Powered By Blogger

Sunday, July 19, 2015

দোলনচাঁপা ও সুমন্তবাবুকে.........

 
দোলনচাঁপা আপনার শিক্ষক বন্ধু সুমন্ত চ্যাটার্জীর লেখাটা পড়লাম বর্তমান এক কঠিন, জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আজকের নারী পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক আসলে এক অতি দুর্বোধ্য, জটিল মানসিকতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম সময় কর্মের জালে জড়িয়ে হাঁসফাঁস করছে আদর্শহীন নারী-পুরুষ তাই সুমন্তবাবুর এই উপলব্ধি আর আপনার মতেস্যারের তোলা যথার্থ প্রশ্নসম্পর্কে নিজের ভাবনা শেয়ার করলাম আমার ব্লগে আপনার Postটা share করার মধ্যে দিয়ে
প্রথমেই বলিবিয়েএকটা প্রতিষ্ঠান নয়, একটা প্রবাহ, ধারা।বিয়েবাবিবাহকথার অন্তর্নিহিত ধাতুগত অর্থের মধ্যেই আছে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে সেই বিশেষভাবে বহন করে নিয়ে যাবার প্রবাহ বা ধারা। মানা না মানা ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর পুরাণে বর্ণিত শ্বেতকেতুর দ্বারা স্ত্রী-পুরুষের বিবাহ পদ্ধতি প্রচলনের ইতিহাস নিশ্চয়ই জানা আছে
যাই হোক, সুমন্তবাবুর লেখা “.........প্রথমে যৌনতা এল, তারপর প্রেম, মায়া, মমতা............সন্তান এল বা না............ একটা চলমান সংসার এল...............” প্রসঙ্গে আমার জিজ্ঞাস্য, কৌতুহল বা প্রশ্ন সুমন্তবাবুকে আপনাকে কে বলল যে প্রথমে যৌনতা এল, তারপর প্রেম, মায়া, মমতা ইত্যাদি ইত্যাদি? এটা কি আপনার ব্যক্তিগত অভিমত? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাজনিত অভিমত না-কি গবেষনালব্ধ? কথাটা যে একেবারে অসত্য তা হয়তো নয়। কিন্তু এই অভিমতের উপর সীলমোহর ফেলে দেওয়া যাবে কি? যৌনতা আগে এল না প্রেম, মায়া, মমতা আগে এলো; না-কি প্রেম, মায়া, মমতা এলো আগে আর তার পিছনে পিছনে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এলো যৌনতা কিম্বা যৌনতা-প্রেম বা প্রেম-যৌনতা হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি একসঙ্গে একই অঙ্গে দুই রুপের মত এলো, কে উন্মোচন করবে এই রহস্যের গভীরতা? নারী-পুরুষের এই জটিল সম্পর্কের মনস্তত্ত্বের কে দেবে সার্বিক গ্রহণযোগ্য সমাধান? একজন দুজন নারী পুরুষের মানসিকতা দিয়ে তামাম নারী পুরুষের মানসিকতাকে বিচার করা যায় কি? মানসিকতার প্রকাশ, বিকাশ সবটাই তো পারিবারিক, পারিপারিপার্শ্বিক পরিবেশ, শিক্ষা, সর্বোপরি Biological Make-up-এর উপর নির্ভর করে, তাই নয় কি? সব নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্য কি এক? বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তো মানসিকতার প্রকাশ, তাই নয় কি?
আর, আপনার লেখায় ‘চলমান সংসার এলবলতে ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন? বদ্ধ জলাশয়ের জল যখন নির্দিষ্ট গন্ডীর চারপাশে তালহীন বয়ে যেতে যেতে ঘোলা হয়ে ওঠে, পচন ধরে তাকে কি বয়ে যাওয়া বলে? জীবন যখন তার চলমান গতিময়তা হারায়, হারায় তার সুর, ছন্দ; তাল হারিয়ে জীবন যখন বেতালে পা দেয় তখন জীবন কি জীবন থাকে? জীবন কি তখন মহাজীবনের সঙ্গে মিলতে পারে না-কি তাঁর খোঁজ পায়? একটা খুব সুন্দর গান আছে সুমন্তবাবু, “ওরে তাল মিলে নদীকে জল মে, নদী মিলে সাগরমে, সাগর মিলে কৌন সী জলমে, কৌঈ জানে না...............” তাই তালহীন যৌনতা সর্বস্ব জীবনে আবার চলমানতা বা চলমান গতিময়তা থাকে না-কি? সেই জীবন দিয়ে কি সংসারে প্রাণ সৃষ্টি করা যায় যে, সংসার চলমান হয়ে উঠবে? ‘বিয়েতার অন্তর্নিহিত অর্থকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়ে সার্থক হয়ে উঠবে? আর যৌনতাভিমুখী জীবনে প্রেম, মায়া, মমতা ইত্যাদি সূক্ষ্ম সুক্ষ বোধ, অনুভূতি থাকে না-কি যে সেগুলি একে একে আসবে? যৌনতাকে কেন্দ্র করে যে জীবনের প্রকাশ বা জীবন ঘূর্ণায়মান সেই জীবনের কাছে সংসারের কোনও মূল্য আছে না-কি সুমন্তবাবু? না-কি সেই যৌনতাসর্বস্ব জীবন যদি বিয়ে করে, সংসার পাতে সেইবিয়েবিয়ের অর্থপূর্ণ মর্যাদা পায় বা সেইসংসারচলমান সংসার হয়?
