'এই সময়' পত্রিকায় প্রকাশিত "মার্কিন মহিলাকে ধর্ষণ, কাঠগড়ায় বৃন্দাবনের সাধু" খবরের পরিপ্রেক্ষিতে আমার Timeline-এ লেখা আমার article-এর উপরে আপনার মতামত " ভারতের সুস্থ-সুন্দর মানুষদের জাগতে হবে ! একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব দরকার" আমাকে এই খোলা চিঠি লিখতে অনুপ্রাণিত করলো। এর আগেও আমার অন্য একটা লেখায় আপনার মন্তব্য "একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লব দরকার" প্রসঙ্গে আমি আপনাকে আমার মতামত জানিয়েছিলাম। সেখানে সমাজ, দেশ, মানুষ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনার ক্ষেত্রে আপনার অকৃত্রিম আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল আর তাই আমি সেদিন আপনাকে লিখেছিলাম "হোলির শুভেচ্ছা সঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা কথা সবিনয়ে বলতে চাই কথাটা সময়োপযোগী হলেও সাংস্কৃতিক বিপ্লব কথাটার গভীরতা অসীম ও অনন্ত। এর বিশালতা ও ব্যপকতা কিন্তু সমাজ, সভ্যতা,দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ইত্যাদির গন্ডী ছাড়িয়ে, গ্রহ, নক্ষত্র, ব্রম্মান্ড পেরিয়ে ব-হু-দূ-র বিস্তৃত!!!!!!!!!!!!!!!! একথাটা মনে রাখা চাই কিন্তু। এটা মাথায় রেখেই আপনাকে এগোতে হবে। আমি আপনার পাশে আছি বন্ধু। আছি শয়নে স্বপনে জাগরনে দিবানিশি সবসময়"। আর আজ আবার আপনার সেই একই কথার পুনরাবৃত্তিতে আমি 'সুস্থ, সুন্দর মানুষ ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব' প্রসঙ্গে একটু বিশ্লেষণ ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনার জন্য আমার কলম ধরলাম।
সুস্থ সুন্দর মানুষ আছে না-কি এ জগতে? সুস্থ ও সুন্দর মানুষ সব তো হলিউড, বলিউড, টলিউডের মত বিশ্বের সমস্ত রঙিন ...............উডের জগতে! সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাবার দায়িত্ব, চাবিকাঠি যাদের হাতে তাদের প্রায় সকলের সুস্থ সুন্দর জীবন আকাশে যে চাঁদের মত কলঙ্ক লেগে আছে। এ যে ঠগ বাছতে গাঁ উজার হবার মত ব্যাপার! কম্বলের লোমা বাছলে যে আর কম্বলই থাকে না দাদা! কাকে বিশ্বাস করবেন দাদা? বিশ্বাস যে নিঃশ্বাস হারিয়ে অনেকদিন আগেই লাশে পরিণত হয়েছে। আর আমার মত যারা তথাকথিত সুস্থ সুন্দর তারাই তো অসুস্থ অসুন্দর মানসিকতার মানুষদের প্রধান পৃষ্টপোষক আর প্রকৃত সুস্থ সুন্দর জীবনের অধিকারী দেবতার মত মানুষদের প্রধান শত্রু দাদা! সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাতে গেলে তো পুর্ণজ্ঞান চাই! তা নাহ'লে মাঝপথে যে নৌকোডুবি অনিবার্য! বিশ্বের ইতিহাস তাই প্রমাণ করে না-কি? বিবেকানন্দের মত মানুষই পূর্ণজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন না তো আমরা তো দূরের কথা সমাজের বিদ্ধ জনেরা কোন ছাড়? আধাজ্ঞান নিয়ে তিনি বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন! পূর্ণজ্ঞান পেলে তিনি কি করতেন ভাবতে বসলে আকাশ নেবে আসে মাথার মাঝে! সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কে নেতৃত্ব দেবেন? আছে চোখের সামনে তেমন কোনও রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক, তাত্ত্বিক নেতা? নেতাজীর মত অসম্ভব গভীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী মানুষেরা কেন হারিয়ে যায়? কার দোষে হারিয়ে যায়? কোন ভুলে হারিয়ে যায়? কোন অসম্পূর্ণতা তাঁকে লক্ষ্যে পৌঁছোতে, সম্পূর্ণতার গন্ডী ছুঁতে বাধা দিল? তাঁর ইচ্ছা, স্বপ্ন, পরিকল্পনা, চাহিদা কোন পথে পূরণ হতে পারে, কেন এবং কিভাবে পূরণ হওয়ার পথে বাধা আসতে পারে, ব্যাঘাত ঘটতে পারে একথা কেন তাঁর মত মানুষ বুঝে উঠতে পারলো না? এই ব্যর্থতা কতটা ভারত তথা গোটা বিশ্বকে রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক সভ্যতার অগ্রগতির পথে পিছিয়ে দিল বা দিতে