Powered By Blogger

Thursday, October 31, 2024

বিচিত্রা ৩৩

যে ক'রে মিথ্যার চাষ, সত্য ক'রে তার সর্বনাশ।
আর এক চিরন্তন সত্য।

সবাইকে চলে যেতে হয় একদিন এ কথা সত্য। 
কিন্তু চলে যেতে হয় ছিন্ন তারের মত জীবন কাটিয়ে 
তা' সে যতই মহান জীবন হ'ক না কেন!
কেন এমন হয়!?

গাড়ি চালাতে জানি না অথচ স্টিয়ারিং ধরবোই, 
তাই নিজের, দশের ও দেশের 
এই ল্যাংড়া-খোঁড়া-অন্ধ অবস্থা!

যদি বাঁচতে চাও তো ইগো ব'লে কিছু রেখো না। 
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সমস্যা বা ডিজিজ হ'লো ইগো! রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও আনন্দে থাকতে হ'লে ইগো সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখো। 
জীবনে ইগো নেই তো জীবনে কোনও সমস্যা নেই, 
রোগ নেই, অভাব নেই। 
আছে আনন্দ, আনন্দ আর আনন্দ!

ভয় কি?
জীবন্ত ঈশ্বর পরমপিতা শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রকে 
বুকে জড়িয়ে ধরো, 
কোলবালিশের মত দু'হাতে জাপ্টে জড়িয়ে ধরো, 
তোমার প্রিয় ভালোবাসার মানুষকে যেমন জড়িয়ে ধরো 
তেমনভাবে দয়ালকে বুকে জড়িয়ে ধরো। 
আর দেখো, 
আস্তে আস্তে জীবনের সব ফ্যাকাশে রঙ পাল্টে গিয়ে 
জীবন রঙিন হ'য়ে উঠবে; 
উঠবেই কি উঠবে। 
একবার বিশ্বাস করো, নির্ভর করো তার উপর। 
দের হ্যায় লেকিন অন্ধেরা নেহি হ্যায়!
( লেখা৩১শে অক্টোবর' ২০/২১/২২)



















Friday, October 25, 2024

বিচিত্রা ৩২

দিন ঢলে মগজ খোলে
গগন তলে পলে পলে
রাত গভীর মন অধীর
চিন্তা খুড়ে খায় শরীর।

আঁধার রাতে ঘরের কোণে
ঘুম আসে না, তাই তোও জেগে রই।
পরাণ মাঝে নিশি ডাকে
নিঝুম রাতের ফাঁকে ফাঁকে
কোথায় তুমি সই?
( লেখা ২৬শে অক্টোবর' ২০১৭)

প্রবন্ধঃ সিনেমা, সিরিয়াল ও নারীর নারীত্ব!

পুরুষ ডায়েরি কি বলছে?
শুধু নারী হলেই হয় না, নারীত্বটাও থাকা চাই।


ঘরে ঘরে প্রায়ই কি দেখা যায়? সেটা দেখতে হ'লে বা জানতে হ'লে নাকি দেখতে হবে সিনেমা, সিরিয়াল! বাস্তব নাকি উঠে আসছে সিনেমা, সিরিয়ালে! প্রোডিউসার ও পরিচালকরা কি বলছেন? বলছেন, একেবারে জীবনমুখী গানের মত বাস্তবমুখী সিনেমা, সিরিয়াল!


সারাদিনে ঘরে বাইরে জোয়াল টানতে টানতে ক্লান্ত পুরুষ সিনেমা, সিরিয়াল দেখতে ব'সে এই সমস্ত বাস্তবমুখী সিনেমা, সিরিয়ালে বাস্তবের প্রতিফলন দেখে বিধ্বস্ত। কোথায় যাবে পুরুষ? ঠাই নাই ঠাই নাই নাই নাই ঠাই নাই ছোটো সে আমার ঘর, আমারি আপনার জনের তরে হয়েছে সে আজ পর। সেই এক গল্প, থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।


আর নারী? সারাদিন সংসার, সংসার আর সংসার শেষে এসে বোকা বাক্সের সামনে বোকার মত বসে থাকা। এ ছাড়া উপায় কি? কজনই বা বই পড়ে, গান করে বা পুরুষের মত ক্লাব বা মোড়ের মাথার চায়ের দোকান বা রাস্তার ধারে দোকানের সামনের পরিসরে আড্ডা মারে, সময় কাটায় বা সেইভাবে সময় কাটাবার মত সময়, তারও চেয়ে বড় কথা পরিবেশ বা সংস্কৃতি আছে? ক'জনই বা ধর্ম্মসভা বা সৎসঙ্গে যায়? অগত্যা মধুসূদন সেই বোকা বাক্স। বোকা বাক্সের চ্যানেলে চ্যানেলে সিরিয়াল নয়তো সিনেমা। প্রতিটি চ্যানেলে প্রতিটি সিরিয়াল, সিনেমা কি দেখাচ্ছে? কি বলছে?


দেখাচ্ছে, সেই ঘরে ঘরে নারী পুরুষের উপর শাসন করছে, দাবিয়ে রাখছে, মানসিক অত্যাচার করছে, চাপ সৃষ্টি করছে, দুর্ব্যবহারে জীবন অতিষ্ঠ ক'রে তুলছে, পুরুষকে ক'রে তুলছে পরিবারের সকলের কাছে হাসির খোরাক। এমনই সব সিনেমা, সিরিয়াল।


এই পিটুলিগোলা খাওয়ানোর মত সিনেমা, সিরিয়ালের বিরুদ্ধে কোথাও কোনও নারী মুক্তি ও নারী আন্দোলনকারী নারীর বাদ নেই, প্রতিবাদ নেই; নেই কোনও বিরোধের সংবাদ, ঘরে বাইরে সব উন্মাদ।


আর সেই বিষ সিনেমা, সিরিয়াল গদ্গদ ক'রে গিলছে ঘরে ঘরে সেই নারীরাই আর নিজের অজান্তে নিজের সংসারে হ'য়ে উঠছে সেই সিনেমা, সিরিয়ালের নীল বিষে জর্জরিত নারীর মত জীবন্ত আনাড়ি এক নারী চরিত্র! সত্য নারী! এ যেন একরকম জোর ক'রে দুধ ব'লে পিটুলিগোলা খাইয়ে দেওয়া কিম্বা কখনও কখনও বা গলায় পা চাপা দিয়ে উচ্ছের পায়েস খাইয়ে দেওয়া। কি বিচিত্র এই সংসার! নারী, নিজের কাছে নিজে নারী থেকে হ'য়ে গেলে আনাড়ি! তবুও নেই কোনও হেলদোল।


সিনেমা, সিরিয়াল নারীকে কি বলছে?
বলছে, স্বামী ভুল করুক না করুক তাকে পরিবারের সবার সামনে অপমান করুন, তাকে পার্সোনালি বোঝাবেন না, শাসন করবেন না। সবসময় নিজের স্বামীকে অন্যের কাছে হাসির খোরাক ক'রে তুলুন কারণ এখানেই লুকিয়ে আছে আপনার নারীত্ব।
( লেখা ২৬শে অক্টোবর'২০১৭)



প্রবন্ধঃ শিল্প কাকে বলে?

Industry মানেই হ'লো to grow from within ( শিল্প মানেই হ'লো ভিতর থেকে জন্মানো)।

যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সম্পদ বা সেবা প্রাথমিক অবস্থা থেকে চূড়ান্ত অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি করা হয় তাকে শিল্প বলে। শিল্প একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সম্পদ বা সেবা প্রাথমিক অবস্থা থেকে চূড়ান্ত অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। আরও সহজ ক'রে বলতে গেলে বলা যায়, শিল্প (Industry) বলতে কারখানায় কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন করা বা সেবা প্রদান করার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বোঝায়।

ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান শিল্পগুলি কি দেখা যাক। ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান শিল্পগুলি হল লোহা ও ইস্পাত, বস্ত্র, পাট, চিনি, সিমেন্ট, কাগজ, পেট্রোকেমিক্যাল, অটোমোবাইল, তথ্য প্রযুক্তি (আইটি), এবং ব্যাঙ্কিং ও বীমা ।

আজ আমি অটোমোবাইল সেক্টরে হিন্দুস্তান মোটরস আর টাটা মোটরস নিয়ে আলোচনা করবো।

পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার উত্তরপাড়া থেকে হিন্দমোটর হ'য়ে কোন্নগর পর্যন্ত বিস্তৃত ১৯৪৮ সালে নির্মিত প্রাচীনতম হিন্দুস্তান মোটরস ভারতের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি ছিল। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে হিন্দমোটর শীর্ষস্থানীয় ছিল। হিন্দুস্তান অ্যামবাসাডর ২০১৪ সালে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এটি ৫৬ বছর ধরে বিশ্বের দীর্ঘতম চলমান মডেলগুলোর মধ্যে একটি ছিল।

টাটা মোটরস লিমিটেড হল মোটর গাড়ি উৎপাদন- কারী একটি ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি। এটি টাটা গ্রুপের অংশ। কোম্পানিটি যাত্রীবাহী গাড়ি, ট্রাক, ভ্যান, কোচ ও বাস উৎপাদন করে।

2006 সালে সপ্তম বাম সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির উদ্যোগ নেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুরে গাড়ি তৈরির কারখানার কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে রতন টাটা গুজরাটের আনন্দে এই গাড়ি তৈরি করার কারখানা স্থাপন করেন। ন্যানোর হাত ধরে ভারতীয় বাজারের দিশা পালটে দিতে চেয়েছিলেন রতন টাটা। সিঙ্গুরে কারখানা গড়ে ন্যানো তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। ২০০৮সালে এমনই এক অক্টোবর মাসে সিঙ্গুর ছেড়ে চলে গিয়েছিল ন্যানো প্রকল্প। সঙ্গে সঙ্গে চিরদিনের জন্য মুছে গিয়েছিল টাটা সাম্রাজ্যের কর্ণধার ও সমাজসেবী রতন টাটার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অটোমোবাইল শিল্পের সম্পর্ক।

আজ পশ্চিমবঙ্গে ভারতের দুই শিল্পপতি বিড়লা ও টাটা গোষ্ঠীর অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির আর কোনও সম্পর্ক নেই। বহুদিন আগে ১৯৮১তে চলে গেছিলেন হিন্দুস্তান মোটর্সের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিজমোহন বিড়লা সংক্ষেপে বি এম বিড়লা। লক্ষ লক্ষ লোকের অন্ন সংস্থান ক'রে গেছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর কিছু বছর পরেই হিন্দমোটর কারখানায় পতনের কালো মেঘ ঘনিয়ে উঠতে থাকে অবশেষে ২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে চারশো একর জমির ওপর গড়ে ওঠা একসময়ের এশিয়ার বিশাল স্বয়ং সম্পূর্ণ অটোমোবাইল টাইটানিক জাহাজ ডুবে যায়।
যাই হ'ক, পরমপিতার রাতুল চরণে বি এম বিড়লার আত্মার মঙ্গল প্রার্থনা করি। তিনি যেখানেই থাকুন খুব ভালো থাকুন।

আর, সেই পশ্চিমবঙ্গের সেই হুগলী জেলার মাটিতেই ন্যানোর হাত ধ'রে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক নকশা পালটে দিতে চাওয়ার রত্ন রতন টাটা চলে গেলেন ২০২৪শে ৯ই অক্টোবর। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর কোনোদিন তিনি আসবেন না আমাদের মাঝে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। ১৯৩৭ সালে ২৮ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের বোম্বে, বর্তমানে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

সবাইকে একদিন চলে যেতে হয় না ফেরার দেশে। সেই নিয়ম মেনে সেই রতন টাটাও চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের বুকে তাঁর স্বপ্ন পূরণের ব্যর্থতার ব্যথা নিয়ে চিরদিনের মত না ফেরার দেশে। আজ আর পশ্চিমবঙ্গ হাজার চাইলেও তাঁকে ফিরে পাবে না। তিনিও চলে গেলেন। রেখে গেলেন বিশাল টাটা সাম্রাজ্য।

দেশে বহু ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে ও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ১৯৬২ সালে ১৫ই এপ্রিল দুর্গাপুর স্টীল প্রজেক্টের চীফ ইঞ্জিনিয়ার মিঃ ভাট শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ঠাকুর, ইন্ডাস্ট্রি তো বহু হচ্ছে। তা'তে রাষ্ট্রের কি ভালো হবে? শ্রীশ্রীঠাকুর তার উত্তরে ১৯৬২ সালে যা বলেছিলেন আজ আমরা তা বাস্তবে প্রমাণ পেলাম। এরকম বহু উদাহরণ সারা দেশে বিদেশে অসংখ্য ছড়িয়ে আছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
ইন্ডাস্ট্রি হওয়াই কথা নয়, ইন্ডাস্ট্রি হ'লেই যে সব হয় তাও না। Educated (শিক্ষিত) হওয়াই হচ্ছে কথা। জীবন কেমন ক'রে elongated ( বিস্তৃত) হয়, কেমন ক'রে আমরা সুখে থাকি, বেড়ে উঠি, সমাজে কেমন ক'রে সুবিধা করে চলাফেরা করতে পারি তাই আমরা চাই। এগুলিই হল আসল জিনিস। আর, এ সবের মূলে রয়েছে শিক্ষা। আর, সেই শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে উঠবে চরিত্রের ওপর। চরিত্রের শিক্ষা চাই। তা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। Industry (শিল্প) মানেই হ'লো to grow from within ( ভিতর থেকে জন্মানো)। Industry (শিল্প) হওয়া ভালো। যত হয় তত ভালো। তার সাথে সাথে শিক্ষাও চাই।

