Powered By Blogger

Sunday, July 12, 2015

তিয়াসাকে খোলা চিঠি...............(১০)




আপনার অভিজিৎ দেবনাথকে করা ঐ কমেন্টেই একজায়গায় দেখলাম আপনি বামপন্থা ও প্রকৃত বামপন্থার মধ্যে একটা বিভাজন রেখা টেনেছেন। ৬৭ বছরে বামপন্থীরা ভারতবর্ষে কোন জায়গা করতে পারেনি এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরে বামপন্থার স্বপ্ন বামপন্থীরাই একেবারে মুছে দিয়েছে। এটা কারা করেছে? আপনার মতে প্রকৃত বামপন্থীরা এর জন্য দায়ী নয়। আর তাই যদি হয় তাহলে পৃথিবীর ইতিহাসেও বামপন্থার বর্তমান শোচনীয় হালের জন্য আপনার এই একই যুক্তি আমাকে গ্রহণ করতে হয়। তাহলে প্রকৃত বামপন্থাকোথায় কখন কবে প্রতিষ্ঠিত হবে? কে প্রতিষ্ঠা করবে?  ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’-এর মত মানসিকতা তো সবার মধ্যে! তাহ’লে? আপনার মত বিগত দিনের আশাবাদী মানুষদের উদয়াস্ত জীবন পরিক্রমার শেষে বর্তমান মানসিকতার কোন খবর রাখেন? আপনি জীবন মোহনায় এসে যেদিন দাঁড়াবেন সেদিন যদি বেঁচে থাকি তাহলে আপনারও জীবনের বাস্তব সত্য অকপট অভিজ্ঞতা শোনার অপেক্ষায় থাকবো। মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্যকে বাদ দিয়ে, অনিয়ন্ত্রিত বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে আরও উসকে দিয়ে, Superficial thoughts এর ওপর দাঁড়িয়ে যে স্বপ্ন দেখা তাসবটাই ইউটোপিয়াছাড়া কিছুই নয়!

এই বামপন্থা আর প্রকৃত বামপন্থা প্রশ্নে একটা মজার প্রসঙ্গ উত্থাপন করা যেতে পারে। একবার বিদেশে বসবাসকারী দিদির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে ভাই। ঝাঁ চকচকে অ-নে-ক উঁচু মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং-এ থাকে দিদি আর জামাইবাবু। সময়টা বর্ষার সময়। দিদির মনে হল এই বিদেশ বিভূঁই-এ ভাই এসেছে তো ভাইকে এই বর্ষার দিনে গরম খিচুড়ি বানিয়ে খাওয়াবে। মনে হওয়া মাত্র দিদি জামাইবাবুকে অনুরোধ করলো নীচে গিয়ে ঘি নিয়ে আসার জন্য। এই কথা শুনে ভাই ঘি আনবার জন্য রওনা দিল। তার মনে হল রথ দেখা কলা বেচার মত একসঙ্গে দুই কাজই হবে, ঘি আনাও হবে সঙ্গে আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা থেকে নীচে মাটিতে নেবে এসে চারপাশটা ঘুরে দেখাও হবে। এইভেবে ভাই লিফটে করে নীচে নেবে এলো। তারপর এ মল, ও মল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো কিন্তু কোথাও ঘি পেল না। সে অবাক হয়ে গেল এত বড় বড় মাল্টি স্টোরিড বিল্ডিং আর বড় বড় মলে কোথাও কোন দোকানে ঘি পেল না। বিস্মিত ও অবাক য়ে সে ফিরে এলো বাড়িতে এবং দিদিকে জানিয়ে দিল যে সে কোথাও ঘি পায়নি। এ কথা শুনে দিদি অবাক হয়ে গেল! এও কি সম্ভব! নীচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে সব দোকানেই ঘি পাওয়া যায়, তাহলে হোলোটা কি!? জামাইবাবু এ কথা শুনে অবাক হয়ে শালাবাবুকে নিয়ে নিচে নেবে গেল এবং প্রথমেই সামনের বড় দোকানটাই গিয়ে ঢুকল। শালাবাবুকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো এই দোকানেও শালাবাবু খোঁজ করেছে। তবুও কৌতুহল বশতঃ দোকানদারকে জামাইবাবু জিজ্ঞেস করল, Hallo Mr. Samuel! Do you not keep ‘Ghee’ in your shop? উত্তরে স্যামুয়েল বলল, Certainly I do! How much do you want to have? এ কথার উত্তরে শালাবাবু আর জামাইবাবু বিস্ময়ে দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকালো! তারপর জামাইবাবু একটু থতমত খেয়ে গম্ভীর য়ে গিয়ে বলল,  250 grams! একটু আগেই শালাবাবু এই দোকানে এসেছিল এবং এই মিঃ স্যামুয়েলই বলেছিল ‘নেই’।  আর এখন জামাইবাবু বলার সঙ্গে সঙ্গে এনে দিল! জামাইবাবুকে সে কথা জানাতে জামাইবাবু তখন বিরক্ত হয়ে মিঃ স্যামুয়েলকে জিজ্ঞেস করলো, So why have you told my fellow that there is no ‘Ghee’ in your shop!? সে কথার উত্তরে মিঃ স্যামুয়েল নির্বিকার ভাবে উত্তর দিল, Yes. Just few minutes back he had come in my shop, but he didn’t ask for ‘ghee’! এ কথায় শালাবাবু রেগে গিয়ে জামাইবাবুকে বললেন, He is completely a liar! এ-কথা শুনে দোকানদার বলল, Hallo Mr. Am I a liar!? Did you ask for ‘ghee’? No! You are a liar! You didn’t ask for ‘ghee’! You had come here and wanted ‘pure ghee’! We don’t keep such an amazing ‘pure ghee’! Ghee is itself pure! So, why you, bloody Indian, are using the word ‘pure’ before ‘ghee’! Ha, ha, ha, I have never heard this before! This is the first time I have heard this amazing word ‘Pure Ghee’ by somebody bloody Indian!!!!!!!! So, I had nothing to help you bloody Indian!!!!!!! Ha, ha, ha!!!!!!!!!

