Powered By Blogger

Friday, June 27, 2025

কবিতাঃ সঙ্গ।

রিপুতাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে উত্তপ্ত শরীর-মন-হৃদয়
তোমারি পদতলে তোমার ছায়ায় শান্ত স্নিগ্ধ এই ধরাতল।
প্রখর রিপুর সেই রৌদ্রের ছোঁয়ায় তপ্ত উতপ্ত আমি,
তোমার ঐ ছায়ার আঁচলে আমিও হ'তে চাই শীতল ।
তোমার আঁখি হ'তে ঝরে অবিরল প্রেমধারা,
সিক্ত হ'লো আমার শুষ্ক পরাণ, বহে আনন্দধারা!
হে দয়াময়! হে প্রেমময়!!
চাই শান্ত স্নিগ্ধ হ'তে, চায় বরাভয় সত্ত্বা আমার,
তোমার সঙ্গ পরম সঙ্গ, জীবাত্মা সাথে পরমাত্মার।

Wednesday, June 25, 2025

বিচিত্রা ১৬১

'সমাজ ব্যবস্থা দায়ী'
এই দোহাই দিয়ে যারা নিজের জীবনের অব্যবস্থার দায় এড়িয়ে যায় তারাই সমাজ অব্যবস্থার জন্য প্রকৃত দায়ী।

'সমাজকো বদল ডালো'
ব'লে যারা আওয়াজ তোলে তারা আগে নিজের জীবনকে আমূল বদলে ফেলুক তারপর আওয়াজ তুলুক।

সমাজ পরিবর্তনের যারা ডাক দেয় তারা নিজেদের বৃত্তি প্রবৃত্তিতে ডুবে থাকা জীবনের পরিবর্তন আগে আনুক, তারপর সমাজ পরিবর্তন।

সমাজ পচে গেছে'
যারা বলে তারা হয় জানে না নতুবা নিজেদের লুকিয়ে রাখে। সমাজ পচে যায়নি পচে গেছি আমি, তার দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।

আমাকে নিয়ে সমাজ,
আমাকে বাদ দিয়ে সমাজ নয়, সমাজ ব'লে আলাদা কিছুই নেই। তাই সমাজ দূষিত হ'লে দেখতে হয় আমি দূষিত কিনা।

যে সমাজের দিকে আঙ্গুল তোলে তার নিজের দিকে আঙ্গুল তোলা উচিৎ। কেননা সমাজের দিকে আঙ্গুল তুললে বাকী চারটে নিজের দিকে থাকে।

যে বলে সে সাধু যুধিষ্ঠির, সমাজটাই নষ্ট হ'য়ে গেছে। সে যেন মনে রাখে, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরও জুয়া খেলেছিল, দ্রৌপদিকে বাজি ধরেছিল।

সমাজ Abstruct, বিমূর্ত। আমি মূর্ত, জীবন্ত। আমি সত্য। আমায় বাদ দিয়ে সমাজ মিথ্যা। তাই লড়াই যা কিছু আমার বিরুদ্ধে আমার।

গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়া যেমন বেকুবি ঠিক তেমনি নিজেকে বাদ দিয়ে সমাজকে দোষী করা বেয়াকুবি বা জ্ঞানহীন, বোকার কাজ।

কাউকে বদলাতে যেও না, সমাজকে তো নয়ই, নিজেকে বদলাও। নিজের স্বভাব, ব্যবহার, শিক্ষা, চরিত্র বদলাও, নতুবা জাহান্নামে যাও।

দুর্যোধন ঘর ও সমাজের শত্রু, বিভিষণ নয়, বিভিষণ ঘর বন্ধু। ঘরে ঘরে বিভিষণের মত ভাই হ'লে ঘর, সমাজ, দেশ, পৃথিবী সব শুধরে যাবে।
সমাজ মানে আমি আর আমি মানেই সমাজ।
আমার জীবন জুড়ে ঝুল আর আমি গেছি সমাজের ঝুল ঝাড়তে! 
এই তো আমি সমাজ সংস্কারক!!
( লেখা ২৬শে জুন' ২০২৫)


















প্রবি সমাচার ২৪

ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর ও মহাপুরুষ।

জীব জগত জীবন কারণ ইত্যাদি জাগতিক মহাজাগতিক সমস্ত কিছুর উপর আধিপত্য যার বিদ্যমান তিনিই ঈশ্বর। আমার যদিও বিশেষ জ্ঞান বিজ্ঞানের উপর কোনও দখল নেই তথাপি অনধিকারচর্চার মত বলতে পারি, অবশ্যই অবনতমস্তকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারি, বিজ্ঞানের পথে বস্তুকে ভাঙতে ভাঙতে যেখানে পৌছোনো যায় সেই পরম অণু আর দর্শনের আশ্রয়ে কারণের পিছনে কারণ আর সেই কারণের পিছনে কারণ খুঁজতে খুঁজতে যে পরম কারণে পৌঁছনো যায় সেই পরম কারুণিক-ই হ'লেন সেই ঈশ্বর, পরম ঈশ্বর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই পরম অণু বা সেই পরম কারণ যাকে আমরা পরম ঈশ্বর বলছি, সমস্ত সত্তার সত্তা বা সমস্ত অস্তিত্বের অস্তিত্ব পরম সত্তা, পরম অস্তিত্ব বলছি সেই পরম ঈশ্বর বা পরম সত্তা বা অস্তিত্ব কি রক্তমাংসের প্রাণময় সত্তা বা অস্তিত্ব রূপে সশরীরে আমাদের সামনে আমাদের চক্ষুকর্ণের বিবাদ মেটাতে, অজ্ঞানতার ঘোর অন্ধকার দূর করতে নেবে আসেন?

আর মহাপুরুষ? এককথায় বিশ্বজুড়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে রবীন্দ্রনাথের মত মহাপূরণকারী মহামানব যারা-ই আছেন তাঁরাই মহাপুরুষ। তাঁরা সবাই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য, অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করার জন্য, অন্ধকার থেকে আলোয়, অসভ্যতা থেকে সভ্যতায় উত্তরণের জন্য স্ব স্ব ক্ষেত্রে পথ দেখিয়ে গেছেন।

কিন্তু মহাপুরুষ কি ঈশ্বর? ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর কি মহাপুরুষ?
সহজ কথায় মহাপুরুষেরা জীবনের কোনও একটা দিকের কোনও একটা অংশের মহাপূরণ করেন মাত্র। জীবনের সমস্ত দিকের পরিপূরণ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বা জীব জগত জীবন কারণের সমস্ত দিকের ওপর তাঁদের আধিপত্যও নেই।
আর, ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বরও মহাপুরুষ। তিনিও মহাপূরণকারী। কিন্তু তিনি পুরুষোত্তম। উত্তম সর্বোত্তম পুরুষ। কারণ তিনি জীব জগত জীবন কারণের সমস্ত দিকের মহাপূরণকারী ও আধিপত্য বিস্তারকারী এক ও অদ্বিতীয় মহান পুরুষ!

তাহ'লে মহাপুরুষ আর পুরুষোত্তমের মধ্যে তফাৎ কি?
১) মহাপুরুষ জীব ও জগতের জীবনের কোনও একটা দিকের কোনও একটা অংশের পূরণ করেন আর পুরুষোত্তম জীব জগত জীবন কারণের সমস্ত দিকের পরিপূরণ করেন।

২) ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর জীব জগত জীবন কারণ ইত্যাদি জাগতিক ও মহাজাগতিক সমস্ত কিছুর ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন যা মহাপুরুষের পক্ষে অসম্ভব বললে কম বলা হবে যা তাঁদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না।

৩) মহাপুরুষরা যা বলেন বা ব'লে গেছেন ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বরও তাই বলেন ও বলেছেন। শুধু তফাৎ এই যে মহাপুরুষের বলা ও ব'লে যাওয়া কথার মধ্যে, জীবন দর্শনের মধ্যে যে অসম্পূর্ণতা, যে সুক্ষ্ম ফাঁক, যে অস্পষ্টতা তা পুরুষোত্তম সম্পূর্ণ ক'রে দেন, ভরাট ক'রে দেন, স্পষ্ট ক'রে দেন। আর যে বিষয় মহাপুরুষদের ধরাছোঁয়ার বাইরে সেই বিষয়ও জীবন্ত ঈশ্বরের সহজ করায়ত্ত। কারণ সৃষ্টির সমস্ত কিছুর উৎসমুখ হ'লেন তিনি। কয়েকটা উদাহরণ দিলে তা পরিস্কার হ'য়ে যাবে। পরবর্তী সমাচারে (প্রবি সমাচার ২৫) উদাহরণগুলি সবিস্তারে তুলে ধরবো।

৪) মহাপুরুষরা বহু বহুদূরের জিনিস দেখতে পান আর ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের জন্মজন্মন্তরের, বিশ্বচরাচর জুড়ে সমস্ত অস্তিত্বের, ব্রহ্মান্ডের পর ব্রহ্মান্ড অনন্ত ব্রহ্মান্ড জুড়ে সমস্ত কিছু দেখতে পান। তিনি ভুত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ত্রিকালদর্শী।

৫) মহাপুরুষরাও জীব জগতের সমস্যা জানেন, সমস্যা দেখ্তে পান এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো সমাধানও দেন। কিন্তু তার গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু পুরুষোত্তম সমস্যা জানা বা দেখতে পাওয়া এবং সেই সমস্যা সমাধানের গভীরতা যে শুধু দেখতে পান তা নয়, তার উৎসমুখও তাঁরা জানেন।

৬) মহাপুরুষরা হয়তো আমাকে জীবনে বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার পথ তাতে সুক্ষ্ম ফাঁক থাকলেও দেখিয়ে দিতে পারেন, সমস্যা সমাধানের সাময়িক বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিরকালীন উপায়ও বাতলে দিতে পারেন কিন্তু কর্মফল স্বরূপ আগাম নিশ্চিত ভয়ংকর বিপদ থেকে, মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে বা বাঁচাতে পারেন না। কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী!

৭) মহাপুরুষরা যা বলেন তা সময়ানুযায়ী পরিবর্তনীয় ও পরিবর্ধনীয় হ'তে পারে কিন্তু পুরুষোত্তমদের ব'লে যাওয়া গুলি চিরন্তন এবং যুগ অনুযায়ী আরো বিস্তৃত ও আলোকিত।

ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার নিখুঁত পথ, ফাঁকহীন পথ দেখাতে পারেন, বাতলে দিতে পারেন এবং নিশ্চিত ভয়ংকর কর্মফল তা রোগ, শোক, আঘাত, পঙ্গুত্ব বা মৃত্যু যাই-ই হ'ক না কেন, যা আমাদের জানার বাইরে ছিল, যা আমাদের কাছে একমুহূর্ত আগেও কল্পনার অতীত ছিল সেই সব কিছু থেকে আমাদের সবরকম ভাবে রক্ষা করতে পারেন, নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারেন এবং জন্মের সময় নিয়ে আসা নির্দিষ্ট আয়ুও বৃদ্ধি করতে পারেন।
তাহ'লে সেই মহাপুরুষ কে আর কেই বা পুরুষোত্তম জীবন্ত ঈশ্বর?
আগেই বলেছি, আবারও বলছি, মহাপুরুষ হ'লেন সেই বিশ্বজুড়ে শিক্ষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানব সভ্যতার অগ্রগতির কাজে রবীন্দ্রনাথের মতো যারা সমাজ জীবনে দাগ রেখে গেছেন সেই সমস্ত প্রবাদপ্রতিম প্রাতঃস্মরণীয় মানুষেরা।
আর ঈশ্বর জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এরাই হ'লেন পারফেক্ট; মানব শরীরে পারফেকশনের জ্বলন্ত উদাহরণ। যতদিন না এঁদের মাথার ওপরে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বকে পরিচালনা হবে ততদিন উন্নতি, সুখ, শান্তি, সমৃব্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিত সুরক্ষিত হবে না।
তা আমরা ও মহাপুরুষরা তাঁদের স্বীকার করিনি বা করি না কেন?
এককথায় বলতে পারি, আমরা সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষেরা অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অহঙ্কার, অবিশ্বাসের শিকার আর মহাপুরুষদের সূক্ষ্ম, অতি সূক্ষ্ম, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অহং বোধ। মহাপুরুষেরা প্রায় অনন্ত অসীম জ্ঞানের ভারে অহঙ্কারে জীবন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেন না বা পারলেও স্বীকার করেন না জীবন্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখেন না।
আসুন অকপট হৃদয়ে সত্যকে মেনে নিই আর সুখ সমৃদ্ধির অধিকারী হ'ই, পৃথিবীকে সুন্দর করি।
( লেখা ২৫শে জুন'২০২১)

উপলব্ধিঃ পুরুষোত্তম, মহানায়ক, নেতাজী ও অন্যান্যরা।

কিছু সত্য মেনে নেওয়া সুস্থ মস্তিকের লক্ষণ। অকারণ তুলনা টেনে বিবাদ সবারই পক্ষে ক্ষতিকর। কারও সঙ্গে কারও তুলনা করা অযৌক্তিক এবং কারও সিংহাসনে নিজে ব'সে যাওয়া বা অন্য কাউকে বসানো নিন্দনীয় ও অন্যের সুমহান পরিচিতির পালককে নিজের মুকুটহীন মস্তিকে লাগানো কিংবা নিজের মুকুটের পালক ক'রে সাজানো নিজের কাছেই লজ্জার ব্যাপার ও অপমানজনক। ব্যাপারটা কাকের পিছনে ময়ুরের পুচ্ছ লাগিয়ে রাখার মত। অন্তত শ্রেষঠজনকে সম্মানকারী আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন কোনও সচেতন ভদ্র মানুষ এমন লজ্জাজনক স্বঘোষিত উপাধি গ্রহণ করেন না।
এরকম লজ্জাজনক উদাহরণ ধর্ম, রাজনীতি, অভিনয়, ক্রীড়া সব জগতেই আছে। কয়েকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে।

