কথায় আছে, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। রাবণ সীতাকে হরণ করেছিল তাই হয়েছিল লঙ্কাকান্ড। আর, দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণে হয়েছিল মহাভারত। রাবণ সীতাকে হরণ করেছিল একথা ঠিক কিন্তু তার সতীত্ব হরণ তো দূরের কথা তার গায়ে হাত দেয়নি, আর তা'তেই হয়েছিল লঙ্কাকান্ড। আর, দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্র স্পর্শ করেছিল তা'তেই হয়েছিল মহাভারত। মাত্র ১০ দিনে শেষ হয়েছিল লঙ্কার যুদ্ধ, পতন হয়েছিল লঙ্কার। আর, মাত্র ১৮দিনে ধ্বংস হ'য়ে গিয়েছিল গোটা ভারত।
কিন্তু বর্তমান সীতা, দ্রৌপদীদের শুধু হরণ আর বস্ত্রহরণ হয়না তাদের উপর বারংবার বলাৎকার ক'রে ক'রে নৃশংভাবে হত্যা করলেও পেরিয়ে যায় বছরের পর বছর আইনি কথার কূটকচালিতে, ঘুম ভাঙে না গা স'য়ে যাওয়া নেশায় আক্রান্ত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সমাজের।
আর, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কথামতো তখন রাবণ একটা ছিল। একটা ছিল দুঃশাসন। বর্তমানে ঘরে ঘরে রাবণ আর দুঃশাসন! যদিও ত্রেতা যুগের রাবণ আর দ্বাপর যুগের দুঃশাসনদের সঙ্গে কলি যুগের রাবণ আর দুঃশাসনদের তুলনা করলে ত্রেতা যুগের রাবণ আর দ্বাপর যুগের দুঃশাসনরাও লজ্জা পেয়ে যাবে, যে লজ্জা তখন সীতা হরণ আর দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের জন্য তারা পায়নি। বর্তমানের সীতা আর দ্রৌপদীদের ওপর অত্যাচারীদের জীবন নামক সংবিধানে লজ্জা শব্দটাই নেই, নেই অনুতাপ ও অপরাধবোধ শব্দটা। এই লজ্জা, অনুতাপ, অপরাধবোধ এইগুলি বায়োলজিক্যালি ভাবেই নেই। বর্তমান সীতা, দ্রৌপদীদের মর্ম্মন্তুদ আর্তনাদ কারও কানে যায় না। কুম্ভকর্ণের মত গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন আজ সততা, মানবতা। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা, এই মাওনসিকতা সময়ের প্রতিফলন। আগামী ঘোর কলি যুগের অশনি সঙ্কেত। এই সঙ্কেত সত্ত্বেও তবুও টনক নড়ছে না তিননম্বর ছাগল ছানাদের।
আর, মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জেলকে ভালোবেসে ডেকে টেবিল চেয়ারে বসিয়ে দু'মুঠো পেট ভরে খেতে দিয়ে পরে যে এমনতর ভয়ংকর মহার্ঘ উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা ছাত্রদের মনের কোণে সযত্নে লালন পালন হ'য়ে চলেছে তা' কি অসহায় বোকা সহজ সরল বেকুব তোফাজ্জেল বুঝতে পেরেছিল? এইরকম বাকশক্তি হারানো অবাক করে দেওয়া মর্মান্তিক ভয়ংকর বীভৎস ঘটনা দেখলে কবি সুকান্ত তার 'অবাক পৃথিবী! অবাক!' কবিতা কি লিখতো? কি দেখে অবাক হয়ে তিনি তাঁর ১২ লাইনের কবিতায় ৯ বার অবাক শব্দ লিখেছিলেন? তিনি তাঁর কবিতায় কোন পরাধীনতার কথা লিখেছিলেন? তার দেখা বারবার মৃত্যুরই কারবারে অভয়া, তোফাজ্জেলের অবাক করা গা শিউড়ে ওঠা মৃত্যু আছে? সুকান্ত দেখেছেন এমন খাবারের লোভ দেখিয়ে ডেকে এনে পেট ভরে খাইয়ে তারপর নৃশংস মৃত্যু দৃশ্য? তার হিসেবের খাতাতে অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত অভয়া, তোফাজ্জেলের মত এমন রক্ত খরচের কথা লেখা আছে? লেখা আছে কবির খাতাতে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের মদতে নাইট ডিউটিরত ডাক্তার ছাত্রীকে সম্মিলিত দানবীয় ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হাতে কপটতার আশ্রয় নিয়ে খাবার খাওয়াবার লোভ দেখিয়ে অসহায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছাত্রকে নৃশংস হত্যা, এমন কোনও অবাক করা মৃত্যু?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কপটতার আশ্রয় নিয়ে তোফাজ্জেলকে হত্যা কি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশে কপট ছাত্র আন্দোলনের টাটকা চরম কপটতার প্রতিফলন?