এই যে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, শিক্ষা না হ'লে, চরিত্রের শিক্ষা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। তা আমরা দেখতে পেলাম হিন্দমোটর কারখানা ও সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানার ক্ষেত্রে।

১৯৪৮ সালে বি.এম.বিড়লার স্বপ্নের শিল্প হিন্দুস্তান মোটরস্ লিমিটেডের পথ চলা শুরু। ডাঃ বিধান রায়ের সহযোগিতায় উত্তরপাড়া ও কোন্নগরের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনের পশ্চিমদিকে ৭৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় সাড়ে চারশো একর জমির ওপর গড়ে ওঠে বিশাল ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট সহ গাড়ীর কারখানা ও কারখানা সংলগ্ন প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্টিন, স্কুল, কোয়ার্টার, বাংলো, খেলার মাঠ ইত্যাদি। সেই বিশাল অটোমোবাইল টাইটানিক ডুবে গেল ২০১৪ সালে।

আর, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্যোগে ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার সিঙ্গুরে টাটা মোটরসের ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানার কাজ সমাপ্ত হ'য়ে যাবার পরও ২০০৮ সালে দিনের আলো দেখার আগেই কারখানার অস্ত যায়।

এই যে হিন্দমোটর কারখানা ও টাটামোটর কারখানা দু'টো কারখানারই সলিল সমাধি হ'লো পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার মাটিতে তার ফলে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন যে compressed হ'লো অর্থাৎ সংকুচিত হ'লো, আমরা সুখে থাকা, বেড়ে ওঠা থেকে বঞ্চিত হ'লাম, সমাজে সুবিধা ক'রে চলাফেরা করতে বাধাপ্রাপ্ত হলাম এই সমস্ত কিছুর কারণ কি তা' যদি অনুসন্ধান করা যায় আমরা দেখতে পাবো সেই সত্যদ্রষ্টা পরমপুরুষ পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বলা কথার মধ্যে। আসুন আর একবার স্মরণ করি তাঁর কথা।

তিনি বললেন, "ইন্ডাস্ট্রি হওয়াই কথা নয়, ইন্ডাস্ট্রি হ'লেই যে সব হয় তাও না। Educated (শিক্ষিত) হওয়াই হচ্ছে কথা। জীবন কেমন ক'রে elongated ( বিস্তৃত) হয়, কেমন ক'রে আমরা সুখে থাকি, বেড়ে উঠি, সমাজে কেমন ক'রে সুবিধা করে চলাফেরা করতে পারি তাই আমরা চাই। এগুলিই হল আসল জিনিস। আর, এ সবের মূলে রয়েছে শিক্ষা। আর, সেই শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে উঠবে চরিত্রের ওপর। চরিত্রের শিক্ষা চাই। তা না হ'লে কিছুই ধ'রে রাখা যাবে না। Industry (শিল্প) মানেই হ'লো to grow from within ( ভিতর থেকে জন্মানো)। Industry (শিল্প) হওয়া ভালো। যত হয় তত ভালো। তার সাথে সাথে শিক্ষাও চাই।"
এই দু'টো কারখানারই সলিল সমাধি ঘটেছে ইন্ডাস্ট্রি ভেতর থেকে গড়ে না ওঠার জন্য। শিক্ষার অভাবের জন্য।
( লেখা ১১ই অক্টোবর'২৪)

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জে এম সেন হলের দূর্গাপুজো মন্ডপে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন ও সনাতনী বিতর্ক। (পর্ব ২)

যদি সনাতনী সমাজ থেকে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটির সদস্যদের আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা করা হয় ও গ্রেপ্তার ক'রে আইনের আওতায় আনা হয় তাহ'লে আজ এই কঠিন সময়ে মাথা উঁচু ক'রে, শিরদাঁড়া টানটান ক'রে সত্যের মুখোমুখী দাঁড়াতে হবে মানবজাতির স্বার্থে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটির সদস্যদের। যুক্তি ও তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের সমস্ত সম্প্রদায়ের ধর্মনিশ্বাসী মানুষের সামনে এবং বিচারকের সামনে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে ও যুক্তিনিষ্ট বক্তব্যে তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা ঠিক করেছিল নাকি ভুল করেছিল। বিচারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেশের ও দশের স্বার্থে তাদের প্রমাণ করতে হবে এই ধর্মীয় সঙ্কটকালে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ধর্মীয় সঙ্কটের ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে অমংগলজনক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ছিল না, সার্বিক মংগলজনক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ছিল। আইনের মুখোমুখি দাঁড়াক অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সজল দত্ত ও কমিটির লোকজন এবং যারা সংগীতানুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত গায়ক ছিলেন তাঁরা সবাই যৌথভাবে আইনের মুখোমুখি দাঁড়াক। যদি তাঁদের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ এবং গান গাওয়া, গানের কথা যুক্তি ও তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে বিচারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব'লে প্রমাণ হয়, ভয়ংকর মারাত্মক ক্ষমাহীন ধর্মীয় অপরাধ হয়, সীমাহীন ভুল হয়, দোষের হয়, মানবতা ধ্বংসের কারণ হয়, সাম্প্রদায়িক ঐক্য নষ্টের কারণ হয়, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের চক্রান্ত হয় তবে তার বিচার হ'ক। আর যদি তাদের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হ'য়ে থাকে কিন্তু তাদের পদক্ষেপ বিচারে দোষ বা ভুল ব'লে প্রমাণিত হয় তাহ'লে অনিচ্ছাকৃত এই ভাবাবেগের কারণে যে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে, যে দোষ হয়েছে সেই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য, দোষের জন্য আইনের শাস্তি মাথা পেতে নিক ও দুই সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিক তারা। এবং তা ভবিষ্যতের কাছে উদাহরণ হ'য়ে থাকুক।

আর, যদি গ্রেপ্তার ক'রে আইনের আওতায় আনা হয় ও বিচারে প্রমাণ হয় ধর্মীয় সঙ্কটকালে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ধর্মীয় সঙ্কটের ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে অমংগলজনক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ছিল না বরং ধর্ম ও ঈশ্বর নিয়ে হিন্দু মুসলমানের এই দীর্ঘদিনের যে গোলমাল, লড়াই তা'র সমাধানে, তা'র মিমাংসায় দৃষ্টান্তস্বরূপ এক যুগান্তকারী সার্বিক মংগলজনক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ছিল তখন আইন কি রায় দেয় ও উভয় সম্প্রদায়ের যারা এই ঘটনার বিরুদ্ধে ছিলেন তারা বিষয়টাকে কি চোখে দেখে ও কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও দেখার। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূচনা হ'লেও হ'তে পারে, যা অন্যান্য ধর্মের পরস্পরের মধ্যে এর শুভ প্রভাব পড়তে পারে।

যুগপুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের
একজন দীক্ষিত শিষ্য ও তাঁর জীবনবাদ, অস্তিত্ববাদ সম্পর্কিত মতবাদ ও মিশনের অনুসারী ও পতাকাবহনকারী 'সৎসঙ্গী' হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি, উপলব্ধি ও মতামত তুলে ধরলাম মাত্র। গ্রহণ ও বর্জন শ্রোতা বন্ধুদের।

এবার আসি নিজের সঙ্গে নিজে মুখোমুখি হ'তে। আসলে সৃষ্টিকর্তা নিজেই ভুল করেছেন এই ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি ক'রে এবং সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে সৃষ্টি করে। আসলে জীব জগত জীবন কারণের কারণ পরমকারণিক যিনি তিনি যুগে যুগে বারবার এসেছেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ট উৎকৃষ্ট রূপ মানুষের রূপ ধরে তাঁর মানুষরূপী নিকৃষ্ট জীবেদের মাঝে। তাই তাঁর উদ্দেশ্যে অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে গাওয়া গানও যে স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী অপরাধ ও পাপ হ'তে পারে এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে এটা কলিযুগ। সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বড় ভুল বোধহয় মানুষকে সৃষ্টি করা। আর, সবচেয়ে আরও বড় ভুল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর মানুষ হ'য়ে আসা তাঁর সৃষ্ট মানুষের মাঝে। মানুষ আজ মানুষ নয়, মানুষ আজ বালখিল্য হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ইত্যাদি। আর, ঘোর কলিযুগের এটাই আজ ট্র্যাজেডি যে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি মানুষ যে আকৃতিতে মানুষ কিন্তু কখন যে বোধ, বুদ্ধি, শিক্ষা, সভ্যতা, চেতনা, জ্ঞান, আচার, আচরণ, স্বভাব ইত্যাদি সব হারিয়ে, লুপ্ত হ'য়ে এখন একতাল পচা দূর্গন্ধযুক্ত মাংসপিন্ডে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ এককথায় প্রকৃতিতে বামনতা প্রাপ্ত হয়েছে নিশ্চিত ধ্বংস হওয়ার জন্য তা' মানুষ জানে না। বিশেষ ক'রে ধর্ম জগতের সবজান্তা বোদ্ধা্রা কথার স্রোতে ভাসা বক ধার্মিকের দল। এ ধ্বংস নিশ্চিত, আটকানোর কোনও উপায় আর নেই। কেউ বাঁচবে না; তা সে হিন্দু হ'ক, মুসলমান হ'ক, খ্রীষ্টান হ'ক, বৌদ্ধ হ'ক আর যে ধর্ম বা মতের বা সম্প্রদায়ের লোক হ'ক কেউ বাঁচবে না কলিযুগের মহাপ্রলয়ের হাত থেকে। এই ঘটনা অন্যতম অশনি সঙ্কেত।

এবার শ্রোতা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই,
অনেকেই আমাকে আমার এই বক্তব্য বিষয়ে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ আমার বক্তব্য ও কমেন্ট আবার পড়ুন, শুনুন, বুঝুন ও পারলে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। আলোচনা করুন। মত বিনিময় করুন। বর্তমান যুগ টেবিল টকের যুগ। অন্তত শিক্ষিত মানুষের কাছে, সৎ, দক্ষ, যোগ্য, সচেতন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আমি আলোচনা আশা করতে পারি। তাঁদের মতামত জানতে পারি।

যখন কঠিন বিষয়ের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার শ্রোতা ও দর্শক বন্ধুরা প্রশ্ন ক'রে পোষ্ট করবেন তখন চারদিক ভেবে পোষ্ট করবেন বিশেষ ক'রে সৎসঙ্গী ভাইবোন। কারণ আবার বলছি, আমরা যেন ভুলে না যায় আমি আপনি একজন সৎসঙ্গী। আমি আগে একজন সৎসঙ্গী অর্থাৎ জীব জগতের প্রতিটি জীবন, প্রতিটি অস্তিত্বের সঙ্গী, অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরমঅস্তিত্বের সঙ্গী তারপর আমি হিন্দু কি মুসলিম কি খ্রীষ্টান ইত্যাদি সম্প্রদায়ের। দুনিয়ার সমস্ত প্রকৃত ঈশ্বর বিশ্বাসী, প্রকৃত ঈশ্বর প্রেমী ভক্ত মাত্রেই সৎসঙ্গী।

তাই একজন সৎসঙ্গী হিসেবে একজন সৎসঙ্গীর কাছে সৎসঙ্গীর মত উত্তর আশা করি। আশা করি সৎসঙ্গী হিসেবে সৎসঙ্গীর কাছে তথ্যবহুল উত্তর পাবো। অনেক কিছুই আমরা দেখিনি কারণ ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের দৌড় মোল্লার মসজিদ আর পুরোহিতের মন্দির পর্যন্ত দৌড়ের মতন। আর, তাই নিয়ে মোল্লা ও পুরোহিতরা ধর্ম ও ঈশ্বরের আঙ্গিনা কাঁপায়। আর, ধর্মে ও ঈশ্বর আরাধনায় মানুষকে ভয় পাইয়ে দেবার, অজ্ঞানতায় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ দুর্বল ভীরু বিষয় আছে যা ধাঁধার সৃষ্টি হ'য়ে যুগ যুগ ধ'রে চলে আসছে আর মানুষকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে আসতে বাধা দিচ্ছে।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বললেন, "জ্ঞান ধাধাকে ধ্বংস ক'রে মানুষকে প্রকৃত চক্ষু দান করে। জ্ঞান বস্তুর স্বরূপকে নির্দেশ করে। আর, বস্তুর যে ভাব জানলে জানা বাকী থাকে না, তাই তার স্বরূপ।"

এবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এসে সব বিষয়ের ধাঁধাকে ধ্বংস ক'রে হাঠে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে গেছেন ও প্রকৃত চোখ খুলে দিয়ে গেছেন, সমস্ত বিষয়বস্তুর স্বরূপ তুলে ধরেছেন। আবার, অনেক বিষয় সম্পর্কে নোতুন দিশা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন ধর্ম ও ঈশ্বর জগতে অবস্থানকারী প্রকৃত ভক্তদের জন্য। সৎসঙ্গ জগতে ভণ্ডামি ও কপটতার কোনও জায়গা নেই। বিশেষ ক'রে সৎসঙ্গীদের কাছে শ্রীশ্রীঠাকুরের অনেক চাওয়া ছিল, আশা ছিল, ভরসা ছিল, ছিল স্বপ্ন। কিন্তু আমরা সৎসঙ্গী হ'তে পারিনি ব'লে সারাজীবন দুঃখ নিয়ে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর মিশন রথ চলবেই বিশ্বজুড়ে। এই রথ আটকায় এমন কেউ নেই এই পৃথিবীতে। কারণ এবার তিনি রেত শরীরে সুপ্ত থেকে অবস্থান করছেন আমাদের মাঝে। আর, সেই কথা স্বয়ং তিনি ব'লে গেছেন। একবার কথা প্রসঙ্গে তিনি বিজ্ঞানী কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে ( যিনি সৎসঙ্গ জগতে কেষ্টদা নামে পরিচিত, যিনি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সি ভি রমণের অ্যাসিস্টেন্ট ছিলেন, ছিলেন কেমিষ্ট্রিতে গোল্ড মেডেলিস্ট) বলেছিলেন, "কেষ্টদা পদ্মার ভাঙ্গন দেখেছেন? উপর থেকে প্রথমে কিছুই বোঝা যায় না। হঠাৎ একদিন দেখা যায় নীরবে নিশব্দে পদ্মা পাড়ের বাড়ি ঘর গাছপালা জুড়ে বিশাল বিস্তির্ণ অঞ্চল সব পদ্মার পেটে ঢুকে গেছে, যেদিকে তাকায় শুধু জল, জল আর জল। ঠিক তেমনি একদিন গোটা পৃথিবী আমার সৎসঙ্গের পেটের মধ্যে ঢুকে যাবে।"