আমরা ধর্ম জগতে যেমন দেখতে পাই, প্রায় সব ধর্মগুরুরা-ই (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) নিজেদের অখণ্ড মন্ডলের ঈশ্বর ব'লে মনে করেন ও নিজেদের শিষ্যমন্ডলীর কাছে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে ঈশ্বরের সিংহাসনে ব'সে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। কিংবা তাঁদের ভক্তরা তাঁকে ঈশ্বরের বিভিন্ন বিশেষণে উল্লেখ করলে বা তকমা দিলে বারণ করেন না। আধ্যাত্মিক জগতের প্রায় সব ধর্মগুরুরাই জানেন যে সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, সর্বজ্ঞ, পুরুষোত্তম, পরমপুরুষ, পরমপিতা, পরম কারণিক, পরম উৎস, সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মানুষের রূপ ধ'রে নেবে আসেন মানুষের মাঝে, লীলা করেন, তা সত্বেও নিজেকে তাঁর সিংহাসনে বসান তাঁরা তাঁদের ভক্তদের মাঝে। ঈশ্বর আরাধনার জগতে চরম লজজাজনক কপটতা এর চেয়ে আর কিছু নেই। হয় তাঁরা কপট নতুবা তাঁদের ঈশ্বর আরাধনা অসফল; কারণ তাঁরা নিজেরাই চিনতেই পারেননি যাঁর আরাধনা করছেন তাঁকে, তাঁর নেবে আসা রূপকে।

এ তো গেল ধর্ম জগতের কথা। এবার আসি অন্য জগতে। দেখা যাক এখানেও কিছু অন্যের সিংহাসনে জোর ক'রে ব'সে পড়ার মত কিছু ঘটনা আছে কিনা।
বেশ কয়েকদিন ধ'রে প্রায় চোখে পড়ছে নায়ক-মহানায়ক প্রসঙ্গে আলোচনা। আগেও বহুবার এ বিষয়ে আলোচনা ফেসবুকে দেখেছি। দেখেছি নেতাজীকে নিয়ে 'নেতাজী' প্রসঙ্গেও আলোচনা। এ নিয়ে আজ মনে ভাবনার কিছু ঢেউ খেলে গেল তাই এখানে তুলে ধরলাম।
উত্তমকুমারকে মহানায়ক উপাধি কোনো কেউ বিশেষ একজন বা কোনও সরকার বা প্রতিষ্ঠান দেয়নি, এ উপাধি ছিল আম আদমির অন্তরের স্বতস্ফুর্ত উপহার। এ কথা যেন আমরা ভুলে না যায়। ভারতবর্ষের আর কোন নায়ককে মহানায়ক বলা হয়নি, এখনও হয় না।
যেমন সুভাষচন্দ্র বোসকে ছাড়া ভারতবর্ষের আর কোনও নেতাকে নেতাজী বলা হয়নি, এখনও হয়না। নেতাজী সম্বোধন এই ব্যাপারটাও আম আদমির স্বতস্ফুর্ত ভালোবাসার আপন করা ডাক ছিল।
রাজনীতিতে দলীয় আনুগত্যে স্বঘোষিত নেতাজী যেমন আমরা দেখেছি ঠিক তেমনি অভিনয়ের জগতেও রাজনৈতিক দলীয় আনুগত্যের মহানায়ক ও মহানায়িকা পেয়েছি, যেটা স্বঘোষিত প্রাপকের কাছে লজ্জার ব্যাপার। যে লজ্জা আমরা দেখতে পাইনি কারও মধ্যে।। ব্যাপারটা গাছ পাকা আম আর কারবাইড পাকা আমের সাথে তুলনীয়।

আবার আমরা দেখেছি বিশ্ব ফুটবলে ফুটবলের সম্রাট পেলেকে। তেমনি দেখেছি ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনাকে। এই একই রকম ঈশ্বর আর ভগবান উপাধি নিয়ে বিশ্ব বিখ্যাত ক্রিকেটার ডন ব্র্যাডম্যান ও শচীন তেনডুলকারের ক্ষেত্রে বিতর্কিত আলোচনা দেখেছি। ফুটবলের সম্রাট পেলে আর ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনাকে নিয়ে আর ডন ব্র্যাডম্যান ও শচীনকে নিয়ে চুলচেরা তর্ক বিতর্ক, এ সবই স্বতস্ফুর্ত ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু দিনশেষে অবশেষে দেখেছি যে যাঁর জায়গায় সসম্মানে বিদ্যমান।


এর থেকে একটা সত্য প্রমানিত যে, সত্যকে মুছে ফেলা যায় না। শ্রীশ্রীঠাকুরের কথায় "হাজার অন্ধকার সূর্যকে ঢেকে রাখতে পারে না।" সত্যকে যে-ই অস্বীকার করুক, স্বীকৃতি না দিক, তা'তে সত্যের কিছু আসে যায় না। সত্য চিরকালই উলঙ্গ ও অপ্রিয়। সত্যকে অস্বীকার করা মানে নিজে কলঙ্কিত হওয়া, সে যে বা যারাই হ'ক না কেন।
( লেখা ৩৫শে জুন'২০২৪)

উপলব্ধিঃ ভারতের সংস্কৃতি!

সুধীবৃন্দ,
ছবিতে দেখা যাচ্ছে দেশের তিনজন সম্মানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দুপুরের আহারের জন্য বসেছেন। এদের মধ্যে একজন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিতশাহজী আছেন। তাঁদের সামনে সুন্দর ক'রে সাজানো রয়েছে ভাতের থালা। আর থালার চারপাশে গোল ক'রে রয়েছে দুই সারিতে পরপর সাজানো তরকারির বাটি। কতগুলো বাটি রয়েছে তা গুণে দেখা অসম্ভব। প্রায় ৪০টা তরকারির বাটি। ছবি দেখে মনে হচ্ছে নেতারা এই আয়োজন দেখে একটু চিন্তিত ও দ্বিধাগ্রস্ত।
আর, এই ছবিতে লেখা রয়েছে, এটাই ভারতের সংস্কৃতি!
এই যদি ভারতের সংস্কৃতি হয় তাহ'লে এই সংস্কৃতি থেকে দেশের কোটি কোটি মানুষ লাভ পাচ্ছেন তো, বঞ্চিত হচ্ছেন না তো ? যদি বঞ্চিত হ'য়ে থাকে তখন কোথায় থাকে ভারতের এই বালখিল্য সংস্কৃতি? কে বলেছে এই সংস্কৃতি ভারতের সংস্কৃতি? যারা এই ছবি পোস্ট করেছেন তারা কি উদ্দেশ্যে এই পোষ্ট করেছেন, জানি না। যদি ব্যঙ্গাত্মক অর্থে পোষ্ট হ'য়ে থাকে তাহ'লে পাশাপাশি ভারতের প্রকৃত সংস্কৃতি তুলে ধরা হ'ক। নতুবা বন্ধ হ'ক এই বালখিল্য জ্ঞান? আগে, 'আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়' উপদেশ নিজের চরিত্রে, নিজের জীবনে উদাহরণ হ'য়ে উঠুক তারপর দেখা যাবে।


আর, এই সংস্কৃতি যদি ভারতের সংস্কৃতি হয়েই থাকে তাহ'লে কি এই সংস্কৃতি এখানে যাঁরা বসে আছেন তাঁদের ঘরে মানা হয়? এনারা এটা মানবে তো? এনাদের থালার চারপাশে ওগুলি কি? এত খাবার ইনারা খাবেন তো নাকি উচ্ছিষ্ট খাবার প্রসাদ ক'রে দেবেন এলাকার গরীবদের জন্য? নাকি ডাস্টবিনে জায়গা হবে এই সংস্কৃতির?
যাই হ'ক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা খাবার পায় তো? নাকি থালায় দেখেনি তো সাজানো ভাতের থালা? কোনটা? আচছা আমরা তাদের কথা ছেড়ে দিলাম, যারা আয়োজন করেছে তাদের ছাড়া (তাদেরও সবার ঘরে এই আয়োজন নেই) সেই অঞ্চলের ক'জন ভাগ্যবান এই আয়োজন, বাস্তবে ছেড়ে দিলাম, স্বপ্নেও দেখেছে?




এর থেকে বালখিল্য সংস্কৃতি ছেড়ে আসুন বালখিল্য ধর্মজগতের মানুষজনের মতো হরি নামের মাহাত্ম্য না বুঝে চার অক্ষরের মত মেতে থাকি, বুঁদ হ'য়ে থাকি। যদি মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
( লেখা ২৫শে জুন' ২০২৫)



বিচিত্রা ১৬১

Instead of dying, we all would like to live in full vigor, without wrinkles, grey hair or disease and to enjoy life for ever.
( লেখা ২৫শে জুন' ২০১২)

সবারই কমবেশি সীমাবদ্ধতা আছে।
কিন্তু সীমাবদ্ধতা যেন তার সীমা না হারায়।

সত্যের পাশে দাঁড়াতে এত দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেন!?
শয়তানের মিথ্যা তাই এত শক্তিশালী জেনো।

বিবেকের মুখোমুখি একাকী দাঁড়াও আর দেখো 
লজ্জায় মুখ হ'য়ে যাবে নত তোমার।
মানো আর না মানো জেনো সময় দেবে উত্তর যা দেবার।
( লেখা ২৫শে জুন'২-১৮)

পেটে নেই দানাপানি খলখলাও বেশী!
দুনিয়ার 'দ' দেখোনি শালা এখনো পর্যন্ত 
অথচ উ, ই, ন, য়,আ, র আছে বাকি!!
(লেখা ২৫শে জুন'২০২৫)

ফেসবুক, ইউ টিউব জুড়ে আমরা সবাই এখন
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বিশেষজ্ঞ পন্ডিত! 
চরিত্রে লেন্ডিত!!

"মুখেতে আছে, ব্যবহারে নাই
সেই শিক্ষার মুখে ছাই"
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের এই বাণীর জ্বলন্ত রূপ 
আমরা তথাকথিত সৎসঙ্গীরা!!

প্রভু তুমি এসেছিল বারেবারে 
তোমার রঙে তোমার সৃষ্টিকে রাঙাতে!
ভন্ড ভক্তকুল ও আস্তিক আমরা
বাধার পাহাড় হ'য়ে দাঁড়িয়েছি 
বারেবারে তোমার কাজেতে!!
( লেখা ২৫শে জুন'২০২০)

দয়াল!
যারা ভালো থাকতে চায় তাদের তুমি ভালো রেখো আর
যারা চায় না তাদের তুমি ক্ষমা ক'রে দিও;
কারণ তারা জানে না তাদের শেষের সেদিন ভয়ংকর!!
( লেখা ২৫শে জুন'২০২২)

নিজের চরিত্র, নিজের জীবন সাজানোর চেয়ে 
ঘরে ঘরে সৎসঙ্গীরা ঠাকুরের আসন সাজানোতে মনোযোগী।

ঠাকুর আমাদের দেখতে খুব সুন্দর, তাঁকে সাজাতে হবে না। সোনা দিয়ে, ফুল দিয়ে তাঁকে সাজাতে যেও না। নিজেকে ও নিজের চরিত্রকে সাজাও।

শিশু প্রাজাপত্য ব্রত পালন ক'রে কি হবে?
চরিত্র শুদ্ধ হবে তো?

