Powered By Blogger

Wednesday, June 11, 2025

আত্মকথন ১২

রাতে ঘুম হ'লো না। কাল সকাল ৯টার কথা ভেবে সারারাত হাজার কথা মাথার মধ্যে বিলি কাটতে লাগলো। বাবার কথা মনে এলো ঘুমের মধ্যে। বাবার শরীরটা ভালো নেই। তবুও দেখলে বোঝা যাবে না যে শরীর ভালো নেই। চোখমুখের স্বাভাবিকতা বুঝতেই দেয় না কাউকে বাবার কিছু কষ্ট আছে শরীরে। আর আমরাও অপদার্থ সন্তান বাবাকে কখনো তেমনভাবে বোঝার চেষ্টা করিনি। এই যে বাবা-মায়ের প্রতি উদাসীনতা এর পেছনে কাজ করে নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা বা মত্ত থাকার কারণে। মনের কোণে দুশ্চিন্তার ঝড় উঠলো রাতের আঁধারে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। যদি কাল সকালে গাড়ি আটকাবার প্রতিক্রিয়ায় কিছু হ'য়ে যায় আমার তাহ'লে তার জেরে বাবার এই দূর্বল শরীরের ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে সেই কথা ভেবে ঘুম আসছে না চোখে। ঘড়ির কাঁটা যেন আজ দ্রুতবেগে দৌড়চ্ছে সকাল হবার জন্য। রাত যেন আরো ঘন কুচকুচে কালো হ'য়ে আমাকে গিলতে আসছে। আজেবাজে চিন্তা আসতে লাগলো মাথায়। জোশের মাথায় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম না তো? নাকি সত্যি সত্যিই সত্যের ওপর দাঁড়িয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি? পরস্পর বিরোধী প্রশ্ন উঠে এলো মনে। মনকে শক্ত ক'রে বেঁধে রাখতে চাইলে মন আরও বেশী স্লিপ ক'রে বেরিয়ে যেতে চায়, পিং পং বলের মতো এখান থেকে ওখানে ছিটকে ছিটকে চলে যেতে চাইছে। ফলে গরম হ'য়ে উঠছে মাথাটা। উঠে বসলাম বিছানায়। বিছানা থেকে নেবে চোখেমুখে জল দিলাম ছিটিয়ে। একগ্লাস ঠান্ডা জল খেলাম। তারপর ঠাকুরের ফটোর সামনে এসে বসলাম। কিছুক্ষণ স্থির হ'য়ে বসে নাম করলাম। তারপর ভাবতে লাগলাম কোনটা সত্য।

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম।
জোশের থেকে কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
বন্ধুদের মাঝে হিরো সাজার জন্য কি এই সিদ্ধান্ত?
মাথা মোটা হুব্বার মতো আবেগে ভেসে এই সিদ্ধান্ত?
বাস্তবের মাটি থেকে উঠে গিয়ে কল্পনায় ভেসে এই সিদ্ধান্ত?
উন্মত্ত যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে আকাট মূর্খের সিদ্ধান্ত?
আবার মনে হ'লো,
সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত?
এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে মানবিকতার দিক কি নেই?
সত্যকে সামনে রেখে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের মধ্যে কি উগ্রতা বা সংহার আছে?

ঠাকুরের সামনে বসে ভাবতে ভাবতে সামনে যা উঠে এলো তা হ'লো কারও মঙ্গলের জন্য নেওয়া সৎ সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনও ভুল, অন্যায়, উগ্রতা বা সংহার নেই। আসলে মনের বিক্ষেপের পিছনে আছে বাবার শারীরিক অসুস্থতা। বাবাকে কেন্দ্র ক'রে একটা দুশ্চিন্তা মনকে স্থির হ'তে দিচ্ছে না। এ ছাড়া অন্য কোনও ভুল, অন্যায়, উগ্রতা বা সংহার নেই। নেই কোনও জোশ বা হিরো সাজার মতলব। নেই আবেগে বা কল্পনায় ভেসে যাওয়া কিংবা যৌবনের উন্মত্ততা। আর, মংগল যজ্ঞে সবসময় দয়ালের আশীর্বাদ ও দয়া আছেই আছে।

এতক্ষণে মনটা শান্ত হ'লো। ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস, নির্ভরতা ফিরে আসার সঙ্গে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ধীরে ধীরে চোখ দু'টো বন্ধ হ'য়ে এলো। ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাবা-মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো মনের আঙিনায়। উপলব্ধি হ'লো বাবা-মায়ের প্রয়োজনীয়তা ও উপস্থিতি।
( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)

No comments:

Post a Comment