পৃথিবী জুড়ে কত লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে প্রতিদিন প্রতিমুহুর্তে তার কতটুকু আমরা জানতে পারি? কখনো সখনো একটা দুটো ঘটনা সামনে ভেসে আসে সময়ের দাবীতে। মাঝে মাঝে অদ্ভুতভাবে সোনার কাঠির ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে থাকা রাজকন্যার হঠাৎ জেগে ওঠার মত জেগে ওঠে তিন নম্বর ছাগলছানারা। কিছুদিন মায়ের বাঁটের দু'পাশে দুধ খাওয়ার আশায় লাফালাফি করে; পরে আবার হঠাৎ কোন অদৃশ্য হাতের রুপোর কাঠির ছোঁয়ায় রাজকন্যার মত গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে তিন নম্বর ছাগলছানারা। তিন নম্বর ছানারা শুধু মা ছাগলের দুই পাশে লাফিয়েই যায়, আর, মায়ের দুই বাঁটে মুখ দিয়ে শুষে খায় মায়ের দুধ অন্য দুই সন্তান বাটপার। যখন দুধ শেষ হ'য়ে যায় তখনও টেনে চলে অভ্যাসবশত, শেষে দুধ না পেলে রক্ত শুষে খায়। আর, তিন নম্বর ছাগলছানা এদিক ওদিক লাফাতে লাফাতে অবশেষে ক্লান্ত হ'য়ে অভয়া, তোফাজ্জেল হ'য়ে চিরদিনের জন্য মুক্তি পেয়ে যায়।
হে দয়াল! হে প্রভু! তুমি আট আটবার এসেছিলে ত্রেতা যুগে, দ্বাপর যুগে ও শেষ কলি যুগে রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ আর সর্ব্বশেষ অনুকূল হ'য়ে। কিন্তু তুমি কেন এসেছিলে, কাদের জন্য এসেছিলে, কি বলে গেছিলে প্রতিবার যুগে যুগে এসে একথা যদি পৃথিবী জুড়ে তিন নম্বর ছাগলছানার মত অভয়া আর তোফাজ্জেলরা বুঝতো, যদি তোমাদের চলনাশ্রিত হয়ে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতো তাহ'লে এই ঘোর কলিযুগে মরীচিকার মত মায়ের বাঁটের দুধ খাওয়ার মিথ্যে আশা ছেড়ে দিয়ে তারা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠে দাঁড়াত, নিজেকে নিজের দুই হাত দিয়ে রক্ষা করতে পারতো নিজের দুই পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আর বর্তমান মূর্তিমান শয়তান রাবণ, দুঃশাসনদের হাত থেকে তারা বেঁচে যেত, নিশ্চিত বেঁচে যেত।
কিন্তু আপশোস অভয়া, তোফাজ্জেলরা বুঝলো না তা, বুঝতে চাইলো না, তাদের বুঝতে দিলো না ধর্ম ও ঈশ্বর অবিশ্বাসী বিরুদ্ধবাদীরা, বুঝতে দিলো না ধর্ম জগতের মূর্তি পূজা, আকাশের ভগবানের পূজা, বোবা ভগবানের পূজারীরা, বুঝতে দিলো না ধর্ম জগতের ঈশ্বর বিশ্বাসী যোগী, ধ্যানী, গোঁসাই, গোবিন্দ, সাধক গুরুরা, বুঝতে দিলো না বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক স্বয়ং রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ রূপে বারবার নেমে আসা জীবন্ত ঈশ্বরের অনুগামী শিষ্যেরা। প্রতিটি প্রফেটের শিষ্যেরা যার যার নিজ নিজ সম্প্রদায়ের, নিজ নিজ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ক'রে চারপাশে গন্ডী কেটে রেখে দিল বারবার নেমে আসা তাদের জীবন্ত ঈশ্বর পরমপিতা, পুরুষোত্তম প্রফেটকে নিজস্ব সম্পদ করে। আর, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সমগ্র সৃষ্টির পরম উৎস, পরম কারণ, পরমপিতা, পরমপুরুষের বর্তমান শেষ রূপ পুরুষোত্তম The greatest phenomenon of the world, grestest wonder in the world SriSriThakur Anukulchandra-এর অনুগামী কোটি কোটি শিষ্য সৎসঙ্গীরা কি করছে? সেই একই ট্রাডিশান ব'য়ে চলেছে? কে কতবড় সৎসঙ্গী, কে কতবড় স্বস্ত্যয়নী ব্রতধারী, কে কতবড় বক্তা, কে কতবড় গায়ক, কে কতবড় ঠাকুর বোদ্ধা, কে কতবড় জ্ঞানী, কে কতবড় ভক্ত, কে কতবড় প্রেমী, কে কতবড় মহান, কে কতবড় ইষ্টপ্রাণ, কে কতবড় ঋত্বিক, কে কতবড় সমালোচক ইত্যাদি ইত্যাদি এই নিয়ে চলছে পরস্পরের মধ্যে ফেসবুকে, ইউটিউবে প্রতিযোগীতা, তর্কবিতর্কের ঝড়। চলছে ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে মোচ্ছব। ফেসবুক, ইউটিউবে শ্রীশ্রীঠাকুর এখন একশ্রেণীর সৎসঙ্গী নামধারী দাদা ও মায়েদের ও শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট এক ও একমাত্র মূল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' বিরোধী সৎসঙ্গী নামধারীদের এবং একশ্রেণীর কট্টর শ্রীশ্রীঠাকুর বিরোধী সনাতনী ধর্ম প্রবক্তাদের আয়ের মোক্ষম উপকরণ। সৎসঙ্গ জগতে যে কোনও নোতুন বিষয়কে কেন্দ্র ক'রে বাদবিতন্ডার মজবুত প্ল্যাটফর্ম এখন ফেসবুক আর ইউ টিউব। ফলে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের পর প্রজন্ম অভয়া আর তোফাজ্জেলদের বাঁচাবে কে?
তাই, অভয়া, তোফাজ্জেলদের মত তিননম্বর ছাগলছানাদের আজ সব দিক থেকে বাঁচা ও বেড়ে ওঠা ভয়ংকর কঠিন, কঠিন, কঠিন। শ্রীশ্রীঠাকুত্রের সোনার সৎসঙ্গীরা আমার গুরুভাইবোনেরা সিরিয়াসলি একটু ভেবে দেখবে কি? আসুন আমরা সৎসঙ্গীরা সবাই মিলেমিশে ঝগড়াঝাঁটি ভুলে, তর্কবিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সন্নিধানে একটু ভেবে দেখি।
( লেখা ২২শে সেপ্টেম্বর'২০২৪)
No comments:
Post a Comment