Powered By Blogger

Monday, September 22, 2025

বিষয় যখনঃ বিশেষ সৎসঙ্গ।

'বিশেষ সৎসঙ্গ'

এই ছবিটা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত শ্রীশ্রীঠাকুরের ১৩৮তম আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর ছবি। এরকম বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের 'বিশেষ সৎসঙ্গ' ব্যানারের ছবি দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। উদাহরণ হিসেবে আলোচনার জন্য একটি ছবিই যথেষ্ট।
এখন সব জায়গায় বাংলা, ইংরেজি ও ভারতের অন্যান্য ভাষায় 'বিশেষ সৎসঙ্গ' ব্যানার টাঙ্গিয়ে সৎসঙ্গের আয়োজন দেখা যায়। আলোচনা পত্রিকায়ও এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর ঘোষণা দেখা যায়।
এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ' লেখা ব্যানার দেখলে একটা বিশেষ ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়। স্মৃতি সতত দুঃখের ও সুখের। এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ' আয়োজনের একটা ইতিহাস আছে। আমি সেটা আমার পাঠকদের কাছে তুলে ধরবো এখানে।

সময়টা ছিল ২০১২ সালের অক্টোবর মাস। প্রতিবারের মত সেবারও দেওঘর গেছিলাম। সেবারে গেছিলাম মেয়ের কর্মস্থলের এক সমস্যা নিয়ে। আমি শ্রীশ্রীআচার্যদেব দাদার সামনে বসেছিলাম। শ্রীশ্রীদাদার কাছে আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে সমস্যা নিবেদন করার সময় শ্রীশ্রীদাদার সামনে উপবিষ্ট সঞ্জীব মন্ডলদা বললেন এখন যা কিছু নিবেদন বাবাইদাদার কাছে করা হয়। আপনারা কাল সকালবেলা প্রার্থনার পর চলে যাবেন সেখানে, বাবাইদাদার কাছে নিবেদন করবেন।

সেইমত পরদিন সকালবেলা প্রার্থনার পর গিয়েছিলাম শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদার কাছে সমস্যা নিবেদনের জন্য সেইস্থানে যেখানে বর্তমানে শ্রীশ্রীঅবিনদাদা দর্শন দেওয়ার জন্য বসেন। সেইসময় প্রথম প্রথম এত ভিড় হ'তো না, হালকা পরিবেশে দীর্ঘ সময় পাওয়া যেত ধীরেসুস্থে মন খুলে কথা বলার, গল্প করার। গল্প শেষে মনে হ'তো বিরাট একটা পাথর মাথা থেকে কে যেন নামিয়ে নিয়েছে। একটা হালকা ফুরফুরে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে যখন সেই স্থান পার হ'য়ে গেটের বাইরে বেড়িয়ে এসে শ্রীশ্রীবড়দা বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তায় এসে উঠতাম, তারপর গরম চায়ের ভাড়ে চুমুক দিতাম তখন মনে হ'তো আমি যেন ঘোরের মধ্যে আছি আর আমার শরীরের ওপর যেন মাথার জায়গায় সত্যি সত্যিই মাথাটা নেই, এত হালকা অনুভব হচ্ছিল নিজেকে!!!!!!
যাই হ'ক, সেখানে গিয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদাকে আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে তার সমস্যা নিবেদন করার পর সমস্যা সমাধানে কি করণীয় তা' তিনি মেয়েকে বুঝিয়ে দিলেন সুন্দর সহজ ভাবে। সেইসময় আমি পাশে ছিলাম। তারপর আমার সঙ্গে দীর্ঘ কথা হয়। সেই থেকে সরাসরি আচার্যদেবের সান্নিধ্য লাভ করি। সেদিন 'কি করি, কোথায় থাকি, কবে দীক্ষা নিয়েছি ইত্যাদি বহু বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা হয়। তারপর থেকে আজ অবধি তাঁর সান্নিধ্যে লাভে মাঝে মাঝেই সময় পেলে ছুটে যাই।

শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছেল তখন নানা কথার মাঝে তাঁকে এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ' সম্পর্কিত বিষয়ে জানাই। ২০০০ সাল থেকে আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রকাশ্যে পার্কে, বিভিন্ন নাট মন্দিরে, ক্লাব, লাইব্রেরী, কলেজ ইত্যাদির হলঘরে বড় ক'রে 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন করতাম। সেইসময় উৎসব ব্যতীত ঘরে ঘরে সৎসঙ্গ আয়োজনের চল ছিল। কিন্তু প্রকাশ্যে উৎসবের আয়োজন থাকলেও এই ধরণের 'বিশেষ সৎসঙ্গ' অনুষ্ঠানের আয়োজন হ'তো' না। বিষয়টা ছিল স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটা। 'বিশেষ সৎসঙ্গ' লিখে ব্যানার টাঙ্গিয়ে ভদ্রকালী ও খরড়া অঞ্চলে অনুষ্ঠান হ'তো। ঘরে ঘরে প্রচলিত সৎসঙ্গ আয়োজনের বাইরে এই ধরণের সৎসঙ্গ আয়োজনে বাধা আসতে লাগলো। ভদ্রকালী অঞ্চলে স্থানীয় মন্দিরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুরু হ'য়ে গেল 'বিশেষ সৎসঙ্গ' নিয়ে বিতর্ক সমালোচনা। আর, শুরু হ'য়ে গেল সৎসঙ্গীদের মাঝে বিরুদ্ধ প্রচার, সাধারণ সৎসঙ্গীদের মধ্যে মন্দিরের কর্তাব্যাক্তি, ঋত্বিক, যাজকদের দ্বারা শুরু হ'য়ে গেল ব্রেন ওয়াশ। পেটে বোমা মারলে 'অ' বা 'ক' অক্ষর বেরোবে না তারাও পিছনের উস্কানিতে 'বিশেষ সৎসঙ্গ' কেন? এর অর্থ কি? ঠাকুরবাড়ি কি অনুমোদন করেছে? ইত্যাদি নানা বিতর্কিত খোঁচা মারা প্রশ্ন নিয়ে হৈ চৈ শুরু ক'রে দিল। যেন বিরাট একটা অপরাধ সঙ্ঘঠিত হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো মনে হ'তে লাগলো যেন শ্রীশ্রীঠাকুর বিরোধী, ঠাকুরবাড়ি বিরোধী, 'সৎসঙ্গ' বিরোধী কোনও পরিকল্পনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে স্থানীয় মন্দির, ঋত্বিক, যাজক ও তাদের দলবল সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, কি করবো আর না-করবো সোল অথরিটি তারাই। এইভাবে যেখানেই বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গানে, নাচে, আবৃত্তিতে, ঠাকুরের আলোচনায় ঝম ঝম ক'রে সৎসঙ্গের আয়োজন হ'তে লাগলো সেখানেই শুরু হ'লো বিরোধীতা এবং সাধারণ সৎসঙ্গীদের বারণ করা হ'তে লাগলো আয়োজিত 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এ না যাওয়ার জন্য। আর, যারা কোনোদিনই কিছু করেনি তারা ফাটা রেকর্ডের মত বাজাতে লাগলো একটা কথা, "হ্যাঁ, হ্যাঁ দেখবো কতদিন চালায়"।

এরকম পরিস্থিতিতে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সঙ্গে ২০১২ সালে এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ' নিয়ে আলোচনা করার সময় তিনি বলেছিলেন, "খুব ভালো কথা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রকাশ্যে বড় ক'রে 'বিশেষ সৎসঙ্গ' আয়োজন করা যেতেই পারে, আয়োজন করায় কোনও অসুবিধা নেই। তবে 'বিশেষ সৎসঙ্গ' ব'লে আলাদা কোনও কথা নেই। সৎসঙ্গ হয় ঠাকুরকে নিয়ে। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিটি সৎসঙ্গ যেন বিশেষ হ'য়ে ওঠে। ঠাকুর যেন প্রমিনেন্ট হয়ে ওঠে সমস্ত কিছুর মধ্যে, সবার মধ্যে। মানুষের কাছে যেন সৎসঙ্গ আনন্দ লাভের ক্ষেত্র হ'য়ে ওঠে, বিরক্তি ও একঘেয়ে না লাগে।"

আজ ভালো লাগবে যখন দেখবো 'বিশেষ সৎসঙ্গ' শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নির্দেশ মত যদি অনুষ্ঠিত হ'য়ে থাকে। আর যারা সেদিন বিতর্ক তৈরী ক'রেছিল, সমালোচনা করেছিল তারা আজকের সারা সৎসঙ্গ জগত জুড়ে 'বিশেষ সৎসঙ্গ' বাঙলা, হিন্দি, ইংরেজী ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় দেখে নিশ্চয়ই আনন্দ পাচ্ছেন।
( লেখা ২রা সেপ্টেম্বর' ২০২৫)।



No comments:

Post a Comment