে পরিচিত)-এর প্রেমকাহিনী নির্ভর প্রাচীন আরব্য লোকগাথা।
( লেখা ৫ই জুন' ২০২০)

উপলব্ধিঃ ভাবা ছেড়ে দিন।

বন্ধু! বেশী ডাকার ক্ষমতা যে অর্জন করে সে বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারে, উপলব্ধি করতে পারে দয়ালের আঘাত কত মিষ্টি, কত মধুর, কত আলোময়, রসময়, মধুময়, রূপময় আর কত বড় আশীর্বাদ; জীবনের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পাওনা। উপর উপর দেখেই সব ছাড়তে বা মতামত দিতে ঠাকুর বারণ করেছেন। ঠাকুর বলেছেন, যত ডুববে তত বেমালুম হবে। তাই ডুব দিন। আর বেমালুম হ'লে আঘাত সহ্য করার মতো অটোমেটিক আধার তৈরী হ'য়ে যায়। তখন শুধু ক্ষীর সমুদ্রে ভাসা। নতুবা সব শুধু কথার কথা, কথার স্রোতে ভাসা আর এঁড়ে তর্ক। তাই ভাবা ছেড়ে দিন। ঐ যে কি একটা গান আছে না,
"ও তুই ভাবতে গেলে কুল পাবি না,
ভাবনা হবে শুধুই সার
পর লুটে পর তাঁর চরণতলে
যে করবে এই ভব পার।"
( লেখা ৫ই জুন' ২০২৩)

Monday, June 3, 2024

প্রবন্ধঃ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর বাণী "যদা যদা হি ধর্মস্য---------"

আজকে আমি পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে আলোচনা করবো। শ্রীশ্রীকৃষ্ণ প্রেমীরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে কুৎসা, গালাগালি, নিন্দা, সমালোচনা করে ফেসবুকে, ইউ টিউবে। আমার প্রতিটি ভিডিওতে দেখুন কৃষ্ণপ্রেমীরা পরপর কন্টিনিউ শ্রীশ্রীঠাকুরের বিরুদ্ধে কুৎসামন্ডিত কমেন্ট করে চলেছে। আমাকে আমার পরিচিত ঘনিষ্ট জনেরা, ফেসবুক বন্ধুরা ফোন ক'রে, মেসেঞ্জারে ও কমেন্ট বক্সে অনুরোধ করেছে এই সম্পর্কে কিছু বলার জন্য।

এছাড়া রেশমি শ্রীমানি আমাকে অনুরোধ করেছে
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত| অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজম্যহম্ ||পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম্ | ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ||
(গীতা-৪/৭-৮)।

এই বাণীটির উপর যদি একটা ভিডিও বানান খুব উপকৃত হবো। অনেককেই দেখি গীতার শ্লোক কে বিশ্লেষণ করতে কিন্তু এই শ্লোক কে সেরকম ভাবে বিশ্লেষণ করতে দেখিনা। যদি আপনি করেন ভালো হয়।
তাই, সকলের অনুরোধে আমি আজকের ভিডিওতে এসেছি।