শিশু প্রাজাপত্য-ব্রত বা মহাসান্তপন-ব্রত পালন করো আর যাই-ই করো, কোনও লাভ নেই, যদি না শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে কপটতা বন্ধ করো।
( লেখা ২৫শে জুন'২০২৪)
































Tuesday, June 24, 2025

বিচিত্রাঃ ১৬০

গতি হারা ক্লান্ত এক পথিক জানে না সে কি হয়েছে,
একাকী ঘুরে বেড়ায় পথে পথে।

অন্যের লেখা নিজের ব'লে পোষ্ট করা 
আর কা'কে মানায় জানি না তবে জানি 
সৎসঙ্গীদের মানায় না।

অন্যের লেখা নিজের ব'লে পোষ্ট করা 
আর কা'কে মানায় জানি না 
তবে জানি সৎসঙ্গীদের মানায় না।

দয়ালের দয়ায় সবার ভিতরেই শক্তি আছে, 
সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে সৎসঙ্গীরা নিজে কিছু সৃষ্টি করুন, 
দয়াল খুশি হবেন।

দয়ালের দয়ায় সবার ভিতরেই শক্তি আছে, 
সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে সৎসঙ্গীরা নিজে কিছু সৃষ্টি করুন, 
দয়াল খুশি হবেন।

দয়ালের দয়ায় সবার ভিতরেই শক্তি আছে, 
সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে সৎসঙ্গীরা নিজে কিছু সৃষ্টি করুন, 
দয়াল খুশি হবেন।

সৎসঙ্গীরা অন্যের সৃষ্টিকে স্বীকৃতি দাও, 
নিজের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা মহাশক্তিকে জাগাও, 
দাউদহনের সৃষ্টি করো দয়ালের নামে।
( লেখা ২৪শে জুন'২০২৪)

































আত্মকথন ২২

খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আছি আমি একা। এখন সময় দুপুর ১টা। আশেপাশে কেউ নেই, ফাঁকা চারপাশটা। অফিস বিল্ডিং-এর সামনে গোল ক'রে তৈরী অপূর্ব ফুলের বাগান! একপাশে গাড়ি পার্কিংয়ের শেড। সেখানে কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের পদস্থ কর্মচারীদের প্রত্যেকের গাড়ি রাখার জায়গা আর সেই নির্দিষ্ট জায়গার ওপরে ঝুলছে প্রত্যেকের নেম প্লেট। সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রেসিডেন্টের নাম লেখা একটা নেম প্লেট সেখানে ঝুলছে। আর সেই নেম প্লেটের নীচে কালো রঙের একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

আকাশটা মেঘে ঢাকা। মেঘলা আকাশ থেকে মনে হচ্ছে যেন অনেক খুশি পুষ্পবৃষ্টির মতো আমার চোখমুখের ওপর ঝ'রে পড়ছে। একটা মিষ্টি হাওয়া বইছে। চোখেমুখে সেই মিষ্টি হাওয়া আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! শিশুর নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শের মতো সেই হাওয়ার স্পর্শ।
আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম বন্ধুরা কেউ আছে কিনা। হঠাৎ 'বাপী-ই-ই' ডাক শুনে দূরে তাকিয়ে দেখলাম একটা গাছের নীচে বন্ধুরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমার আসার অপেক্ষায় তারা বসে আছে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হাত দেখালাম। তারপর এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে। অপেক্ষার অবসান হ'লো।

যেতে যেতে মনে মনে ভাবলাম একটা কপট ব্যর্থতা চোখেমুখে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় তাদের সামনে। কিন্তু অভূতপূর্ব জয়ের যে উচ্ছ্বাস-আনন্দ আর তার বাঁধ ভাঙা ঢেউ মনের মধ্যে বুকের ভেতরে আছড়ে পড়ছে ক্রমাগত আর তার অনাবিল প্রকাশ ফুটে উঠতে চাইছে চোখেমুখে তা রোধ করা অসম্ভব। চেষ্টা করলাম জয়ের আনন্দ লুকিয়ে তাদের সামনে হাজির হ'তে। আমাকে নিরুৎসাহ দেখে বন্ধুরা হতাশায় ভেঙে পড়লো। নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো। 'কি হ'লো? কি বললো? রেগে আছেন? আমাদের ব্যাপারটা বলেছিস? চাকরী হবে রে? হবে না? এই আমাদের বিরুদ্ধে কোনও পুলিশি অ্যাকশান হবে না-তো? ঐ রাজনৈতিক দাদা রেগে নেই তো? ইত্যাদি নানা প্রশ্নের চাপে বেশীক্ষণ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলাম। বন্ধুদের অজানা এক ভয় মিশ্রিত কৌতুহলী নানা প্রশ্নের সম্মুখে কয়েকবার কপট হতাশার বাতাবরণ তৈরী ক'রে শেষে ব্যর্থ হ'য়ে নিজেকে খুলে দিলাম। হেসে উঠলাম আমি। সবাইকে হাত দিয়ে থামিয়ে মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটিয়ে ব'লে উঠলাম, আরে দাঁড়া, দাঁড়া। এত হড়বড় করার কিছু নেই। সবুরে মেওয়া ফলে। তারপর পুরো ঘটনার বিবরণ সংক্ষেপে তুলে ধ'রে বললাম, চল, এখন বাড়ি যাই। সন্ধ্যেবেলায় দাদার কাছে যাব, সেখানে সব জানিয়ে তারপর লিস্ট তৈরী করবো।

সবাই হৈ হৈ ক'রে আনন্দে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরে চললাম। একটা অদ্ভুত প্রশান্তি আমাকে বলয় তৈরী ক'রে যেন গার্ড ক'রে নিয়ে যাচ্ছে। কি যে ভালো লাগছে তা ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার নেই। আজ এই লেখার মুহূর্তে শুধু আরও একবার জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে সেই ভালো লাগা অনুভব করতে পারছি। একেবারে জীবন্ত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ঘটনাটা। যেন মনে হচ্ছে টাইম মেশিনে চড়ে চলে গেছি সেই অতীতের খুশীর দিনটাতে। লিখতে লিখতে চোখ বন্ধ করলেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সেই সেদিনের হাওয়ায় ভেসে যাওয়া দৃশ্যটা। যেন মনে হচ্ছে হাওয়ার ভেলায় ভেসে এগিয়ে চলেছি আনন্দে খুশীতে দলবল মিলে।

বাড়িতে এসে দুপুরে স্নান খাওয়া সেরে ঘরে দরজা জানালা বন্ধ ক'রে ফ্যান চালিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে মনে ভাসতে লাগলো অফিস ঘরের ছবিটা। ঘরে আসার পর থেকে আমার চোখেমুখে চলাফেরার মধ্যে একটা খুশীর ভাব লক্ষ্য ক'রে মা খেতে ব'সে জিজ্ঞেস করলো, ঘরে ঢোকার পর থেকে লক্ষ্য করছি তোকে, আজ এত ফুর্তি কিসের? আমি হেসে বললাম, হ্যাঁ, হ্যাঁ। আজ দারুণ আনন্দ। কেন? মা জিজ্ঞেস করলো। তারপরে বললো, কেন লটারি লেগেছে নাকি? আমি খেতে খেতে বললাম, লটারি লাগার চেয়ে হাজার গুণ বেশী কিছু পেয়েছি। তারপরে মাকে বিস্তারিত ঘটনাটা বললাম। আমার চাকরী পাওয়ার কথা শুনে বাড়ির সবাই হৈ হৈ ক'রে উঠলো, খুব আনন্দ পেল।
ভাবতে ভাবতে কখন যে শুয়ে পড়েছিলাম ঠিক নেই। সন্ধ্যে হওয়ার অনেক আগেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। উঠে বসলাম বিছানায়। মনে মনে ঠিক করলাম কার কার নাম দেবো লিস্টে। একটা লিস্ট বানিয়ে নিলাম মনে মনে। তারপরে কাগজে নামগুলি লিখে জামার পকেটে রেখে দিলাম। ইতিমধ্যে সন্ধ্যে হ'য়ে গেছে। ঠাকুরঘরের ভিতর থেকে শঙ্খধ্বনির আওয়াজ ভেসে আসছে। তারপরে ভেসে এলো সান্ধ্য প্রার্থনা। মা-বৌদি-দিদির গলা ভেসে আসছে। আমি আমার ঘরে বিছানায় বসেই প্রার্থনা করলাম। তারপরে প্রার্থনা শেষে চোখেমুখে একটু জলের ঝাপটা দিয়ে ড্রেস পড়ে বেরিয়ে পড়লাম আড্ডাস্থলের উদ্দেশ্যে।

তারপরে দল বেঁধে গেলাম দাদার ডেরায় যেখানে ব'সে তিনি তার ব্যবসা পরিচালনা করেন। আমি এগিয়ে গিয়ে সারাদিনের ঘটনা সংক্ষেপে জানালাম। বন্ধুরা সবাই দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। তিনি সব শুনে খুশি হ'য়ে বললেন, তাহ'লে লিস্টটা বানিয়ে ফেল। আমি লিস্ট বানাবার কথা তাঁকে জানালাম। তারপরে তিনি অনুরোধের সুরে বললেন, তোর লিস্টে আমার দু'জনের নাম ঢুকিয়ে দিবি। আমি হেসে বললাম, দু'টো কি বলছেন দাদা, আপনি যে কটা বলবেন আমি লিখে দেবো। তিনি বললেন, না, না আমার দু'জনের বেশী কেউ নেই। তাছাড়া এ যা করেছিস তুই-ই করেছিস, একা করেছিস। এখানে আমার কোনও অবদান নেই। তারপরে বললেন, কবে দিবি লিস্ট? আমি বললাম, কালই যাবো, দেরী করবো না। ঠিক আছে, কাল কি হ'লো জানাস ব'লে বললো, শোন, একটা কথা আছে। এই কথা ব'লে তিনি তাঁর অফিস ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে তিনি বললেন, তুই বোকার মতো এটা কি করলি? আমি অবাক হ'য়ে বললাম, কেন কি করেছি? তিনি একটু চুপ ক'রে থেকে পরে বললেন, তোকে যে কালকে চাকরীতে জয়েন্ট করতে বললো তুই সেটা করলি না কেন? আমি অবাক হ'য়ে বললাম, আমি জয়েন্ট করলে তারপরে আর কি ক'রে বাকীদের কথা বলবো? আরে বোকা, আগে তুই তো ঢোক তারপর না হয় অন্যদের কথা ভাববি। তুই এই যে সুযোগ হারালি এই সুযোগ যদি আর না পাস। কে বলতে পারে এর পরে আদৌ কারও হবে কিনা? আরে শালা, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা শুনিসনি প্রবাদটা? তারপরে আর কিছু না ব'লে 'যাক ছাড়, কাল দ্যাখ কি হয়' ব'লে হাঁটতে লাগলো। আমিও পিছন পিছন হেঁটে বাইরে বেরিয়ে এসে 'আসছি' ব'লে বন্ধুদের নিয়ে বিমর্ষ মনে পরের দিনের কথা ভাবতে ভাবতে চুপচাপ ফিরে চললাম নিজের আড্ডার জায়গায়। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আমি কি কিছু ভুল করলাম?

আজ জীবন সায়াহ্নে এসে ভীষণ মনে পড়ে কথাগুলি। ভাবি, হে দয়াল! কি ভুল কি ঠিক করেছি সারাজীবন তুমি জানো।
( লেখা ২৪শে জুন'২০২৩)

কবিতাঃ পথ চলা।

এখনই এত অসহিষ্ণুতা? এখনই এত বিরক্ত?
এখনই হাঁপিয়ে গেলে? এখনই এত রিক্ত!?
সবে তো শুরু, সবে তো সকাল।
শুরুতেই শেষের বাঁশি কেন? সকালেই বিকাল?
সকালেই বিকেলের ফুল হ'য়ে প'ড়ো না ঝ'ড়ে।
অসহিষ্ণুতা পছন্দ? পছন্দ বিরক্তি?
বন্ধু, সব নষ্ট ক'রো না বিরক্তিকে সাথী ক'রে।
সবে যে পথ চলা শুরু, শেষ বহু বহু বহু দূর!
এ পথ চলা সে পথ চলা নয়। হেঁটে যেতে হবে
ক্লান্তিহীন শ্রান্তিহীন মাথায় নিয়ে ভয়ংকর রোদ্দুর।
এ পথ চলা তো এক জন্মের পথ চলা নয়।
এ সংগ্রাম তো সে সংগ্রাম নয়।
এ লড়াই, এ আন্দোলন সে লড়াই, আন্দোলন নয়।
আবেগে ভেসে গিয়ে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে
সমাজ কো বদল ডালোর সস্তা আহ্বানে
কপটতা, হিংসা, লোভ, লালসাকে সাথী ক'রে
বৃত্তি প্রবৃত্তির চুলকানিতে উসকে গিয়ে
কাউকে হত্যার আন্দোলন এ নয়।
এখানে আদর্শের কচকচানির বিলাসিতার
নেই কোনও স্থান, নেই কোনও আশ্রয়।
ক্ষমতা দখলের, রাতারাতি বদলের স্বপ্ন দেখার
সাধনা এ নয় বন্ধু, এ সাধনা সে সাধনা নয় গো।
শর্টকাটে পথ চলে সস্তা চমকে ভর্তুকি দিয়ে
ছলে বলে কৌশলে জাল ফেলে মানুষ ধ'রে
দু'দিনের মিথ্যে অসার ক্ষমতার জন্য নয়
মিথ্যে সাজে সেজে সাধুর বেশে এই পথ চলা।
মানুষকে বাঁচাবার পথে, জীবনবাদের পথে,
অস্তিত্ব রক্ষার পথে, বাঁচা বাড়ার পথে
ঈশ্বরের সাথে ঈশ্বরের হাতে হাত রেখে
তাঁরই ইচ্ছায় তাঁরই মনোমত হ'য়ে তাঁরই চলনে
চ'লে তাঁরই রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়ে
পবিত্র আত্মার হ'য়ে অধিকারী জন্ম জন্মান্তরের
আলোময়, রূপময়, মধুময়, রসময় এই পথ চলা।
বন্ধু, এটা মনে রেখো কিন্তু।
( লেখা ২৪শে জুন'২০২৪)

গানঃ তোমরা রাধাস্বামী গাও।

তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।
এ যে পরম আধার, এ নাম প্রাণ ভরে গাও।
তোমরা এ নাম প্রাণ ভ'রে গাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।

নামের নিশান মাথায় নিয়ে গাইবো পরাণ ভ'রে
ছুটবে যে ঐ নামের তরী দেশে দেশান্তরে।
নামেরই এমন গতি কাটে যে মহাভীতি
নামের হালা পান ক'রে ভাই মাতাল হ'য়ে যাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।
এ যে পরম আধার, এ নাম প্রাণ ভরে গাও।
তোমরা এ নাম প্রাণ ভ'রে গাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।

রাধা নামের ধারায় ভেসে যাবো দয়াল ধামে
দয়াল আমার আছেন সেথায় মাতবো তাঁর প্রেমে।
নামেরই প্রবল টানে যাবো ভেসে তাঁর নাম গানে
নামের বাদাম তুলে সবাই পাগল হ'য়ে যাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।
এ যে পরম আধার, এ নাম প্রাণ ভরে গাও।
তোমরা এ নাম প্রাণ ভ'রে গাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।

