ঈদ ও রথযাত্রার যুগলবন্দী এক ঝলক দখিনা বাতাস বইয়ে নিয়ে এলো এই প্রাণে। প্রাণ ভরে পান করলাম ঈদের খুশী আর রথের মজা। সেমাই আর পাপড়-এর যুগলবন্দী সন্ধ্যে রঙিন করে তুললো। কিন্তু যেটা না বললে আজকের সন্ধ্যেটা ফিকে হয়ে যাবে, মিথ্যে হয়ে যাবে তাহ'ল আজকের এই সন্ধ্যায় ছেলে আমাকে অনুরোধ করল একটা ফিল্ম দেখার জন্য। তার অনুরোধের মধ্যে একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বইটা আমার ভালো লাগবে শুধু নয়, ছবিটা আমার মানসিকস্তরকে ছুঁয়ে যাবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও চা, পাঁপড়, গরম জিলিপি আর সেমাই সহযোগে বসে গেলাম ছেলের অনুরোধ রাখতে। ফিল্মের নাম Bajrangi Bhaijan. দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমি বোধহয় নিজেকে এই বয়সে হারিয়ে ফেলছি। গাম্ভীর্য হারিয়ে কখন যেন নিজেকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছি ছেলের কাছে। সরলমনে বলে ফেলেছি, 'এই তো জীবন, এসো সবে হাতে হাত ধরি'। বলতে গিয়ে বুঝতে পারলাম গলাটা ভেজা ভেজা। হঠাৎ ছবিটা ঝাপসা লাগলো। ছেলের দিকে তাকিয়ে শিশুর সারল্যে নিজেকে মনে মনে বললাম, 'লজ্জা লাগলো বুঝি!' আত্মাকে পরমাত্মার সাথে মিলন ঘটালো Bajrangi Bhaijan. সেমাই আর পাপড়-এর মাঝে Bajrangi Bhaijan যেন ঈদ আর রথের যুগলবন্দীর অপুর্ব এক নিদর্শন! বাঃ!!!!!!!!!!!! একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। বহুদিন পর এমন ছবি দেখে মনে হ'ল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও সুক্ষ্মবোধসম্পন্ন, রুচীশীল, নরম মন, ভালোবাসাময় হৃদয়ের 'শিক্ষিত' মানুষ আজও আছে। হৃদয়টাকে দুমড়ে মুচড়ে একেবারে 'দ' করে দিয়ে গেল 'Bajrangi Bhaijan'. কি অসাধারণ মেসেজ দিয়ে গেল আমাদের মত 'লেখাপড়াজানাওয়ালা' মানুষদের। অনেকদিন পর চোখের কোণে খচখচানি অনুভব করলাম, মনে হ'ল আমি ছিলাম, আমি আছি, আমি থাকবো এক সুন্দর ভালোবাসাময় মানুষের পৃথিবীতে!
ছেলের দিকে মায়া মাখানো চোখে চেয়ে চায়ে চুমুক দিলাম। দেখলাম চা ঠান্ডা হয়ে গেছে, পাঁপড় নেতিয়ে গেছে, জিলিপি নরম আর সেমাই-এর পায়েস দুধ টেনে শুকিয়ে গেছে। কিন্তু অনেকদিনপর কি যে ভালো লাগলো এই সমস্ত ঠান্ডা, নেতানো, নরম আর শুকনো খাবার খেতে। অনেকদিন এমন খাবার খাইনি।
জয়তু ঈদ, জয়তু রথযাত্রা, জয়তু 'Bajrangi Bhaijan'.
No comments:
Post a Comment