ফেসবুকে গীতা নিয়ে, গীতার বাণী নিয়ে অনেকেই চর্চা ও পোষ্ট করেন। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের হাতে নাড়ু বা লাড্ডু ও পরবর্তী সময়ে বাঁশী আর গাই সাথে বহু ছবিও পোষ্ট হয়। কখনোই মনে হয় না পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ বাস্তবের কোনও চরিত্র ছিলেন। নানারকম জমকালো জবড়জং পোশাকে অমূর্ত ভগবানের মত তাঁকে হাজির করা হয় মানুষের কাছে। মনে হয় অনেক দূরের কল্পনার জগতের কেউ একজন। নিজের ঘরের আপনজন ব'লে মনে হয় না। তাই সেই নাড়ু আর লাড্ডু হাত এবং গোমাতা সাথে বাঁশী হাত যে ফিল্ড মার্শালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হ'য়ে ভয়ঙ্কর মহাভারতের যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, ভারতের তাবড় তাবড় ভয়ঙ্কর পরাক্রান্ত যোদ্ধারা তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কাছে, অসীম অনন্ত জ্ঞান, যুদ্ধ বিদ্যার অভূতপূর্ব কূট কৌশলের কাছে পরাস্ত হয়েছে, তাঁর পরাক্রমের কাছে, তাঁর প্রচন্ড বাহুবলের কাছে হয়েছে ধ্বস্ত বিধ্বস্ত, খড়কুটোর মত খসে পড়ে গেছে, তাঁর সেই সমস্ত ভয়ঙ্কর পরাক্রমের কথা তুলে ধরা হয় না। প্রচার হয় না। জায়গায় জায়গায় ন্যাকা ন্যাকা গলায় বুড়োবুড়িদের সামনে গীতা পাঠ হলেও গীতার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ শ্লোকটা কখনই পড়া হয় না, ব্যাখা করা হয় না। হয় জানে না নতুবা সযত্নে এড়িয়ে যায়। ইয়ং জেনারেশনের কাছে কখনই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে তাঁর ভয়ঙ্কর ক্ষমাহীন কাঠিন্যে ভরা পৌরুষকে তুলে ধরা হয়নি, কখনও হয়না। আর তা কখনও মেয়েলী ন্যাকা ন্যাকা গলায় সখীভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। রক্তমাংসের জীবন্ত ঈশ্বরের ভয়ঙ্কর ভয়াল রূপ আমরা তিন তিনবার দেখেছি, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরাম, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীহজরৎ মহম্মদ, কিন্তু কোনওবারই তাঁদের ঐ ভয়াল ভয়নক্ রূপকে তাঁর সৃষ্টি মানুষের বাঁচা-বাড়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়নি। তুলে ধরা হয়নি প্রজাবৎসল পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের নিখুঁত রাজ্য শাসনের ছবি। শুধু ১৪ বছর বনবাস আর রাবনের সাথে যুদ্ধ হালকা ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বালগোপালের ছবি, সখিদের সঙ্গে লীলাখেলা, বাঁশী হাতে রাখাল বালক আর অর্জুনকে গীতার উপদেশ ছাড়া তাঁর পরাক্রমের বহু বহু কাহিনী চাপা পড়ে গেছে, যেমন চাপা পড়ে গেছে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদের অন্তহীন মহা সমুদ্রের প্রেম ভালোবাসার দিকটা। প্রেমিক পুরুষ প্রভু মহম্মদকে তুলে ধরা হয়নি। প্রভু মহম্মদের অন্যায়কারী ও অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তাঁর ভয়াল রূপের পাশাপাশি তাঁর দয়াল রূপকে কখনই তুলে ধরা হয়নি। ইতিহাসের বুকে এঁদের একটা দিক উন্মোচিত হয়েছে তো আর একটা দিক উপেক্ষিত থেকে গেছে। আর, তিনি যতবারই এসেছেন ততবারই তাঁকে সমাজের মূল স্রোত থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সরিয়ে রাখা হয়েছে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ক'রে।
আর, যদি পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের '"যদি যদা যদা হি---" শ্লোক না জেনে থাকে তবে বালখিল্য জ্ঞান নিয়ে গীতা পাঠের আসরে বসে কেন গীতা পাঠ করতে? আর যদি জেনে থাকে তাহ'লে এড়িয়ে যায় কেন? খোঁজে না কেন? শ্রীকৃষ্ণের কথা বিশ্বাস করে না, নাকি তাঁর নোতুন রূপের কাছে সারেন্ডার করতে ইগোতে বাধে, নাকি মৌরসী পাট্টার অবসান হ'য়ে যাবে তাই? নোতুন রূপকে যদি চিনতেই না পেরে থাকে তাহ'লে তাদের সাধনা কি বৃথা বা ব্যর্থ নয়? পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের অনেক পরম ভক্ত আছেন যারা শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত হ'য়েও তাঁর নোতুন রূপকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন প্রশ্ন ব্যর্থ হয়েছেন নাকি নোতুন রূপকে গ্রহণ করতে তাদের ইগোতে বা স্বাধীন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি হয়েছিল?