ঠিক
তেমনি বামপন্থা আর প্রকৃত বামপন্থার মধ্যেও ঘি আর পিওর ঘি-এর মতই একই প্রশ্ন বিদ্যমান! আর এই প্রকৃত বামপন্থার উত্থানের স্বপ্ন ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে, তাত্ত্বিক আমেজে নেশাগ্রস্থের মত ডুবে থেকে দেখা যেতে পারে কিন্তু সেখান থেকে উঠে এসে, উত্তেজিত মস্তিষ আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবের মুখোমুখি এসে দাঁড়ান দেখি একবার প্রকৃত বামপন্থীর প্রতিনিধি হয়ে! ৩৪ বছরে আপনার কথামতই ৭০ দশকে যারা স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল কোথায় হারিয়ে গেল তারা?  কেন হারিয়ে গেল তারা?  কেন সেই পথ চলার চিহ্নমাত্র নেই।  কি তার কারণ?  প্রকৃত বামপন্থীরা কিছু সুযোগসন্ধানীর ভিড়ে হারিয়ে গেল!?  ৬৭ বছরেও বামপন্থীরা ভারতবর্ষের বুকে একটুও জায়গা করে নিতে পারলো না বলে দুঃখ করেছেন এবং এটা তাঁদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা বলেছেন। আমার জিজ্ঞাস্য, এই তারা কারা? কারা চূড়ান্ত ব্যর্থ? যাদের হাত ধ’রে বামপন্থার পথ চলা যখন শুরু হয়েছিল ভারতবর্ষের বুকে, যারা বুকে স্বপ্ন নিয়ে ৭০ দশকে পথ চলা শুরু করেছিল তারা কি ‘বামপন্থী’  ছিল, কেউ ‘প্রকৃত বামপন্থী’ ছিল না? আর এই চূড়ান্ত ব্যর্থতার জন্য কোন একজন ব্যক্তি বা কোন একটি সিদ্ধান্ত ভুল নয় বলেছেন। অর্থাৎ আপনি ‘সমষ্টি’-কে গুরুত্ব দিতে চান। ব্যষ্টির যেখানে মুল্য নেই, নেই গুরুত্ব; সেখানে সমষ্টির কোন মুল্য নেই, নেই গুরুত্ব! এক অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই দর্শন! ব্যষ্টি হল ‘পৃথিবী গোল’-এর মত, যেখানে যাও ঘুরে ফিরে সেই জায়গায় তোমাকে আসতে হবে। ঠিক তেমনি ব্যষ্টি থেকে সমষ্টি, আবার সেই সমষ্টি থেকে ব্যষ্টিতে অবতরণ! যেমন এক থেকে একশো আবার সেই একশো থেকে একে ফিরে আসা! কোন একজন ব্যক্তি বা সিদ্ধান্ত যদি দায়ী না হবে তাহলে এখানেও আমার জিজ্ঞাস্য, কেন তাহলে জ্যোতিবাবুর মত অসাধারণ বাস্তববোধসম্পন্ন, যোগ্য ও দক্ষ নেতা ও প্রশাসককে টানা পাঁচবারের শাসন শেষ করার এবং নির্বাচনের ঠিক আগেই অসুস্থতার অজুহাতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল? কেন তাঁকে সরিয়ে স্বচ্ছতার প্রতীক হিসাবে সংস্কৃতিবান পন্ডিত সুকান্তর আলোর ছটায় আলোকিত বুদ্ধদেববাবুকে মমতার ঝাঁঝালো আক্রমণে নিশ্চিত ভরাডুবির হাত থেকে দল ও সরকারকে বাঁচাতে নির্বাচনী ময়দানে এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল? সেদিন নির্বাচনের মুখে মমতার পরপর ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ যদি না হত তাহলে সেবারই জনগণের রায়ে কবরে চলে যেত বামপন্থীরা। আর জ্যোতিবাবু যদি আগাম টের পেতেন, বুঝতে পারতেন যে মমতা নির্বাচনের ঠিক আগে আগেই পরপর আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন তাহলে তিনি নিজেও সরে দাঁড়াতেন না অসুস্থতার অজুহাতে নির্বাচনী ময়দান থেকে বা তাঁকে কেউ সরাতে পারতেন না সেদিন। আবার ঠিক এর পরবর্তী সময়ে যখন গোটা দেশের সমস্ত দল জ্যোতিবাবুকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিয়ে তাঁকে আহ্বান জানালেন তখন শুধুমাত্র ব্যক্তি হিসাবেই কি তিনি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেননি সেদিন সমগ্র দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে? তাঁকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত রে নিজেদের দল ও দেশের সেই সংকট মুহূর্তে বামপন্থীরা যে সিদ্ধান্তনিয়েছিলেন যে সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক ভুলহিসাবে পরবর্তীকালে চিহ্নিত করা হয়েছিল সেই সিদ্ধান্তএবং সেদিনের বামপন্থীদের জ্যোতিবাবুকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার নিশানা থেকে সরিয়ে গোটা প্রেক্ষাপটকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ‘সিদ্ধান্ত’ কি দায়ী ছিল না? মমতার নেওয়া পরপর ভুল সিদ্ধান্ত-কে আগেভাগে অনুধাবন করার ক্ষমতার বা দূরদৃষ্টির চূড়ান্ত অভাব কি দায়ী ছিল না?

