হিন্দমোটরের বেঁচে ওঠার
স্বপ্নে বিভোর শ্রমিকের যন্ত্রণা আজ রাজপথের ধুলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই মিথ্যা স্বপ্ন দেখা
শুরু হয়েছিল ২০০০
সালের শুরুতেই মালিক
ও মালিকের নবনিযুক্ত ম্যানেজমেন্টের প্রতিনিধি এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের হাত ধরে। সেই Tradition সমানে চলেছে।
২৪শে মে শনিবার সকালে হিন্দমোটর কারখানার গেটে
সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দেখতে পান শ্রমিকরা। সেই থেকে
শ্রমিকদের বকেয়া ছয় মাসের বেতন সহ কারখানা আজও বন্ধ
হয়ে আছে। ১২ই জুন বৃহস্পতিবার শ্রম দপ্তরে হিন্দমোটরের উৎপাদন ও শ্রমিকদের বকেয়া নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ছিল। হিন্দমোটর কারখানার এইচ আর ম্যানেজার অসীম বসুর অনুপস্হিতির কারণে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে গেল। তিনি না আসায় ৬টি ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ হন৷
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু কারখানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষোভ
প্রকাশ করেছেন৷ তিনি
বলেন, আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মধ্যে
দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে৷ কারখানা খুলুক, উৎপাদন হোক,
শ্রমিকদের বকেয়া বেতন
মিটিয়ে দেওয়া হোক৷
ইতিমধ্যে দু’দুবার
বৈঠক করেছি৷ কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি৷ তাহলে আইনের
পথেই যেতে হবে৷
২০০২ সালে কারখানায় ইউনিয়নের নির্বাচনের পর ম্যানেজমেন্ট অন্য রাজ্যে বিভিন্ন ডিলার পয়েন্টে শ্রমিকদের অন্যায় ট্রান্সফার করার অর্ডার ধরিয়ে
দিয়ে ভিআরএস-এর জন্য চাপ দেওয়া
শুরু করে। তারপর থেকে ২০০৭ পর্যন্ত অপ্রতিহতগতিতে চলতে থাকে
কারখানার ভিতরে বাইরে
একদিকে শ্রমিক-কর্মচারীকে বোকা বানানোর শ্রমিক আন্দোলনের চূড়ান্ত নতুন
নতুন নাটকের পাণ্ডুলিপি রচনা ও তার রুপায়নের মহড়া পাশাপাশি সমস্ত ইউনিয়নের উপস্থিতিতেই, ইউনিয়নের তাবড় তাবড় নেতা,
নতুন নতুন নকশালী নেতাদের এমনকি সি পি আই নেতা
গুরুদাস দাশগুপ্তর উপস্থিতিতেই খোলাখুলি আবার VRS-এর নামে নির্ম্মম শ্রমিক ছাঁটাই আর VRS না নিলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অন্যায় ট্রান্সফার।
তাই প্রশ্ন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলছেন
বৈঠক না হ’লে বাধ্য হ’য়ে আইনের পথে যেতে হবে। কি হবে আইনের পথে?
কারখানা খুলবে? কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে?
শ্রমিকদের বকেয়া বেতন
সব মিটিয়ে দেওয়া
হবে? মালিক যদি মনে করে আমি ব্যবসা করব না তো সরকার কি করতে পারে আর আইনই বা কি করবে? মালিক সি কে বিড়লা যেদিন
থেকে কোম্পানীর দায়িত্ব নিয়েছিল সেদিন থেকে যদি ব্যবসা করতে আগ্রহীই থাকতো তাহ’লে হিন্দমোটর থেকে শুরু
ক’রে কোন্নগর পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল
স্বয়ং সম্পুর্ণ অটোমোবাইল কারখানা এইভাবে সবার চোখের
সামনে ধীরে ধীরে
ডুবে যেত? যদি সেই সময়ের জ্যোতি বসু ও পরবর্তীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বামফ্রন্ট সরকার,
সমস্ত রাজনৈতিক দল, কারখানার সমস্ত ট্রেড
ইউনিয়ন সত্যিকারের আন্তরিক হ’ত, বিবেকের ডাকে
সাড়া দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীর ভবিষ্যত, রাজ্যের শিল্পের ভবিষ্যত, প্রজন্মের ভবিষ্যত বাঁচাবার জন্য তৎপর হ’ত তাহ’লে কি আজকের এই চরম সর্ব্বনাশের দিন, দুঃখের দিন বাংলার বুকে
দেখতে হ’ত? রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সরকার,
হিন্দমোটর কারখানার অন্তর্গত উত্তরপাড়া বিধানসভার এম এল এ অনুপ ঘোষাল,
শ্রীরামপুর লোকসভার এম পি কল্যান বন্দোপাধ্যায়, উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শ্রমমন্ত্রী পুর্নেন্দু বসু,
কারখানার বর্তমান ক্ষমতাসীন তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের সর্ব্বভারতীয় সভাপতি দোলা
সেনদের সম্মিলিত সময়োচিত উদ্যোগ ও সদর্থক পদক্ষেপ তিনবছর আগেই কোম্পানীকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে
পারতো। তাই মৃতপ্রায় কারখানাকে বাঁচাবার জন্য আজ আর শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর কোনও
আইন, আই এন টি টি ইউ সি-র সভানেত্রী দোলা সেনের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা কোনও
কাজে আসবে না। একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সরাসরি এগিয়ে
এসে কোম্পানীর মালিক সি কে বিড়লার সঙ্গে আলোচনায় বসতে
হবে প্রকৃতই মালিক
কি চান, কি তাঁর ইচ্ছা, কি তাঁর পরিকল্পনা, কি তাঁর মানসিকতা ইত্যাদি জানতে। আজ আর স্বর্ণকারের ঠুকঠাকের দিন নেই,
কামারের এক ঘা’ই আজ সবচেয়ে দ্রুত প্রয়োজন!!!!
Written on 16th June.
No comments:
Post a Comment