উদাহরণস্বরুপ বলা যেতে পারে, সীমাহীন চরম যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যে ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দের জেলে বসেই আধ্যাত্মিক জীবনের বিকাশ ঘটেছিল। জেলের ছোট্ট একই ঘরে থাকা, খাওয়া ও মলমূত্র ত্যাগ এই চরম অবর্ণনীয় মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে মৃত্যুই ছিল একমাত্র কাম্য। কিন্তু সেই অবর্ণনীয় অতি জঘন্য, পৈশাচিক, নারকীয় পরিবেশে তিনি জেলে বসেই পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের দর্শন পেয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ৩৬ বছর। অথচ ঠিক সেই সময় পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ তাঁর ষষ্ট রূপ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে লীলা করছেন এই ভারতের পূণ্যভূমি বাংলার বুকে বাঙ্গালী হ'য়ে। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বয়স ছিল ২০ বছর। তাহ'লে আধ্যাত্মিক পুরুষ শ্রীশ্রীঅরবিন্দ কেন তাঁর আরাধ্য দেবতা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দর্শন পেলেন না? সহজভাবে ভাবলে দেখা যেতে পারে যে যে রূপের কাছে নামময় হ'য়ে ডুবে থাকে, লীন হ'য়ে যায় সেই রূপে ঈশ্বর তাঁকে সেই সেই রূপে দেখা দেন। ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ কৃষ্ণ রূপে ও নামে মগ্ন হ'য়েছিলেন জেলে বন্দী থাকা অবস্থায়। কিন্তু কেন তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপের কাছে আসতে পারলেন না? কেন তিনি শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নবরূপে আসা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে চিনতে পারলেন না? তিনি কি তাঁর কোনও খবরই পাননি? ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ ১৯৫০ সালে ৭৮ বছর বয়সে দেহ ত্যাগ করেন যখন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বয়স ছিল ৬২ বছর। ঋষি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ শ্রীশ্রীঠাকুরের চেয়ে ১৬বছরের বড়। ৭৮ বছর বয়সে শ্রীশ্রীঅরবিন্দ পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপ ৬২ বছর বয়সের শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের খবর পাননি? তিনিও তো গীতা পাঠ করেছিলেন। সেখানে ৪র্থ অধ্যায়ে ৭-৮ নম্বর শ্লোকে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ "যদা যদা হি ধর্ম্মস্য------" বাণীর মধ্যে দিয়ে পুনরায় আসার কথা ব'লে গেলেন গীতার সেই শ্লোক কি শ্রীশ্রীঅরবিন্দ পড়েননি? নাকি বোঝেননি? নাকি খোঁজেননি? কোনটা জানি না। যদিও বলা হ'য়ে থাকে তিনি নাকি বলেছিলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুসরণ করবে।
অথচ তাঁরই ছোটো ভাই শ্রীবারীন ঘোষ শ্রীশ্রীকৃষ্ণের নোতুন রূপের সন্ধান পেলেন, সঙ্গ করলেন ও তাঁর দীক্ষা গ্রহণ ক'রে তাঁকে জীবনে গ্রহণ করলেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রচারে তিনি ব্রতী হলেন। কেন?। তাহ'লে কে ভাগ্যবান বেশী? একজন ৫০০০হাজার বছর আগে আসা ঈশ্বরের রূপের দেখা পেলেন স্বপ্নে, আর, একজন তাঁরই ভাই ঈশ্বরের জীবন্ত রক্তমাংসের নবরূপের বাস্তবে দেখা পেলেন। কেন?
মনে প্রশ্ন ওঠা কি অন্যায়, অনুচিত? এরকম উদাহরণ আরও দেওয়া যেতে পারে।
যাই হ'ক,
আসলে আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য হ'লো, কেন শ্রীশ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্তেরা শ্রীশ্রীকৃষ্ণের গীতা অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করা সত্ত্বেও গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ৭-৮ নম্বর শ্লোক সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যা করেন না? নাকি সেই ৪র্থ অধ্যায়টাই পড়েননি বা পড়ান না? বা এড়িয়ে যান? কোনটা?
আর, আমার প্রায় প্রতিটি ভিডিওর কমেন্ট বক্সে দেখবেন শ্রীকৃষ্ণ প্রেমীরা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে তুলোধোনা ক'রে ছাড়ছে কুৎসা আর গালাগালিতে ভরা মন্তব্যে। তারা কৃষ্ণ প্রেমে এমনই মাতাল যে শুধু তাঁর জন্মের সময়ের ও বাল্যকালের গল্পকথা, সখীদের সাথে প্রেম-ভালোবাসার রসের গল্পগাথা, কৌতুক কাহিনী ইত্যাদি প্রচার ক'রে চলে। তিনি প্রেমিক পুরুষ, বংশীবাদক, সমস্ত বিষয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পুরুষ ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে যে তিনি মহাবলী, মহাপরাক্রমী শক্তিমান কূট কৌশলী সর্ব্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা,, যুদ্ধবিশারদ ও ফিল্ড মার্শাল ছিলেন সেই কথা আর আলোচনা হয় না। তাই পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণ বুড়োবুড়িদের আর নারীপুরুষ ভক্তদের কাছে এখনও বালগোপাল হ'য়েই র'য়ে গেলেন।