এখন আমরা সেই কলিযুগ থেকে সত্যযুগে প্রবেশের ট্রাঞ্জিশানাল পিরিয়ডে রয়েছি। তাই সৎসঙ্গীদের আজ সময় এসেছে বোঝার তারা সৎসঙ্গী, তারা সৎসঙ্গী, তারা সৎসঙ্গী। জয়গুরু।
( লেখা ১৪ই অক্টোবর'২৪)

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জে এম সেন হলের দূর্গাপুজো মন্ডপে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন ও সনাতনী বিতর্ক। (পর্ব ১)

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম রহমতগঞ্জের যাত্রামোহন সেন হল অর্থাৎ জে.এম.সেন হলে দূর্গা পূজার মঞ্চে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের আমন্ত্রণে দূর্গামঞ্চে মুসলিম ভাইয়েরা সঙ্গীত পরিবেশন করে। কেউ বলছে পূজার মঞ্চে গজল পরিবেশন হয়েছিল। কেউ বা বলছে দেশাত্মবোধক গান, কেউ বা বলছে ইসলামিক সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল ও ইসলামি দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন 'গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান' এই গানটা পরিবেশন হয়েছিল। কেউ কেউ বলছেন, যেটা দেখানো হচ্ছে ভিডিওতে সেটা ব্যাকগ্রাউন্ডে লাগিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে৷ কেউ বলছেন ফেব্রিকেটেড ভিডিও সোশ্যাল সাইটে ছেড়ে দিচ্ছেন সেটার তদন্ত হওয়া উচিত। কেউ বলছেন, পূজা কমিটি এমন সম্প্রীতির নাটক বাদ দিয়ে প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন তাতেই সবার মঙ্গল হবে! কেউ বলছেন, বেশ কিছুমাস আগে চট্রগ্রমের সীতাকুন্ডে চন্দ্রনাথ ধামে আজান দেওয়া হয়েছিলো! এটি একটি স্পষ্ট ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত ও হিন্দু ধর্মকে এভাবে পরিকল্পিতভাবে অসম্মান করার চক্রান্ত।

এই সঙ্গীত পরিবেশন করা নিয়ে বাংলাদেশে সনাতনীদের আবেগ নিয়ে নোংরামি করা হয়েছে বলে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দাবী উঠেছে জে এম সেন হলের সকল আয়োজন বয়কট করার ও পূজা কমিটিকে সনাতনী সমাজ থেকে আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা করার ও গ্রেপ্তার ক'রে আইনের আওতায় আনার। দাবী উঠেছে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদকে প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পুজায় সনাতনী সংগীত, নৃত্য ও গীতাপাঠ ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ যোগ্য হবে না। দাবী উঠেছে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের স্টেজে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হবে না। দূর্গাপূজার মঞ্চে এই ঘটনার জেরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

এই নিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উঠেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

১) পূজা মন্ডমে গান গাইতে মুসলিম শিল্পী নিতে হবে কেন?

২) বাংলাদেশে হিন্দু শিল্পীর অভাব হয়ে গেছে?

৩) দূর্গাপুজাতে কেন ইসলামিক গান করলো? ইসলামিক অনুষ্ঠানে কি হিন্দুদের গীতা পাঠ হয়? কেন সনাতন ধর্মকে অপমান করা হলো?

৪) পূজার প্যান্ডেলে উঠে ইসলামি দাওয়াত না দিয়ে সরাসরি জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হ'ক।

৫) গান,বাজনা হারাম, পূজা হারাম, প্রতিমা দেখা হারাম, তাহলে তারা কেন ওখানে গেল? ওখানে ইবাদত করতে গেছে অর্থাৎ উপাসনা করতে গেছে? হিন্দুরা কোনও মসজিদে যায় না। ওরা কেন আসলো? আর, পূজা কমিটি এমন সম্প্রীতির নাটক বাদ দিয়ে প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন। তাতেই সবার মঙ্গল হবে।

৬) বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের আয়োজনে মহা অষ্টমীতে নগরীর জে.এম.সেন হলে আগের দিনের ইসলামী গজলের পরিবর্তে ভক্তিমূলক গান ভজন পরিবেশন করেন ইসকন।

এই 'আমরা যাই না, ওরা কেন আসলো' প্রসঙ্গে "গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান' গানের কথাগুলি মনে পড়ে গেল। যা বৃটিশ পূর্ববর্তী অতীত অখন্ড ভারতকে মনে পড়িয়ে দিল।

শাহ আব্দুল করিমের হৃদয়স্পর্শী গান, 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।'

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম
মিলিয়া বাউলা গান সারি গান গাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম
জারি গান, বাউল গান
আনন্দের তুফান
গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

বর্ষা যখন হইত,
গাজির গান আইত,
রংগে ঢংগে গাইত
আনন্দ পাইতাম
কে হবে মেম্বার,
কে বা সরকার
আমরা কি তার খবরও লইতাম
হায়রে আমরা কি তার খবরও লইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।
করি যে ভাবনা
সেই দিন আর পাব নাহ
ছিল বাসনা সুখি হইতাম
দিন হইতে দিন
আসে যে কঠিন
করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম….

আসুন আমরা আবার আলোচনায় ফিরে যায়।

ঠিক তেমনি মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে।

১) দুর্গা পূজায় ইসলামিক বিপ্লবের গান গেয়ে যারা ইসলাম ধর্ম কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তারা ইসলামের দুশমন, তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। যারা এই নোংরা কাজে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে কঠোর থেকে কঠোর সাজা দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোন ধর্ম ব্যবসায়ী এমন জঘন্য কাজ করার মতো সাহস না পাই। ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, ইসলাম মুসলমানদের আবেগ,ভালোবাসা, অনুভুতি সহ অনেক কিছু, তাই যারা ইসলাম কে ছোট করবে তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হোক।

২) ইফতার প্রোগ্রামে এসে কেউ কীর্তন গেয়ে গেলে নিতে পারবেন? এই যে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কে যে ট্রমা এর মধ্যে ফেলছি সেটা তাদের জুতায় পা দিয়ে দেখেন।

আবার কেউ কেউ বলেছেন,
১) চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের অনুষ্ঠানে ইসলামি দাওয়াত সংগীতের অনন্য পরিবেশনা।

২) পুজোয় গজল শুনলাম। দোষ তো সম্মানিত দর্শকদের যারা বসে হাতে তালি দিচ্ছিল।

এসব শুনতে শুনতে মাথাটা গুলিয়ে যাচ্ছিলো। Many men many mind, অনেক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট' প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল। মনের মধ্যে একসঙ্গে অনেক প্রশ্নের ঝড় উঠে গেল।

১) পুজো মন্ডপে মুসলিম শিল্পী আনা যাবে না? অন্যায়? পাপ? নাকি ফতোয়া? শিল্পীদের মধ্যে বিভেদ? একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে, মানবতার উদ্দেশ্যে গান গাইতে পারবে না? সেটা অপমান? ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে, মানবতার উদ্দেশ্যে গাওয়া গানেও অপমান? বিভাজন? ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করে? গান গাওয়া নোংরা কাজ? এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের আরাধনার জায়গায় ঈশ্বর বা আল্লা বা গডের উদ্দেশ্যে গান গাওয়া অপরাধ? একে অপরের দুশমন? তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে? এর জন্য কোনও ধর্মমত ছোটো হয়? কোন ধর্মমত বড় আর কোন ধর্মমত ছোটো? সবই তো ঈশ্বরের প্রেরিত দূতের মত, যুগ অনুযায়ী মত। এই গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো ও গান গাওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করতে হবে? প্রত্যেক সম্প্রদায়ের পালন করা ধর্মে আলাদা আলাদা ঈশ্বর আছে নাকি? প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সৃষ্টিকর্তা আলাদা আলাদা? বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,৩০০টি। তাহ'লে কি এই প্রতিটি ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা আলাদা ৪,৩০০টি সৃষ্টিকর্তা?

২) ধর্মান্তরের কথা উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গে। এককথায় সৃষ্টিকর্তার দরবারে ধর্ম্মান্তর পাপ ও অধর্মীয় অনুশীলন।

৩) কারও কারও মতে ইসলাম ধর্মে গান,বাজনা হারাম, পূজা হারাম, প্রতিমা দেখা হারাম। অথচ পুজোর মঞ্চে যারা ঈশ্বরের গান বা মানবতার গান যে গান পরিবেশন করুক না কেন তারা তো ইসলামের অনুসারী হয়েও পরোক্ষে 'হারাম' প্রশ্নের বিরোধীতায় করেছেন। তাই নয় কি?
আর, দূর্গাপুজোর মন্ডপে ইসলামী গান গাওয়ায় জে, এম, সেন হলের কমিটির বিরুদ্ধে সম্প্রীতির নাটক বাদ দিয়ে প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কথা উঠেছে। একেবারে সঠিক কথাটা সঠিক সময়ে উঠে এসেছে। কিন্তু আমার জিজ্ঞাস্য, প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মধ্যে সম্প্রীতির কথা আছে কিনা। সম্প্রীতি আলাদা আর ধর্মীয় অনুশাসন আলাদা? ধর্মীয় অনুশাসন বলতে কি বোঝায়? কিসের বার্তা পৌঁছে দেয় মানুষের মধ্যে? মানবতার বার্তা, মিলনের বার্তা নাকি অমানবিক ও বিচ্ছেদের বার্তা পৌঁছে দেয় ধর্মীয় অনুশাসন? এই প্রশ্নে কি ভেবে দেখার এখনও সময় আসেনি সনাতন ধর্মের মানুষদের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের মনে?

৪) অষ্টমী পুজোয় জে, এম, সেন হলে আগের দিনে গজল পরিবেশনের উত্তরে ভজন পরিবেশন করেছেন ইসকন। মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, গজল গান কি হিন্দু ধর্মে বা সনাতন ধর্মে নিষিদ্ধ? যদি নিষিদ্ধ হয় তবে কেন নিষিদ্ধ? কোন যুক্তিতে নিষিদ্ধ? আর, ইসকন ভজন পরিবেশন করেছেন আনন্দের কথা। ভজন বলতে ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ধারণা সহ যেকোন ভক্তিমূলক সঙ্গীতকে বোঝায়, বিশেষ করে ভারতীয় ধর্মের সঙ্গীত। ভজন শব্দের অর্থ শ্রদ্ধা। আর গজল? গজল আরব থেকে এর উৎপত্তি হলেও ফার্সি ভাষায় এটি বিশেষ বিকাশ লাভ করে। পরবর্তীতে উর্দু ভাষায় এটি সমধিক জনপ্রিয়তা পায়। আরবি, ফার্সি, পশতু, উর্দু ছাড়াও হিন্দি, পাঞ্জাবী, মারাঠি, বাংলা এমনকি ইংরেজিতেও গজল লেখা হয়। তা' গজল সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে ভজনের মতো ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ধারণা সহ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যায় না? গজল ভক্তিমূলক সঙ্গীতকে বোঝায় না?

৫) যাই হ'ক, ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রভুপাদ ও অমোঘ লীলা দাসের পরমপিতা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ এবং তাঁর প্রধান ভক্ত শ্রীশ্রীবিবেকানন্দকে যখন চরম অপমান ও অশ্রদ্ধা করেছিলেন তখন সনাতন হিন্দু ধর্মের অস্তিত্বে আঘাত লাগেনি, অপমান মনে হয়নি? তখন সনাতন ধর্মের প্রবক্তারা আজকের মতো এরকম প্রতিবাদ করেছিলেন? অথচ আজ তাঁরা ভজন পরিবেশন করছেন ব'লে আহ্লাদে একেবারে গদগদ হ'য়ে গজলের বিরোধীতা ক'রে বসছেন একশ্রেণীর সনাতনী মানুষ।
৬) আর, যখন স্বঘোষিত সনাতনীরা The greatest phenomenon, The greatest wonder of the world বিশ্বজুড়ে সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রায় ১০কোটিতে পৌঁছে যাওয়া ভক্তকূলের আরাধ্য পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে, তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে, সৎসঙ্গীদের ফেসবুকে, ইউটিউবে দিনের পর দিন অপমান লাঞ্চনা করেন ও ক'রে চলেছেন তখন সেটা অপরাধ, অন্যায় নয়? তখন সেটা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে, তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান সৎসঙ্গকে এবং কোটি কোটিকে সৎসঙ্গীকে অপমান নয়? প্রতিবাদ করেছিলেন স্বঘোষিত সনাতনীদের বিরুদ্ধে প্রকৃত সনাতনীরা? কেন এই বৈষম্য?

