Powered By Blogger

Sunday, January 12, 2020

ভারতের রাজধর্ম!!

আজ যদি সত্যি সত্যিই ভারতের রাজধর্ম পাল্টে যায় তাহ'লে এর জন্যে দায়ী কে? বর্তমান শাসক? পূর্বতন শাসক?  দেশের সমস্ত নেতৃবৃন্দ? জনগণ? নাকি ভারত ভাগের নাটের গুরুরা? কার বিরুদ্ধে দোষ বা অপরাধের তকমা সাঁটবেন? কে দোষী? কে অপরাধী? ভাগ ক'রে দেশটাকে কে বা কারা চক্রান্ত ক'রে জাহান্নামের পথে হাত ধ'রে ঠেলে দিয়েছিল? তাদের বিচার হবে না? দেশ যখন ভাগ হয় তখন কেন ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়েছিল? আর হয়েছিল হয়েছিল অদ্ভুত ভাবে কেন দেশটা ভাগ হয়েছিল? ভৌগোলিক সীমারেখা কেন দেশটাকে ত্রিভঙ্গ ক'রে দিয়েছিল? দেশে তখন পন্ডিত জ্ঞানী গুণী ব্যক্তির অভাব ছিল? কেন সবাই চুপ ছিল? কেন অদ্ভুত ভাবে কোন যুক্তিতে বাংলাকে ভাগ ক'রে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে  যুক্ত করা হয়েছিল? পূর্ব বাংলাকে অদ্ভুতভাবে ভাগ ক'রে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার পিছনে কি শুধু ধর্মের ভিত্তি ছিল? আরো বড়, অনেক বড় চক্রান্ত ছিল না? কি ছিল সেই চক্রান্ত? বাংলা আর বাঙালি ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ না হ'লে কাদের অসুবিধা হ'তো? আর কাদেরই বা সুবিধা হ'য়েছিল? কি ছিল সেই অসুবিধা? আর কিই বা ছিল সেই সুবিধা? তখনই যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হ'য়ে দু'টুকরো হ'য়েছিল তো কেন ভারত উদারতা দেখিয়েছিল? তখনই কেন হিন্দু রাষ্ট্র হ'লো না? যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান মানবতার ধর্মের ধার না ধারে তাহ'লে কেন ভারত একা মানবতার ধ্বজা তুলে ধরার ন্যাকামো ক'রেছিল বা এখনো ক'রে চলেছে? যদি সত্যি সত্যিই মানবতা রাজধর্ম হ'য়ে থাকে ভারতের তাহ'লে মানবতার স্বার্থে, মানবতাকে রক্ষা করতে কেন ৭০বছর বলিষ্ঠ কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি? কার বা কাদের স্বার্থে নেয়নি? কাকে খুশী করার জন্য তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রক্ষা ক'রে চলেছিল ভারত? ধর্ম নিরপেক্ষতার আড়ালে কাদের খুশী ক'রে চলছিল ভারত সরকার এতদিন? কার বা কাদের অঙ্গুলি হেলনে ভারত ৭০ বছর তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজা উড়িয়ে সব ধর্মের সাধারণ আম মূর্খ জনতাকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতার শিখরে বসেছিল? পাকিস্তানের রাজধর্ম যদি ইসলাম হ'য়ে থাকে, বাংলাদেশের রাজধর্ম ইসলাম হ'য়ে থাকে, আফগানিস্তানের রাজধর্ম ইসলাম হ'য়ে থাকে তাহ'লে ভারতের রাজধর্ম কি হওয়া উচিত ছিল? কেন ভারত একা মহান সাজবে? মহানতার দোহাই দিয়ে, সুযোগ নিয়ে আর কতদিন ভারতকে আঙ্গুল তুলে মিথ্যের বেসাতি ক'রে বলা হবে, ভারত তুমি অপরাধী? পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে ইসলামিক দেশ হ'তে পারে তাহ'লে ভারত কেন সংখ্যাগরিষ্ঠের জোরে হিন্দু রাষ্ট্র হ'তে পারবে না? এই সেদিন বাংলাদেশ ভারতের সাহায্যে স্বাধীন হ'লো আর স্বাধীন হ'য়েই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পদাঙ্ক অনুসরণ না ক'রে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মত তাদের পথ অনুসরণ ক'রে ইসলামিক রাজধর্মকে গ্রহণ করলো? কেন? কেন বাংলাদেশ ভারতের মত মহান মানবতা প্রেমী হ'লো না? কেন ভারতের মত বাংলাদেশের রাজধর্ম মানবতা হ'লো না? কেন বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষিত হ'লো না? কেন বাংলাদেশের ঘোষিত ধর্ম ইসলাম হ'লো? কেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হওয়ার পর বাংলাদেশে হিন্দু বাঙালি-মুসলিম বাঙালি এক হ'য়ে মিলেমিশে থাকতে পারলো না? তাহ'লে বাংলাদেশ বাঙালিদের দেশ নয়? বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ? বাঙালির কাছে বাঙালির থেকে বড় তাহলে মুসলমান বাঙালি,  হিন্দু বাঙালি? তাহ'লে এত বাঙালি বাঙালি ব'লে নাটকীয়তা কেন? বাঙালির আন্তর্জাতিক পরিচয় কি? সে প্রথমে বাঙালি নাকি প্রথমে হিন্দু-মুসলমান? এসবের পিছনে কে বা কারা লুকিয়ে আছে? কে বা কারা ভারতবর্ষ দেশটাকে টুকরো ক'রে দিয়ে গিয়েছিল কিন্তু একটা সুতো দেশের পিছনে বেঁধে দিয়ে সুতোটা নিয়ে চলে গিয়েছিল ভয়ে দেশ ছেড়ে? কারা বছরের পর বছর সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে চলেছে? মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ কেন সব ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ক'রে বছরের পর বছর কায়েমী স্বার্থকে বজায় রেখে আখের গুছিয়ে চলেছে? কেন সব ধর্মের বুদ্ধিজীবীরা হয় চুপ ক'রে থাকে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায় নতুবা বিকিয়ে দেয় কারও না কারও কাছে অর্থ-মান-যশের লোভে? কেন তারা অন্যায়কে অন্যায় জেনেও মদদ দিয়ে চলে বছরের পর বছর? আর তার খেসারত দিতে হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মকে, বছরের পর বছর আপনাকে-আমাকে!