তাই যারা গীতার শ্লোক পোষ্ট করেন ফেসবুকে, ব্যাখ্যা করেন, শ্রীকৃষ্ণের মাহাত্ম্য প্রচার করেন, শ্রীশ্রীকৃষ্ণের প্রেমে মাতোয়ালা হ'য়ে বুকের মধ্যে থাকা প্রেমের বরফ গলে ঝর্ণা ক'রে ভাসিয়ে দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন কেন তাঁকে শ্রীকৃষ্ণের নবরূপ বলা হয় এই ক্ষোভে, সৎসঙ্গে ও মন্দিরে কেন শ্রীকৃষ্ণের ছবি রাখা হয় না ইত্যাদি নানা অভিযোগে ঘৃণ্য সমালোচনা, নিন্দা, গালাগালি করেন ফেসবুকে, ইউটিউবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সনাতন ধর্মের প্রচারে, তাদের জিজ্ঞেস করি, গীতা আপনি বা আপনারা পড়েছেন? শ্রীকৃষ্ণকে আপনি বা আপনারা মানেন? যদি মানেন কেন মানেন, আর, যদি না মানেন কেন মানেন না, বলবেন? যুক্তিই তো একমাত্র সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার অস্ত্র আর সেই মোক্ষম অস্ত্র যুক্তিকেই উড়িয়ে দেন কেন? যদি আপনার/আপনাদের অগাধ জ্ঞান ভান্ডার থাকে তাহ'লে আপনারা যুক্তির পিছনে যুক্তি দাঁড় করিয়ে প্রমাণ ক'রে দিন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ভুল, মিথ্যা, ফ্রড। এখন হঠাৎ ক'রে ফেসবুকে ও ইউ টিউবে আপনাদের গীতার প্রচার করবার কথা মনে পড়েছে? এত হাজার হাজার বছর গীতা পাঠ প্রচার হয়নি? হাজার হাজার বছর ধ'রে কোটি কোটি মানুষ মারা গেল আর শ্রাদ্ধের সময় হাতে গীতা তুলে দেওয়া হ'লো ব্রাহ্মণ ও নিমন্ত্রিতদের হাতে, লক্ষ লক্ষ গীতা বিক্রি হ'লো, তখন প্রচার হয়নি? সবার ঠাকুর ঘরের কুলুঙ্গিতে গীতা লাল শালু আর সিঁদুর মাখিয়ে তুলে রাখা হ'লো তখন প্রচার হয়নি, তখন আপনাদের টনক নড়েনি?। বিশ্বজুড়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের কথা বিদ্যুৎ গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে, নানাদেশ, নানাভাষা, নানামতের কোটি কোটি মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে 'সৎসঙ্গ'-এর' পতাকার তলে, শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষায় দীক্ষিত হচ্ছেন হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মমতের মানুষ তখন আপনাদের গীতা প্রচারের কথা মনে পড়েছে? শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বালখিল্য ভালোবাসা জেগে উঠেছে? শ্রীশ্রীকৃষ্ণ ছাড়া তাঁর পূর্ব রূপ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র এবং তাঁর পরবর্তী রূপ বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণের কথা মনে পড়ে না/ তাঁরা সনাতন ধর্মের প্রতিনিধি বা সৃষ্টিকর্তার জীবন্ত রূপ নন? হজরত মহম্মদ আর প্রভু যীশুর কথা ছেড়ে দিলাম, বুদ্ধদেব, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণকে নিয়ে আপনাদের কিছু বলার আছে কি?
আচ্ছা, গীতায় কটা অধ্যায় আর কটা শ্লোক আছে বলবেন? আর, গীতার মধ্যে কোন শ্লোকটা সর্বশ্রেষ্ঠ সেটা জানেন? একথা মানেন? জানলে বলবেন? আর, বুকে হাত দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নাম স্মরণ ক'রে বিবেককে সাক্ষী রেখে বলবেন, আপনি, আপনারা গীতার ১৮টি অধ্যায়ে ৭০০টি শ্লোক পাঠ করেছেন? সত্য বলবেন। সেখানে ৪র্থ অধ্যায়ের ৭-৮ নম্বর শ্লোকটি কি জানেন? পড়েছেন শ্লোকটি? পড়েন শ্লোকটি? মনে প্রশ্ন জেগেছে কোনওদিন শ্লোকটির অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে?
তাই শ্রীকৃষ্ণপ্রেমীদের আরও জিজ্ঞেস করি, দাদা, কে শ্রীশ্রীকৃষ্ণের প্রচার করলো আর না করলো সেটা তো আপনার বা আপনাদের দেখার নয়, যদি আপনি বা আপনারা মনে করেন গীতার প্রচার দরকার তা' আপনি বা আপনারা করুন না, আপনাকে বা আপনাদের কেউ বাধা দিয়েছে? কথায় আছে, "আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়। কাউকে কিছু বলার আগে নিজেরা গীতা পড়ুন, জানুন, বুঝুন, তারপর প্রচার করুন। এটা মাথায় রাখবেন আজ ৫০০০ হাজার পর শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বালখিল্য লাফালাফি করছেন আপনারা সবাই, তাও, তাঁকে ও তাঁর কথা না বুঝে। ৫০০০ হাজার বছর আগে আপনার মত লোকেরা শ্রীকৃষ্ণকেও সেদিন গালাগালি, কুৎসা ও চরম বিরোধীতা করেছিল। আর, তারাই আবার জন্ম নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নবরূপকে গালাগালি ক'রে সেই ট্রাডিশান বজায় রেখে চলেছে। হঠাৎ ক'রে যেমন কেউ রাতারাতি জীবাত্মা থেকে মহাত্মা হ'তে পারে না, পরম ভক্ত হ'তে পারে না ঠিক তেমনি রাতারাতি কেউ নোংরা গালাগালি করতে পারে না। এটা জন্মগত সংস্কারের ব্যাপার।
যাই হ'ক কথাটা ভেবে দেখবেন। আজ আপনার, আমার, আমাদের সবার জন্য গীতা পাঠ, গীতার প্রচার, গীতার শ্লোক "যদা যদা হি ধর্ম্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত, অভ্যুতানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম, পরিত্রানায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম ধর্ম্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে" বাণীর সত্যতা উন্মুক্ত হ'ক, সত্য উন্মুক্ত হওয়ার দরকার আছে।
তাই বলি, যারা গীতা পাঠ করেন, যারা গীতার প্রচার করেন তারা আগে বুঝুন তাদের এই মানসিকতা কিসের লক্ষণ। তারা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের গীতার ৪র্থ অধ্যায়ের ৭-৮ নম্বর "যদা যদা হি---" শ্লোক বিশ্বাস করেন কিনা আর বিশ্বাস করলে তাঁর আবার আসার কথা তারা খোঁজ করেছেন কিনা। যেখানে সেখানে, যার তাঁর পিছনে, যে কোনও মহাত্মার পিছনে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীকৃষ্ণের ব্যভার করা হয়, প্রয়োগ করা হয় নির্বোধের মত। ধর্ম্ম জগত থেকে কোনও প্রতিবাদ হয় না। তিনি যতবার এসেছেন ততবারই পুনরায় তাঁর আসার ইংগিত দিয়ে গেছেন। এই শ্লোক সত্যের মুখোমুখি আজ দাঁড়াবার সময় এসে গেছে। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হ'য়ে যাবার মোক্ষম সময় উপস্থিত। শ্রীশ্রীকৃষ্ণ তাঁর ব'লে যাওয়া অনুযায়ী পুনরায় এসেছেন কিনা, এলো কোথায় কোথায় এসেছেন, কি কি রূপে এসেছেন?
আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পার্ট ২ ভিডিওতে শ্রীশ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হাতে, গোপীনি সাথে, বালগোপাল রূপে নাড়ু খেতে দেখা ও অসীম মানবতার কোমল রূপের পরিচিত দিক ছেড়ে প্রকৃত তাঁর ভয়ঙ্কর কঠিন-কঠোর আর দুর্ধর্ষ অপ্রতিরোধ্য প্রকৃতি তুলে ধরবো। জয়গুরু।