এবার শেষ কথা ব'লে আমার বক্তব্য শেষ করছি। এই ঘটনার পিছনে যদি কোনও দুরভিসন্ধি থাকে, যদি গভীর গোপন কোনও চক্রান্ত থাকে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অজ্ঞানতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাবার চক্রান্ত থাকে সেটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যাপার, রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যাপার।

কিন্তু যদি তা' না হ'য়ে থাকে তাহ'লে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের শিশুদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে বাসযোগ্য ক'রে যাবার জন্য যুগোপযোগী আদর্শের সংস্পর্শে ধর্মীয় আমূল সংস্কারের প্রয়োজন।
( লেখা ১৬ই অক্টোবর'২৪)

শুভ বিজয়ার দাওয়াত।

প্রকৃত ঈশ্বর প্রেমী যে সে জীবন্ত ঈশ্বরের সন্ধানে তার জীবন কাটিয়ে দেয়।

প্রকৃত ঈশ্বর প্রেমী শ্রীশ্রীরাম, শ্যাম, বুদ্ধ, যীশু, রসুল, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও অনুকূল প্রেমী।

যে ভক্ত জীবন্ত ঈশ্বরের একটা রূপের প্রেমী অন্য রূপের প্রেমী নয় সে ভন্ড, সরে যাও তার থেকে।

প্রতিটি জীবন্ত ঈশ্বরের প্রকৃত ভক্ত সৎসঙ্গী, প্রকৃত সৎসঙ্গী ।

পরম প্রেমিক জীবন্ত ঈশ্বরের যে প্রকৃত পূজারী, প্রকৃত ভক্ত সে প্রকৃত প্রেমিক, মানব প্রেমিক।

শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের 'সৎসঙ্গ' মহামিলনের প্ল্যাটফর্ম। প্রকৃত সৎসঙ্গী মহামিলনের প্রতীক।

অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম অস্তিত্বের সঙ্গী প্রকৃত সৎসঙ্গী আর তাই সে সমস্ত অস্তিত্বের সঙ্গী।

ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না, সে অজ্ঞানী, মূর্খ, মিথ্যে ও ভন্ড। দূরে থাকো 
তার থেকে। 
( লেখা ১৪ই অক্টোবর'২৪)

প্রবন্ধঃ আঠারো বছর বয়স ও আন্দোলনের উপাখ্যান।

আমি ভাবি অল্পবয়সী ছেলেদের মাথা গরম থাকে, তাই, উঠতি বয়সের রক্তের গরমে তারা উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনায় ভেসে বেড়ায়। এটা স্বাভাবিক। এটা হয় আদর্শহীন জীবনের কারণে। তা'তে হয়তো এদের রক্ত গরম করা উৎসাহ, উত্তেজনা, উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে এদের দিয়ে দাবার বোড়ের মতন সরাসরি বিপদের মুখে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আন্দোলন করিয়ে আপাতদৃষ্টিতে মুখের বদল হয়, তথাকথিত পরিবর্তন হয়, কিন্তু মুখোশ আড়ালে থেকেই যায়। ফলে অল্পবয়সী আঠারো বছর বয়সের অধিকারী জীবন যৌবন তাদের তো ক্ষতি হয়ই সঙ্গে দেশের ও দশ্রেরও ক্ষতি হয়। আর, এটা যুগ যুগ ধ'রে হ'য়ে চলেছে। এদের কাঁধের ওপর ভর দিয়েই কোনও কিছুর পরিবর্তন হয়। যা আমরা দেখেছি স্বাধীনতার সময় থেকে আজ পর্যন্ত দেশের নানা আন্দোলনে। যা আমরা দেখলাম সাম্প্রতিক বাংলাদেশের আঠারোর উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল ধ্বংসের উন্মাদনা। আমরা কি দেখলাম? কি আনলো এই আন্দোলন? সত্যিই কি কোনও পরিবর্তন হ'লো? যা ছিল তার থেকে বেটার হ'লো? শান্তিতে নোবেল পাওয়া শান্তির দূত কি শান্তি বিছিয়ে দিয়েছেন দেশ জুড়ে? তিনি কি ছাত্রছাত্রীদের চেতনায় Being & Becoming বাঁচা বাড়ার দিশা দেখাতে পেরেছে?
তিনি কি তাঁর
"A WORLD OF THREE ZEROS
THE NEW ECONOMICS of ZERO POVERTY, ZERO UNEMPLOYMENT, and ZERO NET CARBON EMISSIONS" থিয়োরী বাংলাদেশে লাগু ক'রে বাংলাদেশকে মডেল দেশে পরিণত করতে পারবেন?

আমেরিকার তো অর্থবল, জ্ঞানবল, লোকবল সব ছিল তাহ'লে আমেরিকায় জীবন কাটানো ডাঃ ইউনুসকে আমেরিকা নিজের দেশে এবং যে দেশগুলিতে উনি ZERO PROBLEM এর ভাষণ দিয়ে বেড়ান ও বিভিন্ন দেশ তাঁকে ডেকে নিয়ে যায় সেই দেশগুলি কেন নিজেদের দেশে ডাঃ ইউনুসের এই অভিনব 'A WORLD OF THREE ZEROS' থিয়োরীকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতি ঘটায় না? আমেরিকা সারা বিশ্বজুড়ে যে ছোটো ছোটো দরিদ্র দেশগুলির উন্নয়নের জন্য সেবা প্রদান করে সেই ছোটো গরীব দেশগুলিতে কেন ডাঃ ইউনুসকে পাঠিয়ে তাঁর থিয়োরী 'A WORLD OF THREE ZEROS' কাজে লাগায় না? তা না ক'রে কি দরকার ছিল ডাঃ ইউনুসের মতন একজন মহান মার্গ দর্শনকারী মহাপুরুষের এই সমস্ত নোংরা রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে জড়াবার? তাঁর থিয়োরী কি শুধুই পুস্তকের মধ্যেই পড়ে থাকবে মার্ক্সের সমাজ কো বদল ডালোর থিয়োরীর মতন? আর, পুরস্কারের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে তাঁর জীবন? মানুষের স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচাবাড়ার কাজে লাগবে না?

আজকের আঠারোর যৌবনকে ভাবতে হবে, মগডালে বসা শকুনের মতো পাকা চুলের মাথার লোকেরা ওঁত পেতে বসে থাকে আঠারোর মাথা চিবিয়ে খেয়ে নিজেদের অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আজকের যারা উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনায় ভেসে বেড়ানো স্বপ্ন ভাঙ্গার দল তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে যখন তাদের অসফল জীবনে ব্যর্থতার ঘানি টেনে চলতে চলতে আগামী দিনে বিদ্ধ্বস্ত বিক্ষুব্ধ পাকা মাথার চুলের অধিকারী হবে তখন তারা ওঁত পেতে বসে থাকবে বুড়ো শকুনের মত তখনকার উঠতি অল্পবয়সী ছেলেদের মাথা চিবিয়ে খাওয়ার জন্য, ঐ অনেকটা আমি ফাস্ট ইয়ারে র‍্যাগিং হয়েছি আমিও পরবর্তী বছরে র‍্যাগিং করবো ও ফাইনাল ইয়ারে এসে দ্বিতীয়, তৃতীয় বর্ষের ছেলেদের সিনিয়ার দাদা হিসেবে পরবর্তী সময়ে দাদাগিরির পেশাকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের হাতা, চামচা বানানোর নেশায় পিছন থেকে তাদের উসকে দিয়ে, মদদ দিয়ে র‍্যাগিং করাবো নবাগতদের। ব্যর্থ আমি, অসফল আমি, জীবনে যখন জীবনযুদ্ধে আমার পুর্বপুরুষ অর্থাৎ আমার সিনিয়ারদের দ্বারা ভুল পথে পরিচালিত হ'য়ে ব্যর্থ হয়েছি তখন আমি আমার এই ব্যর্থতার বিষ পরবর্তীর জীবনে ইঞ্জেক্ট না করা পর্যন্ত আমার এ পোড়া জীবনে শান্তি নেই, এতে যদি বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার মতন আশায় বসে থেকে থেকে শেষ জীবনে এসে এদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে আমার ভাগ্যের যদি শিকে ছেঁড়ে তা'তেই বা কম কি? এতে এরা মরলো কি বাঁচল আমার কি আসে যায়? ক্ষমতায় ব'সে একটু সুড়সুড়ি দিয়ে দিলেই হবে।

যেমন, জ্বলন্ত সাক্ষী, ডাঃ ইউনুস, যিনি বাংলাদেশের বর্তমান Pseudo student movement অর্থাৎ কপট কোটা আন্দোলনের নামে হাসিনার পতনের আন্দোলনে, আগষ্ট'২৪ সরকার পতনের আন্দোলনে কোনও অংশগ্রহণই করেননি সরাসরি, সামনাসামনি, তিনি হাসিনার দেশত্যাগের পরে হাসিনা সাম্রাজ্যের যখন পতন হয়েছিল তখন হঠাৎ আরামে বিলাসিতায় দিন কাটানো আমেরিকা থেকে উড়ে এসেই প্রধান উপদেষ্টা হ'য়ে জুড়ে বসেই আন্দোলনে রহস্যজনকভাবে মৃত ছাত্র সাঈদের বাড়িতে গিয়ে ছাত্রদের কপট আন্দোলন, হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অশ্লীল নোংরা যৌন শ্লোগান, প্রকাশ্যে হাসিনার অন্তর্বাস, সায়া নিয়ে উল্লাস প্রদর্শন, দেশজুড়ে ভাঙচুর, লুটপাট ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না ক'রে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া শান্তির দূত তিনি ছাত্রদের সুড়সুড়ি দিয়ে, উসকে দিয়ে বললেন,
"তোমরা যে এত আন্দোলন করলা তোমাদের সেলাম দেওয়ার জন্য আসলাম। মুক্ত করলে আমাদের। আজকে গেলাম আবু সাঈদের বাড়িতে। সে শুধু এখানে প্রাণ দিয়েছে তা না; আমি ওদেরকে বলতেছিলাম আমরা মহাকাব্য বলি না? মহাকাব্যের নায়ক থাকে, সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে, নায়ক নায়িকারা কি সাংঘাতিক রকমের ক্যারেক্টার, আবু সাঈদ হ'লো মহাকাব্যের ক্যারেক্টার। ভবিষ্যতে এটা নিয়ে বহু কবিতা, বহু সাহিত্য বহু কিছু রচনা হবে। সে দেখাইয়া দিয়েছে সবাইকে, চমকে দিয়েছে সবাইকে।"

আর কি করলেন, অকারণ ভারতের বিরুদ্ধে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দিয়ে দুই দেশের আঠারো বছর বয়সের মাথাকে আরও গুলিয়ে দিয়ে গরম ক'রে দিলেন।

ঠিক তেমনি, এমন বহু দৃশ্য আমরা দেখেছি দেশে দেশে সেই স্বপ্ন ব'য়ে নিয়ে ভেসে বেড়ানো আঠারোর রক্ত গরম ছেলেদের মাথা চিবিয়ে খায় ঐ পাকা চুলের মাথার বুড়ো শকুনেরা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে। আর, সাঈদেরা পড়ে থাকে যে তিমিরে সেই তিমিরেই। শুধু একটু সুড়সুড়ি দিয়ে দাও বোকা সাঈদদের। কেউ মনে রাখে না, রাখতে চায় না। নইলে ৭১ এর ইতিহাসের ভয়াবহ নৃশংসতম ৩০ লক্ষ মানুষের হত্যাকান্ড আর লক্ষ লক্ষ মা বোনেদের ওপর দানবীয় উল্লাসে বলাৎকার ও বলাৎকার শেষে নিষ্ঠুর হত্যার ইতিহাস আজকের আঠারো মনে রাখে না? কেউ রিসেট বাটন টিপে মুছে দিতে চায় সেই মর্মান্তিক ইতিহাস?????? যদি শান্তির দূত এমনটা ঘৃণ্য কাজ ও কথা বলতে পারে তাহ'লে অন্যদের বা আঠারোদের দোষ কোথায়? যদি ৭১এর নির্মম ইতিহাস মুছে দেওয়া যায় তাহ'লে সাঈদদের কে মনে রাখবে? প্রশ্ন জাগে মনে।

তাই, যারা জীবনে সফল হয়েছে, অর্থ, মান আর যশের অধিকারী হয়েছে, নানারকম পুরস্কার পেয়েছে দেশে বিদেশে, তারাও কেন এমন নোংরা খেলা খেলে? কি পায়নি তারা জীবনে? তাহ'লে তাঁরা কি প্রকৃত শিক্ষিত নন? তাঁরাও কি সব তথাকথিত লেখাপড়াজানাওয়ালা ভদ্রলোকের দল?

তারা যখন এই পথে পা বাড়ায় তখন ভাবি 'তেলের শিশি ভাঙল বলে' কবিতায় কবি অন্নদাশঙ্কর রায় আজ থেকে কত বছর আগে এই বুড়ো খোকাদের ভন্ডামিকে উদ্দেশ্য ক'রে বলেছিলেন,

তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?

ভাঙছ প্রদেশ ভাঙছ জেলা
জমিজমা ঘরবাড়ী
পাটের আড়ত্ ধানের গোলা
কারখানা আর রেলগাড়ী !
তার বেলা ?

চায়ের বাগান কয়লাখনি
কলেজ থানা আপিস-ঘর
চেয়ার টেবিল দেয়ালঘড়ি
পিয়ন পুলিশ প্রোফেসর !
তার বেলা ?