কেন দেশটা ভাগ হ'লো দাদা? কেন সেদিন দেশপ্রেমিকরা চুপ ক'রে ছিলেন? কেন সেদিন মহাত্মারা কোনও মন্তব্য করেননি? কেন সেদিন নেতাজীকে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি? কেন সেদিন হঠাৎ করেই জিগির উঠেছিল হিন্দু-মুসলমানের ভাগ-বাটোয়ারার? সেদিন যদি পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যায়ভাবে অনৈতিক পদ্ধতিতে জোর ক'রে কিম্ভুতকিমাকার ভৌগোলিক সীমারেখা তৈরি ক'রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুক্ত ক'রে দেওয়া না হ'তো, যদি ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবাংলার সাথে যুক্ত থাকতো তাহ'লে কি আজ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হ'তো? এই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মগজ কার ছিল দাদা? কেন সেদিন বাংলাকে ভাগ করা হয়েছিল? কি উদ্দেশ্য ছিল এর পিছনে? ধর্মকে সামনে রেখে বাংলা ভাগের পিছনে যে গোপন এজেন্ডা ছিল রাজনৈতিক নেতাদের সেই গোপন এজেন্ডার শিকার কি সার্বিক ভাবে বাঙালি হয়নি? বাঙালির মধ্যেও কি বিশেষতঃ হিন্দু বাঙালি, মুসলিম বাঙালি নিয়ে সংকীর্ণ মনোভাব ছিল না? যার সুযোগ নিয়েছিল অন্য রাজ্যের লোকেরা ও বিশেষ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী দেশ? কেউ কি আজ পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছে, যে দেশকে ব্রিটিশ দু'শো বছর ধ'রে ভোগ করেছে সেই দেশের মানুষের সঙ্গে যাওয়ার আগে বিশেষ ক'রে বাঙালির সঙ্গে কেন এমন বিমাতৃসুলভ আচরণ করলো? কেন ভারতের খেয়ে ভারতের সঙ্গে, ভারতবাসীর সঙ্গে বেইমানি করলো? কেন অকৃতজ্ঞ আচরণ করলো পৃথিবীর সভ্য জাত ব্রিটিশ ভারতবাসীর সঙ্গে? কেন দেশটাকে ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে এমন নির্মমভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো ক'রে দিয়ে গেল? যার ফল ভোগ করছে তিন দেশের সাধারণ মানুষ!!!! ভোগ করছে আজ ৭০বছর ধ'রে! এই জঘন্য অপরাধের কোনও ক্ষমা আছে? বিশ্বের সভ্যজাত ব'লে পরিচিত ব্রিটিশ কি আজ ৭০ বছর ধ'রে ভারত-পাকিস্তানের বর্তমানে বাংলাদেশ এই তিন দেশের মধ্যে নারকীয় রক্তক্ষয়ী অস্থিরতার যে ফল্গুধারা ব'য়ে চলেছে তার জন্য বিন্দুমাত্র লজ্জিত বা দুঃখিত?