প্রবন্ধঃ লোকসভা নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজীর ধ্যান।

লোকসভা ভোট শেষ। এখন ফলাফলের অপেক্ষা। দিল্লির মসনদে কে বা কারা বসবে, কারা দেশ শাসন করবে তারই অপেক্ষা। রাত পোহালেই লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু। ১৯ এপ্রিল থেকে সাত দফায় লোকসভা ভোট শুরু হয়েছিল দেশে। শেষ হয়েছে ১লা জুন'২৪ শনিবার। গণনা এবং ফল ঘোষণা ৪ জুন। যে দল ক্ষমতায় আসবে এবং যিনি ভারতের শাসন ব্যবস্থার সর্ব্বোচ্চ সিংহাসন প্রধানমন্ত্রীর আসন অলঙ্কৃত করবেন তাঁর উপর নির্ভর করছে ভারতের ১৪০ কোটি দেশবাসীর ভবিষ্যৎ। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ভারতের সংবিধান সমস্ত ধর্মকে সমান অধিকার প্রদান করেছে, ভারতের মাটিতে সমস্ত ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালন করার অধিকার রয়েছে। দেশের শাসনব্যবস্থার পক্ষ থেকে দেশের ১৪০কোটি মানুষের ওপর ধর্ম পালন করার কোনও বাধ্যবাধকতা বা জোরজবরদস্তি নেই। পালন করা বা না-করা, মানা বা না মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর তারই ভিত্তিতে কেউ তার ধর্ম পালন করতেও পারে আবার কেউ নাই পালন করতে পারে। এ স্বাধীনতা আছে জনগণের। হয়তো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটে দেশের কোথাও কোথাও ধর্মকে কেন্দ্র ক'রে, আর তা ঘটে প্রশাসনিক দূর্বলতার কারণে। এর জন্যে দায়ী দেশের ও স্থানীয় দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক প্রতিনিধি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

যাই হ'ক, যে কারণে এই ভিডিওতে আসা তা এই ধর্ম্ম কে বিষয় ক'রেই আসা। দেশের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আসা এই ভিডিওতে।

দেশের 17 তম লোকসভার মেয়াদ 16 জুন 2024-এ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।আর, এখন দেশের 18 তম লোকসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে।

বর্তমান শাসক দল BJP নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে (NDA) ক্ষমতাচ্যুত করতে বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধভাবে তৈরি করেছিল ইন্ডিয়া জোট (INDIA Alliance)। ১৯ এপ্রিল থেকে সাত দফায় লোকসভা ভোট শুরু হয়েছে দেশে। শেষ হয়েছে ১লা জুন'২৪ শনিবার। মোট ৪৪ দিনের শেষে ৪ই জুন সকাল থেকে শুরু হবে গণনা। বেলা শেষে বোঝা যাবে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যা (১৪০ কোটি) সহ বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশে ভারতের নাগরিকরা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশ শাসনের ভার কার হাতে তুলে দিয়েছে। বোঝা যাবে ভারতের ১৪০কোটি মানুষের আগামী ভাগ্যবিধাতা কে বা কোন দল।

বর্তমান ভারতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদীজি ৩০শে মে'২৪ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যানে বসেছিলেন। প্রায় ৪৫ ঘণ্টা ধ্যান করার পর শনিবার দুপুরে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল থেকে বেরিয়ে এলেন। এই দু’দিন মৌনব্রত পালন করেছিলেন শ্রীমোদীজি। শনিবার দুপুরে ধ্যান ভাঙলেন তিনি।

জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ নাগাদ তিনি ধ্যান শুরু করেছিলেন। পরবর্তী ৪৫ ঘণ্টা তিনি ওই ধ্যান মণ্ডপমেই ছিলেন। এই ৪৫ ঘণ্টা শুধু তরল খাবার খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ডায়েটে মূলত ছিল ডাবের জল, আঙুর ফলের রস এবং জুসের মতো তরল খাবার। জানা গিয়েছে, এই ৪৫ ঘণ্টা কারও সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। অর্থাৎ পুরোটাই মৌনব্রত পালন করেছিলেন। এমনকী, ওই ধ্যানের জায়গা থেকে বাইরেও আসেননি তিনি। বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছেন ধ্যান ক'রে। শনিবার সকালে কন্যাকুমারীতে প্রধানমন্ত্রীর আরও একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদীজীর পরনে গেরুয়া ধুতি-কুর্তা। গলায় গাঢ় গেরুয়া উত্তরীয়। হাতে জপমালা নিয়ে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে পায়চারি করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভিডিয়োতে আরও দেখা গিয়েছে, সূর্যোদয়ের সময় সূর্যকে অর্ঘ্য দিচ্ছেন মোদী। কখনও তিনি বেদির সামনে বসে প্রাণায়াম করছেন। কখনও জপ করছেন। কখনও আবার হাঁটছেন মেমোরিয়াল চত্বরে। বিবেকানন্দের বিগ্রহের পায়ে ফুল সাজাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তার পর বিগ্রহের চার পাশে ঘুরে আবার বসেছেন ধ্যানে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যানে বসেছিলেন মোদী। শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলে ধ্যান। তারপরেই তিনি মন্দির থেকে ধুতি-কুর্তা পরে বেরিয়ে আসেন। গলায় সাদা-লাল উত্তরীয়। পায়ে জুতো। দুই পাশে রয়েছেন দুই রক্ষী। এর পর লঞ্চে বসে সাগর পার হয়েছেন তিনি।

খবরে প্রকাশ, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি গিয়েছিলেন কেদারনাথে। ২০১৪ সালের ভোটের পর গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের প্রতাপগড়ে।
এবারে ২০২৪ সালে কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যান মণ্ডপমে।
বিরোধীরা এই নিয়ে সরব। তাদের দাবি, এতে আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি (এমসিসি) ভঙ্গ হচ্ছে। বিজেপির সাংসদ তথা মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মোদী ভারতের সাংস্কৃতিক নীতিতে বিশ্বাসী। আর সেই সংস্কৃতি দেশের মন্দিরে প্রতিফলিত হয়।

১৩১ বছর আগে এখানেই ধ্যান করেছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ স্বামী বিবেকানন্দ। কন্যাকুমারীর সেই বিবেকানন্দ রকেই এবার ধ্যানে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। প্রায় ৪৫ ঘণ্টা সেই ঐতিহাসিক স্থানেই ধ্যান করেছেন নরেন্দ্র মোদিজী। যে জায়গাকে বিশ্ব চেনে ধ্যান মণ্ডপম নামে। বৃহস্পতিবার তিরুঅনন্তপুরমের ভগবতী আম্মান মন্দিরে পুজো সেরে ধ্যানে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির সামনে বসে ধ্যান করেছেন। তাঁর পরনে ছিল গেরুয়া বসন ও হাতে ছিল রুদ্রাক্ষের মালা। শ্রীমোদিজীর (Narendra Modi) ধ্যান নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়ে রেখেছিল বিরোধীরা। কিন্তু তাতে কোনও কাজের কাজ হয়নি।

লোকসভা ভোটের দীর্ঘ প্রচারপর্ব শেষে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে প্রধানমন্ত্রী মোদির ধ্যানে বসা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজা বসেছেন ধ্যানে’ কবিতার লাইনগুলি কটাক্ষ হ'য়ে ধেয়ে আসতে শুরু করেছিল তাঁর দিকে। ভাইরাল হয়েছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতা। এমনিতে এই কবিতা রবীন্দ্রানুরাগী, গবেষক ছাড়া আর ক'জন জানে সন্দেহ আছে। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানে বসার কারণে এই কবিতাটি ভাইরাল হ'য়ে গেল।