যুদ্ধ জাহাজ জঙ্গী মোটর
কামান বিমান অশ্ব উট
ভাগাভগির ভাঙাভাঙির
চলছে যেন হরির-লুট !
তার বেলা ?

তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
বাঙলা ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?

এই ভাঙ্গাগড়ার খেলা আমরা আগেও দেখেছি, সম্প্রতি বাংলাদেশে দেখলাম, আগামীতেও দেখবো। এই ভয়ঙ্কর খেলা আজও চলছে জীবনে ব্যর্থ হওয়া আর সফল হওয়া লেখাপড়াজানাওয়ালা বুড়ো শকুনের দল তথাকথিত ভদ্রলোকেদের দ্বারা আঠারোর রক্ত গরম উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনায় ভেসে চলা আদর্শহীন ছাত্র যুবকদের সরলতাপূর্ণ বেকুবীকে হাতিয়ার ক'রে তাদের কাঁচা মাথায় Pseudo-idealism অর্থাৎ ছদ্ম আদর্শবাদের তীব্র নেশার বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে। তা'তে মিথ্যে আদর্শে্র উন্মাদনায় ভেসে গিয়ে ধ্বংস হ'ক আঠারোর যৌবন, ধ্বংস হ'ক তাদের সোনার ভবিষ্যৎ, ধ্বংস হ'ক সমাজ, সভ্যতা, উন্নয়ন তা'তে আমি পাকা মাথার ব্যর্থতার জ্বালায় ক্ষতবিক্ষত হতাশাগ্রস্থ পাকা চুলে ভরা মাথার বুড়ো শকুন, আমার কিচ্ছু আসে যায় না। আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা। কিন্তু আর কতদিন ঘুমিয়ে থাকবে আঠারোর যৌবন? তারা কি কখনই জাগবে না? তারা কি সারাজীবন দাবার বোড়ে হ'য়ে কাটিয়ে দেবে? তারা কি কখনোই বেড়িয়ে আসবে না এই মরণ ফাঁদ থেকে? যুগের কি কোনওদিনই পরিবর্তন আসবে না? তাহ'লে যুগের পরিবর্তন কি মিথ্যা?

তাই আঠারোর রক্ত গরম যৌবনদের বলি, বিশেষ ক'রে আমার আঠারোর সৎসঙ্গী ভাইবোনেদের সৎসঙ্গের শ্রীশ্রীদাদার (অশোকদাদা) লেখা গানের কথা তুলে ধ'রে বলি,

"অলীক মায়ার মোহন বাঁশি বাজিয়ে ডাকে রাত্রে দিনে
ঐ ফাঁদেতে পড়িসনে মন, নে তোর পরম আপন চিনে।"
( লেখা ১৭ই অক্টোবর'২৪)

কবিতাঃ হোক মহাপ্রলয়, হোক দক্ষযজ্ঞ।

পৃথিবী তো কবেই বুঝে গেছে
যারা যখনই বদল আনবে ব'লে ডাক দেয়,
বলে, চলো পাল্টাই, হোক বদল,
বলে, বদলা নয় বদল আনি,
হোক প্রতিবাদ, হোক কলরব,
তারা সবাই দু'নম্বরী।
আর, তাদের ডাকে সাড়া দেয়
তথাকথিত ভালো ও মন্দয় মেশা দল আনাড়ির।

পৃথিবী তো কবেই বুঝে গেছে
বালখিল্য কপট আন্দোলনের স্বরূপ,
বোঝেনি ও বোঝে না যুগ যুগ ধ'রে
আবেগে ভাসমান শুধু সহজ সরল
ঘাড় ত্যাড়া বেকুব আবু সাঈদেরা।
তাদের বলদের মত মজবুত বেকুবী ঘাড়ে
পা রেখে চোখ টিপে বলে দু'নাম্বরী,
চলো সুযোগের সদব্যবহার করি।

পৃথিবী তো কবেই বুঝে গেছে
যারাই বদলের ডাক দেয়
হয় তারা দু'নম্বরী নতুবা
উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বরযুক্ত চিন্তায়
উন্মত্ত অদূরদর্শী আধা জ্ঞানীর দল।
পৃথিবী যে বুঝে গেছে 
এ কথা শুধু বোঝেনি অহংকারী
আত্মস্বার্থ-বাগানো কাপট্যবুদ্ধির দল।

তাই তো পৃথিবী নিজেই ডাক দিয়েছে,
হোক মহাপ্রলয়, হোক আরও একবার দক্ষযজ্ঞ,
নেমে আসুক ঘোর অন্ধকার, হোক শ্মশান,
আসুক নেমে বরফ যুগ, ঠান্ডা হ'ক অগ্নিগর্ভ পৃথিবী,
তারপর হোক আমূল যুগ পরিবর্তন। প্রবি।

May be an image of fire

Wednesday, October 23, 2024

কবিতাঃ চোখ খোলো, মাত্ ডরো!

আমার চারপাশে গভীর এক অরণ্য।
গভীর অরণ্যে আমি একা।
একাকী আমি ক্রন্দনরত।

গভীর অরণ্যে চারপাশের গাছপালা নড়ে উঠলো,
মাথার চুল উড়িয়ে, চোখে মুখে হাত বুলিয়ে
ব'য়ে গেল এক নরম শীতল বাতাস,
মাথা নাড়িয়ে, গা ঝেড়ে গাছেরা সমস্বরে বলে উঠলো,
এই কে তুমি?
এই জনশূন্য গহীন বনে একাকী কি করছো?
কেন, কি জন্যে কাঁদছ এই নির্জন বনে? কার জন্যে কাঁদছ?
এখানে কি ক'রে তুমি এলে? পথ হারিয়েছো?

শীতল নরম বাতাসে অবগাহণরত যেন নেশাগ্রস্ত আমি
নেয়ে উঠে নেশাতুর চোখে চকিতে কান্না থামিয়ে
ব'লে উঠলাম, সত্যি তো! কেন, কি জন্য কাঁদছি আমি?
কার জন্যে কাঁদছি? নিজের জন্যে? অন্য কারও জন্যে?
কে শুনছে আমার কান্না?

ঐ গহীন বনে নেমে এলো ক্রমশ অন্ধকার,
ঘন অন্ধকার! থেমে গেল শ্বাপদের গর্জন,
পাখির কলকাকলি, মধুর গুঞ্জন।
মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা ভেঙে ভেসে আসছে
নিঝুম রাতে একটানা ঝিঝির ডাক।
আমি নিঃসঙ্গ, নিঃস্ব, বিচ্ছিন্ন,
গভীর নির্জন অরণ্যে একা বান্ধবহীন একজন।

হঠাৎ গভীর অন্ধকার নির্জন অরণ্যে নিঝুম রাতে
তমসার পার হ'তে অচ্ছেদ্যবর্ণ
ইষ্টপ্রতীক রূপে আবির্ভূত এক মহান পুরুষ
আলোর বন্যায় ভাসিয়ে চারপাশ,
হাত বাড়িয়ে ক্রন্দনরত আমায় বললে,
ডর কিস বাত কি? ম্যায় হুঁ না? আও মেরে পাস!

ঘন অন্ধকার গভীর নিঝুম বনে আমি ভয়ে ভয়ে
কান্না ভেজা ঝাপসা চোখে দেখলাম,
এক স্ফটিক আলোয় উদ্ভাসিত চারিদিক,
আর সেখানে দন্ডায়মান দয়াল আমার
মিষ্টি মধুর হাসিতে আমার পানে চেয়ে বলছে,
ডরো মাত্! হাম হ্যাঁয় না!!

আর সেই মুহুর্তে সেই গভীর অরণ্যে
গাছপালা, পশুপাখি, পোকামাকড় সমস্ত অস্তিত্ব
অন্ধকারের বুক চিরে বেড়িয়ে এসে
সেই স্ফটিক আলোর আবর্তে আমায় ঘিরে
নাচতে নাচতে সমস্বরে গান গেয়ে বলতে লাগলো,
মাভৈ বন্ধু, মাভৈ! চোখ খোলো,
খোলো চোখ, দ্যাখো সামনে স্ফটিক আলো!!
ডরো মাত্, ডরো মাত্, মাত্ ডরো!


Sunday, October 20, 2024

স্বাগতম! সব কিছুই স্বাগতম!!

"করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আসুন একনজরে দেখে নিই দুর্গাপুজোর আয়োজন সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অংশ।

:- রাজ্যের সব পুজো মণ্ডপকে 'নো এন্ট্রি' জোন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
:- প্রতিটি মণ্ডপের বাইরে ব্যারিকেড দিতে হবে। কোনও মণ্ডপের ক্ষেত্রে পাঁচ মিটার দূরে ব্যারিকেড করতে হবে। কোনও মণ্ডপের ক্ষেত্রে সেই ব্যারিকেডের দূরত্ব হবে ১০ মিটার।

:- করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মণ্ডপে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। মণ্ডপে শুধুমাত্র পুজো কমিটির সদস্যরা ঢুকতে পারবেন। 'ছোটো মণ্ডপে ১৫ জন সদস্যকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ ২৫।"

এই সিদ্ধান্ত আগে জানালেই তো পারতো আদালত! তখন ক্লাব কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ এবং জনগণ সর্বোপরি সরকার আদালতের রায় নিয়ে পর্যালোচনা করতো! জনগণ মানসিকভাবে তৈরি হ'তো। সিদ্ধান্ত নিত! আদালতও লেট লতিফ!? পুজো মণ্ডপ সেজে উঠেছে, মুখমন্ত্রী ৫০হাজার টাকা ক'রে প্রতি (?) ক্লাবকে দিয়েছেন তারপরে আদালতের টনক নড়লো!? এর নাম আদালত!? যাক আদালতের নির্দেশ মেনে চলাটাই জনগণের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য! তবে এই পোড়া বাংলায় বাংলার পোড়া মুখ দেখতে অভ্যস্ত মানুষ দেখা যাক কি করে, কেমন মেনে চলে আদালতের রায়! পুরীর রথযাত্রা নিয়ে আদালত রথযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর কেমন পরবর্তীতে আদালত ডিগবাজি খেয়েছিল তা গোটা ভারত তথা বিশ্ব দেখেছে! পুরীর ক্ষেত্রে এক রায় আর ভারতের অন্য অঞ্চলের রথযাত্রা নিয়ে আর একরকম রায় অর্থাৎ নিষেধের রায় মানুষ দেখেছে! তাও আবার শীর্ষ আদালত! আদালতকে কে শেখাবে!?

তাই আদালতের রায়কেও এখন আর জনগণ তেমন ভয় পায় না বা তেমন আমল দেয় না! যদি তার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্কের গন্ধ থাকে তাহলে তো হয়েই গেল; সবটাই অরণ্যের রোদনে পরিণত হয়; কারণ রাজত্ব জঙ্গলের!!!! কবে আমরা আর ম্যাচিউর হবো!? কে আমাদের অভিভাবক হবে রাজ্যে, দেশে!? জনগণের কথা বাদ দিলাম কিন্তু জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক শীর্ষ কর্মকর্তা, মন্ত্রী, রাজ্যের প্রধান, রাজ্যের গুণী সম্প্রদায় সবাই ভাঙাচোরা!? গোটা মানুষ একটাও নেই দেশে!? রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্তম্ভ আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যমের কোথাও একটা গোটা মানুষ নেই!? সব, সবাই ভাঙাচোরা!? এমনকি ধর্মজগতেও!? তাই ব'লে লাভ নেই কোনো। 
অতএব স্বাগতম! সবকিছুই স্বাগতম!!!!
( লেখা ২০শে অক্টোবর' ২০২০)

উপলব্ধিঃ "বহুরূপে সম্মুখে তোমার

"বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছো ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর!!"

মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর একথা ঠিক কিন্তু এতবার ঈশ্বর স্বয়ং মানুষ রূপে এলেন তাও আমরা মানবতাবাদীরা ঈশ্বরকে খুঁজে পেলাম না!!!!!!?

আসলে এগুলি সস্তা উদারতার ভঙ্গি নিয়ে বলা কথা। ওইসব মানবতাটতা কথা ভিত্তিহীন কথা, সস্তা সুড়সুড়ি মার্কা কথা। নিজেকে বড় ক'রে দেখাবার কৌশলী চাল। প্রকৃত মানবতার খোঁজ যে করবে সে মুখে মানবতার কচকচানি করবে না; খুঁজে যাবে নীরবে নিভৃতে আর সে তখন জীবন্ত ঈশ্বরকে খুঁজে পাবেই পাবে! এ একেবারে সত্য! সত্য!! সত্য!!! তিন সত্য! মানবতার যিনি জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি হ'লেন এক ও একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর! তাঁর স্পর্শে, তাঁর সংস্পর্শে মানুষের অন্তরে মানবতা জেগে ওঠে আর তখনি ঐ উপরে উল্লেখিত বিবেকানন্দের বাণী উপলব্ধ হয়। আর যার তার মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়া যায় না! ঈশ্বর সবার মধ্যে আছেন, বুকের মাঝে আছেন এ কথা সত্য কিনা জানি না, জানার ইচ্ছেও নেই তবে একথা জানি, দৃঢ়ভাবে জানি ঈশ্বর স্বয়ং মানুষ রূপে মানুষের মাঝে মানুষের জন্য নেবে আসেন, বারেবারে আসেন!!!!!!!! আর ঐ জীবন্ত ঈশ্বরের চরণ আশ্রিত প্রাণ যখন তাঁর চলনকে আশ্রয় ক'রে জীবনে এগিয়ে চলে তখনি তার অর্থাৎ সেই চরণ ও চলন আশ্রিত প্রাণের বুকের মাঝে শুরু হয় মানবতার চাষ! মানবিক গুণগুলি তখন আত্মপ্রকাশ করে চলনে-বলনে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে। তখন সে হ'য়ে ওঠে প্রকৃত মানবতাবাদী! নতুবা সবটাই কথার চুলকানি! যে ভয়ঙ্কর চুলকানি রোগে ভুগছে পৃথিবী!!!!!! আর এ চুলকানি সারার নয়।
( ২০শে অক্টোবর' ২০২০)

প্রশ্ন জাগেঃ দুষ্কৃতিকারীর দৌরাত্ম্য!