রাধা রাধা ব' লে সবাই দয়াল সাথে গাইবো
দয়াল আমার জীবনস্বামী তাঁর প্রেমেতেই ডুববো।
দয়াল আমার নামের নামী, দয়ালই রাধাস্বামী
রাধাস্বামী নামের ভেলায় সবাই চড়ে যাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।
এ যে পরম আধার, এ নাম প্রাণ ভরে গাও।
তোমরা এ নাম প্রাণ ভ'রে গাও।
তোমরা রাধাস্বামী গাও, তোমরা রাধাস্বামী গাও।
( লেখা ২৪শে জুন' ২০২৪)

Monday, June 23, 2025

গানঃ বলবো না গো আর কোনোদিন

বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।
যা ভালো লাগে তাই নিয়ে থাকো,
তাই ভালোবাসো। তাই ভালোবাসো।২

বলেছিলেম দয়ালকে ভালোবাসতে
সব ভুলে গিয়ে শুধু রাধা ব'লে
শুধু রাধা ব'লে, রাধা রাধা ব'লে।
বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।

ভালোবাসতে ব'লে করেছি অপরাধ
সেই অপরাধে পেয়েছি আঘাত
পেয়েছি আঘাত, নিয়েছি অপবাদ।
বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।
  
বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।
যা ভালো লাগে তাই নিয়ে থাকো,
তাই ভালোবাসো। তাই ভালোবাসো।২
বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।

বলেছিলেম দয়ালকে প্রাণভরে ডাকতে
সব ছেড়ে শুধু রাধাস্বামী ব'লে
রাধাস্বামী ব'লে, রাধাস্বামী ব'লে।
বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।

বলবো না তোমায় দয়ালকে ভালোবাসো
রাধা ব'লে ডাকো, আর কোনোদিনও
আর কোনোদিনও, আর কোনোদিনও।
বলবো নাগো আর কোনোদিন
দয়ালকে ভালোবাসো।
 ( লেখা ২৪শে জুন' ২০২৪)

বিচিত্রা ১৫৯

সৎসঙ্গে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে এলেই কি সৎসঙ্গী হওয়া যায়?

শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে যারা বেইমানী করেছে 
তাঁরা কি সব সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরা পরম ভক্ত ছিল না?

সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরা চেহারাটার আড়ালে মনটা সাদা তো?

ধর্ম ও রাজনীতি জগতে সাদা পোশাক পরা 
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা কি?

সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন, সাধু না সাজার কথা কে বলেছেন? 
সাধু না সেজে সাধু হওয়ার চেষ্টা করতে কে বলেছেন?

সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন,
সন্ন্যাসী সেজে মিছামিছি বহুরূপী না হ'য়ে 
মনের সন্ন্যাস হওয়ার কথা কে বলেছেন?
( লেখা ১৯শে'জুন ২০২৪)




















































Saturday, June 21, 2025

বিচিত্রা ১৫৮

ইষ্টকাজে দিচ্ছো বাধা!?
নিজের পায়ে নিজে মারছো কুড়ুল;
ওরে আমার হাঁদা! ওরে আমার ভোঁদা!!

রাম নাম সত্য হ্যায়!
ব্রহ্মান্ড মে এইসা কৈ শক্তি নেহি হ্যায়
ইস উজ্জ্বল সত্য কো ঝুটা সাবিত করে!

পোষাকহীন উলঙ্গ সত্যের গড়ে তোলা প্রাসাদ 
ভেঙে পড়ে ঝলমলে পোষাকে মোড়া অসত্যের চাপে 
সত্য -মিথ্যার মাঝখানে থাকা মানুষের ভিড়ে।
( লেখা ২১শে জুন' ২০২১)



















Friday, June 20, 2025

আত্মকথন ২০

মুহূর্তের মধ্যে একটা বিদ্যুৎ তীব্রগতিতে পা থেকে মাথায় উঠে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে গেল। কেঁপে উঠলাম আমি। একটা তীব্র রক্ত চাপ অনুভব করলাম। ব্যায়াম করা শক্ত সমর্থ চেহারার যুবক আমি। বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং অভিনয় জগত, ক্রীড়া জগত (ক্রিকেট), ব্যায়াম, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যুক্ত থাকার জন্য আজ পর্যন্ত অনেক রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা, খেলোয়াড় ইত্যাদি বিভিন্ন জনের সংস্পর্শে এসেছি, সঙ্গ করেছি কিন্তু কোনওদিন এরকম শিল্পমহলের কোনও ক্ষমতাবান শীর্ষ ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসিনি এবং এত ভাইব্রেসান, এত প্রভাব কোনওদিন অনুভব করিনি। বুঝতে পারলাম কোনও একটা রহস্যময় অজানা জালে জড়িয়ে পড়তে চলেছি। কোনও কথা বলতে পারছি না। আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন প্রেসিডেন্ট। কি অসম্ভব তীব্রতা সেই দৃষ্টির! আমি যেন সম্মোহিত হ'য়ে পড়ছি। সেই বিশাল ফাঁকা ঘরের বিশাল টেবিলের সামনে প্রায় ২৪ হাজার কর্মচারী আর পিন টু এলিফ্যান্ট সামগ্রীর হাজারো সাপ্লায়ার, আশেপাশের কতশত দোকান, জেলা জুড়ে অনুসারী শিল্প আর তার কর্মচারী মোট কথা সমগ্র জেলার অর্থনীতি, লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজি যে শিল্পের ওপর নির্ভর করছে সেই শিল্পের প্রধান পরিচালকের সামনে দাঁড়িয়ে আমার হঠাৎ নিজেকে বড্ড অসহায় একা নিসঙ্গ মনে হ'লো। মনে হ'লো যেন আমি একটা চুনোপুঁটি আর আমি সম্মোহিত চোখে স্পষ্ট দেখতে পারছি আমার সামনে বি-শা-ল একটা হাঙর আমাকে বি-রা-ট হাঁ ক'রে গিলতে আসছে! এইমুহূর্তে আমি কি করবো, কি করা উচিত, কি উত্তর দেব, কি বলবো, কি বলা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না, মাথাটা এলোমেলো হ'য়ে যাচ্ছে। আমি পাগল হ'য়ে যাবো।

ভাবলাম, হে দয়াল! আমি কেন এখানে এলাম? এখন কি ক'রে এখান থেকে বের হবো? আকুল ভাবে ডাকতে লাগলাম মনে মনে। দয়াল! আমায় এখান থেকে এই ফাঁকা বি-শা-ল যন্তরমন্তর ঘর থেকে বের ক'রে নিয়ে চলো! ভয়ে, এলোমেলো চিন্তায় অবশ আমি। আমার মনে হ'লো এক ছুটে বেরিয়ে যায় বাইরে। প্রেসিডেন্ট পলকহীন একদৃষ্টে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হ'লো আমার মনের কথা পড়ে নিচ্ছেন তিনি। চোখের তারা দু'টো কি উজ্জ্বল আর শক্তিশালী! মনে মনে অসহায় আমি ঠাকুরকে বললাম, হে দয়াল! আমি কি করবো তুমি বলে দাও। কোনও উত্তরই খুঁজে পাচ্ছি না। দ্রুত তীব্রতার সঙ্গে নাম করতে লাগলাম আমি মনে মনে। একটু পড়ে তিনি বললেন, তাহ'লে লিস্ট তৈরী ক'রে ফেলুন, তারপরে আমি ফোন ক'রে ব'লে দিচ্ছি তার সঙ্গে গিয়ে এখনই যোগাযোগ করুন। কালকের মধ্যে------- আমি আর তাঁকে কিছু বলতে না দিয়ে সাহসে ভর ক'রে নিজেকে শক্ত ক'রে ধ'রে রেখে তাঁর কথার মাঝখানেই তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতো দয়ালের বীজনাম স্মরণ ক'রে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর বলা স্পষ্টবাদী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও কথাকে সম্বল ক'রে স্পষ্ট অথচ মিষ্ট স্বরে কাঁচুমাচু হ'য়ে ব'লে ফেললাম, কনভয়ে ড্রাইভিং-এ ইচ্ছে করলে অনেক আগেই ঢুকতে পারতাম স্যার। ড্রাইভিং-এ ছাড়া অন্য কোনও ডিপার্টমেন্টে যদি সবাইকে একটা ব্যবস্থা ক'রে দেন তাহ'লে আমৃত্যু চিরকৃতজ্ঞ থাকবো স্যার। আপনার কাছে ঋণী হ'য়ে থাকবো স্যার। একনাগাড়ে কথাগুলি ব'লে ভয়ে ভয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয় আমার যদি সমস্তটা ভেস্তে যায়, কারোরই যদি কিছু না হয়। যদি অসম্মতি জানিয়ে বের ক'রে দেয়। তারপরে দ্বিতীয়বার কি করবো? চতুর্দিকে তাঁর লোকজন। ইচ্ছে করলে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন, যা ইচ্ছা তাই-ই করতে পারেন। গুন্ডা-মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা সব তাঁর হাতের মুঠোয়। আমি কি করতে পারি। মাঝখান থেকে এত পরিশ্রম, এত চেষ্টা সব ব্যর্থ হ'য়ে যাবে। আমি মরিয়া হ'য়ে আবার ব'লেই ফেললাম, স্যার, পড়াশুনা ক'রে ড্রাইভারি করবো? আপনি স্যার ড্রাইভারের চাকরী দেবেন? তিনি আমার দিকে গম্ভীর হ'য়ে তাকিয়ে রইলেন। তারপরে কঠিন গলায় বললেন, কেন ড্রাইভারের কাজ কি অপমানের? লজ্জার? আমি থতমত খেয়ে উদভ্রান্তের মতো বললাম, না, না, না স্যার, আমি তা বলতে চাইনি। আমি ক্ষমা চাইছি আমার বলার জন্যে। হাতজোর ক'রে বললাম, কারখানার ভিতরে যদি দয়া ক'রে কাজ করার সুযোগ ক'রে দেন তাহ'লে---- আমায় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে। আপনি আপনার একটা বায়োডাটা আমার সেক্রেটারিকে জমা দিয়ে যান আমি দেখছি। আমি সেক্রেটারিকে ব'লে দেব আপনি উনাকে জমা দিয়ে যাবেন কালকের মধ্যে। ঠিক আছে এখন আপনি আসুন। পরে আমি ডেকে নেব।

আমি আকাশ থেকে ধপাস ক'রে পড়লাম। চুপ ক'রে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে বললাম, হে দয়াল, এখন আমি কি করবো? আরও বড় ফাঁদে পড়ে গেলাম আমি। আমার একার বায়োডাটা জমা দিতে বললেন তিনি। বাকীদের তাহ'লে কি হবে? আমি আমার একার বায়োডাটা জমা দেব কি ক'রে? ভেতর থেকে কে যেন বললো, এ তো অন্যায়! এ তো বেইমানি! আমি কি এটা করতে পারি? আমি তাহ'লে এখন কি করবো? বোকার মতো ফ্যালফ্যাল ক'রে প্রেসিডেন্টের মুখের দিকে চেয়ে রইলাম আমি আর ভাবনাগুলি ঝাপটা মারতে লাগলো মাথার মধ্যে। মনে হ'লো আমি পাগল হ'য়ে যাবো। প্রেসিডেন্ট মাথা নীচু ক'রে ফাইলে মন দিলেন।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৩)

গানঃ পাই যদি তোমারে।

ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।
দিয়েছিলে যে ভালোবাসা আমারে
পারিনি তা আমি রাখতে ধরে
রাখতে ধ'রে, রাখতে ধ'রে।
ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।

ছেড়ে দিয়ে তোমারে প্রভু অপরাধ
করেছি কত, দিয়েছি অপবাদ;
করেছি অপরাধ, দিয়েছি অপবাদ।
ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।

ভালোবাসা পেয়েও দিয়েছি আঘাত
সেই আঘাতে পাই আমি লাজ;
মাথা নত আজ, মাথা নত আজ।
ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৪)

উপলব্ধিঃ আবেদন।

আবার নির্বাচনের ঘন্টা বেজে উঠেছে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। যৌবনের শুরু থেকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা জীবন আজ জীবন সায়াহ্নে এসে অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধির উপর দাঁড়িয়ে একটাই আবেদন জয়ী দল আর প্রতিনিধিদের কাছেঃ


দুর্নীতি আর উন্নতি পাশাপাশি হাত ধরাধরি ক'রে চলুক। কোনও আপত্তি নেই। শুধু প্রার্থনা উন্নতির সঙ্গে দুর্নীতির ৭৫ভাগ বাদ দিয়ে বাকী ২৫ভাগ গরীব জনগণের জন্য খরচা হ'ক। দু'বেলা দু'মুটো পেটভরে খেতে পাক গরীব ভোটার। রেশনে যে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে তাই থাক। সঙ্গে ফাউ হিসেবে কিছু পাওয়া গেলে ঐ মোটা চালের ভাত অন্তত খাওয়া যায়। খেয়ে অন্তত মরুক গরীব ভোটার। তবে বন্টনটা ঠিকঠাক অন্তত হ'ক। হাজার রকমের রেশন কার্ডের মাধ্যমে বন্টন ব্যবস্থা বন্ধ ক'রে একইরকম সহজ সরল হ'ক। দুর্নীতির ক্ষীর আর ঐশ্বর্যে সম্পদে ভরে যাক জীবন কোনও আপত্তি নেই শুধু সব না খেয়ে সামান্য একটু ছিটিয়ে দেওয়া হ'ক গরীবের পাতে, তা'তে ঈশ্বর মঙ্গল করবেন। কিচ্ছু লাগবে না আর। শেষের সেদিন গরীবের অমঙ্গল হ'লেও এই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শেষের সেদিন মঙ্গল হবেই হবে।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৩)

বিচিত্রা ১৫৭

কবিতা মানেই প্রেম?
আর প্রেম মানেই কি নারী?
কবি আনাড়ির নারী প্রেম এত কোথায় রাখি!!