কবিতাটি একবার সবাই শুনে নিই।

রাজা বসেছেন ধ্যানে,
বিশজন সর্দার
চীৎকাররবে তারা
হাঁকিছে-- "খবরদার'।

সেনাপতি ডাক ছাড়ে,
মন্ত্রী সে দাড়ি নাড়ে,
যোগ দিল তার সাথে
ঢাকঢোল-বর্দার।

ধরাতল কম্পিত,
পশুপ্রাণী লম্ফিত,
রানীরা মূর্ছা যায়
আড়ালেতে পর্দার।---রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানপর্বে এই কবিতা আলোচ্য বিষয় হ'য়ে উঠেছিল। ফেসবুকে ছড়িয়েছিল আগুন। কিছু মানুষ এই কবিতা পোষ্ট ক'রে চলেছিল আর সঙ্গে হ'য়ে চলেছিল লাইক, শেয়ার আর, তার পাশাপাশি প্রতিবাদও হ'য়েছিল।
বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজীর কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ রকে বসে ধ্যানে করা নিয়ে লাগাতার কটাক্ষ করেছিলেন।
বিবেকানন্দ রকের পবিত্র স্থানে ছবি তোলা নিষিদ্ধ তথাপি সেই স্থানের ধ্যানমগ্ন মোদীজির ছবি তোলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আমার জিজ্ঞাস্য,
১) ধ্যান নিয়ে এত গাত্রদাহ কেন?
২) বিরোধীরা কি সবাই ধর্ম, ঈশ্বর বিরোধী?
৩) কম্যুনিস্ট পার্টি ধর্ম ও ঈশ্বর বিরোধী, কিন্তু বাকী সব বিরোধী দল কি ধর্ম ও ঈশ্বর বিরোধী?
৪) কম্যুনিস্ট পার্টির মেম্বার বা অনুগামী বা মতাদর্শে বিশ্বাসী সবাই কি ধর্ম ও ঈশ্বর অবিশ্বাসী?
৫) তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে এবং বাড়িতে পূজা অনুষ্ঠান করেন না?
৬) তাঁদের পরিবারের সবাই কি ধর্ম ও ঈশ্বর বিরোধী?
৭) ধ্যান কি অপবিত্র সমাজ বিধ্বংসী কোনও ক্রিয়াকলাপ?
৮) ধর্ম সংক্রান্ত কোনও কার্যকলাপ কি রাজনীতিতে ব্রাত্য?
৯) তাহ'লে ভোট পর্বে অংশগ্রহণের পূর্বে অর্থাৎ নমিনেশন ফাইলের পূর্বে কেন ধর্ম ও ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করা হয়?
১০) কেন ভোট প্রচারে ধর্মীয় রীতিনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়?
১১) ধর্ম ও ঈশ্বর যদি ব্রাত্য হয় তাহ'লে সমাজের সব ক্ষেত্রেই কেন ব্রাত্য নয়?
১২) কেন শপথ নেওয়ার সময় ঈশ্বরের নাম নিয়ে শপথ নেওয়া হয়?১৩) ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি এরকম দ্বিচারিতা নিয়ে জনগনকে বোকা বানানো আর বেইমানি আচরণ কতদিন চলবে?
১৪) ক্ষমতায় থাকলেও ধর্ম ও ঈশ্বরকে হাতিয়ার বানানো হয় আর ক্ষমতায় না থাকলেও বিরোধী হিসেবেও সেই ধর্ম ও ঈশ্বরকে হাতিয়ার বা ব্যবহার করা হয়? কেন?
১৫) যারা ধর্ম মানে না, ঈশ্বর মানে না তাদের বিরোধীতা মানা যায় যদিও তারাও সেই ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি ক্যারেক্টারের। কিন্তু যারা ধর্ম ও ঈশ্বর ব্যক্তিগত জীবনে মানেন, বাড়িতে কম-বেশী পালন করেন, ভারতের সাংস্কৃতিক নীতিতে বিশ্বাসী তাঁরা কি ক'রে ধর্ম পালন ও ঈশ্বর বিশ্বাসকে অস্বীকার করেন ও বিরোধীতা করেন?
১৬) ধর্ম-ঈশ্বর যদি এতই বিরোধীদের কাছে আপত্তির বিষয় হ'য়ে থাকে তাহ'লে শপথ গ্রহণের সময় তাঁরা ঈশ্বরের নাম নিয়ে শপথ গ্রহণ করেন কেন?
১৭) ভারতের সংবিধানে ধর্ম ও ঈশ্বর যদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ'য়ে থাকে তাহ'লে তা সমাজজীবনে প্রতিফলিত হবে না কেন?
১৮) সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র এই ভুল কথাটা সংশোধন ক'রে সম্প্রদায় নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কথাটা রাখা হবে না কেন? কেন ভুল কথা স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও ব'য়ে বেড়াতে হবে? কেন আমরা The greatest phenomenon, The greatest wonder of the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের "ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সম্প্রদায় নিরপেক্ষ রাষ্ট্র" নিয়ে বলা কথা ভেবে দেখবো না?
১৯) কেন ধর্ম রাজনীতির বাইরে থাকবে?

২০) ধর্ম, রাজনীতি আর বিজ্ঞান যে পরস্পরবিরোধী নয়, একে অপরের পরিপূরক কেন সত্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গণতান্ত্রিক দেশে তুলে ধরা হবে না?

২১) কেন ধর্মের মূল প্রকৃত অর্থকে রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাষ্ট্র গঠন, রাষ্ট্রপরিচালনার অঙ্গ করা হবে না?

২২) আর কতদিন আমরা জনগণ ভুল শিক্ষার শিকার হবো?