বাংলাদেশে যারা হিন্দু ধর্ম্মের উপর আঘাত করলো তাদের একটাই পরিচয়; তারা দুষ্কৃতিকারী। প্রশ্ন জাগে, মুষ্ঠিমেয় দুষ্কৃতিকারী বজ্জাত বেজাতের দল কি ক'রে এত শক্তিশালী হয়!? সব সম্প্রদায়ে এরা তো সংখ্যালঘু!? নাকি!? তাহ'লে এদের এত শক্তি, এত সাহস, এত পরাক্রম কি ক'রে সম্ভব!? প্রকাশ্যে এই মুষ্ঠিমেয়র দল দেশের অভ্যন্তরে কি ক'রে ইসলামের নামে সভ্যতা বিরোধী, ধর্ম বিরোধী, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিরোধী, ঈশ্বর ও ঈশ্বরের বিধান বিরোধী মৃত্যু উপত্যকা বানাবার প্রক্রিয়া চালু করে!? কে বা কারা এদের মদতদাতা!? তাহ'লে কি ধ'রে নিতে হবে সংখ্যাগুরুরাই এদের পিছনে আত্মগোপন ক'রে থাকে!? আর প্রশাসন এই সংখ্যালঘুদের পৃষ্টপোষক!? তাহ'লে সব সম্প্রদায়ের আম আদমীর কোনও মূল্য নেই!? আম আদমী ভেড়ার পালের মত কিম্বা বলীর পাঁঠার মত!? পেছনে লাঠি উঁচিয়ে হ্যাট হ্যাট ক'রে যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই যাবার মত!? কেন!? কেন!? কেন!?

কারণ, কোরাণ বা গীতা বা বাইবেল ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা তামাম সাধারণ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটা পবিত্র 'বই' মাত্র! বই পড়ে বইয়ের মর্ম্মবাণী বুঝে তা পালন করার জন্য নয়, নয় চরিত্রগত ক'রে তোলার! শুধু সাজিয়ে গুছিয়ে ধূপ ধুনো দিয়ে কুলুঙ্গির গহ্বরে রেখে দাও! ব্যাস! এর বাইরে আর কিছুই নয়।

তাই আজ আমাদের, সব সম্প্রদায়ের ধর্মভীরু ভাঙাচোরা মূর্খ মানুষ জাতের দুষ্কৃতিকারীর দৌরাত্মে নির্ম্মম করুণ শোচনীয় অবস্থা।
( লেখা ২০শে অক্টোবর' ২০২১)

প্রবন্ধঃ তথাস্তু! তবে তাই-ই হ'ক!!

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হিন্দুধর্মের উপর আক্রমণের ঘটনায় আবার মানবতাবাদীরা ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছে, উঠছে! ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেই কুম্ভকর্ণের মত নেবে পড়েছে টলতে টলতে মানবতাকে রক্ষা করতে; নেবে পড়েছে মানবতা লাঞ্ছিত, ধর্ষিত হওয়ার পর! এই কুম্ভকর্ণ রূপী তথাকথিত মানবতাবাদীদের ঘুম ভাঙাবার জন্য ঢাক ঢোল নানা বাদ্যযন্ত্রের মত সাম্প্রদায়িক নৃশংস ঘৃণ্য ঘটনা ঘটার দরকার হয়; নইলে এদের ঘুম ভাঙ্গে না। ঘটনা ঘটার আগে এদের জেগে থাকার প্রয়োজন পড়ে না! আর ঘটনা ঘটার পর জেগে উঠে এলোমেলো টলোমলো পায়ে আন্দাগুন্দা বালখিল্য হৈ হৈ করার পর আবার কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মানবতাবাদীদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য ১৩ই অক্টোবর'২১ বাংলাদেশের কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় দুর্গামন্ডপ সহ বিভিন্ন মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, ধর্ষণ ইত্যাদির মত ঘটনা ঘটার দরকার হয়। নইলে এদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়। মিডিয়াও এদের খুঁজে পায় না নিজেদের চ্যানেলকে সচল রাখার জন্য সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের নামে গোয়ালঘর বানাবার জন্য।
এই তথাকথিত মানবতাবাদীরা নিজেদের উৎকৃষ্ট জাতের মানুষ প্রজাতি মনে করে। এরা বুক ফুলিয়ে হাটে মাটে ঘাটে কাগজে কলমে নেটে জাহির করে যে এরা ধর্ম মানে না, মানে না এরা ঈশ্বর। এরা মানুষ, তাই এরা মানে একমাত্র মানুষ আর মানে মানবতা। প্রেম, ভালোবাসা এদের মূল মন্ত্র। অথচ এদের ঘরেই নানা উপাচারে বারো মাসে তের ধর্মীয় পার্বণ হয়! এদের ঘরের মায়েরা ছেলেমেয়েরা এমনকি নিজেরাও নানান আংটি, মাদুলী, তাবিজ, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, লাল সুতো, কালো সুতো নির্ভর জীবনের অধিকারী! এরা এমনই মানসিক শক্তিশালী!!

এইসমস্ত তথাকথিত মানবতাবাদীরা এমনই মানবতা প্রেমী যে এরা অন্য দেশে মানবতার হত্যা হ'লে এরা সঙ্গে সঙ্গে নিজের দেশে নিরাপত্তাহীনতার ধুয়ো তুলে 'আমরা নিরাপদ নই, নিরাপদ নই' ব'লে চিল চীৎকার ক'রে মায়া কান্না জুড়ে দেয়। এদের ভয় হয় এরা যে উদারতার ভঙ্গি নিয়ে মানবতার আলখাল্লা জড়িয়ে নিশ্চিন্তে ভাত ঘুম ঘুমায় সেই নিশ্চিন্ত ভাত ঘুম বুঝি বিঘ্ন হ'লো। আর তখনই এরা নিজের দেশে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে অকারণে অন্য দেশের সাম্প্রদায়িক ঘটনার অছিলায় হৈ হৈ রৈ রৈ ক'রে বোমা ফাটাতে শুরু ক'রে দেয়।

এরা না হিন্দু, না মুসলমান, না খ্রিষ্টান, না বৌদ্ধ ইত্যাদি! এরা কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মানুষ নয়! এরা মানুষ! এরা মানবতাবাদী!! মানবতা এদের ধর্ম!!! এরা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ইত্যাদি সমস্ত ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মানুষ মাত্রেই সবাইকে ভালোবাসে! করে প্রেম!
এরা এইসমস্ত লোক দেখানো মানবতাবাদীরা ঈশ্বর বিশ্বাস করে না, পুজো মানে না, প্রসাদ খায় না, ধর্মের নিয়ম মানে না। এরা এইসব ঈশ্বর ও ধর্ম সংক্রান্ত বিষয় কিছুই মানে না। এরা মানবতার পূজারী। মানবতা এদের ধর্ম। থুরি! পুজা ও পুজারী এবং ধর্ম শব্দেও এদের গাত্রদাহ হয়। তাই এরা পূজারী নয় এরা মানবতাবাদী! ধর্ম নয়, মানবতা এদের জীবন।

এরা গোড়া কেটে আগায় জল দেবার মত উদারতার ভঙ্গি নিয়ে থাকা আজব জীব! এরা ধর্মের নামে চারপাশে যেসব অধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ চলছে, ঈশ্বরের নামে যেসব শয়তানি কার্যকলাপ চলছে, ধর্মের নামে যেসব ব্যবসা চলছে, ঈশ্বরের নামে ঈশ্বর সেজে বসার প্রতারণা চলছে, উদ্ভট ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের রবরবা চলছে, চলছে নোংরা ঘৃণ্য রাজনীতি। সেইসমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে এরা লড়াইয়ের নামে একেবারে গোড়া কেটে আগায় জল ঢালার মত এরা ধর্ম ও ঈশ্বরের অস্তিত্বকেই উপড়ে ফেলতে চায়; যেমন ফেলতে চেয়েছিল কমিউনিস্টরা। আর ধর্ম ব্যবসায়ী ও ঈশ্বর সাজা ভন্ড ঈশ্বর তাদের কাজ চালিয়ে যায় মূলত এদের সহযোগীতায়।

এরা মাঠে ময়দানে, পথেঘাটে, স্কুল-কলেজ ও নানা প্রতিষ্ঠানে, কাগজে কলমে মিডিয়ায় বর্তমানে ফেসবুকে মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে কাগুজে বাঘ সেজে বিপ্লব করা এমন সাচ্চা মানবতাবাদী ভড়ং করে যে মনে হয় এরা ঘরে বাইরে, আপনপর সকলের সঙ্গে মানবতাপূর্ণ মিষ্টি ভদ্র আচরণ করে! আর তাই এরা এক একজন আমাদের মত ঈশ্বর বিশ্বাসীদের কাছে জীবন্ত ঈশ্বর! মনে হয়, এরা কোনওদিন কোনও অন্যায় অন্যায্য আচরণ করেনি কারও সাথে! এরা সবাই এমন মাতৃভক্ত, পিতৃভক্ত যে স্বয়ং ঈশ্বর এদের মাতৃভক্তি, পিতৃভক্তি দেখে পায়ে মাথা নত ক'রে এদের পুজো করে! এরা এমন পরিবার প্রেমী মানুষ যে এদের পরিবারের লোকজনের কাছে এরা এক একজন জীবন্ত মহান আদর্শ! এদের সকলের ঘরে কোনও অমানবিক আচরণ হয় না! এরা সবাইকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধ'রে এমন কান্না কাঁদে যে, প্রেমের বন্যায় ভাসিয়ে দেয় যে ভালোবাসার, প্রেমের ফ্লাড হ'য়ে যায়। এদের প্রত্যেকের ঘর এক একটা স্বর্গ! আর এদের পরিবারের সদস্যরা এদের স্বর্গোদ্যানে এক একজন দেবদেবী কিম্বা এক একটা ঈশ্বরের পূজার ফুল! এরা এমন ভালোমানুষ যে এরা কোনওদিনই কারও কোনও নিন্দা, কুৎসা, সমালোচনা করেনি, করেনি অপমান, অশ্রদ্ধা কাউকে! প্রাণে ব্যথা লাগে এমন রূঢ় কথা, আচরণ এরা কোনওদিন বাস্তবে তো দূরের কথা স্বপ্নেও কোনদিন কাউকে বলেনি, করেনি। কারণ পৃথিবী জুড়ে মানুষের দুঃখে কষ্টে ব্যাথায় এদের বুকের বরফ গলে একেবারে চোখের জল রূপে ঝর্ণা হ'য়ে ঝরে পড়ে! ঈশ্বর ব'লে যদি কিছু ধারণা ও অস্তিত্ব থাকে তাহ'লে এই মানবতাবাদীরাই একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর আর ধর্ম ব'লে যদি কিছু থেকে থাকে তাহ'লে এদের ক্রিয়াকলাপই এক ও একমাত্র ধর্ম! বাকী সব ধর্ম্ম, বলা ভালো ধর্ম্মমত বকোয়াস, ফালতু, অবৈজ্ঞানিক!
আর ঈশ্বরবিশ্বাসীদের কাছে জীবন্ত ঈশ্বর রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এদের কাছে, গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়া এই মানবতাবাদীদের কাছে, অধর্মের নামে ধর্মের মূলে আঘাত করা তথাকথিত মানবতাবাদীদের কাছে ধর্ম্ম ব্যবসায়ী গন্ধা নালী কা কিড়া!!!!

