Powered By Blogger

Thursday, February 20, 2025

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ত্রিপুরা পরিক্রমা।

সৎসঙ্গের শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ত্রিপুরা পরিক্রমা ও ত্রিপুরা যুক্তিবাদী বিকাশ মঞ্চ"।

সৎসঙ্গ, দেওঘর এর বর্তমান প্রধান শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব এবং পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবীন দাদা তাঁদের ত্রিপুরা রাজ্য পরিদর্শনের সময় (১১-১৫ ফেব্রুয়ারি'২৪) বর্তমান ত্রিপুরা সরকার রাজ্যের অতিথি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই নিয়ে শুরু হয়েছে চিরাচরিত বাম বিতর্ক। ত্রিপুরা যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চ" রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এর বিরুদ্ধে তাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ত্রিপুরার জনসংখ্যা প্রায় ৪২ লক্ষ। তাঁর মধ্যে শ্রীশ্রীঅনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ।ত্রিপুরা যুক্তিবাদ বিকাশ মঞ্চ" ত্রিপুরা সরকারের কোষাগারের জনগণের করের টাকায় সৎসঙ্গের শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে state guest, রাজ্যের অতিথি ঘোষণা করায় জনগণের করের টাকা নষ্ট হচ্ছে বলে কড়া আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু একবারও খোঁজ নিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি সৎসঙ্গের শ্রীশ্রীআচার্যদেব এই সরকারী সুবিধা ভোগ করেছেন কিনা। কিংবা প্রয়োজন বোধ করেনি ও করেনা কোনওদিনও সরকারী সাহায্য নেওয়ার পরিবর্তে সাহায্য দানের কোনও ইতিহাস সৎসঙ্গের আছে কিনা।

যাই হ'ক, এই বিষয়ে আমি পরবর্তী ভিডিওতে আবার আসবো। বর্তমানে আমি সাধারণ সচেতন আমার শ্রোতাদের কাছে, আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের কাছে যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে এই যে বছরের পর বছর, বছরের পর বছর ধ'রে সাধারণ মানুষকে যারা ভুল বোঝায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, রাজনৈতিক লাভের জন্য, তার ফলে কত লক্ষ লক্ষ ভাইবোনেরা যে যুগ যুগ ধ'রে মিসগাইড হ'য়ে ভুল রাজনৈতিক দর্শনে বিপথে চালিত হচ্ছে, ভুল ধারণার শিকার হ'য়ে জীবন নষ্ট করছে, অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, জীবনের শেষের দিনগুলি ভয়ংকর হ'য়ে উঠছে, ব্যর্থ জীবনের অধিকারী হ'য়ে হতাশা, অবসাদে ও তীব্র বিষাদ গ্রস্থতায় আক্রান্ত জীবন শেষ ক'রে দিচ্ছে এর হাত থেকে, এই বিষাক্ত সংস্কৃতির নিঃশ্বাস থেকে বাঁচার পথ কি? উপায় কি? আসুন একটু আলোচনা করা যাক।

আজ দেশে দেশে, সমাজে, ঘরে ঘরে ছোটোবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হওয়া ভাইয়ে ভাইয়ের দু'জনার দু'টি পথ দু'টি দিকে বেঁকে গেছে ও যাচ্ছে। গোঁজামিলে জীবনের অঙ্ক মেলাতে মেলাতে আর ভুল জীবন দর্শন, ভ্রান্ত রাজনৈতিক দর্শন, ছদ্ম রাজনীতি, ছদ্ম আন্দোলন, ভুল শিক্ষা ব্যবস্থা, কপট পথপ্রদর্শক ইত্যাদিতে অভিভূত হ'য়ে সামাজিক গোলকধাঁধার ভুল্ভুলাইয়ার ঘুলঘুলিতে আতঙ্কিত ঘোলাটে পাগলাটে চোখে চেয়ে আছে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মিথ্যেয় ভরা পৃথিবীর দিকে। আর, শেষ জীবনে এসে দূরে, বহুদূরের সেই দু'দিকের দুই পথের শেষে বসে বিচ্ছিন্ন হ'য়ে যাওয়া দুই ভাই নীরবে নিভৃতে একাকী চোখের জল ফেলছে অতীত জীবনের কথা ভেবে ও একে অপরের কথা ভেবে। আর, বহুদূর থেকে ভেসে আসছে কান্না ভেজা গলায় মর্মস্পর্শী সেই গান, "মিলন হবে কতদিনে আমার মনের মানুষের সনে, আমার মনের মানুষের সনে।"

জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলার পথে আলো ও অন্ধকার দু'টো পথ আছে।

ঝলমলে আলোর পথে চলার সময় সব দেখা যায়, কোথায় কি আছে না আছে, কে আসছে আর না-আসছে ইত্যাদি।

আর, ঘুটঘুটে অন্ধকার পথে কিছুই দেখা যায় না। চলার পথে শুধুই ভয়, ভয়, আর ভয়। রাস্তায় যে-কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার ভয়। বিষাক্ত সাপের ছোবলের ভয়, হিংস্র পশুর ভয়। সবচেয়ে বড় ভয় মানুষের ভয়, শয়তান মানুষের ভয়, প্রতি মুহুর্তে অস্তিত্ব সঙ্কটের ভয়। পদে পদে খানা খন্দে পড়ে যাওয়ার ভয়, পথ ভুলে ভুল পথে অজানা অচেনা পথে মা-বাবা, ভাইবোন, স্বামীস্ত্রী, সন্তানসন্ততি, পরিবার পরিজন, আপনজন বিচ্ছিন্ন হ'য়ে চলে যাওয়ার, চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার ভয় আর ভয়ংকর ভয়াল মৃত্যুর ভয়।