এর উত্তর কি?
হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইত্যাদি পড়শী দেশের মত ভারত ধর্ম ভিত্তিক দেশ হ'ক। ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হ'ক। নতুবা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশও ভারতের পদাঙ্ক অনুসরণ ক'রে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হ'ক। আর নয়তো ব্রিটিশের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে আবার পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মত অখন্ড ভারতবর্ষ হ'ক। আর যদি সেদিন কখনো আসে এবার যেন আর 'ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র' হিসাবে অখন্ড ভারতবর্ষ গড়ে না ওঠে। সেদিন যেন অখন্ড ভারতবর্ষ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সম্পর্কে বলা কথা অনুসরণ করে। দীর্ঘ ৭০বছর একটা ভুলের উপর দাঁড়িয়ে ভারত নামক দেশটা চলেছে! এত পন্ডিত, এত মহাত্মায় ভরা দেশ এই ভুল ধরতে পারেনি! আর বললেও ভুলকে ভুল ব'লে স্বীকার করেনি! তার ফল তো দেশবাসীকেই ভুগতে হবে। যেমন দেশভাগের সময় শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা কথাকে পাত্তাই দেয়নি সেই সময়ের বোদ্ধা দেশনেতারা। যেমন দেয়নি শ্রীশ্রীঠাকুরের হিন্দু-মুসলমানের স্থান ভিত্তিক শক্তিকে সাম্যতায় আনার পরিকল্পনা। ঠাকুর দেশভাগ সম্পর্কে বলেছিলেন, "Divining compromise is the hatch of animosity".  যা আজ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ও পাচ্ছে ৭০বছর ধ'রে দেশবাসী। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আরো বললেন, "ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা আমার মতে ভুল। ধর্ম কখনও নিরপেক্ষ হ'তে পারে না। বরং সম্প্রদায় নিরপেক্ষ দেশ কথাটা হ'তে পারে।"

তাই অখন্ড ভারতবর্ষ যতদিন না হচ্ছে ততদিন ভারত সরকারের কাছে আবেদন আসুন শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা 'সম্প্রদায় নিরপেক্ষ দেশ' এই বিষয়টিকে ভেবে দেখুন, আলোচনা করুন, ভুল ব্যাখ্যা থেকে দেশকে, দেশের মানুষকে বাঁচান, পথ দেখান দেশকে, বিশ্বকে, বিশ্ববাসীকে। দেশ সোজা পথে হাঁটা শিখুক। ধর্ম নিরপেক্ষ কথাটা ভুল তা দেশের মানুষ, বিশ্বের মানুষ জানুক। মূলে হাত দিন। সাংবিধানিক গলদ দূর করুন। ঘোষণা হ'ক 'ভারত সম্প্রদায় নিরপেক্ষ রাষ্ট্র'। অনেক নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের মত শব্দের রুটে গিয়ে রুট মিনিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক ভারত সরকার।

আর সবচেয়ে জরুরী যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা হ'লো আম দেশবাসীকে বিশেষ ক'রে দেশের মায়েদের অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার নরক কুন্ড থেকে মুক্তির উপায় বের করা! যাতে ধর্মের নামে, জাতপাতের নামে বা অন্য যে কোনও বিষয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে না পারে আর কেউ, কোনও নেতানেত্রী, কোনও অন্যায় -অশুভ শক্তি, কোনও দেশ। মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষের অজ্ঞানতা, বিশৃঙ্খল-উচ্শৃঙ্খল জীবনযাপন অন্যায়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক!!!!!!!!!!!

No comments:

Post a Comment