Powered By Blogger

Wednesday, June 25, 2025

প্রবি সমাচার ২৪

ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর ও মহাপুরুষ।

জীব জগত জীবন কারণ ইত্যাদি জাগতিক মহাজাগতিক সমস্ত কিছুর উপর আধিপত্য যার বিদ্যমান তিনিই ঈশ্বর। আমার যদিও বিশেষ জ্ঞান বিজ্ঞানের উপর কোনও দখল নেই তথাপি অনধিকারচর্চার মত বলতে পারি, অবশ্যই অবনতমস্তকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারি, বিজ্ঞানের পথে বস্তুকে ভাঙতে ভাঙতে যেখানে পৌছোনো যায় সেই পরম অণু আর দর্শনের আশ্রয়ে কারণের পিছনে কারণ আর সেই কারণের পিছনে কারণ খুঁজতে খুঁজতে যে পরম কারণে পৌঁছনো যায় সেই পরম কারুণিক-ই হ'লেন সেই ঈশ্বর, পরম ঈশ্বর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই পরম অণু বা সেই পরম কারণ যাকে আমরা পরম ঈশ্বর বলছি, সমস্ত সত্তার সত্তা বা সমস্ত অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম সত্তা, পরম অস্তিত্ব বলছি সেই পরম ঈশ্বর বা পরম সত্তা বা অস্তিত্ব কি রক্তমাংসের প্রাণময় সত্তা বা অস্তিত্ব রূপে সশরীরে আমাদের সামনে আমাদের চক্ষুকর্ণের বিবাদ মেটাতে, অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকার দূর করতে নেবে আসেন?

আর মহাপুরুষ? এককথায় বিশ্বজুড়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে রবীন্দ্রনাথের মত মহাপূরণকারী মহামানব যারা-ই আছেন তাঁরাই মহাপুরুষ। তাঁরা সবাই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য, অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করার জন্য, অন্ধকার থেকে আলোয়, অসভ্যতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণের জন্য স্ব স্ব ক্ষেত্রে পথ দেখিয়ে গেছেন।

কিন্তু মহাপুরুষ কি ঈশ্বর? ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর কি মহাপুরুষ?
সহজ কথায় মহাপুরুষেরা জীবনের কোনও একটা দিকের কোনও একটা অংশের মহাপূরণ করেন মাত্র। জীবনের সমস্ত দিকের পরিপূরণ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বা জীব জগত জীবন কারণের সমস্ত দিকের ওপর তাঁদের আধিপত্যও নেই।
আর, ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বরও মহাপুরুষ। তিনিও মহাপূরণকারী। কিন্তু তিনি পুরুষোত্তম। উত্তম সর্বোত্তম পুরুষ। কারণ তিনি জীব জগত জীবন কারণের সমস্ত দিকের মহাপূরণকারী ও আধিপত্য বিস্তারকারী এক ও অদ্বিতীয় মহান পুরুষ!

তাহ'লে মহাপুরুষ আর পুরুষোত্তমের মধ্যে তফাৎ কি?
১) মহাপুরুষ জীব ও জগতের জীবনের কোনও একটা দিকের কোনও একটা অংশের পূরণ করেন আর পুরুষোত্তম জীব জগত জীবন কারণের সমস্ত দিকের পরিপূরণ করেন।

২) ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর জীব জগত জীবন কারণ ইত্যাদি জাগতিক ও মহাজাগতিক সমস্ত কিছুর ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন যা মহাপুরুষের পক্ষে অসম্ভব বললে কম বলা হবে যা তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না।

৩) মহাপুরুষরা যা বলেন বা ব'লে গেছেন ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বরও তাই বলেন ও বলেছেন। শুধু তফাৎ এই যে মহাপুরুষের বলা ও ব'লে যাওয়া কথার মধ্যে, জীবন দর্শনের মধ্যে যে অসম্পূর্ণতা, যে সুক্ষ্ম ফাঁক, যে অস্পষ্টতা তা পুরুষোত্তম সম্পূর্ণ ক'রে দেন, ভরাট ক'রে দেন, স্পষ্ট ক'রে দেন। আর যে বিষয় মহাপুরুষদের ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই বিষয়ও জীবন্ত ঈশ্বরের সহজ করায়ত্ত। কারণ সৃষ্টির সমস্ত কিছুর উৎসমুখ হ'লেন তিনি। কয়েকটা উদাহরণ দিলে তা পরিস্কার হ'য়ে যাবে। পরবর্তী সমাচারে (প্রবি সমাচার ২৫) উদাহরণগুলি সবিস্তারে তুলে ধরবো।