এদের এইসব দেখেশুনে বলতে ইচ্ছে করে, তথাস্তু! তবে তাই-ই হ'ক!! ( লেখা ২০শে অক্টোবর' ২০২১)

Friday, October 18, 2024

বিচিত্রা ৩১

হে আজকের শবরী!
রাম ভেবে রাবণের অপেক্ষায় দিন নষ্ট ক'রো না। 
জীবন ছোট, ভুল ক'রে রাবণকে আলিঙ্গন ক'রে ব'সো না।
আমি শবরী হ'তে রাজী।
রাখো বাজি, এক ডুবে হব আমি পার; আমি কাটবো সাঁতার।
যদি সে হয় রাম অবতার!!!!!
তুমি না'হয় হ'য়ে রইলে শবরী ;
চেয়ে রইলে পথপানে অনন্তকাল সে আসবে ব'লে।
কিন্তু তুমি শবরী, 
অন্তরে ও বাহিরে শবরী হয়ে যদি থাকো চিরকাল
তবে যেনো একদিন সে আসবে, আসবেই আসবে
যদি হয় সে রাম।
( লেখা ১৮ই অক্টোবর। ২০১৭)

উপলব্ধিঃ বিশেষজ্ঞদের মতামত।

প্রতিনিয়ত ঘরে বাইরে, দেশে বিদেশে নানা বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞের নতুন নতুন মতামত উঠে আসছে। এ নিয়ে পক্ষ প্রতিপক্ষের বাদ বিসংবাদ লেগেই আছে। বিশেষ কোনও বিষয়ের ওপর আপনার বিশেষ ভাবনা যদি ছড়িয়ে দিতে চান সবার মাঝে তাহ'লে আপনাকে সেই বিষয়ের অনেক গভীরে যেতে হবে। অনেক ধীর, স্থির, শান্ত, সংযত হ'য়ে ধৈর্য সহকারে সহ্য শক্তি নিয়ে সেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কিত জটিল স্পর্শকাতর বিষয়ে আপনাকে অগ্রসর হতে হবে। প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে বিষয়ের ওপর। সংশ্লেষন ও বিশ্লেষনের মধ্যে দিয়ে বিষয়ের একেবারে গভীরে পৌঁছে তবেই সমাধানের মুক্তো তুলে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রগতি যেন দুর্গতিকে ডেকে না আনে। মনে রাখতে হবে আপনার কোনো চিরাচরিত প্রচলিত বস্তু বা বিষয়ের ওপর বৈপ্লবিক ভাবনার অনিচ্ছাকৃত অসম্পূর্ণতা যেন আপনার মতের বিরোধীদের অহেতুক সুযোগ ক'রে না দেয় আপনার সদিচ্ছাকে খতম করতে। আমি আপনার নতুন কোন বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতের মানসিকতার সঙ্গে সহমত পোষণ করি কিন্তু আমি চাই সেই বিষয়ের ওপর প্রচুর যুক্তিপূর্ণ আলাপ আলোচনা বিতর্ক হোক এবং অবশ্যই তা লক্ষ্যে পৌঁছোবার মানসিকতা নিয়েই হোক। অহেতুক ইগোর লড়াই যেন উদ্দেশ্যকে ব্যহত না করে।।
( লেখা ১৮ই অক্টোবর'২০১৪)

Tuesday, October 15, 2024

প্রবন্ধঃ আমরা কি মানুষ?

মানুষ শব্দের অর্থ আমরা কেউ জানি না। আর জানলেও জানি মান ও হুঁশ সম্বলিত যে উন্নত জীব সেই মানুষ। আরও প্রাঞ্জল ক'রে বললে বলতে হয় যার মান আছে ও মান সম্বন্ধে হুঁশ আছে সেই মানুষ। আর মান বলতে সম্মান বা মান-অপমান বুঝি। মান-অপমান বোধ বুঝি। আর এই বোধ সম্পর্কে আমার হুঁশ আছে কিনা তা বুঝি। কেউ কেউ এরও গভীরে যান। মান মানে ওজন, আমার যোগ্যতা, আমার মাত্রা জ্ঞান বা বিরতি সম্পর্কে জ্ঞান। আর সেই জ্ঞান সম্পর্কে হুঁশ। এর বেশি কিছু না। আর অর্থ জানলেও জানা অর্থ অনুযায়ী আমার জীবন পরিচালিত হয় না। হ'লেও সেই ভারসাম্য নেই।

এছাড়া শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীঠাকুরের আলোকে আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিলেন মানুষ শব্দের। তিনি বললেন, মান মানে অস্তিত্ব, Existence আর সেই অস্তিত্ব সম্পর্কে যার হুঁশ আছে সেই মানুষ। এই অর্থে আমরা যারা নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে বেহুঁশ অর্থাৎ জ্ঞানহীন, অসতর্ক, অচৈতন্য তারা মনুষ্যাকৃতি হ'লেও আমরা মানুষ অর্থে মানুষ ন'ই। আমরা জীব অর্থাৎ জীবন আছে এমন প্রাণী। তাই বোধহয় বলা হ'য়ে থাকে আমরা জীবকোটি। জীবকোটি মানে বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা রিপুতাড়িত প্রাণ বা জীবাত্মা। অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকা ষড়রিপুর প্রবল টানে বিশৃঙ্খল উচ্ছৃঙ্খল আমার বেসামাল অচৈতন্য প্রাণ। তাই বলা হয় আমি ও আমার মতো যারা জীবকোটি। আমরা মনুষ্যাকৃতি কিন্তু মানুষ ন'ই। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছিলেন,
"বৃত্তি-আঠায় লেপটে থাকে
ছোট্ট হৃদয় খান,
জীবকোটি তুই তা'রেই জানিস
অজানাতেই স্থান।"
আর, এইজন্যই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র পূর্বরূপে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ রূপে এসে কাশীপুরের উদ্যানবাটিতে চিকিৎসার প্রয়োজনে গাছপালায় ঘেরা ১১ বিঘের বাগানবাড়ির নিরালা পরিবেশে শরীর সারিয়ে নেওয়ার জন্য যখন এসে উঠেছিলেন সেখানে ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি কিছুটা সুস্থ বোধ করায় সেদিন বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তিনি অর্থাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণদেব। সেদিন তাঁর কয়েকজন ভক্ত ছাড়া বিশেষ কেউ সঙ্গে ছিল না। তাঁর অন্যতম ভক্ত মহান নাট্যকার ও অভিনেতা শ্রীগিরিশ চন্দ্র ঘোষ সেদিন ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে। সেদিন শরীর ভালো বোধ করায় বাগানে বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর ভক্তপ্রাণ নাট্যকার শ্রী গিরিশ চন্দ্র ঘোষকে বলেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ গো, তুমি যে আমার সম্পর্কে এত কিছু বলে বেড়াও, আমাকে তুমি কী বুঝেছো?’ আচম্বিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের এমন অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে নাট্যকার অভিনেতা প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ভক্তপ্রাণ গিরিশচন্দ্র ঘোষ থতমত খেয়ে অকপট কন্ঠে বললেন, “তুমি আর কেউ নও, নররূপধারী পূর্ণব্রহ্ম ভগবান। আমার মত পাপীতাপীদের মুক্তির জন্য নেমে এসেছ।” এ কথায় পুরুষোত্তম পরমপিতা সদগুরু জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমভক্ত শ্রদ্ধেয় শ্রী গিরিশচন্দ্র ঘোষের দিকে স্নেহময় ভালোবাসাময় চোখে তাকিয়ে মৃদু হেসে তাঁকে লক্ষ্য ক'রে অচৈতন্য মনুষ্যাকৃতি জীবেদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "আমি আর তোমাদের কি বলবো। তোমাদের চৈতন্য হ'ক।" এই কথা বলার পরেই শ্রীশ্রীঠাকুর সমাধিস্থ হন।
তাই এবারে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করবার জন্য এসে নানাভাবে হাজার হাজার বাণীর মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর পূর্বজন্মে ব'লে যাওয়া কথা "পূর্ণজ্ঞান দিলাম না, খুব শিগগিরই আসছি" তাঁর কথা রেখে গেলেন। তাঁর পুনরায় আসার অনেক কারণের মধ্যে একটা কারণ, অনেক অসম্পূর্ণ না ব'লে যাওয়া কথার মধ্যে অন্যতম একটা কথা "তোমাদের চৈতন্য হ'ক" অর্থ তিনি এবার এসে স্পষ্ট ক'রে দিয়ে গেলেন। তাঁর পূর্বরূপের কথা "তোমাদের চৈতন্য হ'ক" কথার অর্থ এবারে এসে প্রাঞ্জল ভাষায় আমাদের জীবকোটি থেকে ঈশ্বরকোটিতে রূপান্তরের কথায় ব'লে গেলেন তাঁর নানা বাণী ও হাজারো কথোপকথনের মাধ্যমে। অর্থাৎ আমরা যখন তাঁর সৃষ্টির সর্ব্বশ্রষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ তখন প্রকৃত মানুষ অর্থেই আকৃতি ও প্রকৃতিতে প্রকৃত মানুষ হওয়ার কথা বলে গেলেন এবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। 
ঈশ্বরকোটি মানুষ সম্পর্কে তিনি বললেন,

"প্রেষ্ঠনেশার অটুট টানে
বৃত্তি-সমাহার,
ঈশ্বরকোটি তাঁ'কেই জানিস্
শ্রেষ্ঠ জনম তাঁ'র।"

যাই হ'ক, এই ব্যাখ্যার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হ'য়ে যায় আমরা মনুষ্যাকৃতি জীবেরা ঠিক কোথায় অবস্থান করছি। এবার আমরা যারা জীবকোটি তাদের অবশ্যই লজ্জা হওয়া উচিত নিজেদের মানুষ বলা। হয়তো একথায় অনেকে বলতে পারে এতে লজ্জার কি আছে মশায়? ঠিক কথা জীবকোটির মধ্যেও অনেকেই আছে যারা নির্লজ্জ ও লজ্জাশীল-লজ্জাশীলা জীব। লজ্জা তাদের থাকার কথা নয় যাদের দু'কান কাটা ও গ্রামের মাঝখান দিয়ে হাঁটে। লজ্জা তাদের পাওয়া উচিত নয় যারা লেখাপড়া জানাওয়ালা জীব। লজ্জা তাদের লাগে না যাদের বোধের ঘর শূন্য। কোনও কিছুর মূল্য সম্পর্কে এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে যাদের কোনও ধারণাই নেই তাদের লজ্জা লাগার কথা নয়। লজ্জা তাদের গায়ে লাগে না যাদের গায়ের চামড়া ও চোখের চামড়া মোটা। লজ্জা তাদের জন্য নয় যারা অহংকারী ও সর্বজ্ঞ মনোভাবের। লজ্জা তাদের লাগে না যারা রিপুজারিত।

যাই হ'ক, মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটে এই ঈশ্বরকোটির দ্বারা অর্থাৎ মানুষের দ্বারা। আর বিনাশ হয় জীবকোটির দ্বারা অর্থাৎ মনুষ্যাকৃতি জীবেদের দ্বারা।

সৃষ্টিকর্তা যাকে আমরা ঈশ্বর, আল্লা, গড ইত্যাদি বলি সেই তিনি জীবন্ত ঈশ্বর, জীবন্ত আল্লা, জীবন্ত গড হ'য়ে নেমে আসা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মানুষ রূপে নেমে এসেছিলেন আমাদের জীবকোটি থেকে ঈশ্বরকোটিতে রূপান্তর ক'রে তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য। আমরা জীবকোটিরা, স্বঘোষিত সর্ব্বজ্ঞদের দ্বারা নানা মতবাদে বিভক্ত অনুসারী জীবেরা সৃষ্টিকর্তার বারবার আগমনকে অস্বীকার ক'রে, কিংবা তাঁর সাকার রূপের কপট অনুগামীরা, তাঁর নিরাকার রূপের পুজারীরা, কিংবা তাঁর অমূর্ত রূপের পুজারীরা তাঁকে ও তাঁর বলে যাওয়া কথাকে অমান্য ক'রে, তাঁর সঙ্গে বেইমানি ও নেমকহারামী ক'রে তাঁকে বাধা দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছি এবং নিজেদের সত্ত্বা অস্তিত্বের প্রগতিকে করেছি ক্ষুণ্ণ, করেছি অতি প্রগতির নামে দুর্গতিকে আমন্ত্রণ। ফলে জীবকোটি থেকে ঈশ্বরকোটিতে হয়নি রূপান্তর।

আর এই দশা বর্তমানে সৎসঙ্গীদেরও।

তাই তিনি আমৃত্যু কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে জনে জনে ব'লে গেছিলেন, "আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও, আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও।" তিনি উদাত্ত কন্ঠে বললেন,

‘‘ওগো ভিক্ষা দাও!--
ঝাঁঝাল ঝঞ্ঝার পিশাচী জৃম্ভন শুরু হয়েছে,
বাতুল ঘুর্ণি বেভুল স্বার্থে
কলঙ্ক কুটিল ব্যবচ্ছেদ
সৃষ্টি করতে আরম্ভ করে দিয়েছে,
প্রেত-কবন্ধ-কলুষ
কৃষ্টিকে বেতাল আক্রমণে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে,
অবদলিত কৃষ্টি অজচ্ছল অশ্রুপাতে
ভিক্ষুকের মতো তাঁরই সন্তানের দ্বারে
নিরর্থক রোদনে রুদ্যমান,
অলক্ষ্মী-অবশ প্রবৃত্তি-শাসিত বেদস্মৃতি--
ঐ দেখ--মর্মান্তিকভাবে নিষ্পেষিত,
ত্রস্ত দোধুক্ষিত দেবতা আজ নতজানু--তোমাদেরই দ্বারে
তোমাদেরই প্রাণের জন্য তোমাদেরই প্রাণভিক্ষায়
তোমাদেরই সত্তার সম্বর্দ্ধনার জন্য
ব্যাকুল হয়ে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়াচ্ছেন ;
কে আছ এমন দরদী আর্য্য-আত্মজ সন্তান!--
তাঁকে মানুষ ভিক্ষা দেবে, তাঁকে অর্থ ভিক্ষা দেবে—
সব হৃদয়ের সবটুকু উত্সর্গ করে
তোমাদেরই জন্য
সেই দেবোজ্জল প্রচেষ্টাকে সার্থক করে তুলতে ?
যদি থাক কেউ
ওগো ধী-ধুরন্ধর উত্সর্গপ্রাণ
নিরাশী নির্ম্মম!
এস,--উৎসর্গ কর--আত্মাহুতি দাও--
জীবন নিঙড়ানো যা-কিছু সঙ্গতি
তাঁকে দিয়ে সার্থক হয়ে ওঠ,
নিজেকে বাঁচাও, মানুষকে বাঁচাও, কৃষ্টিকে বাঁচাও ;
আর, বাঁচাও দুর্দ্দশাদলিত মহা-ঐশ্বর্য্যশালিনী
আর্য্যস্তন্যদায়িনী, পরম-পবিত্রা
ভিখারিণী মাতা ভারতবর্ষকে,
ধন্য হও, নন্দিত হও,
ঈশ্বরের অজচ্ছল আশীর্ব্বাদকে
মাথা পেতে লও,
শান্ত হও, শান্তি দাও,
অস্তি ও অভ্যুত্থানকে
অনন্তের পথে অবাধ করে রাখ ;
স্বস্তি! স্বস্তি!! স্বস্তি!!"