কবিতা মানেই কি নারী?
আর নারী মানেই শরীরী?
কবি আনাড়ির নারী শরীরী 
উপত্যকায় বিচরণ অকারণ! 
কেমনে ভারসাম্য রাখি!!
( লেখা ২০শে জুন'২০১৭)














Thursday, June 19, 2025

গানঃ প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই

প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই
লাজেতে যে মরি আজ কাহারে শুধাই।
কোথায় খুঁজে পাই।
প্রভুজী 
তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।

কপাল যে আমার মন্দ কার যে কি করেছি ক্ষতি
জানি না আর কি সর্বনাশ লেখা আছে আর কি দুর্গতি।
নামেতেও জাগিল না পোড়া কপাল আমার হায়।
তোমায় কেমনে জাগায়।
প্রভুজী 
তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।

আমি ভক্ত অপদার্থ সখা অনুকূল ভগবান
বৃত্তিজ্ঞানী ইতরপ্রাণী দয়াল তবু দয়াবান।
প্রাণ আমার ওষ্ঠাগত অনুকূল তুমি সহায়।
তোমায় কেমনে জাগায়।
প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।

আমি আজ বোবাঅন্ধ দুঃখ কষ্ট অশেষ
চলনতলে তোমার সঁপেছি প্রাণ নিঃশেষ
ললাটে নামের চিহ্ন মৃত্যুরে কি ডরায়
তোমায় খুঁজে বেড়ায়।
প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।
( লেখা ১২ই মে'২০২৫)

( চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায় সুরে)

Wednesday, June 18, 2025

বিচিত্রা ১৫৬

আমার ছেলেমেয়ের ভুলের জন্য আমি দায়ী। 
আমার ভুলের জন্য আমার বাবা-মা। 
আমার বাবা-মা'র জন্য তাদের বাবা-মা। 
এটাই ট্রাডিশান।

আমার ছেলেমেয়ের ভুলের জন্য আমি দায়ী। 
আমার ভুলের জন্য আমার বাবা-মা। 
আমার বাবা-মা'র জন্য তাদের বাবা-মা। 
এটাই ট্রাডিশান।

আচার্যদেবের সমালোচনা করার আগে 
নিজের চেহারাটা আগে দেখে নাও, মন পড়ে দেখা যাবে, 
বিবেকের কথা তুলে উলঙ্গ আর নাই বা করলাম।

পুরুষ নারীর চরিত্রের ফুটো ধরতে যেও না, নারীও তেমনি। 
নিজের চরিত্রের ফুটো দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। ভেবে দেখো।

দুনিয়া জুড়ে সব শালা জ্ঞানী-বিজ্ঞানী-সমাজ সংস্কারকরা পুরুষোত্তমকে বাদ দিয়ে ঈশ্বর- ঈশ্বরকণা খুঁজে চলেছে 
আর সমাজ গড়তে এসেছে।
( লেখা ১৮ই জুন'২০২৪)



















































বিচিত্রা ১৫৫

বেশী ঠাকুরকে ভালবেসো না, 
সবসময় ঠাকুর ঠাকুর ক'রো না 
তাহ'লে তোমায় সবাই ছেড়ে চলে যাবে, 
তুমি একলা হ'য়ে পড়বে। সত্যি?

তুমি যত বুক ফাটো ফাটো ক'রে ঠাকুরের কথা বলবে 
তুমি তত গুরুভাইদের বিরাগভাজন হবে।
তুমি তত কুৎসামন্ডিত হবে। সত্যি?

পকেটে টাকা থাকলে, পিছনে তকমা থাকলে, 
সমাজে কেউকেটা হ'লে ঠাকুরের দরবারে 
তোমার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। সত্যি?

মন্দিরে কেন্দ্রে যারা যারা দায়িত্বে আছে 
তারা ইষ্টপ্রাণ, তারা মানুষপ্রাণ। সত্যি?

সৎসঙ্গী ডাক্তার, উকিল, পুলিশ, নেতা, ধনী 
তাঁদের কাছে মানুষ বিপদে পড়ে যেচে যায়। 
তাঁরা সৎসঙ্গীদের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। সত্যি?

ঠাকুর সত্য জগত মিথ্যা। ঠাকুর ছাড়া জগত মিথ্যা।
ঠাকুর সত্য জগত সত্য।
কোনটা ঠিক? কোনটা সত্য?
( লেখা ১২ই জুন' ২০২৫)






































প্রবন্ধঃ চিচিং ফাঁক' ও 'ভারত ভাগ'।

মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখি দুই বাংলা এক হওয়ার কথা ওঠে, স্বপ্ন দেখে দুই বাংলা এক হওয়ার। আবার সেভেন সিস্টার্স নিয়েও অখন্ড বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে কেউ কেউ। সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ভারতীয়রা কোনোদিনই মাথা ঘামায়নি, বিশেষ ক'রে সেভেন সিস্টার্সের জনগণ, মাথা ঘামায়নি কোনোদিন পশ্চিমবঙ্গের আম জনতা। সেভেন সিস্টার্স নামটাই জানতো না আম বাঙালি ও সেভেন সিস্টার্সের সাধারণ সহজ সরল মানুষ। শান্তির পুজারী ইউনুস সাহেব অবৈধ, অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিকভাবে বৃদ্ধ বয়সে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অবতীর্ণ হলেন পিছনের দরজা দিয়ে আর তখন ভারত, বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য সমস্ত দেশ জানতে পারলো ভারতের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কে ইউনুস সাহেবের বদান্যতায়।

ড মহম্মদ ইউনুস অস্থির বাংলাদেশে হাসিনার দেশত্যাগের পরেই নিরাপদ বাংলাদেশে এসে চেয়ারে বসার আগেই হুমকি দিলেন সেভেন সিস্টার্স নিয়ে, হুমকি দিলেন ভারত ভাঙ্গার এবং গত দশ মাসে বিদেশ সফরকালে যেখানেই যাচ্ছেন, চীনে গেছেন সেখানে সেভেন সিস্টার্স, নেপালে গেছেন সেখানেও ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কথা বলছেন, নিজের সাজানো দেশটা ধ্বংস হ'য়ে গেল, শ্মশান হ'য়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই, শুধু ভারতকে ভাঙ্গার বালখিল্য এজেন্ডা নিয়ে চেয়ারে বসেছেন। ব্যাপারটা এমন যেন বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি আমেরিকা আর পাকিস্তানের ইচ্ছা পূরণের জন্য ভারত ভাঙতে চাইলে তিনি শান্তির নোবেল তুলে ধ'রে দস্যুদলের সর্দারের মত হুকুম দেবেন 'চিচিং ফাঁক'-এর মত 'ভা-র-ত ভাগ' আর সঙ্গে সঙ্গে গুহার দেওয়াল সরে যাবার মত ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা হ'য়ে যাবে রক্তপাতহীন ধ্বংস ছাড়াই। বাংলাদেশ অক্ষত থাকবে আর ভারত ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে ভাগ হ'য়ে যাবে আর ভারতের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ভারত আমেরিকান ইউনুস সাহেবের পায়ের কাছে বসে ভারত ভাগের ছাড়পত্র দিয়ে দেবে, সাদা পতাকা তুলে ভারত ভাগ মেনে নেবে মাথা নত ক'রে। 

ছোট্ট একটা সুন্দর সুজলাং সুফলাং শস্যং শ্যামলাং দেশ বাংলাদেশ যার নাড়ির টান রয়েছে ভারতের সঙ্গে সেই ছোট্ট দেশের চেয়ারে এসে বসেছেন মহম্মদ ইউনুস। সদ্য ১০ মাস অতিক্রম হয়েছে তাঁর রাজত্বের, তাও আমেরিকার বদান্যতায় অবৈধ ও অনৈতিক উপায়ে। যে দেশের জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনও অবদান যুক্ত নেই সেই ছোট্ট সুন্দর দেশের চেয়ারে বসা বৃদ্ধ জ্ঞানী পন্ডিত যার রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই যিনি বিশ্বজুড়ে শুধু তাঁর অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করেছেন আর পুরস্কৃত হয়েছেন সেই ইউনুস সাহেবের জীবনের অন্তিম পর্বে এসে ইচ্ছে হয়েছে হাল্লার রাজার মতন ভারতের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে বিবাদ করার, ভারতকে দ্বিখন্ডিত করার, ইচ্ছা হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলার। কারণ যুদ্ধের ভয়ংকর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে তাঁর তো কোনও অভিজ্ঞতা নেই, সারাজীবন দূরেই থেকেছেন তিনি নিরাপদে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায়। ভারত ভাগের সময়ে তিনি ছিলেন শৈশবে, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের সময় ১৯৭১ সালে্র রক্তাক্ত দিনগুলিতে যখন বাংলার মায়েরা ধর্ষিত হচ্ছে, ধর্ষণ শেষে ছিবড়ে ক'রে ফেলে দেওয়ার সময় করা হচ্ছে নির্মম হত্যা, লক্ষ লক্ষ নাগরিককে করা হচ্ছে নৃশংসভাবে হত্যা, লক্ষ লক্ষ যৌবন হারাচ্ছে অকালে প্রাণ বেয়নেটের নির্ম্মম নিষ্ঠুর আঘাতে আর ঝাঁকে ঝাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা হ'য়ে তখন তিনি ছিলেন যুবক, নিশ্চিন্তে নিরাপদে ছিলেন আমেরিকায়, ব্যস্ত ছিলেন নিজের ক্যারিয়ার তৈরীতে আর ২০২৪ এর জুলাই আগষ্ট-এর পট পরিবর্তনের ভয়ংকর আগুন সময়েও ছিলেন নিরাপদে আমেরিকায় বিলাস বহুল জীবনে। ফলে এই তিন সময়ে ভয়াবহ নারকীয় দৃশ্য, মৃত্যু মিছিল, রক্তের নদী, ধ্বংসের পাহাড় তিনি চাক্ষুস দেখেননি।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে, বিকাল ৩:০০ টার দিকে, পদত্যাগ করেন এবং ভারতের দিল্লিতে পৌঁছান। আর ইউনুস সাহেব ৮ই আগস্ট দায়িত্ব নিলেন। ড. ইউনূস ৮ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৬ই আগস্ট ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দেন ভারতকে। ভারত ভাঙ্গার হুমকি দিয়ে হাল্লার রাজার ঢঙে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করলেন উচ্চলেখাপড়াজানা পন্ডিত সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১৪৫টা পুরস্কারে পুরস্কৃত ও ভারত থেকে ১০টা পুরস্কারে পুরস্কৃত এবং শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত কৃতি পুরুষ ড মহম্মদ ইউনুস! বিশ্বে আর কোনও দেশ তাঁর শত্রু নয়, শুধু তাঁর প্রতিবেশী দেশ ভারত শত্রু! যে বাংলাদেশ ৫৪ বছর ধ'রে ছিল ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র সেই দেশ হ'য়ে রাতারাতি শত্রু।

আর, তারপর থেকে তাঁর উপস্থিতিতেই শুরু হয় বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ। সেই ধ্বংসযজ্ঞের সময় তিনি মুখে কুলুপ এঁটে নীরবতা পালন করেন। তাঁর নীরবতা মনে পড়িয়ে দেয় রোম সম্রাট নিরোর কথা। কথিত আছে, রোম যখন আগুনে পুড়ছিল তখন সম্রাট নিরো ঠান্ডা মাথায় সুর সাধনা করছিলেন, বেহালা বাজাচ্ছিলেন। ঠিক তেমনি বলা হচ্ছে, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ী বাংলাদেশের প্রধান উপাদেষ্টা ইউনুস আরো ঠান্ডা মাথায় প্রথম ভারতকে ভাঙ্গার ইঙ্গিত দিয়ে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দিলেন, তারপর ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়, ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নিয়ে, ভারতের উত্তর পূর্ব অংশ সেভেন সিস্টার্স নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার পরিবর্তে বিশ্বের অন্য দেশ চীন ও নেপালের সঙ্গে আলোচনা করতে লাগলেন, বারবার আলোচনায় ভারতের সেভেন সিস্টার্স টেনে আনতে লাগলেন এবং নানারকম ভারত বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে বিদেশ সফর করতে লাগলেন এবং একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে রি-সেট বাটন টিপে মুজিব জমানার সব ইতিহাস মুছে দেবার জন্য ধ্বংসযজ্ঞে সীলমোহর দিয়ে দিলেন একেবারে শান্তিপূর্ণ ভাবে ঠান্ডা মাথায়। তাঁর উপস্থিতিতে বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হ'লো আর তিনি চুপ ক'রে সব দেখতে লাগলেন আর ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত আন্দোলনে যুক্ত ছাত্র যুবকদের রসগোল্লার মত গোল গোল মিষ্টি মিষ্টি হাসিতে বলতে লাগলেন, তোমরা মহাকাব্যের সেই মহান বীরদের মতো, যে বীরদের গল্পগাঁথা আমরা মহাকাব্যে পড়েছি। আগামী প্রজন্মও তোমাদের আজকের এই বীর গাঁথা, আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করবে, স্মরণ ক'রে গান, কবিতা, গল্প রচনা করবে, রচিত হবে মহাকাব্য। মনে প্রশ্ন জাগে, গান, কবিতা, গল্প, মহাকাব্য কি রচিত হবে জানি না তবে কালের ইতিহাসে তো থাকবে এই জুলাই-আগষ্ট'২০২৪ অভ্যুত্থান। কিন্তু সেখানে মহম্মদ ইউনুসের ভূমিকা কি থাকবে সেটা ইতিহাস ঠিক করবে।