যাই হ'ক, কবি অতুলপ্রসাদ সেনের স্বপ্ন "ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লভে, ধর্মে মহান হবে, কর্মে মহান হবে" আজ স্বাধীনতার ৭৭বছর পরে দেখতে পাচ্ছি ধীরে ধীরে ভারত রাষ্ট্রপ্রধানের হাত ধ'রে হয়তো বা সেই স্বপ্ন পূরণ হ'তে চলেছে। প্রবাদ আছে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে অর্থাৎ সত্য কখনো গোপন থাকে না। অন্যায় ক'রে কেউ সাময়িকভাবে সত্যকে ধামা চাপা দিলেও, একটা সময় সত্য প্রকাশ পায়ই। স্বপ্ন দেখি ভারত ধর্মে ও কর্মে বিশ্বের বুকে মহান হ'য়ে উঠবে। ধর্ম ও ঈশ্বর আরাধনার প্রাচীন যে দেশ ভারত, সেই ভারতে বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক সৃষ্টিকর্তা ছয় ছয়বার নেমে এসেছে সেই দেশ কেন প্রকৃত ধর্ম ও জীবন্ত ঈশ্বর প্রাণ হ'য়ে উঠল না? কেন সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে দেশ গঠনের বাইরে রাখা হয়? কেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটার ব'লে যাওয়া কথাগুলি স্কুল কলেজে পাঠ্য হয় না? কেন ধর্মের পতাকার তলায় থাকা মানুষেরা জীবন্ত ঈশ্বরের ধর্মমত প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হ'য়ে দাঁড়ায়? কেন রাজনীতি ও ধর্মের মধ্যে ইচ্ছাকৃত বিরোধ জিইয়ে রাখা হয়? আমরা ধর্মের দেশ, জীবন্ত ঈশ্বরের লীলাভূমি ভারতের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা কেন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আশা করবো না যে তিনি সত্যকে তুলে ধরবেন? সময় লাগুক, কিন্তু প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক, এইটুকুও কি আমরা চাইতে পারি না? কিন্তু দেশ স্বাধীন হ'য়ে যাওয়ার এতগুলি বছর পরেও ধর্ম ও জীবন্ত ঈশ্বর ও তাঁদের বলে যাওয়া কথাগুলি স্বপারিপার্শ্বিক রাষ্ট্রগঠনের ক্ষেত্রে বাতিল হ'য়ে রইলো কেন?
স্বাধীনতার দিনগুলিতে----- The greatest phenomenon of the world, Wonder of all wonders in the world, the greatest wonder, The man who solves all matters and all kinds of problems, The man who is Not only fulfiller the great, who is fulfiller the best, The man who is omniscient, The man who is extraordinarily ordinary man, splendidly simple and wisely foolish SriSriThakur Anukulchandra----অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটমান বিষয়, বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, যিনি শুধু মহাপুরুষ নন, তিনি মহাপরিপূরণকারী পুরুষ, মহাপুরুষ বললে তাঁকে ছোটো করা হয়, যিনি সর্বজ্ঞ, যিনি অসাধারণভাবে সাধারণ, জাঁকজমকপূর্ণ সহজ সরল, যিনি জ্ঞানী বুদ্ধিমানের সাথে বিজ্ঞতার সাথে বোকা সেই তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র, তাঁর কোনও কথাকেই স্বাধীনতার সময় ও স্বাধীনতা পরবর্তী ৭৭বছর কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, কিন্তু আজ ৭৭ বছর পরে তো দেওয়া হ'ক। আরও সর্বনাশ হওয়ার আগে, মনুষত্বের বুনিয়াদ লুপ্ত হ'য়ে যাওয়ার আগে ভারতবর্ষের আগামী শাসকদের অন্তর্দৃষ্টি তো জাগ্রত হ'ক। যদি সেদিন স্বাধীনতার সময়ে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কথাকে গুরুত্ব দিতেন দেশনেতারা তাহ'লে আজ ভারতবর্ষ টুকরো টুকরো হ'য়ে পরস্পর শত্রুদেশে পরিণত হ'তো না, ব্রিটিশের ঘৃণ্য নীতি, ধর্মের নামে ডিভাইড এন্ড রুল নীতি সফল হ'তো না। সেদিন তিনি বারে বারে দেশনেতাদের কাছে স্বাধীনতা আন্দোলন ও দেশভাগকে রোধ করার বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং দেশভাগের ফলে ভবিষ্যত ভয়ঙ্কর পরিণতির আগাম সঙ্কেত দিয়ে বলেছিলেন দেশনেতাদের উদ্দেশ্যে, পাঠিয়েছিলেন দেশ নেতৃবৃন্দের কাছে তাঁর সাবধান বাণী " Dividing compromise is hatch of the animosity. কিন্তু ধর্মের জগতে লোক বলে তাঁকে গুরুত্ব দেননি সেদিন দেশনেতারা, যা আজ ভয়ঙ্কর সত্য হ'য়ে উঠেছে। যদি সেদিন শ্রীশ্রীঠাকুরকে গুরুত্ব দিতেন দেশনেতারা, স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথী বা পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রাহ্য করতেন তাহ'লে দেশ গড়ে উঠতো সঠিক নীতির ওপর দাঁড়িয়ে, রবীন্দ্রনাথের সেই রাজা, "আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে' এই রাজার নীতির ওপর দাঁড়িয়ে।

যাই হ'ক, প্রবাদ আছে, কোনওদিন না হওয়ার থেকে দেরীতে হওয়া ভালো।
তাই আজ ৭৮ বছর পর, ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর, যারাই শাসন করুক ভারত ধর্মপ্রাণ নেতার নেতৃত্বে দ্রষ্টাপুরুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের হাত ধ'রে ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান সব একাকার ক'রে নোতুন পথ চলা শুরু করুক আর প্রকৃতই রামরাজ্য গড়ে উঠুক ভারতে আর পথ দেখাক বিশ্বকে। শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য বিরাজ করুক সমগ্র বিশ্বে এই আমাদের একান্ত প্রার্থনা। শেষ।