এবার বন্ধু, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আলোর পথে না অন্ধকার পথে কোন পথে হেঁটেছ ও ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটবে তা' তুমিই ঠিক ক'রে নাও। আর, এই মিথ্যে, নোংরা ও বিষাক্ত কৃষ্টি-সংস্কৃতির পরিবেশে শিশুদের চলার পথ ঠিক ক'রে দিক অতীতে ভুল পথে হেঁটে আসা তাদের মা-বাবারা শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার চলার পথে ভয়ংকর চরম বিপদ নিশ্চিত, পতন ও মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

কিন্ত ঝলমলে আলোর পথেও চলার সময় ভুল হ'তে পারে, বুদ্ধি বিপর্যয় হ'তে পারে, হোঁচট খেয়ে পড়তে হ'তে পারে, বেইমানী, নেমকহারামী, কপটতা ও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হ'তে পারে, যে কোনও মুহূর্তে শয়তানের ছোবল নেমে আসতে পারে, অস্তিত্বের সংকট হ'তে পারে, অকালে মৃত্যু হ'তে পারে ঝলমলে আলোর মাঝেও।

কিন্তু, এই আলো অন্ধকার পৃথিবীতে যখন তমসার ওপার থেকে অর্থাৎ অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকারের ওপার থেকে অচ্ছেদ্যবর্ণ অর্থাৎ সাত রঙের সমাহার যাকে ছেদ করা যায় না, যেমন সূর্যের কিরণের মধ্যে সাত রঙকেই আলাদা আলাদা ভাবে নয় একসঙ্গে সমানভাবে পাওয়া যায় ঠিক তেমনি মহান পুরুষ যিনি, যাঁকে পুরুষোত্তম বলি, তাঁর মধ্যে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সমস্ত কিছুর, তেত্রিশ কোটি দেবদেবতার সমস্ত অংশের, দুনিয়ার বুকে সমস্ত বিষয়ের পূর্ণ জ্ঞানের সমাবেশ আছে, যা কোনও কিছু দিয়েই ছেদ করা যায় না। সেই মহান পুরুষ বা পুরুষোত্তম ইষ্টপ্রতীকে অর্থাৎ মঙ্গলের সংকেত বা চিহ্ন নিয়ে মানুষের মাঝে মানুষ রূপে আবিভুর্ত হন। অর্থাৎ যাঁকে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা বা নিরাকার ঈশ্বর বলি সেই তিনি যখন স্বয়ং মানুষের রূপ ধ'রে মানুষ মায়ের গর্ভে নেমে আসেন, নেমে আসেন তাঁরই সৃষ্ট ষঢ় রিপু তাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আচ্ছন্ন মানুষকে সরাসরি সামনা সামনি বাঁচাতে ও বেড়ে ওঠার সঠিক পথ দেখিয়ে দিয়ে বাঁচা-বাড়ার সেই পথে চালিত করার জন্য তখন তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধি, আচরণকে আশ্রয় ক'রে এক ও একমাত্র তাঁরই উপাসনা করতে হয়। অর্থাৎ তাঁর পূজা, আরাধনা ও প্রার্থনা করতে হয়। আমাদের মনুষ্য রূপী উন্নত জীবেদের তাঁকেই শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান সহকারে পূজা করতে হয় অর্থাৎ তাঁর গুণাবলীকে আনন্দের সাথে নিজের জীবনে, নিজের চরিত্রে অভ্যর্থনা জানাতে হয়, গেঁথে নিতে হয়।

তাই আসুন, আমরা অজ্ঞানতার অন্ধকারে আর ঘুমিয়ে না থেকে এবার জেগে উঠি, তাঁর দিকে এগিয়ে যাই। আমরা যেন সেই রক্ত মাংসের এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত সৃষ্টিকর্তার দিকে এগিয়ে যাই, একমাত্র তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করি। আমার জীবনের যা কিছু কথা ও কর্ম তাঁর উদ্দেশ্যেই যেন নিবেদন করি। তিনিই একমাত্র সর্ব্বজ্ঞ, তিনিই একমাত্র নিখুঁত, তিনিই একমাত্র নির্ভুল!!!! বাকী সব ভুল ও অসম্পূর্ণ।

আসুন, আর সময় নষ্ট না ক'রে সর্বদা, অবিরাম, অনবরত, নিবিড়, অবকাশশূন্য হ'য়ে একভাবে সেই এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভূ ও ঠাকুর রামকৃষ্ণের নবরূপ পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবনে গ্রহণ করি, তাঁকে ভালোবেসে তাঁকে যেন জানতে পারি ও নিশ্চিন্তে অকুতোভয়ে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা মুক্ত হ'য়ে আলো ঝলমলে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারি হাতে হাত রেখে দুই ভাইয়ে অকাল মৃত্যুকে জয় ক'রে। যা কোনও রাজনৈতিক মহাপুরুষ, রাজনৈতিক দর্শন রোগ, শোক, গ্রহ, দোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে পারবে না।

তাই, সৎসঙ্গের প্রাণপুরুষ পুরুষোত্তম পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের ৪র্থ পুরুষ সৎসঙ্গের শ্রীশ্রীআচার্যদেবের বিরুদ্ধে যারা বিষোদ্গার করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, কোনও কথা বলার আগে ভেবে বলুন, জেনে বলুন, যদি কিছু বলার থাকে একবার সরাসরি এসে সাক্ষাতে বলুন। নতুবা গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সবকিছুর জবাব সময় দেয়। সময় সবসে বড়া বলবান। আজ এই পর্যন্ত। জয়গুরু। নমস্কার।

No comments:

Post a Comment