আছাড়া আরও আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলাম, উচ্চশিক্ষিত গুণী পন্ডিত অরাজনৈতিক ব্যক্তি ইউনুসের ভারত বিরোধী মানসিকতা! বহুদিন ধরেই তীব্র ভারত বিরোধীতা ভয়ঙ্করভাবে দানা বাঁধছিল বাংলাদেশীদের মনে ও প্রাণে। সেটা বীভৎসভাবে ফুটে উঠতো ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র ক'রে। তখন শুধু ভাবতাম কেন বাংলাদেশীদের এরকম ভারত বিদ্বেষ!? তখন বুঝিনি আজকের পটভূমি।

এর পরেও যখন দুই বাংলার এক হওয়ার কথা কেউ বলে তখন সেই বাংলাদেশের কুট্টিদের কথা মনে পড়ে যায়, 'আস্তে কন বাবু, ঘোড়ায় হাসবো।'

সত্যিই আজ ঘোড়াও হাসছে একশ্রেণীর কাঙ্গালি বাঙালির কথায়। ভারত আর বাংলাদেশের ৫৪ বছরের মধুর সম্পর্ক আজ সাপে নেউলে অবস্থায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন শান্তির পূজারী মহম্মদ ইউনুস শান্তির নোবেল হাতে ভারত ভেঙে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্সকে ভাগ করার ইঙ্গিত দিয়ে চিকেন নেক নামক অশান্তির প্রদীপ জ্বালিয়ে। ফলে দুই বাংলার সম্পর্ক আজ আরও বিষাক্ত হ'য়ে উঠেছে ও উঠছে।

যাই হ'ক, যে কথা বলছিলাম, দুই বাংলা এক হওয়ার কথা।
"গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"--- এ আর সম্ভব নয়। গানটির রচয়িতা বিখ্যাত বাউল শিল্পী শাহ আব্দুল করিম গানটিতে যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিলেন, গানটিতে হিন্দু ও মুসলিম তরুণ সমাজকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার এবং ভেদাভেদ ভুলে কাজ করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই গানের পরিবেশ, সেই মানসিকতা, সেই বিশ্বাস, সেই নির্ভরতা, সেই আবেগ, সেই মধুর নির্মল পবিত্র সম্পর্ক সব নষ্ট হ'য়ে গেছে নোংরা রাজনৈতিক আবহাওয়া, বিকৃত ধর্ম পালন এবং ঈশ্বর, আল্লা সম্পর্কে ভুল ভ্রান্ত ধারণার কারণে।

আজ দুই বাংলার সাধারণ মানুষ পরস্পর পরস্পরের শত্রু। আর সেটাকে তীব্র ক'রে দিলেন শান্তিতে নোবেল পাওয়া জ্ঞানী গুণী মানুষ ইউনুস ভারতকে ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে। যে ভারত ভাগকে আটকাতে এবং বাংলা ভাগ রুখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সেই অভিশপ্ত ভাগের অশনি সংকেত দেখা দিল শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউনুস সাহেবের কথায়। 

একটা ঘৃণার বাতাবরণ তৈরী করা হয়েছিল দেশভাগের আগে থেকে পরিকল্পিত ভাবে। এইভাবেই দেশভাগের মত ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে মানুষের মগজকে ধোলাই করা হয়েছিল ব্রিটিশের সহায়তায়। ব্রিটিশ চায়নি হিন্দু মুসলমান সাধারণ মানুষ পরস্পর মিলেমিশে থাক। কিন্তু হিন্দু মুসলমান বিরোধ সৃষ্টির অপচেষ্টাকে আটকাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, পরম প্রেম-ভালোবাসার আধার, জ্ঞানের মহাসমুদ্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক অটুট রাখার ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য, দুই সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন ঘটাবার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, দুই সম্প্রদায়ের সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে এই দেশভাগের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ পরিণাম নিয়ে বহুবার আন্তরিক আলোচনা করেছিলেন, ভারত ভাগ, বাংলা ভাগ আটকাতে তাঁর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আর্থিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। একশ্রেণীর ক্ষমতালোভী কতিপয় মানুষের সাহায্যে অখন্ড ভারতকে ভেঙে দুর্বল করার জন্য দেশভাগের যে ষঢ়যন্ত্র করেছিল ব্রিটিশ সরকার সেই ষড়যন্ত্রকে আটকাতে ও ভারতকে অটুট রাখতে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক সব রকমভাবে চেষ্টা করেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কথা ভেবেই। কিন্তু সেইদিন দেশের কোনও সম্প্রদায়ের কোনও পন্ডিত, মহাত্মা, দেশপ্রেমী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ধার্মিক, আর্থিক ক্ষমতাশালী ও সামাজিক ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কেউই তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। তিনি তৎকালীন প্রথম সারির দেশনেতাদের উদ্দেশ্যে তৎকালীন 'সৎসঙ্গ'-এর সেক্রেটারি মারফৎ তাঁর বার্তা পাঠিয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সমাধানে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ রুখতে সেই বার্তায় তিনি এককথায় বলেছিলেন, "Dividing compromise is hatch of the animosity." অর্থাৎ ভাগ ক'রে সমস্যার সমাধানের অর্থ 'তা' দিয়ে দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো। তিনি দ্রষ্টাপুরুষ। বহু আগে থেকেই ভারত ভাগ ও বাংলা ভাগের অশনি সংকেত টের পেয়েছিলেন। ভারত ভাগের এবং বাংলাকে যে অখন্ড বাংলা রূপে আর রাখা যাবে না সেই ষঢ়যন্ত্রের, সেই চক্রান্তের আভাস তিনি বহু আগেই পেয়েছিলেন।

আর, সেই জন্য মানুষের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তায়, উদ্বেগে রাতে ঘুমোতে পারতেন না, ছটফট করতেন আগাম করুণ ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়ে। যে আসতেন তাঁর কাছে সবাইকে ধ'রে ধ'রে আবেগে আগ্রহভরে তিনি এই বিষাক্ত ভাগের পরিকল্পনাকে বানচাল করার জন্য তাঁর পরিকল্পনার কথা বলতেন। বলতে বলতে তিনি এতটাই উদ্বেল হ'য়ে পড়তেন যে উৎকণ্ঠায় তাঁর রক্তচাপ বেড়ে যেতে লাগলো, শরীর খারাপ হ'তে লাগলো, হার্টের চাপে তিনি অসুস্থ হ'য়ে পড়লেন। তখন তাঁকে সুস্থ ক'রে তোলার জন্য, প্রচন্ড মানসিক চাপ ও রক্তচাপ কমানোর জন্য এবং শরীর উদ্ধারের জন্য হাওয়া বদলের প্রয়োজনে দেশভাগের এক বছর আগেই ১৯৪৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ত্যাগ করলেন। আর এর ঠিক এক বছর পরেই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও ভাগ হ'য়ে গেল। আর, কোনোদিনই ফিরে যাওয়া হ'লো না তাঁর জন্মভূমি দেশভাগের আগে পূর্ব বাংলা, দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান আর ১৯৭১এর পরে বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে। 


সেই থেকে হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সমাধানের জন্য দেশভাগ ক'রে যে শত্রুতার জন্ম হ'লো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে তা' আজ দেশভাগের ৭৮ বছর পরে ৭৮ বছর আগে দেশভাগ করার মাধ্যমে সৃষ্ট শত্রুতা 'তা' দিয়ে দিয়ে কত ডিম ফুটিয়েছে ও আজও ফুটিয়ে চলেছে।  সেদিনের উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, জমিদার শ্রেণী যারা আজও বেঁচে আছে কিংবা তাঁদের উত্তরপুরুষ এবং আজকের উভয় সম্প্রদায়ের নোতুন যারা নেতৃবৃন্দ, পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, দেশনেতারা সবাই সেই শত্রুতার ডিম ফোটা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারছে কিনা জানি না, যদি বুঝতে পেরেও থাকে তা স্বীকার করছে না।

তাই ধর্মকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল সেদিনের দেশনেতৃবৃন্দ বৃটিশ ও ব্রিটিশের Divide and Ruleএর মত নোংরা পলিসির সাহায্যে, সেই নোংরা পলিসি দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত নেতৃবৃন্দ, সমস্ত পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি যতদিন না বুঝতে পারবে, স্বীকার করবে বিশেষ ক'রে দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের সাধারণ নাগরিক ও ছাত্রসমাজ যতদিন না বুঝতে পারবে, বুঝতে চেষ্টা করবে, চোখ খুলবে এবং যতদিন না ধর্ম সম্পর্কে, ঈশ্বর, আল্লা সম্পর্কে, ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বিকৃত প্রচার বন্ধ হবে, বিকৃত প্রচার বুঝতে পারবে, বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে ততদিন পর্যন্ত আর কোনোদিন এক হওয়া সম্ভব নয় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের।

দুই বাংলার মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠা দূরের কথা। এক বাংলায় তা' সে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ যে বাংলার কথা বলা হ'ক না কেন কোনও বাংলায় বাঙ্গালীদের নিজেদের মধ্যে কোনও সম্প্রীতি প্রেম ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আজ আর নেই। ও বাংলায় বাঙ্গাল হিন্দু আর বাঙ্গাল মুসলমানের মধ্যে এবং এ বাংলায় ঘটি হিন্দু ও ঘটি মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক আজ সন্দেহের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। হিন্দু মুসলমান বাঙালির বাংলা ভাষাও আজ দুর্বোধ্য হ'য়ে উঠেছে। বাংলা ভাষাও আজ দেওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছে দুই বাংলার বাঙালির মধ্যে। বাঙালি আজ বাংলা ভাষাও বুঝতে পারে না। বাংলা ভাষায় ঢুকে গেছে ইংরেজী, উর্দু, হিন্দি শব্দ প্রচুর পরিমাণে। বাঙালি আজ খিচুড়ি বাংলা বলে। উচ্চবিত্ত বাঙালি বংশ পরম্পরায় ভুলে গেছে প্রায় বাংলা ভাষা, তারা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় আজ ইংরেজী বলে, মধ্যবিত্ত বাঙালি বলে হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজী মিশ্রিত বাংলা, নিম্নবিত্ত বাঙালি বলে আঞ্চলিক বাংলা ভাষা। বাঙালী আজ জাত হিসেবে, বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যখানা হিসেবে বাঙালি নেই। বাঙালি আজ হিন্দু মুসলমান, খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ইত্যাদি হ'য়ে গেছে। বাঙালি আগে হিন্দু, আগে মুসলমান, আগে খ্রীষ্টান, আগে বৌদ্ধ তারপর যদি সেন্টিমেন্ট কিছু বেঁচে থাকে তবে বাঙালি। বাঙালি আজ খন্ড খন্ড, টুকরো টুকরো হ'য়ে গেছে। তার ওপর বাংলার লেখাপড়াজানা বাঙ্গালীরা, বাঙালি ছেলেমেয়েরা আর স্কুলে, কলেজে, অফিসে বাংলা বলে না, বলে ইংরেজী আর হিন্দি।

তাই বাংলা ও বাঙালি আজ "গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা"-----এই গানের স্মৃতি নিয়েই বাঙালি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে পঙ্গু ল্যাংড়া বংগালী আর গলির ব্যাঙ হ'য়ে আরও কয়েক দশক তারপর ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হ'য়ে যাবে বিভিন্ন ভাষা ও বিভিন্ন প্রজাতির মত বাংলা ও বাঙালি। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বছর পরে কলিযুগের শেষে ধ্বংসস্তুপের ওপর বাংলা ভাষা ও বাঙালি শব্দ শুধু বেঁচে থাকবে  জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ, শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ-এর সর্বশেষ বর্তমান রূপ 
The greatest phenomenon of the world, The greatest wonder in the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নামের মধ্যে।

( লেখা ১৬ই জুন'২০২৫)

Friday, June 13, 2025

আত্মকথন ১৭

ঘুম যখন ভাঙল তখন সন্ধ্যে গড়িয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ঘড়িতে আটটা বাজে। উঠে বসলাম বিছানায় কিন্তু আজ আর বেরোতে ইচ্ছে করছিল না। চুপ ক'রে বিছানায় বসে আছি। সকালের ঘটনা মনে ভেসে উঠলো একের পর এক। এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে প্রণাম ক'রে চেয়ে রইলাম ঠাকুরের মুখের দিকে। মনে মনে বললাম, ঠাকুর আমি কি ভুল করলাম? বড্ড বেশী ঝুঁকি ও চাপ নিয়ে ফেললাম ঠাকুর? এমন সময় বন্ধুরা এসে ডাকাডাকি করতে লাগলো। ঘরে ঢুকে এলো, বললো, কিরে বেরোবি না? আমি কিছু বললাম না। ওদের বসতে ব'লে আমি চোখমুখ ধুয়ে এসে জামা প্যান্ট পড়ে নিলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম প্রতিদিনের মতো আড্ডা মারতে।

আজ আর আড্ডা জমছে না। বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখে কিছু শুনতে চাইছে আজ সকালে যা ঘটলো তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে। কিন্তু আমি কিছু নিজে থেকে বলছি না ব'লে কেউ আগ বাড়িয়ে কিছু বলছে না। তবে একটা ছটফটানি লক্ষ্য করতে পারছি সবার মধ্যে। আসলে সময়ে পাশে না থাকাটা যেমন আমার মধ্যে সামান্য প্রভাব ফেলেছে ঠিক তেমনি ঐ চরম মুহূর্তে পাশে না থাকাটা যে আমি ভালো ভাবে নিইনি সেটাও ওরা বুঝতে পেরেছে।

তবে অনেক পরে বুঝেছিলাম কেমনভাবে সরলতার জন্য কঠিন মার খেতে হয়। স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সব করা যায়, চোখ উলটে দেওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যে। পরবর্তী কয়েক দিনের ঘটনায় তা প্রমাণ হয়েছিল।
একজন চা দিতে দিতে সাহস ক'রে বললো, কি রে এর পরে কি করবি কিছু ঠিক করেছিস? আমি বললাম, কি করবো তাই-ই তো ভাবছি। আর একজন বললো, প্রেসিডেন্ট কি বললো? তিনি কিছু বললেন? আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হ'তে লাগলো পরিস্থিতিটা। গুমোট ভাবটা কেটে যেতে লাগলো। একজন খুব কৌতুহল নিয়ে ব'লে উঠলো, বাপী, তুই কি বললি প্রেসিডেন্টকে?

