Powered By Blogger

Saturday, July 11, 2015

তিয়াসাকে খোলা চিঠি...............(৯)



অভিজিত দেবনাথকে করা আপনার আরও একটা কমেন্টে দেখলাম আপনি নির্দ্বিধায় হনুমানজি ও জয় শ্রীরাম-এর নামে ব্যাঙ্গ করেছেন! আপনার প্রোফাইল দেখে মনে হল আপনি শিক্ষিকা, তা অন্যের বিশ্বাসকে, অন্যের শ্রদ্ধার জায়গাকে, হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে চলা একটা জীবনের প্রবাহকে, অন্যের ইষ্টকে অপমান করার, নিন্দা করার, ব্যঙ্গ করার এই শিক্ষা কোথায় পেলেন? মার্কস, এঙ্গেলস, সাম্যবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ এই শিক্ষায় তার অনুগামীদের শিক্ষিত করে তোলে বুঝি!? হনুমান আর শ্রীরামচন্দ্র সম্পর্কে কোন বাস্তবসম্মত ধারণাই নেই বোঝা গেল! মজবুত ধারণার জন্য গভীর অধ্যয়নের প্রয়োজন। দেশ, সমাজ, সভ্যতা, মানুষের জীবন ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করবার জন্য, বাঁচাবার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ, যুদ্ধক্ষেত্রে নেতা রামের প্রতি হনুমানের নিবেদিত প্রাণ, রাজার ছেলে হয়েও রামের সমস্ত জীবনের চরম কষ্টকর, দুঃখজনক অধ্যায় আমাদের কি জীবন সম্পর্কে কিছুই শেখায় না!? আপনারা নিজেদেরকে অন্যের চেয়ে লেখাপড়ায় খুব দড় বলে মনে করেন, তাই না? তাই অনায়াসে অন্যকে নিমেষে পায়ের তলায় পিষতে, শ্রদ্ধেয়কে নিন্দা, সমালোচনা, অপমান, কটাক্ষ করতে আপনাদের বিবেকে বাধে না। এই কথায় ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শিক্ষা বিষয়ক কয়েকটা ছড়া মনে পড়ে গেল।

ঠাকুর বললেন
,

লেখাপড়ায় দড় হলেই শিক্ষা তারে কয় না,
অভ্যাস ব্যবহার সহজ জ্ঞান নইলে শিক্ষা হয়না।
শিখলি যে তুই কতশত বোধ তো কিছুই ফুটলো না,
স্মৃতির বলদ হলি যে তুই, একমুঠো ভাত জুটলো না।
বই পড়ে হলি যে বই, বই-এর নিদান ধরলি না,
ধরে করে না চললে কি জাগবে বোধের নিশানা

সমাজের অর্থনৈতিক অসাম্যই শুধু গরীবের গরীবির কারণ নয়। গরীবের গরীবির অন্যতম গূঢ় কারণ তার চরিত্রে, জীবন যাপনে, চলাফেরায়, চিন্তাভাবনায়! সেই যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে ছুটে বেড়ানোর সময় থেকে আজ এই বয়স পর্যন্ত এসব দেখে শুনে মনে হয় সাম্যবাদী বা সমাজতন্ত্রের পূজারীদের কখনোই হাসতে দেখেনি মানুষ, শোনেনি মিষ্টি করে কথা বলতে! সবসময় যেন একটা উত্তেজনা, একটা রাগ, একটা অসহিষ্ণুতা, একটা দম্ভ, একটা সবজান্তা ভাব ফুটে বেরোয় চলনে-বলনে। বড়কে ছোট করা, ছোটকে আরো ছোট করাই যেন এদের মূল মন্ত্র! নিজের দেশে এরা দেশ গড়ার জন্য কোন মহান ব্যক্তি বা মতবাদের সন্ধান পান না। একদিন নেতাজীকে চূড়ান্ত অপমান, গালাগালি করতে এদের বিবেকে বাঁধেনি আজ ঠেকায় পড়ে দেশ বাঁচাবার জন্য সেই নেতাজীকে বাঁচাবার কথা বলতে এতটুকু দ্বিধা বা লজ্জা হচ্ছে না! আমার ভারতবর্ষকে বাঁচাবার জন্য কোন মনিষী ছিল না বা বর্তমানেও নেই এই ভারতবর্ষে যার জন্য মার্কস এঙ্গেলসকে বাঁচাতে হবে এবং বাঁচাবার দায়িত্ব নিতে হবে! মাকর্স, এঙ্গেলসকে এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী জুড়ে মারলো কে বন্ধু! ক্যাপিটালিষ্টরা মারলো না-কি সোশ্যালিস্ট, কম্যুনিস্টরা?

আবার মনে পড়ে যায় শ্রী শ্রী ঠাকুরের বাণী।
নিজের ত্রুটির ধার না ধেরে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপায়,
অহং মত্ত এমন বেকুব ক্রমে ক্রমে নষ্ট পায়”

অথচ এই আর্য ভারত একদিন গোটা পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছে! এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ তাঁরভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লভেবাণিতে আবারকথাটা ব্যবহার করেছিলেন! যদিও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও সামাবাদী বা সমাজতন্ত্রবাদীদের এলার্জী ছিল। দেশের কোন মনিষীকেই এদের সমাজ গড়া বা দেশ গড়ার কাজে উপযুক্ত যোগ্য দক্ষ বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব বলে মনেই হয়নি! ধার করা মতবাদ এবং বিদেশী মনিষীদের বাইরে এরা দেশের অন্য কোন মত, দর্শন এবং মনিষীকে মান্যতা দেওয়া তো দুরের কথা, সহ্যই করতে পারেনি! এই কৃষ্টিগত পরাভবের পিছনে একটাই কারণ দুশো বছরের গোলামী! এই গোলামের রক্ত আমরা বয়ে চলেছি প্রজন্মের পর প্রজন্ম! তাই অবৈধ সম্পর্কের মত ঘরের সতীলক্ষী ছেড়ে মন খালি ছুক ছুক করে, চোখ টানে ঘর ছেড়ে বাইরের অসতীর পানে রাতছেনালীর নাঃ রাতছেনালের মত! ভারতবর্ষের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ওপর হাজার হাজার বছর ধরে বলাৎকার করে গেছে ভিনদেশীরা আর তাদের বীর্যে জন্ম নিয়েছে অষ্টাবক্রের মত এক বিকৃত সংস্কৃতির মানসিকতা! যে সংস্কৃতির জন্ম উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা অথচ বাইরের ধার করা মত বা দর্শনের প্রতি সমাজ বা দেশ গঠনের স্বার্থে নিজেরা অটুট, অটলও থাকতে পারেনি! পৃথিবী জুড়ে এবং স্বাধীনতার সময় থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত প্রতি মুহুর্তে চুক্তি রফা করতে গিয়ে আদর্শকে ঘায়েল করতে এদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা-ধন্ধ হয়নি। ৩৪ বছর ধরেও যা প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ! আর তার ফল যা পাওয়ার পেয়েছে সাম্যবাদী, সমাজতন্ত্রীরা।

ঠিক এই প্রসঙ্গে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের একটা সাবধান বাণী মনে পড়ে গেল
,
তিনি বললেন,

আদর্শকে ঘায়েল করে চুক্তি রফায় বাঁধতে দল,
যতই যাবি পড়বি ঘোরে হাতে হাতেই দেখবি ফল
ক্রমশঃ

No comments:

Post a Comment