আর, বিয়ের মধ্যে দিয়ে উভয়ের ব্যক্তিগতভাললাগা’, ‘অভ্যেস’ ‘স্বপ্ন’ ‘সম্পর্ক' ইত্যাদি ছাড়াছাড়ির কথা বলেছেন আপনি, সেই প্রশ্নে একটা সহজ সাবলীল কথাই বলতে পারি আমি আমার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগতভাললাগা’, ‘অভ্যেস’ ‘স্বপ্ন’ ‘সম্পর্ক' ইত্যাদি সমস্ত কিছুই সে তাসুবাকুযাই হোক না কেন আমার স্ত্রীর জন্য বা আমার স্ত্রী আমার জন্য ছাড়তে পারে তখনই যখন সেখানে পারিপার্শ্বিকসহ নিজের বেঁচে থাকা বেড়ে ওঠার লক্ষ্যে পরস্পর পরস্পরকে বহন করার ব্যাপার থাকে, থাকে অন্যকে বড় করার জন্য নিজের স্বার্থত্যাগ করার মানসিকতা। আর সে ছাড়ার পরিণতিতে আসে সফলতা, আসে বেলাশেষে নির্মল হাসি, আনন্দাশ্রু! আর যদিভাললাগা’, ‘অভ্যেস’ ‘স্বপ্ন’ ‘সম্পর্ক' ইত্যাদি ছাড়াছাড়ির মধ্যে যৌনতা, ভয়, লোভ ইত্যাদির কারণ থাকে তাহলে সেই দাম্পত্য জীবনে থাকে একটা উদারতার ভঙ্গি, কপটতার বিষাক্ত নিশ্বাস; তাতে দাম্পত্য জীবন হয় সাময়িক এবং অবশেষে তা সফল হয় না। আর বেলাশেষে হাসি ঝরে পড়ার বদলে চাপা অম্বলের মত চাপা হতাশা, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণার অশ্রু ঝরে পড়ে অনবরত। আর আপনি তো ঠিকই বলেছেন, প্রেমহীন যৌনতা দিয়ে শুরু জীবন নান্দনিক হয়ে উঠতে পারে না, তা এখানে বলার ক্ষেত্রে প্রশ্ন কেন? দৃঢ়তার অভাব কেন? যৌনতা তো সৃষ্টির প্রধান উপাদান। সে সৃষ্টি যেমন তেমন হতে পারে, সেখানে নান্দনিকের প্রশ্ন সত্যিই গৌণ এককথায় অর্থহীন, ভিত্তিহীন। নারী-পুরুষের সম্পর্কের, ঘনিষ্টতার স্বাভাবিক পরিণতি যৌনতা। এই নিয়ে এত কথা বলার কিছু নেই, কিন্তু যেটা বলার আছে সেটা Flawless biological make-up-এর মধ্যে দিয়ে যে সৃষ্টি সেই সৃষ্টির ক্ষেত্রে যৌনতা অন্যতম প্রধান উপাদান এবং একমাত্র সেই ক্ষেত্রেইনান্দনিকপ্রশ্নের ভিত্তি অর্থ দুইই আছে। 'তাল'-এর প্রশ্ন সেখানে বড় হয়ে দেখা দেয়
আর, বিয়ের গ্রহণযোগ্যবিকল্পনেই কে বলল? ‘বিয়েবাবিবাহতো গভীর অর্থপূর্ণ শব্দ। অত গভীরতায় ডুব দিয়ে লাভ কি? ডুব দেওয়ারই বা কি দরকার? আজকাল তো সব ভাসাভাসা ভাবে উপর দিয়ে, চর্মচক্ষু দিয়ে দেখলেই হয়; কি প্রয়োজন সূক্ষ্মদর্শনশক্তির? কি প্রয়োজন অনুভূতির সমুদ্রের গভীরে ডুব দেওয়ার? ‘লিভ টুগেদারবিকল্প হিসাবে হাতের সামনেই তো আছে। যতদিন ইচ্ছা একসঙ্গে থাকো, পরস্পর পরস্পরকে, পরস্পরের মন, হৃদয় ইত্যাদিকে বুঝে নেওয়ার, চিনে নেওয়ার, জেনে নেওয়ার নামে সময় অতিবাহিত কর, মধু খাও তারপর মধু খাওয়া শেষ হলেই পরস্পর পরস্পরের দোষ ত্রুটিকে, অপূর্ণতাকে হাতিয়ার করে উড়ে যাও, তারপর গিয়ে আবার বসো অন্য ফুলে! ব্যস মিটে গেল। তাই না? এর থেকেবিয়েনামক প্রতিষ্ঠান (!?)-এর বিকল্প ত্রুটীহীন ব্যবস্থা আর হয় না-কি? এমনিভাবেই ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেরিয়ে জীবনটাকে কাটিয়ে দিয়ে অস্থির জীবনের কান্ডারি য়ে শেষের ভয়ংকর সেদিনে উপনিত য়েস্থিরতাপূর্ণতা অন্বেষণে নাহয় দার্শনিক তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থাকবো আর সৃষ্টির আবহমানকাল রে চলে আসা ব্যবস্থাকে অবহেলায় অবলীলায় আমাদের গবেষণাহীন পরিশীলিত (?) মনন মেধা দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় তুলে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবো!
আরপ্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপের অস্থিপঞ্জরবয়ে চলেছি প্রসঙ্গে শুধু এটুকুই বলতে পারি, ছাড়া আর কি বয়ে নিয়ে যাবো? বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে আমরা আজকের প্রজন্মের আধুনিক ছেলেমেয়েরা, স্বামী-স্ত্রীরা তোএসো সাপলুডো খেলি’, ‘ইস কি দুষ্টু! সাতদিনে তিনবার খাট ভাঙ্গলিসংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে চলার শিক্ষা লাভের মধ্যে দিয়েই তো বড় হচ্ছি, এগিয়ে চলেছি। তাই না?
সুমন্তবাবু পরিশেষে একটা কথাই বলতে পারি, এতো চোরের উপর রাগ করে মাটিতে খাওয়ার মত ব্যাপার হয়ে গেল। তাই আসুন আয়নায় আমরা নিজেদের আগে দাঁড় করায়। আমার ব্যবহারের, চরিত্রের, জীবন যাপনের কোন কোন ত্রুটির জন্য আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বা হচ্ছে আসুন তা' তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখি


Dolanchampa Dasgupta
July 13 ·
প্রাপ্তবয়স্ক হলে পিতা পুত্র মিত্র হয়। আমাদের শিক্ষা আর মুক্তচিন্তা বলছে হ্যাঁ পিতাপুত্রীও তাই । আমার শিক্ষক এবং বন্ধু Sumanta Chatterjee র এই পোস্টটা তাই সবার মধ্যে ভাগ না করে পারলাম না। স্যার যথার্থ প্রশ্ন তুলেছেন। পড়ুন । মতামত দিন কিন্তু ব্যক্তিগত আঘাত করবেন না কারোকে , প্লিজ।
'
দুজন অপরিচিত ( পরস্পর ) মানুষ বিয়ে নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিন একই ছাদের নীচে, একই ঘরে, একই বিছানায় এসে পড়ল.....প্রথমে যৌনতা এল, তারপর প্রেম, মায়া, মমতা.....সন্তান এল বা না, একটা চলমান সংসার এল....দু'জনই তাঁদের অনেক ভাললাগা ছাড়ল, অনেক অভ্যেস ছাড়ল, অনেক স্বপ্ন ছাড়ল, ছাড়ল অনেক সম্পর্কও....জীবনের একটা নূতন রসায়নে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হল দু'টো প্রাণ.....শত শত বছর ধরে চলে আসছে এই সামাজিক ধারাপাত,তা সে দাম্পত্য সফল হোক বা অসফল, বেলাশেষে হাসি ঝরুক বা অশ্রু.....২০১৫তে এসে মাঝে মাঝে মনে হয়, এখনও কি খুব প্রয়োজনীয় এই প্রতিষ্ঠান ? প্রেমহীন যৌনতা দিয়ে শুরু যে জীবনের, তা কি সত্যিই খুব নান্দনিক ? না কি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্প তেমন কিছু নেই বলে বয়ে চলেছি এই 'প্রাগৈতিহাসিক' সরীসৃপের অস্থিপঞ্জর ?.....কী বলছে আমাদের পরিশীলিত মেধা ও মনন, আমাদের কবোষ্ণ হৃদয় ?......

No comments:

Post a Comment