আর, ঠিক সে-সময়ে একজন সাইকেলে ক'রে এসে থামলো আমাদের সামনে। এসে বললো, বাপীদা, দাদা তোমায় ডাকছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে বললাম, তুই যা, আমি যাচ্ছি। ছেলেটা আবার সাইকেলে চড়ে চলে গেল। আমি ভাবলাম সত্যিই তো এখন ঘড়িতে প্রায় ৯ টা বাজে, এখনও পর্যন্ত সকালের এতবড় ঘটনার কোনও ফিডব্যাক দেওয়া হয়নি দাদাকে। আমি আর দেরী না ক'রে সকলকে বসতে ব'লে বন্ধুর সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম।

আমাকে দেখেই দাদা উঠে এলো নিজের বসার জায়গা থেকে আর চিবিয়ে চিবিয়ে হাসি মুখে সবাইকে শুনিয়ে বললো, কি রে তুই তো একদিনেই হিরো হ'য়ে গেছিস। তা একটু আমাদেরও মনে রাখিস। সকলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, কি বল তোরা।
আমি কাছে আসতেই আমার কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সকলের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো, বাপী আমার অনেক বড় উপকার করেছে তারপর আমাকে জড়িয়ে ধ'রে বললো, তুই অনেক সহজ ক'রে দিয়েছিস আমার কাজ। তারপর সকলের থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম। তারপর সব ঘটনা বিস্তারিত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বললাম দাদাকে। দাদা বললেন, তোর ওপর ------দা খুব রেগে আছে। আমি বললাম, তুমি কিছু বলোনি উনাকে আগে? দাদা বললেন, বলেছি। আমি বললাম, তাহ'লে? আরে বাবা তুই কি জানিস তুই কোথায় হাত দিয়েছিস? আমাকে বোঝাতে কি বেগ পেতে হয়েছে তা আমি জানি। আমি বললাম, আমার জন্য তোমাকে অনেক চাপ নিতে হ'লো। তারপরে হাসতে হাসতে বললাম, রাগটা আমার ওপরে না, আসল রাগ তোমার ওপরে।

তারপরে অনেক কথা হ'লো যা খুবই গোপনীয়। শেষে দাদা বললো, এবার কি করবি? আমি বললাম, আমাকে তো দেখা করতে বলেছে তা' কালকে না-হয় একবার অফিসে যাবো দেখা করতে। দেখি কি হয় আর কি বলেন। দাদা সম্মতি দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, দেরী করিস না, কালকেই সকাল ১০টার সময়ে চলে যা। দ্যাখ কি হয়।

কথা শেষ ক'রে আমি চলে এলাম আমার ডেরায়। সেখানে দেখলাম সবাই বসে আছে আমার জন্য। সবাইকে পরবর্তী কর্মসূচী জানিয়ে দিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে এলাম।

কাল সকালে কি করবো আর না-করবো তার পরিবর্তে সারারাত একটা কথা ঘুরপাক খেতে লাগলো মাথার মধ্যে, "বাপী আমার অনেক বড় উপকার করেছে। তুই অনেক সহজ ক'রে দিয়েছিস আমার কাজ।" কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারলাম না, কি উপকার করেছি আর কি কাজই বা সহজ ক'রে দিয়েছি।

যখন বুঝেছি, তখন আমি খাদের কিনারায়।

( লেখা ১৩ই জুন'২০২৪)

বিচিত্রা ১৫৪

কোনটি স্বয়ং রক্তমাংসসংকুল ঈশ্বর কথন?

বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, ভগবৎ গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল, কোরআন, হাদিস, চৈতন্য চরিতামৃত, কথামৃত ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র লিখিত সত্যানুসরণ ও কথিত ২৪হাজার বাণী তৎসহ কথোপকথন সমগ্র!

(১) অজ্ঞানতা কি? 
মানুষের মাথার দু'পাশে দু'টো অদৃশ্য শিং আছে তাই; যা দিয়ে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত সে ক্ষতবিক্ষত ক'রে চলেছে সবাইকে।

(২) অজ্ঞানতার শিংগুলি কি দিয়ে তৈরী? অর্থ, জ্ঞান ও ক্ষমতার অহংকার, ঔদ্ধত্ব দিয়ে তৈরি যা যেতে আসতে কাঁচ কাঁটা হীরের মত কাটে।
জ্ঞান একমাত্র স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার উপায়। যত জানবো তত সমস্যামুক্ত হ'য়ে আনন্দে থাকতে পারবো।

ঠাকুরকে ধরেছি জানার জন্য, শেখার জন্য, ভালো খারাপ চেনার জন্য। ঠাকুরকে ধরা তখনই পূর্ণ হয় যখন অপ্রিয় সত্যকে মেনে নিই।

আর, সত্য অপ্রিয় ও উলঙ্গ। মিথ্যা প্রিয় ও সাজগোজে জাঁকজমক পূর্ণ। তাই অপ্রিয় সত্যকে যে মেনে নিতে পারে তার ঠাকুর দর্শন ও লাভ হয়।
( লেখা ১৩ই জুন'২০২৪)
















বিচিত্রা ১৫৩

ঠাকুর মানি, তাঁর আশীর্বাদী কেন্দ্রকে মানি না!'
সৎসঙ্গ' জানি, সৎসঙ্গের বিধান জানি না।

তোমার ইচ্ছেটা তোমারই;
তোমার ইচ্ছের পথে তুমি হাঁটো।
তোমার পাঁঠা তোমারই;ল্যাজে কিম্বা মাথায় কাটো।
যা ইচ্ছা তোমার।

ছেদকদের গানঃ
চল কোদাল চালাই, ভুলে কেন্দ্রের বালাই
ঝেড়ে সংহতির দায়, ভাসি ফুর্তির হাওয়াই।

ছেদকদের গানঃ
যত ভক্তির বালাই,
বলবে,পালাই পালাই;
অর্থ মান যশের ধান্ধায়
যাব ইষ্টের দরজায়।

আমাদের দুর্বলতা হলোঅকৃতজ্ঞ ও বেইমান গুলোকে আমরা বারবার
বিশ্বাস করি ও ক্ষমা করে দিই।

পকেটে রেখে গুপ্ত ছুরিবদনে বলো, এসো প্রেম করি!!
( লেখা ১৩ই জুন' ২০১৭)

































































































Wednesday, June 11, 2025

জীবন ও অঙ্ক! ১ থেকে ১৪

জীবন একটা অঙ্ক, জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্কেরও একটা ফর্মূলা আছে। 
গোঁজামিল দিয়ে এই অঙ্ক মেলানো যায় না। সাবধান!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্ক মেলাতে গেলে একটা ফর্মূলা দরকার। 
আর এই ফর্মূলা জানেন একমাত্র ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্ক যে কেউ মেলাতে পারে না 
তা সে যতবড় বিদ্ধান, বুদ্ধিমান আর পন্ডিত হ'ক না কেন।

 জীবনও একটা অঙ্ক। জটিল অঙ্ক! 
অঙ্কের জগতে হিলবার্টস প্রবলেমস এখনও মেলাতে পারেনি অঙ্কবিদেরা! জীবন অঙ্ক মেলাবে কোন অঙ্কবিদ!?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
জীবন অঙ্ক মেলানো যার তার কর্ম্ম নয়! 
জীবন দিয়েছেন যিনি একমাত্র তিনিই পারেন 
জীবন নামক জটিল অঙ্ক মেলাতে!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
জীবন দিয়েছেন যিনি জীবন নামক জটিল অঙ্ক 
একমাত্র মেলাতে পারেন তিনি। কে তিনি?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
ঘরে ঘরে কেন কেউ এই অঙ্ক মেলাতে পারছে না? 
কেউ কি আছে যে নিজের জীবনের এই জটিল অঙ্ক মিলিয়েছে?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
ঘরে ঘরে ছেলেমেয়ের জীবন অঙ্ক মেলাতে 
কারও তাগিদ নেই বিন্দুমাত্র! পুঁথির অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
নিজের জীবন অঙ্ক মেলাতে পারিনি, 
গোঁজামিলে মেলাতে চেয়েছি চিরদিন; 
ছেলেমেয়ের মেলাবো কি ক'রে?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
যে জটিল অঙ্ক আমি অঙ্কবিদ তা ভাবিনি কোনোদিন! 
অঙ্কবিদ হিলবারটস প্রবলেমস সল্ভ করার পেছনে ছুটেছি চিরদিন।

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
এই অঙ্ক কেউ মেলাতে চায় না অথচ পাস করতে চায় সবাই, একেবারে স্টার মার্ক্স নিয়ে পাস!

জীবন একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্ক যেই মেলাক একটু ফাঁক থেকেই যাবে। 
জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া এই অঙ্ক নিখুঁত মেলানো অসম্ভব।

জীবন একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
জীবনের জটিল অঙ্ক মেলাতে পারে একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর! 
একমাত্র তিনিই জানেন সেই ফর্মূলা! কে সেই জীবন্ত ঈশ্বর!?

জীবন একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
জীবন অঙ্ক সমাধান করতে পারেন একমাত্র 
রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও অনুকূলচন্দ্র।
( লেখা ১১ই জুন'২০২১)






























বিচিত্র ১৫২

অতীত যদি বর্তমানের চলার পথে কাঁটা হ'য়ে বেঁধে প্রতিমুহূর্তে শরীরে-মনে-আত্মায়,বাধা হ'য়ে দাঁড়ায় সামনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছবার রথে চড়ার, শত্রু হ'য়ে দাঁড়ায় সোনার ভবিষ্যতের তবে কি দরকার সেই অতীতের!? 
তবে জয়গুরু ব'লে দে না ঝাঁপ আর মরণ দুয়ারে পড়ুক ঝাঁপ!
শালা! দে না এক কোপে বলি!!!

অতীত যদি না হয় আমার চলার সাথী
স্মৃতিবাহী চেতনায় খালি মারে লাথি
তবে কি লাভ আমার সেই অতীতে! 
বন্ধ্যা হ'ক সেই অতীত স্মৃতির জমিতে!!
( লেখা ১১ই জুন' ২০২০)

কবিতাঃ মন ও হৃদয় এবং শরীর ও আত্মা।

মন ক'রো না তুমি ছটফট, থাকো স্থির, থাকো অকপট!
হৃদয় পড়ো না তুমি ঘুমিয়ে, থাকো সদা জাগ্রত,
থাকো দয়ালের নিকট! হে শরীর! অকারণ হেকমতি
আর নটঘট নাও সামলে চটপট! আর হে আত্মা!
সদা তুমি থাকো শুদ্ধ পবিত্র, হ'ক সদা তোমাতে
পরমাত্মার প্রকট!!-
( লেখা ১১ই জুন'২০২০)

বিচিত্রা ১৫১

হায়েনারা ঘরে দিচ্ছে হানা
আর তুমি রাত কানা !
ভাইগুরু!
দয়াল ব'লে দিচ্ছো হাঁক 
আর করছো টালবাহানা !!

কপটতা আর চাতুরীর প্রতি রেখে নিষ্ঠা!
ভাইগুরু ইষ্টপ্রতিষ্ঠার আড়ালে করছো আত্মপ্রতিষ্ঠা!!

বাবাইদাদার নামে মিথ্যা প্রচারে করতে চাও বাজীমাৎ!?
গাঁয়ে মানে আপনি মোড়ল জেনো হবেই কুপোকাত।

আত্মপ্রতিষ্ঠায় মত্ত তুমি, তুমি বেসামাল।
ইষ্টকে নিয়েছ ক'রে আয়ের উপকরণ আর
ইষ্টপ্রতিষ্ঠার নামে করতে চাও তুমি কামাল!?

