২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের পরেই একসময়ের এশিয়ার বৃহৎ অটোমোবাইল শিল্পের মৃত্যু হ'ল! মৃত্যু হ'ল একসময়ের প্রায় ২০হাজার শ্রমিকের বেঁচে থাকার আধার
এক ও অদ্বিতীয় স্বয়ং সম্পুর্ণ মোটর শিল্প হিন্দুস্তান মোটরের। মৃত্যু হ'ল শ্রমিক ও শিল্পের ভবিষ্যত। ১৯৪৭
সালে স্বাধীনতা। ১৯৪৮ সালে
বি.এম.বিড়লার স্বপ্নের শিল্প হিন্দুস্তান মোটরস্ লিমিটেডের পথ চলা শুরু। বিধান রায়ের সহযোগিতায় উত্তরপাড়া ও কোন্নগরের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনের পশ্চিমদিকে ৭৪২ একর অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় সাড়ে
চারশো একর জমির
ওপর গড়ে ওঠে বিশাল ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট সহ গাড়ীর
কারখানা ও কারখানা সংলগ্ন প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্টিন, স্কুল, কোয়ার্টার, বাংলো, খেলার মাঠ ইত্যাদি। ১৯৫২ সালে
ইংলন্ডের মরিস মোটর
কোম্পানির সহযোগিতায় হিন্দমোটর নিজস্ব গাড়ি উৎপাদন শুরু
করে। হিন্দুস্তান মোটরের আজকের এই মৃত্যুর পিছনে যে ক্ষয়রোগ বাসা বেঁধেছিল হিন্দমোটরের শরীরে
তার সময়কাল ৯০এর
দশক। মালিকের কারখানা পরিচালনায় অনভিজ্ঞতা, মোটর শিল্পে অজ্ঞতা, উদাসীনতা, অপ্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ, অতিমাত্রায় ট্রেড
ইউনিয়ন নির্ভরতা, প্রেসিডেন্ট এস এল ভাট্টার অপসারণ ও তদ পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্ণধার শঙ্কর
নারায়ণন ও শান্তানাম-এর রক্ত জল করা মালির সাজানো বাগানে ফুল তোলার
মানসিকতা, অদক্ষ ও অযোগ্য, মোটর শিল্পে অনভিজ্ঞ অতি উচ্চ
বেতনে অফিসিয়ালস নিয়োগ এবং কারখানার দক্ষ ও যোগ্য, বহুদিনের এই মোটর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ অফিসিয়ালদের ঢালাও Release letter অনুমোদন, ম্যানেজমেন্টের গৃহীত
শিল্প ও শ্রমিক বিরোধী প্রতিটি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ট্রেড ইউনিয়নের শিল্প ও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার্থে অতি সক্রিয়তার ছদ্মবেশে নিষ্ক্রিয়তা, ট্রেড
ইউনিয়ন আন্দোলনের উচ্চমার্গের নাটকের আড়ালে ম্যানেজমেন্টের ইচ্ছাপূরণ, ইউনিয়নের গোষ্ঠীদ্বন্ধের ভয়াবহতা, রাজ্য সরকারের অদ্ভুত রহস্যজনক নীরবতা, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-এর দশ-বারো হাজার শ্রমিক নিয়ে কারখানা চালানোর বিরুদ্ধে মন্তব্য এবং সিআইটিইউর সর্বভারতীয় সভাপতি চিত্তব্রত মজুমদারের উদারনীতির সপক্ষে হিন্দমোটরের মতো কারখানাগুলির দিন শেষ হয়ে গেছে
মন্তব্য এবং নোতুন
বোতলে পুরোন মদের
মতন দলীয় ইউনিয়নের পরিবর্তে দলমত নির্বিশেষে (সিপিএম, সিপিআই,কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং নকশাল) একটি নোতুন
ধরনের ইউনিয়ন গঠন ও পরবর্তী চিত্তাকর্ষক অত্যন্ত উন্নত মানের
আন্দোলনের নাটকের পাণ্ডুলিপি হিন্দমোটরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢূকিয়ে দিয়েছিল ধীরে
ধীরে ক্ষয়রোগের তীব্র বিষ। যে বিষের
Antivenom থাকা সত্ত্বেও কোম্পানীকে বাঁচাবার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি
কোন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। আর কোম্পানীর মালিকের সীমাহীন উদাসীনতা, কোম্পানীতে বছরের পর বছর না আসা, দীর্ঘদিনের বাগান তৈরীর মালীকে উচ্ছেদ ক'রে সাজানো বাগানে ফুল তুলতে
আসা পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্ণধারদের প্রতি সম্পুর্ণ আত্মসমর্পণ, ভোগবিলাসিতায় ডুবে
থাকা ইত্যাদি পাপ কোম্পানীকে ধীরে ধীরে
মৃত্যুর দিকে ঠেলে
দিয়েছিল সকলের অগোচরে। হায় শিল্প! হায় ট্রেড
ইউনিয়ন! হায় আন্দোলন! হায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ! হায় রাজ্য সরকার!
প্রশ্ন এই মৃত্যু ঘন্টা যদি নির্বাচনের ক'দিন পরে না বেজে ক'দিন আগেই বাজত?????????????????
Written on 3rd June.
No comments:
Post a Comment