আজ থেকে ৭৭বছর আগে শ্রীশ্রীঠাকুর ১৯৪৬ খ্রীস্টাব্দের প্রথমদিকে হিমাইতপুরে নিজহস্তে লিপিবদ্ধ করেন এই ‘দেবভিক্ষা’ বাণীটিকে। আজও সেই রাজভিখারি শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মানুষ ভিক্ষার ট্রাডিশান আচার্য পরম্পরার মাধ্যমে বর্তমান ঈশ্বরকোটি পুরুষ আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে দিয়ে ধ্বনিত হ'য়ে চলেছে সমানে।
আমরা সৎসঙ্গীরা কি শ্রীশ্রীআচার্যদেবের আহবানে তাঁকে নিজেকে 'মানুষ' রূপে ভিক্ষা দিতে পারি?
( লেখা ১৬ই অক্টোবর'২০২৩)

Sunday, October 13, 2024

গানঃ হে দয়াল! হে দয়াল!

হে দয়াল! হে দয়াল!
জগত জুড়ে তুমিই ভয়াল!
হে দয়াল! হে দয়াল!

তুমি পরমপিতা, তুমিই পরমমাতা;
তুমিই তো পরমদয়াল।
হে দয়াল! হে দয়াল!

তুমি জগৎপিতা, তুমি বিশ্বপিতা;
তুমিই তো জীবের খেয়াল।
হে দয়াল! হে দয়াল!

তুমি সৃষ্টিকর্তা, তুমি পালনকর্তা;
তুমিই তো বিনাশকাল।
হে দয়াল! হে দয়াল!

তুমি অন্তর্যামী, তুমি সর্ব্বজ্ঞস্বামী;
তুমিই তো সুর লয় তাল।
হে দয়াল! হে দয়াল!

তুমি মহাকাল, তুমি কালরাত্রী;
তুমিই তো সন্ধ্যাসকাল।
হে দয়াল! হে দয়াল!

গানঃ আমি দয়ালের মুখ চেয়ে

আমি দয়ালের মুখ চেয়ে, চলেছি আলোর পথে ধেয়ে
বলি, আয় ছুটে আয় বাপ, তোরা আমার সাথে থাক।
আমি সৎসঙ্গী দিবানিশি, দয়ালের সাথে আমি মিশি
দেবো দয়াল ধামে পাড়ি, ঐখানেতে আমার বাড়ি।
ঐখানেতে আমার বাড়ি।

যত ঝগড়াঝাটি ভুলে, মান অভিমান দূরে ফেলে
চল যাই, ছুটে চলে যাই, দয়াল প্রভুর ধামে যাই।
চল যাই, ছুটে চলে যাই, দয়াল প্রভুর ধামে যাই।

আমি দয়ালের গান গাই, আমার অন্য আর কিছুই নাই
দু'হাত বাড়িয়ে তাই, বলি আমার বুকে আয় ভাই।
যদি বিরোধীতাও থাকে, ভালো না লাগে আমাকে
তবুও তার বিপদে থাকি, প্রাণ ভরে পরমপিতাকে ডাকি
তাকে বন্ধু বলেই ভাবি।

বলি, আমার কথা বন্ধু মানো, দয়ালের ঐ ডাক শোনো
আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও, আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও।
আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও, আমায় মানুষ ভিক্ষা দাও।

আমি দয়ালের কথা লিখছি, আমি দয়ালের কথা বলছি,
প্রভু দয়াল আমার জন্য, আমি তার প্রেমে যে বন্য।
আমি দয়ালের পথে চলছি, দয়ালের সুরে সুর তুলছি
আমি দয়ালের গান গাইছি, আমি দয়ালের কথা বলছি।

আমার জন্ম দয়ালের জন্য, আমি বাঁচি দয়ালের জন্য
আমার ধর্ম দয়ালের জন্য, আমার কর্ম দয়ালের জন্য।
আমার বাঁচা দয়ালের জন্য, আমার মরা দয়ালের জন্য
আমি নিঃশ্বাস নিই দয়ালের জন্য, আমি ছাড়ি দয়ালের জন্য
আমি দেখি সদাই দয়ালের মুখ, তা'তেই আমার সুখ।
আমি ঘুমায় দয়ালের জন্য, আমি জাগি দয়ালের জন্য
আমি কাঁদি দয়ালের জন্য, আমি হাসি আমার দয়ালের জন্য।

আমি দয়ালের মুখ চেয়ে, চলেছি আলোর পথে ধেয়ে
বলি, আয় ছুটে আয় বাপ, তোরা আমার সাথে থাক।
আমি সৎসঙ্গী দিবানিশি, দয়ালের সাথে আমি মিশি
দেবো দয়াল ধামে পাড়ি, ঐখানেতে আমার বাড়ি।
ঐখানেতে আমার বাড়ি।

আমি সবাইকে ভালোবাসি, আমি সবাইয়ের সাথে মিশি
বলি, যে যেখানেই থাক, যে মতে, যে কর্মেই থাক,
আমি সবাইয়ের সাথে থাকি, আমি সবাইকে দয়ালের কথা বলি।
আমি দয়ালের গান গাই, সবাইকে দয়ালের গান শোনায়।২

তোমরা সবাই দয়ালের কাছে এসো, দয়ালের চরণতলে ব'সো
দয়ালের বাড়ি তোমার বাড়ি, দয়ালের সাথে ক'রো না আড়ি।
বেটা, দয়াল তোর প্রকৃত পিতা, আমি তোর নকল পিতা
দয়াল আমার তোমার সবার পিতা, পিতার পিতা পরমপিতা। ২

গানঃ প্রভু, তুমি আছো, আজ আমি আছি তাই

প্রভু, তুমি আছো, আজ আমি আছি তাই
তোমারি দয়ায় আমি গান গেয়ে যায়।
হাত তোমার, মাথায় থাকে ব্যাস 
এই আমি তোমার কাছে চাই
দয়াল, অর্থ মান যশ কিছুই নাহি চাই।
ও দয়াল! তোমার চরণতলে স্বর্গ দেখা যায়।
দয়াল! তোমার চরণতলে, ঐ স্বর্গ দেখা যায়।
ও দয়াল! তোমার চরণতলে, ঐ স্বর্গ দেখা যায়।

যন্ত্রণায় দয়াল আমার মাথা ছিঁড়ে যায়
বুকের ব্যথায় পরাণ কাঁদে পাগল হ'য়ে যায়
ভয়েতে বুক কাঁপে শয়তানেরও রূপ দেখে
দয়াল তোমার চরণ তলে পরাণ ঠান্ডা হ'য়ে যায়।
হাত তোমার মাথায় থাকে ব্যাস এই আমি তোমার কাছে চাই
দয়াল, অর্থ মান যশ কিছুই নাহি চাই।
ও দয়াল! তোমার চরণতলে স্বর্গ দেখা যায়।

দয়াল! তোমার চরণতলে, ঐ স্বর্গ দেখা যায়।
ও দয়াল! তোমার চরণতলে, ঐ স্বর্গ দেখা যায়।
দয়াল! মাথায় তোমার হাতের ছোঁয়া চাই।

আমার বুকে তোমার চরণ, ধুলা আমার মাথায়
শয়নে স্বপনে জাগরণে আমি শুধুই দেখি তোমায়।
তুমি আমার মাথার পরে চিন্তা আমার কিসের তরে
তুমি আছো দয়াল তাই আমি আছি এই দুনিয়ায়
হাত তোমার মাথায় থাকে ব্যাস এই আমি তোমার কাছে চাই
দয়াল, অর্থ মান যশ কিছুই নাহি চাই।
ও দয়াল! তোমার চরণতলে স্বর্গ দেখা যায়।
দয়াল! মাথায় তোমার হাতের ছোঁয়া চাই।২

Wednesday, October 9, 2024

উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা।

ইডিয়টদের শনাক্ত করার ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের প্রবাদ "ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়" হওয়ার মতো। ইডিয়টদের শনাক্ত করতে গিয়ে সময় নষ্ট করাটা সবচেয়ে বড় ইডিয়টের কাজ। কারণ সময় সবচেয়ে মূল্যবান ও সবসে বড়া বলবান। জীবনের মূল্যবান ও স্বল্প সময়কে নিখুঁত ও ঠিক কাজে ব্যয় করতে পারাটাই জন্ম লাভের সার্থকতা।

একজন ধর্মগুরু ঠগ বাছবার জন্য বলেছিলেন তাঁর অনুগামীদের। আমার পরিচিত সেই সমস্ত অনুগামীরা নিজেরাই ছিল সমাজের এক একজন বড় ঠগ ও সমাজবিরোধী। সেই বিষয়ে আমার একটা লেখা ছিল। সেই বিষয়ে আমার একটা আর্টিকেলে আমি লিখেছিলাম, একজন শাসক গ্রামে গেছেন গ্রামের মানুষদের মধ্যে ঠগ বাছতে। সে চেয়েছিল ঠগ বেছে বেছে সমাজকে বদলে ফেলতে। সমাজকো বদল ডালো তত্ত্বে সকলকে সে ভেবেছিল উজ্জীবিত ক'রে তুলবে ও এক নোতুন সমাজ ব্যবস্থার জন্ম দেবে। সে গিয়ে গ্রামের সমস্ত মানুষদের এক জায়গায় জড়ো হওয়ার আদেশ দিলে সবাই একজায়গায় জড় হ'লো। তখন সেই শাসক এক এক ক'রে নিরখ পরখ ক'রে বিচার করতে লাগলো কে ঠগ আর কে ঠগ নয়। যারা ঠগ তাদের এক সাইডে আর যারা ঠগ নয় তাদের আর একদিকে দাঁড়াবার নির্দেশ দিল। তখন ঠগেরা শাসকের নির্দেশ মতো চিহ্নিত হওয়ার পর নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। এইভাবে ঠগ বাছতে বাছতে যখন ঠগ বাছা কাজ শেষ হ'লো তখন দেখা গেল গ্রামের সমস্ত মানুষ ঠগেদের জন্য দাঁড়াবার নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হয়েছে আর অন্যদিকে রয়েছে সেই শাসক যে ঠগ বাছতে অর্ডার দিয়েছিলো ও ঠগ বাছার কাজে নিযুক্ত ছিল। এর থেকে বোঝা গেল গ্রামের সবাই ঠগবাজ হ'লেও ঠগ বাছার নির্দেশ দানকারী ও ঠগ বাছার কাজে নিযুক্ত ব্যাক্তি সেই শাসক নিজেই ছিল ঠগেদের পান্ডা। এটা আমার জীবনের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা।
( লেখা ৯ই অক্টোবর' ২০২৩)

Monday, October 7, 2024

গান? রাত কে বিস্তর পে আঁশু গিড়ে!

রাত কে বিস্তর পে আঁশু গিড়ে!
কাঁচ কা স্বপ্না কা মহল তোড়ে!
ভেরি স্যাড, ভেরি স্যাড মেরে ভাইয়া
লো শুনলো বাত!
শান কি জিন্দেগী কা স্বপ্না দেখে
আসানিসে সব মিল যায় খোয়াব লেকে
বৈঠে সাহাব, মেরী বাপ সাঁইয়া!
লো শুনলো বাত।
প্রভুকে বাত পে ধ্যান না জোড়ে
প্রভুকে চরণ পুজে চলন না মানে।
মেরা বেটা মেরা বাপ পাইয়া
লো শুনলো বাত।
বেটা তু অন্ধা হ্যায় রে
সেয়ানা সমঝতা হ্যায় রে!
আপনে আপ কো সামাল লে রে
ভাই ভাই ভাই ভাই বেটা
ভাই ভাই ভাই ভাই রে।
হাম ক্যায়সে সমঝাও রে
ও মেরা বেটা মেরা বাপ রে
আপনে হি বেটা আজ হো গ্যায়া
গ্যায়া গ্যায়া গ্যায়া গ্যায়া দেখো
লো শুনলো বাত।
স্বপ্ন কা মহল
(২২শে জানুয়ারী'২০২২)

কবিতা/গানঃ থাকবো নাগো আর কোনোদিন

থাকবো নাগো আর কোনোদিন
তোমায় ভুলে ঘোর আঁধারে।
করেছিলে যে দয়া আমারে
ভুলেছি তা আমি, ভুলেছি তোমারে।
বৃত্তি আঁধারে, বৃত্তি আঁধারে।

ভুলে গিয়ে তোমারে ধরেছি যে হাত,
তা শয়তানেরই, করেছি প্রেমালাপ, হায়! প্রেমালাপ,
রিপুর প্রলাপ, বৃত্তি প্রলাপ।
থাকবো নাগো আর কোনোদিন
তোমায় ভুলে ঘোর আঁধারে।
থাকবো নাগো আর কোনোদিন
তোমায় ভুলে আঁধারে।
করেছিলে যে দয়া আমারে
ভুলেছি তা আমি, ভুলেছি তোমারে।
থেকেছি আঁধারে, বৃত্তি আঁধারে।

ভালোবেসে আমারে নিয়েছিলে জড়ায়ে
সেই প্রেম ভুলে গিয়েছি হারায়ে,
আঁধারে হারায়ে, আঁধারে হারায়ে।
থাকবো নাগো আর কোনোদিন
তোমায় ভুলে ঘোর আঁধারে।