একসময়ে
বুদ্ধদেববাবুকে সৎ স্বচ্ছ জ্ঞানী পন্ডিত সংস্কৃতিবান নেতা হিসাবে project করা হল তাঁর প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অভিষেকের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মমতার ঝাঁঝালো আক্রমণের মোকাবিলায়। আবার ঠিক এই লোকসভা নির্বাচনের আগে ১৮০ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে বামপন্থীরা নেতার গুরুত্বকে একেবারে নস্যাৎ করে দিয়ে দেশ গড়ার কাজে, সরকার চালানোর কাজে ‘নেতা নয় নীতি চায়’ লে স্লোগান তুললেন। সঙ্গে দোসর হলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ‘নেতা দেশ বদলতা নেহী, জনতা দেশ বদলতা হ্যায়’  ব’লে নির্বাচনী ময়দানে! প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, দেশের প্রধান নেতা হিসাবে ঝড়ের বেগে নরেন্দ্র মোদীর উত্থান দেশজুড়ে বামপন্থী তথা সমস্ত রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলোর বোধ, বুদ্ধি, বিচার সব গুলিয়ে দিয়েছিল। সেদিন বামপন্থীদের নেতা নয় নীতি চায়স্লোগানের সিদ্ধান্তবামপন্থীদের মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য কি দায়ী ছিল না? যারা নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা রাখেন না, যাদের নেতৃত্ব দেবার বিষয়ে যোগ্যতা, দক্ষতা ও নিজের ওপরই বিশ্বাস নেই, নেতা হিসাবে যাদের দেশবাসীর কাছে কোনও গ্রহণযোগ্যতাই নেই, শুধু পিছন থেকে কায়েমী স্বার্থ রক্ষা করার তাগিদে কলকাঠি নাড়ানোই যাদের একমাত্র ক্ষমতা তাঁরাই কিনা নীতি নির্ধারক!! ক্ষমতা পেলে তাঁদের সেই নীতি implement করতো কে? কার নেতৃত্বে সেই নীতি সমাজের জন্য, দেশবাসীর জন্য কার্যে পরিণত করতেন? কেন তাঁরা সেদিন ব্যর্থ হয়েছিলেন? তাঁরা কি প্রকৃত বামপন্থী ছিলেন না?





No comments:

Post a Comment