৪) মহাপুরুষরা বহু বহুদূরের জিনিস দেখতে পান আর ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের জন্মজন্মন্তরের, বিশ্বচরাচর জুড়ে সমস্ত অস্তিত্বের, ব্রহ্মান্ডের পর ব্রহ্মান্ড অনন্ত ব্রহ্মান্ড জুড়ে সমস্ত কিছু দেখতে পান। তিনি ভুত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ত্রিকালদর্শী।

৫) মহাপুরুষরাও জীব জগতের সমস্যা জানেন, সমস্যা দেখ্তে পান এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো সমাধানও দেন। কিন্তু তার গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু পুরুষোত্তম সমস্যা জানা বা দেখতে পাওয়া এবং সেই সমস্যা সমাধানের গভীরতা যে শুধু দেখতে পান তা নয়, তার উৎসমুখও তাঁরা জানেন।

৬) মহাপুরুষরা হয়তো আমাকে জীবনে বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার পথ তাতে সুক্ষ্ম ফাঁক থাকলেও দেখিয়ে দিতে পারেন, সমস্যা সমাধানের সাময়িক বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিরকালীন উপায়ও বাতলে দিতে পারেন কিন্তু কর্মফল স্বরূপ আগাম নিশ্চিত ভয়ংকর বিপদ থেকে, মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে বা বাঁচাতে পারেন না। কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী!

৭) মহাপুরুষরা যা বলেন তা সময়ানুযায়ী পরিবর্তনীয় ও পরিবর্ধনীয় হ'তে পারে কিন্তু পুরুষোত্তমদের ব'লে যাওয়া গুলি চিরন্তন এবং যুগ অনুযায়ী আরো বিস্তৃত ও আলোকিত।

ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার নিখুঁত পথ, ফাঁকহীন পথ দেখাতে পারেন, বাতলে দিতে পারেন এবং নিশ্চিত ভয়ংকর কর্মফল তা রোগ, শোক, আঘাত, পঙ্গুত্ব বা মৃত্যু যাই-ই হ'ক না কেন, যা আমাদের জানার বাইরে ছিল, যা আমাদের কাছে একমুহূর্ত আগেও কল্পনার অতীত ছিল সেই সব কিছু থেকে আমাদের সবরকম ভাবে রক্ষা করতে পারেন, নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারেন এবং জন্মের সময় নিয়ে আসা নির্দিষ্ট আয়ুও বৃদ্ধি করতে পারেন।
তাহ'লে সেই মহাপুরুষ কে আর কেই বা পুরুষোত্তম জীবন্ত ঈশ্বর?
আগেই বলেছি, আবারও বলছি, মহাপুরুষ হ'লেন সেই বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানব সভ্যতার অগ্রগতির কাজে রবীন্দ্রনাথের মতো যারা সমাজ জীবনে দাগ রেখে গেছেন সেই সমস্ত প্রবাদপ্রতিম প্রাতঃস্মরণীয় মানুষেরা।
আর ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এরাই হ'লেন পারফেক্ট; মানব শরীরে পারফেকশনের জ্বলন্ত উদাহরণ। যতদিন না এঁদের মাথার ওপরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বকে পরিচালনা হবে ততদিন উন্নতি, সুখ, শান্তি, সমৃব্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিত সুরক্ষিত হবে না।
তা আমরা ও মহাপুরুষরা তাঁদের স্বীকার করিনি বা করি না কেন?
এককথায় বলতে পারি, আমরা সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষেরা অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অহঙ্কার, অবিশ্বাসের শিকার আর মহাপুরুষদের সূক্ষ্ম, অতি সূক্ষ্ম, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অহং বোধ। মহাপুরুষেরা প্রায় অনন্ত অসীম জ্ঞানের ভারে অহঙ্কারে জীবন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেন না বা পারলেও স্বীকার করেন না জীবন্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন না।
আসুন অকপট হৃদয়ে সত্যকে মেনে নিই আর সুখ সমৃদ্ধির অধিকারী হ'ই, পৃথিবীকে সুন্দর করি।
( লেখা ২৫শে জুন'২০২১)

No comments:

Post a Comment