দয়ালের দয়ায় আজ ভিখিরি থেকে হয়েছো রাজা!
রাজা হয়েই বলছো দয়ালের নামে দয়ালের ব্যান্ড বাজা!?
বাহবাঃ! ভাইগুরু বাহবাঃ!!
( লেখা ১১ই জুন'২০১৭)












































































ঠিক ও ভুল ১

কথায় আছে ঘর শত্রু বিভীষণ!

এবং তা বলাও হ'য়ে থাকে যত্রতত্র! একটা ভুল কথা হাজার হাজার বছর আমাদের সত্য ব'লে পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো! আসলে বিভীষণ ঘর শত্রু নয়, ঘরের বন্ধু ছিল, দেশ ও দশের বন্ধু ছিল। তাই বারবার ঘর, দেশ ও দশকে বাঁচাবার জন্য তিনি দাদা রাবণকে অন্যায় কাজ, অসৎ কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু দাদা তা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি। তাই সত্যকে, ন্যায়কে, সৃষ্টিকে, সংসার-পরিবারকে, সমাজ-দেশকে রক্ষা করার জন্য যা করার বিভীষণ তাই করেছিলেন! তাই বিভীষণ ঘর শত্রু নয়, বিভীষণ ঘর বন্ধু বিভীষণ ছিলেন। তাহ'লে ঘর শত্রু কে? ঘর শত্রু ছিলেন প্রকৃতপক্ষে দুর্যোধন! তাই ভুল দর্শন ব্যক্তি-সমষ্টি-সমাজ-দেশকে ধ্বংস করে, ধ্বংস করে সৃষ্টির মূল মরকোচকে!!!!!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিতে কত কিছুই যে উদ্ভাসিত হয় তার সীমা-পরিসীমা নেই!!!!!!!!!
( লেখা ১১ই জুন'২০২৩)

আত্মকথন ১২

রাতে ঘুম হ'লো না। কাল সকাল ৯টার কথা ভেবে সারারাত হাজার কথা মাথার মধ্যে বিলি কাটতে লাগলো। বাবার কথা মনে এলো ঘুমের মধ্যে। বাবার শরীরটা ভালো নেই। তবুও দেখলে বোঝা যাবে না যে শরীর ভালো নেই। চোখমুখের স্বাভাবিকতা বুঝতেই দেয় না কাউকে বাবার কিছু কষ্ট আছে শরীরে। আর আমরাও অপদার্থ সন্তান বাবাকে কখনো তেমনভাবে বোঝার চেষ্টা করিনি। এই যে বাবা-মায়ের প্রতি উদাসীনতা এর পেছনে কাজ করে নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা বা মত্ত থাকার কারণে। মনের কোণে দুশ্চিন্তার ঝড় উঠলো রাতের আঁধারে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। যদি কাল সকালে গাড়ি আটকাবার প্রতিক্রিয়ায় কিছু হ'য়ে যায় আমার তাহ'লে তার জেরে বাবার এই দূর্বল শরীরের ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে সেই কথা ভেবে ঘুম আসছে না চোখে। ঘড়ির কাঁটা যেন আজ দ্রুতবেগে দৌড়চ্ছে সকাল হবার জন্য। রাত যেন আরো ঘন কুচকুচে কালো হ'য়ে আমাকে গিলতে আসছে। আজেবাজে চিন্তা আসতে লাগলো মাথায়। জোশের মাথায় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম না তো? নাকি সত্যি সত্যিই সত্যের ওপর দাঁড়িয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি? পরস্পর বিরোধী প্রশ্ন উঠে এলো মনে। মনকে শক্ত ক'রে বেঁধে রাখতে চাইলে মন আরও বেশী স্লিপ ক'রে বেরিয়ে যেতে চায়, পিং পং বলের মতো এখান থেকে ওখানে ছিটকে ছিটকে চলে যেতে চাইছে। ফলে গরম হ'য়ে উঠছে মাথাটা। উঠে বসলাম বিছানায়। বিছানা থেকে নেবে চোখেমুখে জল দিলাম ছিটিয়ে। একগ্লাস ঠান্ডা জল খেলাম। তারপর ঠাকুরের ফটোর সামনে এসে বসলাম। কিছুক্ষণ স্থির হ'য়ে বসে নাম করলাম। তারপর ভাবতে লাগলাম কোনটা সত্য।

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম।
জোশের থেকে কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
বন্ধুদের মাঝে হিরো সাজার জন্য কি এই সিদ্ধান্ত?
মাথা মোটা হুব্বার মতো আবেগে ভেসে এই সিদ্ধান্ত?
বাস্তবের মাটি থেকে উঠে গিয়ে কল্পনায় ভেসে এই সিদ্ধান্ত?
উন্মত্ত যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে আকাট মূর্খের সিদ্ধান্ত?
আবার মনে হ'লো,
সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত?
এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে মানবিকতার দিক কি নেই?
সত্যকে সামনে রেখে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের মধ্যে কি উগ্রতা বা সংহার আছে?

ঠাকুরের সামনে বসে ভাবতে ভাবতে সামনে যা উঠে এলো তা হ'লো কারও মঙ্গলের জন্য নেওয়া সৎ সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনও ভুল, অন্যায়, উগ্রতা বা সংহার নেই। আসলে মনের বিক্ষেপের পিছনে আছে বাবার শারীরিক অসুস্থতা। বাবাকে কেন্দ্র ক'রে একটা দুশ্চিন্তা মনকে স্থির হ'তে দিচ্ছে না। এ ছাড়া অন্য কোনও ভুল, অন্যায়, উগ্রতা বা সংহার নেই। নেই কোনও জোশ বা হিরো সাজার মতলব। নেই আবেগে বা কল্পনায় ভেসে যাওয়া কিংবা যৌবনের উন্মত্ততা। আর, মংগল যজ্ঞে সবসময় দয়ালের আশীর্বাদ ও দয়া আছেই আছে।

এতক্ষণে মনটা শান্ত হ'লো। ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস, নির্ভরতা ফিরে আসার সঙ্গে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ধীরে ধীরে চোখ দু'টো বন্ধ হ'য়ে এলো। ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাবা-মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো মনের আঙিনায়। উপলব্ধি হ'লো বাবা-মায়ের প্রয়োজনীয়তা ও উপস্থিতি।
( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)

আত্মকথন ১১

হাঁটতে হাঁটতে এসে উপস্থিত হ'লাম দাদার ডেরায়। দাদা একটা চেয়ারে বসে আছে। কথা বলছে সবার সঙ্গে। বহুজনের বহু সমস্যা। সামনে আশেপাশে অনেক লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দাঁড়িয়ে বা বসে আছে। আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। তারপর আমার হাত ধ'রে নিয়ে চলে গেল দূরে অন্ধকারে যাতে কেউ আমাদের কথা শুনতে না পায়। সবাই অবাক বিস্ময়ে উৎকণ্ঠায় চেয়ে রইলো সেদিকে। কি জানি কি হয়। প্রত্যেকের মনে এই ভাব। আমরা দুজনে এসে দাঁড়ালাম দূরে একটা অন্ধকার বারান্দায়। তারপর আমাকে দাদা বললো, কি রে কি শুনছি? কি বলেছিস ----দাকে? আমি বুঝতে পারলাম এই অল্প সময়ের মধ্যেই ঐ দাদা কথাটা পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো। আমি বললাম তুমি যা শুনেছো ঠিক শুনেছো। উত্তেজিত হ'য়ে দাদা বললো, মানে? আমি বললাম, মানে আমি কাল সকাল ন'টায় গাড়ি আটকাবো। চাপা গলায় চেঁচিয়ে উঠলো দাদা, কার গাড়ি আটকাবি? আমি দ্বিধাহীন কন্ঠে নিঃসঙ্কোচে বললাম, প্রেসিডেন্টের গাড়ি। তুই আটকাতে পারবি? তোর এত সাহস? তোর এত বুকের পাটা? ব'লে উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলো দাদা। আমি জোশের সঙ্গে বলে উঠলাম, এতে সাহসের কি আছে আর বুকের পাটার কি দরকার? সকালবেলা গাড়ি যাবে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি আটকে দেবো। ব্যাস্। এতে আশ্চর্যের কি আছে? আমার এরকম উত্তেজনাবিহীন সহজ সরল নির্লিপ্ত উত্তর শুনে দাদা আবার রেগে ব'লে উঠলো, তুই জানিস তুই কার গাড়ি আটকাবি? এর পরিণতি কি হ'তে পারে তুই জানিস? তোর কোনও বোধবুদ্ধি আছে? নাকি সব লোপ পেয়ে গেছে? পরে এর ঠেলা সামলাতে পারবি তো? আমি বললাম, দ্যাখো, আমরা বেকার ছেলেরা সব রাস্তায় বসে থাকি। এই রাস্তার ওপর দিয়ে এই কোম্পানির প্রেসিডেন্ট রোজ ৩৬৫ দিন যান। আমরা যেখানে থাকি আড্ডা মারি সেখান থেকে কোম্পানির গেটের দূরত্ব ৫ মিনিট। আমাদের এই রাস্তার ওপরে যারা রোজ আড্ডা মারে, সময় কাটায় প্রেসিডেন্ট এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ও কোম্পানী থেকে ফেরার সময় দু'বেলা আমাদের বসে থাকতে দ্যাখেন। তা উনাকে আমাদের বেকার অবস্থার কথা যদি বলি তাহ'লে দোষ বা অপরাধ কোথায়? অন্যায় কোথায়? আর তিনিই বা কেন শুনবেন না? কারখানা সংলগ্ন এলাকার লোকেদের কোনও অধিকার বা দাবী নেই সেখানে কাজ পাবার?

নিজেকে একটু সামলে নিয়ে রাগ বিরক্তিসহ চাপা গলায় বললেন, তোর এসব দাশর্নিক কথা শোনার মতো প্রেসিডেন্টের সময় আছে? যত্তসব ভাবের কথা, আবেগের কথা। এইকথা ব'লে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললো, তুই ভাবিস না আমি তোর একটা ভালো ব্যবস্থা ক'রে দেবো এই কারখানায়। আমি বললাম, দাদা, ভাবের কথা, আবেগের কথা হয়তো আমি বলেছি কিন্তু আবেগে ভেসে গিয়ে কোনও অসম্ভব আজগুবি অন্যায্য কথা আমি বলিনি। তাছাড়া সামনে আমার এম-এ পরীক্ষা। আমার কথা ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি সত্যিকারের এখানে চাকরী করার কথা ভাবিইনি কোনওদিন। বন্ধুদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ওদের প্রত্যেকের চাকরী দরকার। বাড়ির পাশে এতবড় কারখানা থাকতে তারা চাকরী পাবে না? এইকথায় দাদার রাগ একটু কমলো কিন্তু তবু বলতে লাগলো, দ্যাখ এতবড় কারখানা আর তার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশ প্রশাসনের ওপর চাপ আসবে। আর পার্টিও ছেড়ে কথা বলবে না। আমি দৃঢ়তার সংগে গভীর প্রত্যয় নিয়ে বললাম, আর আমি যে এত পার্টির জন্য খাটলাম তার কোনও মূল্য নেই পার্টির কাছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যে মিছিল, মিটিং, স্লোগান, বক্তৃতা, নাটক, দেওয়াল লিখন, পোষ্টার লাগানো, পথসভা ইত্যাদির সঙ্গে সক্রিয় যুক্ত ছিলাম তার কোনও মূল্য নেই পার্টির কাছে? এত করার পরেও পার্টির কাছে পরিচিত হ'য়ে উঠতে পারলাম না যখন ক্ষমতায় আমাদের সরকার? আমি তো কোনও অন্যায় কাজ করছি না। শুধু গাড়ি থামিয়ে প্রেসিডেন্টকে দু'টো কথা বলবো। একনাগাড়ে এতসব কথা শোনার পর দাদা একদম শান্ত হ'য়ে বললো, তুই পারবি? পরে ভয়ে পিছিয়ে আসবি নাতো? আমি বললাম তোমার যদি কোনও ব্যক্তিগত অসুবিধা না হয়, তোমার যদি একান্তই কোনও আপত্তি না থাকে তাহ'লে আমার কোনও ভয় বা পিছিয়ে আসার ব্যাপার নেই। একটু চিন্তা ক'রে পরে বললো, দ্যাখ (একজন উর্ধতন নেতার নাম ক'রে বললেন) হয়তো তিনি রেগে যেতে পারেন। তবে উনি যদি তখন বাধা দেন, কিছু বলেন উনার সঙ্গে কোনও ঝগড়ায় যাবি না। আমি বললাম, তুমি একটু উনার ব্যাপারটা দেখে নাও বাকীটা আমি সামলে নেব। আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো। কোনও বিশৃঙ্খলা বা গন্ডগোল আমার বা আমাদের দিক থেকে বিন্দুমাত্র হবে না। শান্তভাবেই সব শেষ হবে আমি তোমায় কথা দিলাম। তুমি শুধু বাকীটা সামলে দিও। এইবলে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম ক'রে বললাম, তুমি আমায় আশীর্বাদ করো আমি যেন সফল হ'ই। তিনি খুশী হ'য়ে হেসে চাপা গলায় বললেন, বেস্ট অফ লাক। তারপরে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে সবাই যেখানে বসে আছে সেখানে এলাম।

তারপর দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম নিজের আড্ডার জায়গায়। সেখানে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা এতক্ষণ কি হ'লো জিজ্ঞেস করলো। আমি তাদের শুধু পরের দিনে কি করণীয় সেটা বুঝিয়ে দিয়ে যে যার বাড়ি চলে এলাম।
( লেখা ১১ই জুন'২০২৩)