পারে তার আগাম সংকেত কেন বুঝে উঠতে পারলেন না নেতাজী? নেতাজীর মত মহান মানুষেরা কেন শেষ রক্ষা করতে পারে না? কেন তাঁরা, তাদের মত অন্তরশুদ্ধ মহান দেশপ্রেমিকরা ব্রাত্য হয়ে থাকে তথাকথিত মহান মানুষের দ্বারা তথাকথিত মহান মানুষের ভিড়ে? এরকম উদাহরণ অজস্র আছে। এদের মত উচ্চমার্গের মানুষেরা যেখানে ব্যর্থ সেখানে কার উপর ভরসা রাখবেন!? যে কাজের জন্য যতটা সময় দরকার ততটা সময় দিতেই হয়। এই মূল সত্যকে উপেক্ষা করার অর্থ অজ্ঞানতা আর অজ্ঞানতাই অহংকারের পৃষ্টপোষক। ততটা সময় কি দিয়েছিলেন নেতাজী? না-কি দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন? মহাত্মা গান্ধীর জীবনের শেষ দিনগুলিতে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উপলব্ধি কি ছিল? তিনি কি খুশী ছিলেন তাঁর দেশ স্বাধীন করার লড়াই-এর চটজলদি সফলতায়? তিনি কি তাঁর দর্শনের উপর ভিত্তি করে চলার পথে প্রকৃত সফলতা পেয়েছিলেন? যদি না পেয়ে থাকেন তবে কেন পেলেন না? কেন তিনি তাঁর অহিংসার পথে চলতে চলতে শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়ে দূরদৃষ্টির অধিকারী হ'য়েও নিজের অজান্তে (?) ভয়ংকর নারকীয় হিংসাকে আবাহন ক'রে নিজেই সেই হিংসার আগুনে বলী হলেন? আর সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ তো পিছনেই থাকে ভিড় জমাবার জন্য। সামনে থাকে জ্ঞানি, গুণী, বিদ্ধান, বুদ্ধিমান, বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবী সমাজের প্রতিনিধি, অনেক লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ। তাঁরা গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে, রচনা করে, ছবি এঁকে, চলচিত্র তৈরী করে, তর্ক-বিতর্কে অংশগ্রহণ করে, সেমিনার, আলোচনা সভা, জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে জনজোয়ারের সৃষ্টি ক'রে পিছনের ঐ ভাঙাচোরা মানুষগুলোকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে ভেড়ার পালের মত। তারপর? তারপর সেই বুদ্ধিমান মানুষদের কার্যসিদ্ধি শেষে এস ওয়াজেদ আলি-র সেই বিখ্যাত উক্তি "সেই Tradition সমানে চলেছে"-এর মত ফিরে যায় সেই পিছনের মানুষ চিরদিনের মত আগামীতে আবার বলী হবার প্রস্তুতি নিতে পিছনের সেই অন্ধকার সারিতে! তাই নয় কি দাদা? পৃথিবীর ইতিহাসে সফল সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কোন নজির আছে না-কি? কে দেখাবে পথ? কে সেই দ্রষ্টা পুরুষ? কে সেই পরম নির্ভরশীল মানুষ? কে সেই বিশ্বাসী মানুষ? কে সেই অনন্ত জ্ঞানের অধিকারী মানুষ? কে সেই দরদী মানুষ? কে সেই মানুষ যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের গভীর অন্তহীন সমুদ্রে ডুব দিয়ে আমাদের জন্য, এই সমাজ, এই দেশ, এই পৃথিবীর জন্য তুলে আনবে সুক্তির বুক থেকে মুক্তার মত তমসার ওপার থেকে মুক্তির আলোকবিন্দু!? কে দেখাবে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কোথা থেকে শুরু আর কোথায় এর শেষ, তার পথ? আছেন না-কি এমন কেউ পৃথিবীর বুকে যিনি পূর্ণতার তকমা নিয়ে এসে পূর্ণাংগ সফল নিখুঁত সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটিয়ে মানব জমিন চষে উৎকৃষ্ট ফসল ফলিয়ে দেবে? আছেন না-কি এমন কেউ ‘মানব বিবর্ত্তনের সর্ব্বোচ্চ ও সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পরিচালক ও অনুপ্রেরক’ যিনি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মহান নেতৃত্ব দেবেন??? আর সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুধু ভারতে নয় গোটা পৃথিবীর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন দাদা!!!!!!!!!!!!!!!
কোথায় সেই তমসার পার অচ্ছেদ্য বর্ণ মহান পুরুষ যিনি তামাম পৃথিবী জুড়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দেবেন??????????????
No comments:
Post a Comment