যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সম্পদ বা সেবা প্রাথমিক অবস্থা থেকে চূড়ান্ত অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করা হয় তাকে শিল্প বলে। শিল্প একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সম্পদ বা সেবা প্রাথমিক অবস্থা থেকে চূড়ান্ত অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। আরও সহজ ক'রে বলতে গেলে বলা যায়, শিল্প (Industry) বলতে কারখানায় কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন করা বা সেবা প্রদান করার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বোঝায়।
ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান শিল্পগুলি কি দেখা যাক। ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান শিল্পগুলি হল লোহা ও ইস্পাত, বস্ত্র, পাট, চিনি, সিমেন্ট, কাগজ, পেট্রোকেমিক্যাল, অটোমোবাইল, তথ্য প্রযুক্তি (আইটি), এবং ব্যাঙ্কিং ও বীমা ।
আজ আমি অটোমোবাইল সেক্টরে হিন্দুস্তান মোটরস আর টাটা মোটরস নিয়ে আলোচনা করবো।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার উত্তরপাড়া থেকে হিন্দমোটর হ'য়ে কোন্নগর পর্যন্ত বিস্তৃত ১৯৪৮ সালে নির্মিত প্রাচীনতম হিন্দুস্তান মোটরস ভারতের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি ছিল। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে হিন্দমোটর শীর্ষস্থানীয় ছিল। হিন্দুস্তান অ্যামবাসাডর ২০১৪ সালে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এটি ৫৬ বছর ধরে বিশ্বের দীর্ঘতম চলমান মডেলগুলোর মধ্যে একটি ছিল।
টাটা মোটরস লিমিটেড হল মোটর গাড়ি উৎপাদন- কারী একটি ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি। এটি টাটা গ্রুপের অংশ। কোম্পানিটি যাত্রীবাহী গাড়ি, ট্রাক, ভ্যান, কোচ ও বাস উৎপাদন করে।
2006 সালে সপ্তম বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির উদ্যোগ নেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুরে গাড়ি তৈরির কারখানার কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে রতন টাটা গুজরাটের আনন্দে এই গাড়ি তৈরি করার কারখানা স্থাপন করেন। ন্যানোর হাত ধরে ভারতীয় বাজারের দিশা পালটে দিতে চেয়েছিলেন রতন টাটা। সিঙ্গুরে কারখানা গড়ে ন্যানো তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। ২০০৮সালে এমনই এক অক্টোবর মাসে সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছিল ন্যানো প্রকল্প। সঙ্গে সঙ্গে চিরদিনের জন্য মুছে গিয়েছিল টাটা সাম্রাজ্যের কর্ণধার ও সমাজসেবী রতন টাটার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্পের সম্পর্ক।
পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুরে গাড়ি তৈরির কারখানার কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে রতন টাটা গুজরাটের আনন্দে এই গাড়ি তৈরি করার কারখানা স্থাপন করেন। ন্যানোর হাত ধরে ভারতীয় বাজারের দিশা পালটে দিতে চেয়েছিলেন রতন টাটা। সিঙ্গুরে কারখানা গড়ে ন্যানো তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। ২০০৮সালে এমনই এক অক্টোবর মাসে সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছিল ন্যানো প্রকল্প। সঙ্গে সঙ্গে চিরদিনের জন্য মুছে গিয়েছিল টাটা সাম্রাজ্যের কর্ণধার ও সমাজসেবী রতন টাটার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্পের সম্পর্ক।
