Powered By Blogger

Wednesday, June 25, 2025

উপলব্ধিঃ পুরুষোত্তম, মহানায়ক, নেতাজী ও অন্যান্যরা।

কিছু সত্য মেনে নেওয়া সুস্থ মস্তিকের লক্ষণ। অকারণ তুলনা টেনে বিবাদ সবারই পক্ষে ক্ষতিকর। কারও সঙ্গে কারও তুলনা করা অযৌক্তিক এবং কারও সিংহাসনে নিজে ব'সে যাওয়া বা অন্য কাউকে বসানো নিন্দনীয় ও অন্যের সুমহান পরিচিতির পালককে নিজের মুকুটহীন মস্তিকে লাগানো কিংবা নিজের মুকুটের পালক ক'রে সাজানো নিজের কাছেই লজ্জার ব্যাপার ও অপমানজনক। ব্যাপারটা কাকের পিছনে ময়ুরের পুচ্ছ লাগিয়ে রাখার মত। অন্তত শ্রেষঠজনকে সম্মানকারী আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন কোনও সচেতন ভদ্র মানুষ এমন লজ্জাজনক স্বঘোষিত উপাধি গ্রহণ করেন না।
এরকম লজ্জাজনক উদাহরণ ধর্ম, রাজনীতি, অভিনয়, ক্রীড়া সব জগতেই আছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে।

আমরা ধর্ম জগতে যেমন দেখতে পাই, প্রায় সব ধর্মগুরুরা-ই (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) নিজেদের অখণ্ড মন্ডলের ঈশ্বর ব'লে মনে করেন ও নিজেদের শিষ্যমন্ডলীর কাছে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে ঈশ্বরের সিংহাসনে ব'সে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। কিংবা তাঁদের ভক্তরা তাঁকে ঈশ্বরের বিভিন্ন বিশেষণে উল্লেখ করলে বা তকমা দিলে বারণ করেন না। আধ্যাত্মিক জগতের প্রায় সব ধর্মগুরুরাই জানেন যে সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ, পুরুষোত্তম, পরমপুরুষ, পরমপিতা, পরম কারণিক, পরম উৎস, সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মানুষের রূপ ধ'রে নেবে আসেন মানুষের মাঝে, লীলা করেন, তা সত্বেও নিজেকে তাঁর সিংহাসনে বসান তাঁরা তাঁদের ভক্তদের মাঝে। ঈশ্বর আরাধনার জগতে চরম লজজাজনক কপটতা এর চেয়ে আর কিছু নেই। হয় তাঁরা কপট নতুবা তাঁদের ঈশ্বর আরাধনা অসফল; কারণ তাঁরা নিজেরাই চিনতেই পারেননি যাঁর আরাধনা করছেন তাঁকে, তাঁর নেবে আসা রূপকে।

এ তো গেল ধর্ম জগতের কথা। এবার আসি অন্য জগতে। দেখা যাক এখানেও কিছু অন্যের সিংহাসনে জোর ক'রে ব'সে পড়ার মত কিছু ঘটনা আছে কিনা।
বেশ কয়েকদিন ধ'রে প্রায় চোখে পড়ছে নায়ক-মহানায়ক প্রসঙ্গে আলোচনা। আগেও বহুবার এ বিষয়ে আলোচনা ফেসবুকে দেখেছি। দেখেছি নেতাজীকে নিয়ে 'নেতাজী' প্রসঙ্গেও আলোচনা। এ নিয়ে আজ মনে ভাবনার কিছু ঢেউ খেলে গেল তাই এখানে তুলে ধরলাম।
উত্তমকুমারকে মহানায়ক উপাধি কোনো কেউ বিশেষ একজন বা কোনও সরকার বা প্রতিষ্ঠান দেয়নি, এ উপাধি ছিল আম আদমির অন্তরের স্বতস্ফুর্ত উপহার। এ কথা যেন আমরা ভুলে না যায়। ভারতবর্ষের আর কোন নায়ককে মহানায়ক বলা হয়নি, এখনও হয় না।
যেমন সুভাষচন্দ্র বোসকে ছাড়া ভারতবর্ষের আর কোনও নেতাকে নেতাজী বলা হয়নি, এখনও হয়না। নেতাজী সম্বোধন এই ব্যাপারটাও আম আদমির স্বতস্ফুর্ত ভালোবাসার আপন করা ডাক ছিল।
রাজনীতিতে দলীয় আনুগত্যে স্বঘোষিত নেতাজী যেমন আমরা দেখেছি ঠিক তেমনি অভিনয়ের জগতেও রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যের মহানায়ক ও মহানায়িকা পেয়েছি, যেটা স্বঘোষিত প্রাপকের কাছে লজ্জার ব্যাপার। যে লজ্জা আমরা দেখতে পাইনি কারও মধ্যে।। ব্যাপারটা গাছ পাকা আম আর কারবাইড পাকা আমের সাথে তুলনীয়।

আবার আমরা দেখেছি বিশ্ব ফুটবলে ফুটবলের সম্রাট পেলেকে। তেমনি দেখেছি ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনাকে। এই একই রকম ঈশ্বর আর ভগবান উপাধি নিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত ক্রিকেটার ডন ব্র্যাডম্যান ও শচীন তেনডুলকারের ক্ষেত্রে বিতর্কিত আলোচনা দেখেছি। ফুটবলের সম্রাট পেলে আর ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনাকে নিয়ে আর ডন ব্র্যাডম্যান ও শচীনকে নিয়ে চুলচেরা তর্ক বিতর্ক, এ সবই স্বতস্ফুর্ত ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু দিনশেষে অবশেষে দেখেছি যে যাঁর জায়গায় সসম্মানে বিদ্যমান।


এর থেকে একটা সত্য প্রমানিত যে, সত্যকে মুছে ফেলা যায় না। শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় "হাজার অন্ধকার সূর্যকে ঢেকে রাখতে পারে না।" সত্যকে যে-ই অস্বীকার করুক, স্বীকৃতি না দিক, তা'তে সত্যের কিছু আসে যায় না। সত্য চিরকালই উলঙ্গ ও অপ্রিয়। সত্যকে অস্বীকার করা মানে নিজে কলঙ্কিত হওয়া, সে যে বা যারাই হ'ক না কেন।
( লেখা ৩৫শে জুন'২০২৪)

No comments:

Post a Comment