আজ পশ্চিমবঙ্গে ভারতের দুই শিল্পপতি বিড়লা ও টাটা গোষ্ঠীর অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির আর কোনও সম্পর্ক নেই। বহুদিন আগে ১৯৮১তে চলে গেছিলেন হিন্দুস্তান মোটর্সের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিজমোহন বিড়লা সংক্ষেপে বি এম বিড়লা। লক্ষ লক্ষ লোকের অন্ন সংস্থান ক'রে গেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর কিছু বছর পরেই হিন্দমোটর কারখানায় পতনের কালো মেঘ ঘনিয়ে উঠতে থাকে অবশেষে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে চারশো একর জমির ওপর গড়ে ওঠা একসময়ের এশিয়ার বিশাল স্বয়ং সম্পূর্ণ অটোমোবাইল টাইটানিক জাহাজ ডুবে যায়।
যাই হ'ক, পরমপিতার রাতুল চরণে বি এম বিড়লার আত্মার মঙ্গল প্রার্থনা করি। তিনি যেখানেই থাকুন খুব ভালো থাকুন।
যাই হ'ক, পরমপিতার রাতুল চরণে বি এম বিড়লার আত্মার মঙ্গল প্রার্থনা করি। তিনি যেখানেই থাকুন খুব ভালো থাকুন।
আর, সেই পশ্চিমবঙ্গের সেই হুগলী জেলার মাটিতেই ন্যানোর হাত ধ'রে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক নকশা পালটে দিতে চাওয়ার রত্ন রতন টাটা চলে গেলেন ২০২৪শে ৯ই অক্টোবর। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর কোনোদিন তিনি আসবেন না আমাদের মাঝে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ১৯৩৭ সালে ২৮ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের বোম্বে, বর্তমানে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
সবাইকে একদিন চলে যেতে হয় না ফেরার দেশে। সেই নিয়ম মেনে সেই রতন টাটাও চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের বুকে তাঁর স্বপ্ন পূরণের ব্যর্থতার ব্যথা নিয়ে চিরদিনের মত না ফেরার দেশে। আজ আর পশ্চিমবঙ্গ হাজার চাইলেও তাঁকে ফিরে পাবে না। তিনিও চলে গেলেন। রেখে গেলেন বিশাল টাটা সাম্রাজ্য।
দেশে বহু ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে ও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে ১৫ই এপ্রিল দুর্গাপুর স্টীল প্রজেক্টের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মিঃ ভাট শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ঠাকুর, ইন্ডাস্ট্রি তো বহু হচ্ছে। তা'তে রাষ্ট্রের কি ভালো হবে? শ্রীশ্রীঠাকুর তার উত্তরে ১৯৬২ সালে যা বলেছিলেন আজ আমরা তা বাস্তবে প্রমাণ পেলাম। এরকম বহু উদাহরণ সারা দেশে বিদেশে অসংখ্য ছড়িয়ে আছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
ইন্ডাস্ট্রি হওয়াই কথা নয়, ইন্ডাস্ট্রি হ'লেই যে সব হয় তাও না। Educated (শিক্ষিত) হওয়াই হচ্ছে কথা। জীবন কেমন ক'রে elongated ( বিস্তৃত) হয়, কেমন ক'রে আমরা সুখে থাকি, বেড়ে উঠি, সমাজে কেমন ক'রে সুবিধা করে চলাফেরা করতে পারি তাই আমরা চাই। এগুলিই হল আসল জিনিস। আর, এ সবের মূলে রয়েছে শিক্ষা। আর, সেই শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে উঠবে চরিত্রের ওপর। চরিত্রের শিক্ষা চাই। তা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। Industry (শিল্প) মানেই হ'লো to grow from within ( ভিতর থেকে জন্মানো)। Industry (শিল্প) হওয়া ভালো। যত হয় তত ভালো। তার সাথে সাথে শিক্ষাও চাই।
ইন্ডাস্ট্রি হওয়াই কথা নয়, ইন্ডাস্ট্রি হ'লেই যে সব হয় তাও না। Educated (শিক্ষিত) হওয়াই হচ্ছে কথা। জীবন কেমন ক'রে elongated ( বিস্তৃত) হয়, কেমন ক'রে আমরা সুখে থাকি, বেড়ে উঠি, সমাজে কেমন ক'রে সুবিধা করে চলাফেরা করতে পারি তাই আমরা চাই। এগুলিই হল আসল জিনিস। আর, এ সবের মূলে রয়েছে শিক্ষা। আর, সেই শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে উঠবে চরিত্রের ওপর। চরিত্রের শিক্ষা চাই। তা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। Industry (শিল্প) মানেই হ'লো to grow from within ( ভিতর থেকে জন্মানো)। Industry (শিল্প) হওয়া ভালো। যত হয় তত ভালো। তার সাথে সাথে শিক্ষাও চাই।
এই যে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শিক্ষা না হ'লে, চরিত্রের শিক্ষা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। তা আমরা দেখতে পেলাম হিন্দমোটর কারখানা ও সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানার ক্ষেত্রে।
১৯৪৮ সালে বি.এম.বিড়লার স্বপ্নের শিল্প হিন্দুস্তান মোটরস্ লিমিটেডের পথ চলা শুরু। ডাঃ বিধান রায়ের সহযোগিতায় উত্তরপাড়া ও কোন্নগরের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনের পশ্চিমদিকে ৭৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় সাড়ে চারশো একর জমির ওপর গড়ে ওঠে বিশাল ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট সহ গাড়ীর কারখানা ও কারখানা সংলগ্ন প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্টিন, স্কুল, কোয়ার্টার, বাংলো, খেলার মাঠ ইত্যাদি। সেই বিশাল অটোমোবাইল টাইটানিক ডুবে গেল ২০১৪ সালে।
আর, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্যোগে ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানার কাজ সমাপ্ত হ'য়ে যাবার পরও ২০০৮ সালে দিনের আলো দেখার আগেই কারখানার অস্ত যায়।
এই যে হিন্দমোটর কারখানা ও টাটামোটর কারখানা দু'টো কারখানারই সলিল সমাধি হ'লো পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার মাটিতে তার ফলে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন যে compressed হ'লো অর্থাৎ সংকুচিত হ'লো, আমরা সুখে থাকা, বেড়ে ওঠা থেকে বঞ্চিত হ'লাম, সমাজে সুবিধা ক'রে চলাফেরা করতে বাধাপ্রাপ্ত হলাম এই সমস্ত কিছুর কারণ কি তা' যদি অনুসন্ধান করা যায় আমরা দেখতে পাবো সেই সত্যদ্রষ্টা পরমপুরুষ পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বলা কথার মধ্যে। আসুন আর একবার স্মরণ করি তাঁর কথা।
তিনি বললেন, "ইন্ডাস্ট্রি হওয়াই কথা নয়, ইন্ডাস্ট্রি হ'লেই যে সব হয় তাও না। Educated (শিক্ষিত) হওয়াই হচ্ছে কথা। জীবন কেমন ক'রে elongated ( বিস্তৃত) হয়, কেমন ক'রে আমরা সুখে থাকি, বেড়ে উঠি, সমাজে কেমন ক'রে সুবিধা করে চলাফেরা করতে পারি তাই আমরা চাই। এগুলিই হল আসল জিনিস। আর, এ সবের মূলে রয়েছে শিক্ষা। আর, সেই শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে উঠবে চরিত্রের ওপর। চরিত্রের শিক্ষা চাই। তা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। Industry (শিল্প) মানেই হ'লো to grow from within ( ভিতর থেকে জন্মানো)। Industry (শিল্প) হওয়া ভালো। যত হয় তত ভালো। তার সাথে সাথে শিক্ষাও চাই।"
এই দু'টো কারখানারই সলিল সমাধি ঘটেছে ইন্ডাস্ট্রি ভেতর থেকে গড়ে না ওঠার জন্য। শিক্ষার অভাবের জন্য।
( লেখা ১১ই অক্টোবর'২৪)
এই দু'টো কারখানারই সলিল সমাধি ঘটেছে ইন্ডাস্ট্রি ভেতর থেকে গড়ে না ওঠার জন্য। শিক্ষার অভাবের জন্য।
( লেখা ১১ই অক্টোবর'২৪)
No comments:
Post a Comment